Skip to main content

Full text of "Subarnalata"

See other formats




আশাপূর্ণা দেবী 





ভীতি এ কলিকাতা. ও 


প্রথম প্রকাশ, চেত্র ১৩৭২ 


মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, ১০ শ্যামাচরণ দে ফ্রীট, কলিকাতা-৭৩ হইতে 
এস. এন. রায় কর্তৃক প্রকাশিত ও অটোটাইপ, ১৫২ মাপিকতশ! পণ রোড * 
কলিকাতা-৫৪ হইতে তপন সেন কর্তৃক মুহিত 


একাল-সেকাল নিয়ে তর্ক তো চিরকালের, 'কল্তু কেমন করে চিহুত করা যায় 
সেই 'কাল'কে ঃ এক-একটা কালের আয়ু শেষ হলেই কি এক-একবার যবাঁনকা 
পড়ে ? যেমন যবানিকা পড়ে নাট্যমণ্ে? 

না, যবনিকার অবকাশ কোথায়? আঁবাচ্ছন্ন ম্রোত। তবু “একাল সেকাল, 
এযুগ সেযুগ' বলে আঁভহিতও করা হয়। সমাজ, মানুষের রীতিনীতি, চলন- 
বলন, এরাই ধরে রাখে কালের এক-একটা টকরোকে, ইতিহাস নাম দেয় 'অমৃক 
যুগ, তমুক যুগ'। 

কিন্তু কালকে অতিক্রম করতেও থাকে বৈকি কেউ কেউ, নইলে কারা 
এগিয়ে দেবে সেই প্রবহমাণ ধারাকে ? সে ধারা মাঝে মাঝেই স্তিমিত হয়ে যায়, 
নিস্তরঙ্গ হয়ে যায়। তবু এরা বর্তমানের পূজো কদাঁচৎ পায়, এরা লাঞ্িত 
হয়, উপহাসিত হয়, বিরন্ত-ভাজন হয়। 

এদের জন্যে কাঁটার মুকুট । 

এদের জন্যে জুতোর মালা। 


তবু এরা আসে। 

হয়তো প্রকৃতির প্রয়োজনেই আসে। 

তবে কোথা থেকে যে আসবে তার নিশ্চয়তা নেই। আসে রাজরন্তের নীল 
আঁভঙ্গাত্য থেকে. আসে 'বিদ্যাবৈভবের প্রতিষ্ঠিত স্তর থেকে । আসে নাম- 
গোন্রহীন মূক মানবগোম্তীর মধ্য থেকে, আসে আরো ঘন অন্ধকার থেকে। 

তাদের অভ্যুদয় হয়তো বা রাজপথের বিস্তীতিতে. হয়তো বা অন্তঃপ্‌রের 
সন্কীর্ণতায়। 

কিন্তু সবাই 'ি সফল হয়? 

সবাইয়েরই কি হাতিয়ার এক? 

না। 

প্রকৃতি কৃপণ, তাই কাউকে পাঠায় ধারালো তলওয়ার হাতে দিয়ে, কাউকে 
পাঠায় ভোঁতা বল্পম দিয়ে। তাই কেউ সফল সার্থক, কেউ অসফল ব্যর্থ । তবু 
প্রকতর রাজ্যে কোনো কিছুই হয়তো ব্যর্থ নয়। আপাত-ব্যর্থতার গ্লানি 
হয়তো পরবতর্ণকালের জন্য সাত করে রাখে শান্ত-সাহস। 


|| ১ 1 


সুবর্ণলতা এসব কথা জানতো না। সুবর্ণলতা তার গৃহত্যাগিনী মার 'নন্দার 
সম্বল নিয়ে সংসারে নেমোঁছল। 

তাই সে জেনৌছল সে কেবল তার অসার্থক জীবনের 
গ্রানির বোঝা নিয়েই স্পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। 
জেনোছল তার জন্য কারো কিছু এসে যাবে না। 

সূবর্ণলতার মৃত্যুতে যে সুবর্ণলতার সতেরো বছরের 
॥ আইবুড়ো মেয়ে পায়ের তলার মাঁট খদুজৈ পায় [ন, এ 
|| খবর জেনে 8০১৮-০৯৬% জেনে যেতে পারে 'নি 





দক্ষিণের এই চওড়া মারল যেখানে শুয়ে থাকতো 
সুবর্ণলতা সংসার থেকে চোখ ফিরিয়ে, সেখানটা থেকে মেয়েটা যেন 
আর নড়তে চায়'না। সুবর্ণলতাকে নতুন চোখে দেখতে শিখল বাঁঝ সে 
জায়গাটা শুন্য হয়ে যাবার পর। 

দেখতে শিখল বলেই ভাবতে শুরু করল, জীবন শুরু করবার সময়ে যাঁদ 
স্বর্ণলতা একখানা দাক্ষিণের বারান্দা পেত, হয়তো জীবনের হাঁতহাস অন্য 
হতো সবর্ণলতার। 

হয়তো ওই মেয়েটার চিন্তায় কিছু সত্য ছিল, হয়তো তাই হতো। কিন্তু 
তা হয় নি। দাক্ষিণের বারান্দার দাক্ষিণ্য জোটে নি সুবর্ণকতার কপালে। 

অথচ জুটলে জুউটতে পারতো । 

সে বাঁড়িখানাও তো সবর্ণলতার চোখের সামনেই তোর হয়ৌছল। ও"দর 
পুরনো এজমাল বাঁড়র অংশের দরুন টাকাটা হাতে পেতেই সুবর্ণলতার বাদ্ধি- 
মান ভাসুর, দেবর, স্বামী তাড়াতরাড় বাঁড়খানা ফে*দে ফেলল। বলল, টাকার 
পাখা আছে। ওকে পুতে ফেলাই বুদ্ধির কাজ। গাঁলর মধ্যে, তা হোক. বড় 
রাস্তার মুখেই, দুবার মোড় ঘুরতে হয় না। 

সেই' বাড়তেই তো ব্রিশটা বছর কাটিয়ে গেছে সুবর্ণলতা, সেখান থেকেই 
বার আম্টেক আতুড়ে গেছে, কেদেছে, হেসেছে, খেটেছে, বশ্রাম করেছে, সংসার- 
লীলার যাবতাঁয় লীলাতেই অংশগ্রহণ করেছে, তবু 1পপ্ররের মন্ত্রণাবোধে 
অহরহই ছটফট করেছে। 

সুবর্ণলতার স্বামী ক্ষুব্ধ গ্নে বলতো, 'যেচে দুঃখ ডেকে আনা! সেধে 
কষ্ট ভোগ করা! শত সুখের মাঁধাখানে রাতাঁদন দীর্ঘীনঃ*বাস পড়ছে 
মানুষের! আর ক চাই তোমার? আর কত চাই ? 

সবর্ণলতা বলতো, 'আমি তো কিছু চাই না।' 

“তা চাইবে কেন, না বলতে যখন সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছ। 
তোমার অন্য জায়েদের সঙ্গে অবস্থা মাঁলিয়ে দেখেছ কোনোদিন ? 

সুবর্ণলতা মদু হেসে বলতো, 'দেখেছি বৈকি! 

'তবু রাতাদন নিঃ*বাস! যেমন মা তেমাঁন ছা হবে তো! 

ওর বর তখন ভয় পেয়ে বলতো, 'আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আর বলবো না।, 

ওই তীব্রতার পিছনে যে এক ভয়ঙ্কর আঁভজ্ঞতার স্মৃতি। ভয় পাবে 


সুবর্ণলতা ৬1 


বৈকি। 

কিন্তু এসব তো অনেক দিন পরের কথা । যখন সৃবর্ণজতার রগের কাছে 
রূপোলী তারের আভাস, যখন সংবর্ণলতার সেই দণর্ঘ উন্নত বাড়-বাড়ন্ত গড়নে 
ক্ষয় ধরেছে। 

আগে যখন সূবর্ণলতা তার স্বামীত্যাগিনী মায়ের 'নন্দনীয় ইাতিহাসের 
সম্বল নিয়ে মাথা হেস্ট করে *বশূর-ঘর করতে এসেছিল, যখন কোনো একটা 
উপলক্ষ পেলেই সুবর্ণলতার শাশুড়ী সুবর্ণলতাকে তার 'বয়ের দরুন পাওয়া 
জিতে জবড়জঙ বেগুনী রঙা বেনারসণ শাড়ী আর বড় বড কলকাদার লাল 
মখমলের জাকেট পাঁরিয়ে সাঁজয়ে ফেলত, আব বাড়তে কেউ বেড়াতে এলেই 
তার সামনে সাতখানা করে 'িন্দে করতো বৌয়ের আর বৌয়ের বাপের বাঁড়র-_ 
তখন্‌ 2 

তখন এত সাহস কোথা সুবর্ণর ঃ নিজের বাড়তেই তখন আন্ডা ছিল 
মুন্তকেশীর, যেতে হত না কোথাও । পাড়ার সবাই আসতো মুক্তকেশীর কাছে। 
আলিখিত আইনে পাড়ার মাঁহলাকুল সবাই ছিল মুস্তকেশীর প্রঙ্গা। 

বাড়িটা তিনতলা, ঘরদালানের সংখা কম নয়, দুদকে দুটো রান্নাঘর, শান- 
বাঁধানো উঠোন, গোটা তিন-চার কল-চৌবাচ্ছা, অসুবিধের কিছু নেই' কোথাও । 
তবে ওই পর্যন্তই । বাঁড়টা যেন সাদামাটার একটা প্রতীক. না আছে শ্রী না আছে 
ছ।দ. বাঁড় না বাঁড়! 

বাস করতে হলে কতটুকু কি আবশ্যক, শুধু এই চন্তাটুকু ছাড়া বাঁড় 
বানাবার সময় আর কোনো "চন্তা যে এদের মাথায় এসোঁছিল এমন প্রমাণ পাওয়া 
যায় না! 

মঠ নয়. মান্দর নয়, বড়মানৃষের বাগানবাঁড়ও নয়, গেরস্ত লোকের বস- 
বাসের বাঁড়। তার মধ্যে শোভা সৌন্দর্য শিল্প-রুঁচ এ সবের সম্পক কি এদের 
বাঁদ্ধির বাইরে। 

সূবর্ণলতাকে তাই এরা পাগল বলে। বলবে না কেন১ সবর্ণলতা যে 
ওই সব অদ্ভূত জিনিসগুলো খ্‌*জে বেড়ায়। 

খুঁজে বেড়ায় বলেই বাঁড় বানানোর মধ্যপথে পুলকিত আনন্দে বরের 
কাছে রোজ ধর্ণা দিয়েছে তাকে একবার দোখয়ে আনতে বাঁড়টা। তারপর নতুন 
সংযোজনার প্ল্যান যোগাবে সংবর্ণ লতা । | 

বর অবশ্য উীঁড়য়ে দিত আবদারটা। সুবর্ণ বলতো, 'বাঃ, তোমাদের আর 
কি? কতক্ষণই বা বাড়তে থাকো 2 খাওয়া-নাওয়া আর খম, এই তো! 
বাঁড় ভোগ করতে তো আমরা মেয়েমান্ষরাই। আমাদের মত নিয়ে করলে-” 

'করলে আর কিঃ লোকে বলবে স্ত্ণ! তবে যেতে চাও মাকে বল গে! 

'মাকে' যে বলতেই হবে এ সত্য জানতো বৌকি সুবর্ণ, ৩বু বরের কাছে 
আবদার করায় আমোদ আছে, িঘ্টত্ব আছে. আশা আছে। হা, ছিল বৌক 
আশা। বরের উপর না হোক, নিজের ক্ষমতার উপর অনেকখানি আস্থা আর 
আশা ছিল তখন সূবর্ণলতার। তখন সুবর্ণলতা কানে ইয়ারং পরতো, তিশ- 
পেড়ে ডুরে শাঁড় পরতো. আর অনেক কসরং করে কাঁচপোকা ধরতে তাকে কেটে 
কেটে টিপ করতো । 

ইচ্ছেটাই তখন প্রবল তার, সব বষয়ে। 

অতএব মুস্তকেশীকেই গিয়ে ধরলো, 'বাঁড়টা একবার দেখতে চলন না মা, 


$ সুবর্ণঙতা 


বেশি তে দূর নয়।' 

মৃন্তকেশশ অবশ্য সে আগ্রহে জল ঢাললেন, 'হাঁহাঁ করে উঠে বললেন, 
'শোনো কথা, এখন যাবে কি? আঁদনে অক্ষণে গেলেই হল? ভিটে বলে কথা। 

শুভদিন দেখে দেবেন, বাস্তুপৃজো করে তবে তো গৃহপ্রবেশ! 

তার্কক-স্বভাব সবর্ণলতা আঁবাশ্য সঙ্গে সঙ্গেই দম করে বলে বসোঁছল, 
'আর এই যে আপনার ছেলেরা নিত্যদিন যাচ্ছেন, তার বেলা দোষ হয় না.?, 

মুস্তকেশশ অভাস্ত বিরান্তর গলায় বলেছিলেন, 'তন্ধ করা রোগটা ছাড়ো 
তো বাছা, এই রোশেই আমার হাড় পাঁড়য়ে খেলে তুমি। বেটাছেলের আবার 
কিছৃতে দোষ আছে নাকি 2 মেয়েমানুষকেই সব কিছ মেনে-শুনে চলতে 
হয়।' 

অতএব বাঁড় তোর হতে হতে আর সে বাঁড়কে দেখা ঘটে ওঠে 'ন সুবর্ণ- 
লতার, কারণ সবর্ণলতা যে মেয়েমানুষ এটা তো অস্বীকার করবার নয়। 

অগত্যা -আবার বরকেই ধরা, “সামনের 'দকে একটা বারান্দা রাখতে হবে 
[কন্তু, ঝূলবারান্দা। যাতে রাস্তা দেখা যায়।' 

সুবর্ণলতার বর চোখ কুচকে বলে উঠেছিল, 'কেন? রাস্তার দকে' ঝোলা 
বারান্দার হঠাং কি এত দরকার পড়ল? 'বিকেলবেলা বাহার দিয়ে দাঁড়াবার 
জন্যে 2, 

সুবর্ণলতা তখনও ছেলেমানুষ, তখনও ওর “সন্দেহবাই' বরের কুটিল কথা” 
গুলোর অন্তীর্নহত কদর্য অর্থগুলো ধরতে পারত না, তাই বলে উঠোছল, 'বা 
রে, বাহার দেওয়া আবার 'কি ? রাস্তার দিকে বারান্দা থাকলে রাস্তাটা কেমন 
দেখা যায়! ঠাকুরভাসান, মহরম, বর-কনে যাওয়া, ঘটার মড়ার হরি সংকীর্তন, 
কত কি দৃশ্য রাস্তায়-_ 

বর অবশ্য এবার হেসে ফেলোছল। ওই এক কুটিল বাতিকগ্রস্ত হলেও 
বয়সে সে-ও ছেলেমানুষই। হেসে বলোছিল, “আর ীকছু না হোক, শেষেরটা 
একটা দ্ুম্টব্য বটে। িশেষণটা দিয়েছ ভাল, “ঘটার মড়া”।' 

সৃবর্ণলতা অতঃপর মুখঝামটা দিতে কসুর করে নি। বলোঁছল, “ভুল 'কি 
বললাম, ঘটা-পটা করে মড়া নিয়ে যায় না লোকে ? | 

তা যায় বটে।, 

'আমাকেও তাই নিয়ে যাবে তো?" আব্‌দেরে গলায় বলে ওঠে সবর্ণলতা, 
“আমি যখন মরে যাব, ঘটা করে সংকীর্তন করে নিয়ে যাবে ?, 

বর মাথায় হাত দিয়ে বলে, সর্বনাশ! কে আগে মরে তার ঠিক আছে ? 
আম তোমার থেকে কত বড়, আমিই নির্ঘাত আগে মরবো- 

সৃবর্ণলতা নিশ্চিন্ত গলায় বলে, 'ইস্‌। জুরি নাছ 
মার সেই কালীঘাটের দৈবাঁজ্ৰ আমার হাত দেখে কী বলে গেল মনে নেই ?" 

“না, মনে নেই তো-_-. বর অসাহষণু গলায় বলে. 'কী বলোৌছল১ আম 
অমর হবো 2, ও 

যাঁদও বৌয়ের বয়েস মান্র চোদ্দ এবং তার বাইশ. তণ্রাচ অসাহঙ্ুতায় খুব 
একটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। অন্তত বরপক্ষে তো নয়ই । 

কিন্তু “কথার ভটচাষ' সুবর্ণলতাকে যে এই রাক্তরেই যত কথায় পায়, তাই 
সে বলে ওঠে, আহা! কাঁলযূগে যেন অমর বর আছে! বলেছে আম সধব! 
মরবো।, 


স্বর্ণলতা & 


'বাঃ, বেড়ে! তা এই সুখবরাটি দিতে বোধ হয় বেশ কিছু বাগয়ে নিয়ে 
"পাছে তোমার কাছ থেকে 2' 

'আমার কাছ থেকে 2, 

সুবর্ণলতা আকাশ থেকে পড়ে, 'আমি আবার কোথায় ক পাবো? মা 
সবাইয়ের হাত দেখালেন, চাল দিলেন, পয়সা দিলেন, নতুন গামছা 'দিলেন-- 

না, দনের বেলায় নয়, দিনের বেলায় ছেলেমানুষ বৌ বরের সঙ্গে গল্প 
জুড়বে, এমন অনাচার আর যার সংসারে হয় হোক, মুক্তকেশীর সংসারে কদাপি 
ঘ১তে পারে না। 

এ নাটক রান্রেরই। 

প্রথম অঙ্কের প্রথম দশ্য। 

অবশাই বর এই মধুর ক্ষণটুকু এমন অকারণে অপবায় করতে রাজী নয়, 
তাই ওই তুচ্ছ কথায় যসানিকা টানতে বলে ওঠে, "ভালই করেছেন। ওরা সব 
লোক স্াবধের নয়। ওদের সন্তুষ্ট রাখাই ভাল।' 

এ মন্তবোর পরই বর একটু অনুচ্চ হাঁসর শব্দ শুনতে পায়। 

জো সঞ্জোই কঠোর গলায় বলে ওঠে, হাসলে যে2' 

'এমাঁন।' 

'এমান মানে? এমনি কেউ হাসে? 

'পাগলে হাসে ।, 

'তা তুম কি পাগল 2 

শছলাম না, তোমাদের সংসারে এসে হয়োছ'_ চতুদ্শশ সুবর্ণলতা প্রায় 
পাকা গগন্নীদের মতই ঝওকার দেয়, 'দেখে-শুনেই পাগল। মার কোন্‌ কাজটাই 
বা তোমাদের কাছে ভূল : মা যাঁদ ওকে কিচ্ছ্‌ না দিতেন, নির্ঘাত বলতে, "দেন 
ন বেশ করেছেন. যত সব ভন্ড"! 

বলা বাহলয 'সুবর্ণ-পাঁত' এতে খুব প্রণীত হয় না, তীব্রস্বরে বলে, "তবে 
কী করা উচিত 3 মাকে “থো" করে বৌয়ের পাদোদক খাওয়া ? 

সুবর্ণলতা 'দুর্গা দুর্গ করে উঠে বলে, 'যা নয় ভাই মুখে আনম! তার 
মানে আমায় রাগয়ে দিয়ে কাজটি পণ্ড করার চেত্টা। আম কিন্তু রাগাঁছি না, 
আম হাচ্ছ "ভাব"। এই' তোমার গা ছয়ে প্রতিজ্ঞা করছি সামনে বারান্দা না 
করলে তোমাদের স্‌ বাঁড়তে যাবই না আম ।' 

বর তখনকার মত বলে. 'আচ্ছ। আচ্ছা দেখা যাবে । এখন শোও তো এসে। 

অন্ধকারের আবরণ তাই রক্ষে, নইলে বরের আদরের ডাকে তরুণী পত্রণীর 
বরন্তি-তিস্ত মুখভঙ্গনটুক্‌ দেখতে পেলে বোধ কার ঘর ছেড়ে বোরয়ে যেত 
বর। 

তবু গলাটায় মাধূর্যের ঘাটাঁত ধরতে-পারলো বৌক। সবর্ণ যখন নীরস 
গলায় বলল, 'তোমার তো "দেখা যাবে"! যা দেখবে তা জানাই আছে। একের 
নম্বরের মিথ্যুক ! বাঁড় করতে আর জমি পেল না-গলির মধ্যে!" তখন সেও 
সমান নীরস গলায় বলে ওঠে, 'বাঁড় আমার একলার নয়। মাথার ওপর মা দাদা 
এঁদকে ভাইয়েরা, আম আবদার কারগে-ওগো আমার বৌ গড়ের মাঠের ওপর 
বাড়ি চায়। যত সব! 

'গড়ের মাঠ বাল নি আম, শুধু বড় রাস্তাটা দেখতে চাই। মাথার ওপর 
ওপরগুলা থাকলে একটা কথাও বলতে নেই বুঝি ঃ আম বলে রার্াছ বারান্দা 


৬ সুবর্ণলতা 


আমার চাই-ই চাই।, 

'আমার চাই-ই, চাই! 

বাঙালী গেরস্ত ঘরের বৌয়ের মুখের এই ভাষা! “'আসপদ্দা' বটে 
একখানা! এত 'আসপদ্দা' পেল কোথায় সূবর্ণলতা ? এই ক'টা বছর *বশুর- 
বাঁড়র ভাত খেয়েই কি ওর মার ইতিহাস ভুলে গেছে ? ভুলে গেছে তার লব্জার 
গ্লরান? দিব্যি একখানি হয়ে উঠেছে! 

'আসপদ্দাটা তাহলে ওই জল্মসূ্রেই পাওয়া ঃ তা ছাডা আর কি? 
আরো তো বৌ রয়েছে! মুস্তকেশীর, তারা তো রাতাঁদন ভয়ে কাঁটা । 

যখন-তখন তাই উদ্দেশে গাঁল পাড়েন মুস্তকেশী। শক করবো দুই বুড়নই 
যে মরে হাতছাড়া হয়ে গেছে, নইলে আমার মাকে আর সইমাটকে নতাম এক 
হাত! নিজের নাতনীর গুণ জানতো না বুড়ী2 জানতো, জেনে বুঝেই 
আমার গলায় এই অপরূপ মালাটি গাছয়ে দিয়োছল। পরর্বজল্মের ঘোরতর 
শত্রুতা ছিল আর কি! 

আবার এও বলেন কখনো কখনো, 'বুড়ীদের আর দোষ দিই কেন, মা-টির 
গুণই গাই। কেমন মা! আমড়া গাছে কি আর ল্যাংড়া ফলবে! 

তবু সুবর্ণ তখনও চোটপাট উত্তর করতে শেখে নি। শাশুড়ী মায়ের 
প্রসঙ্গ তুললেই মরমে মরে যেত, আর শেষ অবধি যত আক্রোশ আর আভযোগ 
গিয়ে পড়তো মায়ের উপরেই। 

কেন, কেন তার মা আর সকলের মায়ের মত নয় ঃ কেন তার মা জ্বামন- 
ত্যাগ করে গৃহত্যাগ করে ছেলেমেয়ের মুখ হাঁসিয়ে গেছে 2 

সন্তানস্নেহ কিছুই নয় তা হলে? জেদটাই সব চেয়ে বড় তার কাছে ? 
এমন কি একখানা চিঠি দিয়ে পযন্ত উদ্দিশ করে না? সুবর্ণর যে অনেক বাধা 
সে কি মা বোঝে না? সুবর্ণ যাঁদ তার মাকে একখানা চিঠি লখতে বসে, 
বাড়তে কোর্ট-কাছারি বসে যাবে না ? 

আইনজার হবে না? 

নিষেধাজ্ঞা ? 

একেই তো ওই অপরাধে কেউ তাকে দেখতে পারে না। . 

জবড়জং গাঢ় বেগুনী রঙা বেনারসী শাঁড়, আর জাঁড়র কল্‌কাদার লাল 
মখমলের জ্যাকেট পরা ন বছরের সুবর্ণলতা যখন ভাগাতাঁড়তের মত এদের 
বৌ হয়ে এসে ঢুকলো, তখন তো একাদনেই তিন্-তিনটে বছর বয়েস বেড়ে গেল 
তার। ঘরে পরে সবাই বলে উঠল, 'ন বছর? ওই ধাইপেয়ে দশাসই মেয়ের 
বয়স ন বছর? ন বছর ও তিন বছর আগে ছিল। 

সেই বিরূপতার দষ্ট আজও ঘুচল না সংসারের । বলতে গেলে 'পাঁতিতে'র 
দৃষ্টিতেই দেখা হয়েছে তাকে। হতে পারে মা 'খারাপ' হয়ে বোরয়ে যান 'নি, 
তবু কুলত্যাগ, গৃহত্যাগ, স্বামীত্যাগ, এও কি সোজা অপরাধ নাক ? 

তা অনেক দিন পর্যন্ত অপরাধিনী-অপরাধিনী হয়েই ছিল সুবর্ণ। 
তারপর দেখল এরা শন্তের ভন্ত, নরমের যম! যত নীচু হও ততই মাথায় চড়ে 
এরা, অতএব শন্ত হতে শিখল। 

শন্ত হয়ে কি রাস্তার 'দিকের বারান্দা আদায় করতে পেরোছল 

সুবর্ণ ? ট 
না, পারে নি। 


সৃবর্ণলতা ৭ 


ওর স্বামী প্রবোধ বুঝি চাপ চপ একবার মায়ের কছে তুলেছিল কথাটা, 
মুন্তকেশী বলোৌছলেন, 'না না, ওর গোড়ে গোড় দিয়ে মারস নি তুই পেবা! 
ঘরের ভেতর খেমটা নাচছে বৌ, আবার বারান্দায় গলা ঝোলালে আরও কত 
বাড় বাড়বে তা আন্দাজ করতে পারাছস? তোর ভাড়াকান্ত *বশুরটা 
পরিবারকে আস্কারা 'দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে শেষে পারিণামে কি ফল পেল 
দেখেছিস্‌ তো চাই-ই চাই! মেয়েমানুষের মুখে এমন বাঁকা বাবার জলে 
শুনি নি।' 

এরপর আর ক বলবে প্রবোধ 2 তবে চালাক একট: খেলে সে। প্রাতীদনই 
প্রবোধ দেয় সুবর্ণলতাকে, 'হচ্ছে গো. শুধু বারান্দা হচ্ছে ।' 

পারণামে যা হয় হোক, এখন তো বাড়াতি কিছু সুখলাভ, হয়ে যাচ্ছে, 
সুবর্ণলতার মুখে আহ্নাদের আলো খেলছে, সুবর্ণলতা উৎসাহে অধীর হচ্ছে, 
সুবর্ণলতা আত্মসমর্পণে নমনীয় হচ্ছে। 

হচ্ছে। 

চোদ্দ বছরের সুবর্ণলতার পক্ষে এ সন্দেহ করা শন্ত ছিল, এমন জলজ্যান্ত 
[মধ্যে ধাপ্পা দেওয়া যায়। বরের প্রেম প্রীতি ভালবাসার পাঁরচয়ে মুক্ধ হচ্ছে 
তখন ও। আর কল্পনায় স্বর্গ গড়ছে। 

এই ভাঙা পচা বাঁড়টা ছেড়ে নতৃন বাড়িতে গিয়েছে সে. বারান্দার ধারে 
চমৎকার সুন্দর একখানি, ঘর, বড় বড় জানলা, লাল টুকটুকে মেঝে, সেই 
ঘরটিকে নিজের মনের মত সাজাবে সুবর্ণ। দেয়ালে দেয়ালে ছাঁব, তাকের উপর 
ঠাকুর-দেবতার পতল, বাক্স-প্যাটরায় ফুলকাটা ঘেরাটোপ, ঝালর দেওয়া বালিশ, 
ফর্সা বিছানা । সেই ঘরে বসে কাঁথায় ফুল তুলবে সুবর্ণ চাপ চুপি লুকিয়ে, 
ভবিষ্যতের জন্যে 

কাঁথার প্রয়োজনের সূচনা নাঁক দেখা দিয়েছে সুবর্ণর দেহের অন্তঃপুরে। 
সুবর্ণ বোঝে না অতশত, গিল্নীরা বোঝেন। ভয়ও করছে, বেশ একটা মজা- 
মজাও লাগছে। 

অনেক দোলায় দুলছে এখন সুবর্ণ। ন বছরে এসেছে এদের বাঁড়, সেই 
থেকেই স্থাতি, মা নেই, কেই' বা নিয়ে যায়ঃ বাপ সাহসই করে নি। পাস 
একটা আছে কাছে-পিঠে, নিয়ে যেতে চেয়োছল একবার, এরা পাঠায় নি। এরা 
বলেছে. 'সে-কুলের সঙ্গো আর সম্পর্ক রেখে কাজ নেই। বাপ দেখতে আসে 
মাঝে-মধ্যেই ওই ঢের! তাও তো এদের সামনে ঘোমটা দিয়ে একবার দেখা । 
বোধ হয় সেই দুঃখে বাপও এখন আর আসে না বোশ। অতএব এদের নিয়েই 
থাকতে হবে সুবর্ণকে, তাই এদের “মানুষ করে তুলতে ইচ্ছে করে সুবর্ণর। 
ইচ্ছে করে এরা শোৌঁখন হোক, সভ্য হোক, রাঁচ-পছন্দর মানে বুঝক। এদের 
নিয়ে সুন্দর করে সংসার করবে সবর্ণ। 

রেষারোঁষ, ঝগড়াঝগাঁড়, স্বার্থ নিয়ে মারামারি, এসব দু চক্ষের বিষ 
সৃবর্ণর, দু চক্ষের বিষ সারাক্ষণ ওই রান্নাঘরে পড়ে থাকাও । উদার 
আবহাওয়ার স্বাদ জানে, না এরা । জানে না বই পড়তে, পদা মুখস্থ করতে । 
..ভাবতে ভাবতে মনটা হারিয়ে যায় সৃবর্ণর, মনে পড়ে যায় তার আকস্মিক 
বিয়েটার কথা। বিয়েটা না হয়ে গেলে হয়তো এতদিন পাসের পড়া পড়তো 
সুবর্ণ । 

মা তো বলতো তাকে, 'তোকে আমি তোর দাদাদের মতন পাসের পড়া 


৮ সৃবর্ণলতা 
পড়াবো।” 

সুবর্ণর ভাগ্যে ভগবান তেশ্তুল গুললো। 

যাক, এই জাঁবনের মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে সূবর্ণকে। আর 
দাঁড়ানোর প্রথম সোপানই তো সংন্দর একটা বাঁড়। পাঁরবেশটা সুন্দর না হলে 
জীবনটা সুন্দর হবে কিসের উপর ? 

চোদ্দ বছরের সুবর্ণর কাছে জাঁবনসৌন্র্যের মাপকাঠি তখন ওই রাস্তা 
দেখতে পাওয়া বারান্দা দেওয়া একখানি ঘর। 

বারে-বারেই সে তাই বরকে জিজ্ঞেস করে, হাঁগো, কতখাঁন চওড়া হচ্ছে ?' 

বর ভুরু কুণ্চকে বলে. 'তা অনেকখানি ।' 

'তা বেশ। কারণ হঠাৎ একটা বরকনে কি ঠাকৃর গেল, সবাই [মিলে দেখতে 
হবে তো বারান্দায় ঝৃ'কে ?' 

বর তনক্ষন হয়। 

বলে. 'সবাই তোমার মতন অমন বারান্দা-পাগল নয়।' 

'তা সত্যি।' সুবর্ণর চোখেমুখে আলো ঝলসে ওঠে, 'পাগলই আছ আমি 
একটু! কা আহনাদ যে হচ্ছে ভেবে! হশ্যাগো, রোলিঙে সবুজ রঙ দেওয়া 
থাকবে তো 2" 

“তা সবুজ বল সবুজ, লাল বল লাল, তোমার ইচ্ছেতেই হচ্ছে যখন-' 

সবর্ণ গলে পড়ে। 

সুবর্ণ তার বরের মধ্যে সেই প্রেম দেখতে পায়, যা সে বইতে পড়েছে। বই 
অবশ্য লুকিয়ে লঁকয়ে পড়তে হয়, শাশুড়ী ননদ দেখলে মেরে ফেলাবে। 

কিন্তু যোগান দেয় এদেরই একজন। 

সংবর্ণর কাছে সে মান্ষ দেবতা-সদশ। এদের সঙ্গে তুলনা করলে স্বর্গের 
দেবতাই মনে হয় তাকে সুবর্ণর। হায়, তার সঞঙ্চো যাঁদ কথা কইতে পেত 
সুবর্ণ! 

কইবার হুকুম নেই। 

এদের রাশ বড় কড়া। বিশেষ করে প্রবোধ পরপুরুষের সঙ্জে কথা বলা 
তো দূরের কথা, তাকানো পর্যন্ত পছন্দ করে না। সুযোগ পেলেই যে মেয়ে- 
মানুষগুলো খারাপ হয়ে যায়, এ তার বদ্ধমূল ধারণা । ওই বই দেওয়াটা টের 
পেলে কী যে ঘটতো কে জানে! কিন্তু সুবর্ণ সাবধানী । 

তবু সূবর্ণর ইচ্ছে করে সেই দেবতুল্য মানুষটার সঙ্গে একটু কথা কয়। 
কথা কইতে পেলে সূবর্ণ তাঁকেই পাঠাতো বাড়িটা কেমন হচ্ছে দেখতে, প্রশ্ন 
করতো-_বারান্দাটা কি রং হলে ভাল হয়! 

[কিন্তু সে হবার জো নেই যখন, তখন বরের মুখেই ঝাল খাওয়া! যেবর 
বলেছে. বারান্দার কথা যেন তম এখন কাউকে গল্প করে বোসো না। শুধ 
তুমি জানছো আর আম জানাছ, আর জানছে মিস্ীরা ! 


[কল্তু তার পর ? 
গৃহপ্রবেশের দিন-ক্ষণ দেখে মুস্তকেশী যখন দুখানা ঘোড়ার গাঁড় ভাড়া 
করে আর লক্ষীর হাড় কোলে করে সপরিবারে এসে উঠলেন নতুন বাঁড়তে ? 


1২ ॥ 


মস্তকেশীর সংসার এমন কিছ7় বিপুল নয়, ছেলে মেয়ে বৌ নাতি 'নজে সবাইকে 
গনয়ে সদস্য-সংখ্যা মান্র দশ, গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে বিধাহতা 
দুই মেয়ে আর কুঁচি একটা নাতনী এসেছে এই যা। এই 
কটা লোককে একখানা সেকেন্ড ক্লাস ঘোড়ার গাঁড়তে 
ভরে ফেলা খুব একটা শন্ত ছল ন্. পুরুষ দু-তিনজন 
গাঁড়র ছাতে উঠে বসলেই স্থান-সংকুলান এবং ভাশুর- 
ভাদ্রুবৌ সমস্যা, দুটোরই সমাধান হত। "তবু যে ?হসেবী 
মুন্তকেশী দুটো গাঁড়র আদেশ দিয়েছিলেন মে কেবল 
লক্ষ্মীর হাঁড়র শুচিতা বাঁচাতে। 

মেয়েবৌদের ন্ম হয় এক-একখানা চোঁলর শাঁড় পরিয়ে নেওয়া হল, কিন্তু 
ছেলেদের বেলায়; তাদের তো কোট-কামিজ-জ্‌তো ছেড়ে একবস্তে যেতে 
বলা যায় নাঃ যতই "পুরুষ পরশ-পাথর' হোক, লক্ষযীর হাঁড় বলে কথা! যার 
মধ্যে সমগ্র সংসারটার ভাগ্য 'নাহত ! 

কুতার্ক মেদবৌটা আবাশ্য তুলোছল তর্ক, বলেছিল, 'তবে যে আপনি 
বলেন, পুরদ্ষ আড়াই পা বাড়ালেই শুদ্ধ--', দাবড়ানি দিয়ে থামিয়েছেন 
তাকে। 

তর্ক তুললেও মেজ বৌ সুবর্ণও অবশ্য দুটো গাঁড়র ব্যাপারে উৎসাহতই। 
কারণ গাঁড়ভাড়ার ব্যাপারেও মুক্তকেশীর কার্পণ্যের অবাঁধ নেই। যখনই যেখানে 
যাওয়া হয়- নেমন্তন্বাঁড়, কি যোগে গঙ্গা নাইতে, 'চাঁড়য়াখানায়, কি মরা যাদু- 
ঘরে, ওই গুড়ের নাগরী ঠাসা হয়ে। ননদরা যখন বাপের বাড়ি আসে তখনই 
এসব আমোদ-আহাদ হয়, লোকসংখ্যাও তখন বাড়ে, বেড়াতে যাওয়ার সব সংখই 
যেন সুবর্ণর লুপ্ত হয়ে যায়। তাছাড়া জানলার একাঁটি 'পাঁখ' খোলবারও তো 
জো নেই, মুন্তকেশী তাহলে বোকে বাবার বিয়ে খুড়োর নাচন দোঁখয়ে 
ছাড়বেন। 

দুই জা, দুই ননদ আর শাশুড়খ, মান্ত এই পাঁচজন পুরো একখানা গাঁড়তে, 
ছোট দ্যাওর তো গাঁড়র মাথায় আছে পথগ্রদর্শক [হসেবে। সুবর্ণ যেন হাত- 
পা মোলিয়ে 'নঃ*বাস ফেলে বাঁচে! আর সঙ্গে সঙ্গেই অপূর্ব একটা পুলক 
আবেগে মনটা উদ্বেল হয়ে ওঠে 'তার। হত্যা তাই, এটাই হচ্ছে সেই আসন 
ভাগোর সূচনা। খোলামেলা বারান্দার ধারের ঘর, অথবা ঘরের ধারে বারান্দা 
অপেক্ষা করছে সুবর্ণর জন্যে !... 

যে বারান্দা থেকে গলা বাড়িয়ে সুবর্ণ ব্ড় রাস্তা দেখতে পাবে। এখন 
মনে হয় সুবর্ণর, একটু যে গাঁলর মধ্যে, সেটাই বরং ভাল, অনেকক্ষণ বারান্দায় 
দাঁড়য়ে থাকলেও কেউ কিছু বলবে না বোধ হয়। একেবারে বড় রাস্তার ধারে 
হলে হয় তো সে শাসনের ভয় ছিল। 





চেোঁলর শাঁড়তে আগাগোড়া মোড়া, মাথায় একগলা ঘোমটা, শাশুড়ী ননদ 
বড় জায়ের দ্বারা পারর্বোষ্টত সুবর্ণ হেস্টমুণ্ডে নতুন বাঁড়র দরজার ঢুকে পড়ে, 
তব মাথার উপরে অবাঁস্থত সবুজ রেলিং-ঘেরা বারান্দার অনুভূতি রোমাণ্টিত 
করে তোলে তাকে, সমস্ত মন উদগ্র হয়ে থাকে 'সিশড়র দিকে । 


১০ সুবর্ণ লতা 


কিন্তু সহজে 'সপড়র দিকে যাওয়া হয় না, কারণ নীচের তলায় ঠাকুরঘরে 
বহুবিধ 'নিয়মকর্মের পালা চলতে থাকে, 'শান্তিজল' না নিয়ে উঠে পড়বার 
প্রশ্নই নেই। 

তবু একসময় সে পালা সাঙ্গ হয়। 

শান্তিজল মাথায় নিয়েই' টুক করে অন্যজনেদের মাঝখান থেকে সরে আসে 
সুবর্ণ, পা টিপে টিপে দোতলায় ওঠে। | 

ননদরা বাঁড় ঢুকেই হুল্লোড় করে ওপরতলা দেখে গেছে। পবরৃ্ষরা 
দেখার প্রয়োজন অনুভব করে নি, কারণ তারা তো রোজই দেখেছে। তারা 
শান্তিজল মাথায় নিয়েই ছুটেছে বাজারে দোকানে । পুরো ওপরতলাটা আপাতত 
থাঁ খাঁ করছে। 

খানচারেক ঘর, মাঝখানে টানা দালান, এঁদকে ওদিকে খোঁচা-খোঁচা একট; 
একটু ঘরের মত, এরই মাঝখানে দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খায় সুবর্ণ, এ দরজা 
ও দরজা পার হয়ে একই ঘরে বার বার আসে বিমূটের মত, বুঝতে পারে না 
কোন্‌ দরজাটা 'দিয়ে বেরোতে পারলে সেই গোপন রহস্যে ভরা পরম এশ্চর্ষ- 
লোকের দরজাটি দেখতে পাবে! 

ঘুরেফিরে তো শুধু দেয়াল। 

রিন্ত শূন্য খাঁ খাঁ করাঃসাদা দেয়াল, উগ্র নতুন চূনের গন্ধবাহশ। 

তবে 'কি বারান্দাটা তিনতলায়ঃ আরে তাই নিশ্য়! তাহলে তো আরোই 
ভাল। 

ইস্‌! এইটা খেয়াল করে নি এতক্ষণ হাঁদা-বোকা সুবর্ণ! একই ঘরে 
দালানে পাঁচবার ঘুরপাক খেয়ে মরছে! চেলির কাপড় সামলাতে সামলাতে 
1[তনতলায় ছুট দিল সুবর্ণ। কেউ তো নেই এখানে, ছটতে বাধা কি! 
একেবারে ছাত পর্যন্তই তো ছুট দেওয়া যায়। 

না। ছাত পযন্ত ছুট দেওয়া গেল না, ছাতের 'সিপড় বানানো হয় নি। 
থরচে কুলোয় নি বলে আপাতত বাঁড়র ওই অপ্রয়োজনীয় অংশটা বাঁক রাখা 
হয়েছে। 

কিন্তু বারান্দা £ 

যেটা নাক সুবর্ণর ভালবাসার স্বামী সবাইকে লুকিয়ে শুধু মিস্ত্রী 
সঙ্গে পরামর্শ করে গাঁথয়েছে 2 কোথায় সেটা? 

সুবর্ণ কি একটা গোলকধাঁধার মধ্যে এসে ঢুকে পড়েছে? 


'এর মানে 2 তুমি এই ওপরচূড়োয় এসে বসে আছ মানে 2, 

শনরালার সযোগে প্রবোধচন্দ্রু এই প্রকাশ্য দবালোকেই স্বর একেবারে 
কাছে এসে দাঁড়ায়। যাঁদও তার ভূরুতে কুণ্ণন-রেখা, কণ্ঠে বিরান্তর আভাস, 
“মেজবৌ মেজবৌ।” করে হল্লা উঠে গেল নীচে, একা তুমি এখানে কী করছ ? 

সবর্ণ সে' কথার উত্তর দেয় না। 

সুবর্ণ পাথরের চোখে তাকায়। 

'বারান্দা কই?" 

'বারান্দা! 

প্রবোধ একবার এঁদক-ও'দক তাঁকয়ে 'বস্ময়ের গলায় বলে ওঠে, 'সে কী! 
খুজ পাও নিঃ আরে তাই তো! ভূতে ডীঁড়য়ে নিয়ে গেল নাক? 


স্মবর্ণলতা ১১ 


সবর্ণর চোখ ফেটে জল আসে, তবু সে-জলকে নামতে দেয় না সে, কঠোর 
গলায় বলে, শমথ্যে কথা বলসে কেন আমার সঙ্গে ?, 

প্রবোধ তবু দমে না। 

হেসে হেসে বলে, ধমথ্যে ক গো, সাত্য সাত্য! ছিল, ভূতে কিবা কাগে 
নিয়ে পাঁলয়েছে! এই তোমার গা ছুয়ে বলা; 

বলেই এঁদক-ওঁদক তাকিয়ে খপ করে সেই ঃসাহাঁসক কাজটা করে নেয়, 
গা-টা একবার ছণুয়ে নেয়। একটু বোঁশ করেই নেয়। 

এর পর আর চোখের জল বাধা মানে না! সুবর্ণ দু হাতে মুখ ঢেকে বসে 
পড়ে বলে, "তুমি আমায় ঠকালে কেন? কেন ঠকালে আমায় £ জানো বাবা মাকে 
ঠঁকিয়েছিল বলেই মা-” 

'থাক থাক!' এবার প্রবোধ বীরত্বে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, 'তোমার মার বাহা- 

দুরির কথা আর বড় মুখ করে বলতে হবে না। বেটাছেলে পুরুষ-বাচ্ছা 
ভেড়ুয়ার মতন পরিবারের কথায় ওঠবোস করবে, কেমন 2 বারান্দা, বারান্দা! 
বারান্দার জন্যে এত বুক-ফাটাফাটি কেন শুন! কই, বড়বৌ তো একবারও 
ওকথা মুখে আনে নি ? তার মানে সে ভালঘরের মেয়ে, তোমার মতন এমন ছক্কা- 
পঞ্জা নয়! বারান্দায় গলা ঝুলিয়ে পরপৃরুষের সঙ্গে চোখোচোখির সাধ নেই 
তার! আর ইনি বারান্দার বিরহে 'তিনতলায় উঠে এসে পা ছাড়িয়ে কাঁদতে 
বসলেন! নীচে ওদিকে বড়বৌ কুটনো-বাটনা, রান্না, মাছ-কোটা নিয়ে হিমাঁসম 
খেয়ে যাচ্ছে। যাও শীগগির নীচে নেমে যাও )' 
' হ্যা, নীচে সুবর্ণকে নেমে যেতে হয়েই ছিল। নশচের তলায় সেই বিভী- 
িকাময় দৃশ্যের ছাঁব কম্পনাচক্ষে দেখার পর আর বসে থাকার সাহস হয় নি তার, 
শুধু অপারিসীম একটা ধিক্কারে দীর্ণ-বিদীর্ণ হতে হতে সে মনে মনে বলেছে, 
'ভগবান তুম সাক্ষী, বারান্দা দেওয়া ভাল বাঁড় আমি করবো করবো করবো! 
আমার ছেলেরা বড় হলে, মানুষ হলে, এ অপমানের শোধ নেব !, 

প্রাতিজ্ঞা ! 

কল্তু সুবর্ণলতার সেই আগের প্রাতিজ্ঞাঃ ও যে বলোছল, বারান্দা না 
থাকলে সে বাড়তেই আম থাকবোই না! হায় রে বাঙালশ-ঘরের বো. তার 
আবার প্রাতিজ্ঞা! শুধু চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মত 
বাঁড়র মধ্যে সব থেকে ওস্চা ঘরটা 'নজের জন্যে প্রার্থনা করেছিন বোকা 
আভমাননীটা। 

বাঁড়র পছনাঁদকের উত্তর-পশ্চিম কোণের সেই ঘরটা কারুর প্রার্থনীয় হতে 
পারে এটা মুস্তকেশীর ধারণাতীতি। ঘর 'বাল করার ব্যাপারে তিনি, তখনো মনে 
মনে [হসেব করাছিলেন। 'জোম্ঠর শ্রেষ্ঠ ভাগ' এ নীতিতে বড় ছেলেকে পূর্ব 
দাঁক্ষিণের সেরা ঘরখানাই দিতে হয়, সেজ ছোট দুই' ছেলেই তাঁর একট শোখিন। 
তা ছাড়া আজই না হয় তারা আইবুড়ো' আছে, দুদন বাদে তো বিয়ে হবে ১ 
1তনতলার ঘর থাকলে ভাল হয় তাদের। এঁদকে আবার নিজেরও মাথা-গরমের 
বাতিক, ঘুপাঁট ঘরে ভয়, তাছাড়া তাঁর ঘরেই তো তাঁর আইবুড়ো মেয়ের স্থিতি । 
থারাপ ঘরটা নিলে রেগে মরে যাবে না সে? 

ওদকে আবার মেয়ে-জামাই আসাআসি আছে। মেয়েদের আঁতুড় তোল। 
আছে। তাদের থাকা আছে। 

খপ করে তাই কোনো কিছ ঘোষণা করে বসে নি মুস্তকেশী। 


১২ সবর্ণলতা 


এহেন সময়, যখন খাওয়া-দাওয়ার পর সবাইকে নিয়ে দোতলায় উঠেছেন 
তিনি, তখনই এই প্রার্থনা জানায় সুবর্ণ। 

মুস্তকেশী একটু অবাক না হয়ে পারেন না, তারপর মন্ে মনে হাসেন। 
এঁদকে একট: তর্কবাগণশ হলেও স্বার্থের ব্যাপারে বোকা-হাবা আছে বোটা! 
তবু বিস্ময়টা প্রকাশ করেন না। শুধু প্রীতকণ্ঠে বলেন, 'তা এটাই যাঁদ 
তোমার পছন্দ তো তাই থাক। তবে হাওয়া কি তেমন খেলবে 2 “পেবো”র 
একট গরম হবে না? 

ছেলের গরমের প্রশনই করেন মুস্তকেশী, বৌয়ের অবশ্যই নয়। 

সুবর্ণ মাথা নেড়ে বলে, গরম আর ক, হাতপাখা তো আছেই ।, 

তবে তাই! তোমার বিছানা-তোরঞ্গগ্ুলো এ ঘরে তুলে দিক তাহলে ।' 

তুলে দেবার লোক আছে। 

ঝি খুদু একটা জোয়ান পুরুষের শন্তি ধরে। সেও তো এসেছে ঘোড়ার 
গাঁড়র মাথায় চড়ে। খুদুর বলেই বলীয়ান মুস্তকেশী। 

'তা বলে' বিছানা পেতে সে দেবে না, দোতলায় তুলে দয়েই খালাস। 
সুবর্ণই 'জাঁনসপন্র গুছিয়ে নিল, 'বছান্য পেতে 'ানল। 'নাঁলপ্ত নিরাসন্ত 
ভাবে। 

কিন্তু প্রবোধের তো আর 'িরাস:৩ মাসে নি, তাই রান্রে ঘরে ঢুকেই ফেটে 
চিত শুনলাম মেজগিন্রশী শখ করে এই ওপ্চা ঘরটা বেছে নিয়েছেন! মানেটা 

2, 

প্রবোধের বয়েস চাঁব্বশ, কিন্তু কথর বাঁধন শুনলে চল্লিশ ভাবতে বাধা 
হয় না। না হবে কেন, তিনপুরুষে খাস কলকান্তাই ওরা-যে কলকাত্তাইরা 
ধান গাছের তন্তার প্রশ্নে উত্তর খুজে পায় না, চাষ করে শুধু কথার। 

তা ছাড়া মুস্তকেশীর ছেলেমেয়েদের সকলেরই ধরণ-ধারণ পাকা পাকা। 
তারুণ্যকে ওরা লঙ্জার বস্তু মনে করে, সভ্যতাকে বলে 'ফ্যাশান' ! 

রুচি পছন্দ সৌন্দর্যবোধ এসব হাস্যকর শব্দগুলো ওদের আভধানে নেই। 
আর জগতের সারবস্তু যে পয়সা' এ বিষয়েও কারো দ্বিমত নেই। তা কলে 
সবাই যে লোক খারাপ তা মোটেই নয়। সুবর্ণর ভাসুর সুবোধ তো দেবতুল্য, 
সাতে নেই, পাঁচে নেই, কারোর সঙ্গে মতান্তর নেই. স্নেহ মমতা সহদয়তা সব 
কিছু গৃণই তার মধ্যে আছে। 

সন্দেহ-বাতিকগ্রস্ত মেজ ভাইকে মাঝে মাঝেই বকে সে, কী যে বালস 
পাগলের মতন! মান্য কি খাঁচার পাখী যে রাতাঁদন বন্ধ থাকবে? সবাই 
চাঁড়রাখানায় যাবে, মেজবৌমা যাবেন নাঃ এমন বাঁতিকগ্রস্ত হলি কেন তুই 
বল দেখি! 

সুবোধের এই ক্ষুব্ধ প্রশ্নের ফলেই সুবর্ণর তার জা-ননদদের সঙ্গে বেড়াতে 
যাওয়া ঘটে, নচেং তো হয়েই গ্িয়োছল বারণ । 

যাত্রার তোড়জোড় শুনলেই তো রায় ?দয়ে বসেন তার পাতি পরমগরু যে 
যায় যাক, তোমার যাওয়া-ফাওয়া হবে না? 

কিন্তু দাদা বললে না করতে পারে না। 

সেটা আবার সেকালের শিক্ষার গুণ। যত অপছন্দকর ব্যাপারই হোক, 
বাপ-দাদার আদেশ ঠেলবার কথা ভাবতেই পারত না কেউ। 

সুবর্ণ এর জন্যে ভাসুরের উপর কৃতজ্ঞ ছিল। 


সুবর্ণলতা ১৩ 


কিন্তু এদিকে এত উদার হলেও 'পয়সা'র ব্যাপারে কার্পণ্যের কমাত ছিল 
না সুবোধের । মাসকাবারী বাজার এনে মুটেকে দুটোর জায়গায় তিনটে পয়সা 
দিতৈ আধ ঘণ্টা বকাবাঁক করতে আলস্য ছিল না তার, মুক্তকেশনর গঞ্গাস্নানের 
পালাকি-বেহারারা দুই আনার বোঁশ পয়সা চাইলে তাদের নাকের ওপর দরজা 
বন্ধ করে দিতে দ্বিধামান্ন করতে দেখা যেত না। 

দ্িবধা অবশ্য আরো অনেক ফিছুতেই করে না সে। যেমন, বাঁড়র বাইরের 
রকে গামহা পরে বসে তেল মাখতে দ্বিধা করে না, উঠোনের চৌবাচ্চার ধারে 
দাড়িয়ে স্নান করতে দ্বিধা করে না। 

দেখে সূবর্ণর মনটা যেন কী এক অব্য্ত যন্ত্রণায় ছটফট কবে। এ ষেন 
দেবদ্তের গায়ে ছেস্ড়া পোশাক, ফুলের গায়ে কাদা ঃ 

তবু ভাসুরকে সবর্ণ ভান্ত করে। 

ভান্ত করে বড় ননদকে। 

সেই ছোটু বেলায় বেগুন্দি বেনারসী মোড়া সংবর্ণ' যখন কাঁদতে কাঁদতে 
এদের বাঁড়তে এসে দুধে-আলতার পাথরে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ ডুকরে উঠে 
বলোছল, 'আমাক তোমরা ছেড়ে দাও গো, তোমাদের পায়ে পাঁড়' তখন 
চাঁরাদিক থেকে ছি-ছক্কারের আগ্মবাণে সুবর্ণ তো প্রায় ভস্ম হতে বসৌঁছল, 
মুন্তকেশশ তো এই মারে দক সেই মারে, সেই দু £সময়ে ওই বড় ননদই রক্ষা করে- 
ছিল তাকে। বলোছিল, “তামরা সব কী গো! দুধের বাছা একটা, আর 
ভেতরের ঘটনাও জেনেছ সবাই, ওর প্রাণটার দিকে তাকাচ্ছ না ? 

বাঁড়র বড় মেয়ে, জামাই দ্বিতীয় পক্ষের হলেও একটা কেন্টাবম্টু, কেউ 
তাই আর তাকে দাবড়াতে পারে নি, কন্তু নৌকে 'কচি বাচ্ছা, বলায় হেসোছিল 
সবাই। বলেছিল, 'আসছে জন্মে আবার ন বছরের হবে ও মেয়ে।, 

ননদ আবারও তাড়া "দয়োছিল, 'আচ্ছা আচ্ছা, বয়সের হিসেব পাবে হুবে, 
প্রবো'র চাইতে তো আর বড় নয়? এখন বরণ কর! 

তদবাধ বড় ননদকে দেবীজ্জান করে সুবর্ণ। সে যখন আসে. যেন হাতে 
চাঁদ পায়। সে যে হিতৈষী, অন্য ননদদের মত ছুতো-্ধরা নয়, সেটা বুঝতে 
দেরি হয় না সুবর্ণর। 

আজও তো সে ননদ সৃবর্ণকে আড়ালে ডেকে চাঁপ চুপ বলোছল, “তুই 
অমন হাবা কেন রে মেজ বৌ? চেয়ে-চিন্তে অথাদা ঘরখানা নিলি” 

মেজ বৌ অবলীলায় বলোছল, 'তা একজনকে তো নিতেই হবে।' 

1কল্তু এখন ননদের ভাইয়ের তণব্র প্রশ্নের উত্তরে অবলনলায় যা বললো সেট৷ 
অনা কথা। এখন বললো, “কেন, ঘরটা খারাপ সে» ভালই তো! একটা 
জানলা খুললে পড়শীর ভাঙা দেয়াল, আর একটা জানলা খুললে গেরস্তর কল- 
পাইখানা, মিটে গেল লাঠা। সব দিক 'দয়ে নিভয়! পরপুরুষের সব্যে 
চোখোচোখর বাসনা থাকলেও সে বাসনা মিটবে না।' 

381, প্রবোধ তীব্র চাপা গলায় বলে, 'সেই বিষ মনে পুষে আক্রোশ 
মেটানো হল! আচ্ছা মেয়েমান্ষ তো 2, 

সুবর্ণ বাঁলশটা উল্টে-পাল্টে ঠিক করতে করতে বলে, “কথাতেই আছে 
“সংসঙ্গো স্বর্গবাস”! বিষ-পুট্ীলর সঙ্গাগৃণে জমছে বিষ! 

প্রবোধও পাল্টা জবাব দেয়, 'আমার মনে বিষ 2 আর নিজের ভান? 
সে তো একেবারে বিষের ছুরি ! 


১৪ সবর্ণলতা 


সবর্ণ শয়ে পড়ে বলে, 'তা সেটা যখন বৃঝেই ফেলেছ. ছর-ছোরার 
থেকে সাবধান থাকাই মঞ্গল।' 

বটে» আমি পুর্ষবাচ্ছা, আম শালা সাবধান হতে যাবো পাঁরবারের 
“মুখ” আছে বলে 2, 

'তা হলে হয়ো না!' সূবর্ণ অবলটলায় বলে, 'ছোটলোকের মতন হাড্রাই- 
ডোমাই করো রাতাদিন !' | 

'তবু তৃমি তোমার জিভ সামলাবে না 2, 

'হক্‌ কথায় সামলাবো না।' 

হঠাৎ একটা কাণ্ড ঘটে। 

প্রবোধচন্দ্র বীরপুরুষের ভঙ্গীতে উঠে বসে স্ত্রীর মাথার তালের মত 
খোঁপাটা ধরে সজোরে নেড়ে দিয়ে বলে, 'তোমার আস্‌পদ্দার মানা বাড়তে বাড়তে 
বন্ড বেড়ে গেছে দেখছি! গলাধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করে দিতে পাঁর তা 
জানো 2, ] 

তুমি আমার চুলের মুঠি ধরলে!' সবর্ণ উঠে বসে। 

সবর্ণর ফর্সা ধপধপে গালের উপর বড় বড় কালো চোখ দুটো যেন জলে 
ওঠে. ভয়ানক 'িছ্য একটা বুঝি বলতে চায় স্‌বর্ণণ তারপর সহসাই গম্ভশর 
গলায় বলে, 'জানবো না কেন? খুব জাঁন। বাগঙালশর মেয়ে হয়ে জল্মেছি, 
আর এটুকু জানবো না? 

প্রবোধ বোঝে বেগতিক, গ হপ্রবেশের সুখের দিনের রাতটাই মাটি। তাই 
সহসাই সর বদলায়। নিতান্ত ঘাঁনষ্ঠ হয়ে সরে এসে বলে. কেবল রাগ বাড়িয়ে 
দিয়ে মন্দ কথাগুলো শোনার সাধ। এই কট: কথাগুলো তাঁমই মুখ দিয়ে নার 
করাও। আমি শালা এঁদকে সারাদিন “হাপু গুনছি” কখন রাত আসবে, জার 
মহারাণী মেজাজ দেখিয়ে নাঃ, তুমি বড্ড বেরাঁসক " 

সংবর্ণর বয়েস চোদ্দ বছর। 

অতএব প্রবোধের জয় হতে দোর হয় না। 

কিন্তু সে কি সাঁত্যই জয় ? 

জয় যাঁদ তো অনেক রান্রে পারত্ৃপ্ত পৃরুষটা যখন নাক ডাঁকয়ে ঘুমোতে 
থাকে. ঘরের বাতাস উষ্ণ হয়ে ওঠে কেন একটা ভয়ঙ্কর আক্ষেপের দীর্ঘশবাসে ? 

যে দশর্ঘ*বাসটা কথা হয়ে উঠলে এই রকম দাঁড়ায়, “এরা এরকম কেন? 
সারাজীবন এদের নিয়ে কাটাতে হবে আমায় ! 

কল্ত এটা সুবর্ণলতারই বাড়াবাঁড় বোকি। 

সাধারণ ঘরসংসারী মানুষ এ ছাড়া আর কি হয়? সবাই তো এই কথাই 
জানে, মানুষকে খেতে হয়, ঘুমুতে হয়, বংশবৃদ্ধি করতে হয় এবং সেই কাজ- 
গুলো নিশ্চিন্তে সম্বাধা করবার উপায় হিসাবে টাকা রোজগার করতে হয়। 

আবার খেটেখটে ক্লান্ত হলে তাস-পাশা খেলতে হয়, মাছ ধরতে হয়, রকে 
আর বুড়ো হলে তীর্থ-ধর্ম গুরুগোবিন্দ করতে হয়। 

এরা জানে মাকে ভান্ত করতে হয়, স্ত্রীকে শাসন করতে হয় এবং সর্ব বিষয়ে 
মেয়েমানুষ জাতটাকে তাঁবে রাখতে হয়। শুধু মৃন্তকেশীর ছেলেরাই' এরকম, 
একথা বললে অন্যায় বলা হবে। আঁধিকাংশই এরকম। তারতম্য যা সে কেবল 
ব্যবহারবিধিতে। 


সুবর্ণলতা ১৫ 


সংবর্ণ বৃথাই দুষছে তার শবশুরবাড়কে। অকারণেই ভাবছে-_ হায়, মন্্- 
বলে সমস্ত পাথিবপটা ওলট-পালট হয়ে গিয়ে যাঁদ মাঝখানের এই দিনগুলো 
মুছে যেত! যাঁদ রাত পোহালেই দেখতে পেত সূবর্ণ, ন বছরের সুবর্ণ তাদের 
সেই মুক্তারামবাবু স্ট্রটের বাঁড় থেকে স্কুলে যাচ্ছে বই-খাতা দিয়ে! সুবর্ণর 
মা হাঁস-হাঁস মুখে দরজায় দাঁড়য়ে আছে! 

একবার যাঁদ এমন হয়, জীবনে আর কখনো সুবর্ণ তার ঠাকুমার ছায়া 
মাড়াবে না। ঠাকুমার কাছে দেশের বাড়তে একা না গেলে তো মাকে ল:কয়ে 
এমন হুটহক্কার বিয়ে 'দয়ে বসতো না কেউ সুবর্ণর! 

এতাঁদনে ভা তা হলে হয়তো পাসের পড়া পড়তো সংবর্ণ। 

না, মা কক্ষনো তার বিয়ে দিতো না তাড়াতাঁড়। বাবু বললেও না। 
ঠাকুমাই তার শান। ঠাকুমা তাঁর সইয়ের মেয়েকে নাতনীর শাশুড়ী করে দিয়ে 
সইয়ের কাছে সুয়ো হলেন। সাথে কি আর ঠ।কুমার কাছে যেতে ইচ্ছে করে না 
সুবর্ণর ১ মান্‌ষটাকে যেন তার জশবনের শাঁন মনে হয়! 

বড় দুঃখ হয়, অপমান হয়, বাতদৃপুরে এইসব চিন্তায় ছটফট 
করে মরে সুবর্ণ, আর সমস্ত ছাপিয়ে মায়ের উপর একটা দুরন্ত আঁভমানে দীর্ণ 
হতৈ থাকে। 

মা তো 'দাব্য চলে গেল! 

সুবর্ণ মরলো ক বাঁচলো একবার ভাবলও না। মা যাঁদ কলকাতায় থাকতো, 
সুবর্ণকে এমন করে একদুয়োরন হয়ে পড়ে থাকতে হতো! 

হয়ে এসে মায়ের জন্যে কি কম গঞ্জনা সইতে হয়েছে সংবর্ণকে ? 
তখন মানে বুঝতো না সব কথার, এখন তে। বোঝে! বোঝে তো কী কলঙ্কের 
ডাঁজ মাথায় নিয়ে সবর্ণর জাঁবন শুরু! 

সুবর্ণর সামনেই তো গিন্লীরা বলাবাঁল করেছে, 'হসাগা ঘরণী * নখ, 
“সংসারী” বিয়ের ধুগ্যি দু-দুটো ব্যাটা, অমন শিবতৃল্য স্বামী, আর মগী [কি 
না কূলে কালি 'দয়ে চলে গেল! 

মুস্তকেশী বেয়ানের দোষ ঢাকতে যত না হোক, নিজের বংশের মান 
সামলাতেই তাড়াতাঁড় বলতেন. 'কুলে কাঁল' আঁবাঁশ্য নয়, তবে স্বামী-পুভ্তুরের 
মুখে চুনকালি দিয়ে তো বটেই। মেয়েকে ইস্কুলে দিয়ে হাত করবেন, এই 
বাসনায় ছাই পড়লো, শাশুড়ী বেগাঁতিক দেখে ন্মতনটাকে নিজের কাছে আনিয়ে 
নিয়ে বটপট বে 'দিয়ে ফেলল, এই রাগে গরগাঁরয়ে মানুষ ঠিকরে চলে গেলেন 
কাশীবাস করতে । 

কাশীবাস! হত! এই বয়সে কাশীবাস ! 

মাহলারা নাক 'সপ্টকোন। অর্থাৎ পুরোপুরি অগ্রাহ্ই করেন কথাটা। 
এতক্ষণ যে সুবর্ণর মা'র 'বয়েসে'র ব্যাখ্যায় তৎপর হাচ্ছিলেন, তা মনে রাখেন 
না। 

মুস্তকেশী আবার সামলান। 

বলেন, 'কাশীতে যে বাপ বুড়ো আছেন গো মাগনর ! 

'থাকুক'। ঝতকার 'দয়েছেন তাঁরা. 'বলি স্বামী-পারত্যাগনশ তো বটে! 
সে মেয়েমানুষের আর রইল কি? তুমি ভাই মহৎ, তাই আবার ওই বৌকে 
ঘরে তুলেছ, কোন না হাতেও জল খাবে? 

মৃস্তকেশশ সদর্পে ঘোষণা করেছেন, 'জল ? জল আমি কোনো বোঁটর হাতেই 


১৬ সুবর্ণলতা 


খাই না। আপন পেটের মেয়েদের হাতেই খাই নাকিঃ যোদন, থেকে হাত 
শুধু করেছি, একবেলা স্বপাক হবাধ্য, আর একবেলা কাঁচা দুধ গঞ্গাজল, 

গরাবনী মুস্তকেশী অতঃপর আপন কৃচ্ছ;সাধনের ব্যাখ্যা করতে বসতেন, 
সুবর্ণ হাঁ করে শুনতো। 'হাঁ” করেই, কারণ তখন তো জানতো না সুবর্ণ, 
আচমন খাদ্য মানে, কি, অম্বুবাচখী কাকে বলে, নিরম্ব: উপোসের ?দন বছরে 
ক'্টা ? 


দীর্ঘ*বাস-মর্মরত ঘর ক্রমশ স্থির হয়ে আসে, সারাদনের পারশ্রান্ত 
মেয়েটার চোখে ঘুম আসে নেমে, সঙ্কুচিত হয়ে ঘুমন্ত মানুষটার ছোঁওয়া 
বাঁচিয়ে শুয়ে পড়ে সে। রর রবি রগার লা 
কেমন ঘৃণা আসে, অপাবিব্র লাগে 

হয নর 
ভেবে বুকটা কেমন করে ওঠে। 

কন্তু কী করবে স্বর্ণ? 

চাঁরাদকে কত লোক, বিদ্রোহ করে কি লোক-জানাজানি কেলেগকাঁর 
করবে ১ তা ছাড়া সব দনগুলোই তো আজকের মত নয়? সব দিনেই কিছ? 
আর বিদ্রোহ আসে না। জের মধ্যেও কি নেই ভালবাসার আর ভালবাসা 
পাবার বাসনা ? 

কশ করবে তবে সে? ওকে ছাড়া আর কাকে? আর ওই মানুষটা ভাল- 
বাসার একটাই অর্থ জানে, আদর করবার একটাই পদ্ধাতি। 

পনেব না' বললে দাঁড়াবে কোথায় সংবর্ণ ? 


॥৩॥ 


মূন্তকেশীর চার ছেলে। 

সুবোধ, প্র বোধ, প্রভাস, প্রকাশ। 

বড় সুবোধ বাপ থাকতেই মানূষ হয়ে গিয়োছল, বাপই নিজের আঁফসে 
ঢুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, কালরুমে সেই মার্চেন্ট আঁফিসের 
বড়বাবুর পরবতর্শ আসনাঁটিতে এসে পেশচেছে সুবোধ, 
প্রকৃতপক্ষে তার টাকাতেই সংসার চলে। 

মেজ প্রবোধ এনদ্রাল্দ পাস করে অনেকাঁদন খেয়ে 
খোঁলয়ে বোঁড়য়ে এই ফিছাদন হল এক বন্ধুর সঞ্চে 
মলে একটা লোহা-লরুড়ের ব্যবসা ফে*দেছে। টাকাটা 
বন্ধুর, খাটুনিটা প্রবোধের। সেজ প্রভাস হচ্ছে বাঁড়র 
মধ্যে সেরা বিদ্বান ছেলে, এফ-এ পাস করে ফেলে সে 
ওকালাতি পড়বে পড়বে করছে আর প্রকাশ গোটা পাঁচ-ছয় ক্লাস পর্যন্ত পড়েই 
পাড়ার শখের থিয়েটারে স্ী-ভূমিকা অভিনয় করছে আর চুলের কেয়ার করছে। 
সবর্ণর বিয়ের সময় সংসারের অবস্থা প্রায় এই 'ছিল। 

অনেকাঁদন পর্যন্ত সুবর্ণ এদের সকলের পরো নাম জানত না। 'সুবো, 





সুবণ লতা ১৫ 


পেবো, পেভা, পেকা' এই ছিল মুস্তকেশীর সম্বোধনের ভাষা । ছোট ননদ 
বিরাজকে ডেকে একদিন ধরে বসলো সংবর্ণ, “তোমাদের সব নাম কি বল তো 
শুন! মা তো তোমায় “রাজু রাজ” করেন, রাজবালা বুঝি? 

“শোনো কথা! রাজু অবাক হয়ে বলে, 'এতাঁদন বে হয়েছে. *বশুরবাঁড়র 
লোকের নাম জানো নাঃ মেজদা বলে নি? 

সাঁত্য বলতে, রাজুর মেজদাকে কোনোদিন এ কথা জিজ্ঞেসও করে নি 
সুবর্ণ। মনেও পড়ে নি জিজ্ঞেস করতে । এখনই হঠাৎ মনে পড়লো, জিজ্ঞেস 
করে বসলো । কিন্তু সেকথা না ভেঙে সুবর্ণ ঠোঁট উল্টে বলে, “তোমার মেজদাকে 
জিজ্ঞেস করতে আমার দায় পড়েছে। তুমি রয়েছো হাতের কাছে, অন্যের 
খোশামোদ করতে যাবো কেন, 

বয়সে তিন বছরের ছোট ননদকেও এই তোয়াজটুকু করে নেয় সুবর্ণ। 

রাজু অবশ্য তাতে প্রীতই হয়। আঙুল গুনে বলে, 'বড়াঁদর নাম হচ্ছে 
সুশীলা, মেজাদর নাম সবালা, সেজাঁদ হচ্ছে সুরাজ, আমি বরাজ. আর 
দাদাদের নাম হচ্ছে, 

মহোতসাহেই গল্প হচ্ছিল নন্দ-ভাজে। হঠাৎ সমস্ত পাঁরাস্থাতিটাই গেল 
বদলে। বিরাজ রেগে ঠরঠাঁরয়ে উঠে গেল সেখান থেকে এবং তৎক্ষণৎ মেজ 
বৌয়ের দুঃসাহাঁসক সপর্ধার কথা সারা বাঁড়তে ছাড়িয়ে পড়ল। 

ভাসুর-দেওরদের নাম নিয়ে তামাশা করেছে সুবর্ণ, ননদের নাম নিয়ে 
ভোঙয়েছে! 

করেছে। সত্যই করেছে সেটা সুবর্ণ। 

দিল্তু সুবর্ণ ?ক জানতো একটু কৌতুকে এত দোষ ঘটবে ? আর নামের 
মানে জিজ্ঞেস করলে অপমান করা হয়? 

“সূরাজ' শুনে বলে উঠোছল সে, 'ওমা, সুরাজ আবার কি রকম নাম 2 
ও নামের মানে কি? 

একে যাঁদ ভেঙান্ো বলে তো ভেঙানো। 

তবে হণা, দেওরদের সম্পর্কে বলেছে বটে একটা কথা তামাশা করে। পর 
পর চারজনের নাম শুনে হি হি করে হেসে বলে উঠেছে, 'তা চার ভাইয়েরই মিল 
করে নাম রাখলে হতো! 

বিরাজ ভুরু কুণ্চকে বলোছল, “সুবোধ-প্রবোধের সঙ্গে আর মিল কই 2" 

সুবর্ণ হেসে কুটি কুটি হয়োছিল, “কেন, অবোধ-নির্বোধ !' 

সঙ্গে সঙ্গে ঠিকরে উঠোৌছল বিরাজ, বয়সের থেকে অনেকখানি জোরালো 
ঝঙ্কার দিয়ে বলেছিল, 'এত আস্‌পদ্দা তোমার মেজ বৌ? সেজদা ছোড়দাকে 
তুমি নিবদ্ধ বলতে সাহস পাও 2 রোসো, মাকে বলে দিয়ে আসছি! 

মাকে বলে দেওয়ার নামে অবশ্য সুবর্ণর মুখটা শুকিয়ে ?গয়োছল। ব্যস্ত 
হয়ে ওর হাত চেপে ধরে বলোছিল, “ওমা, তুমি রাগ করছ কেন, ভাই? আম 
তো ঠাট্রা করোছ-_ 

কন্তু বিরাজ হাত ধরার মান রাখে নি. হাত ছাঁড়য়ে নিয়ে চলে গিয়োছল। 

সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য মুস্তকেশীর আঁবরভাব। 

চেশ্চানো না, ধমকানো না, থমথমে গলায় বললেন, “কোন্‌ লক্ষ্নীছাড়া ঘরে 
মানুষ হয়োছলে মেজবৌমা, শিক্ষা-সহবৎ নেই? এঁদকে পাকা পাকা কথার 
জাহাজ? বাঁল পেবা-পেকার নাম নিয়ে ধিক্‌ দিয়েছ কেন শান ?' 

৬ 


১৮ সুবর্ণলত। 


সুবর্ণ এবার সাহস সণ্চয় করে বলে ফেলে, “আমি তো ঠাট্টা করোছ।, 

'ঠাট্রাঃ ঠাট্টা করেছ? বাল মেজবৌমা. ঠাট্রাটা কাকে করেছ? এই 
শাশুড়ীমাগীকে, আর সেই মরা শ্বশুরকে তোঃ নামকরণ তো ওরা নিজেরা 
করতে বায় নি, এই আমরাই করোছি। সাতজল্মে এমন কথা শুনি নি যে, পুটকে 
একটা বৌ এসে ঠিকৃজি-কুলাজ চাইতে বসে, নাম নিয়ে ব্যাখ্যানা করে। এপযা, 
পেবা-পেকা শুনলে কী বলবে গো! 

সবর্ণলতা বলে ফেলে, “সবাইকে যাঁদ শুনিয়ে বেড়ান, তবে আর কি 
করবো ? আমি তো কাউকে শোনাতে যাই নি। ঠাট্রী করে বলেছিলাম, ছোট- 
ঠাকুরঝি লাঁগয়ে দিতে গেল কেন ?, 

বৌয়ের মুখ থেকে এমন স্পষ্ট পাঁরম্কার ভাষা শোনার অভ্যাস মুস্তকেশণীর 
নেই। বড়বৌ উমাশশশর মুখ দিয়ে সাত চড়ে 'রা” বেরোয় না। বোনপো-বোৌ 
ভাগ্নেেবৌ তা-ও অনেক দেখেছেন, পেটে পেটে বজ্জাতি, হাড়-হারামজাদা হলেও 
মুখে এমন খই ফোটায় না কেউ। 

আরো থমথমে গলায় বলেন, 'আমার গভেরি মেয়ের অমন লাগানো-ভাঙানো 
স্বভাব নয় মেজবৌমা। ভাইদের ঘেন্না দেওয়া দেখে প্রাণে বড় লেগেছে তাই 
বলে ফেলেছে । তোমার চরণেই কোটি কোটি নমস্কার মা। নামের আবার 
মানে চাই! বাপের কালে শন নন এমন কথা । জানতাম না তো ঘরে আমার 
যত বো আরবে ভা হজে মানে এতে সাজে লাম বাতা আচ্ছা 
আসক আজ পেভা, সে তো দুটো পাস করে তিনটে পাসের পড়া ধরছে, 
নাক ওকালাঁত পড়বে। তাকেই জিজ্রেস করবো কোন- নামের কী মানে? আর 
রীতি সিটির রনির ররর 

সুবর্ণ আভমানী,. কিন্তু সুবর্ণ কথায় খই ফোটায়, আত্মস্থ থাকতে পারে 
না। রাগ হলে চাপবার ক্ষমতা নেই সুবর্ণর। তাই সুবর্ণ ফের শাশুড়বর 
মুখের উপর বলে বসে. “আপনারা বন্ড তিলকে তাল করেন, তুচ্ছ কথা নিয়ে এত 
হৈ-চৈ করতে ভাল লাগে! 

মুস্তকেশী বসে পড়েন। 

মুক্তকেশী বলেন, 'রাজু, এক ঘাট জল আন, মাথায় থাবড়াই। সই-মা 
আমার কত জন্মের শত্রু ছিল গো, এই মেয়ে গাছিয়েছে আমায় ! 
মাথায় থাবড়ে বলেন, 'এ বৌ' নিয়ে ঘর করা হবে না আমার. 'দিব্যচক্ষে দেখতে 
পাঁচ্ছ সেই ভাবষ্যং। রাজু দোরটা দে, আমি একবার বাদুড়বাগান ঘরে আঁস। 
মাথার মধ্যে আগুন জবলে উঠল ।, 

মাথার মধ্যে আগুন যখন-তখনই' জলে ওঠে মন্তুকেশীর। একটা মানত 
গিয়েছেন এই পর্যন্তি। বাকী িতন-তনটে ছেলেকে টেনে তলতে হয়েছে, শেষ 
মেয়েটা বিয়ের যুগ্যি হয়ে উঠল। 

এখন তবু দুই ছেলে রোজগার করছে. বড়র মাইনেও বেড়েছে । তখন ষে 

তত চলেছে. ঈশ্বর জানেন আর মুন্তকেশী জানেন। সেই সব কম্টই 

আগুনের উপাদান হয়ে মজ্‌ত আছে ভিতরে । একটু এদিক-ওদিকেই জহলে ওঠে 
সেই আগুন। 


গসুবর্ণলতা ১৬ 


কিন্তু ঘরসংসারে তো এতাঁদন এদিক-ওাঁদক 'ছিল না। যা কিছু বাইরে। 
রে ছেলেরা জোড়হস্ত, বড় বৌ তো মাঁটর ঘট, মেজ বৌ এসে ঢোকা পর্যন্ত 
থেকে থেকেই আগুন জবলে। আর উঠতে বসতে সেই পরলোকগতা “সইমা'র 
উদ্দেশ্যে অভিযোগবাণী বর্ষণ করেন। 

তাও ক পার আছে? 

মুখরা মেজ বৌ' কিনা বলে বসে, “মরা মানুষটাকে আর কত গাল দেবেন ? 
সেখানে বসে জিভ কামড়ে কামড়ে নতুন করে মরবে যে! একে তো আমি পোরা 
হয়ে রাতাঁদন শাপ 'দাঁচ্ছ__+ 

তুমি শাপ 'দচ্ছ! মুস্তকেশী হঠাৎ থাঁতয়ে গিয়েছিলেন, ভুরু কৃ্চকে বলে- 
ছিলেন, তুম শাপ দিচ্ছ কোন দুঃখে ?, 

'যে দুঃখে আপাঁন দিচ্ছেন সেই দুঃখে” সুবর্ণ আকাশপানে তাকিয়ে উদাস 
গলায় বলেছিল, 'আর এখন দোষ 'দিই না, অদেম্ট বলে মেনে নিয়োছি।' 

সুবর্ণর এই সব কথা শুধু মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, পুরুষদের 
কানেও ওঠে। মুস্তকেশীই' ওঠান, রোজ একবার করে হাতজোড় করে সংসার 
থেকে ছুটি চান। 

শুনে মুন্তকেশীর বড় ছেলে মাঝে মাঝেই বলে, “তোমরাই বা মেজ বৌমাকে 
শি বুঝতেই তো পারো, একটু তেজ” প্রকৃতির আছেন 

ণকন্তু মেজ-সেজ-ছোট এই মারে তো এই কাটে করে ওঠে । বয়সে বড় 
দেবরদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা কওয়া চলে না, তাই দেবররা একতরফা গর্জন 
করে, মাকে অপমান; ভেবেছেন কি মেজ বৌ2 মেজদার যাই রাজা দশরথের 
অবস্থা তাই পার পেয়ে যাচ্ছেন, আর কেউ হলে অমন পাঁরবারের মুখ জ্াতিয়ে 
ছ'ড়ে দিত। তেজাঁ প্রকীতি আছেন উন বলে তো দাদা তুম 'দাঁব্য আস্কারা 
দিলে, বলি মা'র অপমানটা গায়ে বাজল না তোমার ?" 

সুবোধ সহাস্যে বলে, “আহা, এক-ফোঁটা মেয়ের কথায় মা'র আবার অপমান 

রঃ গ্রাহ্য করেন কেন? 

কিন্তু প্রবোধ থাকলে দাদার বদলে ছোট ভাইদের সমর্থন করে। বলে, দয়ে 
আসতে হবে একাঁদন বিদেয় করে।' 

বলে, তবে গলাটা একটু নামিয়ে বলে। বৌকে নেহাৎং চাঁটয়ে রাখলে 
অসৃবিধে আছে। বৌ' বিগড়োলে 'নজের স্বভাব-চারন্র ভাল রাখতে পারা যাবে 
ক 'বগড়ে বসবে কে বলতে পারে 2 পুরুষমান্ষ তো? 

বাদুড়বাগানে মুক্তকেশীর সমবয়সী মাসতুতো বোন হেমাঙ্গনীর বাঁড়। 
মাথা গরম হয়ে উঠলেই এখানে চলে আসেন মুক্তকেশী। কারণ হেমার 
কথাবার্তা প্রাণ-জুড়োনো, হেমার কাছে জল উচু তো জল উচু, জল নীচু তো 
জল নীচু। 

মুস্তকেশণ যাঁদ বলেন, 'আমার বড় বৌটার মত ভালোমানূষ আর হয় না-” 

হেমা বলেন. “আহা তা আর বলতে! বৌ দেখলে চোখ জড়ো ।' 

মন্তকেশী যাঁদ বলেন, “আমার বড় বৌটার মতন বোকা আর ব্রিভুবনে 

হেমা বলেন, “তা যা বলেছ. দেখাঁছ তো সব! তুই যাই তাই ওই বোকাকে 
নিয়ে ঘর করছিস !, 


২০ | সুবর্ণলতা 


তবে মুস্তকেশীর মেজ বৌ সম্পর্কে সুরফেত্তা করতে হয় না কখনো 
শপ সব সময়েই বলা চলে, 'সাত্য মুস্ত, কী করেযেতুইবৌনিয়েঘর 


এ বায করাঘাত করে বলেন, উপায়? পেবোর তো শুধু 
মুখে হুমা, ভেতরে ভেতরে রূপৃসী বৌয়ের ছিচরণের গোলাম! আমার 


সেই তাই, চোর হয়ে আছি।' 

সমবয়মণী হলেও মুস্ত নাকি দু-চার মাসের ছোট, তাই হেমাঙ্গিনীর বর 
কাশশনাথ তাঁর সঙ্গে ছোট শালশজনোচিত কৌতুক-পাঁরহাস করে থাকেন, এবং 
দুই বোনে একত্র হলেই ঠিক এসে জোটেন। ভাল চাকার করতেন, দিল্লী-সিমলেয় 
কাজ ছিল, সম্প্রীতি রিটায়ার করে সাবেক বাঁড়তে এসে বসবাস করছেন। 
হেমাঞ্গিনী অবশ্য কখনো স্বামীর সঙ্গে সেই 'দল্লী-সমলের সখাস্বাদন করতে 
যান নি। বরের সঙ্গে বাসায় যাওয়ার নিন্দের ভয়েই শৃধু নয়, নিজের দিকেও 
জাত-যাওয়ার ভয় ছিল প্রবল। ওসব দেশে গেলে যে জাত-যাওয়া আনিবাধ' 
এ কথা হেমাঙ্গিনীর ছেলেবেলা থেকে শোনা । কাশীনাথের গ্হসৃখ ছিল শুধু 
ছুটি-ছাটায়। 

কাশীনাথ হেসে হেসে বলতেন, 'জাতটা আর বাঁচলো কই ? এই জাত-যাওয়া 
লোকটার ঘরে এসে তো শুচ্ছ!' 

হেমাঙ্গিনী ভ্রুভঙ্গী করত, 'ষত সব 'বটকেল কথা !' 

'আঁম চলে গেলে গঞ্গাস্যন কর? না শুধু লুকিয়ে একটু গোবর খেয়ে 
ফেল? 

হেমাঁঙ্গনী আরো ভূর কেচিকাতো। 

বেশি কথা বলতে জানতো না কখনো, এখনো না। সব কথাই মুস্তকেশীর। 
মাঝে-সাঝে কাশীনাথ এসে জোটেন কাটা ঘায়ে নূনের 'ছিটের ষত। 

তুমি চোর হয়ে আছ? বল কি মুন্তঃ তা হলে ডাকাত আবার কেমন 
দৈখতে 2 

হেমাঁঞ্নী বলে ওঠেন, 'আবার তুমি মস্করা করতে এলে? ও মরছে 

কাশশনাথ হুকো খেতে খেতে 'মিটিমাটি হেসে বলেন, 'লঙকাও মরে নিজের 
জবালায়! তার জবলান ঘোচাবে, এমন সাধ্য মা গঙ্গারও নেই! বাঁল, হচ্ছে 
তো? পরের মেয়েদের কুচ্ছো হচ্ছে তোঃ আশ্চাষ্য, বুড়ো বুড়ো দুটো ছিল 
তোমরা, আপন আপন দোষ দেখতে পাও না. ওই দুধের মেয়েগুলোর মধ্যে এত 
দোষও দেখো ?? 
.... মুস্তকেশীর মুখ লাল হয়ে ওঠে, তবু বলেন, “বুড়ো মাগীদের দোষ দেখতে 
তো জগৎ আছে জামাইবাবু! এই তুমিই তো কত দোষ দেখছ! তবে ওদেরও 
শিক্ষেদীক্ষের দরকার। কুচ্ছো আমরা কার না, হক কথা বলি। এই যেমন 


সবর্ণলতা ২৯ 


তোমাদের ঘরের ছোটটি, তেমনি আমার ঘরের মেজটি, তুল্যমূল্য। ওরা 
আম্নাদের দেশত্যাগণী করতে পারবে।' 

'তা বললে কী হবে হেমাগুগনী অসন্তোষের গলায় বলেন, “বুড়ো বয়সে 
উনি এখন ক্ষুদে ক্ষুদে বৌদের মনরাখা কথা বলতে আরম্ভ করেছেন! মনে 
করেছেন হাতে রাখ! আম মরে গেলে বৌরা যত্র-আঁত্ত করবে! মনেও করো 
না তা, বুঝলে? বাঁঘনীর চোখের সামনে আছে, তাই এখন এত ঠাকুরসেবা। 
মার একবার, তখন দেখো । বলবে ভাল আপদ হয়েছে, ঘাড়ে একটা বুড়ো 
*বশূর ! 

কাশীনাথ হেসে ওঠেন, “বালাই বালাই. তুম মরবে আর আমি 'জন্দা থেকে 
সেই দৃশ্য দেখবো 2 ছিঃ! তুম দু-দশ দিন মুস্তর মতন মাথা মুড়িয়ে হাত 
নেড়া করে স্বাধীনতার সুখটা ভোল করে নাও। বৈধব্যকালটাই তো মেয়ে- 
মানুষের আসল সুখের কাল গো! তাতে আবার যাঁদ বয়েসকালঢা একট. ভাঁটয়ে 
আসে! কার সাধ্য হক কথা বলে! 

'জামাইবাবূর যেমন কথা ! 

নুস্তকেশী কোপ প্রকাশ করেন। 

কাশীনাথ দমেন না। বলেন, 'হক্‌ কথা কও ভাই মস্ত, ভায়রাভাই যখন 
বেচে ছিল এত পা ছিল তোমার? এত .স্বাধশনতা ?' 

এইরকম হাড়জবালানো কথাবার্তা কাশীনাথের। কিন্তু শুনতেই হয়, 
উপায় কি? হেমা যে তাঁর প্রাণের সখী, হেমার সঙ্গেই যত শলা-পরামর্শ। 
1শষ্যাও বটে। 

বৌদের কিসে জব্দ রাখতে হয়, আর ছেলেদের কি করে বশে রাখতে হয়, 
সে বিদ্যাকৌশল মূুস্তকেশী শেখান হেমাঙ্গনীকে। 

আজ কিন্তু মুস্তকেশীই পরামর্শ চান, "ওই বেহেড বৌকে কি করে দাবে 
আ'ন বল 'দাক হেমা ?' 

হেমাঞ্গিনীরও বোধ করি হঠাৎ গুরুর পোস্ট পেয়ে বৃদ্ধি খুলে যায়। 
সোহাগেই তো ধরাখানা সরাখানা। তৃঁম একটা কোনো কৌশল করে ছেলেকে 
[নিজের কাছে 'নয়ে শোবে, দেখো দাঁদনে ঢিট হয়ে যাবে । 

মৃস্তকেশীর কৌশলটা মনঃপৃত হয়, কিন্তু সম্ভব মনে, হয় না। বলেন, 
“ছোঁড়া যে তা হলে বুক ফেটে মরবে! 

'বরং উল্টো রে মস্ত, ডাঁকনীদের খস্পর থেকে দুদিন সারিয়ে নিলে বাঁচবে। 
তুই একটা বানানো কথা 'বল্‌। বু যে স্বপ্ন দেখলাম, তোর সময় খারাপ 
আসছে। মাতৃমন্তর জপলে আর মায়ের আওতায় থাকলে তবেই রক্ষে। 


'তবেই রক্ষে বুঝলে বড় বৌমা, মুস্তকেশী বড় বৌমার কাছে 'ফিসাঁফিস 
করেন, 'এই বাঁক্যাট' ভালমত করে বুিও তো তোমার মেজ জাঁটকে। আম 
বলতে গেলে মন্দ হবো। তবে আমাকে তো আমার ছেলের কল্যণ-অকল্যেণ 
দেখতে হবে । 

না, তখনো সৃবর্ণলতার চোদ্দ বছর বয়েস হয় নি, তখনো তার অন্তরালে 
একটি প্রাণকণা আশ্রয়লাভ করে নি। তখনো সবর্ণরা সেই তাদের পুরনো 
বাঁড়তে ছিল, যে বাঁড়র উঠোনে দেয়াল তুলে তুলে তার জেঠশবশুর-খুড়- 


০১ সুবণলতা 


*বশুররা নিজ নিজ সীমারেখা নার্দন্ট করে নিয়ে বসবাস করতেন এবং শাশুড়ী- 
কুল খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকলেই এ বাঁড়তে বেড়াতে এসে সংসারের সবর্ত 
শোনদৃন্টি ফেলতেন। 

কিন্তু সকলেই এক দলে নয়। 

ছোট খুড়শাশুড়ীর শ্যেনদৃষ্টি এই নতুন ব্যবস্থার ওপর পড়তেই তিনি 
মুস্তকেশীকে এসে চেপে ধরলেন, 'হখ্যাগো নি, এ আবার কি আঁদখ্যতা 
তোমার 2 ঘরে ডব্‌্কা বৌ. প্রবোধ কেন তোমার আঁচলতলায় শুতে আসে 2 

মুক্তকেশী যাঁদও দজ্জাল, তবু জ্ঞা-ননদকে কিছুটা মেনে চলেই আসছেন.। 
তাই “বেশ করোছ তোমার তাতে কি'_না বলে সংক্ষেপেই বলেন, “বপন 
পেয়েছি।' 

স্বপন পেয়েছ? ওমা । স্বপন পাবার বস্তু-বিষয় পেলে না তুমি; কা 
স্বপন পেয়েছ শুনি? 

মুন্তকেশ আরো সংক্ষেপে বলেন, "স্বপন বলা নিষেধ 

ছোট বৌ ব্যঙ্গের সুরে বলে, জেগে স্বপন দেখলে বলতে নিষেধ হবে 
বৌক। তবে এও বলে রাখাঁছ নাঁদ, বজ্রআঁটীন করলেই গেরো ফসকায়। এখন 
তোমার বৌ মনের খেদ মনে চেপে তোমার অন্যায় বিধেন মেনে চলছে. ভবিষ্যতে 
এর শোধ নেবে তা জেনো। বুড়ো তো হতে হবে, ওদের হাতে তো পড়তে 
হবে।' 

মুন্তকেশ সদর্পে বলেন, কেন? মান্ষের হাতে পড়তে যাবো কেন? 
মা গঙ্গা নেই 2 যতক্ষণ চক্ষুছরদ থাকবে, ততক্ষণ 'াপট করে সংসারে থাকবো । 
ক্ষ্যামতা গেলে গঞঙ্গা-গর্ভে ঠাঁই নেব। তবে এ কথাটি বলে রাখ ছোট বৌ, 
যার দু$খে চোখে নোনাপাঁন ঝরছে তোমার, সোঁট সোজা নয়। খেদ! খেদে 
তো মরে যাচ্ছে! বড়বৌমার কাছে কী বলেছে জানো? “আঃ, শুনে বাঁচলাম, 
হাড়ে বাতাস লাগলো । 'কছাঁদন তব ঘুমিয়ে বাঁচবো । মা-দুগৃগার কাছে বর 
চাইবো সময় ওর যেন বরাবর খারাপ থাকে ।” শুনলে 2 এর পরও করবে খেদ 2 

“ওটা তেজ করে বলেছে', ছোটাগিল্নী হেসে ফেলে বলেন, দহখু জানিয়ে 
খেলো হবে না এই আর কী! তা তোমার ছেলের অবস্থা ক 2" 

মূন্তকেশীও তেজী। 

মুস্তকেশী খেলো হবার ভয়ে মটমটিয়ে কথা বলেন। তবু আচমকা 
মৃত্তকেশশ একটু অসতর্ক হয়ে যান। বলে ফেলেন, 'ছেলের কথা আর বাঁলসনে, 
কামরূপ কামিখ্যের জন্তু। ছট্ফটিয়ে মরছেন, সারারান্র ঘুম নেই। এই 
উঠছে, এই জল খাচ্ছে, আম তেমন মড়া হয়ে ঘুমোলে পারলে' পালায়। আমিও 
বাবা তেমাঁন ঘুঘু, যেই উসখুস করে সাড়া কার, জল খাব ঃ মশা কামড়াচ্ছে ? 
গরম হচ্ছে 2 

ছোটাগিল্নী হেসে ফেলে বলেন, “তা মা হয়ে তো কম শাস্তি করছ না তুমি 
ছেলের 2 

“সেই তো! সেই তো হয়েছে জৰালা, কুলাঙ্গার হয়েছে একটা । আমার 
সুবো অমন নয়। এই হতভাগার জন্যেই আবার মান খুইয়ে ঘরে পাঠাতে হবে। 
মাঁননী তো গরবে আছেন। শুনলে অবাক হবে, রাজুকে কাছে শুতে 
বলেছিলাম, নিল না ঘরে! বলে একলা খিল 'দিয়ে বেশ শোবো! 

হ্যা, বলেছিল সুবর্ণ । 


পবণ ৪৩ ২৩ 


তেরো বছরের সুবর্ণ। 

শামার অমন ভূতের ভয় নেই। একলা বেশ শোবো। বরং সুখে ঘৃমূবো, 
পারারাত একজনকে বাতাস করে মরতে হবে না।' 

কিন্তু মুস্তকেশীর গর্ভের কুলাঙ্গার এই অপমানের পরও মান খোয়ায়। 
আড়ালে আবডালে হাত ধরতে আসে । বলে, “তোমার প্রাণে ক একফোঁটা 
মায়া-মমতা নেই মেজ বৌ? ফ।দে-ফন্দীতে একবার দেখা করতেও ইচ্ছে হয় 
লা? 

সুবর্ণ হাত ধরতে না দিয়ে বলে, “কেন. দেখাঁছ না নাক ১ সর্বদাই তো 
দেখতে পাচ্ছি।' 

'আহা সে দেখা আবার দেখা! রাতেই না হয় ঘরে আসা বারণ. অন্য সময় 
একটু দেখা করতে দোষ কা? 
“আমার অত সাধ নেই।' 
'ভারি নির্মায়িক তুমি।? 
তোমাদের সবাই তো খুব মায়াবান !' 
“আহা, মায়ের একটা কারণ ঘটেছে তাই-” 
“'আমও তো তাই বলছি। তাঁমিই' হাঁপাচ্ছ।" 
'হাঁপাচ্ছি সাধে মেজ বৌ? মানুষের কলজে আছে তাই হাঁপাঁচ্ছ। 
'আমার তবে নেই সে কলজে! হল তো? 
“দোহাই তোমার, কাল দুপুরে একটিবার যেন চিলেকোঠার ঘরে দেখা 
পাই।' 

দুপুরে 2 আপস নেই 2 

“আপস পালিয়ে চলে আসতে হবে, উপায় কি ?' 

“তোমার মাথা খারাপ বলে তো আর আমার খারাপ হয় নি? 

“3, আচ্ছা! তার মানে স্বামীর প্রতি মন নেই। তার মানে মনে অন্য 
চিন্তা আছে। বেশ আমিও পুরুষমানূষ।' 

শুনে বাঁচলাম। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় কিনা। 

প্রবোধ রুদ্ধস্বরে বলে, “এইটুকু বয়সে এত কথা শিখলে কি করে বল 

১, 
পক জানি! 

হঠাৎ দালানে কার ছায়া পড়ে। প্রবোধ তাড়াতাঁড় চলে যেতে যেতে বলে, 
'আচ্ছা আচ্ছা, ঝগড়া থাক। দোহাই তোমার, মনে থাকে কাল দুপুরে" চিলে- 
কোঠার ঘরে! আপস পালিয়ে এসে যেন হতাশ না হই! 


িন্তু আশা কি পূর্ণ হয়েছিল প্রবোধের ঃ চিলেকোঠার ঘরে এসোঁছল: 
সুবর্ণ ? 


তো 


॥৪॥ 


হপ্যা, এসোছিল সুবর্ণ সেই চিলেকোঠার ঘরে। যখন সংসারের সব পাট চএকর়ে 
মুন্তকেশ নিত্যনিয়মে দ্বিপ্রাহরিক পাড়া বেড়ানোয় 
বোরয়েছেন, উমাশশশ গেছে ছেলে ঘুম পাড়ানোর ছুতোয় 
একট গা গাঁড়য়ে নিতে, খুদ আঁশ-নিরামিষ দ: প্রস্থের 
বাসনের পাহাড় নিয়ে উঠোনে বসেছে গুছিয়ে, তখন 
এই 'নারাবালর অবসরে পা টিপে টিপে সিপড়তে 
এল সংবর্ণ, আরো পা টিপে টিপে সিপড় উঠতে লাগল 
আঁভসারের ভাঙ্গতে পায়ের মল খুলে রেখে। 

কিন্তু পায়ের মল ক একা সবর্ণই খুলেছিল 2 

তা যেই খুল:ক প্রবোধের সেটা জানার কথা নয়, প্রবোধ তাই প্রতি মূহূর্তে 
একাঁট মলের রুনুঝুনুর অপেক্ষায় উৎকর্ণ হয়ে হয়ে ব্লমশ হতাশ হচ্ছে, রুদ্ধ 
হচ্ছে, ক্ষিপ্ত হচ্ছে। 

গরমে গলগলিয়ে ঘাম ঝরছে, মশার কামড়ে আরো গা ফুলে উঠেছে, নিজের 
হাতের চড় খেয়ে খেয়ে গায়ে ব্যথা হবার যোগাড়! তবু বোরয়ে পড়বার উপায় 
নেই। কারণ আশা ছলনাময়ী। তা ছাড়া বেরোবেই বা কোন্‌ লজ্জায়; *ও 
যে আজ আঁফিস পালিয়েছে সেটা তো আর ঢাক পিটিয়ে লোক-জানাজানি 
করবার কথা নয়। 

.আঁফস পালান্মে বলে পালানো, প্রায় ছেলেবেলায় স্কুল পালানোর মতই 
কাণ্ড করে বসেছে। দাদার সঙ্গে পাশাপাঁশ বসে ভাত খেয়ে, দাদার সঙ্গে এক- 
সঙ্গে বোরয়ে, দাদার চোখে ধুলো দিয়ে ফিরে এসেছে । ধুলো দেওয়ার সৃবিধেও 
রানার ঘোড়ার গ্াঁড়তে। মোড়ের 
মাথায় ছাড়াছাঁড় হয়ই 

১৯১০৯ পি একটু পরে টুপ করে নেমে আসে গাঁট গা 
বাঁড়পানে। এ সময় কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যাবার ভয় কম, কারণ পাড়া 
ঝেশটয়েই তো সব পুরুষ জাতীয়েরা অফিস ইস্কুলে চলে গেছে। মেয়েমানূষর! 
তো আর রাস্তায় বেরোচ্ছে না যে দেখে ফেলবে ? 

তব যাঁদ কারো বাঁড়র ঝি-চাকর 'কি স্বয়ং খুদুর সঙ্গেই দেখা হয়ে যায়, 
কোন্‌ কথাটা বলে মান রক্ষা করবে, সেটা তোর করেই রেখেছে! বলবে, “ওরে 
বাবারে, পেটের মধ্যেটা এমন মোচড় 'দিয়ে উঠল, মাঝপথে ফিরে আসতে হল 

না, এর থেকে সভ্য কোনো মিথ্যে কথা বানাতে পারে নি সুবর্ণলতার 
স্বামী। কিন্তু বাঁধ তখনও পর্যন্ত তার প্রাতি সদয়। তাই কোনো চেনা মুখের 
সঙ্গে মুখোমুখি হতে হল না প্রবোধচন্দ্রকে। আঁবশ্য সদর দোর দিয়েও 
ঢোকে নি সে। কি জানি দৈবদুর্বপাকে যাঁদ আজই ম্যস্তকেশশ এত বেলায় 
গর্গাস্নানে যান! 

হণ্যা, নিত্য গঞ্গাস্নানের পুণ্য অর্জন করে চলেছেন মুস্তকেশনী বিধবা হয়ে 
পর্যন্ত। বিরাজ তখনো নিতান্ত শিশু, তন্রাচ মুস্তকেশণ বৈধব্য ঘটবার সঙ্গে 
সঙ্গেই বৈধব্যের সর্বাবধ শুঁচিতা এবং কঠোরতা পালন করে আসছেন। চুল 
কেটেছেন, হাত শুধু করেছেন, পান ছেড়েছেন, রাত্রে আচমন খাদ্য ছেড়েছেন, 
ইত্যাঁদ ইত্যাঁদ। 





সুবর্ণলতা ২৫ 

ছেলেদের আঁফস পাঠিয়ে ম্তকেশী ঘাট-গামছা নিয়ে বৌরয়ে পড়েন। সে 
আন্দাজে বেরিয়ে গেছেন, কিন্তু কে বলতে পারে প্রবোধের ভাগই আজ-_ 

পাশের ওই মেথর আসার গাঁজ' দিয়ে ঢুকে পড়লে আর কোনো ভয় নাই। 
মৃস্তকেশী এর ধারে-কাছেও উশক দেন না কোনোদন। প্রবোধ 2 সে তো আড়াই 
পা বাড়ালেই শদ্ধু। আড়াই পায়ের কসরৎ ছেলেবেলা থেকেই অভ্যাস করা 
আছে মস্তকেশণর ছেলেদের। 

অতএব প্রবোধ নিচ্কস্টকে বাঁড় ঢুকে এঁদক ওঁদক তাকিয়ে ঝপ করে 
ছাতের ?সশড় ধরেছে। ধরেছে মানেই মরেছে। সেই বেলা এগারটা থেকে এই 
বেলা আড়াইটে ! চিলেকোঠার এই ঘরটাতেই কি জমাতে হয় ছাই সংসারের 
যাবতীয় ওণ্চা মাল 2 

পায়াভাঙা চৌকি, কলভাঙা তোরগ্গ, ডালাভাঙা হাতবাক্স, এসব ছাড়াও 
ছেড়া মশারি, পুরানো কাঁথা, বাতিল তোশক, ফুটো ঘড়া, কাঁচফাটা ছবির ফ্রেম 
_কী আছে আর কণ নেই!' ফেলবার নয়, ফেলবার নয়, এই সব বস্তুর আর 
গাতই বাক? 

অবশ্য ভবিষ্যতে ওদের আবার টেনেটুনে কাজে লাগাবার আশা আছে 
[কিছু কিছু । যেমন, সময় সুবিধে করে ধুনুরি ডেকে ছেড়া তোশক ধুনিয়ে, 
নতুন একটু খেরো কিনে তোশক বানিয়ে নেওয়া, কাঁথাগলোর উপর আবার 
একপ্রস্থ করে কাপড় বাঁসয়ে গোটাকতক ফোঁড় চাঁলয়ে নিয়ে কাজ চালানো, বাসন- 
ওলা এলে ঘড়াগুলো বদল দেওয়া, আর বাসনওয়ালশ এলে ছেণ্ড়া মশারির বদলে 
দু-একখানা পাথরের খোরা, কি কাঁসার বাট, নয়তো একটা পেতলের গামলা কি 
মোটা চিরুনি আর হাত-আয়না কিনে ফেলা! 

ফাটা ছবির ফ্রেমেরও সদ্‌গাঁত হয় বৈ কি! ভাঙা কাঁচেরও খদ্দের আছে। 
ভরদুপুরে বেরোয় তারা “কাচি ভাঙা--কাঁচ ভাঙা হাঁক পেড়ে। চোর সামলাতে 
পাঁচিলের মাথায় ভাঙা কাঁচ পৃততে কেনা হয় ওগুলো । 

মোটা কথা, গেরস্ত বাড়তে চট্‌ করে কিছ? ফেলে দেওয়ার কথা ওঠে না। 
ফেলাছড়ায় মা-লক্ষণী বিমুখ হন এ আর কোন গেরস্তর গ্িন্নী না জানে ? অথচ 
ওই সব কুদর্শন বস্তুগ্দলো, সময়সাপেক্ষে যাদের সদৃগাঁত হবে, তাদের কিছ? 
আর সর্বদা চোখের সামনে 'বাঁছয়ে রাখা যায় না! তাদের জন্যেই চোরকুঠ্যার, 
চিলেকোঠা, চাল, সাঞ্গা! 

মুস্তকেশীও গেরস্তর গিল্লীর পদ্ধাতিতেই চিলেকোঠাটাকে বোঝাই করে 
রেখেছেন। কোনো একাঁদন এ ঘরে তার আদরের পূত্ররত্ন 'পেবো এসে বসে 
বসে মশার কামড় খাবে আর নিজের গাল নিজে চড়াবে, এ কথা মুস্তকেশীর 
স্বপ্নের অগোচর। 

অথচ সেটাই ঘটছে। 

পেবো মশার ছুতোয় নিজের গালে নিজে চড়াচ্ছে, নিজের কান নিজে 
মুলছে, এবং নেহাৎ মাটিতে শতবর্ষের ধুলো বলে নাক ঘষটে নাকে খং দিতে 
না পারায় মনে মনে সেটা 'দিচ্ছে শতবার! 

ভরসা বলতে. আশ্রয় বলতে ভাঙা এই' তন্তুপোশটা। সেটাকে প্রবোধ ফ্‌ 
1দয়ে দিয়ে আলতো করে কোঁচার আগার ঝাপটা মেরে বসবার যোগ্য করে 
এপ আস পু জজ বু 

চৌকির ক্যাঁচকোঁচ শব্দটা নিয়ে না মৃশিলে পড়তে হয়, এই ভাবনাতেই কাতর 


২৬. সূবণলতা 


ছিল প্রথম দিকে, ক্রমশ সেটা চলে গেছে, এখন শুধু ভাবনা সুবর্ণ এলে কী কী 
কটু কথায় মনের ঝাল মেটাবে। 

কী ভেবেছে সে নিজেকে? 

মহারাণী ? 

তাই তীরেরি কাকের মতন, রাস্তার হ্যাংলা কুকুরের মতন হা-পিত্যেশ করে 
বসে আছে প্রবোধ, যে নাঁক সুবর্ণর স্বামী! জগতের সেরা গুরুজন! জাপান 
থেকে চিরুনি আসে, তাতে পর্যন্ত লেখা থাকে পতি পরম গুর:'। তার মানে 
তাদের দেশের মেয়েরাও এ উপদেশ শিরোধার্য করে। আর সবর্ণ হিন্দুর 
মেয়ে হয়ে, বাঙালীর মেয়ে হয়ে এই কষ্টটা 'দচ্ছে স্বামীকে ? 

প্রবোধ পারে না অমন পাঁরবারকে ত্যাগ করে 'দিতে ১. একবার যাঁদ মায়ের 
কাছে মুখের কথাটি খসায় প্রবোধ, যাঁদ বলে, “তোমার মেজবৌ তোমারই থাক 
মা, আমার দরকার নেই, আমার জন্যে চিমটে আছে, লোটা আছে, গোঁরমাটি 
আছে-_ মা দূর দূর করে বিদেয় করে দেবে না অমন অলক্ষ্নী, বৌকে 2 আর 
ছেলেকে ঘরবাসী করতে নতুন করে মেয়ে দেখে বিয়ে দেবে না? 

ভেবে দেখে না এসব গরাবনী দেমাকী! 

নাকি ভাবে প্রবোধের আর বৌ গুটবে না? 

পুরুষ বেটাছেলে, আস্ত চারখানা হাত-পা আছে, তার আবার বোয়ের 
অভাব ? ত্যাগ দিতেই বা ছতোর অভাব কি? মস্ত ছুতো তো রয়েইছে। 

মা! 

মা'র নামে বদনাম তুললেই তো চুকে গেল। 

এতাঁদন ত্যাগ করা হয় নি কেনঃ জানতাম না! 

ভেতরের কঞ্ধা জানতাম না। ব্যস! 

অদশ্য সেই অপরাধিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় কাঁরয়ে তাকে যথেম্ট লাঞ্ছনা 
করতে থাকে প্রবোধ, যথেচ্ছ কটুকাটব্য! করবে না কি করবে, মশার কামড়ে 
চাকা চাকা হয়ে গেল না সর্বাঙ্ঞ? ঘামতে ঘামতে লোনা হয়ে গেল না দেহটা £ 
এত জানিস আছে ঘরে. এত জঞ্জাল, একখানা ভাঙা হাতপাখা নেই'! যেটা 
থাকলে ন্মাক প্রাণটা এমন ঠোঁটের আগায় আসত না, আর হয়তো মেজাজ এত 
সপ্তমে উঠত না! 


। 

একখান্ম ফাটা ছবির কাঁচ নিয়ে নেড়ে নেড়ে বাতাস খেতে গেল হতভাগ্য 
বেচারা, ঝনঝাঁনয়ে ভেঙে পড়ল সেটা! লাভের মধ্যে কাঁচের টুকরোর বিভীষিকা 
ছড়িয়ে রইল চৌকির উপর। 

লক্ষনশছাড়া মেয়েমানুষটা আসুক একবার, আগে এই কচিগৃলোর বাবস্থা 
করিয়ে তবে অন্য কাজ। 

রাগতে রাগতে হঠাং একসময় চোখে জলই এসে যায় প্রবোধের। শুধৃ ক 
ওই পাজশ মেয়েমানষটা ? 

নিজের মা তার শর নয় ? 

গর্ধারণী মা! 

আরো তিনটে ছেলেও তো রয়েছে তাঁর? আর কাউকে কেন্দ্র করে স্বপ্প 
দেখতে পারলেন না? এই হতভাগ্য পেবোই তাঁর স্বপ্নে ঠাই পেতে গেল! 

কেন ? 


স্ুবর্ণলতা ২৫ 


কোন্‌ অপরাধে 2 

মা যাঁদ ওই িম্ভূতকিমাকার স্বপ্রাট দেখে না বসতেন, আজ কি এই দুর্গত 
ঘটতো প্রবোধের £ পনের-বিশ দিন উপোসা রাত কাটাতে কাটাতে তবেই না 
এমন মরায়া হয়ে উঠেছে প্রবোধ 2 বিনিদ্র রজনীতে মা আসেন গায়ে হাত 
বুলিয়ে দিতে, পাখার বাতাস করতে! কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে! সেই নূনের 
1ছটের জবালায় মা'র পায়ে মাথা খশুড়ে বলতে ইচ্ছে হয়, 'মা, তোমার স্নেহ 
সংবরণ কর মা। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা বাঁসও না।' 

তা সাঁত্যই তো বলা যায় না, তাই সব আরশ জমা হয় গিয়ে সেই ঘোমটা- 
ধাঁরণীর ওপর। এঁদকে তো ঘোমটার ভেতর খেমটা নাচ, শুধু স্বামীর 
বেলাতেই যত লজ্জা! 

সুবর্ণ যাঁদ চালাকি চাতুরশ খোলয়ে একটু অগ্রণশ হতো, এক-আধবার 'ি 
সুযোগ জন্টতো নাঃ তা নয়, মহারাণী যেই ঘরে ঢুকলেন, শব্দ করে খল 
ঠুকলেন, বাস! হয়ে গেল রাত কাবার! 

প্রথম যখন শোনা গেল সুবর্ণ একলা শুতে চেয়েছে, বলেছে তার অত ভয় 
নেই, প্রবোধ আশায় কাম্পত হয়েছিল, আহনাদে পুলাঁকত হয়োছিল। 

বোঝা গেছে! 

মানে বোঝা গেছে! 

চালাকের ধাঁড় তো! 

খেয়াল হয়েছে ঘরে রাজু-ফাজু থাকলে অস্মাবধে, ধরা পড়ে যাবে চোরা 
আঁভসার, তাই! 

হায় কপাল, সে আশা মরীচিকা মাত্র! 

বসে বসে মজা দেখছে, স্বামীর ছট্ফটানি যন্ত্রণা আরয়ে তারিয়ে উপভোগ 
করছে! নরকেও ঠাঁই হবে এই পাঁপিষ্ঠার ? 

হবে না! নরকেও ঠাঁই জুটবে না ওর! 

রাগ বেড়েই চলে। কারণ তদুপার পেটের মধ্যে আগ্মদাহ। কোন্‌কালে 
অফিসের ভাত খেয়ে বৌরয়েছে, কখন সে ভাত হজম হয়ে গেছে. তেষ্টায় ছাঁতি 
ফাটছে, এক ফোঁটা জলও পেটে পড়ে নি! 

আঁফসে থাকলে এতক্ষণে চার-হছুখানা হিজ্গের কচরী. গোটা আন্টেক আলুর 
দম, আধ-পোটাক বোঁদে সেটে, গেলাস দুই জল খেয়ে নেওয়া হয়ে যেত. সে 
জায়গায় এই! পেটের কলকক্জাগুলো পর্যন্ত বাপান্ত করছে! 

আসবে না! 

আসবে না পাপীয়সী! 

বোৌরয়েই পড়তে হবে এবার! 

সাত্যই তো আর গুমখুন হতে পারে না প্রবোধ ? 


অবস্থা যখন এমাঁন চরমে, তখন হঠাৎ মদুমন্দ হাসির আওয়াজ যেন 
দরজার ওঁদকে চিকৃমিকিয়ে ওঠে! 

শখ খি'খি 'খি' কোতুকের হাঁস! 

তার মানে প্রবোধের অবস্থা অনুমান করে আমুদে হাসি হাসছে। 

প্রবোধ কি দরজা খুলেই ওর গলাটা টিপে ধরবে? নাক “নষ্ঠুরা 
পাষাণ” বলে দ? হাতে দাপটে ধরে-- 


২ সুবর্ণলতা 


দরজায় টোকা পড়ল। 

যেটা আগে পেকে ঠিক ছিল। 

প্রবোধ 'খল বন্ধ করে বসে থাকবে, ভি িটোকা নার 
দৈবাং যাঁদ অন্য কেউ এসে দোর ঠেলে! তার থেকে সাত্কেতিক ব্যবস্থা করে 
রাখাই ভাল! 

টোকা পড়ল। 

একবার, দুবার, তিনবার । 

কৌঁচার কাপড় তুজে মুখ মুছতে মুছতে দরজার খিলটা খুলে 'দিল প্রবোধ, 
আর সঙ্গে সঙ্গে চমকে ঠিকরে ফের চৌণকর ওপর গিয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর একটা 
আঁ আঁ শব্দে! 

শব্দটা একবার ডুকরে উঠেই একেবারে পাক খেয়ে দুদ্দাঁড়য়ে নিচে নেমে 
গেল পড়তে 'আঁ আঁ" রেশ ছাঁড়য়ে! 

1বরাজ! 

বিরাজের ওই রোগ। 

৯-পদিন সেবন | ারারীরন আর 
ভয় পায় ও 'ফি হাত! বিরাজকে ভয় দেখানো এ বাঁড়র সকলের একটা পাঁরিচিত 
খেলা! 

প্রাণ গেলেও বিরাজ অন্ধকারে দোতলার সিপড়টায় ওঠানামা করে না। ফস 
করে কারুর ঘরের িলসুজ থেকে 'পাশ্দিপ'টা তুলে নিয়ে এসে সিপড় ওঠে 
নামে। এমন কি দিনদৃপ-রেও ভূতের ভয় বিরাজের ! 

তা 'বিরাজকে নিয়ে বাড়ির সেই পাঁরচিত খেলাটাই কি খেলতে বসৌঁছল 
সুবর্ণ 2 বিরাজকে ভয় দৌঁধিয়ে কৌতুক পেতেই তাকে ভুলয়েভালিয়ে ছাতে 


8৮ এটি ৪ কানুন 

খেলার উল্লাস আর একজনকে নিয়ে ? 

তা কৌতুকাঁপ্রয় সুবর্ণর ভাবভঙ্গীতে কিছু বোঝা যায় নি। খুব নিরীহ 
গলায় চ্যাপচ্াপ 'বরাজকে বলে রেখোঁছল সে. 'মা বোরিয়ে গেলে চিলেকোঠায় 
[য়ে বাঘবন্দশ খেলবে ছোটঠাকুরাঁঝ ? 

বাঘবন্দী খেলাটা বিরাজেরই পরম 'প্রয়, কারণ অক্ষর পরিচয়ের বালাই তার 
নেই, দুপুরের অবকাশকে সহনীয় করবার জন্য উপায় জানা নেই। উমাশশীর 
মত ঘম মারতেও ওস্তাদ নয় সে। 

তাই সুবর্ণ যখন দুপুরবেলা চাঁপচ্াপ একখান বই নিয়ে বসে, বিরাজ 
বাঘবন্দীর জন্যে পাঁড়াপণীড় করে। 'না খেললে বই পড়ার কথা মাকে বলে 
দেব' বলে শাসায়। সুবর্ণকে নিতান্ত আনচ্ছা সত্তেও ঘটি কাঁড় নিয়ে বসতে 
হয়। সে আনচ্ছা বিরাজের চোখে ধরা পড়ে বোক! 

কাজেই প্রস্তাবটা 'বিরাজের কাছে প্রায় অলৌকিকই লেগোছল। 

তাছাড়া চিলেকোঠার ঘরে। 

যেখানে ভরদুপুরে গেলে গা ছমছম করে। 
এসি রাত? বিরাজ অবাক হয়, দোতলার 

তো--' 

না, ন্তকেশীর সামনে বৌ মানুষের অমন সময় 'অপচো' করা খেলা চলে 


সূবর্ণলতা ২৯ 


না! বৌ অবসর সময়ে সলতে পাকাবে, সুপার কাটবে, চালডালের কাঁকর 
বাছবে, নিদেনপক্ষে কাঁথা সেলাই করবে, এটাই' বাধ। কচি ছেলের মা-দের 
যাঁদ বা ঘুমের কিছুটা ছাড়পন্র থাকে, অন্যদের তো আদোৌ' না। 
ওই সব কাজ না করে বৌ কড়ি ঘটি চেলে খেলতে বসবে 2 মা-লক্ষ 
[টিকবেন তাহলে ? চার হাত তুলে ধেই ধেই করে বৌরয়ে যাবেন না? 
অবশ্য 'গ্রাবু'র আসরে বাঁধা বরাদ্দ' আছে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, 
রোদ ব্টি বন্ত্রপাত, সব কিছ তুচ্ছ করে দ্বিপ্রাহারক সেই তাসের আজ্ভায় 
গিয়ে হাজির হন মুস্তকেশী! আবার সেখানে এক স্যাকরা-গিল্লশর সঙ্গে ছোঁয়া- 
ছয় হয়ে যায় বলে এসে স্নানও করেন। কিন্তু মুস্তকেশীর সঙ্গে কার 


মুন্তকেশশর সামনে তাই খেলা চলে না। মেয়ের জন্যে মনটা যাঁদবা একট 
দোলে, তবু বৌ নষ্ট তো আর করতে পারেন না মেয়ের মায়ায় পড়ে ঃ 

মেয়েকে অনেক খোশামোদ করেন নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে কিন্ত যেতে 
চায় না বিরাজ। বলে, পশন্নলীদের কাছে তো সেই মুখে তালাচাঁব 'দিয়ে বসে 
থাকা! কথা কইলেই বকবে !' 

'বকবো নাতো ক? পরের ঘরে যেতে হবে না? বলে চলে যান মুন্ত- 
কেশণ পেট-কাপড়ে তাসজোড়াঁট বেধে নিয়ে। চাপচাপ শিখিয়ে দিয়ে যান, 
'দুপুরভোর যেন গাল-গল্প করে মেজবৌমার কাজ কামাই কাঁরয়ে দিসনে।" 

খেলার আকর্ষণ তাই পুরোদমেই আছে। কিন্তু মন্তকেশণীর অসাক্ষাতে 

কেন ? 

সুবর্ণ বলে, 'আছে মজা! গেলেই দেখতে পাবে। 

“বলই মনা ছাই! কুলের আচার সাঁরয়ে জমা করে রেখে এসেছ বাঁক ?" 

2? 


'বলবো কেন? বলাছ তো গেলেই দেখতে পাবে ।' 

'বলই নাবাবা! 

বললে মজা থাকবে না। 

পপ 

“সুবর্ণ কৌতুকে ফেটে বলে, ধরে নাও তাই । 

সবর ই কৌতুকে ফাটা মা দেখে িরাজও পালিত হয 

না 

অবশ্য সেই থেকে আরো অনেকবার প্রশ্ন করে করে আঁস্থর করেছে বিরাজ, 
কিন্তু একা একবার ছুটে গিয়ে দেখে আসবে, সে সাহস হয় 'ি। 

অথচ শত সাধ্যসাধনাতেও স্বর্ণ মজা ফাঁস করে 'ন। 

নিচেয় সংসারের পাঠ যখন শেষ হল? সুবর্ণ বলে, চল এইবার! মঙ্গ 
জোড়াটা খুলে পা টিপে টিপে চল।' 

ওমা কেন? 

[বিরাজ ভয়ে আঁতকে ওঠে, 'মল খুলবো কেন? 

“আছে মজা! আঁমও খুলাছি।' 


৩০ স্বর্ণলতা 

“আমার বাপু বন্ড ভয়-ভয় করছে।' 

'ভয় আবার কি? বল না, ভূত আমার পুত শাঁকচুন্ন আমার ঝি, রাম- 
লক্ষণ বুকে আছেন ভয়টা আমার কি ? 

অন্ভুত কিছু একটা কৌতুকের আশায় অগত্যাই ওই মল্টা জপ করতে 
করতে সুবর্ণর সঙ্গে সঙ্গে ছাতে ওঠে বিরাজ। 

তারপর ? 

তারপর সুবর্ণ বলে, “আস্তে দরজায় তিনটে টোকা দে!” 

“ও বাবা, কেন? 

'দে না! দেখাব স্বপ্নে যা ভাবস 'ন তাই দেখতে পাবি 

তুমি আমায় ভূতে খাওয়াতে চাও নাকি, বল তো? 

সংবর্ণ এবার উদাস হয়, 'বেশ, সে “সন্দ” যাঁদ হয়ে থাকে তোমার তো 
দিও না টোকা! এতাঁদন আমাকে দেখেশুনে এত অবিশ্বাস আমার 'ওপর ? 

বিরাজ লজ্জিত হয়। 

স্বভাবদোষে আর শিক্ষার দোষে সব কথা মা'র কাছে লাঁগয়ে দেওয়ার 
অভ্যাস থাকলেও মেজবৌঁদ তার কাছে আকর্ষণীয়। মেজবৌঁদর কাছে চুল 
বাঁধতে সুখ, মেজবোঁদর কাছে সাজতে সুখ, মেজবৌঁদর সঙ্গে খেলতে. গল্প 
করতে সুখ । মেজবৌদির আঁভমানে তাই নরম হয় সে। 

বলে. 'বেশ বাবা বেশ, দিচ্ছি টোকা, বাঁচি বাঁচবো মার মরবো !' 

সুবর্ণ হেসে ওঠে শখ 'খি' করে। 

তারপর টোকা! 

তারপর খিল খোলার শব্দ! 

সত্গে সথ্গে স্বপ্নের অতীত সেই দ্য! 

যে মেজদা ভাত খেয়ে অফিস চলে গেছে, সেই মেজদা খিল খুলে দিল 
ছাতের দরজার! 

কিন্তু সাত্যিই কি মেজদা 2 

ওই কি মেজদার মুখ ? 

অমন ভয়ঙ্কর ? 

অমন বীভৎস ? 

বিরাজ তবে আঁ আঁ করতে করতে ছুটে পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়বে 
না কেন? 

হণা, প্রায় অজ্ঞান হয়েই পড়োছিল বিরাজ, আর এই কৌতুকের জন্যে তাই 
অনেক খেসারৎ দিতে হয়োছল স.বর্ণকে। 

মৃস্তকেশীর মেয়েকে অজ্ঞান করার অপরাধে, মুস্তকেশীর ছেলেকে লা্থন্ন 
করার অপরাধে! আবার শুধু মৌখিক তিরস্কারই' নয়, দৌহক শাস্তিও পেতে 
হয়েছিল লাঞ্চত অপমানিত স্বামীর কাছ হতে! 

সূবর্ণর কৌতুকস্পৃহার অধ্যায়ে একটা বড় ছেদ পড়োছিল সোৌঁদন থেকে। 

তবু স্বভাব যায় না মলে! আবার একাঁদন ননদাইকে নিয়ে রঙ্গ করতে 
গিয়ে_তা সে তো পরে। 

সুবর্ণদের দার্জপাড়ার নিজেদের বাঁড়তে। 

যে বাঁড়তে 'সপড়র অভাবে ছাতে ওঠা যায় না। টাকার অভাবে সারা 
জীবন 'সপড় হজ ন্ম-যার। 


স্যবর্পলতা ৩২৯ 


কিন্তু শুধু কি টাকার অভাবে ? 

প্রয়োজন বোধের অভাবেও কি নয় 2 

সবর্ণ ছাড়া আর কেউ ছাতে উঠতে না পাওয়াটা মস্ত একটা লোকসান 
ভাবে নি সে বাঁড়তে। 


| ৫ ॥ 


না. সুবর্ণলতার *বশুরবাঁড়র আর কেউ ছাতে ওঠবার 'সিপড়টার প্রয়োজন 
অনুভব করে 'নি। রান্নাঘরের নীচু ছাতটা তো রয়েছে 
দোতলায়, তা ছাড়া উঠোনটাও রয়েছে অত বড়. এতে আর 
গেরস্তর কাপড় শৃকোতে দেওয়া, বিছানা রোদে দেওয়া, 
[ক বাঁড় আচার আমসত্ত্ব জারকলেবুর চাঁহদা মিটবে না? 

মটছে, অনায়াসেই মিটছে। সপড় থাকহুলই বাকে 
€ই িনতলার মাথায় উঠতে যেতো ওই সব বোঝা বয়ে 2 

সুবর্ণলতার সবই ক্ষ্যাপামি। 

বলে কি না--আ'ঁম বইব। তোমরা সিপড় বর, দেখো, 
সারা সংসারের সমস্ত ভিজে কাপড় কাঁথা বিছানার বোঝা বয়ে নিয়ে যাব আঁম। 
আচার. আমসত্, বাঁড়ঃ তাও তসর মটকা পরে দিয়ে আসব. নাময়ে আনব। 
কাউকে সিপড় ভাঙতে হবে না)।' 

কিন্তু ওর এই ক্লেশ স্বীকারের প্রাতিশ্রাতিতেও উৎসাহত হয় নি কেউ। 
থাওয়া নয়, পরা নয়, কিনা ছাতে ওঠা! এর জনা মানুষের খিদেতেষ্টার মত 
ছটফটান ধরেছে এটা ন্যাকাঁমর মতই লেণেছে ওদের কাছে। ন্যাকালি ছাড়া 
আবার কি ? 

একটুকরো বারান্দা, ছাতে ওঠবার একটা সিপড়, এ যে আবার মানুষের 
পরম চাওয়ার বস্তু হতে পারে, এ ওদের বৃদ্ধির অগম্য। 

বরং সুবর্ণলতার স্বামীর তঁক্ষবব্দ্ধর কাছে আসল থাটা ধরা পড়োছিল। 
সবর্ণলতার এই আকুলতার 'পছনে যে কোন মনোভাব কাজ করছে তা আর 
বুঝতে বাক থাকে নি প্রবোধের। 

ছাদে উঠে পাঁচবাঁড়র জানালায় বারান্দায় উপকঝশুক দেওয়ার সাঁবধে, 
নিজেকে আর দশজোড়া উপকঝুকি মারা চোখের সামনে বিকশিত করার 
সুবিধে, আর বিশ্বাস কি যে ছিল বেধে চিঠি চালাচালির সুবিধেটাও নয় ? 

প্রবোধের তাই 'সিপড়তে প্রবল আপাত্ত। 

সুবোধ বরং কখনো কখনো বলেছে. 'বোনাসের টাকাটা বেড়েছে, লাগিয়ে 
দলে হয় [সপড়টা!' প্রবোধের প্রীতিবন্ধকতাতেই সে ইচ্ছে থেকে নিবৃত্ত হয়েছে 
সহবোধ। 

বাঁদ্ধমান ভাই যাঁদ বলে, মাথা খারাপ? ওই টাকাটা সংসারের সাঁতিকার 
দরকারী কাজে লাগানো যাবে।” 'নীর্বরোধাী দাদা কি সে কথার প্রাতিবাদ করে ? 
না করতে পারে ? 

আর সাঁত্য, গেরস্তর সংসারে তো দরকারের অন্ত নেই। বিছানা বাঁলশ, 
জতো জামা, র্যাপার চাদর, এ সবে তো ঘাটাতি আছেই সব সময়। মুস্তকেশীর 





৩২ সুবর্ণলতা 


তীর্ঘখরচ বাবদও কিছু রাখা যায়। পাড়ার গিল্শরা যখন দল বে'ধে তীর্ঘধর্ম 
করতে যান, মুন্তকেশী তাঁদের সঙ্গা না নিয়ে ছাড়েন না। তখন ছুটোছুটি করে 
টাকাটা যোগাড় করতে 'হমাঁসম খেতে হয় ছেলেদের। হাতে থাকলে-_ 

এইসব দরকারণ কাজ থাকতে, টাকা ঢালতে হবে ই'টের পাঁজায় ? 

অতএব স্ববলিভার কম্পিত আশার কুপড়র উপর পাথর চাপা পড়ে 

[কস্তু সুবর্ণলতার চাওয়ার সীমানা দি ওইটুকু মান্রঃ একটুকরো 
বারান্দা, ছাদে ওঠবার একটা 1সশড় ? ব্সঃ আর কিছু নয়? জীবনভোর 
শুধ; ওইটুকুই চেয়েছে সৃবর্ণলতা ? 

না, তা নয়। 

বেহায়া সবর্ণ আরো অনেক কিছু চেয়েছে। পায় নি, তবু চেয়েছে। 
চাওয়ার জন্যে লাঞ্ছিত হয়েছে, উৎপণীড়ত হয়েছে, হাস্যাস্পদ হয়েছে, তব তার 
চাওয়ার পারাধ বেড়েই উঠেছে। 

সবর্ণলতা ভব্যতা চেয়েছে, সভ্যতা চেয়েছে, মানুষের মত হয়ে বাঁচতে 
চেয়েছে। সুবর্ণলতা বাইরের পাঁথবীর সঙ্গে নাড়ীর যোগ রাখতে চেয়েছে, 
দেশের কথা ভাবতে চেয়েছে, দেশের পরাধীনতার অবসান চেয়েছে। 

সবর্ণলতাকে তবে পাগল বলবে না কেন তার স্বামী, শাশুড়ী, ভাসংর, 
দ্যাওর ? 

ওরা বলেছে, বাবার জন্মে শুন নি এমন কথা ! বলেছে, সেই যে বলে সৃখে 
থাকতে ভূতের কিল খাওয়া, মেজবৌয়ের হচ্ছে তাই! রাতাঁদন অকারণ অসন্তোষ, 
রাতাদন অকারণ আক্ষেপ! 

ওরা সুবর্ণলতার ওই চাঁহদাটাকে 'অকারণ অসন্তোষ' ছাড়া আর কোনো 
আখ্যা দেয় নি। ওদের 'বোধে'র জগংটা ওদের তঁর বাড়ির ঘরের মত। কোথাও 
এমন একটা ভেন্টিলেটার নেই যেখান 'দয়ে চলমান বাতাসের এক কণা ঢুকে 


পারে। 

দার্জপাড়ার এই গাঁলিটার বাইরে আর কোনো জগৎ আছে, এ ওরা শুধু 
জানে না তা নয় মানতেও রাজা নয়। 

ঘর বানাবার সময় 'আওয়াজী' (ভেস্টিলেটার) ন্ম রাখার যুক্তটাই ওদের 
মনোজব। 

“কোনো দরকার নেই। অনর্থক দেয়ালটায় ফুটো রাখা । পাখাঁতে বাসা 
বানাবে, আর জঞ্জান জড়ো হবে, এই তো লাভ?' 

অনর্থক পাখার বাসায় জঞ্জাল জড়ো করতে চায় নি ওরা। তাতে শুধু 
লোকসানই দেখেছে। 

ওদের বোধের ঘরেও ভেশ্টিলেটারের অজব। 

কিন্তু সুবর্ণলতা কেন বাঁহজগতে বহুমান বাতাসের স্পর্শ চায় 2 এ বাঁড়র 
বৌ হয়েও তার সমস্ত সত্তা কেন ম্ান্তর আকাক্ক্ষায় ছটফট করে £ তার পাঁর- 
বেশ কেন অহরহ তাকে পড়া দেয়, আঘাত হানে ? 

তাপস ০০১৭০ বনি 

যেদিন আসন্ন সন্ধ্যার মুখে সংবর্ণলতার শেষ চিহটুকু পা 
লুপ্ত হয়ে গেল, চিতার আগুনের লাল আভায় আকাশের লাল আভায় 
ধোঁয়া আর আগুনের লুকোচীরর মাঝখান থেকে সবর্ণলতা পরলোকে পেঁছে 
গেলেন, সোঁদন যখন চিন্রগৃপ্তের আঁফসে নতুন কেউ এসে পড়ায় ঘাণ্টটা বেজে 


সুবর্পলতা ৩৩ 


উঠল, বিধাতা-পুরুষ গলাঝাড়া দিয়ে বললেন, কে এল হে চিন্তগৃপ্ত 2 
চিন্রগপ্ত গলাঝাড়া 'দয়ে বলে উঠলেন, 'আজ্ঞে হুজুর, সুবর্ণলতা ৷ 
'সববর্ণলতা » কোন সৃবর্ণলতা 2 কাদের ঘরের 2?” 
'আজ্ঞে হুজ্‌র বামূনদের। যে মেয়েটা সেই পনেরো ঘছর বয়েস থেকে 

মরণকামনা করতে করতে এই পণ্টাশ বছরে সাঁত্য মলো!? 

বিধাতাপূর্ষ বললেন, “তাই নাকি? তা জাঁবনভোর মরণকামনা কেন ? 

খুব দুঃখী ছিল বুঝি ?' 

৮১০৮৮ ইনানার রজার নীলার রি 
কিছুক্ষণ মর্তযধামের দিকে সন্ধানী দ্টি নিক্ষেপ করে দ্বিধাযত্ত স্বরে উত্তর 
দিলেন, ০০০০০০৬ বরং ষোলো আনা সুখের অবস্থাই তো 
দেখাছ।” 

তবে? 

চিন্রগৃপ্ত মাথা চুলকে বললেন, আজ্জে সে হাসেব দেখতে হলে তো সময় 
লাগবে। এসব গোসমেলে লোকেদের ডিপারটমেন্ট আলাদা । 

বিধাতপুরুষের কেরানী কবে আবম্কার করতে 'পেরোছল সুবর্ণলতার 
উল্টোপাল্টা প্রকৃতির কারণ রহস্য, কবে সে বিবরণ পেশ করোছল মানবের 
দরবারে, কে জানে সে কথা! 

হয়তো করেই 'নি। 

হয়তো বিধাতাপুরুষও আর সে নিয়ে মাথা ঘামান নি। মৃহূর্তে মুহূর্তে 
কত কোটি কোটি বার ঘাণ্ট পড়ছে, কত হাজার কোঁট লোক আসছে, বামদের 
সুবর্ণলতাকে কে মনে করে বসে থেকেছে ? রি 

প্রশ্নটা তাই নিরুত্তর থেকে গেছে। 

শুধু সুবর্ণলতা যতাঁদন বে*চে থেকেছে, অহরহ তাকে 'ঘিরে এ প্রশ্ন আছড়ে 
আছড়ে পড়েছে। 

সংসারসদ্ধ সবাই খাচ্ছে ঘুমোচ্ছে হাসছে খেলছে ছেলে ঠেঙাচ্ছে ছেলে 
আদর করছে গুরুজনকে মান্য করছে গুরজন রাগ করলে চোর হয়ে থাকছে, 
নিয়মের ব্যাতিক্রম নেই, শুধু মেজবৌই রাতাঁদন হয় ঠিকরে বেড়াচ্ছে, নয় দীর্ঘ- 
নিঃ*বাস ফেলছে। নয়তো এমন একটা কিছু কাণ্ড করে বসছে যা দেখে স্তম্ভিত 
হয়ে যাচ্ছে লোকে । কী করবে লোকে এ বৌকে নিয়ে ? 

গুরুলঘ জ্ঞানের বালাই নেই, কিছুতে সন্তোষ নেই। 

কেন? 

কেন? 

কী তুম এমন রাজকন্যে যে কিছুতে মন ওঠে না? আর কথাই' বা এত 
কটকটে কেন শুনি ? 

প্রথম ছেলেপুলে হচ্ছে, লঙ্জায় মাথা হেস্ট করে বসে থাকবি, তা নয়, 
আঁতুড়ঘরে ঢোকার মুখে বলে কিনা, 'এত সব ময়লা ময়লা কাপড় 'িছামা 
দিচ্ছেন? *ও থেকে অসৃখ করে'না বুঝ 2" উমাশশী সেই ছেস্ড়া কাঁথা কাপড়- 
গুলো নামিয়ে এনে ধপ করে ফেলেই নাকটায় আঁচল দিয়েছিল. ওর থেকে 

ওঠা ধুলোর থেকে আত্মরক্ষা করতে । 

জায়ের কথা শৃনে চমকে আঁচল ছেড়ে শাঁঙ্কত দুষ্ট মেলে শাশুড়ীর দিকে 
তাকালো । হে ভগবান, যেন শুনতে না পেয়ে থাকেন! 

৩ 


৩৪ সুবর্ণলতা 


কিন্তু ভগ্গবান উমাশশণর প্রার্থনা কানে নেবার আগেই মন্তকেশণর কানে 
পেশছে গেছে তাঁর বধূমাতার বাণশী। 

মুস্তকেশশ তখন ছেলের নাড়ণ কাটবার জন্যে চ্যাঁচাঁড় গুছিয়ে রাখাঁছলেন। 
প্রসববেদনার বাড়াবাঁড়িটা হবার আগেই সব কিছু গুছিয়ে রাখেন সগাহণ 
মুস্তকেশী। আঁবিশ্যি ইতিপূর্বে বৌয়ের আঁতুড় তুলতে তাঁকে হয় 'নি। বড়- 
বৌমার মা গরীব দুঃখী বিধবা মানুষ হলেও প্রথম দ্বিতীয় দুবারই মেয়েকে 
কাছে নিয়ে গেছেন। মুস্তকেশশ যা কবেছেন নিজের মেয়েদের । তবে আসলে 
পোস্ত হয়েছেন জা ননদ ভাসুরাঝ দ্যাওরাঝদের ওপর হাত পাঁকয়ে। একাল্ন- 
বত সংসার ছিল তো আগে। 

তা ছাড়া হাঁড় ভেম্ন হলেও আপদে বিপদে সবাই সবাইয়ের 'করেছে'। 
মৃস্তকেশী বোশ কারংকর্মা বলে বোশ করেছেন। 

[কিন্তু মন্তকেশী কি এতখানি বয়সে- এমন দুঃসাহসিক সপর্ধার কথা 
শুনেছেন কখনো ? 

না, জীবনে শোনেন 'নি। 

প্রসব-বেদনায় ছটফট করতে করতে যে কোনো ঝি-বৌ এতটা ওঁদ্ধত্য প্রকাশ 
করতে পারে, এ মুস্তকেশশর ধারণার বাইরে, জ্ঞানের বাইরে. স্বপ্লের বাইরে। 

হাতের চ্যাঁচাঁড়র সয়ো হাতে ফুটিয়ে থ হয়ে গিয়ে বলে ওঠেন মুস্তকেশণ, 
ণক বললে মেজবৌমা 2 

মেজবৌমা প্রায় গোল হয়ে শূয়ে উঃ আঃ করাছল, তবু ওর মধ্যেই বলে 
উঠল, 'শুনতে তো পেলেন। ওই ধুলো-ভার্ত ময়লা পুরনো বিছানা কাঁথায় 
অসুখ করবে, সেই কথা বলাছ।' 

রাম্নাঘরের বড় উনুনটার মত গন্গনিয়ে বলে ওঠেন, “আমার 

এই কপালটা দেয়ালে ঠুকে ফাটাতে ইচ্ছে করছে মেজবৌমা. নইলে কোনাঁদন 
নিজের আগুনে নিজেই ফেটে পড়বে! অপা! বললে কণশ তুমি? বললে কা, 
পুরনো পবছানা"়্ রোগ জন্মাবে তোমার? আঁতুড়ঘরে নতুন 'বিছানা বালিশ 
দতে হবে রাজকন্যেকে ? গালে মুখে চড়াবো নাক আম? ভূভারতে যে 
কথা কেউ না শুনেছে, সেই সব কথা আমায় শুনতে হচ্ছে পদে পদে ?...তবে ? 
কখ করতে হবে তাহলে? নবাব-নান্দনশর জন্যে সাঁটনের বিছানার বায়না 
পাঠাতে হবে ? তবে একটু ধৈর্য ধরে থাকো বাছা. এক্ষুনি “ঘরের ডাক বাইরে 
আর বাইরের ডাক ঘরে” করে বাড়ি তোলপাড় করো না। পেটের পো পেটে 
রেখে বসে থাকো, আমার ভ্যাড়াকান্ত ছেলে আসুক আপস থেকে. বাল তাকে 
বছানার কাহনী!, 

সবর্ণর তখন ছটহফটাঁন শুরু হয়ে গেছে, তবু সুবর্ণ জবাব 'দিতে ছাড়ে 
না। মূর্খ সুবর্ণ, অবোধ স্‌বর্ণ সংসার-জ্ঞানহশীনা সুবর্ণ! 

বলে, 'যাক গে বাবা থাক! আমার তো মরণ হলেই মঙ্গল ! 

মূস্তকেশশ সহসা নিজের গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় বাঁসয়ে বলে 
ওঠেন, 'তোমার মরণ হলেই মঞ্জাল 2 অশা! ও রাজন, মাথায় জল দে! 

রাজু অবশ্য জল আনল না, মুস্তকেশী বিনা জলেই চাঙ্গা হয়ে আবার 
বলেন, 'তাহুলে এও বাল মেজবোৌঁমা, এমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতে তোমার মায়া 
হয় না? এ কী আমার করবার কথা? প্রেথম পোয়াতী *বশুরঘরে আঁতুড় 
পেতেছে শুনেছ কখনো? না দেখছে কখনো? বাঁল মা-ই না হয় তোমার 


সৃবর্ণলতা ৩6 


“কুলের ধৰজা” বাপ 'মিনসে তো আছে? বাপ আছে, ভাইভাজ আছে, কাছের 
গোড়ায় একটা 'পাসি রয়েছে, নিয়ে যেতে পারল না?' নতুন সাঁটন মখমলের 
বিছানায় শুইয়ে আঁতুড় তুলতো বাপ!" 

আর উত্তর-প্রত্যুন্তরের ক্ষমতা ছিল না সৃবর্ণলতার, তব; শেষ একটা কথা 
বলে নেয়, 'বাবা ধখন নিয়ে যেতে চেয়োছিলেন তখন তো কই পাঠান নি, এখন 
দোষ 1দচ্ছেন কেন 2, 

সুবর্ণ ষল্ণায় ছটফট করছে. মুন্তকেশীও হাড়ি ধাই গঙ্গামাণর আগমন 
আশায় হটফট করছেন, তত্রাচ এই বাকৃযাদ্ধ। 

মূন্তকেশী অবাক গলায় যেন আর্তনাদ করে ওঠেন, 'বাবা [নিয়ে যেতে 
চেয়োছিল 2 বাল কখন আবার নিয়ে যেতে চেয়োছল মেজবৌমা? স্বপ্ন দেখছ, 
না স্বপ্ন দেখাচ্ছ ? 

স্বপ্ন দেখব কেন মা2 ইচ্ছে করলেই মনে পড়াতে পারবেন। বিয়ের 
পর নিয়ে যাবার কথা বলেন 'নি বাবাঃ আপনারাই বলেছিলেন, কূসঙ্গো পাঠাব 
না- 

বিলোছ, বলবই তো, একশোবার বলবো ।” মুস্তকেশী বলেন. "নাত যাঁদ 
ওই হতচ্ছাড়া বাপের ঘরে যাওয়া-আসা করতে, তুমি কি আর এতাঁদন ঘরে 
থাকতে মাঃ কবে জুতো-মোজা পায়ে 'দিয়ে রাস্তায় বোরয়ে পড়তে! খবরের 
কাগজ পড়া মেয়েমানুষ তুমি, সোজা কথা ?' 

বাবা রে গেলাম গো" সুবর্ণ কাতরে উঠে বলে, "মায়া মমতা কী আপনা- 
দের প্রাণে একেবারে দেন নি ভগবান? মরে যাচ্ছে মানষটা, তবু বাক্য- 
যল্লণা__ 

প্রস্তর-প্রীতিমা উমাশশী হাঁ করে চেয়োছল তার ছোটজায়ের 'দিকে। 

ক ও? 

মেয়ে না ডাকাত ? 

এত বড় দুঃসাহস কোথায় পেল ও? উমাশশীর যে দেখে-শুনেই বুক 
কাঁপে, পেটের ভিতর হাত-পা সেশধয়ে যায়। সুবর্ণর শেষ কথায় হঠাং 
উমাশশীর সমস্ত স্নায়ুগুলো যেন একযোগে ছাট চেয়ে বসলো । 

উমাশশী মুখে অচল চাপা 'দয়ে 'হুহহ করে কেদে উঠল। কেন, তা 
সে নিজেই জানে না। 

এই আঁদখ্যতায় মুস্তকেশী কি বলতেন কে জানে. কিন্তু বিপদমূত্ত 
করলো একাট শানানো' ধারালো গলা । 

এ গলা হাঁড়-বো গঞঙ্গামণির ! 

সংবর্ণর যল্ণা শুরু হতেই খুদু গিয়েছিল তাকে ডাকতে। 

বড়বৌয়ের কান্না শুনতে পেয়ে দালান থেকেই চিৎকার করে উঠেছে গঙ্গা, 
“বাল হয়ে গেল নাকি? কান্নাকাটি পড়ে গেল যে? 

বেয়াড়া আস্পদ্দাবাজ বৌটাকে যতই গালমন্দ করুন, তার জন্যে উাদ্বগ্ন 
হাচ্ছলেন বৌক মুস্তকেশশী, বিপদকাল বলে কথা! গঙ্গামাঁণর গলার আওয়াজে 
মুস্তকেশী যেন হাতে চাঁদ পান। 

আর মুহূর্তে ভোল বদলে যায় তাঁর। অভিমানের গলায় বলে ওঠেন, 
এতক্ষণে এল গঙ্গা? বৌ এঁদকে এখন তখন! 

গঙ্গা খরখাঁরয়ে ওঠে, তা কী করবো বাব, তোমার নাতি হচ্ছে বলে তো 


৩৬ সংবর্ণদতা 


আর এই গঞ্গামাঁণ মরতে পারে না? পান সাজবো, দোস্তাপাতা গ'ুড়োবো, 
পানদোক্স গূলের কৌটো আঁচলে বাঁধবো, দঃয়োরে তালাচাবি নাগাবো, তবে 
তো আসবো!” 

মুস্তকেশশী আরও আঁভমানী গলায় বলেন, «এখানে কী তুই পানদোস্তা 
পেতিস না গঙ্গা?” 

হণ্যা, এদের কাছে মুস্তকেশী নম্র নত। কারণ এদের নইলে অচল? এ 
বিপদের দন তো আসবেই সংসারে । বছর বছরই আসবে। 

গঙ্গার হাতযশের নামডাক আছে, তাই' গঙ্গার দস্তুরমত অহঙ্কারও আছে। 
রীতিমত অহওকার আছে। এতটুকু এদিক-ওদিক হলেই খরখর করে পাঁচকথা 
শুনিয়ে দেবে, তেমন রাগ হলে প্রসাতিকে ফেলে চলে যাবে। নয়তো ইচ্ছে করে 
অবস্থা খারাপ করে দেবে। 

তাই তোয়াজ করতেই হয়। 

তাই গদগদ গলায় বলতে হয়, 'ক-কুঁড় পান খাবি খা না! . 

"খাব, পাঁচকুঁড় পান খাব। আগে তোমার নাঁতকে পাঁথবীর মাঁট 
দেখাই! কই গো বড়বৌমা, এক্‌ খূরি গরম জল দাও 'দাকি! হ্যাগা, তাঁম 
কাঁদিছ কেন? শাউড়ীর গাল খেয়েছ বুঝি? তা খেতে পারো. যা দঙ্জাল 
শাউড়ী! নাত হলে ঘড়া বার করতে হবে, বুঝলে িল্নশী, ওর কমে ছাড়ব 
লা! 

গাঞ্গামাণর এমাঁন চোটপাট কথা মুস্তকেশীর গা-সহা। তাই মন্তকেশখ 
চটে ওঠেন না। চেম্টা করে হেসে বলেন, “আচ্ছা, নাতি আন তো আগে। হবে 
তো একটা মেয়ের িপি, বুঝতেই পারছি? 

ধমেয়ে হলেও গামলা! মেজখোকার এই প্রেথম, তা মনে রেখো । গঞা- 
মণি অতঃপর তার নিকয-কৃষ্ণ বিপুল দেহখানি 'নিয়ে' আসরে ওঠে ।... 

রম দুধ দাও 'দাঁক, একটু গরম দুধ দাও. জোর আসবে দেহে । ন্যাকড়া- 
কানির পৌঁটলা কই গো? বালিশ আছে? চ্যাঁচাড় ঃ মজৃত রাখো হাতের 
কাছে।...বাঁল মেজবৌমা, অমন হাত*্পা ছেড়ে 'দিয়ে নীলবপ্ন হয়ে আছ যে! 
বকে বল আনো, পেরাণে সাহস আনো। কম্ট নইলে কি আর কেম্ট 
মেলে 2" 

কম্ট নইলে কেম্ট মেলে না! 

অতএব কেম্ট চাইতে হলে কষ্ট করতেই হবে। 

[কিন্তু শুধু যাঁদ কম্টই ওঠে ভাগ্যে, কেস্টাট না মেলে? 

মৃখপাত প্রথম সন্তান, হলো কি না মাটির 'ঢাঁপ এক মেয়ে? ছি ছি! 

মুক্তকেশন ক্লুদ্ধ গলায় বলে ওঠেন, 'জানতুম! গামলা পাবি না কচু 
পাব'' 

চলোছল যমে-মানুষে টানাটানর পালা । দীর্ঘসময় এই কম্ট হয়রানি 
উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, তার ফলাফল কি না একটা:মেয়ে! শাঁখ বাজবে না 
বোধ কাঁর চিলের, মত চেশ্চাঁনর সাহায্যে পৃথবীতে নিজের আগমনবার্তা 
নিজেই ঘোষণা করছে। 

গংগামাণও যেন অপ্রাতিভ হয়। 

নাতির ছলনা দোঁখয়ে অনেক কথা বলে নিয়েছে! সাঁত্যই নাতাঁট হলে 
মুখ থাকত! 


«এই তো". মস্তকেশী বলে উঠলেন, "তুমি আর সঙের মতন শাঁখ হাতে 
নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকো না বড়বৌমা, তুলে রেখে দাও গে! চেশ্চানির শব্দ শুনেই 
বুঝোছি আসছেন একখানি নাধ।' 

সবর্ণ এত কথা শুনতে পায় না, সুবর্ণ যেন চৈতনা আর অচৈতন্যের 
সধাবতাঁ একটা অবস্থায় নিমজ্জিত। সুবর্ণ যেন দেখতে পাচ্ছে সৃবর্ণর মা 
এসেছে মাথার কাছে, বলছে, 'ছেলে-মেয়ে দুই-ই সমান সুবর্ণ, হেলা করিস 
না।' 

স্বর্ণ হাত বাঁড়য়ে মাকে ধরতে যায়, পারে না। হাত তুলতে পারল না 
বলে. না মা হারিয়ে গেল বলে 2 

হারিয়ে গেল। 

সুবর্ণ আর তার মায়ের সেই দীর্ঘ ছাদের উজ্জ্বল মূর্তিটা দেখতে পেল 
না। শুধু সুবর্ণর সমস্ত প্রাণটা হাহাকার করতে থাকে! 

সুবর্ণ কি স্বপ্ন দেখাছিল ১ 

নাকি সুবর্ণর অসহায় বাসনাটুকু কল্পনায় মায়ের মৃর্তখান গড়ে 
সবর্ণকে ছলনা করতে এল 2 

কন্তু মাকে ি সুবর্ণ এত বোঁশ মনে করে ১ মা'র উপর একটা রুদ্ধ 
আঁভমান যেন সেই স্মৃতির দরজা বন্ধ করে রেখেছে । সুবর্ণর যে এদের সংসার 
ছাড়াও একটা অতাঁত ছিল. ভূলে থাকতে চেয়েছে সে কথা। 

হঠাং সেই অচৈতন্যলোক থেকে যেন জেগে উঠল সুবর্ণ। 

আর ঠিক সেই মুহৃতেইি' যেন ধাক্কা খেলো । 

আবার 2 

আবার সেই কাঁহনন 2 

সেই কথা আবার গঙ্গামাণকে বিশদ করে বলতে ইচ্ছে করছে 
মন্তকেশীর-_। 

হশ্যা. মন্তকেশীরই গলা! 

শ্রোতা গঙ্গামণি। 

'অ আমার পোড়াকপাল, জাঁনস না তুই 2 ওলো শোন্‌ তবে. মেজবৌ 
হচ্ছে আমার সইমার নাতনী। সেই যে সেবার জিজ্ঞেস করাল, বারুইপুরে 
যাচ্ছ কেন গা? বললাম, সইমার বাঁড়। তা সেই রকম গিয়েছি, দেখ এই 
ীধঙ্গী অবতার মেয়ে ঠাক্মার কাছে বসে সোহাগ খাচ্ছে। রূপখানা মন্দ নয়, 
বাড়ল্ত গড়ন-- মিথ্যে বলব না. চোখে লাগল, মনে ধরে গেল। ভাবলাম পেবোর 
সঙ্গে 'দাব্যি মানায়। তা সেই কথা বলতে সইমা কপালে হাত চাপড়ালো। 
বললো, বিয়ে) ধিয়ে কে দিচ্ছে ওকে? ওর 'বিদ্যেবত মা ওকে 'বিদ্যে 
শেখাতে ইস্কুলে পড়াচ্ছে। আরও পড়াবে, পাশের পড়া পড়বে মেয়ে। 

শুনে আম হাঁ। 

'বাঁল, “হ্যাঁগো তঁমি শাউড়ী থাকতে- বেটার বৌয়ের কথাই জয়ী হবে 2” 

“সইমা বললো. “না হয়ে উপায়! দোঁখস নি তো আমার বৌটিকে !” 
শুনে বুঝাল ঘেল্লায় যেন প্রাণ শতখান হল। খুব ধিক্কার দিলাম সইমাকে। 
তারপর পরামর্শ দিলাম, বৌকে না জানিয়ে নাতনীর বিয়ে দিয়ে ফেল। হয়ে 
গেলে তো আর ট্যাঁফোঁটি করতে পারবে না! 

পাঙ্গামণির কণ্ঠকাঁসর বেজে ওঠে, মা কোথায় ছল ?' 


৩৮ র সুবর্ণলতা 


ছল? ছিল এই কলকাতায়। মেয়ে গরমের ছুটিতে আম খেতে 
গিয়েছিল বাপের সঙ্গে । আমি বাল, এই সুযোগ সইমা! মেয়ের মাকে খবর 
দাও, হণাৎ একটা সংপাত্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে, হাতছাড়া করতে পারাছি না, 
চলে এসো-মেয়ের বিয়ে আরম্ভ হচ্ছে। এই তো ব্যাপার, নর সাদা বারা! 
আচ্ছা তুই বল: গঙ্গা, কী এমন অনেধ্য কাজটা হয়েছে ?' 

'কে বলছে অনেষ্য 2, 

কে? তা মিথ্যে বলব না, কেউ বলে নি। দশেধর্মে সবাই বললো ভাগ্য 
বটে মেয়ের। যাচা পান্তর এসে মেয়ে নিচ্ছে! অনেষ্য বললেন আমার বেয়ান- 
ঠাকরুণ। ?তাঁন কলকেতা থেকে এসেই যেন আকাশে পা তুললেন। এ বিয়ে 
আম মান না, এ বিয়ে ভেঙে দেব।' 

“অপা॥ গঙ্গামণ শিউরে ওঠে, 'বে ভেঙে দেব বললে? 

'বলল তা! মেয়ে-জামাইয়ের মুখ দেখল না, একটু আশীর্বাদ করল না, 
[ভটেয় পা দল না, শাউড়ীর সঙ্গে কথা কইল না, সোয়ামীরে ডেকে বলল, 
“ভালো চাও তো মেয়ের বিয়ে ভাঙো, নইলে এই' চললাম!” 

'বেয়াই আমার খুব দৈ-স্তুর করল, শুনলাম হাতজোড় পর্যন্ত করল, 
মাগী একেবারে বজ্জর! শুনল না কথা, ঠকঠক করে গিয়ে গাঁড়তে চড়ে বসে 
বলে গেল, তুম যেমন আমায় ঠাঁকয়েছ, আমিও তার শোধ 'নাচ্ছ। তোমার 
সংসারে আর নয়। ব্যাস, সেই উপলক্ষ । ঘর-সংসার ত্যাগ দিয়ে তেজ করে 
চলে গেল কাশীতে বাপের কাছে। ব্যস, আর এল না।' 

'এল না! 

গঙ্গামাণ যেন শুনে পাথর। 

'এল না কিগো সুবোধের মা, পাগল-ছাগল নয় তো? 

'পাগল! হবু, পাগল করতে পারে মানুষকে! ওই বৌ নিয়ে তো আজন্ম 
সইমা জঙলে পুড়ে মরেছে । কী তেজ আসপদ্দা! তা যেমাঁন মা, তেমাঁন ছাঁ। 
আমার এই ধনাঁও তো তেজ-আসপদ্দায় কম যান না!" 

'হপ্যাগা, তা বাপের বাঁড়তে আছে কে এখন 2 

“আছে সবাই। বাপ ভাই ভাজ, কাছেপিঠে পাঁসও আছে একটা । কিন্তু 
আমার আর কাঁ ইন্টলাভ হল! এই তো প্রেথমবার, কোথায় মা-বাপ কাছে 
[নয়ে ষাবে, সাধ-নেমন্তন দেবে, তা নয় আমার বুকে বাঁশ ভলছে !' 

গঙ্গা বলে ওঠে, 'হশাগো, তা মা আর আসবে না ?' 

শক জানি ভাই! তেজ কখনো করলাম না, তেজের আস্বাদ জানলামও 
না। এল না তো এই এত বচ্ছরে! 

গঞ্গামাঁণ গলা নাঁময়ে বলে, 'রাত-চারাত্তর ভাল তো?, 

মুস্তকেশী বলেন, 'ভগবান জানে, যার ধর্ম তার কাছে। তবে মনে হয় 
সোঁদকে কিছ: নয়, শুধু তৈজ-আসৃপন্দা। আমাকে না বলে আমার অনুমাত 
না নিয়ে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে ফেলেছে, নৌহ করেঞ্গা অমন সোয়ামণর 
ঘর। এই আর 'কি। 

'তাক্জব! তা বাপু বৌঁদাদ, বেয়ান যখন তোমার সইমার পুতবৌ, তখন 
জানতে তো তাঁর ধাতধরন। স্বেচ্ছাসৃথে তাঁর মেয়ে আনলে কি বলে ?, 
যারা রগা জিরার হালা সাত 

] 


চি 


সুবর্ণলতা ৩১ 


সমস্ত নিরূপায়তার শেষ কথা! 
আদি অন্তকাল সেই 'অদষ্ট' নামক অ-দল্ট ব্যান্তাটকেই আসামণ খাড়া 


করছে লোকে, সমস্ত কিছ্‌র চরমকালে। 
মুক্তকেশও করলেন। 


॥৬॥ 


[তিনটে বছর গায়েব করেও 'বিরাজকে আর বারোর কোঠায় রাখা যাচ্ছিল না। 
দেখতে ছোটখাটো, বয়সের বাড়বাড়ন্ত নেই বলেই যে 
পাড়াপড়শশীর চোখে ধূলো দিয়ে চালানো যাবে' এ আশা 
একটু বেশি আশা। 

সোঁদন তো এক 'প্রয়সাঞ্গনীর সঙ্গে বন্ধু-বিচ্ছেদই 
ঘটে গেল। মুস্তকেশী তাঁর কাছে আক্ষেপ জানাচ্ছলেন, 
'ছেলেরা তো আপিস আর তাসপাশা নিয়েই মগ্ন, বোনটার 
বিয়ের কথা মনেও আনে না, আমারই হয়েছে জৰীলা! 
একটা পাত্তর-টাত্তরের সন্ধান দাও না ভাই, গলা 'দিয়ে 
ভাত নামছে না যে। বারো বছর পার হয়-হয় মেয়ে_- 

হয়ে গেল উল্টো উৎপাত্ত। বান্ধবী বলে বসলেন, 'এখনো বারো পার হয় 
হয়? মেয়ে কি তোমার উল্টো দিকে হাঁটছে সবোধের মা? পাঁচ বছর আগে 
তো শুনোছ রাজু দশে পা 'দিয়েছে__! 

মুস্তকেশী প্রথমটা পাথর হয়ে গিয়োছলেন, তারপরই অবশ্য নিজমার্তি 
ধরলেন। বান্ধবীকে 'বাবার-বিয়ে' 'খুড়োর-নাচন' দেখিয়ে দিয়ে বন্ধুত্বের মূলে 
কুঠারাঘাত করে চলে এলেন। কিন্তু মনের মধ্যে তো আগুনের দাহ । 

আবার একাঁদন মুত্তকেশীর এক জ্বাতি ননদ বেড়াতে এসে বলে বসলেন, 
“কোলের মেয়ে বলে বাঁঝ কাছছাড়া করাব না নবৌ, মেয়েকে “বীজ” রাখাঁব ? 
বাল রাঁজ যে পাঁড় হয়ে উঠল!' 

রসনার ধার সম্পর্কে মাহলাটির খ্যাত আছে। মৃস্তকেশীকে তিনি হেলায় 
জয় করতে পারবেন এ কথা মুস্তকেশশর অজানা নয়, তাই এক্ষেত্রে মন্তকেশী 
অন্য পথ ধরলেন। আঁভমানের গলায় বললেন, 'তা তোমরা 'পাঁসরা থাকতে 
যাঁদ মেয়ের বিয়ে না হয়, আমি আর 'কি করবো ঠাকুরাঝ ? চোদ্দপুরুষ নরকস্থ 
হলে তোমার "গিয়ে বাপ-ঠাকুর্দার বংশই হবে, আমার নয়। তোমরাই বোঝ । 





অতএব কলহ এগোল না. ননদ মুস্তকেশীর ছেলেদের 'নিন্দাবাদ করে 'বিদায় 
। 

কন্তু তারপর ঝড় উঠল। আঁবাচ্ছল্ন ঝড়। 

মৃন্তকেশীর সংসারে সেই ঝড়ের ধাক্কায় তোলপাড় হতে থাকলো । বিরাজ 


তো মা'র সামনে বেরোনোই ছেড়ে দিল, কারণ তাকে মাঝে রেখেই তো মা'র 
বত বাঁকা-ব্যাল! 

প্রবোধ-সুবোধও মা'র সর্বাবধ কটুভ্তি নীরবে গলাধঃকরণ করে পাঁলয়ে 
প্রাণ বাঁচাচ্ছে, উমাশশী সর্বদাই তটস্থ, এমন 'কি মৃখরা সুবর্ণও মা'র মনপ্রাণ 
ভাল নেই ভেবে চপচাপ আছে। 


8০ সৃবর্ণলতা 


এহেন. পাঁরাস্থাতিতে সহসা আগৃনে জল পড়ল। বড় মেয়ে সৃশীলা 
এসে হাজির এক "সম্বন্ধ" নিয়ে। বিদ্বান ছেলে, রূপে কার্তিক, অবস্থা ভাল, 
তারা এই সালেই বিয়ে দিতে চায়, কারণ সামনে 'অকাল' পড়ছে। তবে হশা, 
একটু খাই আছে। ফুলশয্যার তন্, দানসামণ্রী, বরাভরণ, নমস্কার, ননদ- 
ঝাঁপ, কনের গা-সাজানো গহনা ইত্যাদ সবশবধ সৌত্ঠবের ওপর আবার 
[তিনশো টাকা নগদ। 

নগদের সংখ্যাটা শুনেই আঁতকে উঠলেন মুত্তকেশী। 

তিন-তিনশো টাকা নগদ বার করা কি সোজা ১ 

ঘরখরচা, বরধাব্রী-কনেযান্রী খাওয়ানো, এসবও তো আছে? 

মেয়ের ওপর বিরূপ হলেন মুস্তকেশী। বেজার গলায় বললেন, খুব যা 
হোক সম্বন্ধ আনাল! তোর ভাইদের বুঝ রাজা-রাজড়া ভেবোছস 2 এখনো 
বলে বাঁড়র দেনাই শোধ হয় নি।' 

সুশণলা শর জন্য প্রস্তুত ছিল। 

সংশীলার ভাঁড়ারে তাই যুক্তি মজুত ছছল। 

ধার-দেনা আবার কোন্‌ গেরস্তটাকে করতে না হযঃ কনেদায় উদ্ধার 
করতে ধার-দেনা করা তো চিরাচারত বিধি। এমন সোনার পার হাতছাড়া 
করলে, এরপর মাটির পান্রে মেয়ে সপতে হবে। আর তার মানেই চিরটাকাল 
মেয়েকে টানা। 

এই যে তিনতিনটে মেয়েকে পার করেছেন মুস্তকেশী, ভাল ঘরে-বরে 
দিয়েছেন বলেই না নীশ্চন্দি আছেন--ইতাঁদ ইতাঁদি বহুবিধ যান্তর জালে 
বন্দী করতে চায় সুশনীলা মাকে। 

তা মুস্তকেশরই কি আর মন ঝোঁকে না সোনার পান্রের দিকে 2 তবু 
আরও বেজার গলায় বলেন, 'বলে দেখো তোমার ভাইদের । আমার কোঁচড়ে 
তো আর টাকার কাঁড় জমানো নেই যে বকের পাটা করে “হণা" করবো? মেয়ে 
তা তালগাছ হয়ে উঠছে. দেখি আর কাঁপ!' 

তা ভাইদের বলে দেখে সুশীলা। 

বাদ্ধিমতাঁ মেয়ে বেশ মোক্ষম সময়েই কথাটা পাড়ে । চার ভাই যখন সার 
দয়ে খেতে বসেছে বড় বড় কাঁঠালকাঠের পড় পেতে, সামনে, মা বসেছেন 
পাখা হাতে করে, বৌরা ধারে কাছে ঘুরছে ননটুকু লেবুটুকু লাগবে কি না 
জানতে. তখন মায়ের হাত থেকে পাখাখানা নিয়ে নাড়তে নাড়তে সৃশীলা বলে 
ওঠে, 'হণা রে, তা রাজুর বিয়ের কী করছিস তোরা 2' 

যেখানে বাঘের ভয়. সেখানেই সন্ধা হয়। সে প্রসঙ্জের ধুয়ো৷ তুলে "ঢালে 
খাঁড়ায় হয়ে আছেন মূস্তকেশী, দাঁদর মুখেও ক না সেই প্রসঙ্গ! 

সন্দেহ গক যে মারই শিক্ষা! 

কিন্তু সে সন্দেহ তো ব্ন্ত করা যায় না। সুবোধ থালায় আঁক কাটতে 
কাটতে বলে. খুজছি তো। তেমন মনের মতন পাচ্ছি কই! যাতাধরে তো 
আর-' 

“আহা-হা, তাই বা দিবি কেন? ভাজ পান্তর আমার হাতে আছে। তবে 
থাই একটু বেশি।' 

হপা, একঝোঁকে বলে ফেলাই ভাল। দ্বিরুস্তি বা বাদ-প্রাতিবাদের পথ 
থাকে না। 


স্বর্ণ তা ৪৯ 


খহি! 

শব্দটা ক ভয়াবহ! 

যেন হাঁ করে খেতে আসছে। 

সুবোধের মুখ শুকিয়ে যায়, খাই মানে 2 কত খাঁই 2" 

কত সেকথা শুনে সুবোধের মুখ আরো শুকোয়। গলা ঝাড়া 'দয়ে বলে, 
'অত খাঁই হলে_ মানে, আমাদের তো এখন হাতে ছু নেই_' 

বোনের বিয়ে তাহলে শিকেয় তোলা থাক-_" মুস্তকেশ' ঠান্ডা পাথুরে 
গলায় বলেন, হাতে যখন টাকা নেই তোমাদের, বলবার কিছু নেই। তবে 
শাস্তরে ভগ্নীদায় আর কন্যাদায়কে সমানই বলেছে ।' 

কোন্‌ শাস্তরে বলেছে এ কথা, সে প্রশ্ন তোলে না মূস্তুকেশীর ছেলেরা । 
এ কথাও তোলে না, না বুঝেসঝে বুড়ো বয়স অবাঁধ সংসার বাড়াতে তোমায় 
বলেছিল কে বাপু ঃ তোমার নিব্দ্ধতার দায় আমাদের পোহাতে হবে এমন 
কি বাধ্যবাধকতা ১ 

না, তোলে না এসব কথা, শুধু অস্ফুটে বলে, না, মানে গহনাটাও গা 
সাজান্মে চাইছে কনা । এঁদককারও সব আছে, তার ওপরে নগদ 

হ্ঠাং রান্নাঘরের শেকলটা নড়ে ওঠে। 

সাঙ্কেতিক ঘণ্টা! 

সুশীলাই পাখাখানা নাঁময়ে উঠে যায, আর পরক্ষণেই হাস্যবদনে এসে 
বলে, "ওই শোনো, হয়ে গেল সাঁমস্যের সমাধান! মেজ বৌ বলছে, গহনার . 
জন্যে ভাবতে হবে না তোমাদের !' 

ভাবতে হবে না! 

চার ভাই-ই একট. সচাঁকত্ব হয়। যেন ঠিক অনুধাবন করতে পারে না। 
কিন্তু মুস্তকেশী পারেন, সঙ্গে সঙ্গে একগাল হেসে বলে ওঠেন, 'বাঝেছি। 
নিবর্ধাঘ্ধর ঢেশিক নিজের গয়নাগুলো খয়রাং করবে। বোকা হাবা হলে কি 
হয়, মনটা ওর বরাবরই উপ্চু।" 

এই সৌঁদনই 'ভাঁখিরিকে একখানা পুরনো কাপড় 'দিয়ে ফেলার অপরাধে 
যে ওই বৌয়ের 'দরাজ মেজাজে'র খোঁটা তুলে, নাকের জলে চোখের জলে 
করোছিলেন, তাকে. তা অবশ্য মনে পড়ে না মুস্তকেশীর! 

মেজ বৌয়ের উপ্চু মনের পাঁরচয়ে ছোট দুই ভাই স্বাস্তির নিঃ*বাস ফেলে 
ভাতের চূড়োয় গর্ত করে ডাল ঢেলে সাপটাতে থাকে, বড় ভাই মাথাটা নচু 
করে' ভাতটা নাড়াচাড়া করতে থাকে এবং মেজ ভাই প্রচণ্ড রাগকে সংহত করতে 
বড় বড় গ্রাস তুলতে থাকে মুখের মধ্যে তার ওপর । 

অসহ্য! 

অসহ্য এই সর্দারী। 

স্বামীর অনুমতি নেওয়া দূরে থাক. স্বামীর স্গে একবর পরামর্শ করে 
নেবারও দরকার বোধ করল না! ভেবেছে কি ও 3 

ংসা কুড়োবেন ? 

প্রশংসা কুঁড়য়ে পেট ভরবে ১ 

এঁদকে তো আচার-আচরণের দোষে 'নিন্দেয় গগন ফাটছে! কই তার 
বেলায় তো ইচ্ছে হয় না. বড় বৌয়ের মতন শান্তশিষ্ট হয়ে সৃখ্যাঁত 'কাঁন! 

ঘোড়া 'ডাঙয়ে ঘাস খাবেন! 


৪২ সুবর্ণলতা 


চাঁদর ছণচ দিয়ে লোকের মুখ সেলাই করে দেবেন! 

রাগে হাত-পা কাঁপতে থাকে প্রবোধের। সুশশলার অবশ্য এ ভাবান্তর 
চোখ এড়ায় না, তবে সৃশশলা সে কথা তুলে আর ব্যাপারটাকে উদঘাটন করতে 
চায় না। তাড়াতাড়ি ভাইদের পাতের কাছে দুধের বাঁটগুলো এগিয়ে দিয়ে 
গুড়ের বাঁটটা নিয়ে আসে। 

প্রবোধ একটা সুযোগ পায়, প্রবোধ এই ছৃতোয় মনের উত্তাপ প্রকাশ করে 
বসে। দুধের বাটা বাঁ হাতে ঠেলে দিয়ে বলে, 'লাগবে না, সারয়ে নাও 

“ওমা সে কী, কেন? পেট ভাল নেই? 

ধপেট খারাপ শন্লুর হোক-_” প্রবোধ থমথমে গলায় বলে, 'এসব বাবযয়ানা 
ছাড়তে হবে এবার! 


সুশীলা বুঝেও না বোঝার ভান করে, ফিকে গলায় বলে. 'হঠাৎ বাবুয়ানা 
ক দোষ করল” 
প্রবোধ গুজগুজে গলায় বলে. 'যাদের এক পয়সার সংস্থান নেই, এক 
কথায় মেয়েদের গায়ের গহনায় হাত পড়ে, তাদের এমন দুধ ক্ষণর খাওয়া মানায় 
না।' 
বলে ফেলেই অবশ্য ঘাড়টা গুঁজে ষায় প্রবোধের, কারণ ঠিক এমন স্পল্টা- 
স্প্ট কিছু বলে ফেলার ইচ্ছে তার ছল না, চোরাগোপ্তা একটু ইশারা দিতে 
হল স্য। 
মায়ের পরবর্তাঁ প্রাতিক্রিয়ার আশঙ্কায় বুকটা হম হয়ে গেল তার। এরপর 
আর কি ও গহনা ছোঁবেন মুস্তকেশী 2 
কিন্তু মুস্তকেশশ কি সংবর্ণলতা ? 
তাই আঁভিমানভরে স্বাবধে-সৃযোগ পণ্ড করবেন? না, সৃবর্ণলতার মত 
চিএিতব১০৯০ মুস্তকেশী তাই তেতো গলায় বলে ওঠেন, “তা ওই 
শিউলি ৯০৪ মামাংসা হবেঃ না ওই' বাঁচানো দধটুকু 
পুনরায় গরুর বাঁটে উঠে গিয়ে আবার পয়সা ফিরিয়ে আনবে 2 
কন্যেদায় উপাস্থিত হলে, ঝি-বৌয়ের গহনায় হাত পড়ে না এমন রাজার সংসার 
ক'টা দেখোছস তুই? মেজ বৌমা নিজে মুখ ফুটে বলেছে, সেইটুকুই 
আহত্রাদের, নইলে দরকারের সময় ছলে বলে কৌশলে নিতেই তো হতো! দিতে 
চেয়ে খুব একটা মহত্তর কিছু করে নি মেজ বোৌঁমা। বড় বৌমারও থাকলে 
/ 
অর্থাং প্রবোধের ঠেস দেওয়া কথার ফল হলো এই। সবর্ণলতার মহত্ব, 
উদারতা সব কিছুই এখন তৃতীয় বিভাগে পড়ে গেল, সুবর্ণলতার উচু মনের 
পাঁরচয়টা ধামাচাপা পড়ে গেল, সুবর্ণলতার সৃখ্যাতিটা মাঠে মারা গেল। 
মুস্তকেশশ অতঃপর বসে বসে 'ফাঁরাস্তি দিতে লাগলেন এহেন ঘটনা আর 
কবে কোথায় দেখেছেন এবং কশ রকম সোনাহেন মুখ করে সেই সব বৌবা গা 
থেকে গহনা খুলে দিয়েছে ননদের বিয়েতে, ভাশুরাঁঝর 'বিয়েতে। 
তবে? 


সুবর্ণলতা এত কিছ বাহাদ্হার দেখায় নি। স্বর্ণলতা নতুন কিছ; 
দষ্টান্ত স্থাপন করে 'ি। 'সুবর্ণলতার মনটাকে যে উপ্চু মল: বলে স্বীকাতি 
[দিয়েছেন মৃত্তকেশশ, সে কেবল মকর নিজের মন উবে 

িদ্তু সুবর্ণলতার সেই মনের স্বীকতি দক রইল? 'বরাজের গায়ে- 


সুবর্পণলতা ৪৩ 


হলনদের দিন যখন মুস্তকেশশ মেজ বৌমার গহনার বাঝ্াঁট তোরঞ্গ থেকে বার 
করলেন মেয়েকে “সালন্কারা' করবার জন্যে, তখন 'কি দার্জপাড়ার ওই বাঁড়িটায় 
একটা বন্ত্রপাত ঘটে গেল না? 

দোয়াত আছে, কালি নেই'। 

বাক্স আছে, গহনা নেই। 

মূন্তকেশীর ঘরে তোরঙ্গ, মুস্তকেশীর কোমরের ঘুনসীতে চাঁব, অথচ 
মুস্তকেশশর অজান্তে সে গহনা হাওয়া! 

এ হেন ঘটনায় বিয়েবাঁড়তে যতদূর হুলস্থূল হবার তা হয়েছিল বৌক। 
বেশি বৈ কম হয় নি, কারণ বিয়েতে মুস্তকেশীর তিন, বিবাহিতা মেয়ে এসেছে 
সপরিবারে, এসেছেন মুস্তকেশীর ভাজ, বোন, মাসতুতো বোন হেমাঙ্গনী। 

সকলে গালে হাত দিয়ে থ! 

ভূত না চোর! 

চোর যাঁদ তো বাক্সটাসূদ্ধই নেবে, বাক্স খুলে আংট মাকাঁড় মল ইত্যাদ 
কু'চোকাচা গহনা রেখে দিয়ে, বালা বাজ.বন্ধ, চিক, সাঁতাহার, শাখা অনন্ত, 
পালিশ পাতের চাঁড় ইত্যাঁদ করে বড় বড় গহনাগুি বেছে 'নয়ে যাবে? এত 
সময় হবে চোরের ? 

তা হলে! হহ! 

রাত-বিরেতে 'সিপড়র ছায়ায় কি উঠোনের ছাঁচিতলায় ভূতের দেখা মেলে 
বলেই যে লোকে গহনা-চোর ভূতে বিশ্বাসী হবে এমন হয় না। 

শেষ অবাধ তবে ঘরের মানুষ! 

কে সেই মানুষাঁট 

কোন্‌ ঘরের ? 

মুখে মুখে কথা ফেরে, কথা কানে হাঁটে। অনেক কান ঘুরে সুবর্ণলতার 
কানে এসে পেশছয় উত্তরটা । 

আর কে? 

যার জিনিস সে। 

হশ্া, সে নিজেই। তা ছাড়া আর কি! সখ্যাতি কিনতে লোক দোঁখয়ে 
দানপত্তরে সই করে বসে হাত-পা কামড়ে মরাঁছল, অতএব তলে তলে পাচার। 
বাপের বাঁড় যাওয়া-আসা নেই! তাতে ক, এ বাঁড়রই আনাচেকানাচে কোথাও 
সাঁরয়ে রেখেছে, পরে তাক বুঝে ব্যবস্থা করবে। দিয়ে ফেললে তো হাতছাড়া 
গোত্তরছাড়া ! 

সরিয়েছে কখন ? 

ওমা তার আবার ভাবনা কি, গঞ্গাস্নান যান না মুস্তকেশী 2 তাসের 
আন্ডায় ? 

চাঁব ? 

সে অমন পাঁচটা চাবি ঘ্বারয়ে ঘুরিয়ে খুলে ফেলা যায়। ভাঁড়ারের 
বাসনের সিন্দুকের মরচেধরা তালাটা খুলে দেয় নি সোঁদন সংবর্ণলতা ? 

খুলে দিয়ে বাহাদুরি নেয় নি? 


পান সাজছিল সবর্ণলতা, কাছে এসে কানে ঢেলে দিল একজন কথাটা । 
সুবর্ণলতা দাঁড়য়ে উঠল। 


88 সুবর্পণলতা 


বলল, “ক বললে ? 

“ও বাবা, এ যে নাগিনীর মত ফোঁস করে ওঠে গো! আম বাল 'ন বাবা, 
বলেছে তোমারই শাশুড়ী । 

'কোথায় তান 2, 

আরন্ত মুখ আগুনের মত গন্গানিয়ে ওঠে, 'সামনে এসে মুখোমুখি বলবার 
সাহস হল না বুঝি?" 

'জাঁন না বাবা, তোমাদের কথা তোমরা জানো” বলে জ্ঞাত ননদ পালায়। 
ভেবোছল কথাটা নিয়ে জ্ঞাঁতি জেঠর একট 'িন্দেবাদ করবে, ব্যাপার দেখে 
থেমে গেল, সরে পড়ল। 

কন্তু স্বর্ণলতা কি থেমে থাকবে ? 

সূবর্ণলতা 'কি তার মা সভাবতীর রন্তে-মাংসে তোর নয়? যে সতাবতশ 
কখনো মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে চলতে পারে নি, কখনো অন্যায় দেখে চুপ 
করে থাকে নি? | 

সুবর্ণলতা সেই একবাঁড় লোকের সামনে মুস্তকেশীর মুখোম:খি এসে 
দাঁড়াল। বলল, গহনা হারানোর কথায় কী বলেছেন ? 
মৃতিটি বোধ হয় দেখেন নি, তাই' “কে গলায় বলেন, 'কী আবার বলবো 2, 

'বলেন নি, আমি সরিয়ে ফেলোছি ?" 

মুস্তকেশশ গালে হাত দেন, "মা শোনো কথা! তোমার জানিস, তুমি 
বলে কত আহমাদ করে ছোট ননদকে দেবে বললে, তোমায় ও-কথা বলতে যাব 
কেন১ ছি ছি, আমি পাগল না ভুত! 

নিজের অভিনয়-ক্ষমতায় নিজেই প্রীত হন্‌ মুন্তকেশী। 

সুবর্ণলতা এঁদক-ও?দক তাকিয়ে বলে, 'তবে যে রঞ্জা ঠাকুরাঝ বলল 2 

মুন্তকেশী কথাটা লুফে নেন 

উদাস গলায় বলেন, "তা তো বলবেই, জ্ঞাতি শত্তুর যে! জ্আাতির মুখেই 
এমন কথা শোভা পায়! 

'তবে আপাঁন কাকে সন্দেহ কচ্ছেন 2 

'ম্নন্দেহ আর কাকে করবো বাছা, কার আমার অদেষ্টকে! গহনার জন্যে 
এখন. *বশুরবাঁড়তে কত খোয়ার হয় দেখ মেয়েটার ! 

'হবে বললেই তো হয় না" সুবর্ণলতা তটব্রস্বরে বলে, 'বার করতে হবে 
গহনা! 

'ওমা, বার করবো কোথা থেকে? হাঁদস জানি 2. 

মুন্তকেশী হদিস জানেন না, কিন্তু মূস্তকেশীর বৌ' সে হদিস বার করে 
ছাড়বে! মুক্তকেশীর ঘোমটা দেওয়া বৌ ঘোমটা মুখে সকলের সামনে ম'খ 
তুলে চেশচয়ে ওঠে, "আপনার ছেলে কই. মেজ ছেলে ? 

“ওমা কী সর্বনেশে কথা, তাকে ক দরকার 2 

'আছে দরকার ।' 

'তা এই একবাঁড় লোকের সামনে ডেকে কথা কইবে নাকি তুমি তার 
সঙ্গে 2, 

'কইব। কইতেই হবে। খুদু ডেকে আনো তো তোমাদের মেজদাদা- 
বাবনকে ।' 


সুবর্ণলতা ৪& 


ইল বরে সর্ট রাই রর রো বিঃ রন রা 
লস আদুরে গলায় শুধোলো” মা, ডেকেছ কেন গো?, 

'মা নয়, আমি! 

দার্জপাড়ার গাঁলর ওই বাঁড়টায় আর একটা বাজ পড়ল। 

ঢঝিবা এ কাজটা আরো ভয়ঙ্কর, আরো সাং 

মুস্তকেশীর পাশ কাঁটয়ে, মূস্তকেশীর সামনে, একবাঁড় লোকের সামনে, 
মুখের ঘোমটা কামিয়ে বরের মুখোমাথ দাঁড়য়ে বৌ' তাঁর গলায় উচ্চারণ করল, 
মা নয়, আমি! 

প্রবোধের মুখটা হঠাৎ আমন পাংশু হয়ে গেল কেন প্রবোধ হুঙ্কার 
দিয়ে বৌকে থামিয়ে দিতে পারল না কেন? অমন বোকার মত শাথিল গলায় 
প্রন করল কেন, "তার মানে ?, 

সুবর্ণলতা ?ক সতাই পাগল হয়ে গেছে ? সূবর্ণলতা কি ভুলে গেছে সে 
কোথায় দরঁড়য়ে আছে, কাদের সামনে ? তাইলে করে লিভ তে 
গ্বরেই বলতে পারে, “মানে বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে? গহনাগুলো কোথায় 

গহনা 2 আমি? কিসের গহনা 2 মানে-ইয়ে সেই গহনা 2 আম 
কি জানি? বাঃ! , 

প্রবোধের জিভ তোংলার আভনয় শুরু করে। 

কিন্তু মুস্তকেশ কি দাঁড়য়ে ছেলের এই অপমান সহ্য করবেন 2 

তা তো আর হয় না। 
রসনা বলার রানি রজারতা কাকে কি বলছে" জ্ঞান 

রঃ 

“আছে। জ্ঞান ঠিকই আছে।" ধাক্কা খেয়েও নিবৃত্ত হয় না সংধর্শণলতা। 
বলে, খুব তো মাতৃভন্ত ছেলে আপনার, মায়ের পা ছুয়ে দাবা গালুক না, ও 
জানে কি না গহনা কোথায় আছে! 

'বেশ তাই করছি-+, প্রবোধ .মায়ের পা থেকে হাত চারেক দূরে দাঁড়িয়ে 
হাত-পা ছোড়ে, 'পা ছ*ুয়েই দিব্য গালাছ। ডরাই নাকি এগ্যা, এত বড় 
আস্পর্ধার কথা! আমি চোর, আম গহনা চুরি করেছি! 

চুরি করবে কেন, সাবধান করেছ-_, সবর্ণলতা আরো তীক্ষ গলায় 

বলে, 'পাছে পরের ঘরে 'দামণ জিনিসগুলো চলে যায় তাই বাঁধ 'দয়েছ। তোমায় 
চিনি লানযামি? “দেব* বলোঁছ বলে যাচ্ছেতাই কর [নি তুমি আমায়; ধরে 
ঠৈঙাও নি, 

হ্যা, এই চরমতম অপমানের কথা বাস্ত করে বসলো সুবর্ণলতা। পাছে 
লোক-জানাজানি হয়ে যায় বলে মার খেয়ে যে ট*্‌ শব্দাঁট করে না, তার এই বলে 
বসাটা আশ্চর্য বৌক! 

এমনই ধৈর্যচ্যাতি ঘটলো সুবর্ণলতার যে, তার জীবনের এই লঙ্জাকর 
গোপনীয় খবরটা এমন করে উদ্‌ঘাঁটিত করে বসলো! 


তা সুবর্ণলতার চাঁরন্রে হয়তো ওইটাই ছল পরমতম শরাট। স্বর্ণলতা 
ঘখন-তখনই ধৈর্যের সীমা আঁতক্লম করে বসতো। সেই অতিক্রম করে বসায় যে 


৪৬ সংবর্ণলতা 


নিজেই সে হাস্যাস্পদ হতো, হেয় হোত, সমালোচনার বিষয়বস্তু হতো, ত৷ 
মনে রাখতে পারত না! সুবর্ণলতা যে তার ননদের গায়ে-হলুদের 'দিন গলায় 
আঁচল পাকিয়ে মরতে গিয়ে একটা কীর্তি করে বসেছিল, এতে কেউ সবর্ণ- 
লতাকে মমতা করোছল? না কি প্রবোধকে 'নন্দে দিয়ে সত্যপথে-্থির তার 
বৌকে বাহবা 'দিয়োছল ? 

মোটেই না। সংবর্ণলতাকে শুধু ছি-ছিক্কার করেছে সবাই। কারণ সংবর্ণ- 
লতার জন্যে ডান্তার ডাকতে সোদন। 

কা লজ্জা! কী লজ্জা! 

মুন্তকেশীই কেন গলায় দাঁড় দেন নি সোঁদন, এই আশ্চর্য! 

আচ্ছা বিরাজের বিয়েটা কি তবে বন্ধ হয়ে গেল ? 

ইস! পাগল নাক 2 

মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয় ? 

মা মরলে তাকে ঘরে শেকল তুলে রেখে দিয়ে লোকে কন্যাসম্পরদানটা করে 
নেয়! এ তো তুচ্ছ একটা বৌ' বাঁড়র! 

তা ছাড়া মরেও 'নি তো! 

শুধু কেলেঙ্কারি করোছল। 

একবেলা শূয়ে পড়ে থেকেই তো সেরে গেল তার দূর্লিতা। আবার তো 
পরাঁদন উঠে কাজ-কর্ম করতে লাগলো বিয়েবাঁড়তে। সবাইয়ের সঙ্গে খেতে 
বসতেও দেখা গেল মাছ ল্‌চি নিয়ে। শুধু একটু বোশ শান্ত. একটু বোশ 
স্তব্ধ । 

কিন্তু লক্জিত কি? 

আশ্চর্য, লাঁজ্জত হতে দেখা যায় নি কখনো সুবর্ণলতাকে ! অথচ জীবনে 
কম কেলেও্কাঁর তো করে নি সে! বারে বারে করেছে, যখন-তখন । 

[রাজের 'বিয়ে হয়ে গেল তা হলে ? তবে বৃঝি িরলঙ্কার দেহে *্বশুর- 
বাঁড় গিয়ে দাঁড়াতে অনেক গঞ্জনা খেতে হয়েছিল বেচারাকে 2 

না না, গহনাগুলো যে পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত! 

অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পাওয়া গেল। মুস্তকেশীর সেই তোরত্গের 
মধ্যেই পড়ে 'গিয়োছল কাপড়চোপড়ের খাঁজে । 

হয়তো গহনার বাক্সটায় চাবি দেওয়া হয় নি! হয়তো অসাবধানে কোনো 
সময় উপুড় হয়ে পড়ে গিয়েছিল বাক্সটা। 

ঠিক ঠিক সবই পাওয়া গেল' 

স্বাস্থবতাীঁ সুবর্ণলতার দরুণ গায়ে বড় জাঁরর কল্‌কা বসানো মখমলের 
জামা আর বেগুনী ডুরে ভারী জাঁরদার বেনারসী পরে, সর্বাঙ্গে ঢলঢলে গহনা 
ঝলমাঁলয়ে গেল বিরাজ, চোখের জলে ভাসতে ভাসতে । 

যাবার আগে গোপনে স্‌বর্ণলতার হাত ধরে কে'দে বলেছিল. 'এতাঁদন 
তোমায় চিনতে পাঁর নি মেজবৌ, কত লাঞ্নার কারণ হয়েছি! তাঁম দেবী ।' 

সৃবর্ণর চোখেও জল ছিল বোকি। চোখে জল আর মুখে হাঁস নিয়ে 
বলেছিল, ' যাক, একজন তব; চিনলে আমায়! তবু মনে জানবো ভূ-ভারতে এসে 
একটু সার্থক হলাম। তা মনে কি আর রাখবে মেজবৌকে 2 যা সোন্দর বর 
হল! পৃথিবীই ভূলে যাবে! 


৭ 


মুন্তকেশীর ছোট দুই ছেলে যে রোজগারী হয়ে উঠেছে তা নয়, প্রভাস তো 
এখনো পড়ঃয়া ছেলে, 'ল' পড়ছে. আর প্রকাশ পাড়ার 
সখের থিয়েটারের হিরোইনের পাকা পোস্টটা পেয়ে সুখে 
“মহলা” 'দচ্ছে। 

তবু মেয়ের বিয়ের পর ছেলেদের বিয়ের চিন্তায় 
আর বিলম্ব করলেন না মুক্তকেশণী। মেয়ের বিয়ের জনই 
আটকে ছিলেন এযাবং। আর থাকেন? দুই ছেলের 
1বয়ের জন্যেই তোড়জোড় লাগান। 

শুনে উমাশশীর কাছে সেই কথাটা বলে 
বসলো সুবর্ণলতা। যে কথার জন্যে খণ্ডপ্রলয় ঘটে গেল। 

ত। সুবর্ণলতার জীবনটা নিরীক্ষণ করে দেখলে আগাগোড়াই তো শুধু? ওই 
খণ্ডপ্রলয়। সুবর্ণলতা একটা কিছু বেফাঁস কথা বলে বসে, আর সংসারে 
তৃমূল কাণ্ড ঘটে। 

মনে. হয় এবার বাঁঝ একটা কিছু করে বসবে সুবর্ণলতা ! 

কিন্তু নাঃ, আবার দেখা যায় সুবর্ণলতা তার দীর্ঘ সুন্দর দেহটা নিয়ে 
সংসারে চরে বেড়াচ্ছে, কাজ করছে, কর্তব্য করছে। 

বোঝা যায় না সুবর্ণলতা এই সোঁদন গভীর রাতে বিানিদ্ধ চোখে মৃত্যুর যত 
রকম উপায় আছে তা নিয়ে ভেবেছে । বোঝা যায় না সব সময় মরতে ইচ্ছে হয় 
ওর। কিন্তু কেন? 

চন্রগপ্ত বুঝতে পারে নি, বুঝতে পারে নিন স্বর্ণলতার বিধাতা “রুষ। 
হয়তো বা সংবর্ণলতা নিজেও পারে না। 

বুঝতে পারে না নিজেই সে সেধে দৃঃখু ডেকে আনে। নইলে কণ দরকার 
ছিল সুবর্ণর বড় জায়ের কাছে শ্শুড়ীর বুদ্ধির ব্যাখ্যা করবার? বলে বসবার 
দরকারটা কী ছিল, “মা'র যেমন বুদ্ধি! ছোট ঠাকুরপোর আবার বিয়ে! গোঁপ 
কামিয়ে কামিয়ে মেয়ে সেজে সেজেই যার জীবন যাচ্ছে! দিতে হয় তো একটা 
বেটাছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া উচিত ওর!' 

বলা বাহল্য, কথাটা চাউর হতে দের হল না। তন বছরের টেন্পু 
মহোতসাহে বলে বেড়াতে লাগল, 'মেজ খুড়িমা বলেছে, ছোট কাকা তো মেয়ে- 
মানুষ, বেটাছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে ছোট কাকার? 

বলা বাহুল্য, প্রলয় ঘটতেও দেরি হয় 'নি। 

'গোঁফ-কামানো' মেয়েলী-গলা প্রকাশচ্দ্র বীর-বিক্রমে লাফাইবাঁপাই করতে 
থাকে মেয়েমানুষের আস্পর্ধার বিরুদ্ধে। বিদ্বান বিচক্ষণ প্রভাস 'চাঁবয়ে 
চায়ে বলতে থাকে, 'উদ্দেশ্য আলাদা । আরও বৌ আসে বাড়তে এটা ইচ্ছে 
নয়। নিজের যথেচ্ছাচারটা চলবে না ভেবে বাঁধ দিচ্ছেন! মনে হয় মেক্জদার 
উচিত ওকে নিয়ে আলাদা বাস করা। নচেং গর দণ্টান্তে নতুন যে বোরা 
আসবে, তাদেরও মাথা বেঠিক হয়ে যাবে।, 

শুধু সবোধই কথাটা শুনে হাহা করে হেসে উঠোঁছল, 'বাঁড়র মধ্যে মেজ- 
বৌমারই দেখাছি একট: বুষ্ধিসুম্ধি আছে। মা যে পেকার জন্যেও এক্ষযীন কনে 





৪৮ ্‌ সুবর্ণলতা 


খশুজছেন, আমি তো ভাবতেই পার নি! 

তা সুবোধের অবশ্য সাতখুন মাপ। কারণ প্রবোধ আজকাল গ্রচ্র কাঁচা 
পয়সা রোজগার করলেও এখনো গৃহকর্তা হিসেবে সমগ্র সংসারের ভাত- 
কাপড়ের দায়টা সবোধই টেনে চলেছে । নজের সার সার ছেলেমেয়েতে ঘর 
ভরে উঠলেও এঁদকে কার্পণ্য করে না সে। 

ভগবানও মুখ তুলেছেন, বড়বাবু হয়েছে সে। 

তবে বাঁড়তে মুক্তকেশীই বড়বাব্‌ বড়সাহেব সব। সুবোধের কথা ধর্তব্য 
করলেন না, ছেলেদের বিয়ে তাঁন দিলেন। নগদ নিলেন, তত্ত ঘরে তুলছেন 
এক কূটমের নিন্দেয় শতমুখ এবং আর এক কুটুমের প্রশংসায় পণ্চমুখ হলেন। 

ওটাই মুস্তকেশশির রাজনপীতি। 

প্রথম থেকেই বিভেদ সূষ্টি করে রাখা ভাল। নইলে জায়ে জায়ে একদল 
হলে পৃজ্ঠবল বাড়বে না! শাশুড়কে কি তাহলে গ্রাহ্য করবে ? 

তা মুস্তকেশীর নশীত কার্যকরশ হয় বোঁক। নতুন বৌয়েরা আসার পর 
থেকেই সংসারের বায়ুমণ্ডলে উত্তাপের সণ্টার হতে দেখা যায়। মুস্তকেশী সেই 
উত্তাপের সুযোগে একজনকে সুহ্য়া করে নেবার চেম্টা করেন। 

উাঁকল ছেলের বৌ"-ই ইদানীং সুয়ো হয়েছে। তাকে তোয়াজ করে চলে- 
ছেন মবস্তকেশণ প্রায় নিললজ্জের মত। 

কারণ? 

কারণ পায়ের তলায় একট: শন্তু মাটির আশ্রয় খুজছেন মৃস্তকেশন, যে 
মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়তে পারেন। 

প্রতিপক্ষ ১ 

আর কে? 

নর্দান্ত দুর্বনীত মেজবৌ। 

তর চোখের কোণে যেন চাপা আাগনের গনগন্ান, তার রর ঠোঁটের কোণায় 
যেন উদ্ধভ্যের ঝালিক। 

25 জাডি 

তার উপর আবার বরটা তার “উপায়” হয়ে উঠছে উত্তরোত্তর । 

ওকে দাবাতে হলে শন্ত মাটিতে পা রাখতে হয়। আঁলাঁখত আইনে সব 
ভাইরাই' উাঁকলভাইকে নিজেদের থেকে উচ্চাসনে বাঁসয়ে সমীহর চোখে দেখে 
আসছে, কাজেই' সেই খনুঁটটাই ধরা ভাল। 

মুস্তকেশশ তাই' পাতাঁদন সেজবৌ িরিবালার “শরীর কাহল' দেখেন, আর 
খেটে খেটে আধমরা" হতে দেখেন তাকে । আর তার গণের তুলন্ম দেখতে 
যা সে যে বড়মানৃষের মেয়ে হয়েও দেমাকী নয়, এটাই কি সোজা পাওয়া 

? 

প্রকাশের বৌ বিন্দু বড়মানুষের মেয়ে নয়, 'িনতান্তই 'নরূপায়ের ঘরের 
মেয়ে। গৃত্তকেশণ রাতাঁদন ত'কে তার সেজ জা'র দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে 
বলেন। 

মৃন্তকেশীর এই রাজনীতির লীলার উপর 'দিয়ে বয়ে চলেছে 'দন, বয়ে 

চলেছে প্রকৃতির লীলা । মেয়েতে বৌতে মিলে কোন: না বছরে বারতিনেক 
জার বানা 

সুবর্ণলতা ? 


পুবর্ণলতা ৪৯ 


তা সবর্ণলতাও যে দলে আছে বৌকি। প্রকৃতি তো ছেড়ে কথা কই্বার 
মেয়ে নয়। আর প্রবোধচন্দুও 'কিছ7 আর ছেড়ে কথা কইবার ছেলে নয়। 

যে স্মীলোক আঁতুড়ে যেতে ভয় পায়, সে স্্লোককে অসতখ ছাড়া আর 
কিছ বলতে রাজী নয় প্রবোধ। মা হতে অরাজণী? তার মানে রুপ-যৌবন 
ধরে যাবার ভয় ? তার মানে পরপুরূষ আর ফিরে চাইবে নাঁ এই আশঙ্কা, এই 
তো? বুঝি সব। ওসব বিবিয়ানা রাখ! 

বাবযানা রাখতে হয় অতএব। 

কত্ত আর যুঝবে সুবর্ণলতা ? 


বাঁড়তে তো আর এখন শুধু গুরজনই নেই, লঘ্‌জনও রয়েছে যে। লজ্জা 
তো তাদের সামনেই । তা ছাড়া সমপর্যায়রা 2 

তারা যাঁদ টের পায় সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে আঁতুড়ে ঢুকতে হচ্ছে সবর্ণ- 
লতাকে, আর কি মানবে তাকে £ হয়তো “আহা'ই করে বসবে। 

' ওই “আহা'র চাইতে অনেক ভাজ ঈর্ধা। 

তা ঈর্ধা তারা করে বোক। 

এতকাল বিয়ে হয়েছে সুবর্ণলতার, তব্‌ তার বর তাকে “চক্ষে হারা" হয়, 
তবু একদন্ড ঘরে না দেখলেই রসাতল করে, রান্নাঘরে গেলেই বার বার ছেলে- 
পুলেকে জিজ্ঞেস করে, “এই, তোদের মা কই 2 

এর চাইতে ঈর্ধার বস্তু আর কি আছে? 

আজীবন সবাই স্ববর্ণকে ঈর্ধাই করেছে। 

আর বাইরের লোক বলেছে, “এমন মানুষ হয় না।' 

এ কথা মুস্তকেশীর সংসারের বাইরের সবাই চিরকাল বলেছে। 

আর মূ্তকেশখর সংসার বলেছে, “এমনটি আর দেখলাম না! কোঁট কো 
নমস্কার ! 

সেই দূর অতাঁতে স.বর্ণলতা যোঁদন গলায় আঁচল পাঁকয়ে মরতে বসে 
হারানো গহনার হাঁদস করে দিয়োছল, সেইদিনই বোধ কার গলা খুলে বলার 
শুরু। 

: মুস্তকেশী মেয়ের গায়ে গহনা পরিয়ে *্বশুরবাঁড় পাঠাতে পেরে স্বাস্তর 
নিঃ*বাস ফেলোছিলেন বৌক? তবু বলেছিলেন, কোটি কোট ন্মস্কার মা, 
কোটি কোটি নমস্কার ! 

উমাশশনীও বলোছল, 'নমস্কার করছি বাবা! 

সুবর্ণলতার দেওররা বলোছল, “নমস্কার! কোট কোট নমস্কার !' 

শুধু সৃশশলা বলোছল, 'কেলেত্কাঁরটা তোরাই করাল! যতদূর নয় তত- 
দূর লোক হাসালো তো পেবোটা, অথচ কেলেগকারি ছড়ালো বৌয়ের! 

আর সশশলার বর কেদারনাথ বলোছিলেন-__ | তা তাদের কথার মূল্য কি? 
তারা তো মুস্তকেশীর সংসারের বাইরের লোকই। যাদের শহানয়ে শহানয়ে 
মুস্তকেশশ বলতেন।__ 

'যার সঙ্গে ঘর কার নি. 
সে-ই বড় ঘরণা, 
যার হাতে খাইনি, 


&০ . | সুবর্ণলতা 


সে-ই বড় রাঁধুনী।' 

তা সেই কেদারনাথ শুধু সৌঁদনই' নয়, অনেক সময় অনেক 'দিনই বলতেন, 
'মান্ষটাকে তোমরা চিনলে না! বলতেন, “এমন মেয়ে সচরাচর হয় না গো! 
তবে আমার শাশুড়ী ঠাকরুগ আর তাঁর সযোগ্য পর শব গড়ার মাটিতে বাঁদর 
গড়বার পণ করে বসেছেন এই দুঃখ! ও 

কেদারনাথের সঙ্গে কথা কইবার অনুমাতি ছিল সুবর্ণলতার। অর্থাৎ 
সবর্ণলতাই ওটা চালু করে নিয়েছিল। উমাশশী কখনো ননদাইয়ের সঙ্গ 
কা বলার পরযোদন জননতব করে নি ঘোমটা দিয়ে ভাত জল এগিয়ে 'দিয়েছে 
এ | 
.  স্বর্ণলতাই প্রথম বলেছিল, “বড় ঠাকুরজামাইয়ের সঙ্গে কথা কইলে দোষ 
ণিমা? আম তো ও*র মেয়ের বয়সী! 

কথাটা মিথ্যা নয়। 

কেদারনাথের বয়েস হয়েছে। 

সুশীলা তাঁর দ্বিতীয় পক্ষ । 

আগ্নের পক্ষের যে মেয়োটি আছে, বয়সে সে সুবর্ণলতার চাইতে বড় বৈ 
ছোট হবে-না। সশীলা যখন: বেশি 'দনের জন্যে বাপের বাঁড় আসতো, সতান- 
ঝিকে নিয়ে আসতো । 

এখন আর আসে না। শবশুরবাঁড় চলে গেছে মেয়ে। 

সে যাক, সুবর্ণলতা যে কেদারনাথের মেয়ের বয়সণ ভাতে ভুল নেই। 

তাই এত সাহস স্বর্ণলতার। 

তবু মুস্তকেশণ প্রস্তাবটা প্রসন্ন-চত্তে গ্রহণ করবেন এমন আশা করা যায় 
না। বললেন, “হঠাৎ কথা কইবার দরকারই বা কী এত পড়লো ?' 

উনি সর্বদা ডাক দেন, “কই গো বড় গিল্নী, কই গো মেজ গিল্না বল, 
পান-তামাক চান, বোবার মত শুধু এগিয়ে দিই, লঙ্জা করে! 

মুন্তকেশশ বেজার মুখে বলেন, ণক জান মা, তোমাদের যুগের লঞ্জার 
রীত-নাঁত *কি! যাতে লজ্জা, তাতে তোমাদের লঙ্জা নেই, যেটা সভাতা-. 
ভব্যতা তাতেই হল লক্জা ! গন্রুজনের সঙ্গে কথা ি কইলেই হয় ? মান রাখতে. 
না পারলে 2 

স্বর্ণ হেসে ফেলে বলে, 'মানই বা রাখতে না পারবো কেন মা? মান্যের 


* মৃন্তকেশশ একটি দাঘশনঃশ্বাস ফেলে বলেন, 'সে শাস্তর যে তোমার পাঠ- 
রিয়েল দারেনদর গুরুজনকে হেপ্ট করাই তো তোমার 
পাকীত । 

স্‌বর্ণলতা বলোছল, “বড় ঠাকুরজামাইকে হেট করতে চাইবে, এমন খারাপ 
কেউ আছে নাকি জগতে 2 
সেই.“বড় ঠাকুরজামাইটি” মুস্তকেশশর নিজের জামাই. তাকে প্রাধান্য না দলে 
চলে না। তাই অনেক তর্কাতার্কর পর 'িমরাজশ হয়েছিলেন মুন্তকেশশি। 

ণনজেও তো 'তাঁন কতকাল জামাইয়ের সঙ্গে কথা কইতেন না, ঘোমটা 
১৯৮ কিনতু জামাইয়ের প্রা-জানো বারহারে ধীরে ধারে সেটা ত্যাগ 


8৫০ নর? 


সূবর্ণলতা ৬১ 


আর ওই দঙ্জাল বৌ? 

এমাঁনতেই যে স্বামীর মাথায় পা দিয়ে হাঁটে! এর ওপর আবার পর- 
পুরুষের সঙ্গে মুখ তুলে কথা কইলে কোথায় "গিয়ে দাঁড়াবে! 

স্ই কথাই বলোছিলেন, ঠাকুরজামাইয়ের সঙ্গে কথা কয়ে কি চতুর্বর্গ লাভ 
হবে তুমি জানো মা। তবে এও বাল, জানো তো “পেবো” এসব পছন্দ করে 
না! 

সুবর্ণ আরন্ত মুখে বলে, “কেউ যাঁদ পাগল হয়, তার 'তালেই চলতে হবে 2, 

“পাগল যে কে, সে হিসেবই বা করছে কে বাছা! মুস্তকেশী বেজার গলায় 
বলেন, 'কথা কইবে কও, “হ্যা হ্যা” করো না গুচ্ছির। তোমার তো মান্রাজান 
নেই! এই যে “পেকা”র সঞ্চে হট হট করে কথা কইচ, মান কি রাখছো তার ?' 

মান! 

প্রকাশের! 

শখের থিয়েটারে মেয়ে সাজা সেই ছেলেটারও মানহানির প্রশ্ন! সূবর্ণলতার 
মুখে চোখে একটা হাঁসর আভাস খেলে 'গিয়েছিল। তবু কৌতুকের গলা 
সম্বরণ করে বলোছল, 'মানের হাঁন কি করোছ মা, বিয়ের কথায় একট; হন্তারক 
হয়োছলাম, তা সে আক্ষেপ তো তার মিটেছে বাপু!” 

ম্ত্তকেশী সগর্বে বলেন, পমটবে না তো কি তোমাদের হাততোলায় রেখে 
দেব ওকে 2 

তা সেই গর্বের মুহূর্তে সুবর্ণলতা বলে উঠোছল, “সে যাক, তাহলে বাপ 
কথা কইব বড় ঠাকুরজামাইয়ের সঙ্গে- 

“তাতে যাঁদ তোমার চারখানা হাত-পা বেরোয় তো কোরো! 

এই' অসতর্ক উক্তিটুকুই অনূমাতি বলে ধরে নিয়োছল সুবর্ণলতা । 

কিন্তু সাঁত্যই তো, ক" চারখানা হাত বেরুবে সুবর্ণের বড়ো ভদ্রলোকটার 
সঙ্গে কথা কয়ে? 

কে জানে সে কথা! 

তবে এইটি হলো, বাঁড়র পরবতাঁঁ আরও দদুটো বৌ এ সুধোগটার সদ্ধযবহার 
করলো। মুক্তকেশী বললেন, হবেই তো! কথাতেই আছে, ' 'আগ ম্যাংলা 
যোঁদকে যায়, পাছ ন্যাংলা সৌদকে ধায়!” মেজবৌ একেলে হাওয়া ঢোকালো 
বাড়তে ! 

মেজবৌয়ের এ বদনাম উঠতে বসতে । মেজবৌ বাড়িতে খবরের কাগজ 
আসার পত্তন করেছে, মেজবৌ' বাঁড়তেও গায়ে সোঁমিজ দেওয়ার পর্তন করেছে, 
মেজবোৌ আঁতুড়ঘরে ফর্সা বিছানা-কাপড়ের প্রথা প্রবর্তন করেছে। মেজবৌ 
মেয়েগুলোকে সুদ্ধু ধরে ধরে “পড়তে বসা'র শাসননীত প্রয়োগ করেছে। এমন 
আরো অনেক কিছুই করেছে মেজবো। 

ধিকৃত হয়েছে, লাঞ্চত হয়েছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে জজরশীরত হয়েছে, তবু জেদ 
ছাড়ে নি। শেষ পর্যন্ত করে ছেড়েছে। 


৮ 


কিন্তু জেদণ মেয়ে সববর্ণলতা সব কিছুই কি করে উঠতে পেরেছে? 
সমূদ্র দেখবার যে বড় বাসনা ছিল তার, দেখেছিস 


সেই কোন্‌ অতাঁতকালে! 

কত বয়েস তখন সুবর্ণলতার যখন মুস্তকেশী পাড়ার 
দলের সঙ্গে শ্রীক্ষেত্' শ্িয়েছিলেন ? 

আকাস্মক কথাটা উঠেছে, চটপট সব যোগাড় করে 
করে ফেলতে হবে। মন্তকেশী দুজোড়া থানধূতি 'সাজো' 
কাচিয়ে নেন ধোবার বাঁড় থেকে। গায়ের চাদর খুদুকে 
দিয়ে কাটিয়ে নেন সাঁজমাঁট 'দিয়ে। এ ছাড়া যোগাড় কি কম? কম্বল, 
বালিশ, মধু, আখের গড়, ইসবগুল, আতপচাল, সাব; মিশ্রী, খুটিনাটির কি 
অন্ত আছে? একেই তো বিদেশে বেঘোরে প্রাণটা হাতে করে যাওয়া! 

মা তীর্থ করতে যাবেন ধুনে মেয়েরা দেখা করতে আসে এক-একাঁদন। 
সুশীলা তো থেকেই গেল কাদন। মেজ সুবালাও এল, পরাদন চলে গেল। 
বড় ননদকে সুবর্ণ বড় প্রীতির চোখে দেখে । মানুষটার মহৎ গুণ, বড় 'নার্ব- 
রোধী আর শান্তিপ্রিয়। যেটা নাঁক মস্তকেশীর গর্ভজাতদের মধ্যে দুর্লভ । 

এরা সকলেই অশান্তাপ্রয়। 

অকারণ একটা কথা কাটাকাটি, অকারণ একটা চেশ্চামোঁচ, অকারণ একটা 
জাঁটলতার সৃষ্ট করা- এটাই যেন এদের ব্যসন! বিশেষ করে সুবর্ণসতার 
উকিল সেজ দেওরের আর সুবর্ণলতার পাঁত পরম গুরুর । এরা দুজন যেন 
এদের উপাস্থাতিতে সমস্ত পাঁরবেশটাকে সচাঁকত করে রাখতে চায়, অহরহ সরবে 
ঘোষণা করতে চায় “আমি আছি'। এই ওদের বিলাস, ওই' ওদের বিকাশ। 

হয়তো এমানই হয়। 

যাদের মধ্যে নজেকে 'বকাঁশত করবার উপয্যন্ত কোনো বশেষ গুণ নেই, 
অথচ (ননজেকে “বাঁশন্ট' দেখার ইচ্ছেটা থাকে ষোল আনা, তাদের মধ্যেই জন্ম 
নেয় এই বিকৃতি। তারাই নিজের চারদিকে একটা সোরগোলের আবর্ত তুলে 
শবশিষ্ট হলাম' ভেবে আত্মতৃপ্তি পায়। 

প্রবোধ একটা মুটের সঙ্গে অথবা একটা পালাক-বেহারার সঙ্গে একটা 
দেড়টা পয়সা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়য়ে এমন শব্দময় দৃশ্যের অবতারণা করতে পারে 
যে, পাড়াসুদ্ধ লোক সচাকত হয়ে ছুটে আসে, জানলায় জানলায় খড়খাঁড়র ফাঁকে 
কৌতূহলী চোখের 'ভিড় বসে যায়। 

প্রভাসের মহিমাটা আবার বাড়তেই বোশ প্রকট। 

প্রভাস প্রাত কথায় পা ঠুকে বলে, “আম শুনতে চাই কে এ কথা বলেছে! 
শুনতে চাই কে এ কাজ করেছে! 

তারপর ? 

তারপর অপরাধীর জন্য তো আছেই হাতে মাথা কাটার ব্যবস্থা! , 

ঘোরতর মাতৃভন্ত প্রভাসচন্দ্র প্রাত পদে সংসারে তার মাতৃসম্মান ক্ষ-্ হতে 
'দেখে, এবং সেই কাঁজ্পিত অসম্মানকে উপলক্ষ করে ঘূর্ণিঝড় তোলে। প্রধান 
লক্ষ্যবিন্দ; অবশ্য সুবর্ণলতা ! 





পিনবগ11৩। ৫৩ 


কারণ সূবর্ণলতাই গুরুজনের মান-সম্মান রক্ষার নশীত, 'নয়ম, ধারা, 
অনুচ্ছেদ ইত্যাদি মেনে চলতে তেমন উৎসাহণ নয়। সুবর্ণলতা জানে না অকারণ 
গাল খেয়ে চুপ করে থাকতে হয়, সূবর্ণলতা জানে না অহেতুক খোশামোদ আর 
তোয়াজ করতে হয়। 

তাই স্বর্ণলতার নাম না করেও শব্দভেদশ বাণ 'নক্ষেপ করে, “মাকে মান্য : 
করে চলতে যে না পারবে, সে যেন পথ দেখে । এ ভিটেয় মাকে অপমান করে 
বাস করা চলবে না। 

হা, বহু সহম্ত্রবার পথ দেখার হুকুম পেয়ে পেয়ে তবে 'পথ দেখোছল, 
রা: তবু নিন্দেয় “ঢ টি" পড়েছিল সুবর্ণলতার-_ আলাদা হয়ে গয়ে- 

বলে। 

'হাঁড় ভেম্ন' কর সে কথা স্বতন্ম, যেমন করেছে ছোটবৌ' বিন্দু, তা বলে 
বাঁড় ভেম্ন! 

কিন্তু এসব তো অনেক পরের কথা । 

সংবর্ণলতা যখন সমদূদ্রের স্বপ্ন দেখতো. তখন 'আলাদা' হওয়ার স্বপ্ন 
গদখে নি। 

মৃস্তকেশী শ্রীক্ষেত্রে যাচ্ছেন। 

যেখানে নাকি সমুদ্র আছে। 

মূস্তকেশশর সাঁজিলাটিতে ফাচা চাদর বাঁলিপের ওয়াড় তুলে আনতে রাক্সা- 
ঘরের ছাদে এল সুবর্ণ। এটাই মুস্তকেশীর বিশুদ্ধ এলাকা। এখানে তাঁর 
কাচা কাপড় শকোয়, শুকোয় বাঁড় আচার। 

রোদ পড়লে এগুলি ঘরে তোলার ভার স্ববর্ণর। স্বেচ্ছায় সে এ ভার 
নিয়েছে। কাপড়ে সন্ধ্যা পাবার আগেই তসর শাঁড় একখানা জাঁড়য়ে পাশের 
দকের এই নিচু ছাদটায় নেমে আসে সৃবর্ণ। গাঁজর মধো বাঁড়' ছাদে তার 
বুকচাপা হাওয়া। তাছাড়া হবেই বা কি? যে ছাদে উঠতে হয় না, নামতে হয়, 
সে ছাদে কোথা থেকে আসবে উত্তাল হাওয়ার স্বাদ ? 

তবু ভাল লাগে। 

তবুও সামান্যতম মূ 

উপরে বাতাস না থাক, পায়ের তলায় ঘটে আর কয়লার গণুড়োয় তৈরি 
গুলের ছড়াছাঁড় থাক, তব্‌ তো মাথার ওপর আকাশ আছে। 

কাপড় শুকোতে দেওয়া দাঁড়তে হাত 'দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে স্বর্ণ 
০০১ ১৬ পর 

সম্দ্র কী ওই আকাশের মতট - | 
তাতে নাক ঢেউ আছে, ত তরঙ্গ আছে, গর্জন আছে। কী অপূর্ক সেই 
মাহমা! 

সৃবর্ণলতার শাশুড়ী মুক্তকোশন সেই মাঁহমার দৃশ্য দেখবেন গিয়ে। কিন্তু 
 মব্তকেশণর মনের কাছে কি সেই সমৃদ্রের মূল্য ধরা পড়বে ? মুস্তকেশী তো 
' কই একবারও বলছেন না সমন্দ্রর্শনে যাচ্ছি। বলছেন 'জগন্াথ-দর্শনে যাচ্ছি”! 
বলছেন 'জগন্নাথ টেনেছেন'! 

৮০৯ দ্র হা 

সুবর্ণলতার আকুলতার ম্ন্তকেশীর আকুলতা ? 

নইলে 'চারধাম' করে নিতে পেরেছেন তিনি! আবার ছ্বিতীয়বার পুরা 


&৪, সুবর্ণলতা 


যাচ্ছেন রথধযান্রাকে উপলক্ষ করে! কেদারবদর+, দ্বারকা, মথুরা, বৃন্দাবন কত 
কত জায়গায় গিয়েছেন মুস্তকেশী সুবর্ণর বিয়ের আগে, পরে। 

পাড়ার মাঁহলাদের সঙ্গে ব্যবস্থা পাকা করে ফেলে' এসে ছেলেদের একন্লে 
ডেকে বলেন, 'তোমরা চার ভাই' কে কি দেবে বল? 

, ছেলেদের মুখ শনকোলেও মুখে হারে না। বলে. তোমার যা লাগে বল; 
মা! 

এবারেও বলেছে। 

তা এবারে টাকা একটু বোশ লাগবে। 

রথে যাওয়া “আটকে বাঁধতে হবে, পান্ডাপূজো করতে হবে, দিনা: 
বাঁড়' ভোগ দিতে হবে। 

মুস্তকেশী জানতেন, 'টাকা' দিলে প্রবোধই দেবে। সুবোধের 'নেই' বলে 
দিতে পারবে,না, আর সেজ ছোট িপটোমির জন্যে দিতে পারবে না! 

তা প্রবোধও কিছু কম কিপটে ছিল না, শুধু সুবর্ণর দাপটেই মুনস্তহস্ত 
হতে হয়েছে তাকে। 

০৯১৪ আজকাল উপার্ঁন বেশি, ৯৬৭ মান লেনদেনের কাজ, 
পারিনা 

এই একটি কারণেই হয়তো এখনো পর্যন্ত সুবর্ণলতাকে মাথা মাঁড়য়ে 
ঘোল ঢেলে বাঁড়র বাইরে দূর করে দেন 'ন মুন্তকেশী! টাকাকাঁড়র ব্যাপারে 
বৌটা একেবারে উদ্োমাদা। আমার স্বামীর বোঁশ গেলো" বলে হাপসানো তো 
দূরের কথা, 'তোমার বৌশ আছে তুমিই দাও' বলে' স্বামীকে উৎপীঁড়ন করে 
মারে। 

আর বৌ' তিনটে এক পয়সায় মরে বাঁচে! 

উম্নাশশশ যে অত ভালো, পয়সার ব্যাপারে কঞ্জথষের রাজা ! 

এই যে নিত্য গঙ্গাস্নান করেন মুস্তকেশী, খরচ কি নেই তাতে ? গাঁড়- 
পালকি না চড়্ন, ঠাকুরদোরে তো দু-চারটে পয়সা দিতে হয়! ভিখার ফাঁকর- 
কেও এক-আধটা না দলে চলে না। তাছাড়া গঞ্গার ঘাটের বাজার থেকে হলো 
বা দুটো ফলপাকড়, হলো বা দুটো মাটির পুতুল কেনা, এ তো আছেই। এ 
খরচ সুবর্ণলতাই হাতে গুজে দেয়। [নিজে থেকেই দেয়। 

এবারেও যে প্রবোধ উদার গলায় বলোছল, 'সবাইকে আর এই সামান্যর 
জন্যে বলার ক আছে মা? তোমার আশীর্বাদে শ' দুই টাকা আমিই তোমাকে 
দিতে পারবো'-সে ওই বৌয়ের অন্তরাটপানিতে ছাড়া আর কিছ: নয়। তবে 
মুন্তকেশী মর্ধাদা খোয়ান নি। 

মুন্তকেশ উদাসভাবে বলোছলেন, 'সে তোমাদের যার যেমন ক্ষ্যামতা, 
ভাইয়ে ভাইয়ে মোকাবিলা কর! আমি সবাইয়ের কাছে বলে খালাস! 

বৌয়ের বদান্যতায় বিচিলত হবেন ম্ন্তকেশী এমন নয়। 

সুবর্ণলতা কাচা কাপড় তুলে নেমে আসাছল, সহসা বড় বৌয়ের সেজ ছেলে 
গাব্‌ এসে হাঁক পাড়ে 'মেজ খড়ী, দিব্বি যে ছাদে এসে হাওয়া খাওয়া হচ্ছে! 
ওদিকে দেখ গে যাও, ঠাকুমা তোমার পিশ্ডি চটকাচ্ছে! 

হপ্া, এই ভাষাতেই কথা বলতে অভ্যস্ত ওরা। 

এই ভাষাই তো শুনছে অহরহ। 


সুবর্ণলতা 6 


ভূরু কুচকে বলে, কেন হলোটা 'কি 2 

হলো? হু! সাতশোবার ডাকছেন, শোনো গে কেন? 

৪! 

সাতশোবার ডেকে সাড়া না পাওয়াটাই তা হলে অপরাধ! অতএব মারাত্মক 
ছু না। সুবর্ণ তাড়াতাড়ি কাচা কাপড় যথাস্থানে রেখে এসে বলে, “মা 
জকছিলেন ১ 

মুন্তকেশী গম্ভীর আর কঠোর কণ্ঠে বলেন, 'বোসো। 

ঈষং ভয় পেয়ে চারাদকে তাঁকয়ে দেখে সংবর্ণ। 

পাঁরাস্থাতিটা কেমন্‌ যেন ঘোরালো। 

আশেপাশে ভিড়। 

খুনের আসামীর চাঁরাঁদকে যেমন ভিড় বসে 'বিচারফল শোনবার আশায়, 
তেমান দালানের দরজায়, রাল্লাঘরের রোয়াকে, ভাঁড়ারের সামনে দাঁড়য়ে তার 
[তন জা, তাদের ছেলেমেয়েরা । 

শিলা কোথায় ? 

[তিনি কি চলে গেছেন 2 

কার সঙ্গে ? 

মুস্তকেশী আগের সুরেই বলেন, তোমার সঙ্গে একটা হে্তনেস্তর 
দরকার মেজবৌমা। শোনো, কী বলেছ তুম কেদারকে 2 

সুবর্ণ শঙ্কিত হয়ে তাকায়। 

কেদারকে আবার কণ বলবে সে 2 

কেদারকে সে বলে পিতৃতুল্য ভালবাসে । 

অবাক হয়ে বলে, কী বলোছ?” 

“কী বলেছ? আকাশ থেকে পড়ছ ? বাল ক্ষেত্তরে যাবার কথা বল নি." 

ক্ষেত্তরে যাবার কথা ! 

সুবর্ণর চোখের সামনের প্রর্দাটা সরে যায়। কেদারের কাছে বলেছিল বটে 
সে এ কথা! 

কিন্তু সেটা ক এতই দোষাবহ ? 

তাই ঈষং সাহসের সঙ্গে বলে ফেলে সে, “বলোছিলাম। সেকি আর 
সাত্যিঃ কথার কথা! 

হশ্মা, তাই বলে সুবর্ণ। 

'সে কি সাঁত্যঃ কথার কথা!” 

কিন্তু সুবর্ণর কাছে সে যে কত বড় সত্য ছিল, সে কথা সুবর্ণ জানতো 


| 

সুবর্ণ সেই বলার 'পছনে সমস্ত চিত্তকে উন্মখ করে রেখেছিল, সুবর্ণ 
সমুদ্রের স্বপ্ন দেখোছল। তাই সৌদন কেদার-_ 

হণ্যা, যোঁদন কেদার এসোছিলেন শাশুড়র তীর্থযান্রার সংবাদে দেখা করতে । 
সশীলা আগেই এসোঁছল দ্যাওরপোর সঙ্গে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে। কেদার 
সোঁদন এসেছেন আঁফস ফেরত। 

'কই গো বাড়ির শিল্নীরা কোথায় গো? দুয়োরে আতাথি এসেছে যে__ 

এই পারাঁচিত কৌতুকবাক্যাট উচ্চারণ করে ঢ.কো ছিলেন কেদারনাথ। কাল ? 
না পরশু £ কালই তো! 


৫৬, | সংবর্ণলতা 


ছোটবৌ বিন্দু আগেভাগে এসে মাথায় কাপড় টেনে রসিকতা করোছিল, 
'কানকে আটকে রাখা হয়েছে বলেই বুঝি মাথাঁটি এসেছেন ? 

“বটে নাকি! কেদারনাথ দালানে পাতা চৌকিটার উপর বসে পড়ে বলেন, 
“ছোট গিন্নী যে আজকাল খুব ফাজিল হয়েছো দেখাঁছ! ওহে মশাই, এ হত- 
ভাগ্যের প্রাণটাই যে এ বাড়িতে আটকে পড়ে থাকে, জানো না? : 

বিন্দ; ঘোমটার মধ্যে থেকে টিপে টিপে হেসে বলে, 'জান।' 

'জানো তো এক 'ছালিম তামাক খাওয়াও "াঁক ! 

ছোট এই শালাজকে নাতবৌয়ের শামিল মনে হয় কেদারনাথের। 

“আচ্ছা পাঠিয়ে 'দচ্ছি। আপনার প্রাণের মহাজনের হাত দিয়েই পাঠাচ্ছি-_ 

বলে চলে যায় 'বন্দ্‌। 

কেদারনাথ চেশচয়ে বলেন, “কথাটা যে ছুড়ে মেরে গেলে ছোট গিল্লশ, বাল 
মানেটা কি ?* 

“মানে বুঝিয়ে 'দাচ্ছি" বলে বিন্দু দোতলায় সুবর্ণলতার কাছে গিয়ে ভাল- 
মানুষের মত বলে, 'মেজাঁদ, বট-ঠাকুরজামাই তোমায় ডাকছেন! 

'বট-ঠাকুরজামাই'? 
সুবর্ণর মুখটা খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, 'এসেছেন বুঝি? কতক্ষণ ?' 

বিন্দ; আরো দিরীহ গলায় বলে, এই তো এইমাত্তর! এসেই তোমার 
খোঁজ করলেন। যাচ্ছ তো-এক ছিিম তামাক বরং সেজে 'নয়ে যাও ।' 

সূবর্ণর অত দোৌর সয় না। 

সুবর্ণ আগেই ছুটে এসে িপ করে একটা প্রণাম করে বলে, “এতীর্দন 
আসেন নি যে, ঠাকুরজামাই 2" 

কেদারনাথ নকল গাম্ভশর্যে বলেন, 'এসে লাভ? বাড়ির গিল্লীরা আতাঁথকে 
একটা পান দেবে না, এক 'ছিলিম তামাক দেবে না, শুধু শুধূ মুখচন্দ্র দেখতে 
দু কোশ রাস্তা ভেঙে ছুটে আসা-এ বয়সে আর পোষায় 

“পোষায় বোকি! সুবর্ণ একগাল হেসে বলে, দুটি দিন বট-ঠাকুরাঝর 
মুখ দেখতে পান নি বলে এলেন তো ছুটে” 

নিও, এ যে দেখাঁছ সব শালই ফাজিল হয়ে উঠেছে! কেদারনাথ বলেন, 
“ওহে মশাই, সে মৃখচন্দ্র দেখতে দেখতে চোখে ঘাঁটা পড়ে গেছে। সেই নথ 
ঘূরানো মুখ মনে করলেই প্রাণে ভয় আসে। এখানে আসা নাকছাঁব পরা 
শৌখিন মুখের আশায়! 

'যত সব বাজে কথা আপনার! বসুন, তামাক নিয়ে আঁস।-_বলে উঠে 
যায় সুবর্ণ । 

খোঁজও রাখে না, বিন্দুতে আর 'গারবালাতে তখন সুবর্ণর বটঠাকুর- 
জামাইয়ের নামে উদাত্রান্ত হয়ে ছটে আসার ভঙ্গন 'নিয়ে হাসাহাসি করছে! 

হলোই বা বুড়ো, বেটাছেলে তো বটেই। 

তাছাড়া যার বর “পরপূরূষে'র ছায়াদর্শনে খা*্পা হয়ে ওঠে! যাই বলল 
বাপু, দেখলে হাঁস পায়! মাথার কাপড় তো কপালের ওপর উঠে যায় কে 
দেখলে! 

সুবর্ণ অত জানে না। 

সংবর্ণ পান-তামাক নিয়ে গাঁয়ে এসে বসে। 

তারপর বলে, 'আচ্ছা ঠাকুরজামাই, আপাঁন সমুদ্র দেখেছেন 2 


সুবর্ণলতা ৫৭ 


কেদারনাথ বলেন, তা দেখোছ। অনেকাঁদন আগে আঁবাশ্য। আমার মা- 
পিসীকে নিয়ে জগন্নাথ-দর্শন কাঁরয়ে আনা গিয়োছল।' 

“অনেকাঁদন আগে! রেল হয়োছিল তখন ?' 

পাগল! পুরীর রেল তখন কোথায় ?' 

'ওমা, তাহলে তো খুব কম্ট হয়োছল !' 

দেখ মেজ গিল্লী, কষ্ট মনে করলেই কণ্ট, নচেং নয়। তা ছাড়া কট না 
করলে কি কেন্ট মেলে! 

“আম খব কষ্ট করতে পারি।' 

সুবর্ণ বলে আস্তে। 

কেদারনাথ হেসে ওঠেন, গলা নামিয়ে বলেন, 'না পারলে আর আমার 
নাসা র্জর রাঃ 

এই! 

এই জন্যেই কেদারনাথকে এত ভালবাসে সবর্ণ। কেদারনাথ স্বর্ণকে, 
বোঝেন। কেদারনাথ এ সংসারকে বোঝেন। 

স.বর্ণ একট বিহবল হয়। 

তারপর বলে, '্রীক্ষেত্র গিয়ে সমুদ্র দেখোঁছলেন ?' 

কেদারনাথ সস্নেহে বলেন, সাধে আর তোমার ঠাকুরঝি তোমায় “পাগল” 
চা সমৃন্দুর না দেখে কেউ জগন্নাথ থেকে ফেরে ? দেখোঁছ, চান 

সুবর্ণ আরো কাছে এসে বসে. খুব ভাল লেগোঁছল আপনার 2" 

“সে আর বলতে! দ বেলা চান করোছ! 

সুবর্ণ বিবশ বলায় বলে, খুব বিরাট 2 খুব সুন্দর খুব ঢেউ? 

খুব বলে খুব! কেদারনাথ তামাকে টান দতে দিতে বলেন, 'এক-একদিন 
সন্ধ্যেবেলায় বালির গাদায় বসে থাকতাম, মনে হতো না যে আর ফিরি!” 

“আপাঁন ঠিক আমার মতন।' সবর্ণ উচ্ছ্বাসত গলায় বলে, “ওই জন্যেই 
আপনাকে আমার এত ভাল লাগে ।' 

কেদারনাথ সহাস্যে বলেন, “সর্বনাশ করেছে। নিজনে যা বললে তা বললে 
মেজ গিল্ী, আর মুখে এনো না। আমার গিল্নী আর তোমার কর্তা এই দু- 
জনের একজনও যাঁদ শনেছে--কি হয় বলা যায় না! 

সুবর্ণ এসব বাজার-চলতি ঠান্রার ধার বড় ধারে ন্ম। সংবর্ণ সংতেজে 
বলে, ইস! ক হয়? আম তো ঠাকুরাঝকে ডেকে ডেকে বাল, আপনার 
বরের সঙ্গে আমার বিয়ে হলে খুব িলতো! 

'নাঃ, এ একেবারে বদ্ধ পাগল! ও মেজকর্তা, ওহে ও মেজকর্তা, গিল্নীর 
মর্মবার্তাটা শুনে যাও একবার হে-' 

সুবর্ণ বলে, 'থাক, তাঁকে আর ডাকতে হবে না। তাঁর সত্গে আমার জল্মেও 
মেলে না।' 

কেদারনাথ ঈষৎ গাম্ভীর্যে বলেন, 'তা বললে ি চলে মেজ গিল্নী ? 'মীলয়ে 

হয় !' 

“বা হয় না তা কিভাবে হবে বলুন! সবর্ণ একেবারে সম্ভাবনার মূলেই 
কোপ 'দয়ে বলে, 'ও কথা ছেড়ে 'দন। আপাঁনি আমার একটা উপকার করুন 

, কেনা হয়ে থাকবো আপনার। মাকে বলুন আমাকে নিয়ে যেতে! 


৫৮ সুবর্ণলতা 


কৌতুকাঁপ্রয় কেদারনাথ ওই “কেনা হয়ে থাকা'র প্রসঙ্গে কিছ: কৌতুক কথা 
আমদান করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সুবর্ণর আবেগে থরথর মুখ দেখে সামলে 

। 

অবাক হয়ে বললেন, 'নিয়ে"যেতে! কোথায় নিয়ে যেতে! 

'পৃরীতে।' 

'পুরশতে? তোমার পূরণ নিয়ে বাষেন আমার পুজনীয়া শাশুড়ী ঠাক- 
রুণ ? অ হলেই হয়েছে! 

শাশুড়ীর সম্বন্ধে সমবয়সী জামাই কেদারনাথ এ ধরনের হাসা-পারহাস 
করেই থাকেন। 

সুবর্ণ বলেঃ 'সে আম জাঁন। তাই তো আপনাকে ধরাছি। আপনার 
দুটি পায়ে পাড় ঠাকুরজামাই, বলন একবার। আপনার কথায় “না” করতে 
পারবেন, না।? 

"মাহা, বুঝছো না ভাই! বলাটাই যে 'নিন্দের হবে! সব বৌয়ের কথা 
বলতাম সে আলাদা কথা! 

সব বৌ সংবর্ণ তীর গণায় বলে. “ওরা কি সমূদ্র দেখতে চায় : ওদের 
খালি গাদা গাদা রান্না আর গাদা গা খাওয়ায় আহ্মাদ। আপানি একবারাটি 
আমার কথা বলুন ঠাকুরজামাই ! বলবেন, “পাগল-ছাগল, বন্ড ইচ্ছে হয়েছে-” ' 

কেদারনাথ হয়তো বুঝতে পারেন পাগল-ছাগলের মতই কথা বলছে 
মানুষটা । তব মুখের উপর তার সব আশা ধাঁলসাং করে দিতে পারেন না। 
স্নেহের গলায় বলেন, 'আচ্ছা বলে দেখবো ।' 

সুবর্ণলতার চোখের সামনে আশার দীপ জলে ওঠে। 

সবর্ণলতা আনন্দে ছল ছল করতে করতে বলে, বলে দেখবো নয়, এ 
আপনাকে করে দিতেই হবে ঠাকুরজামাই। সমুদ্র দেখতে বড় ইচ্ছে আমার। 
মনে হয় একবার সমুদ্র দেখতে পেলে বুঝি মরতেও দুঃখ নেই।' 

'এই দেখ পাগল! আচ্ছা, আচ্ছা, বলে দেখবো ।' 

অবোধ সুবর্ণলতা এই আম্বাসের তেলট;কু দিয়ে আশার দীপ জেবলে 
রাখে। সুবর্ণ মনে করে পুরণর টিকিট বাঁক কেনা হয়ে গেছে তার! 

সেই থেকে এই চাঁব্বিশ ঘণ্টা সময় সমুদ্রের স্বপ্পে ডূবে আছে সুবর্ণ । 

হঠাং যেন কে ওকে সেখান থেকে টেনে তুলে এনে পাথরে আছাড় 
মারলো । 

মুস্তকেশীর দরবারে বিচার বসলো। জেরা শুরু হলো, 'কী বলেছো তুমি 
কেদারকে 2" 

সুবর্ণ শাঁজ্কত গলায় বলে, “বলেছিলাম যেতে ইচ্ছে করে__, 

'শুধ7 ওই কথা বলছে? বনি বড়বৌ, সেজবৌ, ছোটবৌ গাদা গাদা 
খায়! 

সুবর্ণ অবাক হয়ে বলে, ও কথা আবার কখন বলাম ?" 

'কেন, যখন ঠাকুরজামাইয়ের কোলের কাছে বসে আদর কাড়ানো হাচ্ছিল! 
সাধে কি আর মেয়েমানূষকে ঘোমটা 'দয়ে অন্দরে রাখার রেওয়াজ মেজ বৌমা ? 
এই তোমার মতন লক্ষীছাড়া মেয়েমানুষদের জন্যই । আরো দুটো বৌও তো 
কথা কয়, কই তোমার মতন কোলের কাছে বসতে চায় না তো তারা ?, “পেবো” 
যাই দেখে নি তাই রক্ষে, দেখলে গুরুলঘু মানতো 2 ঠাকুরজামাইয়ের কাছে 


সুবণলতা : ৫৯ 


বসে আদর কাড়ানো হচ্ছিল! জগন্নাথে নিয়ে যাবার বাসনা জানানো হচ্ছিল! ওরা 
গাদা গাদা খায়, ওদের যাবার দরকার নেই, আম সোহাগী, আমায় নিয়ে যেতে 
বল! বল কেন? কেনঃ এত “আসপদ্দা” তোমার সের? ওরা তোমার 
বাবার খায় 2; 

সবর্ণর এবার প্রসঙ্গটা মনে পড়ে। অতএব বিস্ময়টা কাটে। 

প্রতিবাদের সরে বলে ওঠে, “ও ভেবে ও কথা বাল নি আঁম- 

হঠাং বড়বোয়ের বড় মেয়ে মল্লিকা খরখর করে বলে ওঠে, না বল নি 
বৈকি! আমি যেন শুনি নি! টেপশপও শুনেছে। ধল নি তুমি বড় [পসে- 
মশাইকে, “ওরা গাদা গাদা, রাধে, গাদা গাদা খায়”-_এখন আবার মিছে কথা 
বলা হচ্ছে! 

না. মল্লিকার দোষ নেই। 

এ বাঁড়র শিশুরা জ্ঞানচক্ষু উন্মগলনের সঙ্গে সঙ্গেই দেখে আসছে সবাই 
সুবর্ণলতার বিপক্ষ । সূবর্ণলতা সকলের সমালোচনার পান্নী। সুবর্ণলতাকে 
'এক হাত' নিতে পারবার চেষ্টায় সবাই তৎপর । তবে আর তাদেরও তেমন 
মনোভাব গড়ে উঠবে না কেন! সুবর্ণলতার 'নজের মেয়ে পারুলও কি ওদের 
দলে নয়! 

হলে টে আবাস মা নেও কিন্তু মেয়েটা মল্লিকারই জড় । 

কিন্তু আজ মল্লিকার দুঃখ ছিল। 

৪৪ এল প৪০৯০২৪৬/টিনিনীরন র্যা 

হঠাৎ যেন সুবর্ণর মাথায় আগুন জ্বলে উঠল ওর কথায়। তাই “বলোছ 
বেশ করোছ, এক ফোঁটা মেয়ে তোর এত সর্দার 1কসের রে? বলে ঠাস করে 
একটা চড় তার গালে বসিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল। খেয়াল করল না, 
রনির রারলানার রর রনির ররিলিনা 
পথের দিকে। : 

কিন্তু বিচারসভা 'ি তার কার্যভার শেষ না করে 'নিশ্চন্ত হয় 2 মুলতুবাঁ, 
সভা আবার বসে না নতুন উদ্যমে? 

বিচার হয় সৃবর্ণর। 

সেই বিচারের সূত্রে সমূদ্রের আভাস িছ্‌ মেলে বোক। 

ঢেউ, তরঙ্গ, গরজন। 

লবণান্ত স্বাদ ? 

তারই বা অভাব কি ? 

সেও তো মজুত আছে অগাধ অফৃরন্ত। শুধু একবার বালুবেলায় আছড়ে 
পড়ার অপেক্ষা । 

আচ্ছা কেদারনাথ আর সশীলা ? 

তারা? 

তারা তো আগেই চলে গিয়োছিল। কেদারনাথ “চেষ্টা” দেখবার চেষ্টায় 
আজও এসোৌছলেন। কথা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়লো গত কালকের 
ইতিহাস। তারপরই উঠলো ঝড়। পাঁরাঁস্থাতর আভাস দেখেই সুশীলা বলে- 

, 'আম তোমার সঙ্গে পালাই চল। চোখের ওপর বোটার খোয়ার দেখতে 
পারব না।' 

খোয়ার থেকে রক্ষা করবার চেম্টা করলে বিপদ আরো বাড়ানোই হবে বোটার 


শি ৪১ ৪ 


৬০ সুবণলতা 
সে কথাও তো আঁবাঁদত নেই। তবু রক্ষা হলো না।. 

দুতন ছেলের মা হবার পর মারটা ছেড়োছল প্রবোধ, ধকল্তু পরপুরুষের 
গা ঘে'ষে বসে আদর কাড়ানোর খবরে আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারল না। 
হিংস্র জানোয়ারের মত প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে, দিতে দিতে 
উচ্চারণ করলো, “বল আর বুড়োর সঙ্গে কথা কইীবি না! প্রতিজ্ঞা কর!” 

সুবর্ণ আঁচড়ে-কামড়ে নিজেকে ছাঁড়য়ে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, 'করব 
না প্রাতিজ্ঞা। 

'তাহলে তোর ওই পেয়ারের বুড়োকেই খুন করে ফেলবো দেখিস! 

“কোরো । সংসারে দুটো বিধবা স্াঁম্ট হবে এই যা। খুন করে তো 
রেহাই পাবে না, ফাঁস যেতে হবে ।' 

প্রবোধ এই দুঃসহ স্পর্ধার সামনে সহসা স্তব্ধ হয়ে যায়। হা, এই স্বভাব 
প্রবোধের। হয়তো দূ্বলচাঁরন্র মাত্রেরই এমা স্বভাব হয়। কে*চোকে মাথা তুলে 
দাঁড়াতে দেখলেও তারা হঠাৎ ভয় খায়, নিজেকে সম্বরণ করে নেয়। 

সবর্ণলতা যাঁদ উমাশশশীর মত হতো, কবেই হয়তো প্রবোধ তাকে অবহেলায় 
ঘরে ফেলে রেখে কাঁচা পয়সা'র সদ্ব্যবহার করবার পথ খুজতে যেত। কিন্তু 
সুবর্ণলতার এই দুঃসহ স্পর্ধাই একটা তীব্র আকর্ষণ! 

তাই প্রবোধ একবার জ্ঞানশূল্য হয়ে মারে, পরক্ষণেই জ্ঞানশূন) হয়ে পায়ে 
ধরতে যায়! 

সোঁদিনও প্রথমটা স্তব্ধ হয়ে 'গয়েই সহসা সুর বদলায় প্রবোধ। সুবর্ণ" 
লতার নখের আঁচড়ে বিক্ষত হাতটায় ফ' তে দিতে বলে, উঃ , নখে দাঁতে বাথের 
বিষ! ফাঁসিতে লটকাতে প্রধান সাক্ষণ বোধ হয় তুমিই হবে?" 

“একশোবার ! 

প্রবোধের গলায় আভমানের সুর বাজে, 'তা জানি। নিরসন 
তুম বাঁচো তা আর আমার জানতে বাঁক নেই। নজের মাছ খাওয়াটাও যে 
'ঘূচবে সেই সঙ্গে, সে খেয়াল আছে 2? 

সুবর্ণলতা বিধহস্ত খোঁপাটা জাঁড়য়ে নিয়ে নিজের বাজিশটা মাটিতে ফেলে 
শুয়ে পড়ে বলে, তোমাদের মৃতন খাওয়াটাই আমার কাছে চতুর্বর্গ নয়! 

'তার মানে বিধবা হতেই চাও 

চাই, তাই চাই। শুনলে তো? এখন ছি করবে 2 আমার প্রার্থনা পুরণ 
করতে বিষ খাবে? না গলায় দাঁড় দেনে 2 

এই বৌকে কোন্‌ উপায়ে জব্দ করবে প্রবোধ ? 

মেরে ফেলা ছাড়া করা যাবে আর কিছু ? 


অথচ আবার 'নিজে সে প্রকাতির একটা নিষ্ঠুর কৌতুকের প্যাঁচে 'নিতাল্তই 
জব্দ! 

এত কাণ্ডের পরও ওই মাটিতে পড়ে থাকা দশর্ঘ, বাঁলষ্ঠ, স্বাস্থ্যে ভরপুর 
দেহটা যেন তকে জক্ষ বাহ্‌ দিয়ে আকর্ষণ করতে থাকে ! 
তিন ছেলের মা হয়েও তো স্বাস্থ্যে এতটুকু শিথিলতা এল না! 
অতএব এবার খোশামোদের পথ ধরতে হয়। 
তবে সেটা কিছ 'বাচন্ত। 
লুব্ধ পুরুষের গভশর রাপিয় সেই বিচিত্র তোয়াজের ইতিহাস অন্দ 


গুবর্পণলতা ৬৯ 


ঘাঁটিতই' থাক। 

সবর্ণরই বা ক উপায় আছে এর থেকে নিম্ফাতি পাবার, মরে হাড় জুড়নে? 
ছাড়া? 

রামে দরজা খুলে বোরয়ে আসার ছেলেমানৃষি আর করা চলে না এখন। 
চারিদিকে চল্লিশটা চোখ! ছোটগুলোর কথা মনে করলেই সেই তাঁর বাসনাও 
স্তিমিত হয়ে আসে। 

অথচ মরবার উপকরণও তো দুললভ! 

শাশুড়ীর একটা বাতের মালিশের ওষুধ চর করে লুকনো আছে বটে, 
কিন্তু খুব একটা আস্থা আসে না তার উপর। 

আবার একবার কি লোক হাসাবে সৃবর্ণ ? 

মরতে গিয়ে না মরে কেলেৎকাঁর করবে ? 

তার থেকে এই কথা বিশ্বাস করাই ভাল, সংবর্ণ আর কারো 'দিকে তাকা- 
লেই মাথার মধ্যে আগুন জলে ওঠে প্রবোধের, হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাই; 
এমন কাণ্ড করে বসে। : 

কারণ? 

কারণ তো পড়েই আছে। 

ভালবাসার আধিক্য! পায়ে মাথা খশুড়ে সেই' কথাই বোঝাতে চায় প্রবোধ। 

মেয়েটা ঠাকুমার কাছে শোয়, কিন্তু ছেলে দুটোও তো ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে, 
সপ 

মহ বা।কঃ 


0৯ ॥ 


নদ িা রিন্দর সঙ্গে নিয়ে এলেন সেজমেয়ে সরাজকে। 
না, তীর্ঘথপথে কুড়িয়ে পান নি তাকে, সম্প্রতি তার 
বর কটকে বদাল হয়েছে, তাই সেখানেই দু-একদিন থেকে 
একেবারে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। বললেন, “এত বড় 
খবরটা চেপে বসে আছিস সার ই. ধাঁন বটে! এই সময় 


সুরাজের বরের বদালর কাজ, সুরাজ মেমসাহেবের 
মত স্বামীর সঞ্গো সঙ্গে ঘোরে। চাকর, ঠাকুর, আর্দালী, 
৯৪৮৯৫ সঙ্গে কথা বলে, বর এতটুকু এঁদক- 
ওদক করলে পলকে প্রলয় করে। 

অবশ্যই সে প্রলয় মুস্তকেশধর মত নয়, প্রণয়েরই পাঁরচয় ঘোষণা মাত্র। 
ভঙ্গীটা অতএব সভ্য মাঁজত। 

স্‌রাজকে দেখলে বোঝবার জো নেই একদা সে এ সংসারের মেয়ে ছল! 

স:রাজ সর্বদা টাইট জ্যাকেটবাঁড পরে থাকে৷ সুরাজ এক-গা গহনা পরাকে 
'সেকেলে' বলে হাসে, সুরাজ মাথায় সোনার 'চর্ান বাঁসয়ে খোঁপা বাঁধতে 
নারাজ, সুরাজ নাকি স্বামীর কর্মস্থলে জুতো পায়ে দেয়! 

সরাজ কদাচই আসে। 





৬২ সুবর্ণলতা 


শেষ এসেছিল বিরাজের বিয়ের সময়, গোলমাল দেখে বরকে চিঠ 'লিখে 
মেয়াদের আগেই সরে পড়েছিল! 

এবার যে এল সেটা ইচ্ছেয় নয়, নিতান্তই মায়ের 'নর্বদ্ধাতিশয্যে! বরও 
বলল, 'সাঁত্যই বটে, এতাঁদন পরে যখন আবার হচ্ছে, মা'র কাছে 
হয়তো ভাল। কলকাতা শহর- 

একটি ছেলে' সুরাজের, দশ বছর পরে আবার এই ঘটনা । 

মুক্তকেশীর কি শুধুই মাতৃস্নেহ? 

তার উপর বাড়াতি আরও িছ..ছিল না? 

তাঁর এই ষোল আনা স্বাধীন মেমসাহেব মেয়োটকে আত্মজনের সামনে 
দেখাবার বাসনাও ছিল না কি? 

এর আগে যখন এসেছে, তখন এত সুখ-স্বাধীনতা ছিল না, শাশুড়ীমাগী 
ছিল বে*চে, এখন সে বালাইও গেছে। মেয়েকে তাই 'বুকে করে' নিয়ে এলেন 
মূন্তকেশী। আর জনে জনে ধরে ধরে শোনাতে লাগলেন, 'এত বড় ঘটনা, আমি 
“ মা”, আমাকে জানায় নি! 

সুরাজ লজ্জা পেয়ে বলে, 'কী একেবারে ঘটনা! মা যেন কী! আর দেখছ 
না বুঝ এ ঘটনা? 

মুন্তকেশী বলে ওঠেন, 'দেখব না কেন? 'নয়তই দেখাছ। হাঁস-মূরগীর 
মত রাতাঁদন প্যাঁক প্যাক করে বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে, দেখাঁছি না? তার সঙ্গো আর 
তোর তুলনা কারস না মা! 

সূরাজ লজ্জা পেয়ে চপ করে। 

কিন্তু সুরাজ এ সংসারে হাঁপিয়ে ওঠে। একদা যে এইখানেই থেকেছে 
সে. সে কথা যেন তার নিজেরও বিশ্বাস হয় না। 

সূরাজের দাদারা কী স্থূল, কী অমা্জত, কী সেকেলে! সূরাজের বৌদরা 
যেন 'ঝ-চাকরানীর পর্যায়ের! স:রাজের ভাইপো-ভাইবিগনুলো যেন গোয়ালের 
গরু-ছাগল! 

আশ্চর্য! 

ভালভাবে থাকতে ইচ্ছে হয় না এদের ? 

সেই কথাই জিজ্ঞেস করে সে। 

বলে, 'সংসারে খরচ তো কম হতে দেখি না, অথচ সৌম্ঠবের বালাই নেই 
কেন বল তো তোমাদের 2 

খরচটা অবশ্য বড়লোক সরাজের খাতিরে একটু আঁতীরন্তই করা হচ্ছিল। 
শবরাজ এক ধরনের বড়লোক, এ আর এক ধরনের। বিরাজের কাছে চক্ষুলক্্া 
নেই, এর কাছে সেটা আছে। 

তবু লজ্জা ক বাঁচানো যাচ্ছে ? 

জঙ্জা যে চতুর্দিকে ছড়ানো ! 

সূরাজ বলে, “স্বামী ধমক দেবে আর তাই সইতে হবে? কেন দাঁড় কি 
নেই জগ্গতে ? 

সুরাজ বলে, “পড়ে মার খাও বলেই এত অত্যাচার তেমাদের 'ওপর। 
নিজের মানটি নিজে রাখতে হবে বাবা! সেজদাই বা হঠাং সংসারের দণ্ডমুণ্ডের 
কর্তা হল কেন তাও বুঝি না! আর মেজদার ওই সম্দেহবাতিক সহ্য কর 
গক করে মেজ বৌঁদ ভেবে পাই না। ধোবার সামনে বোৌরয়োছিলে বঙ্গে তোমায় 


গৃবর্ণলতা ৬৩ 


যাচ্ছেতাই করলো মেজদা । আম তো দেখে “হাঁ”। আমি হলে কি করতাম 
জানো? ওকে দোখয়ে দেখিয়ে রাস্তার লোকের সঙ্গে গল্প করতাম।' 

সববর্ণ এ ধরনের কথায় চুপ করেই থাকে। সংবর্ণ এই সহানভাতির মধ্যে 
প্রচ্ছন্ন একটা অপমানের জালা অনুভব করে। তা গারবালাও 'দণ্ডমুণ্ডের 
কর্তা প্রসঙ্গে জৰালা অনুভব করাছল। তাই বলে ওঠে, হু, তা তো করতে! 
তার পর ঠেঙানিটা খেলে ?" 

সুরাজ ভুরু কুচকে বলে, ঠেঙানি! 

'তবে নাডো পক! হন, মেজ বড়ঠাকুরের তো সে গুণে ঘাট নেই! নিজে 
পড়েছ শিবতুল্য মানুষের হাতে” 

সুরাজ সবর্ণর মুখের দিকে তাকায়। 


সন্রাজ ভয় পায়। 
তাই তাড়াতাড়ি বলে, “আসল কথা কি জানো সেজবৌ,. মাতৃনিন্দা মহাপাপ 
হলেও না বলে পারছি না. মা'র পূঞ্ঠবলেই এতটা হতে প্রেছে। “মা”-ট তো 


আমার সোজা নয়! পুরুষ একলা পড়লেই পাঁরবারের কাছে জব্দ। মা দাদা 
বোন ভাজ চাঁরাঁদকের পৃন্ঠবলে এত বাড় বাড়ে তাদের। তোমাদের নন্দাইটি 
যে একলা পড়েছে কিনা তাই 'শিবতুল্য ।” 

তখনকার মত রক্ষা হয়। 

কিন্তু মুস্তকেশীই আবার আগুন জবালেন। 

হেমাঞ্গনী এসেছেন সুরাজকে দেখতে. মুস্তকেশী হেসে হেসে গলা খুলে 
মেয়ের বাসার সুখ-সমাদ্ধির গ্প করেন, গঞ্প করেন বশংবদ জামাইয়ের আনু- 
গত্যের কাহনাী। 

“সে কী বাড়ি! একেবারে সাহেব বাঁড় বৃঝাঁল হেমা কোচ কেদারা, 
টেবিল আর্শ কত কেতা! সারও আমার বেড়ায় যেন মেম! পায়ে ৮. তা- 
মোজা. বালাত ঢং করে কাপড় পরা । আর জামাইয়ের আমার...হি হি হি কী 
বলবো- অবস্থা যা! অত বড় একটা হোমরাচোমরা চাকুরে, সুরির কাছে যেন 
চোরাট! সু'রির কথায় উঠছে বসছে, সুর চোখ রাঙালে চোখে অন্ধকার 
দেখছে। দুরে থেকে শান, চোখে তো দেখা হয় নি. দেখে বলবো ক চোখ যেন 
1 

হঠাৎ এই জমাট সভায় ছন্দপতন ঘটে। 

হঠাৎ সুবর্ণলতা কোন্‌ দিক থেকে যেন এসে প্রশ্ন করে, “এসব দেখলে 
আপনার চোখ জুড়োয় মা? 

মুস্তকেশী প্রথমটায় থতমত খান। তার পর কপাজ কুচকে ধলেন, 'কোন্‌ 
সব ১, 

“এই ফে__পুরুষমানংষ স্ত্রীর কথায় উঠছে বসছে, স্ত্রী চোখ রাঙালে চোখে 
অন্ধকার দেখছে! তাছাড়া কোচ কেদারা টেবিজ আর্শি_ 

মুস্তকেশী ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, 'কেন, শুনে বাঁঝ তোমার গা-জবালা করে 
উঠল মেজবৌমা ? তা করবেই তো, ?হংসের রীষে ভরা যে! বাঁল তোমরাই বা 
সোয়ামীকে কণ ভ্যাড়াকান্ত করতে বাকী রেখেছ ? সাধ যায় তো পরো জ্‌তো- 
মোজা, খানা খাওগে টোবলে বসে! ধান্য বটে! আহাদ করে দুটো গপ্‌পো 
করতে এলাম, গায়ে যেন ছ*ুচ ফুটলো মানের ! 

'ছ'চ কেন ফরুর্বে মা!' সুবর্ণ উঠে পড়ে বলে, “আহনাদের কথায় আহনাদই 


৬৪ সংবর্ণলতা 


হয়। মনে হয় তবু বাংলা দেশের একটা মেয়েমান্বও মানুষের মত বাঁচছে। 
নিকাহ ভাল ঠেকে, এটা দেখেই আশ্চা্য 

1 

মুন্তকেশী আর উঁচত উত্তর খুজে পান না। সববর্ণ চলে গেলে বলে ওঠেন, 
'দেখাল তো হেমা, এই আগুনের খাপরা নিয়ে ঘর করাছ আঁম।' 

সর্বদা এই কথাই বলেন মুক্তকেশ'। 

সবাই তাই' বলে। 

আগুনের খাপ্রা! 

কল্তু সেই আগুন কানে জবালাতে পারলো সবর্ণ? কা বা জবালালো ? 
শুধু তো নিজেই জবলে জবলে ভস্ম হলো! 


সুরাজের বরের চিঠি এল। 

রা খাম, আতরের গলদ, খামের কোণে বেগনোরঙা একটি ছোট গোলাপ 
ফুল! 

কত বছর বিয়ে হয়েছে সুরাজের ? 

সংবর্ণর থেকে বড় না সুরাজ ? 

. সুরাজের নামের মানে দিয়ে যখন কৌতিকের হাঁসি হেসোছিল সবর্ণ, তখন 
তো সুরাজের বিয়ে হয়ে গেছে। 

সুরাজ লক্জায় আনন্দে গৌরবে হেসে ফাটে। বলে, 'বুড়ো বয়সে ঢং 
দেখেছ? আসল কথা "বয়ে হয়ে ইস্তক তো হীস্তিরী গলায় ঝুলছে, এঁদকে 
সখের প্রাণ গড়ের মাঠ! তাই নতুন বরের মত-+ 

নিয়ে সরে পড়ে সুরাজ আতর আর আদরের সৌরভ ছাঁড়য়ে! 

গাঁরবালা বলে, “পয়সা থাকলেই আঁদখ্যেতা শোভা পায়। 

বিন্দু বলে, 'শোভা পায় আর বোলো না সেজাঁদ, হাঁস পায় তাই বল!' 

উমাশশশ বলে, 'সেজ ঠাকুরজামাই তোমাদের ভাসঃরের চাইতে মাত্র দং 
বছরের ছোট !' 

হয়তো ওইতেই অনেক কিছু বলা হয়। 

শুধু সুবর্ণ কিছু বলে না। 

সৃবর্ণকে কে যেন আচমৃকা এক ঘা চাবুক মেরে গেছে। 

সাঁতযই কি তবে হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে সুবর্ণ? 

সৌভাগ্যের অনেক লখলা দেখিয়ে বিদায় নিল সুরাজ। শেষের দুদিন যে 
আবার বরও এসোঁছল নিয়ে যেতে । 

বড়লোক বোনাইকে তোয়াজ করতে অনেক ব্যয় করে ফেললে মুস্তকেশীর 
ছেলেরা । কারণ সুরাজের বর ভবেন সাহেবের, আগমন উপলক্ষে আরও তিন 
মেয়ে-জামাইকে নেমন্তন্ন করে আনলেন মুস্তকেশণ। সুবালা তো পড়ে থাকে 
চাঁপতায়. সাতজন্মে আনবার কথা মুখেও আনেন না, কারণ তার একপাল “এণ্ডি 
গেণ্ডি'। আবার আনলেন। 

মৃন্তকেশী সবাইকে ডেকে ডেকে বলেন, 'লক্ষীর ঘরে ষদ্ঠীর কৃপা কম, এ 
হচ্ছে ডাকের বচন। দেখ তার সাক্ষী সুরাজকে। বললাম এ দুটো মাস থাক্‌ 
আমার কাছে. একেবারে 'খালাস' হয়ে তবে যাস! জামাইও রাজী হয়েছিলেন, 
বরসোহাগশ মেয়েই আমার থাকতে পারলেন না-বর ছেড়ে! 


সুবর্ণলতা ৬৫ 


সঃরাজ চুপিচুপি সুবর্ণকে বলে, “মোটেই তা নয় বাবা, মায়ের এই দাপটের 
বহরে থাকবার বাসনা টে গেছে আমার । অন্যকে িচ্‌ করে আমায় বড় করা, 
এ বাপু অসহ্য! 

তা সেই অসহাটুকু শেষ পর্যন্তই করতে হল সুরাজকে। ভবেনকে নিয়ে 
আদিখোতার বাড়াবাড়ি করলেন মুত্তকেশশী। যাত্রাকালে শুধু মেয়েকেই ভাল 
ফরাসডাঙার শাঁড় দিলেন তা নয়, জামাইকে কাঁচর ধুত-চাদর িলেন। 

দিলেন স্‌বালা আর সূবালার বরকেও, দিলেন মিলের ধুতি-শাঁড়। 

তবু খরচপন্র হয়ে গেল বিস্তর । 

হাওড়া ইস্টিশান যেতে 'ফিটন্‌ ভাড়াটা পর্য্ত জোর করে দিয়ে দিলেন 
সুরাজকে, মিম্টির হাড় দিলেন সঙ্গে। 

আর শেষ অবাধ হয়তো হাঁফ ছেড়েই বাঁচলেন। 

সবালার ইচ্ছে ছিল কটা দন থাকে। 

কিন্তু পাঁজ-পদুাথ না দেখে আঁদিনে এসেছে এই ছৃতোয় তাকে ভাগালেন 
মুস্তকেশী। 

তার পর-_ 

হণ্যা, তার পরাদনই সন্ধ্যাবেলা ছেলেদের ডেকে সংকম্পটা ঘোষণা করলেন 
মুন্তকেশী। 

বললেন, 'আমার তার্থখরচ তো ডবল লাগল-_-শশধরের মা'র কাছে 
একশোখানি টাকা হাওলাং নিয়ে তবে পাণ্ডার কাছে মুখরক্ষে। সে কর্জ শোধ 
করতে হবে। তারপর তোমাদের এই বোন-ভগ্রীপোত আনাআনি। খরচের 
খরচান্ত।! বৌ-ছেলেদের মাস দূচ্চারের মতন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দে দিকি। 
দেনাপত্তর শোধ করে, একটু গুছিয়ে নিয়ে তা'পর আনিস " 

শুনে ভাইয়েরা মুখ-চাওয়াচাণ্ডায় করল। 

সুবোধের তো *বশুরবাড়ি বলতে অস্টরম্ভা। শাশুড়শই কখনো ভাইয়ের 
বাঁড়. কখনো দাওরের বাঁড়, কখনো বোনাঁঝর বাঁড়! 

আর প্রবোধ ১ 

তার যে একটা *বশুরবাঁড় আছে, সে কথা কে কবে মনে রেখেছে ? 

প্রভাসের অবশ্য ভাল *বশরবাঁড়ই আছে. প্রকাশেরও আছে একটা যেমন 
তৈমন। 'কল্তু প্রস্তাবটা কারো কাছেই প্রীতিকর ঠেকে না। তবু মায়ের কথার 
প্রীতবাদ চলে এ তারা ভাবতেই পারে না। 

স্বর্গাদাপ গরায়সী বলে কথা! 

ন্যায় বলুন, অন্যায় বলুন, মাথা পেতে নিতে হবে আদেশ। 

কে জানে বৌয়েরা এ প্রস্তাব কোন্‌ আলোয় নেবে! ইদানং তো বৌগুলো 
ধখন-তখনই বলতে শুরু করেছে. “এতই যাঁদ মাতৃভাঁন্ত, মায়ের আঁচলতলায় খোকা 
হয়ে থাকলেই পারতে! বিয়ে করে সংসার পাতবার সাধ হয়েছিল কেন 2 

যখন-তখনই' বলে। 

ধমকে ঠান্ডা করা যায় না। 

এ এক বিড়ম্বনা । 

মাতৃভন্তি আর বয়ে, এই দুটোর মধ্যে যে কখনো বিরোধ ঘটতে পারে, এটা 
কে কবে ভেবোঁছল ? 

সে যাক, নেপথোর চিন্তা পরে. আপাতত সামনে মা। ছেলেরা তাই নিতান্ত 


, 


৬ সৃবর্ণলতা 


কাধ্য ভাবে বলে, "তুমি যা ভাল বৃঝবে।' 

'আমি তো ভাল বুঝেই বলছি। তবে তোমরা এখন সব বিজ্ঞ হয়েছ-* 

হঠাৎ প্রবোধচন্দ্র ইতস্ততঃ করে বলে ওঠে, 'আমার আর *বশুরবাঁড় ! 

মুন্তকেশ্রী বলেন, তা জানি। থেকেও নেই। অথচ *বশুর 'মিনসে নাকি 
এখনও চাকার করছে, দুই শালা মান্যমান হয়েছে। ছোটটা তো আবার বিয়েও 
করে নি, বিদেশে থাকে, টাকা পাঠায়। সেই যে বলে না, “আছে গরু না বয় 
হাল, তার দুঃখু চিরকাল” এ হয়েছে তাই ।” 

প্রবোধ এসব তৃধ্যে অবাক হয়। 

নামক একটা জায়গা ষে তার আছে, এ প্রমাণ পাবার সযোগ 
পায় নি সে। শাশুড়ীর কলঙক-কথা সহজ ধারার মুখে পাথর চাপিয়ে দিয়ে- 
ছিল৷ প্রথমে সেই একবার *বশুর নিতে এসোঁছস, মুন্তকেশী যাচ্ছেতাই করে 
বিদায় করোছলেন। তার পর আরও ক উপলক্ষে যেন নেমন্তন্ন করতে এসে- 
ছিল। পাঠানো হয় নি। আগে আসতো এক-আধ দন, আর আসে না। 
তদবাধ সব সম্পর্ক শেষ। 

জশবনে কোনোঁদন উচ্চারণ করে নি সবর্ণ_-'বাবার জন্যে মন কেমন 
করছে' অথবা 'একবার তাদের না দেখে থাকতে পারাছি না।* 

এখন হঠাৎ মূক্তকেশীর মুখে তাদের তত্ব-বার্তা! 

প্রবোধ বোধ কারি ক্ষীণকণ্ঠে একবার বলে, 'কে বললো তোমায় 2, 
হয় না, হাওয়ায় খবর পায়। মেজ বৌমার সেই পিসি বুড়ীর একটা সতশন-ঝ 
যে আমাদের হেমার ছেলের শালীর শাশুড়ী । সেই সন্রেই খবর! 

পাস, সতীন-ঝি. শালী, শাশুড়ী! এই সম্পকেরি জটিলতার জাল-মুস্ত 
হবার চেম্টা করে না প্রবোধ। শুধ্‌ সাহসে ভর করে বলে ফেলে. তা ওরা তো 
সাতজন্মে নিয়ে যাবার কথা বলে না-”' 

'বলবে কে? মা আছেঃ তোমার গরুড়ধর্জা শাশুড়ীর গুণে উভয় কুল 
মজলো ! যাক গে. নিয়ে যাবার কথা বলার অভোস ওদের নেই. তাই বলে না। 
তুই যাব, বৌকে রেখে আসাঁব! 

এবার প্রবোধের হয়ে সুবোধ হাল ধরে, একন্তু মা, ওরা যখন বলে 'ন, 
তখন-_' 

কথা শেষ করতে দেন না মুস্তকেশী। বলে ওঠেন, তা ওরা কেমন করে 
জানবে যে তোমাদের দেনা-কর্জ হয়ে গেছে. বেপোটে পড়েছ ? তোমাদের শালা- 
*শবশুররা খাঁড় পাততে পারে, এ খবর পেয়েছ কোনোদিন 2 

“তা নয়, মানে”, প্রবোধ প্রায় মরীয়া হয়েই বলে ফেলে. “সাতজল্মে বলে 
না. হঠাৎ এরকম উপযাচক হয়ে 

মুন্তকেশ ছেলের বন্তবাকে সম্পর্ণেতার রূপ দিতে দিলেন না. বলে উঠলেন, 
উপযাচক হয়ে পাঠিয়ে দিলে তাঁড়য়ে দেবে. এ ভয় যাঁদ থাকে তোমার তা হলে 
আঁবাশ্য পাঠাবার কথা ওঠে না। তবে চিরকাল জান 'বয়েওলা মেয়ে আরাধনার 
সামগ্রী, বাপের বাড়ি গেলে বাপ-ভাই মাথায় করে রাখে । 

“তবে তাই হবে 

বলে ছেলেরা তখনকার মত রণে ভঙ্গ দেয়। কারণ অনুভব তো করছে, 
নেপথ্যে জোড়া তিনেক কান উৎকর্ণ হয়ে আছে। তাদের মুখ বন্ধ করে রাখবার 


ম্বকর্গনতা ৬৭ 


কার্যকরী পদ্ধাতটা যেন আজকাঙজ্ আর তেমন কাজে লাগছে না। 

এই বিদ্রোহাত্মক মনোভাবের 'আমদানিকারিণণ যে সবর্ণলতা, তাতে 
অবশ্য সন্দেহ নেই। সেজ ছোট ভাই তাই প্রাতানয়ত স-বর্ণলতাকে শাপশাপাল্ত 
করছে মনে মনে। 

কিন্তু তাতে তো শুধু গায়ের ঝাল মেটানো । সংক্রামক ব্যাধি আপন কাজ 
করেই যাবে। 

কর্তারা অদৃশ্য হতেই নেপথ্যচাঁরণীরা রঙ্গমণ্টে আবিভতি হলেন। 

বোরা যে কাছে-পিঠে কোথাও আছে, এটা মুস্তকেশী আন্দাজ করোছলেন। 

, ভালই, জানা হয়ে থাক। সামনে এসে তো আর প্রাতবাদ করতে 

পারবে না! : 

আর প্রাতবাদই বা করবে কি! 

বাপের বাঁড় যাবার সুযোগ পেলে তো বর্তেই যাবে। অবশ্য বড়বৌকে 
[তান সবাইয়ের সঙ্গে ধরে সমদ্ান্টর পরাকাম্ঠা দেখালেও, মনে মনে তাকে 
ধর্তব্য করেন, নি। তাকে পাঠাবেন না। কার্ধকালে কোনো ছুতো করবেন। 

একযোগে সবাই চলে গেলে চলবে কেন? 

মুস্তকেশী কি 'গুরুগঙ্গা” ছেড়ে এখন ছেলেদের আঁফসের ভাত রাঁধতে 
বসবেন 2১ বড়বৌ গেলে অচল। যোদকে জল পড়ে সোঁদকে ছাত ধরে সে। 
অথচ আত্মভোলা উদোমাদা। বাড়ির পিষ্পড়েটাকে পর্যন্ত ভয় করে চলে। ও 
থাকবে। 

মেজ সেজ ছোটকেই পাঠাতে হবে। 

আহনাদে নাচবে। সেজ ছোট্র নাচবেই। তবে- 

ওই মেজটার ব্যাপার সন্দেহজনক । 

ওর মাতবুদ্ধি কোনোঁদনই স্বাভাঁবক খাতে বয় না। হয়তো বা দুম করে 
বলে বসবে_ আম যাব না'। 

বৌদের এঁদকে আসতে দেখেই মুস্তকেশনী গম্ভীর চালে সলতে পাকাতে 
বসলেন। সলতে তো সংসারে কম লাগে না! ঘরে ঘরে হিসেব করলে, কোন্‌ 
না দশ-বারোটা পাদ্দিম জ্বলে! কেরোসিনের চলন অন্য কোথাও যদি হয়েও 
থাকে. ম:ন্তকেশীর অন্দরে তার প্রবেশ নিষেধ। নতুন আলোর পক্ষপাতী নন 
মুস্তকেশী। 

গিরবালা এসেই সুয়োর গলায় বলে, “ওসব রাখুন না মা। আপনি, কেন 
কম্ট' করছেন ? সলতে পাকাতে কেউ না সময় পায়, আম পাকিয়ে রাখবো। 

মন্্তুকেশী একট; উদাস হাঁস হেসে বলেন, “তোমরা কাঁচকাচার মা, বললে 
“করবো”, হয়তো সময় পেলে না! অসময়ে অসৃবিধেয় পড়া তো।' 

ফস করে 'গাঁরবালার হয়ে কথার উত্তর দেয় স.বর্ণলতা, “কেন, আমরা কি 
কিছ কার না? 

মুস্তকেশণ বহুবার ওর দঃসাহস দেখেছেন, তবুও কেন যে চমকান 2 চমকে 
উঠেই পরক্ষণে ঠোঁটের আগায় একাচিলতে ধাঁনলঙকার ঝালমাখানো হাঁস এনে 
বলেন, 'করো নাকে বলছে গো! তোমরাই তো সংসার মাথায় করে রেখেছ। 
তবে আমিই বা বসে থাকি কেন? দুটো সলতে পাঁকয়েও যাঁদ উপকার না 
করবো তো ছেলেদের ভাতগুলো খাবো কোন্‌ লজ্জায় 2 

সবর্ণলতা এতখাঁন রাগ প্রকাশের পরও বলে, এ আপনার রাগের কথা । 


৬৮ সুবর্ণলতা 


সে যাক, আমাদের বাপের বাড়ি পাঠাবার কি যেন কথা হচ্ছিল !' 

মৃস্তকেশশর হাতের পণড়নে ছেণ্ড়া ন্যাকড়ার টুকরোগুলো কাঠির মত কঠিন 
হয়ে উঠেছে, আরো কঠিন হয়ে উঠছে তাঁর চোয়ালের মাংসপেশপ। সেই মুখের 
উপয্ত নারস ্বরেই বলেন তানি 'যাদের কাছে বলবার বলা হয়ে গেছে বাছা, 
এক কথা “পাঁচবার” বলার সামর্থ্য আমার নেই।' 

এতো কঠিন হবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তবুও প্রয়োজন 
আছে। ওটাই' তো আশ্রয়। ওটাই পা রাখবার জায়গা । নইলে কি আর সংসার: 
পর্বতের চূড়োর ওপর প্রাতিম্ঠিত থাকা যায়ঃ ভয় দৌখয়েই সবাইকে পদানত 
করে রাখা । ভয় ভাঙা হলে চুড়ো থেকে গাঁড়য়ে পড়ে যেতে হবে কি নাকে 
জানে! 

ভক্তির প্রশন নিয়ে মাথা ঘামান না মুন্তকেশী. ভালবাসার তো নয়ই। তাঁর 
মতে এই-ই ভাল। শনি দেবতার পৃজোয় উপচারের ব্রুটি করবার সাহস কারো 
হবে না। 

কঠিন মুখে সলতেই পাকাতে থাকেন মুস্তকেশী। জলজ্যান্ত মানুষগুলো 
যে দাঁড়য়ে আছে সে সম্পর্কে যেন চেতনাই 'নেই। 

জানেন এ মুখের সামনে সুবর্ণলতারও কথা বলবার সাহস হবে না। সাহস 
হবে না অবশ্য বকুনির ভয়ে নয়. মানহানির ভয়ে। কথা বললে যাঁদ সে কথার 
উত্তর না দেন মুস্তকেশী 

সে অপমান যে সুবর্ণলতার মরণতুল্য, সে কথা জানেন মুস্তকেশী। সে মরণ 
[দিতে চানও মাঝে মাঝে । কিন্তু তাঁর নিজের বাক্যন্মই বি*বাসঘাতকতা করে। 
কথা না বলে থাকতে পারেন না 'তাঁন। 

বিন্দু আর গাঁরবালা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল বাপের বাঁড় যাবার 
৮০ কে বলতে পারে আবার মেজাজ ঘুরে যায় 'কিন৷ 

র! 

নিজেই তো মুস্তকেশী সব সময় বৌঁদের বাপের বাঁড় যাওয়ার প্রাতিবন্ধকতা 
করেন। 

এবারই বেড়ালের ভাগ্যে শিকে 'ছি্ড়েছে। এবারই মুস্তকেশী সুর 
বদজেছেন। 

এমন সুযোগ আবার না ফসকে যায়! 

ওরা তাই অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল কথা পাকা করতে । কিন্তু আপাতত' 
সুবিধে হল না। চলে গেল আস্তে আস্তে। 

চলে গেল সুবর্ণলতাও। 

কিন্তু সে কি আস্তে আস্তে ? 

সে ক আশায় আশায় ? 


কিন্তু উল্টোপাল্টা সবর্ণলতা সম্পর্কে যা ভেবোছলেন ম্‌স্তকেশাী, তাই-ই 
হল। সবর্ণ ঠিকরে এসে বলল, “আমি যাব না।' 

প্রবোধও অবশ্য এ আশঙ্কা করেছিল. এবং মনে মনে বটি হচ্ছিল, 
তবু মুখে অবহেলা দেখিয়ে বললো, 'কৈন 2““যাবে না কেন 2১০, 

“যাবো কেন, সেটাই শুনতে. চাই! 

প্রবোধ কড়া হবার চেষ্টা করে বলে, “ঘটা করে শোনবার কী আছে ? একদা 


গ্গুবর্ণলতা ৬১ 
একটা কিছ? ঘটেছে বলে চরাঁদনের জন্যে কুটুম্বূর সঙ্গে বিরোধ রাখাই বুঝি 


রর 
'মহত্্ব করতে তো চাইছে না কেউ! 
প্রবোধ তব্রদ্বরে বলে, 'মা চাইছেন। মা মহত্বের বশে সেটা মিটোতে 
চাইছেন ।' 
'আম চাই না। 
রিল সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগা চাইছ না তুম 2 
। 
'নমস্কার! ক্ষুরে ক্ষ«রে নমস্কার তোমার! 
সুবর্ণ অন্যাদিকে চেয়ে বলে, 'সে তো করছোই। রাতাঁদনই করছো। নতুন 
নয়। 
প্রবোধ গলাটা নরম করে কার্যোদ্ধার করবার চেম্টা করে। মা'র কানে, এই 
কথা কাটাকাটির আভাস গেলে তো আর রক্ষা নেই। 
অবশ্য মায়ের এই আকাঁস্মক' খেয়ালটার কারণ সে বুঝতে পারছে না, এবং 
এ খেয়ালে বিপন্ন হচ্ছে। ধারণা করতে পারছে না-এ হচ্ছে নির্বাদ্ধর ঢেশক 
নামধারণী হেমাঞ্গিনীর। 
হণ্যা, হেমাঞ্গিনীই বলেছে, "ওই দজ্জাল পাঁরবারকে তো তোর পেবো মাথায় 
করে নাচে, বাল সদা-সর্বদা অত দাপট সয়ে থখাকস ক করে? বৌতো 
একদোরী! 
মুস্তকেশশ বলোৌছলেন, “ক করবো বল 2 অসহ্য হলে বেটার বৌকে লোকে 
বাপের বাঁড় পাঠিয়ে দেয়, আমার তো ওর বেলায় সে সুখ হবার জো নেই! 
সদা-সর্বদাই তাই বুকের ওপর আগুনের মালসা নিয়ে বসে আছি” 
| হেমাঁঞ্গিনীই তখন এই পরামর্শ দিয়েছিলো, শবরোধ 'মাটয়ে ফেল! জিদ 
নয়ে কি ধুয়ে জল খাবিঃ আর সাঁত্য তো তোর বেয়ানমাগণ কুচারান্তর নয়! 
কাশীতে আছে, শুনি নাকি ডাঁটের ওপর .আছে। বাপের পয়সা খায় না, 
খেডাদের ছেলেমেরেকে বাংলা ইংবিন্জি পাঁড়য়ে মাইনে নেয়, সেই পয়সায় 
তুই বাপু তোর মেজবৌয়ের বাপের বাঁড়টাকে এবার জাতে তোল. । 
7১218 মহারাণীও দুদিন বাপ-ভাইয়ের ওপর দাপট করে 
হক! 
অতএব এই জাতে তোলার প্রয়াস! 
কিন্তু সে প্রয়াসে যার বর্তে যাবার কথা, সে-ই বাদী হচ্ছে! বলছে, 'আমি 
ই না।' তার মানে মেয়েমানুষ নয়, পাষাণী! 
| প্রবোধকে অতএব অবাক হয়ে বলতে হয়, আশ্চর্য! 
সুবর্ণ তক্ষ] গলায় বলে, "ওঃ, এইটুকুতেই আশ্চর্য হচ্ছো তুমি? তা 
ত পার. তোমাদের অসাধ্য কাজ নেই। তবে ভাবছি--এত বছর বিয়ে হয়েছে, 
প-ভাইয়ের চেহারা কেমন তা ভুলে গেছি, এখন উপযাচক হয়ে বৌ পেশছে 
য় আসতে মাথা কাটা যাবে না তোমাদের 2 
মাথা ষে একেবারেই কাটা যাঁচ্ছল না তা নয়। তব; আর একজন যে প্রতাক্ষ 
তে মাথা কাটবার জন্যে খাঁড়া শানিয়ে বসে! সে ভয়ের তুল্য ভয় আছে? 
তাই প্রবোধকে উদার সাজতে হয়। বলতে হয়, “মায়ের মাঁতবুদ্ধিতে এত- 
দন তো কম্ট পেলে, এখন বাপ বুড়ো হয়েছেন, কৰে আছেন কবে নেই, যাওয়া- 









৭০0 সুবর্ণ লতা 


আসাটা বজায় করাই তো ভাল ।' 

শতোমাদের ভালর সঙ্গে আমার ভাল মেলে না-" সুবর্ণ উদ্ধতভাবে বলে, 
'মোট কথা আম যাব না।' 

প্রবোধ হাঁসির চেম্টা করে বলে, "যাবো না বললে আর চলছে কোথা? 
হাইকোর্টের হকম যে বেরিয়ে গেছে! 
 সবর্ণলতা এক মূহূর্ত স্তব্ধ থেকে বলে. 'আম যদ সে হুকুম সা 
মাঁন 2" 

'যাদ না মাঁন! মা'র হুকুম তুমি মানবে না! 

ন্যায্য হুকুম বলে অবশ্যই মানবো, অন্যায। হুকুম হলে নয়।' 

প্রবোধ রূঢ় গলায় বলে, 'মা'র ন্যাধ্য-অন্যাঘযর বিচার করবে তুমি?" 

'করবো না কেন ১ মানুষ হয়ে যখন জন্মেছি, ভগবান যখন চোখ কান, মন 
বাদ্ধ দিয়েছে-- 

এ কথায় প্রবোধ রীতিমতো রুদ্ধ হয়। বলে. 'মানুষ হয়ে জন্মেছ. তাই 
প্রতি পদে গুরুজনের ব্যাখ্যানা করবে. কেমন 2 “পায়ে মাথায় এক" হয় না, 
বুঝলে 2" 

'তোমার সঞ্জো তর্ক করবার বাসনা আমার নেই। তবে তোমার মাকে বলে 
দাও গে. এতকাল পরে হঠাৎ বাণের বাঁড় আম যাব না।' 

প্রবোধ আরো ক্রুদ্ধ গলায় বলে, 'ইচ্ছে হয় নিজে গিয়ে বল গে. আমি 

ত পারবো না। আশ্চর্য, এমন বেহায়া মেয়েমানুষ কখনো দেখ নি! 
ভাগো যদ মা'র মত হল-_" 

“দোহাই তোমার, ভাগ্যের কথাটা থামাও। বেশ, অত ভাগ্যের ভার বইবার 
ক্ষ্রতা আমার নেই, তাই ধরে নাও! মনে পড়ে পাস একবার চিঠি লিখোঁছল, 
বাবার শন্ত অসুখ, সে চিঠি তোমরা ছিণ্ড়ে ফেলেছিলে ১ মনে পড়ে ছোড়দা 
একবার দাদার মেয়ের অন্নপ্রাশনে, নেমন্তন্ন করতে এসেছিল, তোমরা তাকে 
আমার সঙ্গে দেখা করতে দাও নি. দূর দূর করে তাঁড়য়ে দিয়েছিলে ?, 

প্রবোধ সদর্পে বলে. 'তা রাগের ক্ষেত্রে মানুষ অমন করেই থাকে !' 

'রাগের ক্ষেত্রটা হঠাৎ শ্রীক্ষেত হয়ে যাচ্ছে কি জনো সেটাই জানতে চাইছি। 

প্রবোধ হঠাৎ একটা অসতর্ক উীন্ত করে বসে। বলে ফেলে. 'আম বাঁল 
নি বাবা, আমার ইচ্ছেও ছিল না। মা'র হুকুম. কী করবো!" 

সুবর্ণলতা একবার স্বামীর আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলে, "ঠক আছে। 
আমিই হুকুম রদ করিয়ে আনছি ।' 

'বরদার মেজবৌ-_-. প্রবোধ হাঁহাঁ করে ওঠে. 'ইচ্ছে করে আগুন খেতে 
যেও না। জেনে-শুনে সাপের গর্তে হাত 'দিও না।' 

সাপের বিষেই তো জরজর হয়ে আছ. এর থেকে আর বেশি ক হবে! 
বলে স্‌বর্ণলতা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। 

নিরুপায় প্রবোধচন্দ্র ঘরের মধ্যে পায়চাঁর করতে থাকে। সাহস হয় না 
দালানে বার হতে। 'কি জান কী সর্বনাশ ঘটাতে গেল সূবর্ণলতা ! 

হশা. তখনো এ ভয় ছিল। 

তখনো বহুবিধ সর্বনাশ ঘটিয়ে ঘটয়ে- ঘাঁটা পড়ায় নি সুবর্ণ। তাই 
তখনও প্রবোধ ভাবতে পারতো, 'মেয়েমানুষ হয়ে কী ভয়ানক বূকের 
মেজবৌয়ের ! 


সৃবর্ণলতা ৫১ 


মুন্তকেশীও যে মেয়েমানুষই. এ তথ্যটা আবিষ্কার করে ফেলার মতো 
দুঃসাহস ওদের নেই'। 

জননী জল্মভূমিশ্চ স্বর্গদি গরায়সী! 

জল্মভূমির বার্তা প্রবোধচন্দ্রদের সংস্কৃতিতে কখনো প্রবেশ করে নি. ওরা 
শুধু একজনকেই জানে। জানে তাঁর ইচ্ছে আইন, তাঁর আদেশই অলম্ঘ্য। 
হবে না! 

ল্জ্ঘন করার চিন্তার ধারে-কাছে কারো ছায়া দেখলেই যে মুস্তকেশী বলে 
বসেন, 'থাকবো না, চলে যাবো! "বাধক্যে বারাণস+”" এ কথা ভুলে বসে আছ 
বলেই এত হেনস্থা আমার! 

ও'দকে স্ত্রঁও ছেড়ে কথা কয় না। 

উঃ, পুরুষমান্ষ হয়ে জন্মানোর কত জালা! 

কতক্ষণ পরে যেন চমক ভাঙলো ভাইঝ মল্লিকার ডাকে। 

মল্লিকা উচ্চ চিৎকারে হাক দিয়েছে, 'মেজকাকা, জলাঁদ! ঠাকুমা ডাকে-+ 

“আমাকে ১ আমাকে কেন 2" 

মল্লিকা খরখর করে বলে, 'তা জানি না! মেজকাকণশ গিয়ে ঠাকুমাকে সাত- 
কথা শুনিয়ে দিয়েছে, তাই বোধ হয়!' 

প্রবোধ কাতর গলায় বলে, 'মাল্সকা, লক্ষ্য মা আমার. বল গে মেজকাকা 
বাঁড় নেই।' 

'বাঃ, বললেই অমানি, হলো? এইমান্তর আরু তোমায় দেখে গেল না? 

'তবে যা, বল গে এইমাত্তর- ইয়ে কলম্ঘরে ঢুকেছে।, 

“আম বাবা মিথ্যে-টিথ্যে বলতে পারবো না. ইচ্ছে হয় যাবে, না ইচ্ছে হয় 
না যাবে!' বলে ধর্মপুন্রের মহিলাসংস্করণ মল্লিকা ধর্মের মহিমা বিকীর্ণ করে 
ঢলে যায়। মনে হয় একটা গিল্লী! 

অগ্ত্যাই যেতে হয় প্রবোধকে বাঁলর পাঁঠার গাঁতভঙ্গ নিয়ে। 

মুন্তকেশী ছেলেকে দেখে জলদগম্ভীরে বলেন, 'বাবা প্রবোধ! মুখ্য 
মেয়েমানষ, একটা অসঙ্গত কথা না হয় বলেই ফেলোছি, ঘাট মানাছ তার জন্যে। 

নতু অপরাধের শাস্তি দিতে নিজে তুমি ধরে সাত ঘা জুতো মারলে না কেন 
আমায় ১ বৌকে দিয়ে এই অপমানটা করানোর চাইতে সে অনেক ভাল ছল! 

'মা!' প্রবোধচন্দ্র প্রায় আছড়ে মায়ের পায়ের কাছে পড়ে বলে. মা, 
তোমাকে অপমান করার সাহস যার হয়েছে জূতো' তারই খাওয়া উচিত! কোথায় 
সে! এখান একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক।' 

মুন্তকেশী অবশ্যই একট: প্রীত হন। 

নচেৎ তম" ছেড়ে 'তুই” ধরতেন না। 

বলেন, 'থাম পেবো! বারত্বের বড়াই আর কারস নে। এাঁদকে তো 
বৌয়ের ভয়ে কে'চো হয়ে গুটিয়ে যাস! পুরুষের 'হম্মত যাঁদ থাকতো তোর, 
তোর বৌ এমন দুঃশাসন হয়ে উঠত না! 

প্রবোধচন্দ্র জননশর এই ধক্কারবাক্যে সহসা দৃঃশাসন-শাসক ভমমূর্তি 
ধারণ করে হুতকার দিয়ে ওঠে, মাল্লিকা, ডেকে আন্‌ তোর মেজকাকণকে! সোজায় 
না আসে চুল ধরে নিয়ে আয়! 

মূস্তকেশীর কুলশকঠোর ওম্ঠাধরের ফাঁকে বোধ হয় ক্ষীণ একট: হাঁসির 
আভাস দেখা যায়। কিন্তু সেট্কু দমন করে ফেলে বলেন. থাক বাছা, 


৭২ সবর্ণলতা 


কেলেঙ্কারিতে আর কাজ নেই। যে যেমন আছে থাক । আমাকে তোমরা 
আজই কাশী পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। বেটার বোয়ের লা খেয়ে সংসার 
কামড়ে পড়ে থাকবার প্রবান্ত আমার নেই ।" 
মুন্তকেশীর কথা শেষ হতে না হতেই ঘরের মধ্যে কি কেউ বোমা 
দাগলো ? না হলে সবাই অমন চমকে উঠল কেন? 
বোমা না হলেও বোমার মতই শন্তিশালী! মৃদু অথচ তাশক্ষণ একাঁট 
প্রাতবাদ! 
“অপমান আম কাউকে কার নি। কথার জোরে “নয়কে হয়” করলে কণ 
করবো! 
বললো । 
বললো এই কথা সুবর্ণলতা। 
বরে সামনে, বড় বড় দ্যাওরদের সামনে, স্পম্ট গলায় শাশুড়ীর কথার 
করলো? 
বস্্রাহত ভাবটা কাটলে মুস্তকেশী একট: তিস্ত হাঁস হেসে বলেন, “এর 
পরও আর তোমরা আমায় এ সংসারে থাকতে বল বাবাঃ না হয় আম 
তোমাদের শাঁখা-চুঁড়ি পরা মা নয়, তবু মা তো-+ 


হঠাৎ যেন ঘুমল্ত বাঘ গজন করে উঠল, বড়বৌ! বড়বৌ! চিৎকারে 
বাঁড় থরথারয়ে ওঠে। 

দোষ করেছে মেজবৌ, ডাক কেন বড়বৌকে ? 

কেউ বুঝতে পারে না। 

সবাই থরথর করে। 

বড়বৌ তো মেজ দ্যাওরের সঙ্গে কথাও কয় না। তথাপি এই ডাকের পর 
বসেও থাকতে পারে না। রণস্থলে হাজির হয় ঘোমটা "দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে। 

প্রবোধচন্দ্র উত্তেোজতভাবে বলে, 'বড়বৌ, তোমাদের মেজবৌকে বল মানস 
পায়ে ধরে ক্ষমা চাক্‌! 

ওঃ, তাই! 

তাই বড়বৌ! 

মায়ের সামনে সরাসাঁর স্ত্রীকে সম্বোধন করা চলে না, তাই বড়বৌকে 
মাধ্যম করা! 

'অবশ্য আশা ছিল বড়বৌকে আর কম্টস্বীকার করতে হবে না, এই 
হুমাকই ষথেষ্ট। কিন্তু আশ্চর্য কাণ্ড! এত বড় তনের পরও কাঠের 
পুতুলের মত দাঁড়য়ে রইল সংবর্ণলতা। 

“বড়বৌ, ওকে ঘাড় ধরে ক্ষমা চাওয়াও ৷” 

উমাশশশ কাছে এসে মৃদ্‌স্বরে বলে, সঙের মতন দাঁড়য়ে রইলি কেন 
মেজবৌ ? যা, মাপ চা!, 

সুবর্ণলতা মূখ তুলে উমাশশশর দিকে তাকালো । আর সে দৃষ্টিতে 
উমাশশী যেন হিম হয়ে গেল। শাশুড়ীর চোখের অনেক ভয়াবহ দুষ্ট দেখার 
হিরা এমন চাউান কখনো দেখে [নি। 

এ কী! 

স্‌বর্ণলতা কি পাগল হয়ে গেল ? 


সুবর্ণলতা ৭9৩ 


এ যে স্পষ্ট পাগলের চোখ! 

সেই চোখ তুলে সবর্ণলতা তীব্রস্বরে বলে, 'কেন? মাপ চাইব কেন ?' 

উমাশশী বলে, চাইলেই তো সব গোল মিটে যায় ভাই'। বল বল্‌ 
লক্ষতীট, “মা, যা বলোছ, না বুঝে বলোছ”। 

িন্তু উমাশশণদের শহসেবমত 'গোল মিটোতে' পারলে তো পাঁথবঈটাই 
সমতল হয়ে যেত। তা হয় না। 

সুবর্ণলতার মুখ দিয়ে সে কথা বার করানো যায় না। সুবর্ণলতা বলে, 
'না বুঝে তো বাল নি, বুঝেই বলোছ।' 

হ্যা, বুঝেই বলেছে সুবর্ণ শাশুড়ীকে, 'বাবার সঙ্গে সম্পর্ক তুলে "দিয়ে 
রাখা হয়েছে, বাবা যখন উীদ্দশ করেছেন, ৮৮ পা 
হয়েছে আর' এখন নিজের সংসারে ভাতের আকাল হয়েছে বলে ঠেলে পাঠিয়ে 
দেওয়া হচ্ছে! খুব তো মানের বড়াই, কাকে মান বলে, কাকে অপমান বলে, 
সে জ্ঞান নেই! 

বলেছিল। 

আবার এখন বলছে, 'না বুঝে বাল নি! 

অবাক হয়ে গিয়োছল বাড়র প্রীতাটি সদস্য । এমন কি সুবোধও। 
বরস্ত হয়ে বলোছিল, 'পেবোটা শিক্ষা-সহবৎ দিতে জানে না।' 

আর মূস্তকেশী ? 

মুন্তকেশী শুধু স্তম্ভিতই হন নি, যেন একটু ভয়ও পেয়েছিলেন। একটা 
ভয়াবহ ভাঁবষাং যেন দাঁত খিশচয়ে উপক মারছে তাঁর জশবনের সীমানা- 
প্রাচীরের ওধার থেকে । পড়বে বাঁঝ লাফয়ে ! 

যাক তব এখুনি সে ভয়কে আমল দেবার দরকার নেই। ঘরের িল- 
হড়কো আছে মজবুং। ছেলেরা আজও মায়ের পদানত। আজও একটা বৌকে 
দূর করে দিয়ে ছেলের আর একটা বয়ে দিতে পারেন মুস্তকেশী! 

প্রভাস বলেছে, ওকালতি করাছ, কোর্ট-কাছারি দেখাছ, ভদ্রুঘরের মেয়ে যে 
এমন বে-সহবৎ হয়, এ ধারণা ছিল না। এ সমস্তই মেজদার বাদ্ধহীনতার 
ফল! মেয়েমানুষকে কখনো আস্কারা দতে আছে 2 সর্বদা চোখরাঙানর 
নিচে রাখলে ত্রবে শায়েস্তা থাকে? 

প্রকাশ বলেছে, 'পয়সা দিয়ে আর “এস্টারে” 'িয়ে থিয়েটার দেখতে হবে 
না আমাদের, বাঁড় বসেই অনেক থয়েটার দেখতে পাওয়া যাবে। বিয়েটা 
জব্বর করোছল মেজদা! ৃ 


ক্ষিপ্ত মেজদা অতএব বৌ শায়েস্তা করবার ভার নেয়। থার্ড ক্লাস ঘোড়ার 
গাঁড় একখানা ডেকে আনে। 

যে গাঁড়তে চাঁপয়ে এ বাড়ির মেজবৌকে 'নর্বাসন দেওয়া হবে। মেজবৌ 
যাবে একা, একবস্বে। মেয়েটা আর ছেলে দুটো থাকবে এ বাঁড়তে। তারা এ 
বংশের। সুবর্ণলতার সঙ্গে কোনো সম্পকণ রাখা হবে না। 

পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখে. তবেই হয়তো আবার 

ওদের মুখ দেখাতে পারবে স্হবর্ণ। নচেৎ এ বাঁড়র অন্নজলের বরাত উঠল 
ওর। বরাত উঠল স্বামী-সন্তানের 'সঙ্গ'র। 

আড়ালে-আবডালে সবাই প্রবোধকে স্রৈণ বলে। দেখুক আজ তারা। 


৭৪ সুবর্ণলতা 


নিজেই বনবাস 'দিয়ে আসবে সীতাকে। 

মুস্তকেশী কিন্তু এ ভূমিকায় নেই। 

মূন্তকেশী সেই যে জপের মালা নিয়ে বসেছেন, নড়ন-চড়ন নেই তার 
থেকে। 

সুবর্ণর বড় মেয়ে চাঁপা মায়ের এই দুর্গাঁতিতে কাঠ হয়ে বসে থেকে এক- 
সময় ঘরে গিয়ে কাঁদতে বসেছে, ভানু কানু দুই ছেলে 'মা'র সঙ্গে যাবো, মা'র 
সঙ্গে যাবো" করে পরির্রাহি' চেশচয়ে অবশেষে জেঠির কাছ থেকে খেলনা 
পৃতুল খাবার পেয়ে ছুপ করেছে, কর্তারা কে কোন দিকে গেছেন, 'গি্ষীরা 
আরব্ধ কাজের ভার আবার হাতে তুলে নিয়েছে, মুস্তকেশী নর্বিকার। ' 

প্রবোধের কাজটা তাঁর সমর্থন পেলো 'কি পেলো না, তাও বুঝতে পারে 
লা প্রবোধ। 
এর চাইতে যাঁদ মুস্তকেশী গলা খুলে বলতেন, 'বেশ করেছে প্রবোধ, এত 
বড় জাহাবাজ মেয়ে তিনি ভূভারতে দেখেন নি", অনেক আহনাদের ব্যাপার 
হতো! 

এটা কাঁ হলো ? 

লাঠিটা ভাঙলো, সাপটা মরলো না! 

বৌ বিতাড়িত হল, মা প্রসন্ন হলেন না! 


|| ১৯০ | 


কিন্তু মুস্তকেশীর সংসারের অন্নজল কতাঁদনের জন্যে উঠোঁছল সুবর্ণলতার 2. 

সে ইতিহাস জানতে হলে' অন্য অধ্যায় খুজতে : 
হবে। অথচ স.বর্ণলতার জীবনের খাতাটা ট্াইট-বাঁধযান; 
তো দূরের কথা, একেবারে অবাঁধা। ঝুরো ঝুরো পাতা? 
গুলো তার এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে. উড়ে বৌঁড়য়েছে। 

তবু সেই "বদেয় করে দেওয়ার অধ্যায়টা খপুজে- ) 
পেতে দেখে এইটুকু দেখা যায়, বাঁড়র দরজায় ঘোড়ার | 
গাঁড়র শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বোরয়ে আসেন সংবর্ধলতার | 
বাবা নবকুমার বাঁড়য্যে। ফর্সা ধবধবে রঙ, নিটোল গড়ন, ! 
চুল কাঁচা-পাকা। হয়তো বা কাঁচার থেকে পাকার সংখ্যাই বেশি। | 

পরনে ফতুয়া, পায়ে বিদ্যাসাগরী চাঁট। একদা সরকারী কোনো এক | 
আফসের বড়বাব্‌ ছিলেন, 'রিটায়ার্ড। ঘরকুনো মানুষ, বাইরে বেরোন কমই। 
সারাদিন বাঁড় বসে ছেলের বৌকে টকাঁটক করেন আর নাতি নিয়ে সোহাগ 
করেন। 

বেরোনোর মধ্যে সৌদামিনী দেবর বাঁড়তে একটু বেড়াতে যাওয়া। . 
বৃদ্ধা বিধবা, নবকুমারের দৃর-সম্পকের 'দাঁদ। বহ্‌ দুঃখ-কষ্ট পার হয়ে আর : 
বহু কর্মক্ষয় করে শেষ জশঁবনে পেয়োছলেন কিণ্িৎ সুখের স্বাদ, কিন্তু সইল: 
না। 

বুড়োটি গত হলেন। : 

আঁবাশ্য সোদামনশর যা বয়েস তাতে বৈধবাটাই স্বাভাবিক, তবে বহু কণ্ট 





সবর্ণলতা ৭৬ 


পেয়ে সবেই তো স্বামী পেয়োছলেন। তাঁর সতীনই সর্বস্ব দখল করে 
রেখোঁছল। 

স্বামী গেছেন, সতান গেছে, এখন একা সতশনের ছেলেপুলে বৌ জামাই 
সব নিয়ে সংসার করছেন। 

এই সংসারটাই দেখে পাঁরতৃপ্ত হন নবকুমার। তাই ছটে ছুটে আসেন। 
এ সংসারে পৃুরনোর ছাপ বিদ্যমান, কারণ সাঁদামনীর হাতেই তো গড়া। যে 
সৌদামিনী নবকুমারের 'দাদ। 
এসিড সংসারে নবকুমারের ছেলের বৌয়ের রুচ-পছন্দের বিজয়- 

। 

নবকুমারের মনের সঙ্গে খাপ খায় না সে পছন্দ, সে রুচি! 

কিন্তু বৌয়ের বা দোষ কি? *বশুরের মনের মত রুচি-পছন্দ সে পাবে 
কোথায়; শাশুড়ীকে কি চক্ষে দেখেছে 2 

বিয়ের কনের থেকেই গিল্নী হতে হয়েছে তাকে। সংসারত্যাগিনন 
শাশুড়ীর পারত্যন্ত সংসারটাকে কুঁড়য়ে তুলে নিতে হয়েছে ছোট দুটি হাতে। 

সংসারও আঁবাঁশ্য ছোট, *বশুর-দ্যাওর-স্বামী। কিন্তু ছোট বলেই যে 
হাল্কা তা তো নয়। পাষাণভার। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই যে উত্তরাধকার সেটা 
সহজ, সেটা কোমল, কিন্তু এ তো তানয়। 

স্বেচ্ছায় সংসারটাকে ত্যাগ করে চলে গেছে সংসারের গিল্লটা! ছেলের 
বয়ের সব ঠিকঠাক, তখনই অকস্মাৎ মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে এই কাণ্ড! 

যথানার্দন্ট দিনে ছেলেটার বিয়ে হয় নিন বটে, তবু বিয়েটা হলো। কারণ 
শাশুড়ী সত্যবতী নাকি এ সম্বন্ধ স্থির করে গিয়েছিলেন । 

*বশুর সেই ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। 

বোৌ' সুধীরবালা। 

মানুষ খারাপ নয়, তবু নবকুমার যেন তাকে তেমন স্নেহের চোখে দেখেন 
না, পয়-অপয় কথাটা 'বি*বাস করেন 'তান। 

হাঁচি টিকটিকি মঙ্গলবার সব কিছুতেই পরম বিশ্বাস নবকুমারের। 
আজও পাঁঞ্জকাখানা হাতে নিয়ে উল্টে দেখাছলেন, ক'টা থেকে বেলা ক'টা 
পর্যন্ত মূলো খেতে নেই। 

হঠাৎ ওই ঘোড়ার গান্ডির শব্দ! এই বাঁড়র দরজাতেই থামলো ! 

নবকুমার পাঁ্জকাখানা তাকের উপর রেখে তাড়াতাড়ি বোৌরিয়ে আসেন, আর 
হাঁ করে দেখেন ভয়ঙ্কর অপাঁরাচিত আর বেশি পাঁরাচিত এক নারীমূর্ত নেমে 
আসছে গাঁড় থেকে। 

কে! 

কে ও! 

নবকুমার যেন আর্তনাদ করে ওঠেন। এত বার্ধক্য এসেছে তাঁর, তাই এত 
দৃষ্টাবভ্রম! না, নাঃ 

নবকুমার তাই আর্তনাদ করে ওঠেন। 

কিন্তু এই বিচাঁলত ভাবটা মূহূর্তমান্ত স্থায়ী হলো, পরক্ষণেই সে ভাব 
বদলে গেল। 'বস্ময়-বিস্ফাঁরত দ্াঁম্টতৈ দেখলেন নবকুমার, ভাড়াটে এই 
গাঁড়টা, যাকে নাঁক ছ্যাকরা গাঁড় বলা হয়, সেটা ওই নারী আরোহণীকে 
নাময়ে দিয়েই উল্টো মোচড় দিয়ে গড়গড় করে চলে গেল। 


৭৬ সুবর্ণলতা 
তার মানে যে পেশছতে এসেছিল, সে নামল না। সে পন্রপাঠ বিদায় 


| 

অর্থাৎ মানুষটাকে নির্বাসন দিয়ে গেল। 

এর মানে কি? 

পরমাকাঁক্ক্ষিত মার্তর এ কী অনাকাঁত্ষত রূপে প্রকাশ! 

ও এসে পায়ের ধুলো নিচ্ছে! 

নবকুমার কি সেই নতমূখ নতদূঘ্টি কন্যাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরবেন? 
হাহাকার করে বলে উঠবেন, “সুবর্ণ রে-এতাঁদন পরে এল তুই? যখন তোর 
বাপের সব গেল! 

না, পারলেন না। 

সেই সহজ স্নেহ-উচ্ছবাসের মুখে পাথর চাঁপয়ে দিয়ে চলে গেছে সুবর্ণর 
“পারের কান্ডারখ.৷ 

এই চলে যাওয়ার চেহারার মধোই বাঁঝ সুবর্ণলতার দুর্ভাগ্যের ছায়া। 

তাই নবকৃমার কাঠ হয়ে দাঁড়য়ে থেকে আগে প্রশ্ন করেন, 'কে? সুবর্ণ? 
কণ ব্যাপার? মানে 

'এখানে থাকতে চাই ॥ 

প্রণাম-নিবেদনকারিণী এবারে নবক্রুগারের ুখোম্াখি দাঁড়য়ে 'স্থর স্বরে 
বলে, 'আর কিছু চাই না বাবা, শুধু এইখানে, থাকতে চাই! 

এইখানে থাকতে চাই'! 

এ আবার কী গোলমেলে প্রার্থনা! বিয়ে হয়ে পর্ধন্ত এই এতগুলো বছর 
যার দর্শনমান মেলে নি, যার জন্যে কত দিন কত রাত শুধু প্রাণের মধ্যে হাহা- 
কার করেছে, এবং ইদানীং যার দর্শন পাওয়া সম্পর্কে একেবারে আশা ছেড়ে 
দয়েছেন, বলতে গেলে যাকে প্রায় ভুলেই বসে আছেন, সেই মেয়ে কিনা 
অকস্মাৎ এসে পায়ে আছড়ে পড়ে বলে, 'আমায় আশ্রয় দাও" 

বলে. 'আমি থাকতে চাই ! 
সি শাঁখা-স্দুর-সোনায় জবলজহলাট মূর্তি! এমন নয় যে ভাগ্যাল্তর 

1! 

ধবহবল নবকুমাব স্খালত স্বরে বলেন, 'আঁম তো কিছু বুঝতে পারাঁছ 
না সুবর্ণ! 

বুঝতে পারবে না বাবা! সংবর্ণ তেমাঁন 'স্থর স্বরে বলে. 'পরে সব 
বুঝতে পারবে বাবা! এখুনি সব কিছু বুঝতে চেস্টা করো না। পরে সব 
বলছি।' 

বলোছল সহবর্ণ হাঁপাতে হাঁপাতে। 

কিন্তু নবকুমার তো বলতে পারতেন, "থাক মা, বলতে তোকে হবে না 
[িছু। তুই যে এসোছস এই আমাদের ঢের। কতকাল তোর চাঁদমুখটি দোঁখ 
নি, হয়তো কোনাদন মরেই যেতাম, ভগবান বোধ কার দয়া করেই তোকে এনে 
দলেন।' 

বলতে পারতেন। 

মেয়েকে সাঁষ্থর হবার সময় দিতে পারতেন। কাছে বাঁসয়ে গায়ে মাথায় 
হাত বৃলিয়ে তৃষিত িতৃহদয়ের ব্যাকুলতা প্রকাশ করতে পারতেন, কিন্তু নব- 
কুমার তা করলেন না। নবকুমার কেমন যেন ভয় পেলেন। 


সুবর্ণলতা % 


আর সেই ভয়ের তাড়নাতেই চির অভ্যাসমত ছটলেন "দাদীকে ডেকে 
আনতে । 

দিদি সৌদামিনশ দেবী নবকুমারের নিজের দিদি অবশ্য নয়, পিসতুতো 
বোন. কিন্তু স্বামী থাকতেও 'বেধবা” হয়ে দীর্ঘকাল "তিনি মাতুলালয়ে বাস 
করেছেন, সেই সূত্রে নবকুমারের 'দাঁদ-অন্ত প্রাণ! 

যখন নবকুমারের বয়েস কম ছিল, এবং তাঁরও প্রায় জামাইয়ের মতই স্ত্রী 
নিয়ে সমস্যার অন্ত ছিল না, ওই দই বল-বুদ্ধ-ভরসা হয়ে রক্ষা করেছেন। 

তবে শেষরক্ষা করতে পারেন নি সৌদামিনী। সুবর্ণর বিয়ে উপলক্ষ করে 
সত্যবতী যখন এক অপাঁরসীম ধিক্লারে সংসার ত্যাগ করলেন, তখন তো শেষ 
পর্যন্ত সোদামনীই সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, তথাপি 'ফাঁরয়ে আনতে পারেন 'নি। 

কিন্তু ফারয়ে আনবার চেষ্টাই কি করেছিলেন ঃ 

সে প্রশ্ন কারোছিলেন নবকুমার দিদির কাছে হাহাকার করে, 'পারলে না 
সদুদি ঃ তৃমি পারলে নাঃ তোমার চেষ্টাও বিফল হল ?' 

সৌদামনী ক্ষুব্ধ হাঁস হেসে বলেছিলেন, "ও কথা বললে মিথ্যে কথা 
বলা হয় নবু। সাত্য বললে বলতে হয় চেষ্টা আম কার 'ন।' 

'চেম্টা কর নি!" 

'নাঃ! তার মুখ দেখে বুঝেছিলাম যে, কোনো চেম্টাই সফল হবে না। 
বিশ্বাসঘাতক স্বামণীর ঘর আর করবে না সে। বললে তুই দুঃখ. পাবি, তুই ওর 
যুগ্যি ছিলি না কোনাঁদনই। তব স্বামী বলে ভালবাসতো, ানরহেস্গা করতে 
চেষ্টা করতো, সে ছেন্দা তুই খোয়াল। বৌ তোকে অসার অমানাষ্য যাই ভেবে 
আসুক, একথা কোনোদিন ভাবে নি তুই ওকে ঠকাবি! সেই কাজ করি তুই, 
আমি আবার কোন্‌ দুঃখে চেষ্টা করতে যাব বল্‌! 

বলোছিলেন সৌদামনী এসব কর্থা। তত্রাচ নবকুমার 'দাঁদর 'শরণ' ত্যাগ 
করেন ন। সদৃঁদকে আঁকড়েই আবার হালভাঙা নৌকোটাকে ঠেলে খে: শ নিয়ে 
এসোঁছলেন তরে । এখন আর ভাইয়ের সংসারটা দেখতে হয় না সৌদামিনীকে, 
ছেলের বৌ দেখে, তবে কারুর একটু 'মাথা ধরলে' ছুটে আসতে হয়। 

তাছাড়া এদের লক্ষী, ষষ্ঠী, মনসা, মাকাল, ইতৃ, মঙ্গলচন্ডাী ইত্যাঁদ করে 
গেরস্তঘরের যা কিছু 'নিয়ম-লক্ষণ, পাল-পার্বণ, তার দায় এখনো পোহান 

1 

বলতে গেলে এখনো এ সংসারে আঁভভাবিকার পোস্টটা সৌদা মিনীরই। 

অতএব আকস্মিক কন্যার এই আঁবর্ভাবে ভীতব্রস্ত-আতাঁঙ্কত নবকুমার 
সদুদকেই ডাকতে ছুটলেন, মেয়েকে ভাল করে বসতে পর্যন্ত না বলে। 

বসতে বললো সাধনের বৌ সুধরবালা। কাছে এসে হাত বাঁড়য়ে বলল, 
'এসো ঠাকুরাঝ+ হাত-মৃখ ধোও।, 

বৌ সপ্রতিভ আত্মস্থ । *বশুরের মত ভয় পেল না সে। 

বুঝলো একটা রাগড়াঝাটির ব্যাপার। বিয়ে হয়ে এসে পরন্তি ননদকে চক্ষে 
না দেখলেও ননদের কথা শুনেছে বৌক অনেকই শুনেছে। ননদের ভাইদের 
কাছে, পিসশাশুড়ীর কাছে, কদাঁচিৎ *বশুরের কাছে। *বশূরের কাছে- বেশির 
ভাগই তার মেয়ে অন্নর সঙ্গে তুলনার ব্যাপারে । 

উঠতে বসতে অশ্নর দোষ দেখতে পান নবকুমার আর বলেন, “তোর পিসি 
তো এমন ছিল নারে? 


৭৮ সবর্ণলতা 


নাতিটি নবকুমারের নয়নমাঁণ, নাতনশীট নয়। নাতনাঁটার মধ্যে থেকে বুঝি 
কেবলই অনেক দন আগের একটা বালিকাকে খদুজে পেতে চান নবকুমার, একদা 
এই বাঁড়রই সর্ব যে ছাঁড়য়ে ছিল আলোর কাঁণকার মত। গোলগাল বেটে- 
খাটো শ্যামলা রঙ অন্নর মধ্যে তার আভাস কোথায় 2 তাই' বিরন্ত হন,। 

আগে এই বাসাটার ভাড়াটে ছিলেন নবকুমার. তার পর বাঁড়ওয়ালাকে বলে- 
কয়ে বাড়িটা কিনে নিয়েছেন। ৃ 

কেন 2 

কে জানে কা রহস্য! 

সাধনের আদো ইচ্ছে 'ছিল না পয়সা খরচ করে এই পচা বাঁড়টাই কেনা 
হুয়। বাঁড়র অভাব আছে নাক 2 ভাত ছড়ালে কাকের অভাব থাকে ? 

চলাছল বাপের সঙ্গে সামান্য কথান্তর, সদৃই রক্ষা করলেন। আড়ালে 
ডেকে চাপ চুপি বললেন, বুঝতে পারাঁছস না বাবা. এই বাঁড়খানাতেই তো 
তোর মা থেকেছে, সংসার করেছে, বলতে গেলে এর সর্ববই তোর মা বিদ্যমান। 
এ বাঁড় ছাড়লে সে একেবারে মুছে যাবে! তাই বোধ করি নব প্রাণ ধরে-, 

সাধন চিরদিনই শান্ত গম্ভীর, গম্ভীর হয়েই বলেছিল সে, 'মা'র প্রাত 
খুব একটা ইয়েও তো দেখি না। মার নাম উঠলেই তো বাবা তেলে-বেগুনে 
জলে ওঠেন আর রাতাঁদন গাল পাড়েন ! 

হেসোছলেন। 

বলেছিলেন, 'ছেলেমানুষ তুই, তোকে আর কি বোঝাব! তবে বিয়ে তো 
করোছস, আপাঁনই বুঝতে পারাবি পরোক্ষে। বেশিদ্‌র যেতে হবে না' আমার 
জশবনটাই দেখ না কেন!" 

তা সৌদামনীর জীবনটা এ হিসেবে দ্রন্টব্য বৈকি। দীর্ঘকাল পাঁত- 
পারত্যন্তা হয়ে মামা-মামীর সংসারে হাড়ে দুর্বো গাঁজয়েছে, স্বামী দ্বিতীয় 
পক্ষ নিয়ে সুখে সংসার করেছেন। হঠাৎ একাঁদন চাকা ঘুরলো, স্বামীর সংসারে 
আবার প্রতিষ্ঠিত হলেন সোৌদামিনী রুগ্ন সতানের কলা কবতে আর তার 
“ম্ঠীর সংসারের' খবরদারি করতে । তার পর স্বামী বড়াগল্লীতেই তদগত 
বাসা জিনিসটাই আলাদা বড়শিল্নী ! 

সমস্ত তো সাধনের চোখের সামনে। 

তাই নিজের জীবনের দৃঙ্টাল্ত দেখান সৌদামিনী। বলেন, 'তোর বাপের 
মর্মকথা আমি বুঝি।' 

নবকুমারও তা জানেন, তাই মর্মকথার ভার নিয়ে ছোটেন 'দাঁদর কাছে। 
আজও ছুটলেন। অতএব সনধীরবালা এসে হাত ধরতে এল সবর্ণর। 

সুবর্ণ অবশ্য সে হাতে হাত রাখল না, এমনিই ঝেড়ে-পুড়ে উঠল। বলল, 
তুমিই বাঁঝ বৌ? 

সুধারবালা ঘাড় কাত করলো। 

বিহবল সুবর্ণ তাকিয়ে তাঁকয়ে দেখাঁছল সেই তার বালোর লীলাভূমিকে। 
হাত বদল হয়ে জিনিসপরগুলো জায়গা বদল করেছে, কিন্তু ইট-কাটগুলো তে 
অচল আছে। ওই জানলাটার 'িচে বসে বই পড়তো সুবর্ণর মা. ওই কোণটায 
বসে কুটনো কুটতো। 


আর দোতলার সেই ছোট ঘরখানা ? 


পুবর্ণলতা ৭১১ 


যেখানায় স্বর্ণ আর তার মা শোবে বলে চৌক পাতা হয়োছল ? 

সাধনের 'বিয়ে হলে বৌ নিয়ে সাধন ভাল ঘরটায় শোবে, পাশের সরু ঘরটায় 
সুবর্ণকে 'নয়ে তার মা সত্যবতী' আর হতভাগ্য নবকুমার অতএব ছোট ছেলেকে 
নিয়ে নিচেরতলায়। 

এই ব্যবস্থার মাঝখানে হঠাৎ এল ঝড়, তছনছ হয়ে গেল সংসার, ছেলের 
বৌকে নিয়ে সংসার করা আরু হলো না সত্যবতীর। 

সেই ঝড়ের পরের সংসারটাকে তো আর দেখে নি সুবর্ণ! . 

সুবর্ণ তাই বিহহল দূম্টি মেলে হারানো দিনকে খশুজাছল ..ওই--ওই সেই 
কুল:জ্গীটা যার মধ্যে স্‌বর্ণর বই-শেলেট থাকতো । এখনো তাই রয়েছে! ধ্ৰক 
করে উঠোঁছল বুকটা, তার পর বুঝলো ওসব নতুন আঁধকারীর বাপার ! 

সুবর্ণ কি আবার এ বাঁড়র একটা কুলুঙ্গ খুজে নেবে তার বই-খাতা 
রাখতে 2 বহ্বীদনের ধুলো ঝেড়ে হাতে তুলে নেবে সেগুলো « আর সেই 
পরম বস্তুটি হাতে নিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে 2 বলবে, 'মা, তাঁম যা চেয়ে- 
ছিলে তোমার সুবর্ণ তাই, হয়েছে । তবে প্রায় তোমার মতই জীবন তার, শুধু 
তফাং এই তুমি সংসারকে ত্যাগ করেছ, আর সংসার সুবর্ণকে ত্যাগ করেছে।' 

চকিত দৃষ্টিপাতের মধ্যে এতগুলো কথা ভাবা হয়ে িয়োছল সুবর্ণর। 
শুধু যখন সহসা চাঁপা আর ভানু কানূর কাছে এসে ঠেক খেয়েছে, তখন 
সধারবালা বললো, 'এসো ঠাকুরঝি ! 

সুবর্ণ ঝেড়ে উঠলো, বললো--তুমিই বুঝি বৌ ?' 

তারপর বললো, 'বাবা তাড়াতাঁড় কোথায় চলে গেলেন ?' 

সুধাীরবালার বুঝতে আটকায় নি কোথায় গেছেন *বশূর। তবু ঘাড় 
নেড়ে বললো, 'জান না।, 

সুবর্ণ অবাক হয়ে ভাবলো, বাবা কি চেয়ে এসেছে বলে তাড়াতাঁড় -।জারে 
ছুটলেন 'মিন্টি আনতে ? 

অদ্ভূত তো! ভাল করে তো দেখলেনও না সুবর্ণকে! 

এখন এই পরের মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে হবে। মনের অবস্থা তার 
অনুকূল নয়। এই অপাঁরাচিত দুটো চোখের সামনে আপন দৈন্য নয়ে-_ 

বৌ' আবার 'মিনাতি করলো, হাত মুখ ধুয়ে নাও ঠাকুরবি।' 

সুবর্ণ সে কথায় কান দিল না। 

বলল. 'দাদা কোথায় ? 


'ছোড়দা ৮ 
ঠাকুরপো 2 বৌ হেসে হেসে থেমে থেমে বলে, শতাঁন তো সাহেব । রেল- 
পসে মেজসাহেব। বাঙাল নামে চলে না, নাম নিয়েছেন এস কে বানার্জ। 
সুবর্ণর বূকটা হঠাং যেন হাহাকার করে ওঠে। 
কেন কে জানে? 
সুবর্ণ কি এ বাঁড়র ওই ছেলেটাকে 'হংসে করছে ১ নাকি ওর সঞ্চে 

সবর্ণর ব্যবধানের দূরত্ব মনে পড়ে বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠল. 


৮০ সবর্ণলতা 


একটু থেমে বললো, 'তা সাহেব আসেন কখন ? 

'ও মা! 'তাঁন এখানে থাকেন নাক? তাঁর তো মোগলসরাইয়ে কাজ। 
আগে ছিল বক্সার-_' 

শৈষ কথাটায় কান দেয় না সুবর্ণ । 

ওর মাথার মধ্যে ধাক্কা দিতে থাকে মোগলসরাই ! মোগলসরাই ! যেটা নাকি 
কাশীর নিতান্ত নিকট। তার মানে ছোড়দা মা'র নিতান্ত 'নিকটজন হয়ে আছে 
এখন। নিশ্চয়। ছোড়দাকে মা ফেলতে পারবে না। 

এই মেয়েটার সঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছে করল না। বলল, আম ছাতে 


যাচ্ছি।' 
ছাতে! 
বৌ অবশ্যই অবাক হল। বললো, পাতে কেন ? 
'এমান।' 
'তা হলে চলো-_এই যে এঁদকে ?সিশড়-_ 


'জান।' সুবর্ণ তীব্রস্বরে বলে উঠল, 'জানি।' চলে গেল সিশড় দিয়ে । 

সুধীরবালা অশ্রাতভ মূখে দাঁড়য়ে থাকলো. আর গেল না সঙ্গে। রাগও 
হলো। প্দীব্য চলছিলো, হঠাৎ আবার এ কী বিপদ; এ বিপদকে ঠিক 
সামায়কও মনে হচ্ছে না যেন। কে জানে কণ ঘাড়ে পড়তে চলেছে! 

মুখটা বেজার করে দাঁড়য়ে থাকে সে বরের বাঁড় ফেরার অপেক্ষায় । সময় 
হয়ে এসেছে। 


গায়ে লম্বা কালো চাপকান, গলায় পাকানো চাদর, পরনে ধুতি, পায়ে 
জুতো মোজা, যথারপাঁত উকিলবাবূর সাজে বাঁড় দিরলো সাধন শেয়ারের 
ঘোড়ার গাঁড় করে। মোড়ের মাথায় নামে. গাড়ি অন্যাদকে ঘুরে চলে যায়। 

নিত্য অভ্যাসমতই নেমে পড়েই বাঁড়র দিকে তাকিয়ে নিল একবার, আর 
তাকিয়ে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভুরুটা কুচকে এল তার। 

ছাতে দাঁড়য়ে কে? 

আলসে থেকে অনেকটা উদ্চুতে মুখ, ঘোমটা খোলা মাথা মনে হচ্ছে, এলো 
চল! 

সূধারবালা ? 

সুধীরবালা ক অতটা লম্বা, অতটা ফর্সা ? 

তা ছাড়া সূধাঁরবালা এ সময় হাওয়া খেতে যাবে ? 

কেউ বেড়াতে এসেছে তা হলে! 

কিন্তু কে? 

যাক হাতে পাঁজি মঞ্গলবার দরকার কি! হনহন করে এসে বাঁড় ঢুকেই 
দেখলো সামনে স্শ বেজার মৃখে বসে আছে। 

অবাক হল সবর্ণর দাদা সাধন। 

কেউ যাঁদ বেড়াতে আসবে, সুধশরবালা কেন এখানে এমন প্যাচামুখে? 

বললো, 'ছাতে কে? আলসে ধরে দাড়য়ে রয়েছে মনে হলো, মাথার 
ঘোমটা খোলা চুল খোলা-_ 

খোলা! 
চুল খোলা! 


সুবর্ণলতা ৮৬ 


সুধীরবালার বুকটা কে'পে ওঠে। 

এ কী কথা! 

পাগল নয় তো? নাক হঠাৎ পাগল হয়ে গেছে? তাই! তাই হয়তো 
*বশুরবাঁড়র লোক ফেলে 'দয়ে পালিয়ে গেছে। কী হবে! 

সাধন আর একবার প্রশ্ন করলো, 'বল, কি? কে এসেছে 2 

সুধীরবালা নিঃশবাস ফেলে মৃদয গলায় বলে, “কে এসেছে পরে শুনো) 

পরে শুনবো? তার মানে ?, 

“পরে শুনোটা' তো ছল! খবরটা স্বামীর কর্ণ গোচর করবার জন্যে তো 
মরছিল! তবে লঙ্জা ? 

তাই যেন না বললে নয়, এইভাবে বলে সুধীরবালা, “এসেছে তোমাদের 
বোন।' 

বোন! বোন মানে 2 কোন্‌ বোন £ 

সাধন গলা থেকে চাদরটা নামিয়ে আল'নায় রাখতে ভুলে গিয়ে হাতে করে 

সাধনের কণ্ঠস্বর থেকে বিস্ময় যেন ঝরে ঝরে পড়ে__ 

সুধীরবালাও চালাক মেয়ে, রয়ে-বসে পারবেশন করে। বলে, 'বোন আর 
তোমাদের কটা আছে 2 একটাই তো বোন! সেই বোন।, 

“সেন বোন! মানে সুবর্ণ? 

হন।? 

সাধনও বহুদিন অদেখা সেই বোনের আগমন-সংবাদে আনন্দিত না হয়ে 
ভীতই' হয়। শাঁঙ্কত গলায় বলে, “হঠাৎ এভাবে আসার কারণ 2 

'কারণ!' সুধশরবালা গলা খাটো করে বলে. 'কারণ ক করে জানবো? 
এসেই তো ঠরঠাঁরয়ে ছাতে উঠেছে! | 

বাবা নেই», 

'আছেন। মানে মেয়েকে দেখে তবে গেছেন !' 

দেখে তবে গেছেন? কোথায় গেছেন 2 

'জানি না। বোধ হয় পাপমার বাঁড়। দেখামানই তো ছ্‌টলেন।” 


বললো, এলো কার সঙ্গে 2 

'জানি না। চক্ষে দেখলাম না তাকে । দরড়া থেকে ছেড়ে 'দিয়ে চলে গেছে । 
হু, গণ্ডগোল একটি বাঁধয়েছেন আর কি! তা এসেই ছাতে উঠল যে? 
'ভগবান জানেন। সাতবার বলাছি হাত-মৃখ ধোও, তা নয়, ছাতে যাব! 
'অন্ন কোথায় 2 ডেকে আনতে বল-_” 

'অন্নও তো পিছ পিছু ছাতে উঠেছে । বললাম কিনা, পিসি হয়।” 
'ডাকো ডাকো! কি জান মাথার দোষ হয়েছে কিনা” 

“কে ডাকবে? 

'অশ্নকেই ডাকো! 

তুমি চেশচাও। আমি আর 'সপড় ভাঙতে পারব না।' 

পপাঁস! াঁসির সঙ্গে কী এত কথা! 

ঙ 


৬২ সবণণ্তা 
অপছন্দ ভাব দেখায় সাধন। 


ণকল্তু সাধনের মেয়ে হঠাৎ ভাঁর পছন্দ করে ফেললো পিঁসিকে। 

আস্তে আস্তে গায়ে হাত 'দিয়ে বলেছে, “তুমি পাস 2 

তারপর কেমন করে না-জানি ভাব উঠেছে জমে। সবর্ণকে সে প্রশ্নের পর 
প্রন করছে আর সুবর্ণ উত্তর দিচ্ছে। 

হয়তো এমাঁনই একটা কিছ: চাইছল সুবর্ণ। বলতে চাইছিল 'নিজের 
কথাগুলো । 

এই শিশুচিত্তের কৌতূহলের সামনে সেই বন্তব্য সহজ হলো। 

অন্ন বলছে, 'এই বাড়িতে যাঁদ জল্মেছ তাঁমি তো এখানে থাক না কেন?" 


'এরা তাড়িয়ে দিয়েছে। শবশুরবাড়ি পাঠিয়ে 'দিয়োছি।' 


“কেন2 তুম তো খুব সুন্দর !' 

“তাতে কি! সুন্দরের ওপরই তো পাঁথবীর রাগ! 

'য্যাঃ! 

“দেখিস বড় হয়ে! 

অন্ন নিজের হাতটা পাঁসির হাতের উপর রেখে বলে, “আম কালো! 

'না না, তুমি ভালো ।' 

'ঠাকুরদা বলে, তুই বাঁচ্ছার, বোকা। তোর '্পাসি ছিল ব্বাদ্ধর রাজা! 

“কে বলে এ কথাঃ কে বলে? 

অন্ন পিসির এই আকাঁস্মিক উত্তেজনায় থতমত খেয়ে বলে, ঠাকুরদা! 
তোমার বাবা! 

“তোর ঠাকুরদা আমার বাবা হয়, জাঁনস এ কথা » 

“ওমা অন্ন গিল্রীর মত বলে, “তা জানবো না! ও বাঁড়র ঠাকুমা বলে 
দেয় নি বাঝ! আচ্ছা, তোমার বর নেই ? 

বর! আছে বৌকি-, 

নীচের তলায় তখন 'পিতপুলে গুপ্ত পরামর্শ চলছে। 

না, সৌদামিন্পী তৎক্ষণাৎ আসতে পারেন 'নি, তাঁর হঠাৎ বাত চেগেছে। 
কোমর নিয়ে উঠতে দেরি । বলেছেন, 'তুই যা আমি যাঁচ্ছ।' 

সাধন অবশ্য 'পাসর জন্যে অপেক্ষা করছিল না, অপেক্ষা করাছল বাপের 
জন্যে। বলল, “তুমি কিছু জিজ্ঞেস না করেই চলে গেলে ওবাড় ! 

নবকুমার নিজেকে সমর্থন করেন, “ীজজ্ঞেস করবার আর কী আছে? 
বুঝতেই তো পারলাম ঘটিয়ে এসেছেন একটা কিছ; ঝাড়ের বাঁশের গণ যাবে 
কোথায়? হয়ে উঠেছেন একখান অনুমান করাছ! 

সুবর্ণ এ বাড়িতে দুর্লভ ছিল, সুবর্ণ যেন একট: বিষগ্লতার আধারে ভরা 
একখণ্ড পরম মূল্যবান রয় ছিল, কিন্ত সহসা সববর্ণর দাম কমে গেল। 

বিতাঁড়ত হয়ে আশ্রয় নিতে এসে সুবর্ণ সব মূল্য হারালো । 

সুবর্ণ বিপদের মৃর্তি হলো। 


[র্গলতা ৮৩ 


সুবর্ণকে ছাত থেকে ডেকে পাঠিয়ে নবকুমার প্রশন করলেন, 'হঠাং এরকম 
লে এলি যে? 

স্বর্ণ মূখ তুলে বাপের 'দকে একবার তাঁকয়ে শান্ত স্বরে বললো, 'চলে 
তাআঁস দি, ওরা তাঁড়য়ে দিয়েছে! 

সাধন 'বিরস্তকন্ঠে বলে, 'তাঁড়য়ে অমাঁন দলেই হলো 2 

সুবর্ণলতা স্থিরভাবে বলে, হলো তো দেখলাম। সহজেই হলো। 
ললো- ছেলেরা আমাদের বংশধর, ওরা আমাদের কাছে থাক, তুমি তোমার মেয়ে 
নয়ে বাপের বাঁড় থাকো গে। আম বললাম, সবাই থাক। মেয়েও 
তামাদেরই ।' 

“তারপর 2 

'তারপর আর কি! গাঁড় ডাকলো, তোরঞ্গটা নিয়ে গাঁড়র মাথায় তুলে 
দলো, গাঁড়তে উঠলো, দরজায় নাঁময়ে দয়ে গেল, আম ঢুকে এলাম।' 

নবকুমার ধৈর্য ধরে সবটা শোনার শেষে ক্ষোভ আর ক্রোধের সংমিশ্রণে গড়া 
একটি প্রশ্ন করেন, ব্যস! ঢুকে এলাম ! বুঝতে পারাঁল না এটা ত্যাগ করা 2" 

'বুঝতে পারব না কেন? ওরা তো বলে-কয়ে_ 
রঃ 'তবে ; কেদে পড়ে বলতে পারা না, ছেলেদের ছেড়ে আম থাকবো 

করে? 

সবর্ণও ব্যঙ্গ আর ক্ষোভে গড়া একাট প্রশ্ন করে, “ছেড়ে থাকতে পারবো 
না, এ কথার কোনো মানে হয় £ ওটা তো একটা হাঁসির কথা! 

নবকুমার মূহূর্তের জন্য মাথাটা হেট করেন। তারপর বলেন, 'তা 
চাঁবষ্যংটা তো ভাবতে হবে ?, 

“ভেবে কি সাঁত্যিই কেউ 'কছু করতে পারে--? “বাবা” শব্দটা মুখে এসেও 
মাসে না, অনভ্যাসে মুখের মধোই যেন আটকে যায়, 'কত মেয়ে তো হঠাৎ 
বিধবাও হয়! 
হার হার! নবকুমার ক্রুদ্খকণ্ঠে বলেন, “যা মুখে এলো. বললেই হলো! 
4! কোথায় রইল মা, কোথায় রইল মেয়ে, প্রকাতিটি হয়েছে দেখাছ এক 
'চে চালা । মুখ "দিয়ে বার করাল কি করে এ কথা ! 

'সাঁত্য কা বলতে বাধবে কেন?" 

এবারু বোধ কাঁর জোর করেই বাবা শব্দটা উচ্চারণ করে সংবর্ণ। বলে, 
টি কি আমায় থাকতে 'দিতে হবে ভেবে ভয় পাচ্ছ, বাবা?" 
নবকুমার হঠাৎ বিচলিত হন। 

নবকুমারের চোখ 'দিয়ে একঝলক জল এসে পড়ে। সেই অবসরে সাধন 
লৈ ওঠে, ভয় পাওয়ার কথা হচ্ছে না। তবে আশ্চর্য হচ্ছি বৈকি! ষারা এই 
ত বছরের মধ্যে কক্ষনো পাঠাল না, তারা হঠাত ইচ্ছে করে__ 

এই সময়ে অন্ন কথা বলে ওঠে বাবার হাঁটূর নীচে থেকে শপাঁসর শাশুড়ীর 
ম কমে গিয়েছিল বলে শাশহুড়ীটা_ বলোছল, “বৌরাকছনদিন বাপের বাড় 
। আমার বোশ খরচ হবে না--”, তা পাস বলোছল, “কেন যাব ? যাব 
তুই ওরা রেগেছেগে বলেছে, “তবে চলে যাও থাকতে হবে না আমাদের 
তা সে প্চ্ডাবে রাজন হলে কষাতাট (ক বৃহল?" সাধন বলে, 'সেটা তো 
পকছু ছিল না। গকছুদন বোঁড়য়ে যেতে ! 















৮৪ সবর্ণলতা 


_ নবকুমার বলে ওঠেন, হ্যা, সেটা তো ভালোই হতো। আহাদ করে চলে 
এলেই পারতে। ফাঁকতালে দুাদন থাকা হয়ে যেত 

'ফাঁকতালে পেয়ে যাওয়া কোনো 'জানসে আমার লোভ নেই বাব! 

নবকুমার যেন একটু চমকে ওঠেন। কথাটা কেমন নতুন লাগে তাঁর কাছে। 

কিংবা নতুনও নয়, শুধু ভুলে যাওয়াটা একটা সুরের মত। সংবর্ণর মা 
1৮৮৮ 

কিন্তু এখন সময়টা সঞ্গীন। 

হারানো সুর নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নয়। যে মেয়ে তাঁর কাছে প্রায় 
মৃত. অথবা সম্পূর্ণ আঁপারাচিত, হঠাৎ সেই মেয়েকে রসে তুই চিরকাল 
আমার ঘর ভরে আমার বুক ভরে থাক” বলা শস্ত 

টুনা 
দিয়েছে, কিছুই তো জানা নেই! তা ছাড়া তিনি বাপ, মেয়ের হিতাহিত দেখতে 
হবে! মেয়ে যদি তেজ করে স্বামীর ঘর ত্যাগ করে-_ 

নবকুমার বিচলিত গলায় বললেন, “আর সব বৌরা কী বলোছিল ?' 

“আর সব বৌরা! সুবর্ণ বিদ্রুপের গলায় বলে, 'আর সব বৌরা তো বাপের 
০০:১০ মানমর্ধযাদা বোধ থাকলে তো! 

হয! যত মান-মর্ধাদা তোমার, কেমন? হবেই তো। মানী মায়ের মানা 

মেয়ে 'মা একটা সংসার ধ্বংস করে বসে আছেন, মেয়েও 

নবকুমার হঠাৎ চুপ করে যান। 

হঠাৎ পিছন ফেরেন। হয়তো চোখ দুটো আড়াল করতেই। 

সাধন এই সব ভাবপ্রবণতা পছন্দ করে না। সাধন বলে ওঠে, “ওসব কথা 
থাক বাবা । কথা হচ্ছে এ ব্যাপারের একটা 'বাহত দরকার 'কিনা-”' 

কনা মানে? নবকুমার উদ্দীপ্ত গলায় বলেন, 'করতেই হবে। তার 
বললো ত্যাগ করলাম, অমনি ত্যাগ হয়ে গেল, এ একটা কথা নাক? তাদের 
কাছে গিয়ে নাকে খং দিয়ে মাপ চাইতে হবে ॥ 

'নাকে খত 'দয়ে মাপ চাইতে হবে! 

একটা ধাতুপান্র যেন কথা কয়ে ওঠে। 

এ কী স্বর! কা ভয়ানক! 

এ স্বর যে বন্ড পাঁরচিত নবকুমারের। 

আশ্চর্য ! 


মায়ের মতনই হয়ে বসে আছে মেয়েটা? কেন, ভাইদের মত হতে পারত 
নাঃ কিন্তু এর ভার বইবার শান্ত নেই নবকুমারের। তাই নবকুমার তরল হবার 
চেম্টা করেন, 'তা হবেই তো। *বশুরবাড় বলে কথা! মায়ের মত খুব নাটক 
নভেল পড়বার অভ্যেস হয়েছে বুঝি ? তাই এত মান-মর্যাদার জ্ঞান! ওসব 
বৃদ্ধিকে প্রশ্রয় দিতে নেই। দু-চারটে দিন যাক, আম নিজে সঙ্গে করে গি্ 
শাশুড়ীমাগপকে তোয়াজ করে আসবো-_ 

'আমি তো আর কখনো ওখানে যাব না বাবা-+ 

শান্ত স্বর সুবর্ণর। 

মেয়ের কণ্ঠস্বরে উদ্বেগ অনুভব করেন নবকুমার, যাহোক করে বৃঝিণ 
পি দেখা যাক, ভুঁলয়ে-ভাঁলয়ে আনা যা 

! 


গবের্শলতা ৮৫ 


বলেন, শোনো ক্ষ্যাপা মেয়ের কথা! একেবারে কাটান-ছেড়ান করলে 
চলে? যাবো, বৃঝিয়ে-সুখিয়ে পাঁজ দেখিয়ে বরং আনবো একবার দু মাসের 
জন্যে। এ একটা ভাল হলো, শাপে বর হলো। আসা-যাওয়া ছিল না, আসা- 
যাওয়ার পথ খুললো-_” 

সুবর্ণ ছাত থেকে নেমে এসে বসোঁছল 'সপড়র ধাপে । হঠাৎ উঠে দাঁড়য়ে 
বলে, "তুমিও তাহলে আমায় তাঁড়য়ে দিচ্ছ বাবা ?, 

তাড়িয়ে! ছি ছি, এ কী কথা! 

নবকুমার বলেন, “সাধন, শুনাছস তো বোনের কথা ?' 

'শুনাছি বৌক।' সাধন বলে, “তবে মনে হচ্ছে মায়া-মমতার প্রন এখন 
নয়। মেয়েদের যেটা আসল আশ্রয়-_' 

আসল আশ্রয়! 

স্বর্ণ হেসে উঠে বলে, “আসল আশ্রয়ের দাম তো ধরা পড়ে গেল দাদা! 
এক নিমেষেয় এঁদক-গঁদক, বলে দিল  বিদেয় হও। তব্‌ সেই মাশ্রয়কেই আসল 
আশ্রয় বলে অকিড়ে থাকতে হবে 2, 

সাধনের বৌ সৃধাীঁরবালা এই সব কথাবার্তার মধোই তাড়াতাড়ি জলখাবারের 
আয়োজন করে ফেলোছল। গৃহ-প্রত্যাগত স্বামীর জন্যও বটে. আগন্তুক 
ননদের জম্যেও বটে। 
| দুখাঁন ধবধবে কাঁসার রেকাঁব করে ধরে এনে দেয় সে দুটো মানুষের 
সামনে । আগে আসন আনে । আনে জলের গ্রাস। 
ূ শবশুর এ সময় খান না, অতএব তাঁর জন্যে প্রয়োজন নেই। 
| স্বর্ণ সেই রেকাবির দিকে তাকায়। 

বড় বড় দুটি রসগোল্লা, দুখানা করে অমৃতি, আর দৃখানা করে নির্মাক। 
সহসা হেসে ওঠে সুবর্ণ। 
জোরে জোরে হেসে বলে. 'কী বৌ2 বিদেয়ের ইশারা নাকি 2 বাঃ! তুমি 
বেশ বৃদ্ধিমতশ !? 
নবকুমার বৌয়ের মুখের দিকে তাকান। ৪ 
গৃহণীহীন গৃহের গৃহণী। 
ভয় একটু করতেই হয়। 
তাই তাড়াতাড়ি বলেন, ও কি কথা সুবর্ণ 2 কতাঁদন পরে এসোছস তুই. 
কটু 'মাম্টমুখ করাঁব না? 
বাবা । তার চেয়ে তুমি বরং একটা গাঁড় ডাকো ।' 

'গাঁড় ডাকো! 

নবকুমার বাস্ত গলায় বলেন, “এখুি, গাঁড়, ডাকবো মানে» আজই আম 
ণিনা! এক্ষুনি সদুদ এসে যাবেন, তোর সেই পিসি রে! মনে আছে 
নাক ভূলে গোছস? বেতো মানুষ, মালিশ করাচ্ছে, বললো. “যাচ্ছ 
খুনি।” আজ আর নয়, বললাম তো দুটো দিন যাক, তারপর সঙ্গে করে নিয়ে 
গয়ে সাত হাত নাকেখৎ দিয়ে দু মাস নিয়ে আসবার জন্যে অনুমাত চেয়ে 













দি 


বা। 
কিন্তু সুবর্ণ কি হঠাৎ কালা হয়ে গেল 2 স্ববর্ণ শুনতে পেল না এসব. 
থা১ তাই সেই আগের মত ধাতব কণ্ঠে উচ্চারণ করে উঠল, 'দাদা' একটা গাঁড় 


৮৬ সংবর্ণলতা 


ডাকো-_' 

সাধন এবার বোধ কার ঈষৎ সঙ্ফাঁচত হয়। বলে, আজই এই দণ্ডে যাবার 
কণ দরকার? বরং আজ একবার আঁম ওদের ওখানে গিয়ে, 

সাধনের কথা শেষ হয় না, একপাশে দাঁড়য়ে থাকা অন্ন বলে ওঠে" “কেন 
খালি খাল বলছো বাবা? পাঁস মরে গেলেও আর *্বশুরবাঁড় যাবে না-১ 

“বটে? বটে, রাগে আগুন সাধন মেয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় 
বাঁসয়ে দিয়ে বলে, 'যাবে না! বলেছে তোমার কানে, ধরে! পাজী ডে'পো 
মেয়ে! হচ্ছেন তোর আর একখানি! 

“আহা থাক থাক, কচি মেয়েটাকে কেন শুধু শুধু” নবকুমার বলেন, 
'কৃটকচালে কথা রাখ দিঁকি, নে খা" দাদার সঙ্জগো বসে খেয়ে নে। সেই তোর 
ননশীর দোকানের রসগোল্লা । ছোটবেলায় যার জন্যে জিভে জল পড়তো তোর। 
ননী বুড়ো এখনো- 

ননীর নামে নরম হতে পারতো সুবর্ণ। ছেলেবেলার উল্লেখে কোমল। 

কিন্তু কিসে থেকে যে কি হয়! হঠাৎ সুবর্ণলতা একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে 
বসে। 

আচম্‌কা বসে পড়ে নিজের কপালটা ঠাঁই' ঠাঁই করে দেওয়ালে ঠুকতে 
ঠুকতে বলে, 'কেন? কেন তোমরা সবাই' মলে আমাকে অপমান করবে ? কেন? 
কেন? 

[ভিতরের অব্ন্ত যন্রণাকে প্রকাশ করবার আর কোনো ভাষা খুজে পায় না 
বলেই সুবর্ণলতা ওর এই. এতাঁদনকার 'বিবাহত জাবনের পৃজীভূত সমস্ত 
প্রশনকে এই একটিমাত্র শব্দের দ্বারা ব্যন্ত করতে চায়। 

হয়তো বা শুধু তাও নয়, সমস্ত অবরুদ্ধ নারীসমাজের নিরদ্ধ প্রশনবে 
মুন্ত দেবার দুর্দমনীয় বাসনা এটা, যা সত্যকার কোনো পথ না পেয়ে এমন 
উন্মত্ত চেষ্টায় মাথা কুটে মরে! 

হয়তো বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধেও সভ্যতা আর প্রগাঁতির চোখ-ঝলসানো 
আলোর সামনে সাঁজয়ে রাখা রঙচঙে পুতুল মেয়েদের পিছনের অন্ধকারে 
আজও কোটি কোট মেয়ে এমনিভাবে মাথা কুটে কুটে প্রশ্ন করছে-কেন: 
কেন? 

, স্বর্ণলতার যুগ কি শেষ হয়ে গেছে £ 

কোনো ফুগই কি কোনোদিন নিশ্চিহ হয়ে শেষ হয়ে যায় ? 

হয়তো যায় না! 

হয়তো বৃদ্ধা পৃথিবীর শীর্ণ পাঁজরের খাঁজে খাঁজে কোথাও কোনোখানে 
আটকে থাকে ফাঁরয়ে যাওয়া যুগের অবাশিষ্টাংশ, এখানে ওখানে উপক দির 
তার সন্ধান মেলে। 

যেখানে মাথাকোটার প্রীতকার নেই। যেখানে লক্ষ লক্ষ 'কেন' ছন্টোছা 
করে মরছে। 

' তবে দৃশ্যমান মাথাকোটার প্রাতকার হয়। 'ও কি ও 'ি' বলে ধরে ফেলে? 
নবকুমার। সাধন জল এনে কপালে ছিটোয়। সুধীরবালা ঘোমটা দিয়ে বাতা 
করে। 

, আর ঠিক এই সময় সৌদামনী এসে দাঁড়ান ভাঙা কোমর নিয়ে। 


১১ 


তাসের আন্ডা রোজই বসে, সন্ধ্যে থেকে রাত দশটা-এগারোটা পর্যজ্ত চলে। 
বাড়র মেয়েরা হাঁড়ি আগলে বসে থাকতে থাকতে হয় 
1ঝমোয়, নয় ঘ্াময়ে নেয় এক পালা। 

তবে নিশ্চন্তের ঘুম তো নয়, কখন যে বৈঠকখানা 
থেকে হুকুম আসে চারাঁট পান সেজে পাঠিয়ে দিতে, 
তার তো ঠিক নেই! 

বৌরা ঘুমিয়ে পড়েছে খবর পেলে তো গর্দান যাবে। 

তাছাড়া ভাত গরম রাখার উদ্বেগ তো আছে। 
উন্নের উপর হাঁড় 'দমে' বাঁসয়ে রেখে রেখেও তো বেদম 
ঠাণ্ডা মেরে যাবে। আর অতক্ষণ তাস 'পাঁটয়ে এসে ক্ষুধার্ত পুরুষ বাদ দেখে 
ঠান্ডা ভাত, তা হলে মেজাজ ঠাণ্ডা রাখা তাদের পক্ষে শন্ত বৌকি। 

তবু ছুটির দিনের সঞ্গে অন্য সব দিনের তুলনাই চলে না। ছুটির দিনে 
আন্ডাটা বসে মধ্যাহন-ভোজনের পরমূহূর্ত থেকেই, চলে মধ্যরা্ পর্যন্তি। 

পান সাজতে সাজতে বৌদের এবং তামাক সাজতে সাজতে ছোট ছেলে- 
গুলোর প্রাণ বেরিয়ে যায়। 

মুহ;ম্হ্‌ হুকুম আসে, আর তামিল করতে তিলার্ধ দের হলেই আসে 
হৃওকার। 

সুবোধ বাদে বাক তিন ভাই তাসের পোকা । সুবোধ একটু ঘুম-কাতুরে, 
সকাল সকাল খেয়ে ঘুমোয়, আর ঘুমোতে যাবার আগে বলে যায়, তাস দাবা 
পাশা, তিন কর্মনাশা! তোদের এই এক কর্মনাশা নেশায় ধরেছে !' 

প্রভাস তাচ্ছিলোর হাসি হেসে বলে, “তা বটে। এর থেকে ঘুমটা অন্কে 
মূল্যবান বস্তু” কি বল দাদা? 

সুবোধ লজ্জিত হয় না, বলে, একশোবার! ঘুম হচ্ছে মগজের আহার। 
দেহের যেমন অন্ন, মগজের তেমান ঘুম! 

প্রভাস অবশ্য এই নতুন জ্ঞানলাভে ধন্য হয় না। বলে, 'আতভোজনটাও 
ভাল নয়।' 

সুবোধ হাসে, “আত মানে? ভগবান ক'ঘন্টা দিবালোক দিয়েছে, আর 
ক'্ণ্টা অন্ধকার সে হসেব কর?, 

তুমি কর!' বলে প্রভাস। 

প্রভাসের কথাবার্তার ধরনই ওই। 

গুরুজনের সঙ্গে বাক্যালাপে যে নম্ুতার নীতি বল্পবং আছে, প্রভাস সেটা 
কদাচিৎ মানে। প্রভাসকেই সকলে সমীহ করবে এই নীতিই চালু হয়ে গেছে 
সংসারে। 

এমন কি মুস্তকেশীও তাঁর উাকল-ছেলেকে রীতিমত সমীহ করছেন, ওর 
বৌয়ের দোষের 'দকে দূষ্টিক্ষেপটা কম করছেন, এবং ছেলেকে প্রায়শই 'তুমি' 
করে কথা বলছেন। 

প্রভাস যাঁদ তাস খেলার বিরোধী হতো, নির্ঘাত বাঁড়তে তাসের আড্ডা 
বসবার স্রপ্প কেউ দেখত না। কিন্তু প্রভাসই এ যজ্ধের হোতা"! অতএব আড্ডা 
ক্মশই আয়তনে বাড়ছে, দর্শক-বন্ধৃর সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। 





৮৮ সুবর্ণলতা 


ছুটির দিনে পার্শমার জোয়ার। 

তবে অন্য ?দনেও কম নয়। 

প্রবোধ যখন ঘোড়ার গাঁড় করে মেজবৌকে নির্বাসন দিতে গেল, তখন 
প্রভাস বন্ধুদের মধ্যে থেকে খেলোয়াড় নির্বাচন করে বাজার বজায় রেখোঁছল। 
তার মধ্যে যথারণীত পান দু ডাবর শেষ হয়েছে। রাতও প্রহর হয়-হয়। 

প্রবোধ বৌকে পেশছে 'দয়ে এসে মা'র কাছ থেকে ঘুরে সবে জুং করে 
বসেছে। 

এমন সময় দরজায় গাঁড় থামার শব্দ। বিতাঁড়ত হয়ে তাঁড়ত আবার 

এসেছে। 

কিন্তু দার্জপাড়ার গাঁলর মধ্যেকার এই রুদ্ধ কপাটের ভিতরাপঠে প্রবেশ- 
অধিকার কি সহজে মিলোছল সংবর্ণর ? 

মেলে নি। 

মাতৃভন্ত ছেলে প্রবোধ সদ্য জমে-ওঠা খেলায় 'জল' ঢেলে *বশুরের সামনে 
এসে দরজা আটকে দাঁড়য়ে ঘাড় গুজে ঘোঁং ঘোঁং করে বলোছিল, “না, এমাঁন 
ঢুকে পড়া চলবে না, আমার সাফ কথা, আমার মায়ের পায়ে ধরে মাপ চাইতে 
হবে। 

খেলা ফেলে প্রভাসও উঠে এসে বলোছল, “তালুইমশাই ক মেয়েকে এক 
সধ্ধ্েও দ্যাট খেতে দিতে পারলেন না? 

“পারলাম নাই বলতে হবে--* বলে গাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন নবকুমার। 

ক্ষুব্ধ ক্লন্দন-বিজাঁড়ত সেই কণ্ঠস্বর ভিতরের ইতিহাসের আভাস প্রকাশ 
করল। 

সুবর্ণ খায় নি। জলট[ুকু পর্যন্ত ন্যা। 

গাঁড়তে ওঠার সময়ে বলোছিল, “ক দরকার বাবা? দাঁজপাড়ার সেই 
গাঁলটাতে যাঁদ আবার গিয়ে ঢুকতেই হয়, তাদের হাঁড়ির অন্ন খেতেই হয়, তবে 
আর একবেলার জন্যে জাত নম্ট কার কেন ? 

সৌদামিনী গালে হাত 'দয়ে বলোছলেন, “তুই যে দোখ তোর মায়ের ওপর 
গোছস সবর্ণ বাপের ঘরে খেলে তোর জাত যাবে 2 

“সময় বিশেষে তাও যায় বোকি 'পাঁসমা।, .যাক গে বাবা, গাঁড় একখানা 
ডাকো, বোঁশ রাত হবার আগেই পেশছে দিয়ে এসো। অনেক কষ্ট তোমাকে 
পেতে হল এই যা! 

তা দরজা আটকানোর নাটকটা পাড়ার লোকে দেখোঁছল বোক। 

যারা তাস খেলাছল তারা, যারা আশেপাশের জানলায় মুখ 'দয়ে দাঁড়য়ে 
ছিল তারা । আর নিজ নিজ বাড়ির সামনের রোয়াকে যারা বসে ছিল গা খুলে, 
বাঁড়র বাচ্চা মেয়েদের একটা “পাঁচ-ছ' হাতি শাঁড় পরে' তারা তো বটেই। 

শেষ পর্যন্ত সে নাটকে যবাঁনকাপাত করলেন স্বয়ং মুস্তকেশীই। মুক্ত" 
কেশশর তো আর এখন আব্লুর বালাই নেই, তাই দরজার কাছে এসে বলোছিলেন, 
“দোর ছাড় পেবো, লোক হাসাস নে। মেজবৌমা, যাও বাছা বাঁড়র মধ্যে ঢুকে 
পড়ো, আর কেলেওকার বাঁড়ও না।' 

না, সদন আর মুখে মূখে চোপা করে নিন সুবর্ণ। বলে নি, 'কেলেঙ্কারাটি 
তো ঘটালেন আপাঁনই ! 

সুবর্ণ শুধু ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। 


সুবর্ণলতা ৮৯ 


বাবার দিকে আর 'জকায় 'নি। 

মুস্তকেশী উদাত্ত গলায় বলোছলেন, 'কত ভাগ্যে বেয়াইয়ের পায়ের ধুলো 
পড়ল, দোর থেকে ফিরে যাবেন বেয়াইমশাই ১ একটু জল খেয়ে যেতে হবে--)' 

'আজ থাক, আজ থাক-।' বলে বোধ কাঁর চোখের জল চাপতে চাপতেই 
গাঁড়কে চালাতে বলোছিলেন নবকুমার। 


'খেলাটাই মাটি হল আজ্ত, যত সব ঝামেলা-_' বলে প্রভাস ফের গিয়ে তাস 
ভাঁজতে বসলো, চক্ষুলজ্জার দায়ে অগত্যা প্রবোধও। 

মনের মধ্যে একটা আহমদের ঢেউ বহীঁছল বৈকি। 

ঝোঁকের মাথায়, আর “স্দৈণ' অপবাদ ঘোচাতে করে বসোঁছল কাজটা, মনের 
মধ্যে তো বিছে কামড়াচ্ছিল! 

যে সাংঘাতিক সংহরাশি মেয়েমানুষ, কে“বলতে পারে এ বিচ্ছেদ সাঁতাই 
চরাবচ্ছেদ হল কনা! তেমন কাণ্ড ঘটলে কতদৃর জল গড়াতো কে জানে ? 
শম্বতীয় পক্ষ” এসে ক আব ভাঙ্মু-কানূকে দেখতো ? না চাঁপার সঙ্গে বনিয়ে 
থাকতো : 

সে দুরভাবনা গেল। 

এখন মান-ভাঙানোর খাটুনি। 

রাতটা ওতেই যাবে আর ক! 

কিন্তু সে রাতটা কি ওতেই গিয়েছিল প্রবোধের ? 

সেই রান্রের মধ্যভাগে ভয়ানক একটা শোরগোল ওঠে ন বাড়তে ? 

হ্যাঁ, ভয়ানক শোরগোলই উঠোছল সুবর্ণর শাশুড়ীর আঁফমের কৌটো 
চুর করে মস্তি পাবার হাস্যকর প্রচেষ্টায়। 

হলো না কিছুই, হলো শুধু ধান্টামো। তবুও কেলেগকারিটা তো হলো। 
ডান্তার আনতে হলো সেই মাঝরান্তরে, আর থানা-পুলসের ভয়ে ডান্তাবকে 
দর্শনীর ওপর আবার ঘুষ দিতে হলো । যাঁদও গেলাস গেলাম নুনজল খাওয়ানো 
ছাড়া আর কিছুই করলো না ডান্তার। 

সে নিলজ্জ ধৃন্টতার প্রসঙ্গে জীবনভোর অনেক লাঞ্থনা-গঞ্জনা খেতে 
হয়েছে সুবর্ণকে। 

এমন কি যে ভাসুর কখনো কিছ বলে না, সে পর্যন্তি বলেছে, “বস্তা বস্তা 
নাটক নভেল পড়ে এইটি হয়েছে আর কি! 

তা সাত্যই হয়তো পড়েছে সুবর্ণ, বস্তা বস্তাই পড়েছে । সেই বস্তা বস্তার 
কল্যাণে বস্তা বস্তা কথাও হয়তো শিখেছে' কিন্তু আফিমের মান্রাটা কতখানি 
হলে সেটা ধাত্টামো না হয়ে ম্যস্তিফলপ্রস- হয়, সে কথা শেখে নি! 

তা যাঁদ 'শখতে পারতো, তা হলে সবর্ণলতার জশবন-নাট্যে সেখানেই 
যবনিকা পড়ে যেত। 

বিষের মাত্রা সম্পর্কে কোনো দিন কোনো জ্ঞানই যাঁদ থাকতো সুবর্ণ- 
লতার! কিন্তু ওকথা থাক্‌ । এখন প্রবোধচন্দ্র আর সুবর্ণলতার যে বৃহৎ ফটো- 
গ্রাফ দুখানা মুখোমুখি টাঙানো রয়েছে ওদের বড় ছেলের ঘরে. তাদের বেষ্টন 
করে ফলের মালা দুলছে। 

প্রাত বছর শ্রাদ্ধবার্ধকীতে শুকনো মালা বদলে নতুন মালা দেওয়া হয়। 

সার্থক জীবনের প্রাতিমৃর্তি ওই ছবিটা দেখে কে বলতে পারবে গায়ে 


৭১০ সবর্ণলতা 


কেরোসিন ঢালা বাদে আন্ত হবার বত রকম পমাত আছে সবই একবার 
করে দেখে নিয়েছে মানুষটা! 

কল্তু আশ্চর্য, আশ্চর্য! 

শেষ পর্ন্ত নটি থেকে গিয়েছে সমস্ত পদ্ধাততেই। হয়তো ওটাই 'বাঁধ- 
লাপ সবর্ণর। নইলে কে কবে শুনেছে ছাত থেকে লাফিয়ে পড়েও বাঁচে 
মানুষ! 

আঁবাঁশ্য রান্নাঘরের ছাত, একতলা, ন্চি-তবু ছাত তো! 

পড়োছিল সেই ছাত থেকে! 

টির রর রর চাঁব থাকতো মুন্ত- 


8 

কিছু না। 

যোগে গঞ্গাস্নানের বায়না নিয়ে শাশুড়ীর সঙ্গে চুপ চুপি গঞ্গাস্নানে 
য়ে দেখেছে- হয় নি। 

লাভ হয় নি! 

কেউ কোনোদন এ সন্দেহ কবে নি, সুবর্ণ শ্রেফ তাঁলয়ে যাবার জন্‌ 
আপ্রাণ চেস্টা করছে। 
' তাই চেজ্টা সফল হতো না। 

সঙ্গে যারা যেত তারাই সহসা ওর হাত ধরে টান দিত, 'ষাচ্ছ কোথায় ? 
এই ঘাটের কাছে কাছে থাক না? অত এগোবার দরকার কি? 

গকল্তু এতই বা আতন্ঠ কেন সুবর্ণলতা ? 

উমাশশী, গিরিবালা, বিন্দু, এরাও তো থেকেছে ওই একই পাঁরবেশে ? 
কই, ওরা তো' রাতাঁদন মরণের বাসনায় উদ্বেল হয় নি? 

হয়তো সাঁত্যই মূল কারণ ওই বস্তা বস্তা নাটক-নভেল! আর তো কারণ 
দেখা যায় না! 

ণকল্তু সেই বস্তা বস্তার আমদানিকারক ছিল কে? ওই ধুগের থেকে 
পণ্টাশ বছর পিছিয়ে থাকা বাঁড়িটার অন্ধকার অল্তঃপূরে এসে ঢুকতো তারা 
কোন্‌ পথে 2 নতুন নতুন বই আর পত্র-পাঁতকা এসে এসে ঢুকতোও তো! 

চলতি সাহত্যের ওই খবরটা কি সে রাখতো 2 ওই যোগানদার 2 নাকি 
সুবর্ণলতার 'নর্দেশে খুজে আনতো 2 

স্বর্ণলতার নিদেশ! 

সুবর্ণলতা আবার 'নর্দেশ দিতে যাবে কাকে? 

তা ছিল একজন। 

যে নাঁক স্বর্ণলতার নির্দেশ মানতে পেলে কৃতার্থ হতো। 

ক্ষ্যাপাটে ক্ষ্যাপাটে ছেলেটা, ভালো নামের ধার কেউ ধারতো না, 'দুলো 
নামেই বিখ্যাত। স্কুলে ক্লাসে প্রমোশন পাওয়া ছাড়া আর কোনো ব্যাপারে 
হারতে দেখা যেত না তাকে । অসাধ্য সাধন করার ক্ষমতা ধরতো দৃলো। 

সৃশীলার কেন এক দূর সম্পকেরি ভাগ্নে, সেই সূত্র ধরে এদের বাঁড়টাকে 
বলতো মামার বাঁড়”, সুবর্ণকে বলতে। “মাম । 

সূবর্ণকে বই যোগাবার ভার 'নিযোছল সে। 

কেন, নির়োছিল কে জানে! 


সবর্ণলতা ৯৯ 


হয়তো তার ক্ষ্যাপাটে বাম্ধতে অপরকে খুশি করবার প্রেরণাটাই এর 
কারণ। সবাইকে খুশি করতে সাধ হতো তার। তা ছাড়া 'মেজমামী'র উপর 
অহেতুক একটা টান ছিল দুলোর। 

বোধ কারি হৃদয়ের ক্ষেত্রে কোথায় কোনোখানে তারা ছিল সমগোন্র। এ 
বাঁড়র মেজবৌও যে একট: ক্ষ্যাপাটে, এ তো সর্বজনাবাঁদত। 

কোথা থেকে যে “দৃলো” নানাবিধ বই কাগজ সংগ্রহ করে আনতো দুলোই 
জানে। সবর্ণলতা প্রশ্ন করলে. বলতো, 'মাল্কবাবুর বাঁড় থেকে আঁন। 
মাল্পনত্বাব্‌ যে সন্ধল বই কেনে গো! টাকার তো আঁধবাঁদ নেই ওনার! আর 
বলে, “দুলো রে, লক্ষত্রী সার্থক হয় সরস্বতীকে কিনে”।, 

কণ সূত্রে যে দুলো সেই লক্ষশীর বরপূত্র ও সরস্বতণর 'প্রয় পুর মাল্লিক- 
বাবুর বাঁড়তে ঢুকে পড়বার ছাড়পন্র পেয়ে গিয়োছল, সে কথা বোধ হয় দূলো 
নিজেই ভুলে গেছে। তবে দেখা যায় দুলোর সেখানে অবাধ গাঁতাবাধ। দুলো 
বথেচ্ছ বই আনে। 

ব্যাপারটা সন্দেহজনক। 

সুবর্ণরও হয়েছিল সন্দেহ । চুরি নয় তো? 

সে সন্দেহ ব্যস্ত করোছল সুবর্ণ অন্য প্রশ্নে। বলোছল, “তুই তো নিজে 
পড়তে লিখতে জানিস না, বই চাইলে রাগ করে না? 

দুলোকে কেউ কখনো 'তুমি' করে না। 

সবর্ণও করলো না। 

বলল, “তুই তো পাঁড়স না? ওরা রাগ করে না? 

দুলো মেয়েদের মত গালে হাত 'দিত, 'রাগ করবে, কী বল? যারা বই 
পড়তে ভালবাসে. মাল্লকবাব্‌ তাদের খুব ভালবাসে । মেয়েছেলেরা পড়লে তো 
আরোই। বলে, “মেয়েছেলেরা যতাঁদন না মানুষ হচ্ছে, ততাঁদন আর আমাদের 
দেশের দুঃখু ঘৃচবে না।" ওনার বাড়ির সবাই তো' 'ক' অক্ষর গো-মাংস ! বলে, 
“তুই একটা আমার ভক্ত জুটাল, তাও মুখ্য। আমার কপালই এই।" আমি 
বদি পড়তে ভালবাসতা, পাল্িকবাধ: বোর হয় আলমার সন্ষে: সব বই দিয়েই 
[দিত আমায় !...আচ্ছা মেজমামী, রাতাঁদন যে “দেশের দুঃখু দেশের দুঃখুটা” 
করে মল্িকবাব্্‌, দেশের দুঃখুটা কা? 

'আছে দুখ, তুই বঝাব না" সুবর্ণ উত্তোজত হত. দেশের কথা আর 
ক বলেন তোর মাল্লকবাবু 2, 

'কত বলে! একগাদা লোক আসে, আর ওই গপপোই তো হয় বৈঠক- 
খানায়! 

“তুই শুনিস না সেসব কথা ?' 

সুবর্ণলতার স্বর চাপা* উত্তেজিত! 

দুলো মেজমামীর এই ভাবের কারণটা বুঝতে পারে না। হেসে ফেলে বলে, 
শুনবো না কেল? এক কান দিয়ে শুনি, এক কান 'দিয়ে বার কার।' 

“কেন তা কারস? মনে রাখতে পারিস নাঃ 

দুলো অবাক হয়ে বলে, শোনো কথা, আমার কিসের দুধ হে ওই শখ 
করে টেনে আনা ঙখুকে বরণ করতে বসবো? এ তো বেশ 

'না, বেশ নেই! ৯ তত সঞ বুঝতে 
হবে সেটা।' 


৯২ সুবর্ণলতা 


দুূলো মনে মনে বলতো, মাল্লাকবাব আর আমাদের মেজমামশীট দেখাছ 
একই জাতের পাগল। তারপর বলে বসতো, সিএস 
বলে। তোমাকে, যাঁদ দেখতে পেতো, নর্থাত খুব ভালবাসতো। দেখার ইচ্ছেও 


রয়েছে_ 
সবর্ণর গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। 


সুবর্ণ তাড়াতাঁড় বলে ওঠে, দূর বোকা ছেলে। বলতে নেই ও-কথা। 
খবরদার আর ও-কথা কখনো মুখে আনিস নি" 


'বলাছল' “মের়েমানূষ হয়ে এত শন্ত শন্ত বই এত তাড়াতাঁড় পড়ে ফেলে, 
দেখলে আহনাদ হয়। তোর মেজমামীকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে দুলো” ! 

চুপ চুপ, একদম চুপ! 

ক্ষাপা ছেলেটাকে থামিয়ে দিত স্বর্ণ কিন্তু থামাতে পারতো না নিজের 

দুরন্ত বাসনার ঢেউকে। 

বেলা বই-ভাঁর্ত আলমার সাজানো সেই স্বগয় 
ঘরটাকে, আর সে ঘরের মালিককে দেখতে 2 যাকে সুবর্ণ দেবতারূপে কম্পনা 
করে রেখেছে £ 

ত দেবতা ছাড়া আর ক? 

যে ব্যান্ত বোঝে লক্ষীর সার্থকতা সরস্বতীকে আহরণ করায়, আর 'দেশের 
দুঃখ" যার মনকে স্পর্শ করে, দেবতাই সে! 

সংসারে এইসব মান্যও আছে। 

তান নাক এই 'দুঃখ' নিয়ে আলোচনা করেন, বন্তুতা দেন 
বাঁড়ৃয্যে, বিপিন পাল এদের সঙ্গে নাকি চেনা-জানা আছে তাঁর, ক ৪০৯৮৬ 
নাক অনেকবার দেখেছেন 'তাঁনি। কাঁ অলৌকিক কথা! 

অথচ গর বৌ নাকি ওসব দ্চক্ষের বিষ দেখে । নাকি রাতাঁদন বাড়তে 
গোবরজলের ছড়া 'দয়ে বেড়ায় সে, ভিজে কাপড় পরে। 

আশ্চর্য! আশ্চর্য! পাঁথবীটাই কি তাহলে এই রকম? 


একখানা পাঁন্রকায় প্রবন্ধ পড়ছিল সুবর্ণ, 'ময়াল সাপের কথা' নিয়ে। 

ময়াল সাপ নাকি 'হমশতল আঁলঙানে গায়ের উপর পাকে পাকে এট 
বসে, চোখে ধরা পড়ে না এমন, আস্তে আম্তে চাপ দিতে থাকে, সে চাপ ক্মশ 
বজ্রকঠিন হয়ে বসে।...সেই অদৃশ্য নিষ্ঠুর পেষণে বাইরের চেহারাটা আঁবকল 
রেখেও-চর্ণ করে ফেলে অধিকৃত শিকারের হাড়গোড় । 

পড়তে পড়তে উত্তেজিত হাঁচ্ছল সুবর্ণ, অন্য আর একটা কিসের সঞ্গে 
যেন ওই সাপটার প্রকাতর মিল খুজে পাঁচ্ছল। 

ঠুক ঠক করে জানলায় টোকা পড়লো। 

উৎফুল্ল মুখে উঠে বসলো স্বর্ণ। 

আবার বই! 

দুলোর ওপর কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে । সুবর্ণর এতটা বয়সে একমানর 
্ষ্যাপাটে ছেলেটার মধ্যে অকারণ ভালবাসার প্রকাশ দেখেছে। 

জানলায় টোকা, এটা বই আনার সঞ্কেত। একতলার একটা গাঁলর পাশের 


পবন 1৩। ৯৩ 


ঘর বেছে নিয়েছে সুবর্ণ দৃপূরবেলার বিশ্রামালয় হিসেবে। 

এখান থেকে এই পদ্ধতিটায় কাজ সহজে হয়। দুলো জানলায় টোকা দেয়, 
সুবর্ণ জানলা খুলে দেয়, সেই পথে বই প্রেরণ করে দুলো। 

এ ছাড়া উপায় কি? 

নিত্য এত নাটক-নভেল সরবরাহ করছে দেখলে দুলোকে 'পাঁশপেড়ে 
কাটবে' না এ বাঁড়র গিল্নী আর তার ছেলেরা ? 

এ ঘরটা প্রকৃতপক্ষে বাঁড়র যত আপদ-বালাইয়ের ঘর! 1সপড়র ওপর 
চিলেকোঠা তো নেই, তাই এই প্রায়-পাতাল ঘর! 

1ভতরের অন্ধকার-অন্ধকার দালানের দিকে একটামান্র দরজা, আর িছনের 
অন্ধকার-অন্ধকার গাঁলর দিকে দুটো জানলা । আয়তনের অনুপাতে যাদের 
'গবাক্ষ' বলাই সঙ্গত। 

. এই জানলা 'দয়ে সরু যে দুটি আলোকরেখা ঘরে প্রবেশ করে' সেই হচ্ছে 
সুবর্ণর আলোকবার্তকা। 

ওইটুকুকে সম্বল করে যে পড়তে পারে, সে বোধ কাঁর সুবর্ণ বলেই। 

একদা ভাঁড়ারঘর থেকে একটা নড়বড়ে চৌকি বাতিল করে এ ঘরে ফেলে 
রাখা হয়েছিল, সেটাই সুবর্ণর রাজশষ্যা। 

“এ ঘরটা বেশ ঠান্ডা, গোলমাল নেই' এই ছ্‌তো দোঁখয়ে দুপুরে এই ঘরেই 
পড়ে থাকে সুবর্ণ । 

না, এখন আর দুপুরের অবসরে সুপুৃরি কাটা কি চাল-ডাল বাছার কাজ 
করতে হয় না বৌদের, তাদের মেয়েগুলো তো ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে, তারাই 
করে। 

তা ছাড়া আর যে করে সে করে, সুবর্ণ কিছুতেই না। সুবর্ণত্ এই 
মৌতাতটি চাই। 

চৌকির মাথার কাছের জানলা খুলে বই পড়াঁছল সুবর্ণ, বাঁক এানলাটা 
বন্ধ ছল। টোকা পড়েছে সেটাতে । 

সহাস্য মুখে চৌকি থেকে নেমে এসে জানলাটা খুলে 'দিয়ে ছাপ ছাপ 
বলে, “আবার পেয়োছস আজ ?' 

“চারটে-_» দুলো বিগঁলিত আনন্দে বইগুলো বাড়িয়ে ধরে। 

দুলোর মুখে যেন একটা চাপা আনন্দোচ্ছবৰাস! 

এ কী শুধুই বইয়ের আহয্াদ। 

সরু জানলা, ঘে'যা্েষ গরাদে , একাঁটি একটি করে বই টেনে নিতে হয়। 

বইগুলো শেষ করেই বলে ওঠে দুলো, “কপাটটা হাট করে খুলে এখানটায় 
দাঁড়াও তো মেজমামণী! 

“কেন রে? 

বিস্মিত প্রশ্ন করে সুবর্ণ । 

দুলো ঠোঁটে আঙুল ঠোঁকয়ে নিশ্ুপের ইশারা করে। নিচু গলায় বলে, 
'আছে মজা, দাঁড়াও 1 

কাঠের গরাদেতে মুখটা চেপে ধরে সংর্ণ বাইরেটা দেখবার চেষ্টা করে, 
কোথায় দুলোর মজ্জা' অবস্থান করছে। 

ইতস্তত চাইতেই চমকে উঠলো । সিপ্দুরের মত লাল হয়ে উঠলো মুখটা । 

পরক্ষণেই মাথাটা সাঁরয়ে নিয়ে চৌকির উপর এসে বসে পড়ল! 


৯৪ সুবর্পলতা 


এই মজা! 

বোকা ছেলেটার এ কণ কান্ড! 

কাকে ডেকে এনেছে ও জানলার 'নিচেয় 2 
সন্দেহ নেই ওই মাল্লীকবাবৃ! 

না বলে দলেও বুঝতে অস্যাবধে হয় না। 
ছি ছি! এ কী করে বসলো দুলো! 


অথচ অনেক বাদ্ধি খাটিয়ে এই ঘটনাটি ঘাঁটয়ে বসেছে দুলো। 

এই দুটো মানুষই যে পরস্পরকে দেখতে পেলে খুশি হবে, এমন একটা 
ধারণা জল্মে গিয়োছল তার, অতএব ভেবে নিয়োছল সেই খুশিটা করতে হবে। 

চালাক একটু করতে হয়েছে। 

মল্লিকবাবূকে বলতে হয়েছে, মেজমামীর “একান্তো” ইচ্ছে তোমায় একবার 
দেখে। বলে, “এত বই কেনে, আবার অপরকে পড়তে দেয়, কেমন সেই মানৃযাঁট 
একবার দেখতে সাধ হয় রে দুলো” ! 

প্রায়ই বলেছে। 

রোজই বলেছে। 

এ কথাও বলেছে, “মেজমামী যাঁদ মেয়েমানুষ না হোত নিজেই আসতো । 
ওরও তো আবার আপনার মতন, “দেশের দুঃখুর” বাই!” 

অবশেষে এই ঘটনা । 

ভদ্রলোক হয়তো ভদ্রতার বশেই এমন অভদ্র কাজটা করতে স্বীকৃত হয়ে- 
ছেন। 

ণকল্তু সূবর্ণর সে-লব জানবার কথা নয়. তাই সুবর্ণ ভাবে, ছি ছি, উনিই 
বা কেমন! 

তবে কি সুবর্ণ যা ভাবে তা নয়? 

বোকা ছেলেটাকে ভুিয়েভালিয়ে বই ঘুষ দেওয়াটাও কি তাহলে এই 
উদ্দেশ্যে ? 

ণকল্তু তাই 'ক? 

সেই মৃহূর্ভের দেখাতেও উজ্জবলকাল্তি সেই মানুষটার দুই চোখে যে 
দৃষ্টি দেখেছে সবর্ণ সেক অসংচারঘ পূরৃষের লুব্ধ দুষ্ট? 

তা তো ময়। 

সে দুষ্টিতে যেন সসম্জরম পূজো ! 

সে দৃম্টি আর কবে কোথায় দেখেছে সবর্ণ ? 

দুলো তৈবেছিল ঘটনান্তে ঘরে সদর দরজা দিয়ে বাড়ি এসে ঢুকবে সে; 
এবং মহোৎসাহে মায়ে রসিয়ে গ্প করবে কেমন করে এমন কৌশল টি করেছে 
দুলো! 

কিন্তু মেজমামীর সেই মুহূর্তের ভাঁজাতেই সব সাহস উবে গেল তার। 

সর্বলাশ করেছে! 

মেজমামশ রাগ করেছে! 

অথচ বেচারা কত আশায় স্বপ্ন দেখতে দেখতে আসছে। পলায়ন করা যাক 
বাবা! 

কিন্তু দুলোর সোঁদন পলায়ন করা হয় 'নি। 


'স্বর্ণলতা ৯৫ 


এই ভয়ক্কর কাণ্ডটি চোখে পড়েছিল আর কারো নয়, প্রভাসচন্দ্রের চোখে । 

শরশরটায় তেমন জুং ছিল না বলে, অসময়ে কোর্ট থেকে ফিরে আসাছলো, 
দূরে থেকে দেখলো দুটো লোক যেন গাঁলতে ঢুকলো । 

একটা তো দুলো, আর একটা ? 

ধীরে ধীরে ওদের পিছু নিয়েছিলো প্রভাস। 

তার পরই চোখে পড়ল এই দুনাীতপূর্ণ দৃশ্য! 

একটি সুকান্তি ভদ্রলোক ফিন্বাফনে আঁদ্দর পাঞ্জাঁধ গায়ে, মিহি ধুঁতির 
লম্বা কোঁচা, মেজবৌয়ের শবশ্রামঘরে'র জানলার নিচে গিয়ে দাঁড়ালো-যেন 
জৃলিয়েটের রোমিও! যেন যমুনাতীরের কেন্ট! 

দুলো হারামজাদা কী যেন একটা জানিস পাচারও করলো জানলা 'দিয়ে! 

এতেও পৃরুষের রন্ত টগবগিয়ে ফুটে উঠবে না ? বংশমর্যাদার চেতনা নেই 


মুস্তকেশীর ছেলেদের 2 

এ যাঁদ প্রবোধ হত, খুন একটা হয়েই ষেত আজ মুস্তকেশীর গাঁলতে! হয় 
দূলো. নয় ওই প্রোমকাট! 

প্রভাস বলেই প্রাণে বাঁচলো! 


গায়ে হাত দিতে বেধেছে । দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড়লোকের ছেলে। 
পরে মোচড় 'দিয়ে উাঁকলের ঘরে ছু এনে ফেলতে হবে। 
তাই শুধু রূঢ় কথা, নাম-ঠিকানা জেনে নেওয়ার উপর দিয়েই গেল। 
দুলো ? 
কুটুমের ছেলে বলে কি রেয়াৎ করা হোল তাকে ? 
না, তা হয়নি। 
দুলোর বৃদ্ধিনা কম, গতরটা কম নয়। পাড়ার লোক তাকে গুণ্ডা নামে 
ডাকতো । সেই দুলো সোঁদন মার খেতে খেতে অজ্জান হয়ে গিয়োছিল: 
চাঁদা করে মেরেছিল পাড়ার লোকেরাও । 
জবরো কুকুরের মত জিভ বার করে হাঁপাতে হাঁপাতে শেষ পর্যন্ত লটকে 


পড়েছিল | 

কিন্তু ওইটনকুই কি ঝড় ? 

মরে তো আর যায় নি ষে ঝড়কে 'ঝড়' বলা হবে ? 

গায়ের বাথা মরতে কাঁদন লাগবে 2 

ঝড়টা অন্য মৃর্ততে বাঁড়র ওপর আছড়ে পড়েছিল । 

এ বাঁড়র মেজবৌ রাস্তায় বৌরয়ে এসে আধমরা ছেলেটাকে ওই 'হিংস্রতার 
হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। মাথার ঘোমটা খুলে আর গলা তুলে বলেছিল, 
তোমরা মানুষ না কসাই ?? 

বলোছিলো, 'ওকে কেন ? মারো আমাকে মারো ! এ মার তো দুলোর প্রাপ্য 
নয়, আমার প্রাপ্য! 

“বলোছিল, 'আমায় যাঁদ মেরে শেষ করতে, তোমরাও রেহাই পেতে, আমিও 
রেহাই পেতাম ।' 

শুধু যে গলাই খুলোছল তাই নয়, ছেলেটাকে হণ্চড়ে টেনে নিতে নাক 
পাড়ার পুরুষদের হাতে হাত ঠেকেছিল তার। 

এর পর যে একটা ভয়ানক ঝড় উঠবে, তাতে আর আশ্চর্যের ক আছে! 

সে ঝড়ের তুলনা মেলে চৈন্-বৈশাখের সব্ধ্যয়। কালবৈশাখীতে। 


৯৬ সুবর্ণলতা 


সে ঝড়ে গাছ পড়ে, চাল ওড়ে, পাকাবাড়র দেওয়াল সৃম্ধ দোলে। 

যেমন ঝড়ে দাঁজপাড়ার এই গাঁলটা উদ্দাম হয়ে ওঠে, বীভৎস হয়ে ওঠে। 
দশ-বারোটা বাঁড়র বাসি উনুনের ছাই উচ্ছিষ্ট ভাত আর এ*টো শালপাতায় 
উপচে ওঠা ডাস্টাবনটা' উল্টে গড়াগাঁড় খেতে থাকে: পাতা আর নোংরা কাগজের 
টুকরো ঝাপটে এসে গৃহস্থের ঘরের মধ্যে এসে ঢোকে, সমস্ত গঁসিটা আবর্জনার 
কুশ্ডে পারণত হয়। 

সেই কালবৈশাখীর ঝড় উঠল সৌদন মুস্তকেশীর বাঁড়তে। 

এতদিনে টের পেয়ে গেছে সবাই, নির্জনে নিচের তলার ঘরে বিশ্রাম করার 
বাসনা কেন “সতশলক্ষ্শ”' মেজবৌয়ের ! 

“তেজী পাজশ হারামজাদণ' এটাই জানতো সবাই, এখন তো দেখা গেল 
কতখানি, নম্ট, কত বড় জাহাবাজ ও! 

মূস্তকেশী বলোছিলেন, “মানুষের রন্ত যাঁদ তোর গায়ে থাকে তো ও বৌকে 
লাঁথ মেরে মের ফেল পেবো। আর যাঁদ জন্তু-জানোয়ার হোস তো পাঁরবারকে 
মাথায় করে ভেন্ন হয়ে যা। নষ্ট মেয়েমানূষ নিয়ে ঘর করতে মুক্ত-বামনী পারবে 
না।' 


৯২ ॥ 


করে মাজা তামার ঘাঁট, বাঁ কাঁধের উপর গামছায় মোড়া 
কাপড়ের পশুটাল। 'পিহনে বছর ছয়েকের একটা 


কাশী মন্রের ঘাটের কাছাকাছি একটা পুরনো 
দোতলা বাঁড়র সামনে এসে দাঁড়ালেন মু্তকেশী। 
মেয়েটাকে উদ্দেশ করে বললেন, 'দোরটা ঠেল দৌঁখ, 
আমি আর ছোব না।, 
ৰা কারো বাড়ির বাইরের কপাটে হাত দেন না মুন্ত- 

কেশস। কারণ রাস্তার ধাগড়দের ঝাঁটার ধুলো যে উড়ে 
উড়ে এই সব কপাটে এসে পড়ে, এ কথা আর কারো হ*ুশের মধ্যে না থাকুক, 
মুস্তকেশীর অবশ্যই আছে। 

মেয়েটা দরজাটায় সজোরে একটা ধাক্কা 'দিয়ে প্রায় হুমাঁড় খেতে খেতে রয়ে 
ঘায়, দরজাটা আলগা ভেজানো ছিল মান্র। 

মুন্তকেশী ভিতরে ঢুকে এসে হাকি পাড়েন, “জগ, ও জগ, আছিস নাক ?' 

জগু মুস্তকেশীর ভাইপো, এবং এই পুরনো দোতলাঁট মুস্তকেশীর 
ভাইয়ের বাঁড়। ভাই অবশ্য গত হয়েছেন অনেককাল, আছেন বিধবা ভাজ 
শ্যামাসুন্দরী। তা জগুর বদলে তাঁর গলাই পাওয়া গেল। ননাঁদনীর সাড়া 
পেয়ে অন্যান্য দিনের মত ছুটে এলেন না তানি, কোথা থেকে যেন সাড়া দিলেন, 
“থাকবে না তো আর যাবে কোন চুলোয়? পেশ্ড়োর মাঁন্দরে বসে ফোঁটা-চতন 
কাটছে বোধ হয়।' 

গঞ্গাস্নান-ফেরত প্রায়ই একবার ভাইপোর বাঁড় ঘরে যান মুস্তকেশী; 
ভাজের সহাস্য অভ্যর্থনা জোটেই, আজ এ রকম দুরাগত বংশশধ্বানর হেতু? 





গূবর্পলতা ৯৭ 


যেন বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে সাড়া আসছে। মুস্তকেশশ অবাক হয়ে বলেন, 
'তুমি কমনে থেকে কথা কইছো বৌ? 
“এই যে মের দাক্ষণ দোর থেকে । লক্ষরীছাড়া হাড়হাবাতে ছেলে ছেকল 


পিছনের মেয়েটা হঠাৎ হি দহ করে হেসে ওঠে, 'মামী-ঠাকুমাকে ঘরে বন্ধ 
করে রেখেছে-_ 

মুন্তকেশীর মুখেও একটু হাঁস ফুটে ওঠে। তবে সেটা গোপন করে তাড়া 
দয়ে ওঠেন, মরণ আর কি! হেসে মরাছস যে-”+ তারপর কপাটের শিকলটা 


মেয়েটা আর একবার হেসে ফেলে পরনের বৌপাগলা শাড়িখানার আঁচলটা 
মূখে চাপা দিয়ে বলে, 'মামী-ঠাক্মা বুঝ দুষ্টাম করোছিলে 2 তবে জ্যাঠা- 
মশাই শাস্তি দিয়ে গেছে 2 

শ্যামাস্‌ন্দরী এ হাঁসির উত্তরে হাসেন না-_বিরান্তকুণ্ঠিত স্বরে বলেন, 
পির দর দি রি পনাদিহ রা শাস্তি ভোগ 

। 


মুস্তকেশী মেঝেয় বসে পড়ে বলেন, 'হলো কি?' 

“ক হলো তা জানে যম! আদালতে আজ নাক মামলার দিন আছে' তাই 
আমার মাতৃভন্ত সন্তান মায়ের পাদোদক খেয়ে যাত্রা করবেন!” 

মুস্তকেশী মামলা সম্পর্কে কিছুটা অবাহত আছেন। দেশের জামজমা 
নিয়ে মায়ের নামে মামলা ঠুকে বসে আছে জগ্গু। 

জাঁমজমা বাগান পুকুর আছে বেশ [িছ.। সব জ্ঞাতরা খাচ্ছে। তাই 
শ্যামাসূন্দরী সেই জ্ঞাত দ্যাওর ও ভাসুরপোদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, “এই 
জবরদখলটি ত্যাগ করে তোমরা মানে মানে আমার প্রাপ্য অংশের টাকাটি ফেলে 
দাও।” 

জগ মাকে চোখ রাঁওয়েছে। 

বলে, 'বিলি প্রাপ্য কার 2 তোমার না আমার? ওসব আমার ঠাকুর্দার বৈ 
তোমার ঠাকুর্দার নয়! তুমি পরের বাঁড়র মেয়ে, উড়ে এসে জুড়ে বসে “রমানাথ 
মূখ্‌ষ্যের ভটে থেকে তার বংশধরদের তাড়াবার কে হে? 

অতঃপর মায়ে বেটায় লেগে গেছে লাগ্‌ ঝমাঝম:' ফলশ্রুতি নালিশ! শ্যামা- 
সন্দরী দেবী জগন্নাথ মুখুষ্যের ন্যাধ্য সম্পাত্তর উপর অনাঁধকার হস্তক্ষেপ 
করছেন। 

মুন্তকেশী জানেন এ কথা. কিন্তু দরজা বন্ধর ব্যাপারটা রহস্জনক। তাই 
হেসে ফেলে বলেন, “মায়ের সঙ্গে মামলা লড়ে মায়ের পাদোদক জল খেয়ে 
[জততে যাবে? তা বেশ। কিন্তু ছেকল কেন? 

শ্যামাস্‌ন্দরী উত্তর দেবার আগেই পিছন থেকে উত্তর 'দয়ে ওঠে শ্রীমান 
জগু। বাজখাঁই গলায় বলে ওঠে, ছেকল কেন? বলুক- বলুক, ওই 'নিকষা 
বুড়ী নিজেই বলুক ছেকল কেন একদণ্ড পৃজোয় বসোঁছ, অমাঁন ননদের 

ণ 


৯৮ সুবর্ণলতা 


কাছে' ছেলের নামে লাগানো-ভাঙানো হচ্ছে কেমন ?' 

জগ একটা তাচ্ছল্যের হুঙ্কার ছাড়ে। 

পরনে ফরসা হলদেটে রং একখানা খাটো বহরের “কেটে ধুতি, লোমশ 
বুকের উপর একছড়া রূদ্রাক্ষের মালা, কপালে রন্তচন্দনের ফোঁটা। 'পাঁসর 
গলার সাড়া পেয়ে নিঃশব্দে এসেছে দোতলা থেকে। 

শ্যামাসুন্দরী মুখ বাঁকয়ে বলেন, 'ওই শোনো ঠাকুরাঁঝ, নদেরচাঁদ ভাই- 
পোর বাক্য শোনো। তোর নামে লোকের কাছে লাগাতে বসবো, এত সস্তা 
জিভ আমার নয় রে লক্ষনীছাড়া !' 

'শুনে যাও পাস শুনে যাও, জগ দরাজ গলায় বলে, 'দেখো পেটে 
পেটে কী শয়তানির প্যাঁচ! হবে না? দাদামশাইীটি আমার কেমন ঘুঘু 
ছিলেন! নাম করলে হাড় ফাটে। তাঁরই কন্যে তো! যেই শুনেছে আজ 
মামলার দিন, অমনি পা নৃূকিয়ে বসে আছে! হেতু? না পাছে জবরদাস্ত 
করে পাদোদক জলটুকু নিই ।...আঁমও বাবা তেমাঁন বজ্জাত. 'দয়োছ দরজায় 
ছেকল তুলে। বেরোতে তো হবে একসময়। দোঁখ তখন কেমন করে পা 
আটকায় ? পৃজো সেরে এসে ওই' চৌকাঠে জল ঢেলে ওৎ পেতে বসে থাকতাম। 
ছেকল খোলা পেয়ে যেমান, না বেরোবে, পড়বে তো পা জলের ওপর? সেই 
জল চেটে মেরে দেব- 

নিজের বৃদ্ধি-গঁরিমায় হা হা করে হেসে ওঠে জগ। 

শ্যামাসুন্দরী তেলেবেগুনে জবলে ওঠেন, 'ওরে আমার মাতৃভন্ত পুত্তুর 
রে! চব্বিশ ঘণ্টা মাকে পাঁশ পেড়ে কাটছেন, মায়ের নামে মামলা ঠুকে রেখে- 
ছেন আবার ঢং করে আসেন চল্লামেন্তর খেতে! জুতো মেরে গরু দান !' 

সমর্থনের আশায় ননদের 'দকে তাকান, শ্যামা । 

মুস্তকেশী কিন্তু ভ্রাতৃবধূর কথায় সমর্থন করেন না। অসন্তুষ্টভাবে বলেন, 
'তা বললে কী হবে বৌ, এ তোমার অনেষ্য কথা! তুমি যাঁদ সোয়ামীর মরণ- 
কালে তার কানে বিষমল্তর ঝেড়ে পেটের ব্যাটাকে বাঁণ্চঠত করে যথাসর্বস্ব নিজের 
নামে লিখিয়ে নিয়ে থাকো, ও কেন হকের ধন ছাড়বে? এ হলো' নেষ্য দাবির 
কথা। তা বলে ছেলের তুমি মাতৃভীন্তর কসুর পাবে না।' 

শ্যামাস্‌ন্দরণ যাঁদও বড় ননদকে যথেম্ট খাতির করে চলেন, তবু এতটা 
অসহ্য সব সময় সইতে পারেন না! গর্জন করে বলেন, 'অমন মাতৃভান্তর ক্যাথায় 
আগুন! ও ছেলের মুখদর্শন, করলে নরক দর্শনের কাজ মেটে। বাল ঠাকুরাঝ, 
সব্বস্ব নিজের নামে লিখিয়ে নেবো না তো কি সব্বস্ব ওই বাউশ্ডুলে উড়নচণ্ডে 
অকাল কুজ্মান্ড গে*জেলটার হাতে তুলে 'দয়ে ঘুচিয়ে পুচিয়ে দেব 2 ওর হাতে 
পড়লে এ ভিটেয় এসে দাঁড়াতে পেতে 2 একখানা একখানা করে ইপ্ট বেচে 
গাঁজা খেত নাঃ আর ওর সেই গে*জেল গুরুর সেবায় লাগাত না? আবার 
উদারতা কত! জ্ঞাতিরা লুটেপুটে খাচ্ছে খাক! তাদের ঠাকুর্দার সম্পান্ত! 
নিজের যে তাহলে এরপর মালা হাতে করে ভিক্ষেয় বেরুতে হবে 

শ্যামাসুন্দরী একটু দম নেন। 

মুস্তকেশী কিন্তু এহেন বিভীষিকার আশঙ্কাতেও দমেন না। জোর 
গলায় বলেন, “তা হত হতই! ওর বাপের সম্পত্তি ও গুড়াতো! আর কারুর 
বাপের বিষয়ে তো নোখ্‌ ডোবাতে যেতো না! নোশা-ভাঙ আবার কোন বেটা- 
ছেলেটা না করে? তাই বলে হকের দাঁব পাবে না ?' 


লুবর্পলতা ৯৯ 


'বল তো পিসি বল তো! 
জগু বুকে থাবড়া মেরে মিরটিমাটি হাসে। 

'বিরন্ত গলায় বলেন, 'ভাইপোর সুয়ো হয়ে খুব তো বলছো 
ঠাকুরাঝ, বাল আজ যাঁদ আমি ওর হাতে পাড়, কাল আমার আঁচল পেতে 
ভিক্ষে করতে হবে নাঃ আমার কি পেটের আর পাঁচটা আছে যে, ও না 
খাওয়াক আর একজন খাওয়াবে ? আমি যাই মা বসুম্ধরার মতন সহ্যশগলা, 
তাই ওকে সহ্য করছি। অন্য মা হলে ওই ছেলের মুখে নুড়ো জেলে দিয়ে 
চলে যেত। 

ভাজকে যে ভালবাসেন না মৃন্তকেশী তা নয়। সময়-অসময়ে অনেক করে 
ভাজ। তবু ঝোল তাঁর কোলে টানেন না। বলেন, 'নুড়ো তোমার বৃদ্ধির 
মুখেই জবালতে হয় বৌ! মামলা-মকদ্দমা হল বাইরের কাজ, বাপে-বেটায় হচ্ছে, 
'ভাই-ভাইয়ে হচ্ছে, এই তোমার মতন গুণবতণ মায়ের সঙ্গে হচ্ছে, তাই বলে 
মানুষ ধর্মাধর্ম ছাড়বে? মায়ে-বেটায় লাঠা-লাঠি বলে ক তৃঁমি মরলে ও 
'হাবাষ্য গিলবে নাঃ না মাথা মুড়োবে না? 
| জগ এতক্ষণ দুই কোমরে হাত 'দিয়ে বীরের ভষ্গঁতে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে 
ছিল, এবার পরম সন্তোষের সুরে বলে. “এই দেখো জ্জানবানের কথা! বুঝলে 
পাঁসমা, এই সহজ কথাটুকু আর ওই নিকষা বুড়ীকে বঁবয়ে উঠতে পারলাম 
(না! কথায় বলে “দ্ৰর্গাদপি গরীয়সী!?” বলে কিনাঃ তুমি জ্ঞানবান, 
(বুঝমান, তোমার সঙ্গে কথা কয়ে সুখ আছে! 
র শ্যামাসুন্দরী টিটাকাঁর 'দিয়ে ওঠেন, “তা সৃখ থাকবে না কেন? কোলে 
।ঝোল টানলে সবাই জ্ঞানবান! বাল, তোমার ছেলেরা এ রকম হলে ক বলতে 
?ঠাকুরাঝ ! ভাগ্যগ্‌ণে তারা সবাই ভাল, তাই। আমার হচ্ছে এক ব্যাম্নন নুনে 


1 
'ভাঁগ্যগুণে নয় হে বৃদ্ধির গুণে! জগ রায় দেয়, পাঁসর ছেলেরা কি 
জান ভালা হেছে? কাতেই আছে: “যেমন মা, তার তেমন ছা!” তা যেমন 


০১০ পোর্ানিনিটারালা নার 
1. মুস্তকেশীও সঙ্গে সঙ্গে এাগয়ে এসে বলেন, “তাও বাল বৌ, ছেলে কেন 
বাউণ্ডুলে হবে না? বয়েস পার হয়ে গেল ছেলের, তুমি বিয়ে দিলে না-”' 
কথাটা সাঁত্য। 
বিয়ের বয়েস কোন: কালে পার হয়ে গেছে জগুর। মুস্তকেশীর বড় ছেলে 
বাধের থেকেও বড় সে। কিন্তু পান্র হিসেবে যে সপান্র নয় সে কথা বলাই 
। লেখাপড়ায় জলাঞ্জাল দিয়ে ছেলেবেলা থেকে কেমন করে যেন গাঁজার 
ভায় ভিড়ে পড়েছিল, আবার এখন এক অবধত বাবার শিষ্য হয়েছে। 
মুস্তকেশী আগে বহু চেষ্টা করেছেন হাল' ধরতে, কিল্তু নৌকো ঠেলে 
্ যেতে সক্ষম হন 'ি। হন নি অবশ্য জগ;রই প্রবল প্রতিবন্ধকতায়, তব, 
| ন যখন তখন, ভাজকেই দোষী করেন। এখনো করলেন, বয়সের ছেলে, 
িময়ে বে-থা না হলে-”' 
থামো ঠাকুরাঝ, কথা মুখে এনো না আর--» শ্যামাসৃন্দরন গুরুজনের 
ভুলে ঝঞ্কার দিয়ে ওঠেন, শনজে তো ওই এক ভূত বইয়ে জবলে পড়ে 











সি সুবর্পলতা 


মরছি। আবার 1ক পরের মেয়ের কালে তেতুল গৃলতে সেই ভূতের বি 
দেব ১ পাগল তো হই নি এখনো! 

প্রশ্নটা তামাদি হয়ে গেছে, তব মুস্তকেশণ অসন্তুষ্ট স্বরে বলেন, “তার 
মানে তুমি চাও আমার বাপের বংশটা লোপ পাক ?” 

পেলে আর করাছ কি! শ্যামাসুন্দরী বলেন 'কত কত রাজা-বাদশার বংশ 
লোপ পাচ্ছে! 

'তবে আর কি! লোকের গলা কাটা যাচ্ছে তো আমার গলাটাও কাট! 
তুম না দাও, আম এবার জগুর বিয়ে দেব। বলতে 'কি, সেই ভীদ্দশ্যেই আসা 
আজ । গঙ্গার ঘাটে এক মাগণ কেদে পড়লো। বলে, “গলায় গলায় আইবুড়ো 
মেয়ে, ইচ্ছে হয় যে গলায় দাঁড় দিই! 'দাঁদি যাঁদ একটা পাত্তরটাত্তর দেখে দেন!" 
আমার মনে এল জগ. কথা। এখনো যাঁদ ধরে করে একটা বিয়ে দিতে পারা 
ধায়-- 

জগু বলে ওঠে, 'এই দেখো পাঁসর দুমীত! বাল নিজেই তো বলে মর, 
ছেলেগুলো তোমার সব বৌয়ের গোলাম হয়ে আছে, বৌরা কান ধরে ওঠাচ্ছে 
৪০০৯৬৬-৯পভিা৯পস্জ্ত 


মুস্তকেশ সহাস্যে বলেন, শোনো কথা বুঝি 
গোলাম হয়ে বসাঁছস £ বাল, সবাই তা হবে কেন যৌকে পায়ের পা 
ফরে রেখে দিষ্টান্ত দেখা তুই! 


'হু, দেখাবো বললেই দেখানো হয়! জর বিচক্ষণের ভঙ্গীতে বলে, “এই 
বেড়ালই বনে গেলে বন-বেড়াল হয়, বুঝলে 'পাঁস? তার ওপর আবার আমার 
পলন্তে আমার বাপের গুণ! 

বটে, বটে রে হতভাগা পাজাঁ বাঁদর-_, শ্যামাসৃল্দরশ ছিটাঁফাঁটয়ে ওঠেন, 
দূর হ, দূর হ আমার সুমুখ থেকে। মরা বাপকে গাল' দিচ্ছিস লক্ষনীছাড়া? 
নরকেও ঠাই হবে তোর 2 

“নরকে ঠাঁই চাইতে যাচ্ছে কে ৮ জগ বুকে আর একটা থাবড়া মেরে 
বলে, 'সগ্‌গো থাকতে নরকে যেতে যাব কী দুঃখে? মরণকালে “মা মা” করে 
মরব, মাতৃনামে তরে যাব। তবে ওই বিয়ে-টিয়ের কথা কইতে এসো না প্পাস 
বিয়ে করোছি কি গোল্লায় গোঁছ!' 

“তা যা বলোছিস-- 

মৃস্তকেশী সহসা 'নজ হ্যন্তি বিস্মৃত হয়ে একগাল হেসে বলেন, 'তা 
বলোছস। এ ছোঁড়া দেখাছ লা পড়েই পাঁণ্ডিত! বলোছস ঠিক। আমার ছেলে. 
গুলো গি আর মাঁনাষ্য আছে ? বিশেষ করে পেবোটা! যেটা নাক সব চেয় 
ডাকাবূকো 'ছিল! সেরেফ ভেড়া হয়ে বসৈ আছে। বৌ দঙ্জালি করলে তের 
একবার করে মারতে আসে, আবার কে'চো হয়ে গুটিয়ে পালায়। ৮ 
বলোছ, ও বৌ ত্যাগ 'দয়ে আর একটা বিয়ে কর। সে সাহসও নেই। রে 
একবার বাহাদ্যার দোঁখিয়ে বিদেয় করে, ওমা বৌ' কিনা তৎক্ষণাৎ বাপের সঙ্গে 
ফিরে এল! 

এবার জগ একট: গল্ভীর হয়। 

বলে, এটা পপাসি তোমার অন্যাযা কথা হচ্ছে। তোমার মেজবৌকে তুমি 
অন্যায় নিন্দে কর। সুবো আমায় বলেছে, “আমার মায়ের হাতে না পড়ে অন! 
পড়লে, ওই বৌয়ের ধান্য ধান্য হত” 


| সুবর্ণলতা ১০১ 


মুস্তকেশী সহসা যেন আকাশ থেকে হাত-পা ভেঙে ধপাস করে পড়েন। 

সুবোধ! 

সুবোধ বলেছে এই কথা! 

কেন? 

রশত-চারাত্তর মন্দ হয়ে যাচ্ছে না তো হতভাগার! ওই জাঁহাবাজ ভাদ্দর- 
বৌয়ের গণ দেখেছেন তিনি! ভাদ্দরবৌ তাহলে গুণ-তুক করছে! 

বড় দুঃখে আর রাগ আসে না_ রুদ্ধকণ্ঠে বলেন, বটে! এই কথা বলেছে 
সুবো 2? 

'বলে তো! যখন তখন বলে! তা যাই বল পাস, তুমিও তো সোজা 
মায়ের সোজা মেয়ে নও! জান তো আমার ঠাকমাকে! কণ 'নিধাট ছলেন ! 

মূস্তকেশী এবার ভয় খান। 

কাণ্ডজ্ঞানহখন ছেলেটা কণ বলতে ক বলে ঠিক কি? 

উঠে দাঁড়য়ে বলেন, 'দুগ্গা, দুগৃগা, গঙ্গাচ্ছান করে এসে মাতীনন্দে 
শূনীছ বসে বসে। চললাম বৌ। ..এই ছদুঁড়' চল। ওমা, কোথায় আবার গেল 
মুখপড়ী 2, 

'গেছে ওইদিকে বোধ হয় পেয়ারা পাড়তে! 

'রাক্ষুসী যেন পেয়ারার যম। আবার এখন-- 

শ্যামাসুন্দরণ আবহাওয়া হাল্কা করতে বলেন, 'তা সে আর কোন মেয়ে" 
ছেলেটা নয়? 

“তা তো নয়_” মুস্তকেশী আর একবার তোলা প্রসঙ্গ পেড়ে নামান, “এই 
তো বললে তো? আমার মেজ বৌমার কাছে বল গিয়ে? শুনবে পেয়ারা খেলে 
নাক পেট কামড়ায় গর ছেলেমেয়েদের ? চাঁপিটাকে সঙ্গে আনা বন্ধ করেছি 
কি সাধে? মা দজ্জাল, মেয়েটা তো আমার পায়ের কাদা! “ঠাকমা তোমার 
সঙ্গে যাব” বলে রসাতল! মেম মা বলেন কিনা, গঞ্গার ঘাটে বুড়ীদের দলে 
বসে রাজোর পাকা পাকা কথা শিখবে আর রাজ্যের ফল-পাকড় গিলে অসহখ 
করাবে-”' 

আঁম বাল, “ও বটে! আচ্ছা! রইল তোমার মেয়ে। মাথা খশুড়ে মরলেও 
আন না আর। বড়বোৌমার এইটেকে নিয়ে আসি ।' 

জগ বলে, “এটা কিল্তু তোমার নিষ্ঠুরতা 'পাঁসি।' 

'তা 'নষ্ঠুর বাঁলস নির্মায়িক বাঁলস, সবই শুনতে হবে ! মুস্তকেশণ উদাস 
গলায় বলেন, 'সৌদন সেই কথার পর প্রবোধ কি এসে পাঁরবারের হয়ে হাতজোড় 
করে মাপ চেয়েছে ? বলেছে কি “মা, তুমি থোঁতা মুখ ভোঁতা করে ড্যাংডেঙিয়ে 
নাতনশদের নিয়ে গঞ্গাচ্ছানে যাবে, যা ইচ্ছা নে খাওয়াবে!” বলে নি তো? 
তবে? তবে আর কিসের মায়া-মমতা আমার ?” 

জগ সহসা উদ্দীপ্ত গলায় বলে ওঠে, “তবে যাঁদ বললে পাস, এ তোমার 
শিক্ষার দোষ। এ বাঁদ তোমার গোঁয়ার-গোবিন্দ জগ হত, বৌকে মেপে সাত 
হাত নাকে খং দেওয়াতো। মায়ের ওপর ট্যাঁফো! জ্বর্গদ্পি গরায়সণ না? 
আমার মা, আম পাঁশ পেড়ে কাটতে পারি, তা বলে পরের মেয়ে উপ্চ কথা 
বলবে? শাস্তরে বলেছে-_ 

শ্যামাসুন্দরশ বলেন, “থাম খুব ধাম্টীমো হয়েছে! তোর মুখে শাস্তবাক) 
শুনলে স্বর্গে বসে মনি খাঁষরা গালে মৃখে চড়াবে! 


১০২ সুবর্ণলতা 


'ওই শোনো! দেখছো 'পাঁস, কেন দূুচক্ষের বিষ দেখি বুড়ধকে ₹ দশে 
ধর্মে বলেছে কুপত্র যদ্যাপ হয় কুমাতা কদাপি নয়! অথচ আমার ভাগ্যে হলো 
উল্টো! ভগবানের রাজ্যে একটা বোতক্রম পটলের মা পলতাপাতা, আর এই 
সংসারে এক বোৌতিক্রম জগার মা শ্যামাসুন্দরী ! মাতৃনাম উচ্চারণে পাপ নিও 
না ঠাকুর। মাগো মা শ্যামা মা! যাক্‌ পাস, বড়মানুষের মেয়েকে তুমি হুকুম 
করে যাও দিক. ওই ওখানে শ্বেতপাথরের বাটিতে জল আছে, কুপা করে একট: 
চরণ ডুবিয়ে রাখতে ! 

'ফের জগা? 

শ্যামাসূন্দরী কুদ্ধ গলায় বলেন, “ফের ধাচ্টামো 2" 

“চোখ রাঙিও না বলাছ মা জননী--”, জগুও সমান গলায় বলে, 'বোৌশ 
বাড়াবাড়ি করবে তা ওই ঠ্যাঙ দুখানি ভেঙে এইখানে শুইয়ে রেখে দেব।' 

মুস্তকেশী আপসের সরে বলেন, 'তুচ্ছ কথা নিয়ে তুমিই বা কেলেঙ্কার 
করছ কেন বৌ,দিয়ে দাও না!' 

শ্যামাসুন্দরী সহসা দুমদুম করে গিয়ে সেই পাথরবাঁটি-রক্ষিত জলে বা 
পায়ের বুড়ো আঙূলটা ডুবিয়ে আবার এসে বসে পড়েন। 

জগু সাবধানে বাঁটিটা উঠিরে নিয়ে সোল্লাসে বলে. ব্যাস, কেল্লা ফতে। 
দোঁখ এখন রাবণ জেতে 'ি নিকষা জেতে !' 

ঝগড়ার শেষ শোনার সময় নেই, বেলা হয়ে যাচ্ছে। মবন্তকেশী ডাকেন 
টেশপ, এই হারামজাদী আয় না? 

টেশপ এগিয়ে আসে। 

জগ_ তার হাতে চারটে পয়সা দিয়ে বলে, “পুতুল কানস।' 

'আবার পয়সা কেন? মুন্তকেশী অসন্তুষ্ট স্বরে বলেন, শনাত্য তোর 
পয়সা দেওয়া! ছণুঁড়ও হয়েছে তেমাঁন লুভন্টে! হাত পেতেই আছে। নে 
চল চল, রোদ উঠে গেল। চল বৌ। বাঁল হ্যা গো, থরে থরে কত কুটনো 
কুটেছো! মা ব্যাটা দুটো মাঁনাষ্যতে তো খাবে! 

শ্যামাসুন্দরী চরম বিরান্তির স্বরে বলে, 'ব্যাটা যে একাই একশো! বাহাল্ন 
ভোগ না হলে গলা দিয়ে ভাত নামবে? মাছ খাঁর, চারখানা মাছ-সর্ষে রেখে 
দেব চকে যাবে, তা নয়, মার হে*সেলে নারামষ্য গিলবো! হাড়মাস পড়িয়ে 
খেলো। আজ আবার আদালতের সমন, একখুনি বলবে “ভাত দাও”! তখন 
জলে পাড় কি আগুনে পাঁড়! 

মূক্তকেশণ আর দাঁড়ান না। 

বাইরে আগুনের মত রোদ উঠে গেছে। বৈলা দশটাতেই এত রোদ। মন্ত- 
কেশশীর মনে হয়, পৃথিবীর আবহাওয়াও বুঝি বদলে গেছে। তাঁদের বয়েস- 
কালে আষাঢ় মাসে এত রোদ কখনো ছিল না। 

পথে বৌরয়ে টেপপ আবদারের সুরে বলে. “একটা পালাক ডাকো না 
ঠাকৃমা, হাটিতে ভালো লাগছে না। 

মৃস্তকেশণ চড়া গলায় বলেন, “ভাল লাগে না তো আসিস কেন লক্ষনী- 
ছাঁড়! গঞ্গাচ্ছান করে মানুষের কাঁধে চড়বো ! 

আহা গলগার ঘাটে সেই চট কু়াটা রোজ.পালাক চড়ে না? 

মূ্তকেশশ বুড়ীর উল্লেখে হেসে ফেলে বলেন, “সে বুড়ীর ক্ষ্যামতা নেই 
তাই চড়ে। পালাক আর আছেই বা কই? দেখতেই তো পাই না? যাবে, 


পুবর্ণলতা ১০৩ 


আস্তে আস্তে সবই উঠে যাবে। পালাঁক যাবে, আবু বাবে, গুরুজনে ভান্ত- 
ছেদ্দা যাবে, ধর্মাধর্ম পাপপ্ীণ্য সবই যাবে। স্বদেশীর হুজুগে দেশ ছারে- 
থারে যাবে পম্ট দেখতে পাচ্ছি।.. সাহেবের রাঁজ্যপাট, তোরা যাঁচ্ছস তাদের 
উৎখাত করতে! বাঁল ওদের উচ্ছেদ করে করাঁব কি! রাজা চালাব? হ! 
সুখের পৃথিবীতে ইচ্ছে করে আগুন জবালা ! 

এসব কথা নাতনীর জন নয়. মুস্তকেশীর এ স্বগতোন্ত পালাকর সত্রে 
বোঁরয়ে পড়া ভিতরের উত্মা। পথেঘাটে কেবলই শোনেন কিনা স্বদেশীওলারা 
সাহেবদের উচ্ছেদ করবার তালে আছে। বোমা করছে, গুলি বন্দুক গোছাচ্ছে। 
গঙ্গার ঘাটে ওই আলোচনা শুনে শুনে হাড়াঁপাত্ত জবলে যায়। ওদের রাজ্য- 
পাট, তোরা কেড়ে নব; ওদের সঙ্গে পারাব ? বামন, হয়ে চাঁদে হাত ? 

হঠাৎ স্বদেশনদের ওপর খাপৃপা হয়ে ওঠেন কেন মুস্তকেশী কে জানে! 

মনে হচ্ছে হঠাৎ যেন নিজের জাঁবনের একটা মস্ত বড় ফাক ধরা পড়ে 
গেছে তাঁর চোখে। 

কিসের এই শূন্যতা ? 

তাঁর রাজ্যপাট তো পুরোদস্তুর বজায় আছে। তবে-হুঠাৎ সাহেবের রাজ্য- 
পাট বেদখল হবার 'চন্তায় মেজাজ ক্ষিপ্ত হয় কেন? 

গোঁয়ার-গোঁবন্দ জগূর মা'র ওপর ক সূক্ষ্ম একটা ঈর্যাবোধ আসছে ? 
কেন? মূক্তকেশীর ছেলেরা কি মাতৃভান্ততে কম? তাই জগুর আঁভনব মাতৃ- 
ভান্ত তাঁকে ঈর্ষায় পণীড়ত করেছে ? 

মাতৃভন্তিতে কসূর কোথায় মুস্তকেশীর ছেলেদের ; তবু গভবর এই 
শূন্যতার বোধটা ভরাট করে তুলতে পারছেন না বুদ্ধ 'দয়ে য্ান্ত দিয়ে। মৃন্ত- 
কেশীর নিজের হদয়ে ছেলেদের ঠহি নেই, না ছেলেদের হৃদয়ে মুস্তকেশশর 
ঠাই নেই? ঠাঁই থাকলে ভরাটত্ব থাকবে না কেন? শ্যামাসন্দরীর মধ্যে যে 
ভরাটত্বটা দেখে এলেন এইমাত্র 2 

ছেলের বিয়ে দেওয়াটাই কি তাহলে বোকামি; হাতের কাঁড় পরকে 
বাঁলয়ে দেওয়ার মত ? 

'অ ঠাকৃ্মা, অত জোরে হাঁটছো কেন? আঁম বুঝি পারি?" 

'পাঁরস না তো আঁসস কি করতে ?” মুস্তকেশ গাঁতবেগ একটু কমিয়ে 
বলেন, 'আদি বুড়ী পারা, তুমি জোয়ান ছদঁড় পারছ না? তোদের বয়সে 
লোহা ভাঙতে পারতাম, তা জানিস 2 

কথাটা হয়তো মিথ্যা নয়। 

অসামান্য গতর ছিল, এখন্মে আছে। কথায় বলে মরা হাতা লাখ টাকা! 
আখ কখনো দাঁতে ছাঁড়য়ে ভিন্ন বশটতে ছাঁড়য়ে খান না, নিত্য ডালবাটা 
পোস্তবাটা খেয়ে অবলীলায় হজম করেন। জলের কলের মধ্যে চামড়া আছে, 
এই বিচারে (বিধবা হয়ে পর্যন্ত কখনো কলের জল খান নি। দৌনক দু ঘড়া 
করে 'ভার'র গঙ্গাজল তাঁর বরাদ্দ। 

নিষ্ঠাবতশ বলে 'িশেষ একটা নামডাক আছে মুস্তকেশশীর। পাড়ার লোক 
সমীহর দৃষ্টিতে দেখে। মূস্তকেশণকে পথে বেরোতে দেখলেই রাস্তার ছেলেরা 
ডাংগীল খেলা স্থগিত রাখে, মারবেল খেলতে খেলতে চাঁকত হয়ে দাঁড়ায়। 

দোবরা চিনিতে হাড়ের গুড়ো আছে বলে কখনো সন্দেশ 
পর্যন্ত খান না মুস্তকেশ”, রাতে আচমনণ খান না। অন্বুবাচশীর কাদন অশহ্থ 


১০৪ | সবর্ণলতা 


বসমতাীর সংস্পর্শ ত্যাগ করে দৈনিক একবার মাত্র গঞ্গাগভে দাঁড়য়ে মধু 
আর ডাব পান করেন। এমন আরো অনেক কঠোর কৃচ্ছসাধনের তাঁলকা আছে 
মুস্তকেশশীর, তাই তাঁর চেহারাতেও রুক্ষ-কাঠিন্য। 

মুস্তকেশীর জীবন-দর্শনের সঙ্গে আজকের শূন্যতার মি নেই। তানি 
তো বরাবর ভালোবাসার চেয়ে ভয়কেই মুল্য দিয়েছেন বোশ। ভেবেছেন, ওটাই 
সংসারের পায়ের তলার মাঁটি। তবে আজ কেন গোঁয়ার জগুর মাতৃপাদোদক 
পান করার মত হাস্যকর ব্যাপারটা বার বার মনে পড়ছে ? কেন মনে হচ্ছে শ্যামা- 
সুন্দরী একটা উপ পাথরের বেদীতে বসে আছেন, মুস্তকেশী নীচে থেকে মুখ 
তুলে দেখছেন ? 

“ও ঠাক্মা, পালাক নেবে না? 

টেশপর আবদারের সুর ধ্বনিত হয়। 

মাস্তকেশশ হঠাৎ যেন নরম হন। বলেন, “পয়সা খরচা না কাঁরয়ে ছাড়াবি 
না, কেমন? কই দোঁখ কোথায় পালকি ?' 

“ওই তো ওখানে বসে রয়েছে- 

মুস্তকেশী দেখেন একটা গাছতলায় বসে নির্নরররা 
দুটো বেহারা। 

হাতছাঁন 'দয়ে ডাকেন। 

তারপর তাতে উঠে বলেন, 'তোর মা যা কঞ্জুষী, আক্কেল করে দেবে 
ভাড়াটা! দেবে না। চাঁপর মা'র আর কোন গুণ না থাক এটা আছে।' 

টেশপ মুখখানা বেজার করে বলে, 'চাঁপির মা'র হাতে তো রাতদিন পয়সা, 
আমার মা'র আছে বৃঁঝ ? বলে মা'র একটা চাবির রং কেনবার ইচ্ছে কবে 
থেকে, তাই হয় না! 

তাচ্ছল্যভরে বলেন, 'না হলে আর কার কী দোষ? লাখ 

টাকায় বামুন ভিখারি! কেন, তোর বাবা কি “উপায়” কম করে ? 

হ্যা, এ ধরনের কথা ক্ষুদে ক্ষুদে নাঁত-নাতনীদের কাছে হামেশাই বলে 
থাকেন মুস্তকেশণ। যা কিছ: বলার ইচ্ছে, যা কিছ: বন্তব্য, বেশীর ভাগই তো 
ওই ছোটগুলোকে মাধ্যম করেই উচ্চারণ করেন। ঠিক জানেন, সরা বলার 
হাঞ্গামাটা না পুইয়েও সরাসার বলার কাজটা এতেই হবে। 

সঙ্গে সঙ্গেই তো গিয়ে মায়েদের কর্ণ গোচর করবে ওরা। 

ওরা পাকা পাকা কথা শিখবে ? 

ওমা, তাতে ক এল গেল! 

মুন্তকেশীর 'মেম” মেজবৌমার মত আর কে বলতে যাবে গঞ্গার ঘাটে গিয়ে 
পাকা কথা শিখবে! 


কিন্তু মুস্তকেশীর সেই মেজবৌ কি এখনো 'টিকে আছে তাঁর বাড়তে ? 
সোঁদনকার ঝড়ে উড়ে পড়ে যায় নি সুবর্ণলতার *বশুরবাঁড়র আশ্রয় ? 

তাই তো যাবার কথা। 

রাগে দুঃখে অপমানে ধিক্কার স্্রী-পুন্ের হাত ধরে বোরয়ে যাবার কথা 
তো প্রবোধের :! অথবা নম্টচারল্ন স্পীকে গলাধাক্কা দিয়ে বাঁড় থেকে বার করে 
দেওয়ার কথা! 

ণকল্ত তার কিছুই হয় 'নি। 


স্বর্ণলতা ১০৬ 


আবার সুবর্ণ রান্নাঘরে এসে হে*সেলের পালা ধরেছে, আবার খেয়েছে 
ঘুগিয়েছে, কথা বলেছে। 

তারপর ? 

তারপর তো আরো দুই মেয়ে আর দুই ছেলে ভূমিষ্ঠ হয়োছল সংবর্ণর 
এ বাঁড়র নীচের তলার সেই ঠাণ্ডা স্যাঁংসে'তে আঁতুড়ঘরটায়। যে ঘরে বছরে 
অল্তত পাঁচ-সাতবার সদ্যোজাতের কান্না ওঠে। 

অদৃশ্য অন্ধকার জগতে অবাস্থত যে সব বিদেহণ আত্মারা পাঁথবীর 
আলো-বাতাসের আকাক্ক্ষায় লুব্ধ হয়ে ঘোরে, তাদের ম্ান্তর মাধ্যম তো এই 
সূবর্ণলতার দল! ইচ্ছায় আনিচ্ছায় যারা মা হতে বাধ্য হয়! তাদের নিম্ফল 
প্রতিবাদ নিঃশব্দে মাথা কুটে মরে, অথবা যারা এই' ঘটনাটাকেই ক্বামীসুখ' বলে 
মনে করে! 

কিন্তু সে যাক, কথা হচ্ছিল সোঁদনের ঝড়ের। যে ঝড়ের দিন সৃবর্ণ- 
তার উদারচিন্ত ভাসুর পর্যন্ত বিরন্ত হয়ে বলোছল, 'ওই নাটক নভেল পড়াটা 
বন্ধ করা দরকার। ও থেকেই যত আনম্ট এসে ঢোকে সংসারে !' 

অতএব কালীর 'াব্য দিয়েছে প্রবোধ স্ত্রীকে, দিয়েছে নিজের দাব্য। 
রান্রিকালে নিশ্চিন্ত অবকাশে বুঝিয়োছল, নভেল পড়ার কি কি দোষ। 

1কন্তু বেহায়া সুবর্ণ সেই ভয়ঙ্কর মূহূর্তেও এক অদ্ভূত কথা বলে 
বসেছিল। বলোছল, “বেশ, তুমিও একটা ধদব্যি গালো ! 

“আমি? আম কি জন্যেঃ আম কি চোরদায়ে ধরা পড়োছ ?' 

'না, তুমি কেন পড়বে, সব চোরদায়ে ধরা পড়েছে মেয়েমানুষ! কেন 
বলতে পারো? কেন? 

কেন? শোনো কথা! 

এর বোঁশ আর উত্তর যোগায় 'ন প্রবোধের। 

সুবর্ণ হঠাৎ প্রবোধের একটা হাত ঘুমন্ত ভানুর মাথার ওপর ঠোকয়ে 
বলে উঠোঁছল, 'তুঁমিও 'দাব্য কর তবে, আর কখনোও তাস খেলবে না? 

'তাস খেলবো না! তার মানে 2, 

"মানে কিছু নেই। আমার নেশা বই পড়া, তোমার নেশা তাস খেলা। 
আমাকে যাঁদ ছাড়তে হয় তো তুমিও দেখো, নেশা ছাড়া কী বস্তু। বল আর 
কখনো তাস খেলবে না! 

প্রবোধের সামনে আসন্ন রান্রি। 

আর বহু লাঞ্ছনায় জর্জারত স্ত্রী সম্পর্কে বুক-দঃরু-দর আতঙক। 

আবার কী না কি কেলেগ্কাঁর করে বসে কে বলতে পারে! তবু সাহসে 
ভর করে একবার বলে ফেলে, “চমৎকার! মুঁড়-মছরির সমান দর !' 

সুবর্ণলতা তীশব্রস্বরে বলে উঠোঁছল, 'কে মুড়ি কে মিছরি, তার হিসেবই 
বা করোছিল কে, আর তাদের দর বেধে 1দয়েছিলই বা কোন্‌ বিধাতা, বলতে 
পারো 2 

আশ্চর্য, এত লাঞ্চনাতেও দমে না মেয়েমানুষ। উল্টে বলে, 'লঙ্জা আমার 
করার কথা. না তোমাদের করার কথা সেটাই বরং ভাবো! 
কি অতএব বলে বসোছল, ঠক আছে বাবা ঠিক আছে, করাছ 

1 

“খেলবে না আর কখনো তাস ?, 


১০৬ সবর্গলতা 


খেলবো না। হল তো! তা আমার বেলায় তো বেশ হলো, নিজের 
প্রতিজ্ঞা?” ূ 

'বলোছ তো, তুমি যাঁদ আর তাস না খেলো, আমিও বই পড়বো না।' 
এনা সঙ্গে কি তা তো বুঝলাম না! হলো পরপুরুষের সঙ্গে মাখা- 
মাথি_- 

খবরদার! আর একবারও যেন ওকথা উচ্চারণ করতে শুনি না, ইতর 
ছোটলোক!' 

'বাঃ বাঃ একেই তো বলে পাতিব্রতা সতী! সতী স্ত্রীলোকেরা-_- 

“তোমাদের হিসেবমতন সতশ আম নই, নই” নই। হলো! 

সুবর্ণ ক্রুম্ধগলায় বলে, 'ছেলের মাথায় হাত দিয়ে 'দাব্য করেছো মনে 
রেখো। পয়সা বাজ ধরে তাস খেলা! ও তো জয়া খেলা! জয়া খেললে 
পাপ হয় না তোমাদের? নাকি পুরুষের পাপ বলে িছু নেই ?, 

'পুরুষের আবার পাপ নেই! প্রবোধ বলে, মহাপাপ হচ্ছে 'বিয়ে করা।' 
বলেই সবলে আকর্ষণ করে সুবর্ণলতার পাথর-কঠিন দেহটাকে । : 


তারপর ? 

গাঁড়য়ে চলে দিনরান্রি। 

যথানিয়মে সকালে সূর্য ওঠে, সন্ধ্যায় অস্ত যায়, মুন্তকেশী গঞ্গাস্নানে 
যান, মুস্তকেশীর ছেলেরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় আর ছুটির দিন সারাদন তাসের 
ঘন ঘন তামাক সাজে ।... 

আজকাল আবার আর এক নতুন ফ্যাসান উঠেছে চা খাওয়া । চায়ের সাজ- 
সরঞ্জাম কেনা হয়েছে মহোৎসাহে চা বানিয়ে তাসের আন্ডায় সরবরাহ করা 
হচ্ছে। 

চলছে যথারশীতি। 

কিন্তু মুস্তকেশীর মেজছেলে! 

সেকি যোগ দিচ্ছে তাসের আড্ডায় ? 

তার চাঁরত্ত কোন্‌ কথা বলে ? 


॥ ১৩ ॥| 


বাসনমাজা ঝি হরিদাসী পৃজোয় পাওয়া কাপড়খানা বাসায় নিয়ে গিয়ে আবার 
ফেরত 'দতে এল। বলল 'নাট্রঃমার্কা কাপড় চলবে 'ন 
ঠাকুমা, ও বালাতি কাপড় আমাদের বস্তিতে বারণ হয়ে 
গেছে। 
সন্ধ্যের দিকে ইদানীং যেন মুস্তকেশ+ চোখে একট 
কম দেখছেন, তাই সহসা ঠাহর করতে পারলেন না 
এ ব্যাপারটা কি। চোখ কুচকে ঘর থেকে গলা বাড়িয়ে 
৮ বললেন, ণক বললি! কিসের কি হয়েছে ?' 
বারণ হয়ে গেছে গো ঠাকুমা, বাঁলাত কাপড় পরা 
বারণ হয়ে গেছে! ও পরলে নাঁক দেশের শত্তুরতা করা হবে !' 
মুস্তকেশী চোখে-কানে যাঁদই বা কিং খাটো হয়ে থাকেন. গলায় খাটো 





সুবর্ণলতা ১০৭ 


হন নি। ক্লুদ্ধকণ্ঠে বলেন, “কাপড় ফেরত দিতে এসোঁছস! এত বড় 
আসূপদ্দা! বাজারের সেরা কাপড় এনে দিয়েছে মেজবাব্‌, আর তুই...কই 
পেবো কোথা গেল ? দেখে যাক ছোটনোককে “নাই' দেওয়ার ফল! কাঁচা পয়সা 
হয়েছে তাই দু হাতে পয়সা ছড়াচ্ছে বাবু । ঝিয়ের কাপড় চোদ্দ আনা! ওই 
যে--পারবার রাতাঁদন বলেন, “ঝি বলে কি মানুষ নয় ; গরীব বলে কি মানুষ 
নয়?” তারই ফল! তখনই বলেছিলাম, এত বাড়াবাঁড় ভাল নয় পেবো, যা 
রয়-সয় তাই কর। ও-কাপড় বদলে আট-ন আনার একখানা কাপড় এনে দে। 
সে কথা শোনা হল না. এখন দেখে যাক আসূপদ্দা! সেই কাপড় অপছন্দ করে 
ফেরত দেওয়া-_ 

নর রগ নালািানিাদ বাগ 
চলবে 'ন। 

'ওলো থাম থাম, তুই আর কথার কায়দা শেখাতে আসিস নি! যার নাম 
ভাজাচাল তার নামই মুঁড়, বুঝাঁল? ছোটমুখে লম্বা লম্বা কথা !' 

হাঁরদাসী আরো বেজার গলায় বলে, “ছোটনোকে কথা কইলেই তোমাদের 
কানে “লম্বা” ঠেকে ঠাকুমা ! বদলে না দাও কাপড় চাই না, গালাগাল কোর না।' 

গালাগাল! গালাগাল কার আম 2" মুত্তকেশী ঘর থেকে বোরয়ে 
আসেন, বলেন, বোরয়ে যা! বোরয়ে যা আমার বাঁড় থেকে! ভাত ছড়ালে 
কাকের অভাব 2 

তা কালটা তখনো তাই ছিল। 

ভাত ছড়ালে কাকের অভাব ঘটত না। তবু কে জানে কোন্‌ দ:ঃসাহসে 
হারদাসী চাকার যাওয়ার ভয়ে কেদে পড়ে বলে উঠল না. 'কাল মা দুগ্গার 
পূজো” এই বছরকার দিনে তুমি আমার অন্নটা খেলে ঠাকুমা ! 

না, বলে উঠল না। 

কে জানে, কোন্‌ শন্তিতে শীন্তলাভ করে অগ্রসন্ন গলায় বলে উঠল, “অন্যায় 
রাগ করলে নাচার ঠাকুমা! তোমার একখানা কাপড় পরে তো বাসায় আম 
জাতে ঠেকা হয়ে থাকতে পারি না। দেখ গে যাও না, রাস্তায় কী কান্ডটাই 
হচ্ছে! পুলিসের হাতে মার খেয়ে মরছে, তব্‌ মানুষ “বন্দে মাতাং!” বলছে! 
এতটুকুন-টূকুন ছেলেগুলো পর্যন্ত মার খাচ্ছে, গান গাইছে। দোকান থেকে 
কাপড় লূঠ করে বাবুরা সব বালাত কাপড়ে আগুন ধাঁরয়ে দিয়ে বস্তর-যাঁজির 
ছে এরপর সব নাক স্বদেশী হবে, নেকচারবাবৃরা সেই সেই নেকচারই 
দিয়ে বেড়াচ্ছে ।.. আমাদের বাঁস্ততে পর্যন্ত তোলপাড় কাণ্ড চলছে। খালি এ 
বাঁড়র বাবুদেরই চোখে কানে ঠ্বীল আঁটা! 

ছেলের বালির বাঁটি হাতে করে রান্নাঘর থেকে আসাছল সংবর্ণলতা, 
দাঁড়য়ে পড়েছে কাঠ হয়ে। বাঁটটা কাত হয়ে গিয়ে বাঁর্ল পড়ে গড়াতে শুরু 
করেছে সে খেয়াল নেই। 

এ বাঁড়র বাবুদের চোখে-কানে ঠুঁলি আঁটা! 

এ বাঁড়র বাবুদের চোখে-কানে ঠাঁল আঁটা! 

এ বাঁড়র বাবুদের! 

চোখে-কানে ঠাঁল! 

সুবর্ণলতার মাথার মধ্যে লক্ষ করতাল বাজতে থাকে, 'এ বাঁড়র 
বাবুদের--1' 


৯০৮ সুবর্পলতা 


বাসনমাজা ঝিয়ের মূখে শুনতে হলো, এ বাঁড়র বাবুদের চোখে কানে 
ঠলি! যে কথা সুবর্ণলতা ভাবছে, সে কথা ওর চোখেও ধরা পড়ে গেছে 
তাহলে! 

স্‌বর্ণলতা তো জানতো, শুধু এ বাঁড়র বাবুদের চোখেই নয়, ঠুলি আঁটা 
এ বাঁড়টারও। আত্টেপষ্ঠে ঠুঁল আঁটা। রাজরাস্তার মৃখর হাওয়া এ গাঁলর 
মধ্যে ঢুকে আসে না। বাঁস্তিতে যায়, যায় গাছতলায়, শুধু এ গাঁলর মধ্যে 
ঢুকতে চাইলে, গাঁলর বাঁকে বাঁকে ভাঙা দেওয়ালের গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে 
বোবা হয়ে যায়। 

কন্তু আশ্চর্য, সুবর্ণলতার চোখ-কান এত খোলা থাকে কি করে! সবর্ণ- 
লতা কেন বাইরের জগতের বাতাসে স্পান্দত হয়, বাইরের ঝড়ে বক্ষুত্থ হয়, 
বাইরের সঙ্গে 'বাঁচ্ছন্ন হয়ে থাকাকে ঘৃণার চোখে দেখে! 

স্‌বর্ণলতাকে এই চারখানা দেয়ালের ভিতরে বাইরের জগতের বার্তা এনে 
দেয় কে? 
আর যে বার্তা অন্য সকলের কানের পাশ 'দয়ে ভেসে যায়, গায়ের চামড়ার 
উপর দিয়ে ঝরে পড়ে, সে বার্তা সুবর্ণলতার গায়ের চামড়াকে জবালয়ে ফোস্কা 
পাড়িয়ে দেয় কেন ? কেন কানের মধ্যে গরম সাঁসে ঢেলে মনের মধ্যে তাঁর ক্ষতের 
সৃ্টি করে 2 

হারিদাসশর চোখে যাঁদ ধরাই পড়ে থাকে এ বাঁড়র বাবুদের চোখে-কানে 
চুলি আটা, তাতে স্‌বর্ণলতার চোখ ?দয়ে আগুন ঝারাটা বাড়াবাঁড় নয় কি ? 
আর সুবর্ণলতা যাঁদ সেই ঠুল উন্মোচন করতে চায়, ধৃষ্টতা ছাড়া আর ক? 

সারাজীবন কি শুধু ধূষ্টতাই করবে সংবর্ণলতা ? 


সংসারের সমস্ত সদস্যর পূজোর কাপড় কেনা প্রবোধচন্দরের ডিডাট, কারণ 
তার পয়সা কাঁচা পয়সা! আর তার পারবারের ব্দাক্ধটা কাঁচা বুদ্ধি! 

সুবর্ণ বলোছল, 'এবারে 'বাঁলীতি কাপড় আনা চলবে না। জোলা তাঁতর 
জেলে গামছা কাপড়ও তার চেয়ে ভাল।' 

প্রবোধ নাক তুলে বলোছিল, “তোমার ভাল তো পাগলের ভাল! সে কাপড় 
কে ছোঁবে 2 

“সে চৈতনা এনে দিলে সবাই ছোঁবে, মাথায় করে নেবে! 

'চৈতন্যদায়িনী দিক তবে চৈতন্য, আসছে বছর কাজে লাগবে । বলে 
সুবর্ণর কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে একবোঝা যথারীতি বালতি কাপড়ই এনে 
ফেলোঁছল প্রবোধ। এনোছিল আলতা, চীনোসদ্দুর, মাথা ঘষার মশলা । 

যার যার কাপড় তার তার ঘরে উঠে গেছে, ছোট ছোট ছেলেগ্‌ূলো দন 
গুনছে কখন পরবে সেই পজোর কাপড়, আর ছোট ছোট মেয়েগুলো হিসেব 
করছে কার কাপড়ের পাড়টা ভাল! 

সূবর্ণ ভেবে রেখোঁছল যে যা করে করুক, সে পরবে না ও শাঁড়। সে 
আপনার সংকজপে অটুট থাকবে। 

যচ্ঠীর দিনে যখন নতুন কাপড়ের কথা উঠবে, স্বর্ণ বলবে পৃজোর 
পৃণ্যাদনে অশুচি বসত পরবার প্রবৃন্ত নেই তার। কোনো দনই নেই। সে 
ত্যাগ করবে এবারের পূজোর কাপড়। 

িল্তু হারদাসীর ধিন্ধারে সে সন্কন্পের পাঁরবর্তন হল। 


সুবর্ণলতা ১০৯ 


দাউ দাউ আগদন জেলে জবালিয়ে পাড়িয়ে খাঁসয়ে দাও ওই ঠুলি। 
নয়তো মযান্ত দিক সুবর্ণলতাকে এই নাগপাশ থেকে । তাঁড়য়ে দিক ওরা সুবর্ণ- 
লতাকে, দূর করে দিক তাকে তার ভয়ঙ্কর দুঃসাহসের জন্যে। 

মীরাবাঈয়ের মত পথে বোৌরিয়ে পড়ে দেখবে সুবর্ণ পাঁথবার পারাধটা 
কোথায় ঃ 

কতদিন কল্পনা করেছে সুবর্ণলতা এরা সুবর্ণকে তাঁড়য়ে দিল, সবর্ণ 
সাহস করে চলে গেল। 

বাইরের লোকের কৌতূহলন চোখকে এড়াবার জন্য ঢুকে পড়ল না তাড়া- 
তাঁড় মুস্তকেশনর শন্ত বেড়ার মধ্যে। 

তারপর সবর্ণলতা পথে পথে ঘুরছে. ঘুরছে তীর্থে তীথে” ঘুরছে ওই 
সব মহাপুরুষদের দরজায় দরজায়, যাঁরা "স্বদেশ" করেন। 


চোখ জলা করানো ধুম্কুণডলী পাক খেতে খেতে নচে নামছে...তার 
সঙ্গে নেমে আসছে তীর আর পাঁরাঁচত একটা গম্ধ। 

এ বাড়ির ছাদের আকুলতা আকাশে ওঠবার পথ পায় না, তাই নিরুপায় 
ধোঁয়াগলো ছাদের আলসে টপকে গাঁতালের দিকে নামতে চায়। 

প্রথমটা কারো খেয়াল হয় নি, খেয়াল হল চোখ জ্হলায়। তারপর পোড়া 
গন্ধথ। ন্যাকড়া পোড়ার গন্ধ তো আর চাপা থাকে না! 
এরিটিরিরিরগীরি সারদা ররানিররির রুনি কারা 


। 
কোথায় কি সর্বনাশ ঘটাচ্ছে পাজীগুলো ! 
সর্বনাশে উমাশশশর বড় ভয়, উমাশশশ এঁদক-সোঁদক আঁকিয়ে দেখতে 
দেখতে আবিজ্কার করল ঘটনাটা । 

রান্নাঘরের ছাদে ধূম্ালোক, জড়ো-করা চারটি কাপড় পুড়ছে, ৩'র ধারে 
কাছে কটা ছেলেমেয়ে চোখের জালা নিবারণ করছে চোখ রগড়ে রগড়ে, আর 
তার সঙ্গে করছে হৈ চৈ। 


ইচ্ছে করে এ কী পোড়াতে বসেছে মেজবৌ ? কাপড় না. ভাঁবষ্যং? তাসে 
তো পোড়াচ্ছেই জীবনভোর! আ-জীবনই তো ধৰংসকার্ চালাচ্ছে! তবু সে 
আগদনটা ছিল অদৃশ্য, এবার কি বাঁড়টাতেই আগুন ধরাবে মেজবো ? 

[কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়য়েইই রইল উমাশশী। তারপর আঁচল "দিয়ে 
চোখটা মুছল। জল পড়ছে চোখ 'দিয়ে, জালা করছে। 

ধৌঁয়ায় ? 


না সুবর্ণলতার অসমসাহাসক দুঃসাহসের স্পর্ধায় ? 

আঁবরত এইরকম করে চলেছে সূবর্ণলতা' তবু তার ভাগ্য উৎলে উঠছে 
দিন দিন। দু হাতে খরচ করছে, জুতোয় সবাইকে কিনছে, সোনার 
ঠুলি দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখছে লোকের । 

মেজকর্তা করেন ? 


১১০ সুবর্ণলতা 


সেটা তো বাইরের হাত! 

[ভিতরের ঘরের আধকারটা কার ? 

মেজঠাকুরপো যখন সকলের পৃজোর কাপড় কিনে এনে মায়ের কাছে ধরে 
দেন, তখন কি মনে হয় না মেজবৌই দিল 

অনেক দ?ঃখে আর অনেক ধোঁয়ায় বাঘপাচ্ছন্ন চোখ দুটো মুছে নিয়ে উমা- 
শশী রুদ্ধকণ্টে বলে ওণে, এ ক হচ্ছে মেজবো। 

মেজবৌ কিছ উত্তর দেবার আগেই একটা ছেলে বলে উঠল, 'বস্তর-যাঁজ্ঞ 
হচ্ছে জেঠিমা । সাহেবদের তোরি কাপড় আর পরা হবে না, পড়ে ছাই করে 
দিয়ে সেই ছাইয়ের টিপ পরবো আমরা ৷" 

ছাইয়ের টিপ! 

এসব কী কথা! 

কোন্‌ ভাষা! 

উমাশশী 'দশেহারা হয়ে তাঁকয়ে দেখে মেজবৌয়ের দিকে । ধোঁয়া উঠছে 
বিলক্ষণ, তবুও আগুন জবলছে দপ্‌ দপ্‌ করে, আর সেই আগুনের আভায় 
আনন্দের আভার মত জহলজবল করছে সূবর্ণলতার মুখ। মাথার কাপড় 
খোলা, গায়ের কাপড়ও আঁবনাস্ত' এ বাড়ির এীতিহ্য অগ্রাহ্য করে সৌমিজ পরে 
এই যা! 

ওকে যেন 'তাদের পারাচত মেজবৌ মনে হচ্ছে না। ওকে ধিক্কার দেবে 
উমাশশশী ? 

কাম্পিতকণ্ঠে উচ্চারণ করলো, “এ কী কথা মেজবোৌ 2" 

মেজবৌ সেই আহনাদে জবল্জব্ল মুখে বলে, হোম হচ্ছে! 

উমাশশনর আর কথা যোগাতো কি না কে জানে, তবে কথা থামাতে হল। 
মাথার ঘোমটাটা দীর্ঘতর করতে হল। ঘাড় 'ফারয়ে দেখে সবর্ণলতাও মাথায় 
অচিলটা তুলে দিল! 

ভাসুর নয়, দ্যাওর। তবু বয়সে বড় বিজ্ঞ পুরুষ দ্যাওর। ভাসুরের মতই 
সমশহ করা দরকার বোক। সেটাই 'বাধি। 

প্রভাস চলে এসেছে ছাতে, তার হাতে হাত জাঁড়য়ে চাঁপা। চাঁপার চোখ 
ক্লল্দনারন্ত। কাঁদতে কাঁদতে কাকাকে ডেকে এনেছে সে, মা তাদের পূজোর 
কাপড় আগুন জেলে পাড়িয়ে দিচ্ছে বলে। 

বাঁড়র বিচারকের পোস্টটা সেক্জকাকার, সেই জানা আছে বলেই পাকা মেয়ে 
চাঁপা তার কানেই তুলেছে খবরটা । 

“ক কচ্ছে মা? 

ধমকে উঠোছল সেজকাকা। 

“পুজোর কাপড় প্যাঁড়য়ে দিচ্ছে! সব কাপড় ॥ 

হু-হু করে কেদে উঠোঁছল চাঁপা । “কই কোথায়-' বলে বীরদর্পে এগিয়ে 
এসেছে প্রভাস, তবু এ ধারণা করে নি। 

এসে দাঁড়য়ে পড়েছে সে-ও। 

পরক্ষণেই ব্যাপারটা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না তার। কারণ পথে- 
ঘাটে এ ব্যাপার ঘটতে দেখছে যে! 

কিল্তু বাড়তে? 

বাড়তে সেই থিয়েটার ? 


সবর্ণঙতা ১১১ 


আর সেই থিয়েটারের আভিনেন্রশ বাড়ির বৌ 2 

বড় ভাজ। কানে হাত দেওয়া চলবে না, অতএব তার ছেলেটাকেই কান 
ধরে টান মারে প্রভাস, যতটা জোরে টানলে শুধু ছিড়ে পড়তে বাকি থাকে। 

'পাঁলাটক্সের চাষ হচ্ছে বাঁড়তে 2 পালটিক্সের চাষ? লডার কে মা 
জননী 2 তা বাড়িতে শাঁড় পরে বসে ঘোমটার মধ্যে খ্যামটা নাচ নেচে ছেলে- 
গুলোর পরকাল ঝরঝরে করবার দরকার কি? কোঁচা কাছা এব্টে রাস্তায় 
২৬ পড়লেই হয়! ইংরেজরাজকে খবর পাঠাই, তোমাদের অন্ন এবার 

1” 

বাঙ্গ মুখটা বিকৃত করে প্রভাস। 

সুবর্ণলতা যে স্রেফ পাগল হয়ে গেছে তাতে আর সন্দেহ ক! নচেৎ অত 
বড় দ্যাওরের সামনে গলা খুলে কথা বলে? আর তাকেই বলে? 

বলে কিন্য, যার যেমন বুদ্ধি, তার তেমন কথা! এ বাঁড়র পুরুষদের 
চেয়ে হারিদাসীর ভাইও অনেক উশ্চ্দরের মানুষ! 

হঠাৎ উমাশশী দ্ুতপায়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দূড়-দুড় করে চলে যায়। 

দ্যাওরের হাতে বড় ভাজের মার খাওয়া দেখতে পারবে না সে। 

আর ততক্ষণে তো আরো সবাই গিয়ে জ্টছে ছাতে! তার মানে সভাস্থলে 
লাঞ্থলা! 

কিন্তু আশ্চর্য! আশ্চর্য! 

লাঞ্ছনা হলো না সোঁদন সুবর্ণলতার। 

বোধ কাঁর মূক হয়ে গেল সবাই সুবর্ণ তার বুকের পাটায়। কিংবা ভাবল 
পাগল হয়ে গেছে! সুবর্ণর ব্যবহারে এরা যখন বাক্যাহত হয়ে যায় তখন এরা 
বলে, 'পাগল হয়ে গেছে! মাথার চিকিৎসা করা দরকার ! 

আজও বলল । 

প্রভাসই বলল। 

হয়তো মান বাঁচাতেই বলল । 

মারতে গেলে ফিরে উল্টে মার খাওয়া অসম্ভব নয়। আর সাঁত্যই কিছ? 
আর একটা শিক্ষিত ভদ্রলোক বড় ভাইয়ের স্তর গায়ে হাত তুলতে পারে না। 

এক মারানো যেত মেজদাকে 'দয়ে! 

কিন্তু তাই বা হচ্ছে কই? 

মেজদ্কেও যে গৃণতুক 'করেছে! 

সংসারে যখন ভয়ঙ্কর কোনো ঢেউ তোলে সুবর্ণলতা, মনে হয় এবারে আর 
রক্ষা নেই তার। এবারে সাত্য সাঁত্যই মাথা মাঁড়য়ে ঘোল ঢেলে গাঁলর বার 
করে দেওয়া হবে তাকে। 
কিন্তু নাঃ, সে আশঙ্কা গর্জন করতে করতে তেড়ে এসে হঠাৎ ভেঙে 
গিয়েই কেমন ছাড়িয়ে পড়ে। যেন ফেনার রাশির মত স্তিমিত হয়ে মিলিয়ে 
যায় বাঁল্র স্তরে। 

প্রবোধচন্দ্র এসে সব শুনলো । 
্‌ মূস্তকেশণ কথাটা আর এক 'সূরে বললেন। বললেন, 'বছরকার 'দনে 
লক্ষণ করে কেনা পূজোর কাপড়চোপড়ে আগুন, সেই অবাধ ভয়ে আমার 
বকের কাঁপন থামছে না বাবা! না জানি কণ দূর্ঘটনা আসছে, কণ অলক্ষণ ঘটবে 
সংসারে! কাপড়ের একটা স্বতো উড়ে আগুনে পড়লে "ফ্বস্তেন” করতে হয়, 


১১২ সুবর্ণলতা 


আর এ কী! তোমার পাঁরবার যখন এমন দা্শীন্ত তখন তোমার উচিত হয় নি 
ওর অমতে কাজ করা!' 

প্রবোধ মরমে মরে যায়। 

প্রবোধ ঘটা করে ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করতে যায় বহরমপুরের পাগলা- 
গারদে পাঠাতে হলে কি কি উপায় অবলম্বন করা দরকার । 

তারপর প্রবোধ মা'র হাতে একশোখানি টাকা তুলে দেয়। বলে, 'মা, কাপড় 
কেনায় ঘেন্না ধরে গেছে আমার, এ টাকা থেকে প্রকাশকে দিয়ে যা হয় করে ?কছ, 
কনিয়ে নিও ।, 

কিন্তু বহরমপ্রের 1াকিট 'ি কেনা হয়োছল স্বর্ণর ? 

কোথায় ? 

টাকট যা কেনা হল সে তো স্বদেশ মেলার! 

বাঁড়সুদ্ধ ছেলেমেয়েকে আর ননদ বরাজকে 'নিয়ে মহোৎসাহে দুখানা 
গাঁড় ভাড়া করে স্বদেশশ মেলা দেখতে গেল সংবর্ণ। 

কিনে আনলো স্বদেশী দেশলাই, স্বদেশশ 1চরুণন, স্বদেশী সাবান। 
সবাইকে বলালো। বললো, পুজোয় এবার ঢাকাই কাপড় কেনা হবে। ঢাকাই 
আমাদের নিজস্ব বাংলাদেশের [জানিস । 

হেরেও কোন্‌ উপায়ে জিতে যায় সুবর্ণ” মার খেতে গিয়েও মাথায় চড়ে 
বসে, এ এক অদ্ভুত রহস্য। 

যে যতই তড়পাক, শেষ পর্যন্ত কোথায় যেন ভয় খায়। 

আর 'বজায়নী সুবর্ণলতা খানিকটা করে এগিয়ে বায়। এ বাঁড়র বৌরা 
মেলায় যাবে, এ কথা কেউ দশ দন আগেও কজ্পনা করতে পারতো ? 

থচ সেই অকজ্পিত ব্যাপার ঘটাল সবর্ণ। আর ' আহাদে ভাসতে 
ভাসতে বলল, “আসছে বারে আমও মেলায় দোকান দেব!” 

'আসছেবার আমিও মেলায় দোকান দেব! বলোছল স:বর্ণসতা আহাদ 
ছলছল করে। ভেবোঁছিল এইবার বুঝি বন্ধনমুস্তির মল্ল পেল সে। ভেবোছিল 
আলোর রাস্তায় হঁটিবার আঁধকার অর্জন করবে সে এইবার। কান ভানু বড় 
হয়ে উঠেছে, তাদের অবলম্বন করে বাঁহজগতের স্বাদ নিতে বোরয়ে আসবে 
রাজপথে। 

চাঁপাকে সুবর্ণ ঘৃণা করে, চাঁপা যেন তার মেয়ে নয়। সেজমেয়ে চন্দনটা 
বোকাটে নিরীহ । ছেলেদের ওপর অনেক আশা । এ আশা ও পোষণ করছে 
এখন থেকেই, আর একট বড় হোক ভান, ওকে সঞ্চগে নিয়ে কাশী চলে যাবে 
সে একদিন। গিয়ে দেখবে তার সেই কুল ভেঙে অকৃলে ভাসা মাকে। 

আজ পরযন্তি 'িনয়ে গেল না প্রবোধ! খুব ভাল মানাঁসক অবস্থায় কখনো 
ি ইচ্ছে প্রকাশ করে নন স্বর্ণ 2 বলে নি কি, 'ন বছর বয়সে সেই শেষ মাঝে 
দেখলাম! আর কি বাঁচবেন মাঃ জবনে আর দেখা হবে না!” 

বলেছে। 

প্রবোধও প্রবোধ দিয়েছে, 'কেন বাঁচবেন না? ধ্যং! কত বয়েস তোমার 
মার! আমার মায়ের থেকে তো আর বড় নয়? তোমার এই এান্ড-গেন্ডি 
নিয়ে তো আর কাশী যাওয়া চলে না! ওগুলো একট; বড় হোক! 

সুবর্ণ ব্য্গের হাঁস হেসে বলতো, ওগুলো বড় হলেই শখ মিটবে 
তোমার ? রেহাই দেবে ?' 


স্বর্পলতা ১১৩ 


প্রবোধ আভমানাহত গলায় বলতো, “এই নিয়ে চিরাদন ঘেন্না দিলে । তবু 
ভেবে দেখলে না কোনোদিন আমার সেজ্মভাই ছোটভাইয়ের মতন স্বভাব খারাপ 
করতে যাই নি! 

আশ্চর্য, ওই মোক্ষম কথাটা ভেবে দেখতে না সুবর্ণ! 

বরং বলতো, “ওরাই জগতের আদর্শ পুরুষ নয়! 

তারপর একদিন কোথা থেকে একটা “কবিরাজ পান' এনে হাজির করল 
প্রবোধ। চাপ চাপ বললো, 'ভোরবেলা খালি পেটে খেয়ে নেবে, বাস! তৃঁম 
ধা চাও তাই হবে, আর “ন্যান্জার” হতে হবে না!' 

সুবর্শ হেসে বলোছল, পবষ দিচ্ছ না তো আপদের শান্তি করতে 2 

প্রবোধ সর্পাহতের মত মূখে বলোছিল, “এই কথা বললে তুমি আমায় 2 
এই সন্দেহ করলে ? ভুলিয়ে তোমায় বিষ খাওয়াচ্ছি আম ? বেশ তা যাঁদ ভেবে 
থাকো, খেও না! 

সুবর্ণলতা আরো হেসে উঠোছল, নাঃ, ঠাট্রাও বোঝো না! মাথা না 
ঝুনো নারকেল! আর বিষ বলে ভয় পাবো কেন গো? বিষের জন্যেই জো 
হবে নাঃ 

তা বিষের কথাটায় কান দেয় নি প্রবোধ, শেষের কথাটায় দিল, পরম আনদ্ছে 
মশগুল হয়ে বলল, “পাপ কিসের 2 এগিয়ে দিয়েছিল সেই কবিরাজণ পান। 

সুবর্ণও বোধ কার আশায় কম্পিত হয়োছল। রেহাই যাঁদ নেই তো 
উপায়' একটা ধরা হোক। সেজভাই ছোটভাইয়ের মত প্রবোধেরও যাঁদ স্বভাব 
খারাপ হত, সুবর্ণ কি বাঁচত নাঃ বলেছেও তো কতবার বরকে! “তাই হও 
তৃমি। আম বাঁচ।' 

কিন্তু খারাপ হতে ফাবার জন্যে যে সাহসের দরকার তাই বা কোথান্স 
প্রবোধের 2 

নেই। 

তাই প্রবোধ সুবর্ণলতার কাছে “পান' নিয়ে এসে দাঁড়ায়। বলে, “মহোষধ।' 

মহোষধ! 

সুবর্ণ তাই তারপর থেকে নিশ্চিন্ত আছে। স্বর্ণ বিশ্বাস করেছে আর 


ভেবে দেখে নি, যে মেয়েরা স্বদেশ মেলা খুলে দোকান 1দচ্ছে তারা কাদের 
ঘরের মেয়ে! 

তারা কি সুবর্ণর ডাস্টবিন ওলটানো সরু সরু গাঁলর মধ্যে থেকে বেরিয়ে 
এস্ছে ? 

নাঃ, তারা রাজরাস্তার, তারা প্রাসাদের । 

তাদের জন্যে তাদের অকৃপণ 'বধাতা রেখেছেন অনেক আলোর প্রসাদ । 
ভাগ্যের টীকা ললাটে পরেই পাঁথবীর মাটিতে অবতার্ণ হয়েছে তারা। 

সুবর্ণ যাঁদ নিজের ওজন বুঝতে না 'শিথে তাদের রাস্তায় হাঁটতে চায়, 
তাদের আকাশে চোখ তুলতে চায়, স্বর্ণর কৃপণ বিধাতা ঘা মেরে সচেতন 
কাঁরয়ে দেবেন বৌকি। 

সুবর্ণর মাকেও তো 'দয়োছলেন। 

৮ 


১১৪ সুবর্ণলতা 


সুবর্ণর মা যখন ভেবেছিল, 'আঁম পাই নি, কিন্তু আমার মেয়ের জনে; 
মুঠোয় ভরে আহরণ করে নেব সেই আলো, আর সেই আলোর সাজে সাঁজয়ে 
তাকে পাঠিয়ে দেব ওই রাজপথে. যেখান 'দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর এক পাঁথবীর 
মেয়েরা! 

তখনও কি সুবর্ণর মায়ের বিধাতা বড় একটা হাতৃঁ্ড বাঁসয়ে দেল নি.তার 
ধৃষ্টতার উপর 3 

সবর্ণর মা যাঁদ বাকী জীবনটা শুধু এই কথাই ভেবে ভেবে দেহপাত 
করে- ইচ্ছায় আনচ্ছায়, প্রতারকের প্রতারণায়, অহগকারীর নিলজ্জ শান্তর 
মন্ততায়, যে কোনও ঘটনায় ঘাঁটত বিয়েও “চরস্থায়িত্ব* পাবে কেন, মানৃষকে 
নিয়ে মানুষ পুতুল খেলা করবে কেন ৮-তবু স্মবর্ণর তাতে কোন্‌ লাভটা 
হবে? 

সুবর্ণর প্রবতার্কাল লাভবান হবে 2 সুবর্ণ দেখতে পাবে সে লাভ £ 

সুবর্ণ যাঁদ ওর সরু গাঁলর শিকলটা ভাঙবার দুরল্ত চেষ্টায় নিজেকে 
ভেঙে ভেঙে ক্ষয় করে, কোনো একাঁদন শিকল খসে পড়বে * 

কে জানে সে কথা! 

সুবর্ণ অন্তত জানে না। 

সুবর্ণ পরবতর্ণ কালকে জানে না। 

সুবর্ণ 'নজে চায় শিকল ভেঙে বোঁরয়ে পড়তে । চায় আলোর মাঁন্দরের 
টিকিট কিনতে। 

কেনা হবে না! 

তার বিধাতা তাকে আঘাত করবে. ব্যঞ্গ করবে! 


সই ব্যঙ্গ ধরা পড়ল সূবর্ণর কাছে। 

ধরা পড়েছিল, তবু চোখ বুজে ছিল। খারাপ মনটাকে নিয়ে জোর করে 
ঘুরে বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ সেই অনেক দিন আগে পড়া ময়াল সাপের প্রবন্ধটা মনে 
পড়ে গেল। 

ভাবতে ভাবতে নিঃ*বাস ত্রুম্ধ হয়ে এল তার, বস্ফারত হয়ে এল চোখ 
দুটো, আড়্ট কঠিন হয়ে উঠল শরীর । হাত দুটো আপনি মুঠো হয়ে গেল। 

ঘরে কেউ থাকলে দেখে চমকে যেত, চেপচয়ে উঠত। 

এর পর আর কি করতো সুবর্ণ কে জানে! 

কে জানে চীৎকার করে কেদে উঠতো. না দেয়ালে মাথা ঠুকাতো ১ 

মোক্ষম সময়ে প্রবোধচন্দ্র এসে ঘরে ঢুকলো । 

দেরাজ থেকে তোলা তাসজোড়াটা বার করে নিতে এসেছিল প্রবোধ। 

আড্ডায় লোকসংখ্যা বোশ হয়ে গেছে, কাজেই একদল বেকার ব্যাস্ত খেলো- 
মটাচ্ছে। 

অবস্থাটা অস্বস্তিকর ! 

প্রভাস বলেছে, 'দূরছাই, আর একটা “বাসর” বসূক! মেজদা, তোমার 
ঘ”র আরও তাস আছে না? 

প্রভাস ইচ্ছে প্রকাশ করেছে, প্রভাস বলেছে! হল্তদন্ত হয়ে ছুটে এসোছিল 
প্রবোধ তোলা তাসটা নিতে! কিন্তু সুবর্ণর মূর্তি দেখে থমকে দাঁড়ালো । 


পুবর্ণলতা ১১৫ 


মুঠোপাকানো হাত' আর সে হাতের স্ফীত শিরাগুলো দেখে উদ্নই হলো 
তার। সাঁত্য বলতে, এমানতেই সুবর্ণকে ভয়-ভয় করে প্রবোধের। নিয়ে ঘর 
করে বটে, কিন্তু কোথায় যেন অনন্ত ব্যবধান, ! 


সাত্য, বাঁড়র সমস্ত স্তীলোকগৃঁলকে বুঝতে পারা যায়, পারা যায় না 
শুধু নিজের স্নীঁকে! এ দক কম মন্দ্রণা! 

অথচ ওই বুঝতে না পারাটা স্বীকার করতে বাজশ নয় বলে না-বোঝার 
জায়গগুগো চোখ বুজে এাঁড়স্লে ষেতে চায়, ভয় করে বলেই শাসনের মাত্রায় 
হ্ছসা মাতা হাডায়। 

আশ্চর্য! 

মেয়েমানুষ্ন পরচ্চা করবে, কৌঁদিল করবে, ছেলে ঠেঙাবে, ভাত রাঁধবে, আর 
হটি, মুড়ে বসে এককাঁস চচ্চাঁড় দিয়ে একগামলা ভাত খাবে, এই তো জানা 
কি) অাতি বাড়া পেতে ঘরের পন্রদষেরা পাছে মন্চকে হেসে প্রশ্ন করে, বেড়াল 
ডঙোতে পারবে কনা" তাই পরুষ্ের চোখের সামনে কখনো ভাত বাড়বে না 
ানভ্রেদের। এই সবই তো চিরাচারত। 

প্রবোধের ভাগ্যে সবই উল্টো । 

সৃম্টিছাড়া ব্যতিক্রম! 

ইচ্ছে হাঁহল, না দেখার ভান করে কেটে পড়ে, কিল্তু হলো না। চোখো- 

৪৮ হয়ে গেল। অগত্যাই একটু এগিয়ে এসে বলতে হলো, “কী ব্যাপার ? 
শরীর খারাপ হচ্ছে নাকি ?' 

সুবর্ণ শুধু চোখ তুলে তাকালো, সুবর্ণর নিঃমবাসটা আরো দ্ুত হলো। 

'ছলো কি 2 কামারের হাপরের মত অমন বড় বড় নিঃ*বাস ফেলছ কেন? 
শরীর খারাপ লাগছে ১ বড়বৌকে ডেকে, দেব ?' 

এবারে আর নিঃ*বাসটা 'ফোঁস করে উঠল না, ফোঁস করে উঠল স্বর্ণ 
[নজেই,.'কেন, বড়বৌকে ডেকে দেবে কেন? 

'বাঃ, ডেকে দেব কেন! কাঁ হলো না হলো বড়বৌ বুঝবেন। 

সুবর্ণ শুধু ফোঁসই করে না. এবার তধর একটা ছোবল দেয়, 'বড়বৌ 
বুঝবেন! আর তুম বুঝবে না? কবিরাজী পান এনে ভোলানো হয়োছল, 
কেমন? মিথক, জোচ্চোর!' 

প্রবোধ ওই আর্ত মুখের দিকে তাকায়। 

প্রবোধের ব্যাপার বুঝতে দোঁর হয় না 

আর বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই ভয়টাও কাটে। ও£. শরণর খারাপ নয়, রাগ! 
ঝবাঃ' স্বাঁস্ত নেই! . | 

ক্যাবলা-ক্যাবলা হাঁস হেসে বলে, ও. ফে'সে গেছে বাঝ তুক্‌ £ বাবা, 


$ 


আসাস্ল 


বোধ কাঁর বলতে যাচ্ছিল কোনো বেফাঁস কথা, সামলে িল। ওই সামলে 

নিতে কথার ধরনই সভ্য হয়ে যাচ্ছে। একমান্র এই তাসের আহ্ডাতেই 
যাইচ্ছেমত মুখ খুলতে পাওয়া যায়। স্লী তো নয়, যেন গুরুমশাই ! 

বলে দিথ্েও নয়! 

গুরুমশাইয়ের ভঙ্গীতেই ধমকে ওঠে তার স্ত্রী, খবরদার বলাঁছ, দাঁদকে 
ডাকবে না! 


'ডাকবো নাঃ বাঃ! শেষে একলা ঘরে দাঁতকপাঁট লাগিয়ে বসে থাকবে ? 


১৬, সংকর্জজ 


ওসব মেরেলণ কাণ্ড বড়বৌই ভাল বুকবে ! 
মেয়েলী কাণ্ড! 
মেয়েলী কাণ্ড! 
আর সার্পণশ নয়, যেন বাঁঘনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় সুবর্ণ স্বামীর 
উপর। যেন নখে করে ছি'ড়ে ফেলতে চায় ওর ওই খোকামির মুখোশ ।, 


কিন্তু সাঁত্যকার নখ দিয়ে তো আর সে মুখোশ ছেপ্ড়বার নয়, তাই কিছুই 
হয়ে ওঠে না। শুধু একটা আগুনঝরা প্রশ্ন ঠিকরে ওঠে, “মেয়েলী কাণ্ড 
কচি খোকা তৃঁমি? 

প্রবোধ এই আগুনের খাপরার কাছ থেকে সরে পড়তে পারলে বাঁচে, তাই 
একটা সাজানো হাঁস হেসে বলে, 'হল 'কি রে বাবা! থেকে থেকে যেন ভূত্তে 
পায়। তাসজোড়াটা কোথায়; দেরাজে আছে ? 

প্রশ্নটা বাহলল্য। 

ঘরে ওই দেরাজটা ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। 

না, আর একটা 'জিনিস আছে। 

ইপ্ট দিয়ে উপ্চ করা একটা চৌকিও আছে। যার নখচে বাঝ্স-প্যাটরা চালান 
করবার জন্যে ওই উশ্চু করা। ষে' চৌঁকিটার উপর অনেকদিন পর্যন্ত দুনে 
ছেলে-মেয়ে নিয়েও আড়াআঁড় শুয়ে এসেছে সুবর্ণ আর প্রবোধ। ভনটে 
হবার পর থেকেই সেটাকে ছেড়ে মাটিতে শষ্যা 'বাছয়েছে সংবর্ণ। 

চোঁকিটায় এখন সারাদন গাদা করে বিছানা তোলা থাকে, আর রাত্রে 
প্রবোধ একা হাত পা ছড়িয়ে শোয়। কাঁচ-কাচা নিয়ে শুতে পারে না আর সে' 
মিসির রিল রন রক রাঃ রিতা 

। 

মনে জানে, আরাম চাইবার দাবি জন্মেছে তার। 

সুবর্ণ মাটিতে বিছানা 'বাছয়ে শোয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে, 'দিনেরৰেলা 
মাদুরে। ঘরের এ-প্রান্ত থেকে ও-্রান্ত অবাধ বিছানা কাঁথার সমাবেশ কে 
জানে অদূর ভাঁবষ্যতে আরও একটা জায়গা সঙ্কুলান হবে কোথায় ? 

কিন্তু সে ষাক। 

তাসজোড়াটা থাকলে দেরাজেই থাকবে। কিন্তু সেই সহজ নিরেশিটা দিল 
না সুবর্ণ. উঠে দাঁড়য়ে কটুকণ্ঠে বলল? “আবার তাস? 

“আস্তে” প্রবোধ বলে, গলা যে ভাসুরের কান ফাঁটয়ে দিচ্ছে! 

কিন্তু ভাসুরের নামোল্লেখেও দমে না সুবর্ণ, সমান তেজে বলে, “ওঃ, ভারি 
একেবারে সাতমহলা অট্রালিকা, তাই ভাদ্দরবৌয়ের গলা ভাসুরের কানে 
শেশছবে না! সারা বাংলায় বোবা মেয়ে ছিল নাঃ বোবা মেয়ে! তাই একটা 
খুঁজে নিয়ে বিয়ে করতে পারো 'নি-ট' 
০টি । তাই উচিত 'ছিল।' প্রবোধ বলে ওঠে. ণজভ তো নয়, 

রা 

প্রবোধ ঝনাৎ করে দেরাজ টেনে তাসটা বার করে। 

'তাস নেবে না বর্সাছ, ভাল হবে না! সোঁদনের প্রাতিজ্ঞার কথা মনে নেই? 


সুবর্ণলতা ১১৭ 


ছেলের মাথায় হাত দিয়ে 'দাব্য করোছলে না? বেহায়া নিলজ্জ! জোচ্চোর ! 

একখানা ঘরের ব্যবধানে ভাইরা আর খেলার বন্ধুরা, এ সময়ে আর গোল- 
মাল বাড়তে দিয়ে একটা কেলেওকারি করা চলে না। নইলে প্রবোধের কি ইচ্ছে 
হচ্ছিল না, ফুটবলের মত লাখিয়ে লািয়ে ঘরের বাইরে বার করে দেয় ওই 
আঁবশ্বাস্য ওুঁদ্ধত্যকে ! 

তাই কম্টে মূখে হাঁস টেনে এনে বলে, "ফুঃ, সঞঙ্কটকালে অমন, কত 
প্রুতিজ্ৰা করতে হয়। তাই বলে যাঁদ রাতের প্রাতিজ্ঞা দিয়েও মানতে হয়, তাহলে 
লতা বাঁচাই চলে না।, 

'কী; কী বললে?, 

সুবর্ণ আবার বসে পড়ে। 

প্রতি মুহূর্তে স্বামীর অপদার্থতার পাঁরচয় পায় সুবর্ণ তব চমকে চমকে 
৪ঠে। 

অথচ অপদার্থতাটা সুবর্ণর মাপকাঁটিতেই। অন্য অনেক মেয়েমানুষই 
আগল বর পেলে ধন্য হয়ে যেত। 

প্রবোধ পালায়। 

স্রেফ পালায়। 'ভাড়া-খাওয়া জানোয়ারের ভঙ্গীতে । 

শুধু বলে যায়, "8, কাকে ক বলছ হুশ নেই, কেমন : নিজে নাত) 
ফ্যাসাদ বাঁধিয়ে বসবেন, আর মেজাজ হবে যেন আগুন! 

কাকে 'কি বলাই বটে! 

কিন্তু হুশ ক সাঁত্যই নেই সুবর্ণর ? 

নাক ও চায় অপমানের অঙ্কুশে আহত হয়ে একবার অন্তত জবলে উঠুক 
প্রবোধ ? পুরূষের মত জহলে উঠুক, বঙ্ছ্রের তেজ নিয়ে জলে উঠুক? মা 
ভাইয়ের কাছে মুখ রাখতে শাসনের প্রহসন নয়, সাঁত্যকার শাসন করুক। 
স্বর্ণকে তাড়য়ে দিক, মেরে ফেলুক। সেই মরণের সময়ও যেন জেনে মরে 
সুবর্ণ. যে প্রাণীটার সঙ্গে ঘর করাঁছল সেটা মানুষ! 

কিন্তু ফলটা ফলে বিপরণত। 

সুবর্ণলতা যত উগ্র হয়ে ওঠে, প্রবোধচন্দ্র ততো নিস্তেজ হয়ে যায়। 
পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। | 

কিন্তু স্বর্ণই বা কা! 

তার মধ্যেই কি পদার্থ থাকছে আর ১ ষেটুকু ছিল, এই আত্মঘাতাঁ 
সংগ্রামে ক্ষয় হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে নাঃ তার নিজের ভিতরকার যে সৃরুচি, যে 
সৌন্দর্যবোধ এই কুশ্রী পরিবেশ থেকে মুন্ত পাবার জন্যে সর্বদা ছট্ফট করে 
মরতো, সে যে প্রাতাঁনয়ত এই 'নম্ফল চেষ্টায় 'বকৃত হয়ে উঠছে, সে বোধ 'কি 
আর আছে সুবর্ণলতার ? 

এই বাঁড় আর এই বাঁড়র মান্ষগুলোর অসোন্দর্য ঘুচিয়ে ছাড়াবার 
জন্যে নিজে সে কত অসুন্দর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, এ কথা তাকে কে বাঁঝল়ে 
দেবে! 


'কী হে প্রবোধবাবু, তাস আনতে যে বুড়ো হয়ে গেলে! 
অভ্যস্ত কথা, অভ্যস্ত 
'বাঁল 'গিম্শর আঁচল ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছে না বি! 


১৯৮ সবর্পলঙ 


হুদ, শিম! 

প্রবোধ গুছিয়ে বসে বলে, 'প্রবোধচন্দ্র অমন গিষ্সী-ফমার ধার ধারে না। 
দের হল তাসটা খু'জে পাচ্ছিলাম না বলে। 

বাঁড়র অখ্যাত বন্ধুমহলেও প্রচার হয়ে গেছে, তাই প্রবোধের সগর্ব 
উন্তিতে একজন হেসে ফেলে বলে 'আরে রেখে দাও তোমার গ্মোর! শিলা 
তো শান তোমার কান ধরে ওঠায়, কান ধরে বসায় !' 

হাঁসি। 

হাসিই একমাত্র মুখরক্ষার ঘোমটা । 

তাই হাসতে থাকে প্রবোধ তাস ভাজতে ভাঁজতে, 'নাঃ, তোমরা আর মান 
মর্যাদা রাখলে না! 

এই সময় সুবোধের ছেলে 'বুদো* এক ডাবর সাজা পান এনে আহ্ডর 
মাঝখানে বাঁসয়ে দেয়, প্রবোধের লঙ্জায় ছেদ পড়ে। পর পর তিন মেয়ের পর 
ছেলে, তবু বেচারা যেন নিতাল্তই বেচারী। 


রবিবারটা বুদোর দুঃখের দিন। 

খেলতে যেতে পায় না" সারাক্ষণ আসরের খিদমদগার* খাটতে হয় । 

বিশেষ এক-একটা ভার যে কেমন করে বিশেষ এক-একজনের ঘাড়ে এসে 
চাপে. সেটাই বোঝা শন্ত। বাঁড়তে আরো ছেলে আছে, কিন্তু বুদোরই সব 
রবিবার দুঃখের দিন। 

অবশ্য ভানু কানূর এ আসরের মুখো হবার জো নেই! তাদের মা তাহলে 
তাদের ধরে ধোবার পাটে আছাড় দেবে । এবং যে তাদের ফরমাস করবে, তাকেও 
রেহাই দেবে না এটাও জানা । তাই বাড়তে ভান্দ কান নামের দ-দবটো ছেলে 
থাকতে বৃদোর ঘাড়েই সব বোঝা । 

প্রবোধ বলেছিল, ওরা কিছ; করে না, একা দাদার ছেলেটাই খেটে মরে- 
এটা স্বার্থপরের মত দেখায় না! 

'দেখায়!' সুবর্ণ বলোছিল, “ক করা যাবে, দেখাবে! 

'তোমারই যত ইয়ে, কই ওর মা তো এত রাগ করে না? 

'ওর মা মহৎ।' 

তা মহংই! 

নইলে ওই ডাবর ডাবর পানই বা সে একা সেজে মরে কেন? 

জনৈক আড্ডাধারী পকেট থেকে জর্দার কৌটো বার করে তাচ্ছিল্যের গলায় 
বলল, 'পান কে সেজেছে রে বুদোঃ তোর মা বুঝি 2" 

মেয়েদের সম্পর্কে প্রশ্ন করতে হলে তাচ্ছল্য আর অবজ্ার সুর মেশাতে 
হয়. এটাই রীতি । ভদ্রলোক সে রাঁতিতে বিশ্বাসীও 

নির্বোধ বুদো এ প্রশ্নে কৃতার্থমন্য হয়ে একগাল হেসে বলে, 'হণ্যা।' 

“তোর মাকে শাখয়ে দিগে যা বাপ, পান দিলে তার সঙ্গে একটু চুন 
দতে হয়।' 

যেন একটি ক্ষুদে লাটের ভঙ্গীতে একটা পান তুলে নেন ভদ্রলোক। 

এই এদের অভ্যস্ত ভঙ্াদ। 

পৃঁথবীটা এ'দের কাছে করতলগত “আমলকাবৎ'। সবাবধ ব্যাপারবে 
নস্যাৎ করে দেবার কৌশলাঁট এ'দের জানা । দেশ যখন স্বদেশী আন্দোলনে, 


সুবর্ণলতা ১১৩১ 


উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেল. এরা তখন ঘরে বসে রাজা-উাঁজর মারছেন,. সেই 
আন্দোলনকে তাঁড়তে ওড়াচ্ছেন। 

পাড়ার প্রত্যেকটি বাঁড়র বৌদের খবর এরা রাখেন এবং সমালোচনায় 
তৎপর হন। এ বাঁড়র বড়বৌটিকে গুরা অগ্রাহ্য করেন, মেজাটিকে ব্যঙ্গ করেন. 
-সজটিকে স্বার্থপর বলে ছিছিক্কার করেন এবং ছোটাঁটকে অবজ্ঞা করেন। 

গুণানুসারেই করেন অবশ্য, এবং মনোভাব চাপতেও চান না। 

শুধু পাড়াপড়শনীই নয়. ও"দের আজ্ডায় কাটা পড়ে না এমন মাথা নেই। 
এগবা রান্মকে বলেন 'বেম্ম” ব্রাহ্মণপুর্তকে বলেন 'বামনা' বিদুষী মেয়ের নাম 
*নালে বলেন 'লখলাবতশ"! 

এপ্রা দেশন্তোদের 'পাগলা' আখ্যা দিতে 'দ্বধা করেন না. 'পরমহংসে'র 
বৃজর্কীর বাধায় আমোদ পান, বিবেকানন্দের আমোরকায় 'গয়ে হিন্দুধর্ম 
প্রচারের বতাঁ খনয়ে হাসাহাসি কবেন এবং মেয়েদের লেখাপড়ার অগ্রগাত লক্ষ্য 
করে সকোতুব পা খন তখন ঈশ্বর গুপ্ত থেকে উদ্ধার করে বলেন' 'আরো 
কত দেখবে হে দেখবার এখ্বীন হয়েছে ক: এরপর সব-- 

এ. বি, ?স. শিখে বাব সেজে 
ালাতি বোল ক'বেই ক'বে। 
আর হুট বলে বুট পায়ে দিয়ে 
চুরুট ফনকে স্বর্গে যাবে ।' 

বাঁড় বাজার আর আঁফিস, এই '্রিভূজ তাতে আনাগোনা করতে করতে 
মরচে পড়ে গেছে ওদের জীবনের মাকুটা। 

এপ্রাই সুবর্ণলতার স্বামীর বন্ধু। 

কিন্তু উনাঁবংশ শতাব্দীর এই 'আফিসবাবু'র দল কি এ যঃগে নিশ্চিহ 
হয়ে গেছে? 

আজকের পৃথিবীর এই দুরল্ত কমণক্রের দুর্বার গাতর তাড়নের মাঝ- 
খানেও, অলস গাঁতি আর অসাড় আন্ডা নিয়ে আজও কি টিকে নেই তাঁরা ঃ 
আজও কি তাঁদের জানার জগতে শুধু এই কথাই' নেই, 'মেয়েমানুষ' জাতটাকে 
বাশোর আর অবজ্ঞার দ্‌্টিতে দেখতে হয়, তারা পানের পাশে চুন রাখতে 
ভূলে গেলে তাদের সমঝে দিতে হয় 2 আছে। ও*রা যে 'আধানিক' নন. এই 
ওখ্দর অহমিকা, এই ও"দের গৌরব । 

নাঃ. একেবারে 'নাশ্চিহ হয়ে যায় নি। 

আজও আছে বৌক কিছু িছু। 

আছে দাঁজপাড়া আর কিনুগোয়ালার গাঁ, 1ছদাম মিস্্ঁ আর রাণী 
মূদিনীর লেনের অন্তরালে । 

এখনো এরা জানেন পুরুষ জাতটা বিধাতার স্বজাত বলেই শ্রেম্ঠ। 

এস্রা আছেন। 

হয়তো চিরকাল থাকবেন। 

পৃথিবীর দুরন্ত অগ্র্গাতর পথে 'বাঁধ' দেবার প্রয়োজনে বিধাতাই এদের 
সষ্টি করে চলেছেন, কম-বেশি হারে। 

অথচ আবার হয়তো ওদের অন্তঃপুরের রঙডও বদলাচ্ছে, ও*রাই আরুর 
কড়া শিকল শিথিল করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন, ও'রাই ও'দের মেয়েদের নিয়ে 
স্কুলে ভার্ত করে দিয়ে আসছেন বিয়ের বাজারে দাম বাড়াবার আশায় আব 


১২০ সুবর্ণলতা 


স্ময়েদের বিয়ের বয়েসটা বারো থেকে ষোলোয় তুলছেন পাঁরপারির্বকের চাপে। 
এদের নাম মধ্যবিত্ত। 
এপ্রাই নাক সমাজের কাঠামো! 
চিজ ০৬৬০০ না নুর 
কাঠামো । তার সঙ্গে চলেছে সময়ের ম্লোত। 


১৪৪ 


মুটের মাথায় ফলের ঝোড়া, আঙুলের ফাকে ঝোলানো বড় দুটো কলার ছড়া 
এসে পািমার দরজায় হাঁক পাড়লো, ণপাস গো 

& 

“কে র্যা, অগু নাকি 2, 

মুন্তকেশী জপের মালা হাতেই বোঁরয়ে আসেন। 

হ্যা গো হ্যা! তা নইলে এ বাজখাই গলা আর 
কার হবে ৮ জগ চৌকাঠের বাইরে দাঁড়িয়েই কথা সারে, 
'ও সর্বনাশ, এতখানি বেলা হয়ে গেল এখনো তুমি মালা 
_ ঠকঠকাচ্ছো! পাঁণ্যর ছালা রাখবে কোথায় £' 

মুস্তকেশী এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, পক ব্যাপার? এত কলা 
সের? 

'কলা তোমার ভাইবৌয়ের ছেরাম্দর! বলে ছড়া দুটো একবার দুলিয়ে 
নিয়ে জগ মহোৎসাহে বলে, 'কী আক্রাগণ্ডার বাজারই পড়লো! মাত্র দুছড়া 
কলা তিন-তিন গণ্ডা পয়সা! 

মুন্তকেশী মুখ বাঁকিয়ে বলেন, 'ঠাঁকয়েছে তোকে। আম আনাপহ ছড়া 
আনাঁছ 'নত্য! বাল এত ফল কণ'হবে রে?, 

'বললাম তো, তোমার আদরের ভাজ শ্যামাস্‌ন্দরীর ছেরাদ্দ!...মাগো মা, 
শ্যামা মা, মাতৃনাম উচ্চারণে অপরাধ নিও না। সিম্নি হবে গো সিম্নি। শ্যামা- 
সুন্দরী দেবী যে মামলা জিতেছেন! কাল “রায়” বোরয়েছে।  সতানারায়ণের 
সান মানা ছিল, তাই শোধ হচ্ছে আজ। যেও সন্ঘ্যেবেলা, সেই কথাই বলতে 
এলাম। মা ঠাকরুণ পইপই করে বলে 'দয়েছেন।' 

মুস্তকেশণ যাকে বলে বিস্ময়াবস্ফারিত লোচনে বলেন, 'মা জিতেছে! তার 
মানে তুই হেরোছস 2" 

'তা শ্যামাসন্দরী দেবী জিতলেই আমাকে হারতে হবে, এ তো পড়েই 
আছে কথা! “বাদী-প্রাীতবাদশ”র সম্পর্ক যে দন-রাত্তরের মত! এ আছে 
তো ও নেই, ও আছে তো এ নেই।' 

মুস্তকেশী বিরন্ত কণ্ঠে বলেন, 'থামা ব্যাখ্যানা! বলি হেরে মরে আবার 
থোঁতা মুখ ভোঁতা করে মায়ের মানূতি পূজোর নোবাদ্ির ফোগাড় দিচ্ছিস? 

'জগু অসন্তুষ্ট স্বরে বলে, €ই, ওই জন্যেই তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে 
বিরোধ হয় আমার পাস! বাল আম যোগাড় করে দেব না তো কোন্‌ যম 
এসে দেবে? আর ককুঁড় ব্যাটা আছে তোমার ভাজের ১ আবার তো কাল 
ভোরবেলা তাঁকে নিয়ে ছুটতে হবে কালঘাটে। পূর্বজল্মে কত মহাপাতক 





সুবর্ণলতা ১২১৯ 


ছল তাই এক পবস্তর হয়ে জন্মোছ! যেও তাহলে ।, 

জগ চলে যাচ্ছিল, মুস্তকেশী হাতের ইশারায় দাঁড় কাঁরয়ে হাতের মালা 
কপালে ঠোঁকয়ে বলেন, 'দেখ্‌, সত্যনারায়ণ কাঁচাখেকো দেবতা, তার নাম করে 
মন্যাধ্য উপরোধ কারস নে। আমার বাপের বংশধরকে বণ্চিত করে বৌ ড্যাং 
ড্যাং করে মামলা জিতে "শসান্ন” দেবে আর আম সেখানে পেন্নাম ঠুকতে 
যাবো 2 আমার বাড়ির এক প্রাণীও যাবে না।' 

জগু আরো অসন্তোষের গলায় বলে, “এই দেখ, আম পারবো ড্যাবডোবয়ে 
দদরখখতে, আর তুমি পারবে নাঃ বলি ঠাকুরটা তো আর ওনার খানাবাঁড়র 
খানসামা নয যে গুঁকেই পুণ্ফলটুকু ধরে দেবে 2...ওগো বৌমারা, একখানা 
ঘোড়ার গাঁড় ভাড়া করে ঝি সঙ্গে করে শাশ্‌ড়ীকে নিয়ে ষেও সন্ধ্যেবেলা। 
মামীশাশুড়ী বলে দয়েছে, ভাঁর ঘটার 'সান্ন !...ভাইরাও যাঁদ পারে তো যায় 
যন।.এচললাম' অনেক কাজ। বড়লোকের কন্যের আহাদ মেটাতে 

চলে যেতেই সেজবো মুখ বাঁঁকয়ে বলে, 'ভাসুর গুরুজন, বললে অপরাধ, 
গর ওবাড়ির বা ঠাকুরের বর বালাই নি মরতে ইচ্ছে করে. হাসবো, না 

কোথায় ছিল সুবর্ণলতা, কট্‌ করে বলে ওঠে, 'এ বাঁড়র কর্তারা যাঁদ 
এবাড়ির বট্ঠাকুরের পায়ের নখের যুগ্যিও হতেন, তাহলে দুবেলা তাঁদের পা- 
ধোওয়া জল খেতাম ।' 

সেজবৌ অনেকাঁদন “মেজাঁদ'র সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ রেখোছিল, আজ 
মেজাঁদই যখন ভাঙলো সেটা, তখন আর উত্তর দিতে বাধা রইল না। 

বলে উঠল, শক বললে মেজাদ 2" 

'যা বলোছ ঠিকই বলোছ।' 

পকসের সঙ্গে কিসের তুলনা £ ও বটঠাকুর তো মানুষের আকৃতিতে 
একাঁট-__যাক গরুজন, বলব না িছু। সেই যে কথায় বলে না পকসেয় আর 
'কিসেয়, সোনায় আর সাসেয়, তোমার তুলনাটা তেমাঁন।' 

“ঠিকই বলেছো সেজবৌ! সোনা আর সাঁসেয় তুলনাটাই ঠিক। তবে কে 
পর কি তোমাদের হিসেবের সঙ্গে আমার 'হসেব মেলে 
না এই ষা।' 


তা কারো হিসেবের সঙ্গেই কি মেলে স্বর্ণর ? 


চাঁপা ফরকেছে. চাঁপা যায় 'নি। যায় নি ভানু-কান্ু। শুধু চল্নন পারুল 
খোকা । এদের এখনো মা ছাড়া চলে না। 

ফুলের গন্ধ, ধৃপের গন্ধ, আর সদকাটা তাজা ফলের গন্ধ বাড়িটাতে 
যেন দেবমান্দিরের বাতাস পেপছে দিয়ে গেছে। আর দরজা থেকে সৃনিপুণ 
আল্‌পনার রেখা বেন তার স্যাম সবন নিযে অপেক্ষা করছে দেবতার 


কাঁ অপ্বে। 
কী সুন্দর! 


১২২ সুবর্ণলতা 


ক] অনাস্বাদিত এই স্বাদ! 

সবর্ণব মনে হালো দুকান এক স্বর্গলোকেব দরজ্ঞায় এস পাঁডয়েছে 
স বর্ণ। 

সবে শী ৩শথ” করেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে বেরিয়ে, মুন্তকেশী মানা হ 
পৃঞ্জে। দেন দেবমান্দিবে গিয়ে গিয়ে। মুন্তকেশীর ঘরে এমনভাবে দেবতাব 
আঙবন খেই । থাকার মধো আছে শুধু বছরে বারকক্যক সুতিকাষষ্তঠীর 


৮০ 


1*৩ তাতে কি এমন মোহময়, সৌন্দর্যমধ আর সোৌর৬মষ পববেশের 


সা, 151 এই সুরভিত বাতাসের সুযোগে আচ্ছন্ন হয়ে আদেত ভিওরে 


টা 
“৭ ত*্দরখ সস্নেহে বলেন, 'এসো মা এসো! দাদা দাদরা এলো ভাই ' 
পরে থেকে প্রণাম করো বৌমা! ঠাকুবাঝি জই 
নৃদ জ্বরে বল. 'আসতে পারলেন না" 
' 5, 80 পরলেন না 5 শ্যামাসন্দরী বস্ময আর টিশীককর সি, ১ বলেল 
যা 7০ নাসতও পারলেন লা ঠা্জার মাহ স্ব জুতা ও 


'এব'ও বোধ হয় আসতে পাব +7 

"বাধ হয়টা বাহূল্য। 

পুরো একখানা গাড়িতে সুশর্ণ তিনছে মার কাচ্ছাবাচ্ছা নয এসে 
[গচুরছে আব কারো আসার প্রশ্ন নেই। 

শ্যামাসূন্দরী বলে এঠেন পাবে না শা আসবে শা বুঝোছ' এসৰ 
ঠাকুরাঝর নিষেধ । আসবে না আমাল বাঁড়।' 

সুবর্ণ ভদ্র গলায় বলে “তা কেন' আম তো এলাম! 

ব্দ্ধমতী শ্যামাসুন্দরী বোঝেন এখান বিরুদ্ধ মন্তবা চলবে না। বুঝে 
অবশ্য প্রতই হন বৌয়ের পক্ষে এট। সদগৃণ! ঈষৎ হাসের সঙ্গে তুমি তো 
সাল ১? পা শেপ বলে কর্মান্তরে প্রস্থান করেন। 

কথা এমন মিষ্ট করে বলা যায়! 

স.বর্ণ একট-্ষণ আভভূতের মত দাঁড়য়ে থাকে তারপর ছেলেমেয়েদেব 
ণনচেব তলায় বাঁসয়ে বেখে উঠে যায় দোতলায় । এ বাঁড়তে আগে এসেছে 
কয়েকরাব। শ্যামাসূন্দরী তখন মাঝে মাঝে ননদ ও ভাগ্েবৌদের নেমন্ত 
কবছেছত। 

। এন গুষ্টি বড় হয়ে গেছে, হয়ে ওতে না। নেমন্ভা হলে অলতত ত$ 
লড পাঠ সাজাতে হবে। 

দোতলার বড় ঘরটাই শ্যামাসুন্দরীর, দক্ষিণ খোলা রাষ্ভার ৬এপর। এব 
জানশাহা দ।ঢালে বড় রাস্তা দেখা বায়। 

না বড় নয়. তবু যেন প্রয়োজনের আঁতারিন্ক জায়গা । দোতলায় ওই 
রাস্ঙাঞ [কটা বাদে আরো দুখানা ঘর, সামনে টানা দালান। 1কল্তু জগুর 
আবাব ভূতের ভয়. একা ঘরে শুতে পারে না, তাই এই' বড় ঘরটায় মা ছেলে 
'দুক্তনের বিছানা পাতা হয় দুটো সরু সরু চৌকিতে। 

শ্যামাসূন্দরধ বলেন, 'তোর যা নাক ডাকে, ভয় পাবার কথা আমারই । তুহ 
ণজের ঘরে শুগে না বাবা, আম শেষরাত্তরে উঠে একট ঠাকুরদেবতার নাম 


সুবর্ণলতা ১২৩ 


করে বাঁচি! 

জগ বলে, 'কেন' আমি ঘরে থাকলে তোমার ইীংটদেবতাও ভয় খাবে : 
হাল । 

অভএব এঁদকের ঘর পুটো শেকল তোলা থাকে। মামলায় কে জিতবে 
এ নিয়ে দুই মান্রবটায় বিছানায় এংয়ে শুষে তক্রিনিতক চলো? তকেরি 
শেছে হবশা। ভগুরই শষ হয়ঃ বারণ £স শেষ রায় দেন, ভগবান মাঁদ থাকে তে। 
এ আমারই । বঝলে 52 বিষরটা আমার পাপের, তোমার ঠাকুর্দার নয় 

শ্যামাপুল্পরী সে কথা অস্বীকার করতে পারেন না। মাধার ভগবান নেই 
এ কথা বলা ১লে না। 

সুবর্ণ অবশ) মা-ছেলের সেই অপ বাকাবানময়ের কথা জানে না. শৃধ, 
দুটি সনু চোঁক দেখে মুদ্ধ হলো। 

পিসা তিখি। 

নে: প্য় চর সালে এসেছে, ঘরের মেঝেয় কালো কালো গরাদের 
ায়া। দোতলায় এখন কেউ নেই, কাজেই ইারকেন লণ্ঠন দুডো |নচেয় নামিয়ে 
নিয়ে যাওয়া হযেছে। 

আধো অন্ধকার আধো আলো. শূন। ঘরখানায় দাঁড়য়ে হঠাৎ মনে হলো 
পুবর্ণর সে যেন অন্য কোনো জগতে এসে পড়েছে। 

নিজনতার বাঁঝ নিজস্ব একটা সন্তা আছে। আর সে সন্তা অলৌকিক 
সুন্দর। অনেকগুলো লোকের উপাাস্থাতি কী ক্রেদান্ত বিশ ! 

বড় দুঃসাহস দোখয়ে সে একা এভাবে চলে এসেছে সে চিন্তা মনে 

আসে না' ফিরে গেলে কপালে ক লাঞ্চনা জুটবে সে চিন্তা করতে ভূলে যায়, 
শুধু লক্ষ্যহাীঁন দৃম্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবে সুবর্ণ, 
অনন্তকাল ধারে যাঁদ এমাঁন দাঁড়িয়ে থাকতে পেতাম ! 

এমনি চলমান পাঁথকের স্রোতের দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা! 

সুবর্ণ কেন ওই রাস্তার হে'টে-যাওয়া লোকেদের একজন হলো না সুবর্ণ 
কেন মেয়েমানুষ হয়ে জল্মালো £ 

ও আমার কপাল, তুদ্মি এখেনে-" পিছনে হাঁরদাসীর কণ্ঠে ভাঙা কাস 
বনঝনিয়ে. ওঠে. 'হশ্াগো জরি তোমার আকেলটা কণ? নিচেয় ভটচাষ 
এসেছে. পূজো বসে গেছে, পাড়াপড়শীতে ঘর বোঝাই, ছেলেপেলেগ্‌লোকে 
ফেলে রেখে এসে তুমি এখেনে ভূতের মত দাইড়ে আছো : আঁদারের ভয় লাগে 
মাগো 

'ভ্য় আবার কি-” পাথবীর মাটিতে নেমে-আসা সুবর্ণ অপ্রাতিভ হয়ে 
“০1, "বেশ তে। তুই” আমায় ডাকিস গন যে? 

'ডাঁক নি আবার; কত ডাকাছি! শেষে--” 

তাড়াতাঁড় নেমে আসে সুবর্ণ আর এসেও চোখ জুড়িয়েই ষায়। সতা- 
নারায়ণ ব্রতের আয়োজন কি সাঁতিই এর আগে দেখে নি সুবর্ণ? দেখেছে 
পাড়াপড়শীর বাঁড় কদাচ' বাঁড়সৃদ্ধ সকলে ভিড় করে গিয়ে । নিজেদের চ্যাঁ- 
ভ্যা'তেই ভ্রাহ ব্রাহ লেগেছে। 

এখানে সকলেই বেশ গিন্নশবানী, শ্যামাসূন্দরীর বান্ধবীকুলই সম্ভবত, 
শান্তভাবে বসে আছেন যুস্তকরে। 

ধৃপ ধুনো চন্দন ফুল চৌকি মালা ঘট পট সব 'মিজিয়ে দেবতা যেন সত্যই 


১২৪ সুবর্ণলতা 


একটি সন্ত নিয়ে বিরাজ করছেন। 

আশ্চর্য” সুবর্ণর ছেলেমেয়েরাও তো এখানে দিব্যি চুপ করে জোড়হাতে 
বসে আছে! অথচ ওরাই দলে মশে যেন অন্য অবন্ভার। ঠেলাঠেলি, হাসা- 
হাসি, অসভাতা, দোলুপতা, এই তো মার্ত ওদের। 

পাঁরবেশ। 

পাঁরবেশই মানুষকে ভাঙে গড়ে। 

পুরোহিত পথ খুলে গলা ঝেড়ে “কথা শুরু করেন। 

কলাবতঈর গল্প! 

কলাবতীর মৃত স্বামীকে 'ফাঁরয়ে দিয়োছলেন, সতানারায়ণ, সংবর্ণলতার 
জশবনযাতরার গাঁতটা 'ফিরিয়ে দিতে পারেন না? 

কল্াবতীর সত্যকার ভন্তি ছিল! 

সতাকার ভন্তিটা কেমন বস্তুঃ আর তার আকুলতাটাই বা কেমন ? 

গাঁড় অনেকক্ষণ আগে নাঁময়ে দিয়ে চলে গিয়েছে । 'কথা'র শেষে পড়- 
শীরা বিদায় নেয়, শ্যামাসূন্দরী এদের ছাড়েন না। রাতের খাওয়াটা খাইয়ে 
দেবেন বলে লুচি ভাজতে বসেন। আঁভভুত সুবর্ণ আপাতত করে না, সুবর্ণ 
ষেন ভুলে গেছে সে কাদের বাঁড়র। ভুলে গেছে আবার সে-বাঁড়র দরজ্ঞায় গিয়ে 
দাঁড়াতে হবে তাকে। 

কিন্তু মনে থাকলেই কি মনে করতে পারতো, সেই দাঁড়ানোর চেহারাটা 
এমন হবে ১ ভয় গল একা আসার জন্যে, ভয় ছিল রাত হওয়ার জন্যে, তবু 
এ ভয় ছিল না, সেই দরজা তার সমস্ত কদর্ধতাকে উদ্‌ঘাঁটিত করে বন্ধ হয়ে 
থাকবে। 

ছেলেমেয়ে ক'টা বাবা কাকা জেঠা প্রভাতি অনেককে ডেকে ডেকে শেষ 
অবাঁধ বাইরের দরজার ধূলো-জঞ্জালের ওপরই বসে পড়েছে। 

একেই গুরুভোজনে, ক্লান্ত, তাছাড়া রাতও হয়েছে। 

ঝি হরিদাসী কড়া নেড়ে নেড়ে হতাশ আর অবাক। মন্তব্য প্রকাশের ভাষা 
যোগাচ্ছে না আর তার। 

গাঁলর মধোর এপাশের ওপাশের সমস্ত বাঁড় এই দোর-্যাগডানোর সমারোহে 
সচাঁকত: জানলায় কৌত্হজশ দাাঁষ্টর উপকঝশুক। 

শেষবারের মত দরজায় প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়ে হাঁরদাসণ পরাজিতের সরে 

বলে, 'আমার ম্বারা আর হবে নি মেজবোৌদি, আর দাঁড়াবার ক্ষ্যামতা নেই। বেশি 
রশ সর সণ তোমার সঙ্গে গিয়ে 
ভ্যালা বিপদ হল দেখাছি। তোমার মামীশাউড়শর যে আবার আদর উথলে 
উঠল, নুচি ভেজে খাওয়াতে বসলো! 

রাত দশটা না বাজতেই এদের ঘুমের বহর দেখে সূবর্ণও প্রথমটা সাঁত্যই 
যেন অবাক হয়ে গিয়োছল, এখন. অবাক হওয়াটা পার হয়ে গিয়েছে।.. তারপর 
মনে পড়ল ভাসূর এখন উপাস্থত নেই। মেজ বোন সুবালার বরের অসুখ 
শুনে খবর গনতে গেছেন তার গ্রামে। 

এসব কর্তব্য সবোধই করে থাকে । তাছাড়া সুবোধ বাঁড়তে থাকলে বে 
বাড়িসৃম্থ সবাই এমন করে ঘুমে “পাথর' হয়ে যেতে পারত না, সেটা নিশ্চিত 

টির ররর 'তোমার রাত হয়ে যাচ্ছে হারদাসাী, বাসার 
যাও।" 


গৃবর্ণলতা ১২৫ 


হারিদাসী দোদুল্যমান মলকে 'রাশে' এনে বলে, শোনো কথা! আতদৃপ্র়ে 
এই কুচোকাচা সমেত তোমাকে আস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে নাঁশ্চন্দি হয়ে বাসায় 
যেতে পার 2 হলো কি এদের? কেউ নদৃলী' মন্তর দিল নাঁকি 2, 

সামনের বাড়ির বসাক-কর্তা অনেকক্ষণ সহ্য করে এবার রণাঙ্গনে নামেন। 
ভারী গলায় হকি পাড়েন, “ও প্রবোধবাবৃ, বাল কী রকম ঘুম মশাই আপনা- 
দের! বাঁড়র মেয়েছেলে দু ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়য়ে ।' 

এবার বৃঁঝ মুস্তকেশী-নন্দনদের ঘুম ভাঙে, প্রভাসচন্দ্রের ভারী গলার উত্তর 
পাওয়া যায়. 'আমাদের বাঁড়র মেয়েবৌরা কেউ রাতদুপ্রে একা বাইরে থাকে 
না মশাই। নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোন গে!... 

খোলা জানলাটা সজোরে বন্ধ হয়ে যায়। 

'এ হচ্ছে তেজ-দম্ভর কথা! হরিদাসী অকতজ্ঞের গলায় বলে ওঠে, এ 
হচ্ছে তৈজের কথা, দ্বেষের কথা । আগে কি জানি ছাই তোমাদের ভেতরে এত 
মনকষাকাষ। এমন যখন অবস্থা, যাওয়া তোমার উীচত হয় নি। পুরুষের 
রাগ হচ্ছে চণ্ডাল! সেই চন্ডালকে-- 

“তুই যাবি? যা. যা বলাছ-_' 

হরিদাসী বিরন্তভাবে বলে. “ওমা. দেখ একবার! যার জনো চার কার সেই 
বঙ্গে চোর! বেশ যাচ্ছ। এই ধর তোমাদের সিন্নীর পেসাদ।' 

“ও তুই নিয়ে যা। 

'আমি নে যাবো কিগো?: এ যে এখেনের জন্য দিল মামীমা !' 

শৃঠঠক আছে' তুই না নিস রাস্তায় ফেলে দিগে যা।' 

'দুগ্‌গা দুগৃগা !' হরিদাসী সভয়ে প্রসাদটা মাথায় ঠোঁকয়ে বলে, পহন্দ 
মেয়ে হয়ে_” 

এই খানিক আগে নগদ চারগণ্ডা পয়স' বখাঁশশ দয়েছে মেজবৌ* . ভাই 
মূখে বেশি বলে না. মনে মনে বলে. 'সাধে আর গৃম্টিসুদ্ধু লোকে তোমার 
নিন্দে করে! 

বসাক-কর্তা বয়সে প্রবীণ, তবু রাতদুপুরে একা সবর্ণর কাছে ষেতে তাঁর 
সাহস হয় না। গৃহিণীর সাহাযা নেন। 

বসাক-গৃঁহণী নেমে এসে করুণা-ঢালা সূরে বলেন, ইস. ছেলেপুলে যে 
ঘযাময়ে পড়েছে দেখছি! রাস্তার ওপর! ধুলোয় মাখামাখি ' ব্যাপার কি 
মেজবৌমা, একা কোথায় শিয়েছিলে 2' 

মেজযোমা নিরুত্তর। 

বসাক-গৃহিণী আরো মমতা গলেন. 'বৃঝোছ' রাগারাঁগর বাপার। কিন্তু 
যতই যা হোক' রাতদুপুরে বৌ-ছেলেকে পথে বাঁসয়ে রেখে দোর দিয়ে ঘুমোবে, 
এমন দূদ্শান্ত রাগ ; কোথায় গগয়েছিলে ১ বাপের বাড়ি বুঝি 2 

মেজবৌমার “বাপের বাঁড়' বস্তুটা যে কোন- পর্যায়ে আছে, সেটা পাড়ার 
কারোরই আঁবাঁদত নেই, তবু ও ছাড়া আর কিছুও মনে পড়ে না মাহলাটির। 

সুবর্ণ এবার কথা কয়। 

স্থির গলায় বলে, 'না।' 

“তা হলে? 

বোকা হলেও চন্ননটা ইদানীং খুব কথা শিখেছে, সে ঘ্ম-চোখেও বঙ্গে 
ওঠে, "মাফীঠাকুমার বাড়ি 'সাল্ন ছিল. তাই নেমন্তল গিয়োছিলাম -' 


১২৬ সুবণলতা 


'মামীঠাকুমার বাঁড় 2, বসাক-গৃহিশী ক্রমশই কৌতূহলাকান্ত হন, ". 
একা গিছাঁল” আর কেউ যায় 'নিঃ ঠাকুমা?” 

'না।' মেয়েটার চোখের ঘুম ছেড়ে আসে, বলে, না, মামীঠাকুমা যে মক- 
মায় জিতেছে, ঠাকুমা যাবে কেন 2 

বসাক-গৃহিণীর আর ব্যাপারটা হদয়ঞঙ্গম করতে দোর হয় না, কারণ মুস্ত- 

কেশশর ওই তাজ বনাম ভাইপোর মামলা জানতে কারো বাকী নেই। সাত বছর 
চলছিল। 

বসাক-গাঁহণী বুঝতে পাবন। 

গম্ভীরভাবে বলেন, তা তোরা গোল যে? 

“তা জানি না। মা গেল তাই। দাদ, দাদা, মেজদা তে। যায় 'ন। দিদি 
বর্লোছল, যেখানে, ঠাকুমা যাচ্ছে না, সেখেনে-? 

চম্নন, তুই চুপ করবি 2, 

মায়ের ধমকে চমকে চুপ করে যায় চন্দন। 

সঙ্গে সঙ্জো বসাক-গহিণীর করুণার প্রশ্রবণও শুকিয়ে যায়। চুপ 
করবার নরেশ দিয়ে এই যে ধমক 'এ ক স্বর্ণর শুধুই মেয়ের প্রাতি 2 

ওই ধমক তাঁর কৌতৃহলের ওপরও একটা চড় বাঁসয়ে দেওয়! নয় 'কি ? 

পড়শিনীর ঘরের এই অদ্ভুত 'কেচ্ছা'্টা সম্পর্কে কৌতূহল তাঁর হয়োছিল, 
হবেই তো। যা নয় তাই কাণ্ড. তবু হবে না কৌতুহল ? বেশ, ঠিক আছে। 

গম্ভীর গলায় বলেন. 'থাক,, মেজবৌমা, তোমাদের ঘরের “কেলেঙ্কার” 
শোনবার দরকারও নেই আমার, প্রবাত্তও নেই। তবে বা দেখাছ, আজ রাতে 
আর দরজা ওরা খুলবে না। তা কুচোকাচা নিয়ে সারারাত পথে পড়ে থাকবে 2 
মানুষের চামড়া চোখে নিয়ে এ অবস্থায় ফেলে চললে য়ে নাশ্চন্দির ঘুম তো 
ঘুমনে' যাবে না! বাঁক রাতটুকু আমার ঘরে এসে শোও ।' 

পাড়ার গিল্নশীদের সঙ্গে কথা কওয়ার রেওয়াজ বৌ-ঝির নেই, কিন্তু সুবর্ণ 
ওই রেওয়াজটার উপর 'দিয়ে চলে। সুবর্ণ কথা বলে। 

_ এখনও বলল। 

'শোনার আর দরকার হবে. না বসাফ-কাকীমা ! 

বসাক-গৃহিণী তবু টলেন না সুবর্ণর একটা হাত ধরবার চেষ্টা করে 
বলেন, 'আচ্ছা না শোও, নয় বসেই থাকব, তব তো একটা আচ্ছাদনের নিচে! 
তোমার দরকার নেই, ছানাপোনা কান দরকার আছে। এভাবে পড়ে থাকলে 
রাতের মধ্যে 'নিমৃন' হবে যে? 

'হবে না কাকীমা, কিছু হবে না। হলেও ওয়া মরবে না, বাজে ড় 
কিনা! আপনি আর ব্যস্ত হবেন না. যান ঘুমোন গে যান ।' 

বটে! 

যান ঘুমোন গে যান! 

বসাক-গঠাহণণ প্রসারিত হাতটা ফিরিয়ে নিয়ে বলেন, ও মাগো! কাঁজিতে 
ভালোর বালাই নেই ।..চলো গো চলো. দোওর দিয়ে শুয়ে পড়বে চল। সাধে 
কি আর সংবোর মা অমন করে! বৌ নিয়ে স্হলেপুড়ে মরেই বাব্বাঃ, বৌ নয় 
তো যেন কেউটের ফণা! 

রাগ করে খাড়ির দূরজায় খল লাগান বগাক-গৃহেণন, অথচ কৌতূহলকে 
রোধ করতে পারেন না, সেই রাতদুপুরে ছাতে উঠে দেখতে থাকেন, ক হয় 


সবর্ণলতা ১২৭ 


7দ৪ অবধি। 

জ্যোৎস্নায় চাঁরাঁদক ফাটছে, দেখা যাচ্ছে সবটাই ।...কন্তু নতুন আর কী 
দেখবেন, সেই তো বৌ একই ভাবে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে রয়েছে--ছেলেগ্‌লো 
সই ভাবেই ঘুমোচ্ছে। 

কতক্ষণ আর দেখা যায় ছাতে দাঁড়য়েঃ রাত গভশর হতে হতে ক্রমশ 
শেষ হয়ে যায়। 

সকালবেলা দরজা আটকে রাখা শঙ্, গোয়ালাা আসবে, আসবে ঝি. আসবে 
শাক-তরকারিওয়ালী। 

কখন কার ফাঁকে ছেলেমেয়েগুলো ঢুকে পড়ে টুপটাপ করে খুব খাঁনকটা 
নাঙ্গ প্রশ্নের সামনে গিয়ে পড়ে। 

যেখানে, গিয়েছিল, সেখানেই থাকল না কেন, এ প্রশ্ন করতে থাকে সে্জ- 
কাকা, ছোটকাকা, আরো ভাইবোনেরা । তারা অগপ্রাতভ হয়ে বলতে চেক্টা করে, 
ওমরা এমন ঘুম ঘুয়েরে জানলে তাই থাকতাম ! 

কিন্ত সে তো ওবা, সূরণ লতা ? 

সুবর্ণলতাও কি খেলা দরঞ্জার সুযোগে আবার ঢূকে পড়ল এ 

নাঃ, সুবর্ণকে ধরাধার করে তুলে 'নিয়ে যেতে হল মৃন্তকেশী আব তার 
মেজছেলেকেই। 

উপায় কি? কথাতেই তো আছে--দোরের মড়া ফেলাব তো ফেল!" 

মড়া আঁবাঁশা নয়, মরা এতো সোজাও নয়। মরণ এত সহক্ত হলে মানব- 
হদয়-ইাতিহাসের রন্ডান্ত অধ্যায়গুলোযো তো লেখাই হতো না। 

সুবর্ণলতা মরে নি” শুধু শম্ত কাঠ হয়ে 'গিয়োছল। ডান্তারে যাকে বলে 
মণ» আর বিজ্ঞ পাঁরজনেরা বলে 'আঁদখ্যেতা?। 

এত বড় আঁদখ্যেতার পরও কিন্তু ভয়ানক রকমের অদ্ভুত [ছু ছ .: না। 
. হৃখা, মেই এক আশ্চর্য রহস্য! হয়তো বা- এই গাঁলটা- নিতান্তই গল আর 
, গাঁলর বাসিন্দারা নেহাতই মধাবিত্ত বলে তাদের জীবনের সব লীলাগুলোই ওই 
' মধ্যপথে থেকে যায়, চরমে পেশছতে পারে না। 
| না, চরম জানে না এরা, পরমণ্ড বোঝে না, তাই সেই চিরার্চারত কড়া 
ন্তব্য, বিস্ময়াহত মন্তব্য, আর তীর' তিরস্কার, ব্যস তার বোশ কিছ? নয় । 

যেন বড় একটা আয়োজন করে ফে“সে যাওয়া ! 

আর সুবর্ণ? 

সেতো বেহায়া। 
ট তাই সেজ্ঞান হয়েই বলে, তুলে আনতে মাথার দাব্য দিল কে; লোক- 
লজ্জাঃ তা সে লঙ্জা তো ঘ্‌চেই গিয়েছিল।...পাড়াসুদ্ধ সকলেই তো জেনে 
ফেলোছিল, এ বাঁড়র মেজবৌ কুলের বার হয়ে গিয়োছিল-_. 


7৯৫ & 


সুবর্ণর লজ্জা নেই, ডিএ বন পাএঠতে+ 
অবাঁশস্ট ছিল, তাই হঠাৎ একটা নতুন ঢেউ আনিয়ে কটা 

দিনের জন্যে অল্তত ভাঁসয়ে নিয়ে গেলেন সুবর্ণকে। 
তৎক্ষণাৎ আবার ভাতের হাঁড়ির ধারে পাঠিয়ে দিলেন না 
তাকে। 

হঠাত্ই। 

হঠাংই প্রকাশচন্দ্র দেশের মহামারীর খবর 'নিয়ে এসে 
আছড়ে পড়ল । 

প্রেগ। 

আবার প্লেগ! যে প্লেগ ক-বছর যেন আগে শ্মশান করতে বসোঁছ্ 
দেশটাকে! 

কলেরা, বসল্ত তবু ভালো । কিন্তু প্রেগ? 

ওরে বাবা, সাক্ষাৎ যম! 

পালাও পালাও! 

যে যেখানে পারো পালাও! দাক্ষণের লোক উত্তরে এসো: পৃবের লোক 
পশ্চিমে! চললো সেই ছুটোছাট! 

কলকাতার বাইরে যেখানে যত লোক আছে, তাদের বাঁড় ভার্ত হয়ে যাচ্ছে 
আগত আগন্তুকে। যাবেই তো। 

প্লেগ থেকে রক্ষা পেতে যে সব অসহায় আত্মীয় ছুটে এসে পড়েছে, ভাদের 
তাড়িয়ে দেবে ক করে তারা £ 

সব বৌরাই বাপের বাঁড় 'কি মাসীর বাঁড়, নিদেনপক্ষে 'পাঁসর বাঁড়ও 
ছুটেছে।...শুধু সুবর্ণলতার ব্যাপার আলাদা । 

সুবর্ণলতার বাপের বাঁড় নেই। বাপের গুষ্টির কেউ নেই ঠাঁই দেবার। 

তবে? 

সুবর্ণলতা কোথায় গিয়ে রক্ষা পাবে ? 

সুবর্ণলতার শাশুড়ী পর্যন্ত নবদ্বীপে গুরুপাটে গিয়ে উঠেছেন। চাঁপা 
তাঁর সঙ্গে যাবে কিন্তু সুবর্ণলতা আর তার ন্যানজারি কটা ঃ 

সুবর্ণলতা বলল, 'আম মরব না. এ প্রমাণ তো হয়ে গেছে, প্লেগ আবার 
কা করবে আমার 2 

ক*তু সেটা তো কাজের কথা নয়। 

পুরুষেরা যে কোনো মুহূর্তে পালাতে পারে' শহরের অবস্থা আরে! 
ভয়াবহ হয় উঠলে পালাবেও। আঁফস-কাছাঁরও তো খোলা থাকবে না আর 
বোঁশাঁদন: তালা পড়ল বলে। স্কুলগুলো তো বন্ধ হয়েই ধাচ্ছে। ইন্দুর দেখলেই 
মারার বদলে. দেখামাতই মরে যাচ্ছে লোকে। 

তা সেই অবস্থায় তুমি লক্ষনীছাড়া মেয়েমানষ কোলে কাঁধে পাঁচটা আর 
জঠরের অভ্যন্তরে একটা অপোগন্ড নিয়ে পুরুষদের পায়ে বোঁড় হয়ে বসে 
থাকবে 2 তুম তো বলছ তোমার ছেলেদের অন্য কারো সঙ্গে পাঠিয়ে দাও! 





গুবর্ণলতা 


কে নেবে ভার? 

বলে নিজের ভারেই আস্থর লোকে। 

ওদের নিয়েই মরতে চাও ? 

বটে! ওরা তোমার খাস তালকের প্রজা! তাই মারতে ইচ্ছে হলে 
মারবে! ওদের বাঁচাবার জন্যেই তোমায় চলে যেতে হবে কোনো নিরাপদ 
আশ্রয়ে! যেখানে এই রাক্ষস মহামারীর থাবা পেশছয় ি। 

কিন্তু কোথায় সেই জায়গা ? 

সহণা সুবর্ণর ভাসনর সুবোধচন্দ্র বাতলে দল সেই জায়গা । 

চাঁপতা ! 

সূবালার বাঁড়। 

সম্প্রতি দেখে এসেছে সুবোধ, দেখেছে দৈন্যের মধ্যেও সুখের সংসার 
সুবালার। গোয়ালে গরু, পুকুরে মাছ, বাগানে তরকারি, ক্ষেতে ধান। 

তবে দৈন্যটা কোথায় ? 

দৈন্যটা নগদ টাকায়। তবু মনে দৈন্য নেই সুবালার আর তার বরের। এই 
তো মা-ভাই সাতিজন্মে খোঁজ নেয় না, একবার অসুখ শুনে ভাই একটু দেখতে 
গিয়োছল বলে যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে। 

ক যত্ব! কী আদর! 

সুবর্ণকে অনাদর পেতে হবে.না। 

যে মানিনশ উন, যেখনে সেখানে থাকতে পারবেন না তো। 

এই তো প্রকাশের বৌয়ের সঙ্গে তার *বশুরবাঁড়তে যাবার কথা হয়ে- 
ছিল একবার, স্বর্ণ হলো রাজী? 

এই বেশ। , 

এই ঠিক জায়গা । 

সুবোধচন্দ্র নিজেই হঠাৎ হাল ধরলো । 

রান্নাঘরের দরজার কাছে এসে নেপথ্যের উদ্দেশে বলল, 'মেজবৌমা, আমার 
ইচ্ছে নয় তুম এই মড়কের সময় এখানে থাকো, সুবালার কাছে গিয়ে থাক দু- 

॥? 


একটা ছেলে ঘর থেকে বলে ওঠে. 'জেঠাবাবু, মা বলছে, সবাই চলে গেলে 
আপনাদের রে'ধে দেবে কে? 

সৃবোধ হেসে উঠে বলে, “ও হরি, এই কথা! সে যা হয় হবে। বামুনদের 
ছেলে, দুটো ফুটিয়ে নিয়ে খেতে পারা যাবে না? তাছাড়া আমরাই বা আর 
কাঁদনঃ এ শহরে যা অবস্থা হয়ে উঠছে ক্রমশ. যাক, ওই কথাই 
থাকল ।' 

ছেলেটা বলল, “আচ্ছা জেঠাবাব, তুমি যা বলছ তাই হবে। 

তাই হবে! 

সুবর্ণ বলছে তাই হবে! 

অবাক কথা বৌক! 

তবু রীতিমত স্বাস্তর কথা। 

সবাইকে স্বাস্ত দিয়ে সুবর্ণ তার প্রায় অপাঁরাঁচত ননদের বাঁড় যাত্রা করে 
ঘড়কের হাত থেকে বাঁচতে । 

মরার জন্যেই ষার আজশীবন আকিগ্ুন। 

৯ 


৯২৯ 


১৩০ সৃবর্পলঅ 


কেউ বোধ হয় ছুটে গিয়ে খবর 'দিয়ে এসেছে, সুবালা ভিজে শাঁড় 
রানির রানসেহরানিরারাররাড রর না 

ন। 

দুম করে ঘড়াটা: দাওয়ায় বাঁসয়ে সেই ভিজে কাপড়েই একটা পেক্নাম ঠুকে 
উল্লাসিত স্বরে বলে ওঠে, মেজদা গো, ফাই ভাগ্যিস তোমাদের কলকেতায় 
“পেলেগ” এসোছিল, তাই না এই কাঠকুড়ুনীর কু'ড়েয় মহারাণীর পদধাল 
পড়লো! 

সুবর্ণ তার বয়সে বড় মান্যে ছোট ননদের মুখের 'দিকে তাকিয়ে দেখল। 
দেখল ব্যঙ্গ নয়. কৌতুক । হুল নয়, মধু। 

মনটা জাাঁড়য়ে গেল। 

চোখ জুড়োচ্ছিল রেলগাড়িতে উঠে পর্যন্ত। এই গ্রামে নেমে পর্যন্ত। 
গরুর গাঁড়তে আসতে হয়েছে খাঁনকটা, সেও তো পরম লাভ। সুবর্ণ তো 
যতক্ষণ তাদের গাল ছেড়েছে, ততক্ষণ ওই কথাই ভেবেছে। 

জগ্যিস কলকাতায় প্লেগ এসেছিল! 

কে বলতে পারে, সেই ভয়প্কররূপী সুখদাতা না এলে সুবর্ণর জীবনে 
কখনো আর রেলগাঁড় চড়া হাতো 'কনা। 

হয়তো হতো না। 

অতএব গ্রাম দেখাও হতো ন্ম আর কখনো। 

কিন্তু সুবর্ণ কি কখনো গ্রাম দেখে নি 2 

দেখেছে বোক। 

সেই তার পিতৃভূমি বারুইপুর গ্রাম। 

সেও এমনি ছায়া-সুশ্যামল নিভৃতে শীতল বাংলার পল্লীগ্রাম। কিন্তু 
স্মবর্ণর স্মৃতিতে সে ছায়া কেবল অন্ধকার। সে শ্যামলিমায় দাবদাহ। হায়, 
সুবর্ণ যাঁদ সেবার গ্রশচ্মের ছাটিতে 'বাবার সঙ্গে ঠাকুমার কাছে যাব' বলে না 
নাচতো! 

সুবর্ণর দেখা গ্রামের স্মততে সুবর্ণর জীবনের আঁভশাপ জাঁড়ত, তব 
এই মাঠ পুকুর ফল বাগান, ছোট ছোট ঝোপঝাড়, সব কিছ তার সবুজের সমা- 
নি াদাগ প্রানি রাত দারা 

1 

খাস কলকাতার বৌ না হয়ে সুবর্ণ ষাঁদ এরকম এক গ্রামের বৌ হতো! 

গরুর গাঁড়তে আসতে আসতে বলেও ফেলেছিল সুবর্ণ সে কথা। 

“আমার যাঁদ এরকম একটা পাড়াগাঁয়ে *বশুরবাঁড় হতো !' 

প্রবোধচন্দ্র অবশ্য সঙ্গে স্ঙ্গে মোহভঙ্গ কাঁরয়ে 'দতে বিদ্রুপহাস্যে বলোছল, 
'বনদ কি! তোমার মতন “আলোকপ্রাপ্তা”র এই পচা পাড়াগাঁ পোষাতো 2 
এখানের মেয়েরা স্বপ্নেও কখনো দেখেছে বৌমানুষ বসে খবরের কাগজ পড়ে £ 
বৌমানুষ রাতদিন মূখে মুখে তর্ক করে 2 বৌমানুষ দেশের কথা ভেবে মাথা 
গরম করে ?' 

সুবর্ণ দপ্তটকণ্ঠে বলোছল, 'দেখে নি, দেখতো ।' 

'হ*৪! তা হলে আর ভাবনা ছল না। সে বৌকে ঢেশকতে ফেলে কুটতো। 
শহরের দোতলায় পায়ের ওপর পা 'দিয়ে বসে থাকবার সুখ জুটলে সবাই অমন 


গুবর্পলতা ১৩১ 


পাড়াগাঁর শোভা দেখতে পায়। ক্ষারে কাপড় কাচতে কাচতে আর ঢেশকতে পাড় 
দিতে দিতে জান নিকজে যেত!” ॥ 

স্বর্ণ মৃদু তীক্ষ! হাটিসর সঙ্গে বলোছিল, “তেমন 'নিকৃলোলে একটা 
গসাবধে তো রয়েইছে। দীঘ-পুকুর! ঝাঁপ দিলেই নিশ্চান্দ! 

প্রবোধচন্দ্র সহসা স্ত্রীর একটা হাত চেপে ধরে বলে উঠোছিল, 'তোমার 
নিল সান সর্বনেশে মেয়েমানুষ তুমি, তোমায় বিশ্বাস 

1 

ছোট ছেলেমেয়েরা সকৌতুকে দেখাছল, বাবা মা'র হাত ধরেছে। দশ 
এগারো বছরের ভানু কানু দুই ভাই যেন লঞ্জতও। স.বর্ণ সেটা অনুভব 
করে আস্তে হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রবোধ ছাড়ে না। ভয়ানক 
আতঙ্কিত, গলায় বলে, 'তুঁম এই আমার গা ছয়ে দাঁব্য কর, ওসব দুর্মত 
করবে না! 

সুবর্ণ মৃদু হেসে বলে, “দূর্মাত ষাঁদ কার, এই পাঁথবীর সঙ্গে তো সব 
সম্পর্কই চুকে যাবে, গা ছুয়ে দাব্যর আর কি মূল্য থাকবে ? 

প্রবোধ আহত হয়ে হাতটা ছেড়ে 'দয়ে বলে, “32! তাই বটে। তাঁম তো 
আবার সম্পক্কটা ষে জল্ম-জল্মান্তরের সে কথা মানোই না! 

'তুম মানো 2" সকৌতুকে প্রশ্ন করে সুবর্ণ । 
লিও নী বলে, শহদদুর ছেলে হয়ে জল্মোছ, মানবো না! সবই 

। 

'আচ্ছা তা হলে তো এ কথাও মানো, অপঘ্ধাতে মলে ভূতপেত্রী হয় 2, 

'আলবা মান। না হলে আর শাস্তে বলত না অপঘাতে অনন্ত নরক ! 

'তবেই তো।' সুবর্ণ হেসে ওঠে, 'আঁম ধর অপঘাতে মরে অনন্ত নরকে 
পচাঁছ, তুমি মহত্তর বলে স্বর্গে গিয়ে ইন্দ্রত্ব করছ, তখন? তখন ওই জল্ম- 
জন্মান্তরের সম্পক্টার গাঁতি 2? 

'কুতা্কক মেয়েমানুষের সঙ্গে কেউ কথায় পারবে না! 

বলে রাগ করে মুখ হাড় করে বসৌঁছল প্রবোধ। কন্তু সুবর্ণ তা নিয়ে 
বিচলিত হয় 'নি। সুবর্ণ দেখাঁছল গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট মাটির 
কৃ'্ড়ে, তার সামনের উঠানে তুলসীমণ্, পিছনে গোয়াল। উঠোনগদ্রলি মাঁট- 
ল্যাপা, গোয়ালগুলি খড়ের চালের, ছবির মতই সুন্দর । 

এই সৌন্দর্যকে লালন করছে তো গ্রাম তার হৃদয়রস 'দিয়ে। 

চোখ জড়িয়ে যাচ্ছিল। 

তবু মনের মধ্যে ছিল একটা তীক্ষণ প্রশ্ন। যেখানে যাদের কাছে যাচ্ছে, 
তান্না নিকট-আত্মৌয় হলেও দূরত্বের ব্যবধান অনেকখানি। সুবর্ণরা তো সাত- 
জন্মেও ওদের নাম মুখে আনে না। সুখের সময় তাদের বিস্মৃত হয়ে থেকে 
অসূবিধের সময় গলায় এসে পড়া, এর চাইতে িলক্জতা আর কী আছে? 

মেজননদ যাঁদ সেই নিলজ্জতার দিকে আঙুল বাঁড়য়ে দেখায়! যাঁদ বলে, 
'কিগো, এখন বুঝি দায়ে পড়ে রায়মশাই 2 দরকারে পড়ে বোন 2 বলা তো 
অসম্ভব নয়! 

যে কেউই এ অবস্থায় বলতে পারে এ কথা। 

তার উপর আবার সুবালা মুস্তকেশীর মেয়ে। 

কিন্তু মুন্তকেশণর মেয়ে মুন্তকেশীর মত মুখে মুখে উপযুস্ত জবাব দেবার 


১৩২ সবর্শলতা 


জন্যে তৎপর হলো না। সে উল্লাসে পুলকে বলে উঠল, 'ভাঁগাস “পেলেগ” 
এসৌঁছিল, তাই মহারাণর পদধূঁল পড়লো !' 

কান জুঁড়য়ে গেল সুবর্ণ, জাঁড়য়ে গেল প্রাণ। 

সুবর্ণর আবির্ভবে কেউ পৃজাঁকত হচ্ছে, এ অনুভতিটা নতুন। 

সুবর্ণ এর স্বাদ জানে না। 

সুবর্ণ জানে, সুবর্ণর আঁবর্ভাবও নেই, তিরোভাবও নেই। সে যেখানে 
বিরাজিত. সেটা তার নিত্যধাম। জানে তার সেই নিতাধামের চারপাশের বায়ু- 
মন্ডল সমালোচনার প্রখর তাপে তপ্ত থাকবে, আর তার মাথার উপরের আকাশ 
আর পায়ের নিচের মাঁট সর্বদা স্মরণ কাঁরয়ে দেবে, “তোমাকে আচ্ছাদন ?দয়োছ 
এই ঢের, তোমাকে দাঁড়াতে 'দিয়োছ এই ষথেন্ট !' 

সুবর্ণ তুম এলে? কী আনন্দ কী সুখ! 

এ ভাষা সুবর্ণর জন্য নয়। 

অথচ জগতের দীনাতিতম দীনের জন্যও আছে এ ভাষা । 'ভিখারণশ মাও 
প্রার্থনা করে, “নবমী নিশি গো, তুমি আর পোহায়ো না-” 

সৃবর্ণর জন্যে এ প্রার্থনা নেই। 

স্মবর্ণ কি মূল্যহীন ? 

সুবর্ণ 'মূল্যবান' হবার সৌভাগ্য থেকে চিরবাঁন্চত ? 

সবর্ণর মূল্য ধার্য হয়েছে শুধু একটা অভ্যাস-মাঁলন শব্যায়। সেখানে 
সবর্ণর জন্যে আগ্রহের আহ্বান অপেক্ষা করে। 

কিন্তু সে আগ্রহ কি প্রেমের ? 

সৈ আহদ্বান কি পুরুষের ? 

তানয়। 

সে শুধু অভ্যাসের লেশা। 

তাই সে আহ্বান সবর্ণর চেতনাকে বিদ্রোহী করে, স্নায়দের পড়ত করে 
আত্মাকে জীর্ণ করে। 

তাই সুবর্ণর মূল্য কি জানে না সুবর্ণ। 

তাই এক যৌবন-থাকতে-প্রৌঢ়া, খেটে খেটে শীর্ণ” শ্রীহরন মেয়ের এই 
খুঁশটুকু সৃবর্ণর প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। 

প্রবোধ বলে, তা পড়লো পায়ের ধুলো! কিন্তু এই পণ্টাশ ক্রোশ দূরে 
থেকে চিনে তো ফেলেছিস ভাজটিকে 2 মহারাণীই ধটে। এখন মহারাণীর 
মেজাজ বৃঝে চলতে নাজেহাল হ! 

“আহা, এখনই নয় যাওয়া-আসা নেই তেমন, তা বলে কি দোখ নি আমি 
ওকে! সূবালা পায়ের ঁদকের শাড়ীটা নিংড়ে নিংড়ে জলটা ফেলতে ফেলতে 
বলে, “আমার মা জননীর হাতে পড়লে শিবও বাঁদর হয়ে ওঠে । গুরূজন নিন্দে 
করাছ না, তবে বুঝ তো? 

সুবর্ণ অবাক হয়ে তাকায়। 

ওই হাতে-পায়ে শির ওঠা, শীর্ণ মুখ. পাতলা চুল, প্রায় বাসনমাজা ঝিয়ের 
'মত চেহারার মানুষটার মধো এমন স্বচ্ছ পারচ্ছন্ন দা্টশান্ত! সুবর্ণকে বুঝতে 
পারে ও! 

প্রবোধ অবশ্য অবাক হয় না। হেসে বলে ওঠে, 'শালূক চিনেছেন গোপাল 
ঠাকুর! “তা যাক্‌, বোনাইকে দেখাঁছ না যে? 


সুবর্ণলতা ১৩৩ 


'দেখষে কোথা থেকে? এখন যে মার্নং ইস্কুল! ছেলে ঠেঙাতে গেছে 
সেই প্রাতঃকালে উঠে। বাঁড়ও তাই ঠাণ্ডা দেখছ, সবগুলো তো সেই 
গোয়ালে_- 

সুবর্ণ ফস করে বলে বসে, “মেয়েরা 2" 

'মেয়েরা 2 সুবালা উঠোনের দাঁড় থেকে গামছাখানা টেনে নিয়ে চুলগুলো 
ঝাড়তে ঝাড়তে হেসে ওঠে, 'বিড়টা তো *বশরবাঁড়, ছোট তিনটে ওই 
গোয়ালেই ।' 

৪ ৯5 

হু*। আমার দ্যাওর যে গাঁয়ের লোকের পায়ে ধরে ধরে গাঁয়ে একটা মেয়ে- 
পাঠশালা বাঁসয়েছে গো ! তা নিজেদের ঘরের মেয়েদের তো আগে পাঠাতে হবে! 
নচেৎ ফাঁস! 

'ভোমার দ্যাওর 2? আহনাদে উক্জঞল দেখায় সুবর্ণর মুখ, "খুব ভাল, 
তাই নাও 

'ভাল বল ভাল, বাউণ্ডুলে বল বাউন্ডুলে, তবে সুবালা গলা একট 
নামিয়ে বলে, ইদানিং স্বদেশ বাঁতকে বড়ভাইকে একটু ভাবনায় ফেলেছে-_ 

[ভিজে কাপড় ছাড়তে ঘরের মধ্যে ঢুকে যায় সুবালা। চেচিয়ে বলে, 'হাত- 
মখ ধূতে যেন ঘাটে যেও না বাপু, আম 'দাঁচ্ছ জল।' 

প্রবোধ চিন্তিতভাবে বলে, “এই হল এক ঝামেলা । ভগ্মীপ্াতর ভাই যাঁদ 
আবার স্বদেশে-কদেশী হয় তাহলেই তো-' 

'কী তাহলে? তোমার ফাঁস হবে ?, 

'আমার কথা হচ্ছে না। তোমাদের রেখে যাব-প্ীলসকে তো জানো না, 
প্ঠা গণ্ডগ্রামের বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে, পুকুরের পাঁকের নিচে থেকে 
আসামীকে টেনে বার করে” 

"কলকাতার রাজরাস্তা থেকেও করছে ।, 

'করছে! আমরা তো আর কেউ ওই সব শৌয়ার্তুমর মধ্যে মেতে যাই না! 
বলে গোলমালের টত্‌ শব্দাট উঠলে সে পথের দিক "দিয়ে হাট না। 

সাবধানী প্রবোধ আপন সাবপানতার মহিমায় স্ফীত হয়। 

সুবর্ণ এখন আর তর্ক করতে বসে না, সুবর্ণর মনের মধ্যে স্পান্দিত হতে 
থ|কে, একটা স্বদেশীবাতিক ছেলেকে দেখতে পাবে সে! কত বড় সেই দ্যাওর ? 
বিয়ে হয়েছে? ঘর-সংসারী £ মনে হয় না, সুবালা বলেছে “বাউন্ডুলে । 


এরপরই সূবালা আতথখ্যের ধুম লাগায়। মাজা ঝকঝকে গাড়ুতে জল 
এনে দেয় হাত-মৃখ ধুতে, বড় বড় ফুল কাঁসার রেকাবিতে করে ঢেলে দেয় মুড়ি, 
লারকেল কোরা' নাড়ু 

ভাইপো-ভাইখিদের সযয়ে কাছে টেনে টেনে খাওয়ার জন্য পাঁড়াপশীড় 
করে। আর তারপরই বলে ওঠে, “ওই যে আমার দ্যাওর আসছে ।...এই খবরদার, 
কৈউ পেক্বাম করতে যাব না! পেক্সাম করা দেখতে পারে না দুচক্ষে। 

পেম্নাম করা দেখতে পারে না দুচক্ষে! এও এক আভনব ভাষা! যা 
সুবর্ণর কানকে আর একবার শীতল করে। হয়তো বা মুখটাকেও দীপ্ত করে। 

কিন্তু প্রবোধের কাছে এই আগ্রহদশপ্ত মুখমণ্ডল অবশ্যই প্রীতিকর হয় না। 
হবার কথাও নয়। প্রবোধের মনে হয়- ছেলেদের ক'টাকে তাদের পাঁসর কাছে 


১৩৪ | সুবর্ণলতা 


রেখে সুবর্ণকে নিয়ে চলে যায়। কে জানতো যে সবালার সংসারে আবার 
এরকম একটা সাংঘাতিক জখব আছে! 

স্ণঁকে এরকম একটা বাউণ্ডুলে পরপুরুষের কাছাকাছি রেখে চলে যাওয়ার 
থেকে তাকে যমের মুখে তুলে দেওয়াও ভাল। 

একেই তো নিজের মনের কাছে নিজের দিকের বাটখারা তার হালা, 
সুবর্ণর মন যে তার নাগালের অনেক উশ্চৃতে তা আর জানতে বাকী নেই 
প্রবোধের। কোনোমতে আগলে আগলে রেখে বয়েসকালটঢা পার করে দেওয়া 
এই পর্যন্ত!...কিন্তু সেই কালটার ঠিক নাট সীমারেখাটা কি? বারো 
বছরের মেয়ে সুবর্ণর, আরও পাঁচটা ছেলে-মেয়ে তার নিচে, তবু তো দেখলে 
মনে হয় না বয়েসকালটা চলে যাচ্ছে তার! 

সেকালের নবাবরা যে বেগমদের হারেমে পুরে রাখতো, সেটাই ঠিক 'ছিল। 
হায়, কোথা থেকে এই প্লেগের হুড়ো এল! আশ্চর্য প্রবোধের এমন বৃদ্ধি 
হলো না যে রেখে যাবার আগে একবার দেখে যায়, জায়গাটা কেমন ? 

সুবালার সংসারই আছে শুধু. আর বুড়ী শাশুড়ী আছে, এইটাই তো 
জানা, ওই দ্যাওরটার কথা তো সঠিক জানা ছিল না। 

কক্ষনো যেন না ওর সামনে বেরোয় সুবর্ণ! 

প্রবোধ অতএব ভ্রুভঙ্গী করে স্তীকে ভিতরে যেতে 'নিদেশ দেয়, কিন্তু 
বিফল হয় সেই ইশারা । সুবর্ণও ভ্রুভঙ্গীতে জানায়, “কেন, হয়েছে কি ?” 
নতুন একট 'সংসার' দেখে ঈষৎ থমকে দাঁড়ায়। 


টস । 

সুবালা সহর্ষে বলে ওঠে, আমার মেজদা আর মেজবৌ গো! আর এরা 
ভাইপো-ভাইবি! এর নাম ভানু, এর নাম কান্‌, এ চন্নন, এ পারুল, এ 
খোকা । ডাকন্মমই জান বাপু, পোশাক নাম জা না। কই চাঁপাকে তো 
দেখাঁছ না মেজবৌ' ? হরেকেন্ট, এতক্ষণ খেয়ালেই আসে নি! সে? 

প্রবোধ কিছ বলার আগেই ফট করে সুবর্ণ ওই ছোঁড়ার সামনে বলে বসে, 
“সে তার ঠাকুমার সঙ্গে গেছে? 

শুনে মাত্র সর্বাজজা জলে যায় প্র বোধের । 

কেন? 

তোমার তাড়াতাঁড় কণ্ঠসূধা বিতরণ করা কেন? কা দরকার ছিল? 
ছোঁড়া কি খোকা নাকি? শ'ুটকে হাড়গিল্লের মত দেখতে: তাই মনে হচ্ছে কম 
বয়স। সুবর্ণর থেকে ছোট হবে না কক্ষনো। আর ছোট হলেই বা বিশ্বাস কি? 
দেখতে খারাপ 2 তাতেই বা কিঃ আঁব*বাসিনী মেয়েমানৃষের কাছে ওসব বাধা 
বাধাই নয়। 

হায় হায়, কী কাজই করে বসলো প্রবোধ! 

আবার িনা আজই চলে যেতে হবে তাকে! জাহাজঘাটার অবস্থা টলমল, 
কাঁল-কাঁমন সব িটটান দিচ্ছে প্লেগের ভয় যত না হোক, জোর করে টিকে 
দেওয়া হবে এই ভয়ে। 

দৃ-চারাঁদন থাকতে পারলে লক্ষ্য করা যেত, আর তেমন বেচাল দেখলে টেনে 


নিয়ে যাওয়াও যেত। এ যে কিছুই হচ্ছে না। 
লাশ) 


সুবর্ণলতা ১৩৫ 


অথচ ওদিকে এাগয়ে যাচ্ছে। 

হতভাগা ছোঁড়া ফট করে খোকাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, “বাঃ, গ্র্যান্ড 
দেখতে তো! সকলকেই দেখাঁছ খাসা! মেজবৌদির যত্রের গুণ আছে। হেলদি 
ছেলের বড় অভাব আমাদের দেশে ।, 

'নমস্কার মেজদা, কিছু মনে করবেননা, আমি একটু বেশি কথা বাঁল। 
এই ফে এই বৌঁদাঁটি, আমুর" নামকরণ করেছেন "বাক্যবাগঁশ”! ওঁকে রাতাঁদন 
গঞ্জনা দিই "আম, ছেলেমেয়েগুলোর হাড়সার চেহারার জন্যে” 

হঠাৎ আরো ভয়ানক আরো অসমসাহিক এক কাণ্ড করে বসে সবর 

শুধুই শক অসমসাহসিক ? 

কুশ্রীতা নয়? অসভাতা নয় 2 শাস্লসমাজের বিরোধখ নয়১ কেন? কেন 
এই বদমাইশি ? 

ফট করে বলে বৃসল্মে কিনা, আর আপনার 'নিজের ক৯?, 

আচ্ছা সুবালা তো গাঁয়ের বৌ'"স্‌বালাই বা ভাজকে এই 'নিলক্জতার জন্যে 
কিছ বলল, না কেম 2 তার মানে বুদ্ধি-সৃম্ধির বালাই নেই। বালাই থাকলে 
কখনো এর পরও হাসে১ হের্সে উঠে বলে, ওর কথা বাদ দাও। ও ষে 
দেশোদ্ধার করছে! ওর কি নাইবার-খাবার অবকাশ আছে? অযত্বে অযত়ে 
অমন পোড়াক্ঞাঠের মত দশা-_- 

'বোঁদি, আম নসাপত্তি করাছ-_” ইয়ারটা বলে ওঠে, “একজন তদ্রমাহলার 
সামনে কিনা পোড়াকাঠ বিশেষণ দেওয়া! মেজদা, দেখুন আপনার বোনের 
কাণ্ড।' 

মেজদা তাঁর বোনের কাণ্ডর 'দকে না তাকিয়ে হঠাৎ চেশচয়ে "ওঠেন, “এই 
চন্নন, হচ্ছে কিঃ এত মাড় ছড়াচ্ছিস যে?" 

বাঁক সবাই চমকে ওঠে. থমকে যায়। 


তবু চলেসষেতে হয়। 

প্রাণপাখীকে পিঞ্জর ছাড়া করে বনে-জঙ্গালে উীঁড়য়ে দরে। 

উপায় কি? 

সাত্য তো পাগল নয় যে বলবে, শনয়ে চলে যাই ওকে! " 

তবে একটা খবরে একটু ভরসা এসেছে,*ছোঁড়া অমূল্যর নিজের ভাই নয়, 
জ্ঞাতিভাই। অন্য বাড়তে থঙুকে। আবার বোঁশ ভরস্যও নেই, শূন্য একটা 
বাঁড়তে থাকে 'বলে এ বাড়িতে খায়। ররর জান্কানিতা 
ওর একমার দেখবার ল্লোক পাস মরে পর্যন্তি। 

বাউন্ডুলে যাকে বলে! 

কেউ কোথাও নেই, শুনা একথানা বাড়তে একা থাকা! 

প্রবোধ বিরস্ত হয়ে প্রণ্ন করেছিল, 'তা দিয়ে করেন নি কেন দয়াময় ?' 

সুবালা দাদার রাগে হেসেই খুন। 

'হরেকে্ট। ও দিয়ে করবে তো দেশ স্বাধীন করবে কে?" 

ফাজলামি। বাল আজ না হয় ভুই ওর ভাত রাধাঁছস। চিরকাল পরের 
ঘাড় দিয়ে চলবে ?' 

সুবালা আহত হয়। 

সুবালা গম্ভীর হয়। 


৬১৩৬ সুবর্ণলতা 


বলে, পর বললে পর, আপন বললে আপন, তবে কাঁদন ভাত রাঁধতে 
পাবো ওর, তাই বা কে জানে! কোন দিন যে জেলের ভাত খেতে হয়, এই 
ভয়ে কাঁটা হয়ে আছি।' 

প্রবোধের নিজের বোনকেও আঁদখ্যেতার জাহাজ মনে হয়। করাত 
দ্যাওরকে নিয়ে এত আদখ্যেতা! আরও 'বিরন্তুস্বরে বলে, 'আর সেই লোক 
বাড়তে আসতে 'দাচ্ছিস ?" ্‌ 

সুবালা অবাক হয়। 

'আসতে দেব না? কাকে 2 আম্বকা ঠাকুরপোকে ? কী যে বল মেজদা! 

'তা তোর না হয় আদর কর্তব্য উলে উঠল, বাল অমূল্যর হাতে দাঁড় 
পড়লে ?' 

সুবালা 'বিচালত হয় না। 

সুবালা বলে, ীনয়াতি ছাড়া পথ নেই মেজদা, সে নিয়াত থাকলে-” 
বলবার কিছু নেই” প্রবোধ প্রায় 'খিপচয়ে ওঠে, “তবে কাজটা ভাল হচ্ছে না। 
এ বাঁড়তে ওর যাতায়াত কমাও! খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা অন্যত্র করতে বলতে 
হবে, 

সুবালা হেসে ওঠে। 

সুবালা ওর প্‌জনীয় মেজদার কথা অমৃতং বালভাষতং 'হসেবে গণ্য 
করে। তাই সৃবালা আর তর্ক না করে বলে, “পাগল হয়েছ? ওকে খাওয়াতে 
হয় ধরেবে'ধে, তিনবেলা না খেলেও ওর খেয়াল থাকে না।' 

"তবে আর কি? কৃতার্থ-» প্রবোধ বলে, “তোমরা নিজের কপালেও 
তৈশ্তুল গুলছো, ছেলেপুলেদেরও ক্ষতি করছো ।...ওইরকম একটা ব্যাড এগ্‌- 
জামৃপল্‌ চোখের সামনে__ 

সুবর্ণ এতক্ষণ ভাইবোনের ওই তর্ক-বিতর্ক, স্নেহ-আলাপের মাঝখানে 
কথা বলে 'নি। এইবার বলে উঠল, বলল" “চোখের সামনে এটা কুদন্টান্ত নয়, 
বরং মহৎ আদর্শ! মেজঠাকুরঝির ছেলেদের ভাগ্য ভাল যে এমন একটা আদর্শ 
চোখের সামনে পাচ্ছে । 

চমতকার! যখন পুলিস এসে ঠেঙাতে ঠেঙাতে ধরে নিয়ে যাবে, তখন 
“মহৎ আদর্শ'র লীলা বুঝবে । এমন জানলে আনতাম না তোমাদের ! 

সুবর্ণ তীব্রকণ্ঠে বলে, তামাদেব সহোদর বোন যেখানে রয়েছে, সেখানে 
তোমার বৌ-ছেলে থাকতে পারবে না?, 

“থাকতে পারবে না কেন? বিপদের আশঙ্কা, সেই কথাই হচ্ছে।' 

“সে আশঙ্কা তোমার বোন-ভগ্নীপাঁতিরও আছে-' 

'চুলোয় যাক ওরা--” প্রবোধ বলে ওঠে, মাথার মধ্যে আগুন জওলছে 
আমার! 


তা সেই মাথার মধ্যে জবলল্ত আগুন নিয়েই বিদায় নিতে হলো প্রবোধকে। 
উপায় কি? আর সমস্ত রাগটাই শেষ পর্য্ত সুবর্ণর ওপর পড়ল। সংবর্ণই 
বা আসতে রাজ" হল কেন? 

এঁদকে তো এত জেদ, পাহাড় নড়ে তো জেদ নড়ে না, অথচ ভাসুর 'এক- 
বার অনুরোধ করলেন তো গলে গেলেন! চিরকাল দেখাছ, এই “আম হত- 


সদবণ লতা ১৩৭ 


জাগা কেউ নয়, ভাসুরের কথা শিরোধার্য! বদ মেয়েমান্বদের স্বধর্মই এই। 
কেদাববাবুকে নিয়ে কত আঁদখ্যেতা। সে বুড়ো আর আসে না তাই বাঁচা 
গেছে। 

“গুরুজন' বলে যাঁদ ছেদ্দা করতো তো মাকে আগে করতো । তার বেসায় 
নয়। তার বেলায় রাতদিন শাশুড়ীঁর মূখে মুখে চোপা! আসল কথা বেটাছেলে! 
সেটা হলেই হলো! বা বুঝছি. সুবালাটা মুখ্যর ধাঁড়, ওই ঘোড়েল 
অম্বিকাটা ওর মাথায় হাত বাঁয়ে খাচ্ছে-দাচ্ছে। অতএব সংবালার ওপর ভরসা 
নেই। ওর চোখের সামনেই অনেক কিছু ঘটে যাবে, টেরও পারে-না। 

স্‌বালার শাশুড়শীটি যে কোথায় থাকেন দেখতেও পাওয়া গেল না। তবু 
একটা বুড়ো মানুষ ছিল সংসারে! 

নাঃ. ওসব বুড়ো-ফুড়োর কর্ম নয়, অমূলাকেই বলে এলে হতো: তোমার 
শালাজের বাপু একটু পুর্ষ-ঘে+ষা স্বভাব আছে, চোখে চোখে রেখো। 

বলে এলে হতো । 

বলা হয় নি। 

এ কথা যত ভাবতে থাকে প্রবোধ, ততই তার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে। 

কন উপায়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় সুবর্ণকে 2 

ভগবান! প্লেগকে যাঁদ আবার তোমার ভান্ডারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে না 
পার তো তোমার এই ভন্তপ্রজা প্রবোধকে প্লেগ দাও! অত বড় একটা কারণ 
ঘটলে অবশাই আনা যাবে সুবর্ণকে! 


॥ ১৬ 1 


পড়ন্ত বেলার রোদ সরতে সরতে দাওয়া থেকে উঠোনে নেমেছে, ফুলেশ্বরণও 
তাঁর সেলাইয়ের সরঞ্জামসহ সরতে সরতে দাওয়া থেকে 
টঠোনে নেমেছেন! এরপর ছাদে উঠবেন। 

প্রদীপের আলোয় আর চোখ চলে না আজকাল, তাই 
দিনের আলোর শেষ বন্দটর পছনেও ছুটোছএাট। 

ছেলে নিষেধ করে। বলে, 'মা, তুচ্ছ ওই কাঁথা কাঁথা 
করে চোখের মাথাটা আর খেও না। জীবনভোর তো 
কাঁথায় ফুল তুললে, আর কেন? 

অমূল্যর মা ফুলেম্বরী ছেলের এই' বকুনিতে হাসেন। 
বলেন, 'জশবনতোর' তো ভাত খাঁচ্ছ, তবু আবার খাই কেন ?' 

তার সঙ্গে এর তুলনা! না মা না, তু এবার ক্ষ্যামা দাও। নইলে শেষ 
অবাধ অন্ধ হয়ে যাবে 

ফুলে*বরী সতেজে বলেন. 'অন্ধ অমান হলেই হল? ভগবানের লীলা 
নিয়ে কাজ 

সুবর্ণ শুনতে পায়। 

সুবর্ণ অবাক হয়। 

সুবর্ণ প্রশন না করে পারে না। 

প্রথম করে, শকসের কাজ করছেন ?' 





১৩৮ সুবর্ণলতা 


সুবালা হেসে ওঠে, 'জানো নাঃ আর জানবেই বা কোথা থেকে ? আমার 
শাশুড়ীর এই এক বাঁতক! বারো মাস কাঁথা সেলাই করছেন। কে শোবে, 
কার দরকার, সেসব চিন্তা নেই। ওই সেলাই! আর তাই কি সোজাসজ 
ফুল-লতা যে, হলো না হলো মিটিয়ে নিলাম ? তা' নয়, এ একেবারে রশীতমত 
বঞ্ধাটে ব্যাপার। পুরাণ উপপুরাণের গল্প নিয়ে ছবি আঁকতে বসেন কাঁথায়। 
এখন যা যশোদার লন ম্ধন” লালাটি সেলাই করে করে তুলছেন! 

'সোক?' 

'তবে আর বাতিক বলছি কেন! ওই লীলার যাবতীয় খুটিনাটি সব বসে 
বসে “সলোচ্ছেন”। যতক্ষণ আকাশের আলো থাকবে, ততক্ষণ তাকে কাজে 
লাগাবেন। আম বাল তা একরকম ভালো। পাড়ার অন্য গিন্নীদের মতন 
পরন্চ্ছো না করে বসে বসে কাঁথা "সলোন”, তা ভাল।' 

সুবর্ণ প্রশ্নের পর প্রন করে। 

সুবালার ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়ে গেছে, ও কাঁথায় শোবে কে ? 

শোবে কে? 

ও বাবা, ও কি শোবার কাঁথা £ মা যশোদার মূর্তি আঁকা! ও শুধু গায়ে 
দেবার; গায়ে দেবে সূবালার ভাঁবম্য-ক্কালের নাতি! ফুলেশবরী তো. আর 
থাকবেন না তখন, হাতের কাজটুকু খে ফাবেন। লোকে সোনাদানা রেখে যায়, 
গুর তো সেসব নেই, তাই- 

সুবর্ণ ভাবে, কণ সূন্দর! 

বাঁড়র গিল্লশ বাঁড়র সকলের ওপর চোখ ফেলে ফেলে তাদের খত বার 
করে করে গালমন্দ করে না বেড়িয়ে ছচের ওপর চোখ ফেলে স্‌তোয় আঁকা 
ছাঁবাটকে নিখৃত করছেন বসে বসে! 

সুবালা কী সৌভাগ্যবতী ! 

সুবর্ণ নিঃশ্বাস ফেলে। 

সুবর্ণ বলে, 'সোনাদানা থেকে ঢের দামী! আচ্ছা, ছুচে সুতো পরাতে 
পারেন 2 

“ও বাবা! আমার থেকে ভাল। পণ্টাশটা ছু'চে পণ্টাশ রকম সুতো 
পরাচ্ছেন চাব্বশ ঘণ্টা । নেশা নেশা! 

নেশা! নেশা মাত্রেই কি ক্ষাতকর ? 

৪৮7গ-৬দ৮০৯ সনির রহ 
এই কাঁথায় ছহুচের ফোঁড় তোলা! 

কণ অদ্ভুত নিষ্ঠা! 

'িশবাস রাখেন “দেবতার লীলা” আঁকতে বসে চোখ নষ্ট হতে পারে না! 

ওই কাঁথার ফুল থেকেই মান্ত মানুষটার ! 

নামাটও তেমাঁন সুন্দর, ফুলেশবরী! 

স্‌বালা তাঁর ভাগ্য সম্পর্কে কৃতজ্ঞ কিনা কে জানে! 

কল্তু সুবর্ণ যাঁদ ওই ফুলেশ্বরীর বৌ হতো! 

সুবালা আরো বলেছে. 'কারূর সাতে-পাঁচে নেই, জগৎ আছে কি নেই 
জ্ঞান নেই, ওই শিল্পকম্ম নিয়েই মশগুল? 

তবু বলবে না সংবর্ণ, সুবালা কণ ভাব্যবত? 

সুবর্ণ আস্তে আস্তে ফুলেশ্বরীর কাছের গোড়ায় গিয়ে বসে। 


সুবর্ণলতা ১৩১ 


ফুলেশ্বরণ ছদ্চৈ সুতো পরাতে পরাতে বলেন, 'কে 2 কলকাতার বৌমা 
এলো বসো! ছেকেরা ? 

“এদিক-ওদিক ঘুরছে।' 

'আহা, শহুরে বেচারাদের কী কম্ট! 

কম্ট কি মাউ-ই মা, সুখ বলুন। এমন খোলামেলা, আলো-বাতাস জগবনে 
দেখেছে ওরা 2...আচ্ছা মাউ-ই মা, ছেশ্ড়া কাপড়ের কাঁথা, তাতে এত খেটে কি 
হয়2 এত ফুল কেটে কি হয়?' 

সৃবর্ণর কি এ কথা নিজের কথা? 

না, ওই বজ্ধার মর্মকথা আদায় করতে চায় সে? 

তা মর্মকথাই বলেন ফূলেশবরণী। হেসে ফেলে বলেন, 'ফুল কাটি কি আর 
ছেন্ড়া কাঁথার গায়ে মা, ফুল কাটি মনের গায়ে। জশবনাভোর তো শুধু ধান 
সেম্ঘ করছি, গোবর কুড়োচ্ছি, কাঠ কাটছি, জল তুলাছ, ভাত রাঁধাঁছ, ভাল 
কাজের তো কিছুই করলাম না, উদ ১৬৪ 

হঠাং গলা নামান ফুলে*বরী। 

বলেন, “তোমার কাছে ছেণ্ডা পাড় আছে কলকাতার বৌমা 2 রগরগে ঝক- 
ঝকে পাড় 2 যাতে সৃতো ভাল ওঠে 

গলা নামালেও কথাটা সুবালার কানে ওঠে। 

সুবালা বলে ওঠে, মা'র যেমন কথা! কদিনের জন্যে এসেছে মেজবৌ, ও 
বুঝি ছেস্ড়া কাপড় নিয়ে এসেছে ! 

সহসা সুবর্ণ বলে ওঠে, “এনোছ, এনোছি মাউ-ই মা. এক্ষুনি দিচ্ছি ! 

ফুলেশ্বরী বলে ওঠেন, বাজরাণী হও, হাতের নোয়া বজ্জর হোক।... 
কী পাড় আছেঃ লাল আছে? 

লাল কালো দুই-ই আছে। 

'আহা, আমার সোনার মেয়ে! ওই দুটো রঙের জন্য কাজ আটকে পড়ে 
আছে ।...তা হ্যাঁগা কলকাতার বৌমা, বালাতি কাপড়ের পাড় নয় তো তা 
হালে কিন্তু আম্বিকা আস্ত রাখবে না আমাষ ! 

সুবর্ণ একবার ফূলেশ্বরীর মুখের দিতে তাকায় । অবাক হয়। বলে, এই 
কাপড়, এই সব সৃতো' সমস্ত দিশী জিনিস 2 

ফলন মনে হাসেন। 

কথা বলব কেন, এ কাপড়ও 'বালাত, এর সৃতোও অর্ধেক 
বালতি । আরম্ভ যখন করেছি, তখন দেশখ বালাতর ধুয়ো ওঠেই নি। দেখছ 
না. আগের সেলাই সব ঝকঝকে, এখনকার সব ম্যাড়মেড়ে! মন ওঠে না। কিন্তু 
ক করবো, ছেলেটা মনে কল্ট পায়। বলে, ওইটুকু চকচকেটাই বড় হল 
তোমার 2 বলে, "নেহাং নাক মা যশোদা একে বসে আছ তাই, নইলে প্াাঁড়য়ে 
দিতাম!" তা স্বদেশী পাড়ের সৃতো থাকে যাঁদ-_' 

'এই যে এক্ষুণি দিচ্ছি" উঠে যায় সুবর্ণ 

সুবালা বলে, "সাধে বলেছি বাতিক! যাকে পাবেন তাকেই বলবেন, ছে'ড়া 
কাপড়ের পাড় আছে ঃ তুমি ছেপ্ড়া পাড় কোথায় পাবে বল তো? 

পাবো পাবো” এই যে আছে গো! 

সবর্ণ তাড়াতাঁড় ঘরে ঢ্‌কে যায়, ট্রাক খুলে আস্ত আস্ত দৃখানা শাঁড় 
বার করে ফ্যাঁসফ্যাঁস করে তার পাড় ছি'ড়ে স্তুপাকার করতে থাকে। পাড়ের 


১৪০ সবণণলতা 
রং একট ম্যাড়মেড়ে, সেটাই রক্ষে। 


৯৭ ॥ 


বড় গলায় আমবাস 'দিয়োছিল সবোধ তার ভাদ্রবৌকে, 'বামূনের ছেলে, দুটো 
ভাত সেম্ধ করে নিতে পারবো না? 

কন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ব্রাহ্মণ-সন্তানের গৌরব 
অক্ষুপ্ন থাকছে না। জগতের সহজতম এবং “গুচাতম' 
কাজ ওই “ভাত সেদ্ধ্টাই চার-চারটে জোয়ান পুরুষকে 
হিমাঁসম খাইয়ে ছাড়ছে। 

হয় আতিসেম্ধ হয়ে পণ্ড পাঁকয়ে বসে থাকে, ফেন 
ঝরানোর অবস্থা থাকে না, নয়তো আঁতি সাবধানে প্রায় 
চালই থেকে যায়। অথবা হয়তো জলের অন্ষে ঘাটাতি 
ঘটে সহসা সৃগন্ধে পাড়া আমোদভ করে তোলে । তা ছাড়া ফেন ঝরাতে 
আঙুলের ডগায় ছোটখাটো ফোস্কা চ:রজনেরই হয়েছে। কারণ একজনের 
অপটুতায় বাতগহাঁস হেসে অপরজ€ হাত লাগাতে এসেছে কিনা! 

আনূষাঁঞ্গক ব্যাপার উনুন ধরানোও সোজা কাজ নয়। হয়তো বা তুলা- 
মূল্য। উনুনের ভিতরদিকে ঘটে পেতে পেতে আগুন জেলে দিয়ে তার 
উপর কয়লা ঢেলে দিতে হয়' এ পদ্ধাতিট। আঁবাদত কারুরই নেই! গেরস্থর 
ছেলে. মা চিরকাল খেটেছে, ওরা আশপাশে ঘুরেছে। 

কিন্তু সেই জানা জগতের কাকা যে হাতে-কলমে করতে গিয়ে এমন 
রহস্যময় হয়ে উঠবে এটা কে জানতো? 

পদ্ধাতমত কাজ হয়, কিছুক্ষণের মত বাড়িটা ধূম্রলোকে পাঁরণত হয়, কিন্তু 
সেই ধূম্রজাল থেকে মুস্ত হয়েই দেখা যায় ধূমের পিছনে বহি নেই। কেন যে 
এমনটা হয় স্টো দুর্বোধ্য! ওই একই পদ্ধাতিতেই তো আবার জঙলেও শেষ 
পর্য্ত! বার তিন-চার ধোঁয়া খেয়ে খেয়ে শেষ অবাধ আগুনের মুখের দেখা 
মেলে। 

কাজ দুটো যে এমন গোলমেলে, ভা তো কই মনে হতো না কোনোদন ? 
বরং চোখে একটু ধোঁয়া লাগলেই রাগারাগি করা হয়েছে, 'এত ধোঁয়া কেন? 
রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে না কেন? 

মুখরা হারদাসী বলতো, চুলোয় আগুন দিলে ধোঁয়া হবে নাতো কি 
পু্পবৃণ্ট হবে দাদাবাবূর।ঃ আপনারা বোঠকখানা ঘর থেকে তোরিমোর 
করছো, অথচ বৌঁদরা ওই ধোঁয়ার মধ্যে বসে কুটনো-বাটনা করছে । কই তার৷ 
তো কিছ বলছে না!' 

হঁরিদাসীর এই দুঃসাহসিকতার উপর মুস্তকেশীর ধমক এসে পড়তো, 'তুই 
থাম তো হারদাসী! কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা ? বোঁদরা ধোঁয়ায় বসে আছে 
বলে দাদাবাবূরাও থাকবে তাই 2 বাল পায়ে মাথায় এক হবে ?' 

হরিদাস মুস্তকেশীকেও ছেড়ে কথা কইত না, বেজার গলায় বলতো, 
'জাঁন নে মা, কে পা, কে মাথা! আর মাথাটাই দামী, পা-টাই সস্তা, তাই বা 
কেন, তোমরাই জানে। সে-কথা। পায়ের ওপরই তো দাঁড়ায় মাথাটা । আর আমরা 





সবর্ণলতা ১৪১ 


তো পায়ের তলা, তব্‌ তো আমাদের নইলে তোমাদের দন চলে না দৌখ। 
গন সকল মানার পরাল একই বস্তু 'দিয়ে তোর করেছে, সেই কথাই 
৮ 

'তা কইাব বৌক, মেজবোদির সাকরেদ যে! রাতদিন তো ওই সব কথার 
চাষ করছেন মা-জননাী!' বলে থামতেন মুক্তকেশী। কারণ জানেন হরিদাস 
মতন পাঁরচ্কার কাজ শ'য়ে একটা মেলে 'ি না মেলে। ওকে বোশ চটানো 
চলবে না। 

ওখানে চুপ করে এখানে ছেলেদের কাছে এসে আঁভযোগ করতেন মুন্ত- 
কেশী, 'দেখাছস তো মাগীর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! মেজবৌমাই এইটি করছেন। 
মনবরত ওদের সামনে গাওয়া -“গরশবরা কি মানুষ নয় ?...ছোটলোক কথাটা 
কারুর গায়ে লেখা থাকে না, ব্যাভারেই ছোটলোক ভদ্দরলোক!...মাইনে দয়ে 
রাখা হয়েছে বলেই কি আমরা ওর মাথা কিনে 'নয়োছ ? ও কাজ 'দচ্ছে আমরা 
পয়সা দিচ্ছ, হয়ে গেল শোধবোধ।”..এতে আর ছোটলোকের মাথা বিগড়োবে 
না? 

ছেল্লরা বলতো, পবদেয় করে দাও না মাগণকে। ঝি আর মিলবে ন! 
কলকাতা শহরে 2 

মুস্তকেশী ভিতরের রহস্য ব্ন্ত করতেন না. বলতেন, না, 'অমনাট আর 
সহজে মিলবে না।' বলতেন, 'যে আসবে লঙকায়, সেই হবে রাক্ষোস ! মেজ- 
বৌমা হয়তো আবার তাকে নিয়ে “পাঠশালা” খুলবে । এই তো শান ত্য 
বলছে, হারদাসী, তোর ছেলেটাকে এই বয়সেই পানের দোকানে কাজ করতে 
দয়েছিস ১ কেন, একটু লেখাপড়া শেখাতে হয় না? আমাদের এখানে আনিস 
পপ থাকবে, পড়া শুনে শুনেও শিখবে 
একটু! 

এ কথা শুনে হেসে উঠেছে ওরা হা হা করে। 'হরিদাসীর ছেলেও লেখা- 
পড়ার ভাবনায় মেজশিন্নীর আমাদের ঘুম হচ্ছে না! ভাল ভাল। কা বলবো, 
ওই মেয়ে লেখাপড়া করলে নির্ঘাত সামলা এপ্টে কাছাঁর যেত।...তবে হাঁর- 
দাসীর যে রকম বোলচাল ফুটছে, তাতে ওকে ছাড়িয়ে দেওয়াই দরকার। এর 
ওপর আবার নাকি '্বদেশীবাব:"-দের চ্যালা হচ্ছেন। দেয় কর, 'বদেয় 
কর।" 

কিন্তু এখন মুস্তকেশীর ছেলেরা কাতর আক্ষেপে বলছে, 'হরিদাসাঁটা 
সুদ্ধ ভাগলো ! ওটা থাকলে তো এমন ঝঞ্ঝাটে পড়তে হত না! 

প্রকাশ-ই বোশ খাগ্পা, কারণ এ'টো বাসন মাজার দায়টা পড়েছে সম্পূর্ণ 
তারই ঘাড়ে। সে ছোট, তারই এটা কর্তব্য। বড়রা তো আর ছোটরু এ*টো 
সাফ করবে না! আবার সুবোধ যে প্রস্তাবটা করোছিল, যে যার নিজ নিজ 
থালা সাফ করে নেবার, তাতে রাজশ হতেও চক্ষুলজ্জায় বাষে। 

অতএব প্রকাশের কম্ট বেশি। 

ভাত সেম্ধ এবং চুলো ধরানো ব্যাপারে প্রত্যেকেই প্রতোককে নস্যাৎ করতে 
এসে নিজে নস্যাৎ হয়েছে। এখন সকলেই একযোগে রান্নাঘরে এসে হুটোপাঁট 
করে, প্রকাশকে আবার উঠোনেও নামতে হয়। 

ঘর, দালান, 'সিশড় সাফ করার প্রশ্ন অবশ্য ওঠে না, মেয়েরা যাওয়া পর্যন্তই 
ও কাজটা বাদ। হারদাসী তো আগেই গেছে। এ'টো থালাটা যে অমোঘ, 


১৪২ সুবর্ণলতা 


আনবার্য! তাই চৌবাচ্চার পাড়ের উপর থালাটা বাঁসয়ে দাঁড়য়ে দাঁড়য়ে মাজা- 
পর্ব সারতে সারতে প্রকাশ খিশচয়ে ওঠে: “আমার হাতে যাঁদ সংসারের ভার 
থাকতো, মাগীকে কেমন যেতে দিতাম দেখতে! উনি সুদ্ধ ছুটলেন মড়ক থেকে 
প্রাণ বাঁচাতে! বড্ড দামী প্রাণ! লোকসান গেলে পাঁথবী একেবারে অন্ধকার 
হয়ে যাবে! 

কথাটা সুবোধের কানে যেতে প্রাতিবাদ করে উঠল সে, 'তা পাঁথবীর 
লোকসান না হোক তার তো লোকসান রে বাপু নিজের প্রাণ সকলেরই €নজের 
কাছে দামী । মড়কের ভয়ে কে না পালাচ্ছে! 

ও বাবা! দাদাও যে দেখাঁছ ভাদ্দরবৌয়ের চ্যালা হচ্ছে। প্রকাশ হেসে 
ওঠে, 'বালি এই আমরা তো রয়োছ। 'দাব্য জলজ্যান্ত বে'চেও রয়োছি। হশর- 
দাসীর চাইতেও কিছু আর অধম নই আমরা ! 

'আহা তা কেন? আমাদের যে প্রাণের মায়ার থেকে চাকাঁরর মায়া আঁধক, 
ওদের তা নয়। "ওরা বলবে, আগে তো বাঁচি, তারপর দেখা যাবে কাজ! 

“আচ্ছা দেখে যেন। এলে কিন্তু আমার হাতে ওর শাস্তির. ভার ?দিতে 
হবে তা বলে রাখছি। দোঁখ ফ্েমন করে আবার ও এ বাঁড়র চৌকাঠ [ডঙোয় ! 

সহসা কথায় ছেদ পড়াতে হয়। 

একটি বাজখাই গলা কর্ণ বিদারণ করে চেপচয়ে ওঠে, 'কার চৌকাঠ 
ডিঙানো বম্ধর হুকুম হচ্ছে রে2 আমি তো এই ভিঙ্োলাম! 

'আরে জগুদা নাক ?' 

এরা বোরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। 

জগ সাঁবস্ময়ে বলে ওঠে, 'আরে, তিনটে মদ্দতে মিলে রান্নাশালে ক করা 
হচ্ছে? 

'স্ঠট আবার করা হবে! প্রবোধ বীরত্বের গলায় বলে, 'রান্না করা হচ্ছে! 

'রাঘা! তোরা আবার রান্না শিখাল কবে রে?, 

জগ হা-হা করে হেসে ওঠে আকাশ-ফাটানো গলায়, 'দৌখ্‌ নি তো কখন 
অন্দরমহলের ধারে-কাছে! হণ্মা” সে বটে আম। রে'ধে রে'ধে হাড়পাকা! 
স্বর্গাদীপ গরীয়সীর অসুখ করলেই তো এই হতভাগার প্রমোশন! ওই ভয়ে 
জননশ আমার রোগ অসুখ লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ান। আমও তেমান ঘুঘ মৃুখ- 
চোখের বেভাব দেখলেই তেড়ে আঁস। নাঁড় দৌখ, জিভ দোঁখ, দিব্য দিই। 
শেষ অবাঁধ গাল পাড়তে পাড়তে গিয়ে কাঁথা মাড় দিয়ে শোয় । 

প্রভাস সকোতুকে বলে, “তা বেশ! রান্নায় ওস্তাদ তো- এখন তো স্বর্পক 
চলছে? আচ্ছা একদিন খেয়ে আসা যাবে তোমার হাতে ।, 

জগু চোখ কুচকে বলে, 'কেন, এখন স্বপাক কেন? বলতে নেই ষষ্ঠীর 
কৃপায় বাছা এখন আছেন ভাজ ।, 

'আছেন! 

অর্থাৎ শ্যামাসুন্দরী এখনো এই মড়কের কলকাতায় বিরাজমান ? 

এরা হৈ-চৈ করে ওঠে, মামী এখেনেই আছেন নাকি ? টীটি পরি 
চলে যান নি? 

“দেশের বাঁড়তে ! 

জগ আর একবার আকাশ ফাটায়। 

'দেশের জ্ঞাতিদের সঙ্গে যে মায়ের আমার একেবারে গলায় গলায়! 


সুবর্ণলতা ১৪৩ 


বালাছিল' একবার মানদা পাস, আম যাচ্ছি বড়বৌ, যাব তো চ। আম সাফ 
বলে দিলাম, কেন? এই হতভাগা গরণীবটাকে মাতৃহীন করতে সাধ ? হাতে পেলে 
শ্যামাসংন্দরী কে জ্যান্ত রাখবে তোমরা 2 মেরে পৃকুরপাড়ে গুজে রাখবে কিনা 
বিশ্বাস কি ?" 

সুবোধ আক্ষেপের গলায় বলে, ইস, তা তো জানি না। ওই মানদা মাসীই 
মাকে বলোছল, “আমি যাচ্ছ, বড় বৌকে সঙ্গে 'নয়ে যাব।” তাই জাঁন। ইস, 
এমন জানলে মামীকে তো মায়ের সঙ্গে নবদ্বগপে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর- 
তাম। তখন, একেবারে ছুটোছুুটি, হুড়োহড়_- 

জগু হেসে ওঠে, হ্যাঁ, যমের বাড়িকে ফাঁক দেবার ত তালে কত লোক কত 
শালার বাড়তেই ঠেলে উঠলো। শালার বাড়ি বোনাইয়ের বাঁড়' মামার বাড়, 
পাঁসর বাঁড়, গুরু-বাড়, বাল যমের বাঁড়টা কোন্‌ বাঁড়টায় নেই বল 'দাক? 
পাঁলয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে যমের হাত এড়াবি? সে ব্যাটা পেয়াদা পাঠালে সমূদ্দুরের 
তলায় গিয়ে লুকোলেই "ক ছাড়ান আছে ? 

“তা হলেও, এটা তোমার ভীচত হয় নি জগুদা! বিপদ মেয়েছেলেকে 
নিয়েই! প্রতাস বলে. 'আমার এক মরেল নবদ্বীপেই যাচ্ছে কাল, মামীকে বরং 
তার সঙ্গে-_ 

ক্ষেপোছস 2" জগ সতেজে বলে, যেখানে মা, সেখানে ছা, আমার হচ্ছে 
এই সাদা বাংলা। দূজনে দু ঠাই হই, আর যম ব্যাটা দূত পাঠাক, তখন ? 
হয় মা বেটি ছেলের হাতের আগুন পাবে না, নয় ছেলে ব্যাটা মরণকালে 
মায়ের পায়ের ধুলো পাবে না। রক্ষে করো। জগ শর্মা ওসব গোলমেলে 
ডর মধ নেই! মা আবার 'মেয়েছেলে” কী রে? জগজ্জননীর অংশ না ? 

“তা বটে!” 

ৰ এ জগ্া'র কথায় চিরকালই সবাই হাসে । এখনও হাসলো । নলল, 
তাবটে! 

জগু এবার এীগয়ে এসেবলে, “পাকশালের ভার, তাহলে এখন তোদের 
ঘাড়ে? দোঁখ তো তিন মন্দয় ক “পণ-ব্যঞ্জন” রেধোছস! 

দুম দৃম্‌ করে রাম্নাঘরে ঢুকে আসে জগ, এদের একাল্ত আনচ্ছা সত্বেও । 
রান্নার পদ যা হচ্ছে কাঁদন, সে তো কহতব্য নয়। যা কছু আন্মজ-তরকার 
সবই তো সেই ভাতসেম্ধর সঙ্গে সেম্ধ। তাতেই তেল, নূন, কাঁচালঙকা মেখে 
যাহয়! 

আজ আবার ভাতের ফেন পড়ে রান্নাঘরের এক কিম্ভূতাকমাকার অবস্থা। 
অন্যাদন তো খানিকটা জল ঢেলে দিয়ে "ঘর ধোওয়া, হয়। আজ যে কা হবে! 

সারা ঘরেও যেন ভাত ছড়াছাঁড়। 

জগু এসেই হৈ-হৈ করে ওঠে, "কী ব্যাপার! এ যে একেবারে অন্নের 

ব্ন্দাবন, শ্রীক্ষেত্রের মেলা! এত ভাত ছড়াছাঁড় কেন? 

এ 

হুশ, তা তো দেখাছ-ই-_, জগ বলে, 'দ্‌শ্য দেখেই মালুম হচ্ছে সব। 
পাস ঠাকরুণাট যে আমার সভ্য করে ছেলে মানুষ করেছেন! আরে বাবা 
অক্নাচদ্তা সর্ব! কখন কোথায় কণ অবস্থায় পড়তে হয়! সঙ্গে স্মীলোক না 
গেলে খেতে পাবি না? 

'পাব না মানে ?' প্রভাস বীরদর্পে বলে, “এই তো আজ সাতাঁদন ওরা কেউ 


১৪৪ সুবর্ণলতা 


নেই, খাচ্ছি না দুবেলা ?” 

'হদু। যা খাচ্ছস তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সর দিকি, আমই আজ তোদের 
ভালমন্দ দুটো রে'ধে খাইয়ে যাই। কাল থেকে দুবেলা ওবাঁড় গগয়ে খাব, 
বঝাঁল? এর আর নড়চড় হয় না যেন। 

এরা অবশ্য দুটো ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই সমস্বরে প্রবল প্রাতবাদ জান্ময়। 
আজ রেধে খাওয়ানো এবং কাল থেকে ওবাঁড় খাওয়া, দুটোর বিরুদ্ধেই ।, 

কিন্তু জগু তো ততক্ষণে উনুনের সামনে গুছিয়ে বসেছে। 

ভাতের মধ্যে থেকে তাঁরতরকারিগুলো ধাছতে বাছতে বলে, “এ ভাত তো 
দেখাছ গরুর মুখে ধরে দিতে হবে। মানুষের ভোগ্য তো হয় নি। আর চারা 
চাল বার কর, চাঁড়য়ে দিই। মাছ-টাছ এনোছস, না ি আনিস নিঃ তালা 
এনোছিস, নাই হল। ভাল। বাঁড় আছে? আমাঁস? শুকনো কুল 2 আছে 
নিশ্চয়। পাস তো আমার অগোছালো নয়! ৰ 

ওরা মুখ-চাওয়াচাও্ডায় করে। 

আছে হয়তো জানসগ্ুলো, কন্তু কোথায় আছে কে জানে? 

জগ; মেয়েলণ ভথ্গণতে বঁটতে আল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে, 'বুঝতে 
পেরোছ, জানিস না। যাক খদুক্রে নেব। মাছ আনাঁব তো আন।, 

'যত সব মেয়েলী! প্রভাস হাত ধুয়ে এদকে সরে এসে বলে, 'বসেছে 
দেখ! যেন একটা 'গিল্নী! মেয়েলী ব্যাটাছেলে আমার দুচক্ষের র বিষ! 

সুবোধ বলে, 'বাজারে মাছ-ই বা কোথা 2 মেছুনী জেলেনীরা আছে ? 
সব ভেগেছে। তোমাদের বাজারে পাচ্ছ নাঁক ?, 

'আমাদের ঃ আমাদের খদুজছে কেঃ মাছ কি আমাদের লাগে 2, 

“সে কী? তুম খাও নাঃ, 

দূর, কবে ও পাট চুকিয়ে দিয়োছ! 

স.বোধ অবাক গলায় বলে, কেন? তোমার তো আর বোল্টম মন্তর নয়, 
শান্ত মন্তর। তবে মাছ খেতে বাধা 2 

বাধা! 

জগ আগ্রহভরে বলে, 'বাধা কিসের? দুই মায়ে-পোয়ে থাক, অত 
ঝামেলায় দরকার 2 মায়ের ঘাড়েই তো দু হে*সেলের ভার পড়বে! 

“তাই বলে তুমি মাছ খাবে না? 

'তুমিটার ওপর জোর দেয় সুবোধ। 

জগু চালের থেকে ধান বাছতে বাছতে বলে, 'তা আম ব্যাটাই বা কি এত 
তালেবর? এত বিধবা হাবাষ্য করছে--" 

'শোন কথা! সাধে আর তোমায় পাগল বাঁল জগুদা! কিসের সণো 
কিসের তুলনা !' 

জগ জুৎ করে হাঁড়টা উনূনে বাঁসয়ে দিয়ে সরে এসে উদাত্ত উত্তর দেয়, 

সঙ্গে িসের মানে? মানুষের সঙ্গে মানৃষের তুলনাই' করাছ। মেয়ে- 
ছেলেরা চিরজন্ম হাবাষ্যর উপর থাকতে পারে, ব্যাটাছেলেরা থাকতে পারে না! 
বলতে চাস ব্যাটাছেলেগুলো মেয়েছেলের অধম! হশ্ব! কোনো বিষয়ে 
হতে রাজ নই, বৃঝাঁল ? নে, সর 'দাঁক, দোখি গপাসির কোথায় ?ক আছে! 
মাছ না আনস বয়ে গেল, দেখাব এমন পোস্তচচ্চাঁড় বানাবো, খেয়ে যে বয়েসে 
আঁছস, সেই বয়েসেই থাকবি। কই, শিলপাটাটা কই 2, 


গুবর্ণলতা | ১৪& 


খুজে-পেতে শিলটা এনে পেতে, তাকের উপরকার শাশি-কৌটো, হাঁড়ি- 
মালসা উউকোতে থাকে জগু। 

পাস ফিরে এসে তো আর এসব নেবে না, আগাগোড়া ধোবে, মাজবে। 

শত নাড়তে বাধা কি? 

চটেরেলা। কাজে বে টেরেনের কো কান পাটা তার 
দেয়। 

এই সাতদিন পরে ওরা আজ রান্নার গন্ধ পায় এবং ঠিকমত শব্দও । রূপও 
দেখা যাচ্ছে, রসাস্বাদটার জন্যে রসনা উৎকাঁণ্ঠত! . 

রে*ধেবেড়ে হাত ধুয়ে কোঁচায় মুছতে মুছতে দঢ় আদেশ দেয় জগ, 
বাস! কাল থেকে খবরদার আর হাঁড়ি নাড়াঁব না! ওখানে চলে যাবি__' 

মনে মনে একটা স্বাস্তর 'নঃ*বাস ফেললেও সুবোধ বলে ওঠে, 'তাই কি 
হয়? চার-চারটে মানুষ মামীর ঘাড়ে চাপা-, 

"বাড়ে চাপা, মানে ? রাঁধেই, দুটো বোঁশ করে রাঁধবে, এই তো! কেন, মা 
কি আমার গতর-কু'ড়ে ; প্যান প্যান করিস নে বাবা! হণা, 
আদর জুটবে এ আশা দেব না. ডাল-চচ্চাড়-ভাত দুটো খাঁ, ব্যস।: 

ডাল-চচ্চাঁড়! 

হায়, ডাল-চচ্চাঁড়স্ভাতই ষে এদের কাছে এখন কী পরম পদার্থ তা জগ 
কি বুঝবে! চচ্চাঁড় নামটা কানে আসা মান্রই তো রোমান এসে গেছে! 

কোন্‌ বস্তুর যে কতটা মূল্য, তা বোধ করি তার অভাঘ না হলে বোঝা 
যায় না। 

এখন যেন মনে হচ্ছে, ভাত সেম্ধ করা বা ডাল-চচ্চাঁড় রাঁধাটা একেবারে 
তুচ্ছ নয়। মনে হচ্ছে মেয়েমান্দুষহীন বাঁড় *মশানতুল্যই বটে। 


আজকের খাওয়াঁটি মন্দ হল্প' না, কাল থেকে বাড়া ভাতের আশ্বাস, মনটা 

ভাল হবার কথা। কিন্তু প্রবোধের মনের মধ্যে পাগলা জগুর কথাগুলো যেন 
| | 

'জগুদা আবার মানুষ 2...জগুদার কথা আবার কথা! এই তো চিরাঁদনের 
মনোভাব, কিন্ত আজ যেন, মনে হচ্ছে লোকটা যা বলে খুব ভুল বলে না। 

“কোন: বাঁড়তে “্যমের বাঁড়" নেই 2...ষমের পেয়াদার হাত এাঁড়য়ে যাবে 
কোথায় মানূষ 2...নয়াতির ওপর কথা নেই'।...রাখে কেম্ট মারে কে?" 

প্রত্যেকটি কথাই হণরের টূকরোর মত দামী! 

যতক্ষণ খুন্তি নেড়েছে ততক্ষণ বকবক করেছে, 'িল্তু কথাগুলো বলেছে 
ম.ল্যবান। 

বলাছল, 'আমার পিসির খুরে গড় কঁর। তোর যাবার কি দরকার ছিল 
শহীন, তোর যাবার ফি দরকার ছিল 2 এখনও মৃত্যুভয় ঃ মরে যাব, ড্যাং 
ড্যাং করে চার ছেলের কাঁধে চড়ে কাশী 'মাত্তরের ঘাটে চলে যাব, চুকে গেল! 
যত দিন না মারস ছেলেদের ভাতজল' কর। তা নয়। 

ঠিক। 

ঠিক বলেছে জগুদা ।" 

মা'র যাওয়া উাঁচত হয় 'ন। 

মা অনায়াসে থাকতে পারতো । 

১০ 


৯৪৬ সুবর্পলত ূ 


আর মা ধাকলে, অনায়াসে একটা বৌকেও রাখা যেত। বলাই যেত, যাদের 
বাপের বাঁড়, মাঁসি-পাসর বাঁড় আছে তারা যাক ; যার সেসব নেই, সে থাকবে। 
উপায় কি? রাখে কেন্ট মারে কে 

হায়, জগুদা যদি তখন একবার বেড়াতে আসতো, মাকে জ্ঞান দিত! 

বিপদের কথা কি বলা যায়! 

এই যে পুকুরের দেশে রেখে এল প্রবোধ ছেলেপুলেকে তাতে বিপদ. হতে 
পারে না? যযৃস্ত ক্রমশই ভারণ হতে থাকে। এবং শেষ পর্যন্ত 1সম্ধান্তে পেশীছয়, 
সামনের রাববারেই গিয়ে নিয়ে আসবে । আর এই তো বেশ দিব্য ঠাণ্ডা। 
“বল হর কদাচিৎ শোনা যাচ্ছে। 

তবেঃ 

তবে কেন প্রাণপাখীকে খাঁচার বাইরে বার করে বেড়াল-কুকুরের মূখে রেখে 
আসা 2 

ভগবান জানেন ইতাবসরেই থাবা বাঁসয়েছে কি না! 

সলিল পি পি পূল কু রী রবুজে 
ঘা এতাদনে দয মামা চলছে 


তা নইলে চিঠি দল না একটা? অথচ নিজমুখে বলোছল, শচঠি দিলে 
রাগটাগ করবে না তো?, 

হণ্যা, প্রবোধের ফেরার সময় সেই কাঠ-কাঠ ভাবটা বদলে 'গিয়ৌছল যেন 
সূবর্ণলতার। অনেক দিন আগের মত নরম আর হাঁস-খুশি দোৌখয়োছল। 
নিচু হয়ে নমস্কার করে পায়ের ধুলো নিয়ে হেসে বলেছিল, 'হঠাৎ যাঁদ মরে- 
টরে যাই, মাপ চেয়ে রেখে 'দিলাম।' 

প্রবোধের কি ইচ্ছে হচ্ছিল সেই বনবাদাড়ের মধ্যে ওই 'স্‌বর্ণলতাকে 
ফেলে রেখে চলে আসে । কিন্তু উপায় কি? 'নানা, 'ফাঁরয়ে নিয়ে চলে যাই' 
বললে পাগল বলবে না লোকে 2 

তা ছাড়া বোন-ভগ্নীপাতির পক্ষে রীতিমত অপমানও সেটা । অতএব প্রাণ 
রেখে দেহটা নিয়ে চলে আসা! 

ইচ্ছে হচ্ছিল একবার সাপটে ধরে আদর করে নেয়। কিন্তু ছেলেগুলো 
আশেপাশে ঘুরছে । তই চোখে দশনতা ফ্যাটয়েই মনোভাব প্রকাশ ।... 

শচঠি দিলে রাগ করবো ? 

'তা কি জান, তোমাদের বাঁড়তে ও রেওয়াজ আছে ক না! বিয়ে হয়ে 
এস্তক তোমাদের গলাতেই তো পড়ে আছ, চিঠি লেখা কাকে বলে জানিই না। 

“এইবার জেনো । 

বলে চলে এস্সোছল প্রবোধ, ফিরে ফিরে তাকাতে তাকাতে। 

ঠক যে আবশ্বাসিনী.হবে সে ভয় অবশ্য নেই। কিন্তু স্বভাবটাই যে 
পুরু্ষ-ঘেষা। যেখানে পরপনরুষঃ সেখানেই চোখ কান খাড়া। আবার বলে 
গিনা, 'কান পেতে শান নতুন কথা ছু বলছে কি না।'...বলে, 'নাঃ, সই 
গঞ্জাজল পাতাবার শখ আমার নেই। কার সঙ্গে পাতাবো 2 কারুর সঙ্গো 
মনই মেলে না। রাতদিন আর ওই মেয়েলী গ্প শুনতে ইচ্ছে করে না।' 

তা হলেই বোঝো! 

মেয়েমানূষ তুম, তোমার মেয়েলী গঞ্পে অরুচিঃ কারো সঙ্জো তোমার 


গবের্ণলতা ১৪৭ 


শন মেলে না! 

খতবে আর কি, একটা ব্যাটাছেলে খুজেই তবে “মনের মানুষ” পাতাও 
বলোছল প্রবোধ কতকটা রাগে, কতকটা বাচ্গে। 

“সই পাতানো'র একটা ঢেউ এসোঁছল তখন। 

'সই গঙ্গাজল' বাদেও নতুন নতুন সব আঙ্গিকে । 

সেজবৌ তার বাপের বাড়ির দিকের কার সঙ্গে 'ল্যাভেন্ডার' পাঁতয়ে এল, 
ছোটবৌ এখানেরই পাশের বাঁড়র বৌয়ের সঙ্গে পাতালো 'গোলাপপাতা'! 

1বরাজ তার জায়ের বোনের সঙ্গে পাতিয়ে নিল 'বেলফুল' এমন 'কি 
মুস্তকেশী পর্যন্ত এই বুড়ো বয়সে মকর সংক্রান্তিতে 'সাগরে' শিয়ে দ-দুটো 
শগল্লীর সঙ্গে 'সাগর' আর 'মকর' পাঁতিয়ে এলেন। 

বিধবার পাতাপাতিতে তো খরচ বোশ নেই। 

মাছ নয়, 'মিন্টি নয়, পান-সুপুরি নয়, শাঁড় নয়, শুধু পাঁচখানা বাতাম্ 
আর কাঁচা সৃপুর হাতে দিয়ে সূর্য সাক্ষণী করে চিরবন্ধনের প্রতিজ্ঞ ! 

সধবাদের খরচ বেশণী। 

তা সধবারা সাধ্যমত করেছে। 

শাঁড় সিপ্দুর, পান মিম্টি! 

কিন্তু স্ববর্ণ কারুর সঙ্চে কিছুই পাতালো না। হেসে বললো. 'বন্ধুদ্ 
যাঁদ হয় কারো সঙ্গে. এমানই হবে। “পূজে। পাঠ” করে না করলে হবে না! 
ওতে আমার রুচি নেই । 

ওরা আড়ালে বলোছল, 'তা নয়, কাউকে তুমি যাঁগ্য মনে কর না, তাই!" 

সুবর্ণর বরও রাগে বাঙ্গে বললো, 'তবে আর কি, মেয়েমানূষে যখন 
রুচি নেই, তখন একটা ব্যাটাছেলে খুজে “মনের মানুষ" পাতাও 2, 

সুবর্ণর চোখে কোতুক 'ঝাঁলক দিয়ে উঠোছল। সুবর্ণ মাথা দুলিয়ে 
প্রবোধের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া একটি ভঙ্গী করে বলোছিল, 'তা বলেছ মন্দ 
নয়! তেমাঁন যাঁদ কাউকে পাই তো “বন্দেমাতরম্‌” পাতাই 1” 

বন্দেমাতরম্‌ ! 

এতাঁদন পরে হঠাৎ সেই কথাটা মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল 
প্রবোধের। 

ঘটে যায় নি তো সেই ঘটনা? 

পাতান্যে হয়ে যায় ন তো? 

কে বলতে পারে মনের মানুষ জুটে বসে আছে কিনা 2 

£, রাবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার হেতু নেই। কাল-পরশুই চলে যাওয়া 
যাক। কাল হবে না, বেস্পাতবার। পরশ পরশুই! 

আর "দ্বধা নয়। 

সুবর্ণর সেই কৌতুকের ভঙ্গীটা মনে পড়ে গেল। 

সে ভগ্গী যেন ভুলেই গেছে সুবর্ণর! 

অথচ কাঁ হাঁসখাঁশই ছিল আগে! সেই ছোটবেলায় ! 

মাঝে মাঝে ক্ষেপতো বটে, কিন্তু স্বভাবটা কৌতুকাপ্রয়ই তো 'ছ্ছিল। এবং 
অত হাসিখুশি অত রঙগরস দেখলে বিরান্তই ধরতো প্রবোধের, মাঝে মাঝে তো 
রাগে মাথার রন্ত আগুন হয়ে উঠত। তার জন্যে শাসনও করেছে কত! 

সেই একবার প্রকাশের ফুলশয্যায় আড়পাতা নিয়ে) শাসনের মান্াটা 


১৪৬ সুবর্ণলং 


বড় বেশিই হয়ে গিয়েছিল সেদিন! তা রাগটা যে প্রবোধের বোশি, সে তে 
প্রবোধ অস্বীকার করে না। মাপও তো চায় তারপর। . 

কিন্তু কার্ষক্ষেত্রে সামলাতে পারে না নিজেকে । বিশেষ করে ওবে 
পুরুষদের কাছার্বাছি দেখলেই । বিরাজের ছোট দ্যাওরটা বুঝি প্রকাশে 
বন্ধু । সেটাও জুটোছল সোহাগের 'মেজবৌদি'র সঙ্গো। 

আর করেও ছিল তেমান কাণ্ড! 

প৯পৃস০০০১এসরিটি নসর নর গার 
ফুলশয্যার ঘরের জানলায়। তার সঙ্গে সেই ছোঁড়া। একট ঠঁলাঠোঁজ হলে: 
স্রেফ নিচের গাঁলতে। 

আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে গেল ঠিক প্রবোধেরই। কোথা থেকে? ন 
পাশের বাঁড়র ছাত থেকে_ যাদের ছাতে হোগলা দিয়ে লোকজন খাওয়ানে 
হয়েছে। অবশেষে প্রবোধ তদারক করাছল বাসনপন্র কিছু "পড়ে আছে কি না 
হঠাং গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। 


ওটা কী ব্যাপার ? 
ওরা কে ওখানে? সুবর্ণ? আর ও ? 
পরবতরঁ ঘটনাটা একটু শোচনীয়ই। 


প্রহারটা বড় বেশী হয়ৈ গিয়োছিল। 

এতাঁদন পরে সেই কথাটা মনে পড়ে মনটা কেমন টনটানয়ে উঠল প্রবোধ. 
চন্দ্র । অতটা না করলেও হত! ছোঁড়াটা তো সেই বোকা হাবা গদাই! গোঁফই 

, পুরুষ নামের অযোগ্য । আর তা নইলে প্রকাশটার বন্ধু হয় ? 

আশ্চর্য, ওই হাবাটাকে মানৃষ' বলে মান্য দিত সুবর্ণ! 

সুবর্ণর মুখের হাঁস তো প্রবোধের চিরকাম্য, কন্তু ঘরের বাইরে কোথাও 
সেই হাঁস দেখলেই যে কেন মাথায় রন্ত চড়ে যায়! 

জায়ে জায়ে কথা কইতেও হয়তো কখনো হেসে উঠল, অমাঁন মনটা বেজার 
হয়ে গেল প্রবোধের। 'আমার এ রোগটা সারাতে হবে” মনে মনে ঠিক করে 
প্রবোধ। সবর্ণর স্বভাবটা হয়তো ওতেই ক্লগশ এত কাঠ হয়ে যাচ্ছে। নইলে 
এমন তো ছিল না! 

চোখের আড়ালে থাকায় সুবর্ণর দোষগুলো নম্প্রভ আর গুণগুলো 
উজ্জল হয়ে ওঠে। মনে পড়ে, স্‌বর্ণর মনে আপন-পর নেই। সুবর্ণ যাঁদ 
সাবান কাচে তো বাঁড়সুদ্ধ সবাইয়ের' বিছানার ওয়াড় খুলে এনে ফর্সা করে। 
সুবর্ণ যাঁদ জুতো সাফ করে তো সকলের জৃতোয় কা লাগাতে বসে।.. 
ছেলেরা একটা জিনিসের বায়না করলে, বাঁড়র সব কটা ছেলেমেয়েকে দিয়ে 
তবে নিজের ছেলেকে দেয়। এসব সদগগণ বক! 

কার্যকালে প্রবোধ আদৌ এগুলোকে সদ্‌গ্‌ণ বলে না, বরং 'বাড়াবাড়ি 
বলেই আভাঁহত করে। কন্তু এখন বোধ কাঁর হঠাৎ নিজের মধ্যেই সদ্গৃণের 
উদয় হওয়ায়, স্ববর্ণর ওই গুণগুলোকে সদৃগৃণ বলে মনে হচ্ছে তার! : 


পিয়ন, এ বাড়তে দৈবাৎ আসে। 
সুরাজ চিঠি দেয় মাঝে মাঝে, এইটাই প্রধান, আর সবই কালে-কাস্মিনের 


ব্যাপার। 
তথাপি পাড়ায় তার আসার একটা "টাইম আছে। 


গুবর্ণলতা ১৪৯ 


সেই টাইমে দাঁড়িয়ে থাকে প্রবোধ রাস্তায়। 

কল্তু কোথায় ? 

সূবর্ণর সেই মান্তোর মত সাজানো অক্ষরে লেখা ঠিকানার চিঠি 
(কাথায় ? 

তার উপর ভয়ানক কম্ট হল, বুকে হাতুড়ীর ঘা পড়ল, প্রকাশের নামে এক 
খামের চিঠি আসা দেখে। আঁকা-বাঁকা অপট; অক্ষর। বাঁড়র মালিকের নামে 
লিখেছে 'ক্যায়ার অব সুবোধচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ! 

তব্দ চিঠি তো! বৌয়ের চিঠি! 

প্রকাশের এ ভাগ্য হল। 

অথচ প্রবোধের হল না। 

যার বৌ রাতদিন খাতায় গান তুলছে, ছেলেদের 'হাতের লেখা' মক্স 
করাচ্ছে। হাতের লেখা দেখলে কে বলবে মেয়েমান্ষের লেখা। 

ছোট ভাই। ভাবতে লঙ্জা। 

তবু বুকের মধ্যে ঈর্ষার জবালা অনুভব করে প্রবোধ। 

প্রকাশের চিঠিটা যে তার হাতেই এসে পড়লো! 

ছোট ভাইকে তো আর হাতে হাতে দেওয়া যায় না, ওর ঘরে রেখে এসে 
ডেকে বলে দিল, "ওরে পেকা, তোর নামে বোধ হয় একটা চিঠি এসেছে।" 

মামীর কাছে খাচ্ছে কাজ থেকে, কাজ নেই কিছ, কাজেই শূন্য প্রাণ আরও 
শনা লাগে। তাসের আভ্ডাও এই হুজুগে ছন্রভগ্গ হয়ে গেছে। জমছে না 
তেমন। 

ঘরে বৌ না থাকলে কোনো কিছুতেই জূত্‌ হয় না। কারুরই না। 

তাকে দেখ বা না দোখ, তবু থাকুক। 

এই হচ্ছে কথা! 

প্রবোধ সংকজ্পে দঢ় হল। 


যাত্রা । 

বান খবরেই যাবে! গিয়ে বলবে, শচিঠিপন্ন নেই, এদকে হঠাঁং একটা” 
“স্বপন দেখে 

এখানে ? 

এখানে বলবার কথাও ঠিক করে ফেলেছে । বলবে, "মামীর ঘাড়ে আর 
তাঁদন খাওয়া যায়? ওদিকে বোনাই-বাঁড়তেই বা কতাঁদন স্বী-পুত্র রাখা 
যায়, 

কিন্তু কী দেখব গিয়ে ? 

আনন্দ আর আতঙ্ক এই দুয়ের তাড়নায় ছটফাঁটয়ে বেড়ায় প্রবোধ। 


৬ 


8১৮৪ 


ঠাকুমার সঞ্চো নবদ্বীপে আসায় উৎসাহের অন্ত ছিজ না চাঁপার। উঃ, ভগবান 
রক্ষে করেছেন যে মা জবরদাঁস্ত করে নি। মা যাঁদ জেদ 
করতো, যেতেই হত মায়ের সঙ্গে । ঠাকুমা যতই রাগণ 
হোক, চাঁপাদের ব্যাপারে যে শেষ পর্য্ত ঠাকুমার কথা 
খাটে না' মা'র কথাই বজায় থাকে, সে জ্ঞান জল্মে গেছে 
চাঁপার! 

অতএব কাঁটা হয়ে ছিল চাঁপা,-ওই বুঝি মা বলে 
বসে, 'না, সবাই আমার সঙ্গে যাবে! 

কিন্তু চাঁপার ঠাকুর ফুল নিলেন। 

ঠাকুমা যখন বললো, চাঁপি মল্লিকা আমার সঙ্গে চলুক, চোখে চোখে 
থাকবে। ক্রমশ তো ডাগর হয়ে উঠছে। তখন সুবর্ণলতা 'না না" করে উঠল 
না। শুধু বললো" এনয়ে গেলে তো আপনারই ঝঞ্চাট। ওরা কখন খাবে, কখন 
শোবে, এই চিন্তা করতে হবে। একা' গেলে যখন যা খুশি করলেন।' 

ঠাকুমাও বোধ করি আশাঁঙ্কিত ছিলেন, তাই এক কথায় ছাড়পন্ন পেয়ে 
হস্টাচত্তে বলেন, 'সে কিছু অস্নাবধে হবে না। শুধু আপনার হাত-পা নিয়ে 
বসে থাকার থেকে বরং কাজ থাকবে একটা । তাঁর্থে তঁর্থে ঘোরা সে এক, এ 
তো একই ঠাঁই চেপে বসে থাকা। তাও 'দিন 'নীর্দন্ট নেই, কবে কলকাতার 
অবস্থা ভাল হবে। চলুক ওরা ।' 

অতএব চলুক। 

'নে থো' করে গুছিয়ে নেওয়া, তবু ওরই মধ্যে মা কাপড, জ্যাকেট, চুলের 
দাঁড়-কাঁটা সব গুছিয়ে দল। দুজনেরই দিল। মাল্পকার মা তো এঁদকে তেমন 
গোছালো নয়। ভাঁডার গোছাতেই পটু। ছেলেমেয়েদের দিকটা তাঁকিয়েও 
দেখে না। আর সে না দেখাটাকেই সে বেশ একটু মহত্ব ভাবে। বড় বড় 
মেয়েগুলোর সাজ-সঙ্জার তাদ্বর চাঁপার মা-ই করে। এতে যে চাঁপার হিংসে 
হয়না তা নয়, কিল্তু সে হিংসে প্রকাশ করা চলে না। মা তাহলে জ্যান্ত 
প্'তবে। 

সে ষাক্‌, মা তো দিল গুছিয়ে দুজনকার। ঠাকুমার পুণ্টলিও গৃছয়ে 
দিল। আহনাদে নাচতে নাচতে বেরোবে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে মল্লিকা বিশবাস- 
ঘাতকতা করে বসলো। জেদ করে, কে'দে-কেটে চলে গেল অর মা'র সঙ্গো। 

বললো, ভাই-বোনদের জন্যে মন-কেমন করছে। 

ভাই-বোনদের জন্য মন-কেমন! 

বিশ্বাস করবে চাঁপা এই কথা ? 

বলে দহ্দণ্ড ওরা চোখছাড়া হলে নিঃ*বাস ফেলে বাঁচা যায়। রাতাঁদন 
উৎখাত করছে, রাতাঁদিন, "্যাঁ-ভ্যাঁ, করছে, খাটতে খাটতে প্রাণ যাচ্ছে ওদেরই 
জন্যে। আবার মন-কেমন। 

চাঁপা তো বরং বলে না, কারণ সাঁত্য বলতে চাঁপার মা মেয়েকে পড়া পড়া' 
করে ব্যস্ত করলেও অন্য কাজে তত খাটায় না। কিন্তু মাল্লকাকে খাটতে হয়, 
আর মল্লিকা বলতেও ছাড়ে না। বড়দের আড়ালে এলেই- কোলের ভাইটা- 





চুবর্থলতা ১৫১ 


বোনটাকে ঠুকে ঠুকে বসায়, আর বলে, 'শত্তুর শত্তুর! একট: যাঁদ শাঁষ্ত 
দয়! মার ষদি এই সাতগণ্ডা ছেলেমেয়ে না হত, একটু হাত-পা ছাড়ে 
বাঁচতাম রে! এই “য-ভ্যাঁ্গুলোর জবালায় জান নিকলে গেল!. জ্ঞান হয়ে 
পর্ষন্তিই কাঁথা পাট করাছ আর ছেলে বইছি!' 

ছোট ভাই-বোনেরা পুতুলের বাঝ্সটায় একটু হাত দিলে কী মারটাই মারে 
তাদের ! 

অধিশ্যি চাঁপাও ও-দোষে দোষী । 

পৃতুলের বাক্স তার প্রাণ। কেউ হাত দিলে বাঘিনীর মত ঝাঁপয়ে না 
গড়ে পারে না। কিন্তু চাঁপা তো ঢং করে বলতে যায় নি, 'ভাই-বোনের জন্যে 
মন-কেমন করছে ! 

মন-কেমন! 'রাতাঁদন যাদের বলছে 'মর মর, এক্ষুণ মর লক্ষনশছাড়ারা ! 
যমের বাড়ি ষা, নিমতলার ঘাটে যা! তোরা মলে আম হরির লুট দিই! 
তাদের জন্যে মন-কেমন! ন্যাকামি! চালাকি! শেষ অবধি ওর মা কিছ লোভ- 
টোভ দোঁখয়ে কি ঘুষঘাষ 'দিয়ে মেয়েকে ফাঁদে ফেলেছে । জানে তো মেয়ে নইলে 
চলবে না! 

বিয়ে হয়ে গেলে করবে রি? 

তখন তো চালাতেই হবে! 
৷ মাঝখান থেকে চাঁপারই ঘোরতর কষ্ট! 

পৃতুলের বাক্সটা এনেছে চাঁপা, |কন্তু খেলার. সাঁশানীই যে 'ভাগল্বা'! 
মাল্পকার এই বি*বাসঘাতকতায় হৃদয় বিদীর্ণ হয়োছল চাঁপার। তবু প্রথম 
দু'চার 'দন ঠাকুমার সঙ্গে মান্দরে মান্দরে ঠাকুর দেখে বোঁড়য়ে, গঙ্গায় নেয়ে 
এবং ঠাকুমার গুরুবাঁড়ির সংসারযান্রার নতুনত্ব দেখে একরকম ভালই কাটাছল, 
ঠাকুমাও "মেয়েটা একা পড়েছে" বলে একট; হ্বদয়বন্তার পাঁরচয় 'দাঁচ্ছলেন কল্তু 
সে অবস্থা আর থাকল ন্ম। 

গুরুর নিজেরই মেয়েজামাই, নাতিনাতনী আর শবশুরবাঁড়র দিকে কে 
সব এসে হাজির হল, কে জানে কী উপলক্ষে! তবে সেই উপলক্ষে চাঁপা মস্ত- 
কেশীর আদর ঘুচলো । 

ঘরের অকুলান হওয়ায় দালানের চৌঁকতে শুতে হল ঠাকুমা-নাতনশকে, 
এবং গুরুমার ব্যাজার ব্যাজার ভাব যেন সর্বদাই স্মরণ কাঁরয়ে দতে লাগল, 
(তোমরা এখন, অবান্তর' । প্রশ্ন করতে লাগল, “আর কতাঁদন' 

অনয কোথাও এ ভাব দেখলে নির্ঘাত মুস্তকেশী পণুটাল-বোঁচকা গাঁটয়ে 
চলে যেতেন। িল্তু জায়গাটা গূরুবাঁড়, দীনহণন হয়ে থাকাই নিয়ম। তাই 
মুন্তকেশী গুরুমার কাজের সাহাধ্য করেন, গঞ্গাজল বয়ে এনে দিয়ে মন রাখতে 
চেষ্টা করেন। 

কিন্তু চাঁপার মন, কে রাখবে 

মুস্তকেশশ ওদিকে যতই আহত হন, ততই এঁদকে ঝাল ঝাড়েন। উঠতে 
বসতে 'আপদ, বালাই, পায়ের বৌঁড়, ঘাড়ের বোঝা” ইত্যাঁদ বিশেষণে ভূষিত 
করতে থাকেন নাতনীকে। নাতনীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাঁট মনঃপৃত না 
ইলে নাতনণকেই টিপে টিপে গঞ্জনা দেন এবং বলতে থাকেন, পনারমাষ্য মুখে 
হেনা! সাহেবের গিল্শ হবেন! কত ভাগ্যে নারায়ণের অল্প-পেসাদ জোটে 
তা জানিস হারামজাদি ? 


১৫২ সবর্ণলতা 


বলা বাহুল্য, গুরুমার কানেই যায় কথাটা। কিন্তু শনারামষে'র কষ্ট 
পূরণ করতে এখন আর দুধটুকু, দইটুকু, আচারটুকু, আমসত্ুটুকু পাতে পড়ে 
না। নারায়ণের বালভোগের জোড়া মণ্ডাঁট তো গুরুর ছোট নাতির একচেটে 
হয়ে গেল। অথচ প্রথম দিকে গুরুদেব পূজো করে উঠে এসেই মেয়ে কই ? 
মেয়ে কই? করে ডেকে ডেকে ওই মণ্ডাটি হাতে 'দতেন চাঁপার। 

কিন্তু তাঁকেও দোষ দেওয়া যায় না। ী 

চাঁপা একটা বুড়ো মেয়ে, ছোট্র কেউ বাড়তে নেই বলেই আদর জ.টাছল 
তার। নাত এল একটা, তিন-চার বছরের ?িশহ. আদরটা স্বভাবতই তার দিকে 
গড়াবে। আর নিজের নাতি এবং যজমানের নাতনীতে আদরের পার্থক্য থাকবে 
না, এ আবার হয় নাক ঃ সংসারত্যাী যোগী গুরু নয়, ঘরসংসারী গৃহ 
গুরু ॥ যজমান-ঘর বিস্তর, তাই অবস্থা ভাল। আর সেই জন্যেই য্ঞমানরা 
নবদ্বীপ এলে ওঠে ও'র কাছে। আদরযত্রও পায়। 

কন্তু সে: তো আর আনার্দন্ট কালের জন্যে নয়, ব্যাজার আসাই 
স্বাভাঁবক। | 

ব্যাজার আসাই স্বাভাবিক, এটা মনে মনে হদয়ঙ্গম করেন মব্তকেশ+, 
তাতেই মেজাজ আরো খাস্পা হয়। এবং সেই মেজাজটা চাঁপার উপরই পড়ে। 

প্রথম প্রথম এখানে ঠাকুমার ভান্তবিগলিত নম্র মুর্ত দেখে অবাক হয়ে 
ছিল চাঁপা কারন ঠারনার ও বাত জাদের বাহে ভাটা কিন্তু ভাগ্যে 
সইল না। এখন ঠাকুমা উঠতে বসতে চাঁপাকে খিচোচ্ছেন। হয়তো 
নরুপায়তার প্রকাশই এই। অধস্তনের উপর বারত্ব ফলানো। 
৬ তাই পুরুষজাতি যখন 'দরবারে না মুখ পায়, তখন ঘরে এসে বো 
ঙায়।। 

চাঁপা এত মনস্তত্ব বোঝে না, চাঁপা ঠাকুমার ভর্তসনায় মর্মাহত হয়। এবং 
তেমন দুঃধময় মুহূর্তে বলেও বসে, 'কেন আনলে আমাকে ? মাল্লর মতন 
মায়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেই হত?' 

তখন আবার আর এক হাত নেন মৃস্তকেশী। 

নিঃসঙ্গ চাঁপা অতএব বড়ই মনঃকম্টে আছে। এখন ওর সর্বদাই মনে 
হয়, মা বকলেও এমন নিষ্ঠুরের মত বকে না। মা ঠাকুমার মতন এমন 
বাতাকাচ্ছিরী করে চুল বেধে দেয় না, মা'র কাছে থাকলে কখন কি পরতে হবে 
ভাবতে হয় না। ভাবতে হয় না জ্যাকেট কাপড় শুকলো কনা, ভিজেগুলো 
সময়ে মেলা হল কনা । 

গুরুমার মেয়ে আবার খুব সরেশ! 

চাঁপা যে িছং কাজ জানে না, সেটা ইতিপূর্বে ধরা পড়ে নি, ধরা পড়লো 
ওই মেয়ের চোখে। দুশদন না যেতেই সে বলে বসলো, 'নাতনী যে তোমার 
কুটো ভেঙে দুটো করতে শেখে নি মূন্তাঁদ! *শবশনরঘরে যেতে "হবে না :' 

বাবার শিষ্য, অতএব দাদ! 

আর বয়েস যাই হোক, তুমি”! 

মৃস্তকেশী নিজের সাফাই গাইতে তাঁর মেজবৌমার গুণকীর্তন করেন, 
এবং ওই বৌটির জন্যেই যে তাঁর নাঁতি-নাতনশকে সনাতন হিন্দুধর্ম তাঁলম 
1দতে পারেন নি, সে কথা ঘোষণা করেন। 

চাঁপার মাতৃভান্তর খ্যাত নেই, নিজেরা যখন জাঠতুতো 'পিসতুতো বোনেরা 


সুবর্ণলতা ১৫৩ 


একন্ন হয়, তখন চাঁপা মা্তানিন্দায় পণ্টমুখ হয়, কিন্তু নিতান্ত পরের সামনে 
এসব কথা ভালো লাগে না তার। তাছাড়া মা'র কাছ থেকে দূরে এসে কেমন 
যেন অসহায়-অসহায় লাগে নিজেকে। 

কেউ কোথাও যেন নেই চাঁপার- এমাঁন মনে হয়। বাঁড়তে তো ঠাকুমাই 
ছিল পৃন্ঞবল, এখানে কেন তেমন মনে হয় না কে জানে! 

মনটা সর্বদাই দুঃখু-দুঃখু লাগে। 

তাছাড়া শুধু কলকাতার জন্যেও যেন মন-কেমন করে। কলকাতার বাঁড়, 
কলকাতার রাস্তা, মামীঠাকুমার বাঁড়, গঙ্গার ঘাট, না মনে করে তাতেই প্রাণ 
'হুহু' করে ওঠে! 

কলকাতায় যে 'কী' আছে তা বলতে পারবে ন্ম চাঁপা, তবু যেন মনে হয় 
কত 'কঈ' আছে! 

আরো কন্ট হয়েছে চাঁপার_ওই নতুন আসা লোকগুলোর মধ্যে একটা যে 
ছেলে এসেছে তার ব্যবহারে । গুরুর *বশুরবাঁড়র কে যেন। শ্রীরামপুর থেকে 
এসেছে। কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে খুব, কিন্তু কলকাতার নিন্দে 
ছাড়া কথা নেই মূখে! 

কতই বা বয়েস? 

চাঁপার থেকে ছোট হবে তো বড় হবে না" কিন্তু কী পাকা পাকা কথা! 
চাঁপা-মল্লিকাকে সবাই “পাকা' মেয়ে বলে, আর এই ছেলেটা কী? 

মূখে মুখে আবার ছড়া বলে! 

আর চেনা নেই জানা নেই, তুই"! 

খোঁচা খোঁচা চুল, মোটা মোটা পা, বেটে বেটে গড়ন_ দেখলে গা জঙলে 
যায়! আর সেইটা বুঝতে পারে বলেই উৎখাত করে চাঁপাকে, 'তোমাদের 
কলকাতায় আছে কিঃ কিচ্ছু না। খাপ কায়দা আর কল! কল আর কেতা, 
এই দুই নিয়ে কলকেতা! কেতা মানে জা;*শ : কেতা মানে কায়দা । কলকেন্তাই 
বাবুদের আছে শুধু কায়দা ! 

চাঁপাও অবশ্য নীরব থাকে না, রেগে উঠে বলে, 'থাকবেই তো কায়দা । যত 
সায়েবদের আঁপিস কলকাতায় না? লাটসায়েবের বাড়ি কলকাতায় না? 

ণহ-হি করে হাসে ঘণ্টু। 

বলে, তবে তো সবাই লাট, কি বাঁলস 2 তোর বাবা লাট, তোর কাকা 
লাট।” 

চাঁপা ক্রুদ্ধ গলায় বলে, 'এই* তুই আমার বাবা তুলে কথা বলাঁছস 2 বলে 
দেব ৮ 

ঘণ্টু কিন্তু রাগের ধার 'দিয়ে যায় না; বলে, 'দেং না বলে! আমি বলবো, 
বাবার নাম করলেই বুঝ বাবা তোলা হয়» তাহলে তো ওকে ওর বাবার নাম 

করাও চলবে না।, 

মুখরা চাঁপা নিষ্প্রত হয়ে যায়। 

এবং বোকার মতই রাগে, তা কলকেতাকেই বা নিন্দে করবি কেন!' 

'করবো! 'নন্দের ষুগ্য তাই নিন্দে করবো! 

শনন্দের যুগ 2 

শনশ্‌- চয়। 

“তা হলে তোদের শ্রীরামপুরও খুব 'বাচ্ছরী! যত ইচ্ছে নিন্দে করবো! 


১৫৪৪ 


সুবর্ণলতা 
ঘন্ট্‌ চোখ পিটাপিটিয়ে হাসে। বলে, 'কর। দো ক নন্দেযর কথা বার 
করতে পারিস! 
চাঁপা অবশ্য পারে না। 
কারণ শ্রীরামপুর নামটা শুনেছে সে এই ঘণ্টুদের দৌলতেই। কোথায় 
সেই পরমধাম, কা তার গ্‌ণাগুপ কিছুই জানে না। তাই বিপন্ন হয় চাঁপা! 
ঘণ্ট পাঁরতুষ্ট মুখে বলে, 'পারল না তো? পারা্ব কোথা থেকে ? দোষ 
থারলে তোঃ কলকেতাঃ হিহিহি! 
কলকেন্তাই বাবু 
এক ছটাকে কাবু! 
কোঁচার ঝূল লম্বমান, 
উদর ফাঁকা মুখে পান।” 
আশ্চর্ধ, ওইটুকু ছেলে, মুখস্থও করেছে এত! 
নিত ওদের বাঁড়টা ঘোরতর কলকাতা-বিদ্বেষী, রাতাঁদন এরই চাষ 
চলে। চাঁপার এত হাতিয়ার নেই, ওর সম্বল শুধু রাগ। সেই সম্বলেই লড়তে- 
আসে সে' “আর তোদের শ্রীরামপুরে বাঁক কেউ পান খায় ল্মা?। 
"খাবে নাকেন? ভরা পেটে খায়।' 
কলকাতার লোক ভাত খায় না? 
ঘণ্টু গম্ভীরভাবে বলে, 'সে গরধব-দখীীরা খায়। বাবুরা খায় শুধু চপ 
কাটলেট আর মদ !' 
মদ 
চাঁপার চোখ গোল হয়ে যায়। 
চাঁপার মুখ লাল হয়ে ওঠে, “মদ খায় ! /-৯প-০১ 
'তোরা ঃ হি হি হি, তোরা কি বাবৃট তোরা তো মেয়েমান্ষ। 
বাবুদের কথা । শুনাব আরো ১ “চড়েন বাবু জৃঁড় গাঁড়, ৯ 
শড়র বাঁড়!” শৃ্ড়র বাঁড় মানে জানিস ৯ 
জানবে না কেন, কাঁ না জানে চাঁপা? রাতদন তো শুনছে এসব। 
নিজেরাই ঝগড়ার সময় বলে 'শৃ্শড়র সাক্ষী মাতাল'! কিন্তু সাঁত্য মানে ভেবে 
বলে নাকি অথচ এই পাজী ঘণ্টুটা! 
'কক্ষনো তুই কলকাতার 'নন্দে করাধ না বলাছি, চাঁপা অগ্রিমূর্তি হয় 
ঘণ্ট্‌ 'নার্বকার। 
ঘণ্টু নিভয়ি। 
ঘণ্টুর এই মেয়েটাকে ্যাপানোই আপাতত শোৌঁখন খেলা। আর 
খেলাটাকে সে নির্দোষই ভাবে। তাই ঘণ্ট্‌ হঠাৎ তারস্বরে বলে ওঠে, 'আচ্ছা 
করবো না নন্দ, রানা কমাতে 
চাঁপা ক্ষোভে দুঃখে উঠে যায়। 
ঘণ্টু মহোৎসাহে চেণ্চায়, 'কলকেতার বিবিদের ছড়াটা শুনে গেলি না? 
চাঁপা গিয়ে কে'দে পড়ে, ঠাকুমা, ওই ঘণ্ট:টা যা ইচ্ছে বলছে! বলছে 
কলকাতা ছাই-বাচ্ছার! থাকবো না আর আমি! 
চি. ১০ পন সপ, ও ক্ষ্যাপাচ্ছে 
বলেই তুই ক্ষেপাব ? বাড়িতে তো খুব দদে, এখানে একেবারে কচি খুকি 
হয়ে গোল ষে! 


গুবর্ণলতা ৬৫৫ 


গৃরুকন্যা বলে ওঠেন, 'যা বলেছ মুস্তাদ” নতনীর তো তোমার বিয়ের 
বয়েস বয়ে যায়, কী নাকা বাবা! ঘণ্টু কি একটা মানুষ, তাই ওর কথায় 
ক্ষেপছে!' 

মুন্তকেশশ আড়ালে 'গিয়ে চাপা গলায় বলেন, 'নেকি, তুমি রাতাঁদন ওই 
দস্য ছোঁড়ার সঙ্গে মেশই বা কেন? ওসব হচ্ছে পাজীর পা-ঝাড়া! খবরদার, 
ঘপ্টুর সঙ্গে মিশবি না। 

চাঁপা কেদে ফেলে। 

কলকাতার দূ'দে চাঁপার সব মর্যাদা ঘোচে। বলে, 'আমি ক মিশতে 
যাই; ওই তো আসে সেধে সেধে! 

তা হোক। তুই আমার কাছে কাছে থাকাঁব।' 

'তোমার কাছে? তুমি যেন বন্ড থাকো? রাতাঁদন তো রাস্তায় । তার 
থেকে চলে যাই চল ।' 

চলে যাই বললেই তো হয় নাঃ তোর বাপ-জ্যাঠা হুকুম দেবে. তবে 
তো? 

চাঁপা অতএব এদের ছাতে উঠে কাঁদতে বসে। 

কলকাতার 'নিন্দেয় তার এমন জবালাই বা করে কেন? কলকাতার কথ্য 
মনে পড়লেই বা প্রাণের মধ্যে এমন হহহহ' করে ওঠে কেন? 

ছাতে নির্জনে বোঁশক্ষণ বসা যায় না, বেলা পড়ে গেলেই গা ছমছম করে, 
আর দুপুরবেলা বুক টিপাঁতপ করে। 

তবু আসে একবার একবার। 

আলসের ধারেই একটা নারকেল গাছ, তার পাতাগুলো ঝিরঝির করে” 
সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চাঁপার মনটা হারিয়ে যায়।... 

মে বাঁড়র দেওয়াল চারখানা চাঁপার মা'র কাছে জেলখানার দেওয়ালের মত 
লাগে, সে বাঁড়র ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায় চাঁপার মন।...আর সকাল থেকে রাত 
অবাধ যেখানে যা কিছ হয় সব মনে পড়ে যায়। বাবা জ্যাঠা কাকারা কে কি 
করেন, কখন খাওয়া হয়, কখন শোওয়া হয়। তাছাড়া সক্কালবেলায় মাথায় বড় 
একটা হাঁড় নিয়ে যে লোকটা গাঁলর মধ্যে এসে হে+কে যায়_-মাঁড়র চাকৃতি, 
চি'ড়ের চাকাঁত, ছোলার চা--কাতি' সে লোকটার গলার আওয়াজ যেন এখান 
থেকেই কানে এসে বাজে ।...কানে বাজে 'চাই কুলপাী'...মা-লাই কুলপাী!' কানে 
বাক্তে চুড়িউালর "চুড়ি চাই চ্যাঁড়'! 'আতা চাই আতা" “টে্পারি, টোপাকুল, 
মাবকুলে কুল? 

চলছেই তো সারাদন। 

এখানেও শব্দের অবাধ নেই। সে কেবল ঘস্টা-কাঁসরের শব্দ। 
_ ঠাকুর জাগছেন, ঠাকুর খাচ্ছেন, ঠাকুর ঘুমোচ্ছেন, ঠাকুর সাজছেন, সব 
কাঁসর পিটিয়ে পিটিয়ে জানানো! বাবাঃ! এই ঠাকরের দেশে আর থাকতে 
সাধ নেই।...ঢের ভালো ওই বহুবিধ শব্দতরঙ্গে তরংগাঁয়ত কলকাতা !... 
এখানে একটা গাঁড়র শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না-আশ্চাঁষ্য!... 

এখানে পয়সা হাতে দিয়েই কী বলবেন ঠাকুমা 2 

পেন্নাম কর! পয়সাটা ওই থালায় ছুড়ে দে! 

দূর! 

অথচ ওখানে একটা পয়সা পেলে কত কণ করা যায়! ডবল পয়সা পেলে 


৯৫৬ সুবর্ণজলতা 


তো কথাই নেই। ডিসির জিলা 
মাঁড়র চাকাঁত কিনে ফেলা যায়। 

মা মোটেই পয়সা হাতে দিতে চায় না। আঁচলে পয়সার পশুটাল নিয়ে 
বেড়ায়, তবু একটা পয়সা চাইলে দেবে ন্ম। চাইলেই বলবে, 'কণ চাই শ্বান ৯ 
কি কিনতে হবে? 

কি কিনতে হবে তা 'কি ঠিক থাকে ; পয়সাটাই আসল। ওটা পেলেই 
কত কাই কেনা চলে। কিন্তু তাহবে না। বলতে হবে। অগত্যাই যা হোক 
একটা কিছ বলে ফেলতে হয়। পেয়ারা কি আতা, ক 
[তিলকুট ! 

ব্যস, গুঁঘ্টর যে যেখানে আছে; মা সবাইয়ের জন্যে কনতে বসবেন। এতে 
ণক রোজ রোজ আবদার করা যায় 2 চাঁপার বাবার যে বেশী পয়সা, তার জন্মে 
আলাদা কোন সুখ নেই চাঁপার! অথচ বাবাদের ওই হেমা মাসী? তাঁদের 
বাঁড়তে নাক তাঁর বড় ছেলের ছেলেমেয়েরা মুঁড় খায়, আর ছোট ছেলের 
ছেলেমেয়েরা পরোটা খায়! 

কেন? 

ওই পয়সা কম বোশ বলেই। 

নার সামনে বল দৌখ ওসব ক: খুন করবে! 

চুঁড়িউীঁল এলে সবাই চড় পরবে, মা দাম দেবে। কিল্ত্র চাঁপা একটু 
বোঁশ পরতে যাক 'দাক: নয়তো রেশমী চুঁড়' প্রতে যাক? হবে না! 
পরলে সবাই পরবে ।..তা এখন তো চাঁড় পরাও ঘুচেছে। চাঁড় নাক 
1বালাত! কে জানে বাবা! 

তা বাবা দেয় পয়সা । লুকিয়ে দিয়ে বলে, "খবরদার, তোদের মাকে দেখাস 

কন্তু লুকিয়ে কিনে লাকিয়ে খাওয়া কী কম গেরো? 

তবু আঁচলে দু-একটা পয়সা থাকলেই মনটা কী ভরাট থাকে! আর 
রাষ্তা দিয়ে যখন এওলা'রা হে*কে যায়, কী আহাদ হয়!...মার হাঁকছেই তো 
চীব্বশ ঘণ্টা!...সেই কলকাতাকে কনা বলে খারাপ ? 

সন্ধ্যে হয়ে আসাঁছল। 

নারকেলপাতায় ঝিরাঝারানটা যেন জমাট জমাট দেখাচ্ছে। 'নিচে নামবার 
জন্যে উঠে পড়ে চাঁপা.. ০ 
জঃালনেওয়ালারা মই ঘাড়ে করে বোরয়ে পড়ে 

চাঁপাদের গাঁলর বাঁকে একটা "গ্যাস আছে; সা চাঁপাদের মুখস্থ হয়ে 
গেছে। বাতিওলা চলে যেতে না “যেতেই ফলওলার আওয়াজ পাওয়া যায়। 
গলিতে ঢোকে না, বড় রাস্তা থেকেই আওয়াজ আসে, "চাই বেলফুল।...চাই 
কে-য়া ফুল! 

ছোট খড় কেয়াফূলের ধূলোগুলো 'দিয়ে কেয়া খয়ের বানায়। বাবাদের 
তাসের আন্ডার লোকেরা বলে, 'আপনাদের বাঁড়র পানট ভালো! 

যে কথাটাই মনে পড়ে যায়, প্রাণটা 'হু-হ করে ওঠে। 

কলকাতা আর কলকাতার ওই' বাড়িটা যেন চাঁপাকে লক্ষ বাহ দিয়ে টানতে 
থাকে। 

আর এই কম্টকর মৃহূর্তে আরো ভয়ানক কষ্টকর একটা আশঙকা 


সুবর্ণলতা ১৫৭ 


চঁপাকে যেন পেপটয়ে ধরে ।...অথচ এ আশঙ্কাটা এষাবং যেন চোখের সামনে 
একাঁট রাঁঙন ফূলের মত দুলাঁছল। 

ইদানশং ঠাকুমাকে প্রায়ই লোকে বলতে শুরু করেছে, 'আর কি চাঁপা- 
মল্লিকা তো "দাবা বিয়ের যু হল, এবার নাতজামাই খোঁজো ১" 

ঠাকুমাও অনুকূল একটা জবাব "দিচ্ছেন কাজেই অদরে ভাঁবষাতেই যে 
'সেই' দিনটি আসছে তা বুঝতে পারছে চাঁপা । আর ₹সই বুঝতে পারার 
আশেপাশে ঝলসে উঠছে নতুন গহনা. জারর শাঁড়. মালাচন্দন, লোকজন, ডাক- 
হাঁক, ঘটাপটা । 

টোপর পরা একটা ছেলেও আছে বোক এই সমারোহের কোনো একখানে। 
...কাজেই সবটা 'মাঁলয়ে. ওই একটি রঙিন ফলই। 

কিন্তু আজ. ঠিক এই মৃহর্তে ফুল উধাও হল। একটা বুনো জন্তু থেন 
হাঁ করে এল। 

বিয়ে হওয়া মানেই তো ওই বাঁড় থেকে চলে যাওয়া । হয়তো বা কলকাতা 
থেকেও 2 কত মেয়েরই তো বিয়ে দেখছে চাঁপা, কই, কলকাতায় কোথা 2 অত- 
এব চাঁপর ধরে নিতে হবে কলকাতা থেকে বিতাড়ন! 

হঠাৎ যেন ডুকরে কান্না পায় ঢাঁপার। 

যেন এখনই কলকাতা থেকে নির্বাসন ঘটে গেছে তার। 

তা যাওয়াই। 

আর বড় জোর ছ মাস এক বছর। 

তার বয়সী কত মেয়েরই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। 

হায় হায়, কেনই বা বিয়েটাকে ভাল মনে হত তার! 

আচ্ছা, যাঁদই বা কলকাতাতেই বিয়ে হর তার ছোট পিসির মত, "কিন্তু 
পড়তে তো হবে একাঁট দজ্জাল শাশুড়ীর হাতে তার ঠাকুমার মত। *.ঁসর 
শাশুড়ী কেমন চাঁপা জানে না, মা খাঁড়র শাশুড়ীকেই দেখে আসছে জশীবন- 
ভোর। কাজেই "শাশুড়ী" শব্দটার সঙ্গে সত্গেই মুক্তকেশীর মুখটাই ভেসে 
ওঠে। বলা বাহুল্য. তাতে বুকে খুব একটা বল আসে না। 

সন্ধ্যার ছায়া মনে নিয়ে নিচে নেমে আসতে আসতে আরো একটা কথা 
মনটাকে তোলপাড় করে তোলে চাঁপার। 

চাঁপার মা'র নাকি ন বছরে বিয়ে হয়ে গিয়োৌছল। তার ঘ্লানে চাঁপার বয়েস 
থেকে দু বছর আগে । আর মা বেচারীকে এসে পড়তে হয়োছিল ঠাকুমার মত 
শাশু্ড়গর হাতে! 

উঃ কী কষ্ট! কীকন্ট! 

জীবনে এই প্রথম বোধ কাঁর মাকে বেচারী ভাবল চাঁপা । 

' তারপর আরো আতঙ্ক গ্রাস করতে বসলো চাঁপাকে। শুনেছে মা'র ঠাকুমা 
নাক মা'র মাকে লুকিয়ে, আর মাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে ফেলোছলেন! 

সেই. রাগে মা'র মা. [যান নাকি চাঁপাদের 'দাঁদমা, সংসার ত্যাগ করে কাশী 
চলে গেছেন। জীবনে আর মা তার মাকে দেখতে পেল না। 

চাঁপার ঠাকুমাও যাঁদ হঠাৎ এইখানে কারুদের বাড়িতে বিয়ে দিয়ে ফেলে 
তার! 

ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে চাঁপার। বলা যায় না, বিশবাস নেই! মা'র 
ঠাকুমা তো চাঁপার ঠাকুমার 'সইমা'! একই রকম বাঁদ্ধ হতে পারে। 


১৫৮ সাবর্ণলতা 

হে ঠাকুর, তা হলে কি হবে ? 

লোকে চাঁপার 'দাদমার গল্প শুনে বলে, “বাবা, এত রাগ? বলে, 
অনাছিন্টি।' বলে, 'মাথার দোষ ছল বোধ হয়। 

কিন্তু চাঁপার তা মনে হয় না। 

চাঁপার ঠাকুমা যাঁদ অমন কাণ্ড করে বসে, চাঁপার মাও নির্ঘাত চাঁপার 
দাঁদমা সত্যবতী দেবীর মতনই করে বসবে। 

করবেই! সন্দেহ নাঁস্ত! 

অথচ চাঁপার মা সুবর্ণলতা পাগল-টাগল কিছুই নয়। তা পাগল না হোক, 
চাঁপা কিন্তু কিছুতেই তার মা'র মতন হবে না। বাপ, রাতাঁদন যেন মারমুখী! 
তার থেকে সেজ খু খাঁড়, ছোট খাঁড়, জোঠ, পাস সবাই ভাল। 

দাঁদমা ওইভাবে মাকে বাঘের মুখে ফেলে দিয়ে চলে যাওয়াতেই বোধ হয় 
মা'র মেজাজ অমন খাপ্পা। সাঁত্য মা হয়ে তুমি দেখলে না একবার! কা 
নষ্ঠুর! চাঁপার মাও ঠিক তাই হবে। তাছাড়া আর কি হবে :.. হে ভগবান, 
ঠাকুমা যেন চাঁপার বিয়ে দিয়ে না বসে! 

আগে আগে, যখন চাঁপা ছোট ছিল? মাঝে মাঝে মাকে বলতে শুনেছে, 
“সেই ন বছর বয়সে এদের সংসারে এসে পড়োছ, মা বস্তু কী তা ভুলোছ ! 

এখন আর বলে না। 

সুবর্ণলতার যে কখনো কেউ ছল, তা আর বোঝা যায় না। 

ঠাকুমা যাঁদ লাঁকয়ে লুকিয়ে চাঁপার বিরে দিয়ে ফেলেন? তখনও তাহলে 
বোঝা যাবে না, স্‌বর্ণলতার একটা চাঁপা নামের মেয়ে 'ছল। 

আর বাঁধ মানে না। 

উথলে উথলে কান্না আসে। 

৫০১-নক টিপ্উপল 

কিন্তু খেলতেও তো সেই পুতুল-বৌয়ের *বশুরবাঁড়র জৰালা আর খাটুনি। 
তাছাড়া আর কী ভাবেই বা খেলা যায়? কিন্তু এখন যেন সব কিছুর মধোই 
চাঁপা নিজের ছায়া দেখছে। 

পৃতুলও আকর্ষণ হারালো ! 

কাছে ডূকরে গিয়ে পড়লো, ঠাকুমা, আমরা আর এখানে থাকব 

না, বাঁড় চল। 


ূ 


॥১৯॥ 


অন্য ভুবন! 

স্ববর্ণলতার কাছে এ এক আশ্চর্য নতুন ভুবন! অন্। ভূবন! এ ভুবনে শুধ্। 
আকাশেই উদার উন্মত্ত আলো নেই, মানুষগুলোর মধ্যেও 
রয়েছে সেই আলো, উদার+ উল্মুক্ত* উজ্জ্বল! 

পাড়ার লোকের কথা জানে না স:বর্ণলতা, জানে না 
সেখানে আলো না অন্ধকার, সে. শুধু এই সংসারটাকেই 
জানছে। দেখছে আর জানছে। 

ভেবে অবাক হয় সুবর্ণ, সুবালাকে বরাবর সবাই 
'গরীব' বলে এসেছে। এই সোঁদনও ভাসুর গিয়ে 
বললেন, "গরীবের সংসার বটে, তবে অমূলাটা পাঁরশ্রমী 
আচ্ছে তো? খেটেপিটে সংসার করে। গোয়ালে গরু, পুকুরে মাছ, বাগানে 


ফল-তরকারী, গায়ে-গতরে খেটে সব বজায় রেখেছে । তাতেই চলে যায় এক- 
রকম করে। 


চলে যায় একরকম করে! 

গরীব! 

কিন্তু সুবালা যাঁদ গরীব, তো এশ্বযবিতী কে? হোক আড়ম্বরহখন 
টানাটানির সংসার, তবু এই সংসারখানর সম্সজ্ঞী তো ওই সুবালা। এ সংসার 
পারচাঁলত হচ্ছে সুবালার ইচ্ছানুসারে, সুবালার নির্দেশে । শাশুড়ী নালিপ্তি 


কিন্তু নির্মায়িক নয়। যথাসাধ্য খাটেন তিনি, কিন্তু সে খাটীনর বোঁশির ভাগ 
ছেলে-বৌ নাঁতি-নাতনীদের যত্র পাঁরচর্যা বাবদ। 





সবালা যাঁদ বলে, "খাক্‌ গে বাবা ঠাণ্ডা দুধ--, ফুলেশ্বরী .স্ত হয়ে 
বলেন, "ওমা কেন? জবালানর ঘরে অত নারকেলপাতা, আম একটা কৃড়ী 


বসে রয়োছ, ঠান্ডা খাবে কেন? ঠান্ডা খেলে শ্লেত্মা বাম্ধ হয় বৌমা 

সুবালা 'দাব্য উত্তর দেয়, 'শ্লেম্মা বাঁম্ধ হয় না হাতশ বাদ্ধ হয়! ও কেবল 
আপনার নাতি-নাতনীদের সোহাগ করা ।” 

ফুলেশ্বরী রেগে উঠে যাচ্ছেতাই করেন না. হেসে উঠে বলেন, 'তো তাই! 
তোমার নাতি-পুতিকেও তম করবে সোহাগ! 

'আমার বয়ে গেছে-_” 

ঢু ₹&, দেখবো! 

সৃবালা স্বচ্ছন্দ গলায় বলে, 'দেখবেন তো সেই স্বর্গে বসে! কী দেখলেন 
তা নিয়ে কে তর্ক করতে যাবে? 

রাগারাগি নয়, কড়া কথা নয়, সহজ হাস্য-পারহাস। আশ্চর্য! স্ুবালার 
কী সাহস! স্বর্ণলতা তো দুঃসাহসের জন্য বিখ্যাত, কিন্তু এ সাহসের সঙ্গে 


তুলনা হয়? সুবর্ণলতার সাহস হচ্ছে--তিস্ততার শেষ সীমানচয় পেশীছে তীন্র- 
তায় ফেটে পড়া। 


আর সুবালার 2 
সুবালার সাহস আদরিণীর সাহস, বিজয়িনীর সাহস, প্রশ্রয়ের সাহস। 
স্ববালার শাশুড়ী সুবালার কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছেন, কারণ 


১ সুবর্ণলতা 


সুবর্ণ? দেবররা শ্রাতৃজায়াদের ব্যাখ্যানা করবে, এটাই তো ম্যন্তকেশীর বাঁড়র 
নশীত। তারা ব্যঙ্গ করবে, হ্‌ল ফোটাবে, নিন্দে করবে, এই তো নিয়ম। কে 
জানে এ নরম শয মজকেশা াঁডর, না আরো অনেক অনেক বাড়ির 

৯০০৭ 

সপ সি 

তাই না অন্য ভুবন! ' 

এই অন্য ভুবনে অন্বিকা তার বৌঁদ্র কথায় বলে ওঠে, 'নাও কোথায় 
তোমার পাল্তো-টান্তো আছে বার করো দেখ, পেটকে শান্ত কাঁর। খান্ডবদাহন 
হচ্ছে সেখানে) 

বসে পড়ে নিজেই পড় পেতে। 

সুবালা পরম যত ভাত বেড়ে দিয়ে বলে, 'ভারী তো 'ছিরির রান্না, ভাতটা 
গরম থাকতে খেলে তব-”' 

অথচ এ ছাড়া আর কিছ: ব্যবস্থা হয়ও না। 

ঝি-চাকরের তো পাট নেই, সুবালাকেই বাসন মাজতে হয়, রালাঘর 
নিকোতে হয়, এতক্ষণ অবাঁধ আলাদা গরম ভাতের তাঁদ্বর নিয়ে থাকলে সময়ে 
কুলোয় না। 

আঁ*্বকা বলে, শছারির মানে 2...আঙ্ছা মেজবোৌদি, আপনার ফি আপনার 
ননদের রান্না বাচ্ছির লাগে? 

স্বর্ণর হঠাৎ খুব ভালো কোনো কথা যোগায় না, তাই তাড়াতাঁড় বলে 
ওঠে, 'কী যে বলেন! আমার তো অমৃত মনে হয়।, 

হু, দেখুন! আমিও তো তাই বাল, অমৃততুল্য। আহা, যখন জেলের 
লপাঁসি খেয়ে দিন কাটবে, তখন আপনার ননাঁদনীর হাতের এই মৌরলা মাছের 
বালের স্মাতিতে মনটা কেদে কেদে উঠবে ।' 

'থামো তো! সবালা বকে ওঠে, “সব সময় জেল জেল করো না।' 

'আহা. সইয়ে রাখাছ। নচেৎ আচমকা ঘায়ে মূছ্বী-টূহ্বা যাবেন। 

সূবালা বোঝে সব, তবু বলে' বাল তুমি কি চোর-ডাকাত, না খুনে গুণ্ডা 
যে জেলে যাবে 2 

“তার থেকে কিছ কমও নয়!" 

রানির 

বরং বৌশ। মাতৃভূমিকে “মা” বলা তো গৃন্ডাঁমর আঁধক? 

সুবালা বলে. 'এই হজ শুরূ। মেজবৌ, তুই শোন বসে বসে। তোর মনের 
মতন প্রসঙ্গ । আম বরং ততক্ষণ ওই রাবণের গুষ্টির জলপাঁনগুলো গোছাই। 

স্বর্ণ আহত গলায় বলে, 'ওাঁক মেজ ঠাকরাঁঝ, নিজের 'ছেলেদের ওই সব 
বলতে আছে £ 

সবালা হেসে হেসে বলে, “সাত্য কথা বলতে দোষ 2 রাবণের গাণ্চ 
ছাড়া আর কিঃ ভগবান এক মনে দিয়েছে, আঁম একমনে নিয়োছ, গোনা" 
গুণাতি কর নি। জ্ঞানচক্ষু উল্মীলন হতে দেখি আধ কুঁড়র কাছাকাছি ! 

উঠে চলে যায়। 

সাত্যই কাজের তার অবাঁধ নেই। 

তাছাড়া স্বর্ণ বসে থাকে বলে স্বাস্ত থাকে একট;। বেটাছেলে একা বদে 
খাচ্ছে এটা তো আর হতে পারে না। 


সুবর্ণলতা ১৬৩ 


সৃবালা চলে যায়, আঁম্বকা স্বর্ণর দিকে তাঁকয়ে বলে, “এই একটি 
্হলা, একেবারে নিভে'জাল ! 

সুবর্ণ বলে, 'আপনার মত মানুষের ধারে কাছে থাকতে থাকতে আপাঁনই 
বিশদ্ধ হয়ে যায় মানূষ।+ 

হ্যাঁ, প্রবোধের সন্দেহকে অমূলক করে এইভাবেই একটা অপর পুরুষে 
বিমোহত হচ্ছে সুবর্ণ । 

রোদে পোড়া রুক্ষ কালো শখর্ণ একটা ছেলে, তব্‌ তাকে দেখলে সবর্ণর 
মনটা আহন্লাদে ভরে ওঠে। তাকে অনেক উপ্ট-স্তরের মানৃষ মনে হয়। মনে হয় 
কী সদ্দর! 

প্রশস্তি গাইতে ইচ্ছে করে তার। 

আম্বকা বলে, 'সেরেছে! পুলিসে ধরে নিয়ে যাবে আপনাকে ।' 

একাঁদন হঠাৎ বলে বসলো, “আচ্ছা, শুনোছি তো আপনার ন বছর বয়সে 
বিয়ে হয়েছিল; আর-মনে করবেন না কিছু দাদার *্বশরবাঁড়াটিই যখন 
আপনার *বশুরবাঁড়, তখন সেখানেই স্থিত, তবে এত সুন্দর করে কথা বলতে 
শিখলেন কেমন করে বলুন তো? 

স্বর্ণ বমূঢরভাবে বলে, “সুন্দর করে ?' 

হাঁ, তাই তো দেখি। যা কিছুই বলেন, বেশ বিদৃষী-বিদুষী লাগে)? 

নে ওঃ “লাগে”। যেমন পেতলকেও অনেক সময় 
সোনা-সোনা জাগে ।” 

আম্বকা বলে, 'আপনার মত পেতল যাঁদ আমাদের এই সোনার বাংলার ঘরে 
ঘরে থাকতো, দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, বুঝলেন উদ্ধার হয়ে যেত! 

দেশ উদ্ধার! 

ব্যস, এই খাতে এসে পড়ে আবেগের বন্যা। 

সূবর্ণর চোখে এসে যায় জল, মুখে ফুটে ওঠে দীপ্তি। 

সংবর্ণ খুঁটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করতে বসে স্বদেশশ ছেলেদের কথা। কণ 
তাদের কার্যকলাপ, কী তাদের পদ্ধাত, কণ বা. তাদের সাফল্য ! 

আঁম্বকা হাসে। 

গলা নাময়ে বলে, “এই মেজবৌঁদ, 'টিকাঁটকি পুলিসের মত অত জেরা 
করবেন না, সব কথার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। দেওয়ালেরও কান আছে । 

সুবর্ণ লজ্জিত হয়। 

বলে, 'বন্ভ ইচ্ছে করে সব জানি। 

'তার মানে আপাঁন অনুভব করেন 'জানসটা।' আম্বকা বলে, 'ববকতে 
পারেন পরাধীনতার "লান কি! সেটাই আশ্চর্য করে আমাকে ।' 

সুবর্ণ উদ্দীপ্ত হয়, বলে? “আশ্চর্যের ক আছে? পরাধীনতার ষল্মণা 
উজ রা বুঝবো না তো আর কে বুঝবে 2 আমরা যে চাকরেরও 

রানী। 

'রাণপ হতে হবে। আঁম্বকা জোর দিয়ে বলে, মেয়েদেরও এসে হাত 
মেলাতে হবে! 

'নেবেন?ঃ নেবেন আপনারা 2 সুবর্ণ আরো উদ্দীপ্ত হয়, 'মেয়েমানুষকে 
নিতে রাজী আছেন আপনাদের দলে 7? 

দলে! 


৯৬৪ সুবর্ণলজ 


' আমম্বকা ধার গলায় বলে, “বলে কয়ে টিকিট কেটে দলে নেওয়া তো নয 
মেজবোৌদি, যে আসতে পারবে সে এসেই যাবে। বৃন্টি যখন, পড়ে, হাজার 
হাজার গাছের একটা পাতাও শুকনো থাকে না, কিন্তু পাতা ধরে ধরে ভেজাতে 
গেলে 2...দেশ জাগবে, মেয়েদের মধ্যে আসবে সেই প্রবল প্রেরণা, আপাঁনই দলে 
এসে পড়বে। করছে বোৌকি: অনেক মেয়েই দেশের কাজ করছে-িল্তু থাক এ 
আলোচনা ।' ০: 

সুবর্ণ হতাশ গলায় বলে; 'আলোচনাটুকুও যাঁদ করতে নেই তো 'কি করে 
এগিয়ে যাবে মেয়েরা; আম যাঁদ আজ বাঁল সে প্রেরণা আছে আমার-_ 

অম্বিকা আরো আস্তে বলে, “বুঝতে পারছি। অনুভব করাছি আছে, 
কিন্তু আপনার পক্ষে অসম্ভব। আপনার ছেলেমেয়ে রয়েছে-_ 

সুবর্ণ হতাশ গলায় বলে, “জান, জানতাম! আমার যে সব দিক থেকে 
হাত-পা বাঁধা তা জানি!' 

আম্বিকা ব্াথত দৃল্টিতে তাকায়। 

তারপর সহসাই হেসে উঠে বলে, আপনাকে দলে নিই, আর আমাদের 
মেজদা পুলিস লোঁলিয়ে দিয়ে আমাদের জনো ফাঁসর ব্যবস্থা করুন। ওনাকে 
তো দেখেই ভয় করাছিল।' 

সুবর্ণ ব্যঙ্গহাঁস হাসে। 

বলে, 'কেন? খুব তো সুক্ণান্ত সুপুরুষ! 

“সে কথা কোনো কাজের কথা নয়', আম্বকা বলে; “বাইরে ভেতরে এক. এ 
আর কজনের হয়ঃ আমাদের সঙ্গে একটা ছেলে আছে; তাকে দেখলে মনে হবে 
দাঁড়কাক, কিন্তু তার ভিতরটা চাঁদের মত সাদা সুন্দর!” 

. সুবর্ণ খপ্‌ করে বলে বসে, “আচ্ছা” আমাকে দেখলে আপনার কী মনে হয় : 
বাইরে ভিতরে দু রকম? 

আঁম্বকা মাথা নিচ করে বলে, “আপনার মত মেয়ে আমি আর দোখ নি 
মেজবোৌঁদি। শুধু এই ভেবে দুঃথ হয়, আমাদের দেশের কত সম্পদের অপচয় 
হচ্ছে সর্বদা । আপাঁন যাঁদ দেশের কাজে আসতে পারতেন-' 

সুবর্ণ আভমানে ফেটে পড়া মুখে বলে, “ওসব আপনার মোৌঁখক কথা। 
এক কথায় তো নাকচ করে দিলাম। যার ছেলেমেয়ে ঘরসংসার আছে. সে একে- 
বারে পাঁতিত হয়ে গেছে, এই তো কথা! 

“এভাবে সাড়া দিতে হলে যে সর্বস্ব পণ করতে হয় মেজবোঁদঃ,সবস্ব 


আবেগের মাথায় হঠাৎ “তুমি” বলে স্বর্ণ, 'তুঁমি ক ভাবো মেয়েরা পারে 
নাতা?ঃ আম এই বলে রাখাছ, এই মেয়েদের কাছেই একাঁদন মাথা হে্ট করতে 
হবে তোমাদের ।...বনতে হবে, “এতাঁদন যা করোছি অন্যায় করোছ। সাঁত্যই 
তোমরা শক্তিরুপিণ+”।' 

আম্বকা এবার মাথা তুলে বলে, 'আপনার কথা বেদবাক্য হোক। দেশ 
যৌদন একথা বলতে পারবে, সোঁদন দেশ এই অপমানের কুণ্ডু থেকে ঝেড়ে 
উঠবে ।...সাঁত্য ভাবুন, কী অপমান, কী অপমান! সমুদ্রের ওপার থেকে হাজার 
হাজার মাইল পথ পাড় দিয়ে এক মুঠো লোক এসে এই এত কোটি লোকের 
উপর প্রভুত্ব করছে, তাই দেখাঁছ বসে বসে আমরা আর নঃ*বাস ফেলছি। এক- 


গুবর্ণলতা ৰ ১৬৫ 


নঙ্গো সবাই যাঁদ রুখে উঠতে পারতো! মেয়ে বলে নয়, ছেলে বলে নয়, দেশের 
পললতান বলে 

সুবর্ণ আরো ব্যগ্রভাবে কী বলতে যাচ্ছিল, অমৃজ্য এসে হাজির হয়। বলে, 
'এই হয়েছে তো! জুটেছেন দুটি পাগলে! 

সুবর্ণর তো এখানে এসে খুব বাড় বেড়েছে । অমূল্যর সঙ্গে মুখোমুখি 
কথা বলে সে। 

বলে, পাঁথবীতে যা কিছ? মহৎ কাজ, তা এই পাগলেরাই করে। যা কিছু 
বড় ঘটনা ঘটেছে, তার মূল মানুষই হচ্ছে পাগল, বুঝলেন ?” 

অম্বিকা সপ্রশংস দৃস্টিতে তাকায়। 

অমূল্য হেসে উঠে বলে, বুঝলাম !...কন্তু অম্ব্‌, তুই যেন আবার তোর 
ওই মহৎ কাজের মধ্যে এই' পাগলাটকে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা কারস 'ন, তাহলে 
আমার সেই গুন্ডা শালা এসে তোর মাথা ফাটাবে?' 

বোঝে, দাদা তাকে সাবধান করছে। আঁম্বকা জ্রানে দাদার তাকে 
নিয়ে স্বাস্ত নেই। তাই মৃদু হেসে বলে, সেই কথাই তো বোঝাচ্ছিলাম মেজ- 
বৌদিকে । তবে দেশের কাজ তো মান্র একটাই নয়! বাইরে থেকে যেমন এই 
দুশো বছরের পাপ ধৰংস করতে হবে, ভেতর থেকে তেমান আরো অনেক বছরের 
পাপ ধুয়ে সাফ করতে হবে ।...মেয়েদের মধ্যে চেতনা জাগ্ানোও একটা মস্ত 
কাজ মেজবৌঁদি। সে চেতনা জাগানো, তাদের বোঝানো কোন্টা সম্মান কোন্টা 
অসম্মান। বোঝানো শুধু খেয়ে পরে সুখে থাকাই মানুষের ধর্ম নয়। বোঝানো 
কেউ খেয়ে উপচে বসে থাকবে আর কেউ না খেয়ে মরবে, এটা ভগবানের নিয়ম 
নয়। এই প.থিবীর অন্ন সবাই সমান ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খাবে, সবাই পাথ- 
বীর সন্তান), 

অমূল্য প্রশংসার গলায় বলে, বললি তো ভালো, শুনলাম ভালো, কিন্তু 
শুনছে কে 2 

সুবর্ণও বলে, হ্যাঁ, সেই কথাই বলাছ, শুনবে কে? পাথরে কি সাড় 
আসে 2 

“আনতে হবে।' আঁম্বকা বলে, 'অসাড় পাথরে প্রাণসন্টার করতে হবে। 
মাট-পাথরের 'িগ্রহে যেমন প্রাণ-প্রাতম্তা !' 

সুবর্ণ আস্তে মাথা নাড়ে। 

বলে, “চন্দ্র-সূর্যের মুখ দেখলে রসাতল+ পর্দার মধ্যে জীবন, তারা আবার 
কাজ করবে! শিক্ষা নেই দীক্ষা নেই_- 

“ঠক!” আঁম্বকা বলে, 'এই জন্যেই আপনাকে আমার এত ভাল লাগে। 
আপাঁন সব বুঝতে পারেন। এই দেখুন, গলদের ঠিক মূলাঁট বুঝেছেন 
আপাঁন। শিক্ষা, সকলের আগে চাই শিক্ষা। এই হতভাগা দেশের সব আছে, 
নেই খাল চোখের দৃম্টি। সেই দৃষ্টি এনে দিতে হবে। আমার কোনো সুবিধে 
নেই, আমার হবে কি করে বললে চলবে না। মাঁট কাটতে হয়, পাথর ভাঙতে হয়, 
তবে তো রাস্তা তোর হয়, তবে তো সেই রাস্তা দিয়ে জয়রথ চলে।' 

'ঠাকুরপো! সবর্ণলতা ব্যাকুল গলায় বলে, 'জানো, একথা. আমার "মা'র 
কথা!” 

'আপনার মা'র কথা ?' 

আম্বকা একটু আশ্চর্য হয়ে তাকায়। 


১৬৬ সুবর্ণলঅ 


সুবর্ণ তেমাঁনভাবে বলে, 'হ্াঁ। মা'র স্মৃতি আমার কাছে ক্রমশই ঝাপসা 
হয়ে আসছে, তব এ কথাটা মনে আছে। মা বলতেন এ কথা । আমি জল্মাবার 
আগে মা মেয়েদের পাঠশালায় পড়াতে যেতেন।' 

“পড়াতে যেতেন! আপনার মা! আঁম্বকা অবাক গলায় বলে, তাজ্জব 
তো! সে তো আরো আগের ব্যাপার। সমাজ আরো কড়া ছিল। তব নশ্চয়ই 
তান আরো শীন্তমতশ ছিলেন! কতাঁদন হল মারা গেছেন ?" 

সুবর্ণ শিউরে ওঠে। 

সবর্ণ তাড়াতাঁড় বলে, মারা যান নি। আছেন, কাশীতে থাকেন।-_ 
আমার মায়ের কথা বলবো আপনাকে । আপাঁনই পারবেন বুঝতে ।' 

আম্বকা ধীরে বলে. 'বুঝোঁছ* এই মন আপাঁন কোথায় পেলেন ভেবে 
অবাক হতাম, এখন বুঝতে পারাছি! 

অমূল্য বুদ্ধিমান 

অমূল্য ঈগমাজ-সংসারের জীব। 

অমূল্য তার এই ্বদেশন' ভাইটার জন্যে সর্বদাই চিন্তিত।. তাই দুজনের 
এই 'বিমৃদ্ধ ভাবটা তাকে অস্বাস্ততে ফেলে । সন্দেহ নেই এই মুগ্ধতা আতি 
পবিত্র, আতি নির্মল, তথাঁপ এ থেকেও বিপদ আসতে পারে। আসা অসম্ভব 
০ উনি টার্ন সুবর্ণ তার বাড়ির 

তাঁথ। 

সুবর্ণ সম্পর্কে তাকে বোশি অবাহত হতে হবে। 

তাই অমূল্য বলে ওঠে, “হ্যাঁ মেজবৌঁদর মা অনা ধরনের ছিলেন। আমিও 
জানি কিছু কিছু, বলবো পরে। মা ভাল না হলে কি আর “ছা” ভাল হয়? 
কিল্তু বসে বসে গঞ্প করাঁছস, আজ তোর কাজ নেই £' 

নাঃ, আজ বেরুব না। আজ শরীরটা একটু ইয়ে আছে। 

অমূল্য আর একট: বাঁধ দেয়। 

জন্তত ভাবে, বাঁধ দিচ্ছি। 

বলে, 'তবে আর কি, কোটরে বসে পদ্য লিখ গে। 

কন্তু ফল [বিপরীত হয়। 

এই উল্টো বাঁধে উপচে ওঠে নদশশ্ত্রোত। “পদ্য! কাঁবতা লেখেন আপাঁন 2 
চমকে ওঠে সুবর্ণ । 

'আপাঁন নয়, আপা নয়, একটু আগে তুমি বলেছেন-”' 

“ওমা কখন আবার 2 

'বলেছেন। অজ্ঞাতসারর। তবে স্টোই বহাল থাক। 

“আচ্ছা থাক্‌ তাই। আম তো বড়ই। কিন্তু কথা চাপা দিচ্ছ তুমি! তুমি 
কাঁবতা লেখ; কই বল নিতো 

অম্বিকা হেসে ওঠে, “মাইকেলের থেকে সামান্য কম, তাই আর বাঁল নি! 
দাদার যেমন কাণ্ড, কবিতা লেখে! 

অমূল্য বলে, “আহা, কেন? 'লাখস তো বাপ সেই ছেলেবেলা থেকে। 
বুঝলেন মেজবৌঁদি, বারো-তেরো বছরের ছেলে, দেশমাতা নিয়ে ইহা বড় 
এক পদ্য!.. তা আপনার ননাঁদনশ তাঁর গুরুদেব দ্যাওরটির গৃণগাঁরমার কথা 
সব বলেন নঃ তোলা আছে বোধ হয় সে পদ্য আপনার ননদের কাছে। দেখ" 
বেন?, 


সুবর্ণলতা ১৬৭ 


'আমি সব কাঁবিতা দেখবো। ঠাকুরপো, তোমার কাবিতার খাতা দেখাতে 
হবে। 

খাতা! 

আম্বকা হেসে ওঠে। 

'খাতা কোথায় পাবো ঃ ছেস্ড়া কাগজের ফাল হচ্ছে আমার ভাবের বাহন। 
হাতের কাছে যখন যা পেলাম !' 

'তা তাই দেখবো ।' 

“কে তুলে রেখেছে! 

দেখো, তুমি আমায় ঠকাচ্ছো। বেশ তো, নতুন একটা লেখো ।" 

“এই সেরেছে! দাদা, বুঝতে পারছো ঃ বিশ্বাস করছেন না আমার বিদ্যে। 
হাতে হাতে প্রমাণ চান।' 

'মোটেই না। আম শুধু দেখতে চাই।' 

“তবে তো লিখতেই হয়--', আঁম্বকা হেসে ওঠে, “দাদা আবার মাতালকে 
মদের বোতলের কথা মনে পাঁড়য়ে দিলেন ! 

অমূল্য বলে, 'তবে যা, ঘরে বসে মাতাল হগে যা। চললাম আঁম। ভাষণ 
কাজ। 

দুজনকে বিভোর হয়ে গ্প করতে দিতে অস্বাঁস্ত বোধ করে অমূল্য পাড়ার 
লোকের চোখের জন্যে। চোখগৃলি তো ভাল নয়। সুবালার মত সরল আর 
ক'জন আছে? 

ভাইকে এই ইঙঞ্গিতটা দিয়ে কাজে চলে যায় অমূল্য। 

অনুমান করতে পারে না, খাল কেটে কুরীর এনে গেল। 

অনুমান করতে পারল না, ইীঞ্গিতের মর্ম বুঝবে না এরা। তার পাগলা 
শালাজ আম্বকার সেই 'কোটরে' গিয়ে উঠবে কবিতা হাতড়াতে ! 


8২০ ॥ 


চাঁপার ধারণা ভূল ছিল না। 

বড় মেয়ে মল্লিকাকে স্রেফ ঘুষ দিয়েই নিজের 'দিকে টেনে এনোছল' উমা- 
শশী। পুরো আস্ত একটা টাকাই ঘুষ দিয়ে বসৌছল। 
ঝৃটি-বাঁধা মহারাণশী মার্কা এই টাকাঁট কবে থেকে যেন 
তোলা ছিল লুকানো একাঁট কৌটোয়, সোঁট দৌখয়োছল 
মেয়েকে। 

ভীরু ভীরু গোপন অনুরোধ। 

চল না আমার সঙ্গে, দিয়ে দেব এটা ।, 

মল্লকার লুষ্ধ দৃষ্টি জহলে উঠোছল বটে, তবু সে 
বেজার মুখে বলোছল, “আহা, তোমার সঙ্গে যাই আর 
তোমার ছেলে বইতে বইতে প্রাণ যাক আমার! 

বলোঁছল। 

বলে দিব্য পার পেয়েও 'ছিল। 

সাধে কি আর চীপা আড়ালে বলে, 'আঁম যাঁদ জোঁঠমার মেয়ে হতাম, 





১৬৮ সুবণ লতা 


হাজারগুণ ভালো হত আমার ।' 

চাঁপার জেঠিমা এহেন অপমানেও জলে ওঠে না, বরং আরো মনাঁতির 
গলায় বলে, “ওখানে গিয়ে ছেলে বইতে হবে কেন রে? ওখানে কি আমাকে 
হে*সেল সামলাতে হবে £ শরংদর বাঁড়তে কত ঠাকুর চাকর লোকজন! 
লোভনীয় আকর্ষণে আর একবার মনটা টলে মাল্পকার, তব্‌ অটল ভাব দেখায়, 
'লোকজন তো লোকজন, তুমি তোমার সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলে ঠাকুমা তোমার 
গলা টিপে দেবে না? 

নিয়ে যেতে চাইলে! 

উমাশশী শিউরে বলে, 'আঁম চাইবো কি বল্‌ ১ তুই বলাব যে মন-কেমন 
করছে! 

'আহা রে! লোকে যেন বিশ্বাস করবে! 

এবার উমাশ্বশশর চোখের কোণে জলের আভাস দেখা দেয়, 'লোকে বিশ্বাস 
করবে না? মা-ভাই-বোনেদের জন্যে মন কেমন করাটা আঁবশ্বাসের 2” 

মল্লিকা ঈষং অপ্রাতিভ হয়। প 

বলে' “আর চাঁপি? চাঁপকে যে তাহলে একলা যেতে হবে! চাঁগ আমার 
গায়ে ধুলো দেবে নাঃ 

উমাশশ'ী অতঃপর চাঁপর সম্পর্কে ঠাকুমার একদেশদাঁ্শতার উল্লেখ করতে 
বাধ্য হয়। বলে, চাঁপাকে তো মা বুকে করে রাখবেন। যত টান তো ওর 
ওপরেই, দোঁখস না? তোর অভাব ও টেরই পাবে না।' 

চাঁপা সম্পর্কে যে ম্ন্তকেশীর কিন দূর্বলতা আছে, সে কথ। এরা 
সকলেই জানে, কিন্তু এমন স্পন্টাস্পান্ট আলোচনা হয় না কোনো দিন। উমা- 
শশী ন্রুপায় হয়েই আজ সে আলোচনা করে। এক-একটা দিনের উদাহরণ 
দেখায়, যে উদাহরণে চাঁপা-মল্লিকার ঝগড়া মেটাতে মূস্তকেশী মল্লিকাকে ধমক 
এবং চাঁপাকে পয়সা' দিয়েছেন, এমন বর্ণনা আছে। 

ঝগড়া ? 

তা হয় বোৌক দুজনের। 

ভাবও যত, ঝগড়াও তত। 

তা সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত মেয়েকে রাজী করাতে সক্ষম হয়োছিল 
উমাশশী এবং একপাল ছেলেমেয়ে নিয়ে রওনা দিয়োছিল। 
চিনির বসার যেসে দাদ নয়, দারোগা- 

। 

কিন্তু দশটা ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রায় অপারাচিত মাসতুতো ভগ্নীপাঁতর 
ংসারে এল কি বলে উমাশশী? সৃবোধই বা পাঠালো কোন্‌ লজ্জায় ? 

তা জাঁবনমরণের কাছে আবার লঙ্জা! 

তাছাড়া আপাতত উমাশশীর মা সুখদা বোনাঁঝর বাঁড়তেই বাস কর- 
ছিলেন। অতএব মা যেখানে ছাঁ সেখানে । 

শরংশশশ অবশ্য হম্টাচত্তেই গ্রহণ করেছে মাসীর মেয়েকে এবং তার 
বাহনশকে। কারণ নিজের তার যম্ঠীর কৃপা নেই। অথচ ঘরে মা-লক্ষরী উথলে 
পড়ছেন। এই উলে ওঠা চেহারা আত্মজনকে দেখাতে পারাও তো একটা পরম 
সৃথ। 


গৃবর্ণলতা ১৬১৯ 


অবশ্য উমাশশশীর ওপর একটু আঁভমান তার ছিল, কারণ উমাশশখর যখন 
এ বর আর বছর হচ্ছে, আর নিজে সে বন্ধ্যাই এ সত্য স্থিরশকৃত হয়ে গেছে, 
তখন ও মাসীর মারফৎ প্রস্তাব করেছিল. 'ডীম'র একটা ছেলেকে দত্তক দিতে। 

উমাশশশ রাজণ হয় 'নি। 

উমাশশী বলেছিল, “এ প্রস্তাব শুনলে আমার শাশুড়ী আমায় বশট 'দয়ে 
দখানা করবেন।, 

সুখদা বার বার বলেছেন, রান লক্ষণীর ঘরে ছেলেটা সুখে 
থাকবে. রাজার হালে কাটাবে__" 

'তম বল তবে শাশুড়ীকে।' 

'আমি কেন বলে দোষের ভাগ হতে যাব বাবা! তোর শাউড় বলবে, 
দুঃখ মাগী হয়তো বোনাঁঝর কাছে ঘুষ খেয়ে বলছে! 

অতএব প্রস্তাবটা হয় 'নি। 

শরংশশ তখন চিঠি লিখোঁছল। 

বলেছিল. 'পাকাপাকি দণ্ডক না দিস, মানুষ করতে দে আমায় একটিকে। 
তোর পাঁচটি আছে' আমার ঘর শূন্য।' 

উমাশশী শিউরে উঠে ষাট ষাট' করোছল এবং মা'র কাছে কেদে ফেলে 
বলোছল, "শাশুড়ী হয়তো রাজশ হবেন, আমিই পারবো না মা। যাব কথা 
ভাবা, তার জনোই বুক ফেটে যাচ্ছে।' 

সুখদা 'বিরন্ত হয়ৌছলেন। 

বলেছিলেন, 'বুক তো ফাটছে, কিন্ত কি সুখেই বা রাখতে পেরেছ ছেলে- 
পেলেকে 2» নেহাৎ মোটা চালের মধোই আছে। অথচ শরতের পাঁষা হলে-” 

তা হোক, পারবো না মা। গেরস্ত ছেলে, গেরস্ত হয়েই থাক) 

ভগ্মদ্তের বার্তা সখদাকেই বহন করতে হয়ৌছল এবং মেয়ের দুর্মাতিতে 
পণ্চমূখ হয়োছলেন তিনি বোনাঁঝর কাছে। তদবাঁধ শরংশশশী উমাশশীর প্রাত 
ক্ষুপ্ম। অথচ “মা ছেলে ছাড়ল না" এটাকে ঠিক অপরাধ বলেও ভাবতে পারে নি। 
তবে যোগাযোগও রাখে নি। এবারে যখন মান খুইয়ে নিজেই এল উমাশশ+, 
খুশিই হল শরংশশশী। 

বললো. 'তব ভালো যে দাদ বলে মনে পড়লো? 

তারপর খাওয়ামাখা আদরযত্ের স্রোত বহালো।...সৃখদা আড়ালে মেয়েকে 
বলেন, “দেখছিস তো সংসার! তখন বুঝাঁল না. আখের খোয়ালি। এখন ওর 
মন বদলে গেছে। বলে, “ভগবান না দিলে কার সাঁধা পায়?” তবে -" ফিস- 

করেন সুখদা, নজরে ধরাতে পারলে" মেয়ের বিয়েতেও কিছ সরাহা 
হাত পারে।' 

এসব প্রসঙ্গ অস্বাস্তকর। 

কিন্তু তদপেক্ষা অস্বস্তিকর জামাইবাবু করালীকান্তর পেশাটা। 

পুরুষমানুষ সকালবেলা তাড়াহুড়ো করে স্নানাহার সেরে 'আঁপস' 
কাছারশ যায়, সন্ধ্যের মধো বাঁড় ফেরে এই উমাশশীর জানা, মেজ দ্যাওর বাবসা 
নাকি করে বটে. তবু তারও আসা-যাওয়া সৃনিয়ন্তিত। কিন্তু এ কী2 

না আছে আসা-যাওয়ার ঠিক, না আছে নাওয়া-খাওয়ার ঠিক। অধেকি 
দন তো বাড়া-ভাত পড়েই থাকতে দেখা যায়, খাওয়াই হয় না। এসে বলে, 
অসময়ে আর ভাত খাব না, দুখানা লুচি দাও বরং।" 


১৯৭০ সুবর্ণলতা 


তখন আবার তাড়াহুড়ো পড়ে বায় লুচি রে আলুর দম রে করতে। 

' আর শুধুই কি দিনের বেলা? | 

হঠাং হঠাৎ রাতদুপুরে ঘূম ভেঙে দেখে আলো জবলছে, চাকর-বাকর 
ছটোছুটি করছে, শরৎাদ হাতে হাতে জিনিস নিয়ে ঘুরছে, আর জামাইবাবু 
পাস” ধড়াচুড়ো আঁটছেন। 

চাঁপচাপ দেখে, জামাইবাবু 'বোরয়ে যাচ্ছেন, একটা লালমুখো ঘোড়ার 
গাঁড়তে গিয়ে উঠছেন. হাঁয়ে যাচ্ছেন বিমাঁঝম করা নিকষ অন্ধকারের মধ্য। 

দেখেশুনে উমাশশীর হাত-পা ঝিমাঝম করে আসে । খামোকা উঠে নিজের 
ঘুমন্ত ছেলেমেয়েগুলোর গায়ে হাত 'দয়ে দেখে, হয়তো বা গোনে। যেন হঠাং 
দেখবে একটা কম! 

বুকটা ছমছম করতে থাকে কি এক আশঙকায়। 

কেন ষে এমন হয়! 

এমনিতে তো জামাইবাবু 1দাব্য রাসক পুরুষ । “শালী শালী” করে ঠাট্টা- 
তামাশাও করেন। মন ভাল থাকলে ডাক-হাঁক করেন, “ওহে বিরাহণী, গেলে 
কোথায় £ একলা বসে শ্রীমূখচন্দ্র ধ্যান করছো বুঝি ? 

কথা শদনে লজ্জায় মরতে হয্স। 

ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। 

কিন্তু মন যখন ভাল থাকে না জামাইবাবৃূর ? 

তখন কী রুক্ষ! মুখে কী কটু কুৎসিত ভাষা! চাকরদের গালাগাল দেওয়া 
শুনলে তো কানে আঙুল দিতে ইচ্ছে করে। শরৎশশশও বাদ যায় না, তাকেও 
কাঁদয়ে ছাড়েন,। তাছাড়া এক-এক সময়, বিশেষ করে রাতের দিকে সহসাই 
যেন বাঁড়র হাওয়া বদলে যায়' বাইরে বৈঠকখানায় নানারকম সব লোক আসে, 
দরজা বন্ধ করে কথাবার্তা হয়, কী যেন গোপন ষড়যন্ত্র চলতে থাকে, জামাইবাবু 
বাড়ির মধ্যে আসেন যান, স্ত্রীর সঙ্গে চাপা গলায় কী যেন কথা বলেন, হয়তো 
সেই লোকগুলোর সঙ্গেই বেরিয়ে যান, কোন: রাত্তিরে যে ফোরেন, টেরই পায় 
না উমাশশশী। 

দিদি না খেয়ে বসে থাকলো, না খেলো কে জানে! 

এমন গোলমেলে সংসার ভাল লাগে না উমাশশীর। মনেই যাঁদ স্বাঁস্ত না 
থাকলো তো কী লাভ রাশ রাশ টাকায়, ভাল ভাল' খাওয়া-পরায়! 

সেই কথাই একদিন বলে বসে উমা। 

আর বলে মল্লিকার মুখে একটা কথা শুনে । মল্লিকা নাক দেখেছে মেসো- 
মশাই বাগানের ওধারে একটা লোককে মুখ বেধে চাবুক মেরে মেরে অজ্ঞান 
করে দিয়েছেন। আর সে নাকি চোর-ডাকাতের মতন মোটেই নয়, ভদ্রলোকের 
ছেলের মতন দেখতে । 

উমাশশশ বলে বসে, “যাই বল 'দাদ. ও তোমার গেরস্তাবল চাকারিবাকাঁরই 
ভাল। টাকা গয়না কম থাকলেই বা কি, মনে শান্তি থাকে। জামাইবাবু 
কাজটা বাপু ভাল' নয়।” 

সুখদা চমকে যান। 

আড়চোখে বোনঝির মুখের 'দিকে তাকান, দেখেন সেখানে দপ্‌ করে আগুন 
উঠেছে জহলে। 

হয়তো কথাটা বড় আঁতে-ঘা-লাগা বলেই। 


সুবর্ণলতা ১৭১ 


হয়তো নিজেও শরংশশী অহরহ ওই কথাই ভাবে । ধূ-ধ মরুভূমির মত 
জীবনের স্তব্ধ বালুভঁমিতে যখন টাকার স্তূপ এসে পড়ে, তখন সে টাকাকে যে 
বিষের মতই লাগে তার। 

বাড়তে গোয়ালভার্ত গরু, রাঁশ রাঁশ দুধের ক্ষীর ছানা মিষ্ট খাবার 
তোর করে শরংশশী, যাঁদ তার' দুটো খায় তো দশটা বিলোয়। কোথা থেকে কে 
জানে বড় বড় মাছ এসে পড়ে উঠোনে, কাটলে যাঁজ্ঞ হয়, সেই মাছ চাকর-বাকরে 
খায় তন ভাগ। কারণ পাড়ার লোককেও সব্দা দিতে অস্বাস্ত বোধ হয়। 

বাগানের ফল আসে বাঁড় ঝাড়, আম কাঁঠাল কলা পে"পে এটা সেটা। 
এখন উমাশশণ রয়েছে তাই আদর হচ্ছে সেই ফলেদের, নচেং তো ফেলাফোঁল! 

শরংশশীর গায়ে এবং বাক্সে গহনার পাহাড়। কিন্তু সুখ কোথায় তার 2 
বরের মাইনে জানতে না পারলেও, উমাশশীর বরের মাইনের চেয়ে কম বৈ বোঁশ 
নয়, এ জ্ঞান শরতের আছে। তবে? কিসের টাকায় এত লপচপাঁন করালী- 
কান্তর ? 

উপাঁর আয়েই তো! 

আর দারোগার উপাঁর আয় কোন্‌ ধর্মপথ ধরে আসে ? 

ভিতরে জহালা আছে শরংশশীর। 

তদুপাঁর জহালা আছে স্বামীর চান নিয়ে। কিন্তু সেসব তো প্রকাশের 
বস্তু নয়! উমাকে আর তার ছেলেমেয়েকে খাইয়ে-মাখয়ে 'দিয়েথুয়ে চোখ 
ধাঁধিয়ে রেখে নিশ্চিন্ত ছিল, হঠাৎ দেখতে পেল নির্বোধ উমারও চোখ 
ফুটেছে। কিসে শান্তি, কিসে সুখ, সেটা ধরে ফেলেছে। 

অতএব শরংশশীর চোখে দপ্‌ করে আগুন জঙলে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। 

শরংশশী সে আগুন চাপা দিতেও চেস্টা করে না। বলে ওঠে" 'জামাই- 
বাবুর কাজটা ভাল নয়ঃ ও! তবে ভালটা কার চোর ডাকাত খুনে গুণ্ডা- 
দের? ওলো. এই “খারাপ কাজ” করা লোকগুলো আছে বলেই এখনো রাজ্য 
চলছে. বুঝাঁল 2 নচেং অরাজক হয়ে উঠতো ।” 

ভীতু উমাশশণী ভয়ে কাঁটা হয়ে যায়, শিউরে উঠে বলে, 'তা বাল নি 
দাঁদ। বলাছ জামাইবাবূর পক্ষে ভাল নয়। সময়ে নাওয়া-খাওয়া নেই” 'দিনে- 
রাতে জিরেন নেই, সদাই ভয়-ভয়-_ 

হঠাং নিজেকে সংবরণ করে নেয় উমা. অলক্ষ্যে মা'র কাছে চিমাঁট খেয়ে। 

চমাঁটর সাহায্যে সতর্ক করে দিয়ে সুখদা নিজেই হাল ধরেন। 

না ধরে করবেন কিঃ 

বলতে গেলে শরংশশীর সাহায্যেই মোটামুটি দাঁড়িয়ে আছেন তান, 
বছরে দু-চার মাস তো থাকেনই তার কাছে, তাছাড়া বাকী সময়টা, যেখানেই 
থাকুন, হাতখরচটা এখান থেকেই' যায়! 

নেহাং নাঁক বদাঁলর চাকার করালশকান্তর, তাই এক নাগাড়ে থাকা হয় না। 
ব্যাণ্ডেলে বদাঁল হয়ে এসে পরন্তি আছেন! এখানে যত বড় কোয়ার্টার, তত 
বড় বাগান, তত লোকজনের সুবিধে, এলাহি কান্ড! এর আঁধকারণকে 
চটাবেন ১ হাল অতএব ধরতেই হয়। 

ধরেন, বলে ওঠেন, “আগে কি এমন ভয়তরাস ছিল 2 না. এত খাটুনীই 
ছিল? সোজাসুজি চারডাকাতি খুনখারাঁপ হতো, সোজাসাজ ব্যবস্থা 'ছল। 
পোড়ারমূখো স্বদেশী ছোঁড়াগুলো যে উৎপাত করে মারছে । গাঁজ বারুদ তোর 


৯৭২ সুবর্পলতা 


করে ব্রিটিশ রাজত্ব উঁড়য়ে দেবে! ভদ্দরঘরের ছেজে হয়ে ডাকাতি করবে! এইসব 
জথালাতেই বাছার নাওয়া-খাওয়া নেই। লক্ষমশছাড়া ছোঁড়াদের. না হয়-মা-বাপ 
নেই, পুলিস বেচারাদের তো ঘরে বৌ ছেজে আছে! 

'সবদেশধ, স্বদেশ” এই শব্দটা অনবরতই কানে আসে বটে উমাশশীর, 
1কন্তু স্বদেশশ ছোঁড়াদের গুণাগুণ কি, তাদের কার্যকলাপ কি. তা নিয়ে মাথা 
ঘামাতে যায় নি কোনাঁদন, তাই আজ একট থতমত*খায়। 

ভয়ে ভয়ে বলে, 'রাগ কোর না শরংদি, এত কথা তো জানি না। তাই 


'না, রাগের কি আছে 2 শরংশশশ উদাস গলায় বলে, 'আগেকার আমলে 
চোরের পাঁরবার ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো বর কখন ধরা পড়ে, আর এখন 
পুজিসের পারবারকে সশাওকত হয়ে থাকতে হয়, বর কখন মারা পড়ে, এই আর 
ক! কাজটা ভাল নয়, একপক্ষে বলোৌছসই ঠিক।' নিঃ*বাস ফেলে শরংশশী। 
হয়তো উমার কুণ্ঠা লজ্জা ভয় দেখে মায়া হয় তাই আগুনটা সামলে নেয়, বলে, 
প্রাণ হাতে করে থাকা! এই যে রাত-বিরেতে বোরয়ে যাচ্ছে মানত, যাচ্ছে 
তো সাপের গর্তে হাত 'দিতে' বাঘের গুহা তে! ফিরবে তার নিশ্চয়তা 
আছে? তবু বুক বেধে থাকতেই হবে, বি হবে। ইংরেজের 
রাজত্বটা তো সোপাট হতে দেওয়া চলে না! 

সুখদা ফোড়ন কেটে ওঠেন, 'কার অন্ন খাচ্ছিস 2 কার হাতে ধনপ্রাণ 3 
তা ছোঁড়ারা ভাবছে না গো। কই. পারাঁছস গোরাদের সঙ্গে? শয়ে শয়ে তো 
জেলে যাঁচ্ছস, পুলিসের লাঠিতে মুখে রন্তু উঠে মরছিস, তবু হায়া নেই!' 

রন্তু ওঠার কথায় ?শউরে ওঠে উমা। আস্তে বলে, 'জামাইবাবর হাতে ধরা 
পড়ছে কেউ ১ 

“পড়ে নি2, শরৎশশী দৃপ্ত গলায় বলে, 'গাদা-গাদা! তোর জামাইবাবু 
বলে, “আম গন্ধ পাই। সুমূদ্দুরের তলায় লুকিয়ে থাকলেও টেনে বার করতে 
পারি”।, 

উমা একটা [নঃ*বাস ফেলে। 

জামাইবাবুর কর্মদক্ষতায় খুব বোঁশ উৎসাহ বোধ করে না। হলেই বা 
স্বদেশী ছোঁড়া, মা-বাপের ছেলে তো বটে। আর এই সূন্রে তার মেজ জায়ের 
কথা মনে পড়ে যায়। 

'দবাদশশ' শব্দটার ওপর যার প্রাণভরা ভান্ত। 

অথচ আসলে ওই' শব্দটা যে ঠিক কি তাই ভাল করে জানে না উমা । 

মানুষ ১ 

না জিনিস 

ন্বাক কোনো কাজ 2 

কে জানে! ঠিক ধরা যায় না! 

মেজ বৌকে জিজ্ঞেস করতেও ভয় করেছে । ওসব কথায় এমন চড়ে ওঠে, 
এমন বিচলিত হয়, দেখলে ভয় করে। উমা ভাবে, থাক্‌ গে, জেনেই বা কি 
হবে? আদার বাপারী জাহাজের খবরে দরকার ক? 

কিন্তু এখানে এসে জামাইবাবুর কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, একট; কুঝি 
জানা-বোঝা ভালো। তাহলে এমন অন্ধকারে থাকতে হয় না। বুঝতে পারা 
যায়, কোনটা পাপ কোন্টা পণ্য! 


সুবর্ণলতা ১৭৩ 


সুখদা সগোৌরবে বলেন 'শুনাল তো? 
সখদার কথায় শরংশশনী সচেতন হয়। বলে; “থাক মাসী ওসব কথা। 
দেশের সর্বনাশ যে আসন্ন তা বোঝাই যাচ্ছে। গোরারা একবার ক্ষেপলে ক 
আর রক্ষে থাকবে! তবে যারা কর্তব্যনিষ্ঠ, যারা বৃঁটিশের নেমক খাচ্ছে, তারা 
মরবে তব: নেমকহারামী করবে না. এই হচ্ছে সার কথা। তাতে প্রাণ চলে বায় 
যাক। 
কিন্তু এইটাই কি শরংশশীর প্রাণের কথা? নাকি সে শাক দিয়ে মাছ 
ঢাকে 2 কথা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখে! ওই 'নর্বোধ উমাটা একেই 'দশমাতা' হয়ে 
অহওকারে মরছে, তার পর যাঁদ টের পায়, শরংশশশর যা কিছ চাকাচিক্য সবই 
ভুয়ো, যা কিছ আলো জোনাকির আলো, তা হলে আর রইলো কি; 
তা ষতই শরংশশী তার ভাগ্যকে আড়াল করুক. ছোট ছেলেমেয়েগুলোর 
চোখ এড়ায় না। তারা মহোংসাহে খবর সন্ধান করতে থাকে। 
তারা টের পেয়ে যায় মেসোমশাই যাদের সঙ্ো চাপ চপ কথা কন, তারা 
হচ্ছে গোয়েন্দা, যেখানে যেখানে ওই স্বদেশী গুণ্ডারা লুকিয়ে আছে সেখানের 
সন্ধান এনে দেয় ওরা। মেসোমশাই তখন ছোটেন সেখানে । সেই ছেলেদের 
চাবুক মারতে মারতে পিঠের ছাল তোলেন, লাথ মারতে মারতে পেট ফাটান, 
ধরে ধরে 'নয়ে গিয়ে জেলে পোরেন। 
ভীষণ একটা উত্তেজনা অনুভব করে ওরা। নেহাং ছোট পাঁচটাকে বাদ 
দিলেও, বাক কজন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে ।' আর সেই সতত্রে পাকা 
৯৭ -৯৮ ধরে দেয়। 
যাঁদ টের পায় আমরা পুলিসের বাড়তে আছি, মেজখনাড় আর 
ছোঁবে না আমাদের । কথাই কইবে না? 
চমকে যায় তার দাদা-দাঁদরা ৷ 
বলে, তাই তো রে, টেশীপ তো নক বলেছে! 
বাঃ. আমরা বুঝি ইচ্ছে করে পুলসের বাড়তে আছ ?' বললো একজন। 
উপ “তা বললে কি হবে. মেজখুড়ির রাগ 
জানস তো। তার ওপর আবার শুধু পুলিস নয়: স্বদেশী মারা পুঁলস!' 
মেজখুড়ি রাগ করলো তো বয়ে গেল, এ কথা ওরা ভাবতেই পারে না। 
মেজখুড়র' অপ্রসন্নতা, সে বড় ভয়ঙ্কর দুঃখবহ। 
অবশেষে ওরা ঠিক করে. বলা চলবে না। দরকার ক রাগয়ে মেজ- 
1 
মাল্লকা নিঃ*বাস ফেলে বলে, 'মা'র জন্যেই এইটি হল আমার । চাঁপির সঙ্গে 
ঠাকুমার সঙ্গে চলে যেতাম চুকে যেত। তখন বললো, ছেলে সামলাতে হবে না 
রে-- মা'র ভঙ্গীর অনুকরণ করে মাল্লকা' 'আমাকে তো আর হে*সেল সামলাতে 
হবে না ওখানে-+ এখন দেখাঁছিস তো? রাতাদিন কাঁথা বদলা, ন্যাতা কেচে 
আন, দুধ খাইয়ে দে! কেনই যে এতগনলো ছেলে-মেয়ে হয় মানুষের £ ছোট 
খাঁড়র বেশ! শুধু বদো-ব্যাস! 
হঠাৎ মাল্লিকার ভাই গোঁর হেসে বলে ওঠে, তাহলে তো তোকে আর 
জন্মাতেই' হোত না। শুধু আম, ব্যাস! তুই নিতাই, রামু, টেশপ. টগর, ফট 
পঁচকে খোকা, খুকাঁ, 'সব্বাই পড়ে থাকতো ভাগবানের ঘরে” 
এটা অবশ্য খুব একটা মনঃপৃত হল না মাল্লকার। মল্লিকা জল্মায় 'নি, 


রি 


১৭৪ সুবর্ণলতা 


সেটা আবার কেমন পৃথিবী! 

অনেক আলোচনান্তে অবশেষে কিন্তু স্থির হয় মেজখুড়ির কাছে কিছুই 
গোপন করা চলবে না, কারণ মেজখুঁড় পেটের ভেতরকার কথা টের পায়। 
স্পঞ্টই তো বলে, 'আমার একটা দব্চক্ষু আছে, বুঝাঁল! তোরা কে কি লুকো- 
চ্ছস সব বুঝতে পাঁর।' মধ্যে কথায় বড় ঘেল্লা মেজখুড়ির, অতএব বলা হবে। 
তব এটাও জোর করে বোঝাতে হবে, তাদের কী দোষ? তারা তো ইচ্ছে করে 
মাসীর বাঁড় বেড়াতে আসেন? 

হঠাৎ একসময় শরংশশশীর নজরে পড়ে, সব কটায় 'মিলে কি যেন গোপন 
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসে ভুরু কুচকে বলে, শক করাঁছস রে তোরা 2, 

2 

শরংশশণ বাস্মত হয়, বার বার প্রশ্ন করে এবং সহসাই 'বি*বাসঘাতক 
টেশপ বলে ওঠে, 'মেসোমশাই পূঁলিস তো, সেই' কথাই হচ্ছে__, 

দাদা-দিদিদের সব ইশারা ব্যর্থ হয়। 

চিমটি কাটা বিফলে যায়। 

শরংশশশ যখন কঠিন গলায় বলে, 'পাঁলিস তো ক হয়েছে! তখন টেশপ 
বলে ওঠে, 'স্বদেশীমারা পৃলিস খুব 'বাচ্ছার তো। মেজখাঁড় যাঁদ শোনে 
আমরা এ বাঁড়তে আছি, তাহলে আর ঘেল্সায় ছোঁবে না আমাদের, তাই মেজ- 
খাঁড়কে বলা হবে না- 

“মেজখাঁড়! 

শরংশশণ শুধ্‌ এইটুকুই বলতে পারে। 

টেশপ মহোংসাহে বলে, হ্যাঁ, মেজখ্যাঁড় যে স্বদেশ ভন্ত! জানো না? 
প্ীলসকে ঘেন্না করে, সাহেবকে ঘেম্না করে। 

শরংশশী মূহূর্তকাল স্তব্ধ হয়ে থাকে । তারপর সহসাই কঠোর গলায় 
বলে! ওঠে, “বেশ, তবে থাকতে হবে না পুঁলসের বাঁড়, চলে যা নিজেদের ভাল 
বাড়িতে । আজই যা! 


২১ 


স্বাধীনতা পরাধীনতা নিয়ে যে যেখানে মাথা ঘামাক, সাঁত্যকার স্বাধীনতা যাঁদ 
কেউ পেয়ে থাকে তো পেয়েছে সুবর্ণলতার ছেলেমেয়েরা 
দু &. -পাঁসর বাঁড় এসে । 
০২২৯ রাতাঁদন অনেকগুলো রন্তচক্ষুর তলায় থাকতে 
সা থাকতে ওরা জানতো না মুন্তির স্বাদ কি, স্বচ্ছন্দচারণের 
1] সুখ কি: ণ-অকারণে হঠাৎ আচমকা কেউ ধমকে 
ন্‌ উঠবে, এমন নিয়েই তাদের জীবন। 
| বিশেষ করে সেজকাকা ! 
ছেলেপু একবার ৯৯০৯ ক 
দেখলে বা একবার তাদের একট: হেসে উঠতে শুনলেই তিনি সেই ছেলে- 
পুলের পেটের ধপলে চমকে দয়ে হাঁক দেবেন, “কে ওখানে ? শুনে যা এীদকে! 
ব্যস, তাতেই এমন কাঁপন ধরে যায় যে এদিকে আসবার ক্ষমতা আর 





গুবর্ণলত। ১৭৫ 


থাকে না। অতএব সেই না আসার অপরাধেই “বরাশণী 'সিককা' 'মোগলাই গাট্টা, 
'রামাচমটি, শ্যামাচিমাট' ইত্যাঁদ করে অনেক কিছুরই স্বাদ পেতে হয়। 

সুবর্ণলতা তার ছেলেদের মারে না বলেই বোধ কার সুবর্ণলতার ছেলেদের 
মারবার জন্যে এত হাত নিসাঁপস করে সেজকাকার। 

মা ঠেঙায় না ছেলেদের, এমন মেমসাহেবায়ানা অসহ্য বলেই হয়তো সেজ- 
কাকা মায়ের সেই মেমসাহেবীয়ানার শোধ নেন। 

ভাগ্নের গায়ে হাত তুলতে না হয় হাত কাঁপে, ভাইপোর গায়ে হাত তোলায় 
তো সে আশঙ্কা নেই! 

সেই আবহাওয়া থেকে এসে মাঠে-মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা । কাদা, মাটি, 
খড়, বাঁশ, পাতা লতা নিয়ে বতরকম খেলা তা সব খেলছে । পসতুতো ভাই- 
বোনেরা সঙ্গী। 

কিন্তু আসল মজা হচ্ছে, এখানে এসে অবাঁধ শুধু পিসতৃতো দাদা-দাঁদরাই 
টি নি তাদের খেলার মহোৎসাহী সঙ্গী । তান হচ্ছেন মা। 

মা! 

সবর্ণলতা ভার বয়েস এবং পদমর্যাদার ভার ফেলে সমবয়সীত্বে নেমে 
আসে, রীতিমত যোগ দেয় খেলায়। যেমন ছেলেরা উঠোনের মাঝখানে দুদিকে 
দুটো পুকুর কেটে মাঝখানে একটা সাঁকো বানাবে, অথচ জুৎ করতে পারছে না, 
কণ্ঠ আর বাঁখাঁর নিয়ে হিমাঁসম খেয়ে যাচ্ছে, সৃবর্ণলতা এসে পড়ে এবং বসে 
গড়ে একগাল হেসে বলে ওঠে. "আমায় যাঁদ তোদের খেলায় নিস তো আম করে 
দিতে পাঁর।' 

মাকে “নেওয়া না-নেওয়া' আবার একটা কথা নাক? ছেলেরা কৃতার্থমন্য 
হয়ে বলে ওঠে, “তুম আসবে 2 

বললাম তো, যাঁদ নিস! 

'নেবো নেবো, এসো তুমি খেলতে । 

, অতঃপর নেমেই আসে স্বর্ণলতা, নেমে আসে শিশৃর খেলাঘরে। তোড়- 
জোড় দেখে কে। 

“এই, একটা বাঁশ নিয়ে আয় 'দাকন!...এই, একটা বড় দেখে গাছের ডাল 
নিয়ে আয় 'িকি!...এই চারাঁট বুনো ফৃলের চারা আনতে পাঁরস? আলাদা 
একট; বাগান করবো ? 
এমন সব ফরমাশ করে ঈ.বর্ণলতা, আর সেই আদেশ*পালন করে ধন্য হয় 
ছেলেরা। 

মা একমৃখ হাসছেন। 
৷ মা সহজ হালকা প্রোতে গা ভাসাচ্ছেন। এর থেকে আনন্দের আর কি 
আছে! 

তা আজও সেই আনন্দ 'দতে এল সুবর্ণলতা। 

ওরা কৃতার্থমন্য হয়ে এীগয়ে আসে। 

সৃবর্ণলতা বড়ছেলের 'দকে তাকয়ে বলে, 'খেলবো তোদের সচ্গে। কিন্তু 
একটা শর্তে! 

সৃবর্ণলতার মুখটা আলো-আলো দেখায় । 

তারপর মাঁট মাখতে মাখতে আসল কথাটি বলে সবর্ণলতা, 'আমার 
তোদের আম্বকাকাকুর বাড়তে একবার নিয়ে যাব 2 


১৪০৬ সুবর্থলত 


অম্বিকাকাকুর বাড়ি! 

পরস্পর দ্ান্ট-বিনিময় করে হেসে ওঠে। 
হী 'আঁম্বকাকাকুর বাঁড়! সে তো ওই--ওইটা। ওখানে আবার নিয়ে যাওয়া 

2+ 

অর্থাৎ ওটা আবার একটা নিয়ে যাবার জায়গা নাঁক! 

সৃবর্ণলতাও কি তা জানে নাঃ 

তবু সংবর্ণলতা তার ছেলের সাহায্য প্রার্থনা করে। 

একা ফট- করে যেতে পারে না তো. শুধু একটা পুরুষ ছেলের নিন 
ঘরে যাওয়া! 

ছেলে একটা সঙ্গে থাকাই ভাল। 

তাই কৌতুক-কৌতুক মুখ করে নিয়ে বলে. “তা জ্ঞান রে বাপু, তবু চল 
না। মানে খেলার শেষে " 

আজকের খেলা একটা সাঁত্যকার “বাঁড়' তোর! গতকাল অনেক মাটি মেথে 
ছোট ছোট চৌকো চৌকো ইস্ট তৈরি করে রেখোছিল, আজ সেইগ্‌লো জবড়ে 
জুড়ে সাঁত্যকার পাকা বাড়ি করা হবে। 

প্র্যান! 

সে তো মাথাতেই আছে। রথ প 

ছোট ছোট সেই ইস্টগুলো রোদে ভাজা ভাঙ্গা হয়ে শন্ত হয়ে গেছে। সংবর্ণ- 
লতা সেগুলি নাড়তে নাড়তে বলে, “এই ঠিক কাজ করাছিস। ইণ্ট তৈরি করে 
নিয়ে তব বাড়ি বানানো খুব ভাল। মজবুত হয়। কারণ শব্ধ কাদার দেওয়াল 
নোতিয়ে পড়ে! 

তারপর ই'টের পর ইস্ট সাজিয়ে দেওয়াল তুলে দেয় সুবর্ণ ওদ্গের। তোর 
হয় শোবার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, ভাঁড়ারঘর, ঠাকুরঘর। 

ভানু পুলাঁকিত গলায় বলে. মাঃ 

“'কীরে? 

রদ বোধহয় প্রি বিলে? 

সুবর্ণ হেসে ওঠে, “তা ছিলাম হয়তো। 

তারপর স্ববর্ণ কাদামাটির হাত ধুতে ধৃতে বলে, «এইবার তবে চল্‌! 

চলো।' 

অকৃতজ্ঞ ভান্‌ আনচ্ছা-মল্থর গতিতে চলে। এইমান্র মা তাদের বাক্যদপ্ত 
করিয়ে নিয়েছে তাই, নচেৎ কে চায় এই খেলা ফেলে আঁম্বকাকাকার বাড়ি যেতে! 

যে আম্বকাকাকাকে 'নিত্য দেখতে পাওয়া যায়! 

তবু চলে। 

সুবর্ণ লতাও যায়। 
সংবর্ণলতার বুকটা দুরদৃর করে, মনটা ভয়-ভয়, উত্তেজিত-উত্তোজত। 
যেন বিরাট এক আঁভযানে বৌরয়েছে সে। 


কাঁবতার সম্ধানে আঁন্বকার বাড়তে এসে হাজির সুবর্ণলতা। 

সংসারজ্ঞানহখন আঁম্বকাও 'কিণ্চিং বিপন্ন না হয়ে পারে না। এতটা সেও 
আশা করে নি। বারেবারেই তাই বলতে থাকে, 'কণ মূশশাকল, বলুন তো! 
আপানি নিজে এলেন, হৃকুম হলে গল্ধমাদন পর্বতটাই বয়ে নিয়ে যেতাম! 


সুবর্ণলতা ১৭৭ 


তারপর হেসে ফেলে বলে, 'অবশ্য তারপর নিশ্চয়ই হতাশ হতেন। 'বিশলা- 
করণণর চিহ্ন খুজে পেতেন না।” 

কিন্তু কি পেত আর না পেত সেকথা ভাবতে বসছে না সবর্ণলতা। 
সুবর্ণলতা রুদ্ধানঃ*্বাসে আর দুরন্ত আবেগে একটা ধাঁলধ্সারত সেলফের 
মধ্যে রাখা প্রায় জঙ্জালসদশ্য কাগজের স্তৃপ হাতড়াচ্ছে। 

প্রকাণ্ড সেজ্ফটার তাকে তাকে 'নেই” হেন জিনিস নেই। খবরের কাগজের 
কাটিঙের ফাইল, ইংারাজি-বাংলা নানা পাঁরিকার সম্ভার, গোছাগোছা প্রবন্ধের 
পান্ডুলীপ, ক্যালেন্ডার, হ্যাশ্ডাবল, 'চাঠপরের রাশি, ক নয়! এর মধ্যে থেকে 
কবিতা উদ্ধার করতে হবে। তাও খাতায় নয়, খুচরো কাগজে লেখা । 

সবর্ণলতা সব উল্টোতে থাকে। 

আম্বিকা ব্যস্ত হয়ে বলে, দেখছেন তো কশ অবস্থা! সূম্টির আদ থেকে 
রাকা রাকা পর পর কেবল চাপানোই হয়, নামানো তো হয় না কোনো- 
ন!' ৃ 

'পদ্য-টদা এই জঙ্গলের মধ্যে রাখো কেন?" ক্ষৃত্ধ আবেগে বলে সুবর্ণ 
জতা। 

'পদ্যই' বলে। “কাঁবতা' বলতে হয়, বললে ভাল শোনায়, অত খেয়াল 
করে না! 

অম্বিকা হেসে বলে, ““্রাঁখ না” তো, “ফোঁল”। কোনো কিছু ফেলার 
পক্ষে জঙ্গলই শ্রেষ্ঠ জায়গা ৷ 

আম্বকাদের এই বাঁড়টি জ্ঞাতদের সঙ্গে সংশ্লিম্ট বড় বাঁড়র ভগ্নাংশ 

নয়' ছোট্ট একটু একতলা, সম্পূর্ণ আলাদা । আঁম্বকার বাবা জ্ঞাতিদের থেকে 
সস বাগানের ধারে এই ছোট বাড়খানি কারয়ে- 
ছিলেন। আম্বকার মা বেচে থাকতে ছবির মত রাখতেন বাঁড়টিকে, রাখতেন 
ধূলমালন্য শূন্য করে। কিন্তু ছেলের ঘরের এই সেলফাঁটতে হাত দেওয়ার 
জো ছিল না তাঁর। হাত 'দিলেই নাকি অম্বকার রাজা রসাতলে যেত। 

এখন সারা বাড়তেই ধুলো । 

স্‌বালা অথবা তার মেয়েরা এক-আধাঁদন এসে ঝাড়ামোছা করে দিয়ে যায়, 
আম্বকা বকাবাঁক এবং ঝাঁটা কাড়াকাঁড় করে, ব্যাস! 

কিন্তু সুবর্ণর তো ধুলোর 'দিকে দৃষ্ট নেই। সে ধুলোর আড়াল থেকে 
মাঁণক খনুজছে। 

আরো সেই খোঁজার সূত্রে পেয়ে যাচ্ছে অনেক মাঁণররন। কত বই. কত 
পাঁন্ুকা! ইস্‌? ভাগ্যস এল সুবর্ণ এখানে! 

ঠাকুরপো, এত বই' তোমার ? কই বল নি তো, 

আঁম্বকা অগপ্রাতভ হাস্যে বলে, “বই দেখে এত খুশী হবেন, জানি না তো।” 

'জানো না, বাঃ।, সুবর্ণ বলে ওঠে, 'আমি কিন্তু এগুলো সব পড়বো। 
রয়েছি তো এখনো, পড়ে নেব তার মধ্যে।: 

অম্বিকা হাসে, "পড়লে তো বেচে যায় ওরা । ধুলোর কবরের মধ্যে পড়ে 
আছে. উদ্ধার হয় তার থেকে ।' 

সুবর্ণ দঁপ্ত প্রসম্বমুখে বই বাছতে থাকে, এবং বেছে বেছে প্রায় গন্ধ- 
মাদনই করে তোলে। আলো-জবলা মুখে বলে, 'এই আলাদা করা থাকলো, কিছ 
কছু করে নিয়ে যাব, আবার পড়ে পড়ে রেখে যাবো ।' 

১২ 


১৭৪ সযবর্পলত | 


, আঁম্বকা বলে, শজানসগুলো এত আঁকিণ্ণিংকর যে বলতে লঙ্জা করছে, 
রেখে না গেলেও ক্ষতি নেই, নিয়েই রাখতে পারেন। রাখলে ওই মলাট-ছে্ড 
ধুলোমাখা কাগজপরগুলো কৃতার্থ হয়ে যায়।' 

সুবর্ণ এবার হাসিমুখে বলে, “অতয় কাজ নেই, একবার পড়তে পেলেই 
বর্তে যাই। এতাঁদন রয়েছি, জানি কি ছাই! জানলে তো রোজ এসে হানা 
দিতাম। উঃ, আজও যাই ভাঁগাস এসেছিলাম ! ৃ 

আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সুবর্ণলতার চোখমৃখ সর্বাবয়ব। 

আম্বকা সবর্ণলতার মা সত্যবতীকে দেখে নি। দেখে নি, তাই সহসা 
অনৃভব করতে পারে না এই আলোর উৎস কোথায়! 
অবাক হয়। 

আম্বকা বোধ কার অগ্রাতভও হয়। 

যেন সূবর্ণলতা যে এতাঁদন টের পায় নিন আঁম্বকার ঘরের সেলফে চারটি 
মলাট-ছেশ্ড়া সেলাই-টিলে পারকা আছে, সেটা আঁম্বকারই নুঁটি। সেই 
অপ্রাতভ অপ্রাতভ মুখে বলে, 'আমারই উচিত ছিল আপনাকে দিয়ে আসা-' 

সুবর্ণলতা সরল আনন্দে হেসে ওঠে। | 

ওমা! তুমি কী করে জানবে যে তোমাদের মেজবোৌঁদ এমন বই-হ্যাংলা! 
কিন্তু তাতো হলো, যার জন্যে এলাম তার কি! তোমার পদ্যের খাতা 
কোথায় ১ 

'কশ মুশাকল! বললাম তো. খাতাটাতা নেই, কদাচ কখনো প্রাণে জাগলো 
কিছু, হাতের কাছে যা পেলাম তাতেই লিখলাম, তারপর কোথায় হাঁরয়ে 
গেল!” 

'কখনো না, তুমি ঠকাচ্ছ।" 

'আরে না, বিশ্বাস করুন ।' 

অম্বিকা হাসে. 'এই যে তার সাক্ষী, 

হঠাৎ বালিশের তলা থেকে টেনে বার করে কয়েক টুকরো বালির কাগজ। 

হেসে হেসে বলে, “কাল রান্রে হচ্ছিল খানিকটা কাঁবত্ব।” 

'কই দেখি দোখ-” 

সুবর্ণ পুলাকত মুখে হাত পাতে। 

আঁম্বুকা চৌকির ওপর রাখে। 

হেসে বলে, 'যা হস্তাক্ষর তার ওপর আবার কাটাকাটি, 

সুবর্ণ অবশ্য ততক্ষণে টেনে নিয়ে দেখেছে এবং হস্তাক্ষর সম্পকো যে 
আম্বকা “আঁতি বিনয়” করেনি তা অন্ভব করেছে । তাই কুণ্ঠিত হাস্যে বলে, 

'বেশ, তবে তুমিই পড়।' 

সবর্ণলতা অবোধ বোৌঁক। 
প্রস্তাবটা যে অশোভন, অসামাজিক, এ জ্ঞান হয় না কেন তার? হলেই 

বা পাঁচটা ছেলে-মেয়ের মা, তবু বয়েস যে তার আজো ব্রিশেও পেশছয় নি? এ 
খেয়াল নেই ১ একটা সম্পূর্ণ অনাত্সীয় যুবাপুর্ষের একক গৃহে এসে বসে 
তার মুখে কাবতা শুনতে চাওয়ার কথা উচ্চারণ করলো সে কী বলে? 

আর আঁম্বকা! 
সেও ক বাংলার গ্রামের ছেলে নয় ? 
হয়তো এ একটা নতুন উত্তেজনা বলেই লোভটা সামলাতে পারছে না। তা 


মুবর্ণলতা ১৭১৯ 


লোভই। লেখে সে ছেলেবেলা থেকেই, কিন্তু তার কাঁবতা সম্পর্কে কে কবে 
আগ্রহ দেখিয়েছে! কে কবে এমন আলোভরা উতস্‌ক মুখ নিয়ে তাকিয়ে থেকেছে 
“শোনাও' বলে! 

তাছাড়া আর পাঁচজনের থেকে তফাত বোক অম্বিকা। তার পাঁরমণ্ডলে 
একটা নির্মল পবিব্রতা, তার অন্তরে একটা অসত্কোচ সরলতা । তার কাছ 
সুবালা এবং সূবর্ণলতা একই পর্যায়ের গুরুজন। সুবালার প্রাতও তার যেমন 
একটি সম্রদ্ধ ভালবাসা, সুবর্ণর প্রাতও তেম্মান একাঁট সম্রদ্ধ প্রণীত। 

তাই' সেই খুচরো কাগজ কটা গুছিয়ে নিতে 'নিতে হেসে বলে, শুনে 
বুঝবেন বৃথা সময় নম্ট। এটা হচ্ছে দেশের এখনকার এই পারাস্থাতি নিয়ে 

মা! ভানু ডেকে ওঠে। “আমি যাই!, 

সুবর্ণলতা চমকে ওঠে। 

ভানু যে এখনো এখানেই ছিল তা খেয়ালই ছিল না। বই দেখেই পাগল 
হয়ে গিয়েছিল। * 

এখন ঈষৎ চণ্চল হয়ে বলে, “কেন, চলে যাবি কেন ? আঁম্বকাকাকার লেখা 
পদ্য শোন না! 

পিদ্য' সম্বন্ধে ভানু ষে বিশেষ উৎসাহ+, ভানূর মুখ দেখে তা মনে হল 
না। বললো, “আমাকে শুরা দোঁর করতে বারণ করেছে ।' 

রেটিনা রাজ রদ রারান 

এমান। 

হঠাৎ সুবর্ণলতা ছেলের ভাঁবষ্যং-চন্তায় তৎপর হয়। “লেখাপড়া তো সব 
শশকেয় উঠেছে, কর এবার! এরপর যেতে হবে না ইস্কুলে ? 

আম্বকা হেসে ওঠে, 'না, আপান বড় সাংঘাতিক! একে বেচারাকে জোর 
করে কাবিতা গেলাবার প্রস্তাব, তার উপর আবার পড়ার কথা মনে পাঁড়য়ে 
দেওয়া। যেতে দন ওকে। চলুন বরং ও-বাঁড় গিয়েই পড়া যাক। আমার 
লাজলজ্জার বালাই নেই। "দাঁবা ছাত ফাটাবো! 

আম্বিকা স্বাভাবক বাঁদ্ধতেই সুবর্ণলতার সঙ্তোচ বোঝে, তাই ও-বাঁড়র 
কথা তোলে । 

কিন্তু স্বর্ণ সহসা লঙ্জায় লাল হয়ে ওঠে। 

ছি ছ, কী মনে করলো আঁম্বকা ঠাকুরপো ! 

মনে করলো তো, সুবর্ণ একা তার ঘরে বসতে ভয় পাচ্ছে, অস্বস্তি 


সবর্ণলতা সেই অস্বাষ্তকে কাটালো। 

সুবর্ণলতা দঢ় হলো । 

বলে উঠল, “না না. আবার এখন এ-বাড়ি ও-বাঁড়। পড় তৃমি।...এই 
মুখ্যটা, যা তুই+ পাস জিজ্ঞেস করলে বালস, আমি এখানে আছ।' 


সুবর্ণ বলোছল, বাঁলস আমি এখানেই আঁছ। কিন্তু সাত্যই কি তা 
সে? 

না. আর এক জগতে এসে পড়েছিল! 

তা মুখ দেখে তাই মনে, হাচ্ছিল বটে। 


টি সবর্ণলতা 
'আর এক জগতের--! | 


আঁম্বকা পড়ছিল। 
"ওই শোনো শোনো সাড়া জাঁগয়াছে 
কালের ঘার্ণপথে__ 
ভাঙনের গান গেয়ে ছুটে আয 
মরণের জয়রথে। 
ওই দেখ, কারা আসে দলে দলে, 


অরেশে প্রাণ করে বলিদান 
হোমের আহ্ৃতি হতে। 
তাই দ্বারে দ্বারে ডাক 'দিয়ে যাই 
চল চল ছুটে চল-_ 
কে ওরা ভাঙিছে বাঁন্দনী মা'র 
চরণের শঞঙ্খল। 
ওদের সঙ্গে দে মিলায়ে হাত, 
বৃথা পশ্চাতে কর আীখপাত, 
বাঁধবে কি তোরে শিশুর হাসা, 
প্রয়ার অশ্রুজল ? 
এখনো না যাঁদ ভাঙতে পারিস-”+' 
পড়তে পড়তে থেমে যায় আম্বকা। কুণ্ঠা-কুণ্ঠা হাঁস হেসে বলে, দূর, 
নিশ্যয় আপনার ভাল লাগছে না-, 
ভাল লাগছে না! 
সৃবর্ণ উত্তোজত গলায় বলে, ভাল লাগছে না মানে? কে বলেছে ভাল 
লাগছে না? পড়ো--পড়ে যাও। যে জাইনটা পড়লে, আবার ওইটা থেকে পড়ে 
যাও। 
আম্বকার অস্বাস্ত হচ্ছিল। 
সে। অনাত্মীয় তো দূরের কথা, নিকট-আত্মীয় পুরুষের ঘরেও এমন একা 
বসে গঞ্প করলে যে মেয়ের ভাগ্যে ভর্ঘসনা জোটে, তার নামে 'নিন্দে রটে, তা 
তার জানা। 
তার ওপর আবার কাবিতা শোনা! 
তবু স্বর্ণর এ আবেগ-আঁবজ্ট ভাল লাগার মুখটা বেশ একটা নতুন 
আনন্দের স্বাদ এনে দিচ্ছে। সাঁত্য এমন করে এমন একটা আগ্রহ-উৎসূক 
মনের সামনে কবে আঁম্বকা নিজের লেখা কাঁকতা আবাঁস্ত করতে পেরেছে ? _ 
তাছাড়া অস্বস্তি যেমন ওদিকে, তেমাঁন এদকেও। আঁম্বকার অস্বস্তি 
ভাবটা যাঁদ মেজবৌ'দির চোখে ধরা পড়ে যায়! তাতেও লজ্জার সীমা নেই। 
উনি স্পীলোক হয়ে সাহস করে বসে রইলেন, আর আঁম্বকা-_ 
দূর, উাঁন কত বড় গর্জন, গুর কাছে আবার-__ 
অতএব আবার গলা ঝেড়ে শুরু করে দেয় অম্বিকা, 
“এখনো না যাঁদ ভাঙিতে পারিস, 
কখনো কি হবে আর 2 


সৃবর্ণলতা ূ ১৮১ 


লৌহনিগড় গাঁড়বে আবার 

প্রবলের অনাচার। 
মরণকুন্ডে ঝাঁপ দিতে এসে, 
মতশিরে কি করে ফিরে যাব শেষে? 
মস্তকে বাহ কাঁটার মুকুট 

ললাটে অন্ধকার! 
ব*বজগৎ টিটকাঁর দেবে 

ধক্কৃত উপহাসে, 
যান্ট-আহত পশুর সমান 


দিয়ে যাব এই কলঙ্ক-জের__ 
এই সেরেছে! 
আঁম্বকা হাতের কাগজগুলে উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে । বিপন্নমূখে বলে, 
'এর ৫ পৃজ্ঠাটা আবার কোথায় গেল 2? 
€ 1? 


সুবর্ণ চমকে ওঠে। 

আশাভঞ্গের উত্তেজনায় বলে, শক করে রাখো কাগজপন্র! কি করলে ছাই! 
রয়েছে তো কাগজ তোমার হাতে” 

আম্বকা অপ্রাতিভ মুখে বলে, এটা শেষ পজ্ঠা। মাঝখানটা একটা টুকরো 
কাগজে 'ছিল-_+ 

আশ্চর্য! সূবর্ণর মনে আসে না, সুবর্ণ আঁম্বকার আঁভভাবক নয়। 
মনে আসে না, ওকে 'িতরস্কার করবার তার আঁধকার আছে কিনা । প্রায় আঁভ- 
ভাবকের ভঙ্গীতেই র্লুদ্ধ তিরস্কার করে ওঠে, ধাঁন্য ছেলে! অমন ভাল 
[জানিসটা হাঁরয়ে ফেললে ?, 

আম্বকা অপরাধী-অপরাধাী ভাবে বালিশের তলায় হাত বুলোয়, তোষক 
উল্টে দেখে। সুনর্ণও চৌকির তলায় উপক মারে হেণ্ট হয়ে, তারপর বিফল- 
মনোরথ হয়ে বলে, 'নাঃ! সে নির্ঘাত হাওয়ায় উড়ে বনেজঞ্গলে চলে গেছে। 
মুখস্থ নেই 2, 

আঁম্বকা কুণ্ঠিত হাঁস হাসে, 'নাঃ! এই তো মানত কাল রানে লিখোঁছ-_+ 

যাক গে, শেষটাই পড়। এত ভাল লাগাঁছল ! 

আঁম্বকা আবার পরের পাতাটায় চোখ ফেলে । বোধ কার নিজের ওই 
মুখস্থ না থাকার জন্যে মরমে মরে। সেই কুণ্ঠিত গলাতেই পড়ে দাঁড়য়ে 


'কালিমাথা মূখে পৃথিবীর বৃকে 
গট'কে থেকে কিবা ফল, 
অকারণ শুধু ধৰংস কাঁরতে 


১৮২ সুবর্ণলতা 


শোধ দিবি কিসে বল ? 
নাড়া দিয়ে ভাঙ্‌ পুরনো দেওয়াল, 
কতকাল রবে খাড়া ? 
শাসন রন্ত-ভ্রুকুটির তলে 
মাথা তুলে আজ দাঁড়া! 
বরদাপে যারা করে অন্যায়, 
তারা যেন আজ ভাল জেনে যায়, 
[িষবৃক্ষের উচ্ছেদ লাগ, 
মাঁটিতেও জাগে সাড়া! 
'আম্বিকা ঠাকুরপো ! 
সহসা যেন একটা আর্ত্ধান করে ওঠে সুবর্ণলতা। কী ভাগ্য আম্বকার 
হাতটাই চেপে ধরে নি! 
'অবিম্কা ঠাকুরপো, ওইখানটা আর একবার পড়ো তো-_ 
আম্বকা 'বাস্মত হয়। 
আম্বকা বিচলিত হয়। 
তাকিয়ে দেখে সুবর্ণর মুখে আগুনের আভা, সবর্ণর চোখে জল । 
আশ্চর্য তো! 
মানুষটা এত আবেগপ্রবণ ? 


সুবর্ণর কণ্ঠে অসাহফূতা, 'এ তো শুধু এই পরাধীন দেশের কথাই নয়। 
এ যে আমাদের মতন চিরপরাধীন মেয়েদের কথাও। কী করে লিখলে তুম; 
পড়ো, পড়ো আর একবার-_ 
আম্বকা যেন বিপন্ন গলায় আর একবার পড়ে-_ 
'নাড়া দিয়ে ভাঙ্‌ পুরোনো দেওয়াল-__ 
কতকাল রবে খাড়া ? 
শাসন রন্ত-ভ্রুকাটির তলে 
মাথা তুলে আজ দাঁড়া! 
বীরদাপে যারা করে অন্যায়, 


তারা ষেন আজ-_ 

নাঃ, সবর্ণলতার আজকের দিনটা বাঁঝ একটা অক্ভুত উল্টোপাল্টা "দিয়ে 
গড়া! 

ভালো আর মন্দ! 

আলো আর ছায়া! 

পদ্ম আর পণুক! 

তা নইলে এমন অল্ভূত ঘটনা ঘটে ? 

যখন সৃবর্ণলতা মুগ্ধ বিহবল দৃষ্টিতে তাঁকয়ে আছে একটা পরপুরুষের 
মুখের দিকে, যখন সবর্ণর মুখে আলোর আভাস আর চোখে জল এবং যখন 
এই অনাসষ্টি দূশ্যের ধারে-কাছে কেউ নেই, তখন কিন্য সে দৃশ্যের দর্শক হবার 
জন্যে দরজায় এসে দাঁড়ায় সংবর্ণলতার চিরবাতিকগ্রস্ত স্বামী! যে নাকি 
এযাবংকাল আপন চিত্তের আগুনেই জবলে-পৃড়ে খাক্‌ হলো! 


সূবর্ণলতা ১৮৩ 


সেই জঙলে-পুড়ে-মরা মানুষের সামনে জলন্ত দ্য! 

দরঙ্তায় এসে দাঁড়য়েছে। 

থিয়েটার ঢঙে বলে উঠেছে, 'বাঃ বাঃ কেয়াবাং! এই তো চাই! 

'পুরনো দেওয়াল" অটুট রইল, শবষবক্ষে'র পাতাটি মাত্র খসলো না, 
মাটির সাড়া' মাটির মধ্যেই 'স্থর হয়ে রইল: সুবর্ণ তাড়াতাঁড় মাথার কাপড়টা 
একট. টেনে দিয়ে বলে' উঠলো, “তুমি হঠাৎ ১ চাঁপা ভালো আছে তো 

হশ্া, যে মুহূর্তে আচমকা দরজায় প্রবোধের মূর্তিটা ফুটে উঠৌছল, 
সেই চঁকিত মৃহূর্তট;ঃকুতে চাঁপার কথাটাই মনে এসোছল সুবর্ণলতার। 

হঠাৎ ও কেন এমন বিনা খবরে- 

চাঁপার কোনো রোগবালাই হয় নি তো? 

কিন্তু সেই চাঁকত চিন্তার পরমূহৃতেই দূর হয়ে গেল সে আশক্কা। 
তেমন হলে এ থিয়েটারি ঢঙে 'কেয়াবাংটা হতো না 'নিশ্চয়। এ আর কিছ নয়, 
গোয়েন্দাগার ! 

ঝাঁঝাঁ করে উঠলো মাথা, সারা শরীরের মধ্যে বয়ে গেল' বিদয়তপ্রবাহ, তবু 
ফেটে পড়তে পারা গেল না। সামলে নিতে হলো নিজেকে । মাথায় কাপড় 
ঢ'ন উরীদ্বগন গলায় বলতে হলো, “তম যে হঠাং১ চাঁপা ভালো আছে তো ? 

বিদযপ্রবাহকে সংহত করতে শাল্তক্ষয় হচ্ছে বৌক, তবু উপায় কি? এ 
মভা ভদু উদার ছেলেটার সামনে তো আর সবের্ণ তার স্বামীর স্বরৃপটা 
উদ্‌ঘাঁটিত করতে পারে না, তাদের ভিতরের দাম্পত্য সম্পকে স্বর্প! 

কিন্তু সুবর্ণর শাল্তক্ষয়ে কি রক্ষা হলো কিছ ? 

সূবর্ণর স্বামী কি মহোল্লাসে নিজের গায়ে কাদা মাখল না? নিজের 
মুখে চুন-কালি 2 

মাতে মিশিয়ে দিল না সুবর্ণর সমস্ত সম্ভ্রম 2 দিল। সবর্ণর 
জীবনের সমস্ত দৈন্য উদ্ঘাটিত করে দিল সবর্ণর স্বামী । বলে উঠলো, 
চাঁপা ১ ওসব নাম মনে আছে তোমার এখনো. ১ আশ্চাঁষ্য তো! চাঁপার খবর 
জান না. তবে চাঁপার মা ষে খুব লো আছে, তা প্রত্যক্ষ করাছ। বাঃ! চমতকার! 
সাধে ক আর শাস্তে বলেছে, সাপ আর স্লীলোক এই দুইকে কখনো বিশ্বাস 
করতে নেই । 

সুবর্ণ হঠাৎ অক্ভূত রকমের শান্ত হয়ে যায়। 

শান্ত-শান্ত ভাবেই হেসে ওঠে । হেসে উঠে বলে, শাস্তে বলে বুঝি 2 
দেখছো আম্বকা ঠাকুরপো, আমার স্বামীর কা শাস্রজ্ঞান! তা বলেছ ঠিকই, 
ভালই আছি। খুব ভাল আঁছ। তোমার এই বোনের দেশ থেকে যেতেই ইচ্ছে 
হচ্ছে না-” 

'যেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না।' প্রবোধ নিমপাতা গেলা গলায় বলে. 'তা আঁনচ্ছে 
তো হাবেই, এখানে যখন এত মধ !...কী মশাই, আপাঁনই না আমার বোনাইয়ের 
সেই “দেশোম্ধার”” ভাই? তা দেশোদ্ধারের পথটা দেখছি ভালই বেছে 
নিয়েছেন! নিজনে পরস্ধশর সঙ্গে রসালাপ-_, 

'আঃ মেজদা, ক বলছেন যা তা--” আঁম্বকা যেন ধমক 'দয়ে ওঠে, 'ছোট 
কথা বলবেন না। ছোট কথা আর কারো ক্ষাত করে না, নজেকেই ছোট করে ! 

মেজদা! ধমক! 

প্রবোধ একটু থতমত খায়, কারণ গ্রবোধ এই উল্টো ধমকের জন্যে প্রস্তৃত 


১৮৪ সংবর্ণলত 


ছিল না। তবে থতমত খাওয়াটা তো প্রকাশ করা চলে না, তাই সামলে নেয়। 
তবে গলায় আগের জোর ফোটে না। 

ফিকে ফিকে গলায় বলে, ছোট! হু * আমরা ক্ষ্র মানাষ্য, আমাদের 
আবার ছোট হওয়া ! 

'ক্ষুদ্রই বা ভাববেন কেন নিজেকে 2 আঁম্বকা ধীর গলায় বলে, শনজেকে 
ক্ষুদ্দও ভাবতে নেই, অধমও ভাবতে নেই। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বিকাশ! 

ওঃ; লম্বাচওড়া কথা! উপদেশ! গুরু এসেছেন! প্রবোধ এবার নিজ 
মৃর্তিতে ফেরে। বলে, “ওঃ, িরালায় ঈ*বরসাধনাই হণ্ছিল তা হলে ১ আমি 
এসে ব্যাঘাত ঘটালাম! কী আর বলবো, আপ্পান কুটুমের ছেলে, বোনাইয়ের 
ভাই, আপনার অপমান তার অপমান। তাই পার পেয়ে গেলেন। এ অনা 
কেউ হলে তাকে জাাতিয়ে পিঠের ছাল তুলতাম। আর এই যে বড় সাধের 
“মেজবৌদ”! চল তুমি, তোমাকে আম দেখে 'নাচ্ছ 'গিয়ে। অবাক কাণ্ড! 
একঘর ছেলোপলে, বয়সের গাছপাথর নেই, তব কুবাসনা ঘোচে না? তব, 
ইচ্ছে করে পরপুরুষের দিকে তাকাই 2 যাক্‌, তার জন্যে ভাঁব না। মৈয়ে- 
মানুষকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার জানা আছে। 

অবাক কথা বৌক, তবু সুবর্ণ ফেটে পড়ে না। বরং প্রায় হেসেই বলে, 
'জানো নাক £ তা তবু তো শায়েস্তা করে উঠতে পারলে না আজ অবাঁধা। 
নাও চলো, এখন দেখ শায়েস্তা করে শূলে দেবে 1ক ফাঁস দেবে! এই ভাল- 
মানুষ ছেলেটাকে আর ভয় পাইয়ে দেব না বাপু, পালাইী।.. ,আম্বকা ঠাকুরপো, 
ওই পদ্যটা কিন্তু আমার চাই ভাই। একটু কষ্ট করে ওর একটা নকল করে 
দিও আমায়।' 

তা প্রবোধ দেবতা নয়! 

রন্তমাংসের মানুষ সে। 

অতএব গোড়ার জিনিস এ রন্তটাই তার টগবাঁগয়ে ফুটে ওঠে স্মীর এ 
প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গের দাহে। 

সুবর্ণ যাঁদ ভয় পেত, যাঁদ গুটিয়েসাটিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বোঁরয়ে 
আসতো, আর এ পাজী লব্ধা ছেলেটা যাঁদ প্রবোধকে দেখে বেত-খাওয়া-কুকুরের 
মত ঘাড় নিচু করে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতো, তা হলে হয়তো প্রবোধ এত ফেটে 
পড়তো না। 

শকন্তু সেই স্বাভাঁবকটা হলো না। 

হলো একটা অভাবিত 'বিপরণীত। 

ছোঁড়াটা এলো বড় বড় কথা কয়ে উপদেশ দিতে, আর সবর্ণ কিনা 
স্বামকেই ব্যঙ্গ করলো! 

অতএব প্রবোধও ফেটে পড়লো । 

উগ্ম্যার্ততে বলে উঠলো, 'শূল কেন, ফাঁস কেন? পায়ে জুতো নেই 
আমার ? জৃতিয়ে মুখ 'ছ'ড়ে না দেওয়া পর্যন্ত তোমার মতন বেহায়া মেরে 
মানুষের মুখ বন্ধ করা যাবে না! বোরয়ে এসো! বোরয়ে এসো বলাছ! 
এতাঁদন পরে স্বামী এলো, ধড়ফাঁড়য়ে উঠে আসবে, তা না, পরপুরুষের 
ণবছানায় বসে বসে স্বামীকে মস্করা! আর তুমি শালা-_; 

তা অনেক সামলেছে নিজেকে প্রবোধ। সমর চুলের মৃঠি ধরে নি, এব! 
শালা শব্দটা উচ্চারণ করেই থেমে গেছে। 


গুর্ণলতা ১৮৫ 


সুবর্ণ এবার উঠে আসে। 

কেমন একটা আঁবিচাঁলত ভাবেই আসে। 

আর সব চেয়ে আশ্চর্য, এর পরও সেই পরপুরুষের সঙ্গে কথা কয়। বলে, 
শমথ্যে তোমরা দেশ উদ্ধারের স্বপ্প দেখছো আম্বকা ঠাকুরপো। দেশকে আগে 
পাপমুস্ত করবার চেষ্টা করো ।...এই মেয়েমানূষ জাতটাকে যতাঁদন না এই 
অপমানের নরককুস্ডু থেকে উদ্ধার করতে পারবে, ততদিন সব চেষ্টাই ভস্মে ঘি 
ঢালা হবে। 

প্রবোধের সঙ্গে এসেছিল সুবালার ছোট ছেলেটা । তাকেই বলোছল 
সবালা, 'এই যা যা, ছুটে যা, তোর মেজমামীকে ডেকে নিয়ে আয়, আম্বিকা 
কাকার বাঁড়তে আছে বোধ হয়।, 

প্রবোধ সেই' মাত্র খুলে রাখা জুতোটা আবার পায়ে গাঁলয়ে বলোৌছল, চল 
আমিও যাচ্ছ! 

সবালা প্রমাদ গনোছিল। 

সৃবালা তার মেজদাকে অনেকাঁদন না দেখলেও একেবারে চেনে না তা 
তো নয়! তাই বলে উঠোছল. তুমি আবার কি করতে যাবে গো 2 এই তেতে- 
পুড়ে এলে. তুমি বোসো, হাতমূখ ধোও, ও যাবে আর আস্বে! তৃঁম ততক্ষণ 
একট; 'িছারর পানা খাও-_, 

প্রবোধ বোনের এই' সহদয় আতথ্যের আহবানে কর্ণপাত করে ?ীন। গট 
গট করে এগিয়ে গিয়েছিল ছেলেটাকে চল বলে একটা হূমাক 'দিয়ে। 

সুবালা কিংকর্তব্যাবমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, মেজদার ছু পিছ; গেলে 
যে ভাল হতো, সেটা তখন মনে পড়ে নি তার। 

মনে পাঁড়য়ে দিলেন ফুলেশবরী। বললেন, 'তুঁমিও গেলে পারতে বৌমা, 
মনে হচ্ছে মেজ ছেলে একট রাগী মানুষ-_' 

একটু রাগ 2 সুবালাও রেগে ওঠে, বলে, “'আজন্মের গোঁয়ার ! বোটাকে 
কি তিলার্ধ স্বস্তি দেয়! রাতাঁদন সন্দেহ, ওই বুঝি বৌ মন্দ হলো! তার 
ওপর আবার-মেজবৌই বা মরতে একা মেয়েমানষ পদ্য শুনতে ওর ঘরে গেল 
কেন ছাই, তাও জানি না। 

পদ্য শুনতে! 

'হ্যাঁগো. বললো তো তাই কানু। “মা আঁম্বকা কাকার বাঁড় আছে পাস, 

পদ্য শুনবে!" পদ্যটদা লেখে তো তাকুরপো” আর মেজবৌও তেমান পাগল! 
৪৭৮৮০ ি//+০ 

ফুলেশবরী আস্তে বলেন, 'সংসারে এই পাগলদেরই সবচেয়ে বপদ 
বৌমা! সুবর্ণর মতন মেয়ে সংসারে দুর্লভ । কিন্তু সবাই তো ওকে বুঝবে 
না। একা বেটাছেলের বাড়তে ঘেতে 'খনন্দে, এ বোধই নেই ওর, গঙ্গাজলে 
ধোওয়া মন ওর ।, 

'তা তো ধোওয়া! এখন জান ন্য কি খোয়ার হয়। যা আগুন হয়ে গেল 
মেজদা !, 

'তাতেই বলাছলাম, তুমি সঙ্গে গেলে পারতে ! 

'তাই দেখাছ। কিন্তু এখন আবার গেলে-” 

'তা হোক বৌমা, তুমি যাও। রাগের মাথায় যদি ছেলে সবর্ণকে একটা 
চড়া কথা বলে বসেন, ভারী লজ্জার কথা হবে। অম্বু আমাদের আপন, ওদের 


৯৮৬ সবর্ণলতা 


তো কুটুম! 

'তবে যাই। উনূনে যে আবার দুধ বসানো।' 

'দুধ আমি দেখাঁছ। তুমি বাও। আমার মন নিচ্ছে দাদা তোমার বকাবকি 
করবে।' 

সবালা অতএব দাওয়া থেকে নামে। 

আর মনে মনে ভাবে, মেজদার এই দূম্‌ করে আসাটাই ফন্দির। জানি 
তো সন্দেহবাতিক মানুষ। আর মজা দেখ, কোনাঁদন মেজবৌয়ের এ খেয়াল 
হয় না, মরতে ছাই আজই! মেজদাকে বাঁলহারি! অমন পারবার, মর্ম বুঝল 
না। বুঝবে কি, 'মর্ম বস্তু নিজের থাকলে তো! 

দ্রুত এগোতে থাকে সৃবালা। 

হয়তো সুবালা ঠিক সময় পেশছতে পারলে ব্যাপার “সমে' আসতো । 
হয়তো সুবালাই গিয়ে বলে উঠতো--কাঁ জালা! মেজবৌ' তুই এখানে বসে 
বসে পদ্য শুনাছস? আর মেজদা যে হাদকে মন-কেমনের জবলায় ছুটেপুটে 
চজে এসে তোকে না দেখে বিশবভুবন অন্ধকার দেখছে!" 

হয়তো 'যা হোক' করে কেটে যেত ফাঁড়া। 

কিন্তু কাটবার নয়, তাই কাটল না! 

সুবালা বৌরয়ে দু'পা যেতেই -"র রাখালটা কাঁদো কাঁদো হয়ে ধরলো, 
“অ মা, মুধীলর বাছুরটা পেলে গেছে-- 

“পালিয়ে গেছে! 
টি গো মা! ক্যাতো খৃ'্জনু - বলে বিবরণ দিতে বসে তার খোঁজা 

ন। 

'আচ্ছা তুই দাঁড়া, আম আসাছ--", বলে সুবালা এগিয়ে যায়, কিন্তু যখন 
পেশছয়, তখন তার মেজদা শেষ বাণণ উচ্চারণ করছে । 

জুতিয়ে মুখ ছিড়ে না দলে ষে মেয়েমানূষ শায়েস্তা হয় না, সেই আঁভমত 
ব্ন্ত করছে। 

স্‌বালার সর্বাঙ্গ দিয়ে ঘাম ঝরে যায়। 

সবালা মরমে মরে যায়। 

অহ্বিকা ঠাকুরপোর সামনে এইসব কথা! তা-ও সুবালারই দাদার মুখ 
থেকে! নিরুপায় একটা আক্ষেপে হঠাৎ চোখে জল আসে তার। যেমন 
এসেছিল তেমান দ্ুতপায়ে ফিরে যায়! 

সুবর্ণলতা টের পায় না, তার এই অপমানের আরো একজন সাক্ষী রয়ে 
গেল। 


কিন্তু অত অপমানের পর আবার সুবর্ণ সেই স্বামীর পিছ পিছ সেই 
স্বামীর ঘরে ফিরে গেল ? 
সুবর্ণলতা না সত্যবতার মেয়ে ? 


২২ ॥ 


তাই তো! সুবর্ণলতা না সত্যবতীর মেয়ে! যে সত্যবতা স্বামীর কাছ থেকে 
আঘাত পেয়ে এক কথায় স্বামী-সংসার ত্যাগ করে গিয়ে- 
ছিল আর ফেরে নি! 

মায়ের সেই তেজের কণিকামান্র পায় নি সবর্ণলতা ? 

সত্যবতাঁ তার মেয়ের এই অধোগাঁত দেখে ধিক্কার 
দেবে না? বলবে না, "ছ+ ছি, সুবর্ণ তুই এই!" 

সে ধিক্কারের সামনে তো চুপ করে থাকতে হবে 
সুবর্ণকে মাথা হেট করে! 

নাকি করবে না মাথা হেপ্ট ? 

মুখ তুলেই তাকাবে মায়ের দিকে? 

বলবে" 'মা, তোমার অবস্থার আর আমার অবস্থায়? সেখানে ষে আকাশ- 
পাতাল তফাৎ!" 

তা বলতে যাঁদ পারে সুবর্ণ, বলতে যাঁদ পায়, মিথ্যা বলা হবে না। আকাশ- 
পাতালই। স্‌বর্ণর মা'র জীবনের পচ্ঠপটে ছিল এক অতাজ্জবল সর্মজ্যোত, 
সত্যবতীর বাবা সতাবতীর জীবনের ধ্রুবতারা, সত্যবতীন জীবনের বনেদ, 
সত্যবতাঁর মেরুদণ্ডের শন্ত। 

সুবর্ণর পৃঞ্ঠপটে শুধু এক টুকরো বিবর্ণ ধৃূসরতা। সুবর্ণর কাছে 
বাবার স্মাতি--বাবা. প্রতারণা করে তার বিয়ে ঘাঁটয়ে জীবনটাকে ধৰংস করে 
দিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছে। 

সূবর্ণর বাবা সবর্ণর ভাগ্যের শান! 

আর স্বামীভাগ্য ? 

সেও কি কম তফাৎ ? 

সতাবতীর স্বামী অসার অপদার্থ ছল কিন্তু অসভ্য অশ্লীল ছল না। 
সত্যবতাঁর অযোগ্য হতে পারে, তবে সে অত্যাচারী নয়। কিন্তু সবর্ণলতার 
ভাগো তো মানত ওই দ্বিতীয় বিশেষণগৃ্লোই । আজনবন সুবর্ণকে একটা অসভা, 
অধ্লীল আর অত্যাচারীর ঘর করতে হচ্ছে! 

ত্যাগ করে চলে যাবে কখন ? 

সোজা হয়ে দাঁড়াতে শেখবার আগেই তো ঘাড়ে পিঠে পাহাড়ের বোঝা 
উঠেছে জমে। ওই বোঝার ভার নামিয়ে রেখে চলে যাবে সুবর্ণ তার সন্তানদের 
লিজার হারার হয়তো আরো কালিমাখা হবে সে 

| 

সুবর্ণ তাই তার মা'র সামনে মুখ তুলে বলতে পারবে, 'মা. তোমার মেয়ে 
তোমার মত নিষ্ঠুর হতে পারে নি, এই তার ঘটি! তোমার মত হালকা ছোট্র 
সংসার পায় নি, এই তার দুর্ভাগ্য! 
পতাকাতলে দাঁড়িয়ে ১ ধিক্কার তুম দিতে এসো না মা, শুধু এইটুকু ভেবো, 
সকলের জশবন সমান নয়, সবাইকে একই মাপকাঁঠিতে মেপে বিচার করা যায় 
না! যাকে বিচার করতে বসবে, আগে তার পাঁরবেশের দিকে তাকিও! 





সুবর্ণর পারবেশ সুবর্ণকে অসম্মানের পাঁকেই পু'তে রেখেছে, সুবর্ণ 
আবার এইট:কু অসম্মানে করবে কি? 

আর স্‌বর্ণর দেহকোটরে এখনো না শতুর বাসা! তাকে বহন করে দিয়ে 
যাবে কোন্‌ মমান্তর মান্দরপথে ? 

সূবণকে অতএব সেই পথেই নেমে যেতে হবে, যে পথের শেষে কি আছে 
সুবর্ণ জানে না, পথটা অন্ধকারে ভরা এই জানে শুধু 

কিছু স্বর্গ হয়তো একাঁদন তার সন্তানের মধ্যে সার্থক হবে। মাথা 
তুলে দাঁড়াবে পাঁথবীর সামনে । সেই স্বপ্লই দেখে স্বর্ণ। সেই ভাবষ্যতের 
ছবিতেই রং দেয়।... 

এখন অতএব আর ফিছু করার নেই সুবর্ণর, তার স্বামীর পিছ পিছ, 
চলে যাওয়া ছাড়া! 


ফুলেশবরী ন্যাড়া মাথাটায় ঘোমটা টানেন। 

ফুলেশবরণী অবাক গলায় কুট্মের ছেলেকে সম্বোধন করে বলেন, 'সে কি 
বাবাঃ? এই এসে এই চলে যাবে 2 বোনের বাঁড় এসেছ, একঢ। বেলাও 
তো থেকে যাবে 2 

প্রবোধচন্দু গম্ভীর গলায় বলে, ধাকবার জো থাকলে থাকা যেত, সময়ের 
ভাব।' 

'আহা” আসছে কাল তো ছাাঁটর বার_ 

'অন্য কাজ আছে। 

নীরস গলায় বলে কথাটা প্রনোধ, 'মাউইমা'র অনুরোধের সম্মান রাখবে 
এমন মনে হয় না। 

কিন্তু ফুলেশ্বরী তবু অনুরোধ করেন। 

কারণ ফুলে*বরীর বৌ তাঁর শরণ 'নয়েছে। বলেছে, 'মা, যা মুখ করে বসে 
আছে মেজদা, দেখেই তো পেটের মধ্যে হাত-পা সেশধয়ে যাচ্ছে। আপাঁন একট; 
বলুন। আপনার কথা ঠেলতে পারবে না। আহা, অকস্মাং এমন দুম করে 
নয়ে যাবে, পোয়াতি বৌটাকে একট; মাছ-ভাত মুখে না দিয়ে পাঠাবো কোন্‌ 
প্রাণে 2, 

ফুলেম্বরী তাই আপ্রাণ করেন। 

বলেন, 'বুঝলাম কাজ আছে, কিন্তু যো-সো করে সামলে নিও বাবা। 
পুরুষ ছেলে, তোমাদের অসাধ্য ক আছে ? মেজো মেয়ে এই অবস্থায় যাত্রা 
করবে, একটু মাছ-ভাত মূখে না নিয়ে যেতে দিই কি করে? আম তোমার 
হাতে ধরে অনুরোধ করাছ বাবা. 

কিন্তু প্রবোধের ক এখন ওই সব তুচ্ছ ভাবপ্রবণতার মানরক্ষা করার মত 
মানাসক অবস্থা 2 

মাথার মধ্যে রন্তু তার টগবগ করে ফুটছে নাঃ সেই উপ্তাপকে প্রশ্শামত 
করে সে এই পাপ-পুরীতে রান্রিবাস করবে? গাুঁছয়ে-গাঁছয়ে বোনাইয়ের 
পুকুরের মাছের ঝোল খেয়ে তবে যাত্রা করাবে? এই দণ্ডে সুবর্ণকে কোনো 
একটা নির্জন জায়গায় ঠেলে নিয়ে গিয়ে মেরে পাট করে দিতে ইচ্ছে করছে 
না? 

বোন! 


গুবর্ণলতা ১৮৯ 


বোনের বাড়তে বিশ্বাস করে পাঁরবার রেখে শিয়োছলাম, বোন সে 
বি*বাসের মান রেখেছে যে! কেন, চোখে চোখে রাখতে পারে নি শাসন 
করতে পারে নি2 বলতে পারে নি, 'বেচাল কোরো না মেজবৌ'?' 

তা নয়, সোহাগের দ্যাওরের সঙ্গে মাখামাঁথ করতে ছেড়ে দিয়েছেন! 

সেই বোনের মান রাখতে যাব আম! 

অতএব প্রবোধকে বলতেই হয়, 'বৃথা উপরোধ করছেন. আজ না গেলেই 
নয়।' 

এবার অমূল্য গলা বাড়ায়। 

বলে. 'তা কাজটা যখন এত জরুরী, সেরে নিয়ে দাদন বাদে এলে তো 
ভালো হতো মেজদা ।, 

মেজদা ভুরু কুচকে নেপথ্যবার্তনীর উদ্দেশে একাঁট কড়া দাষ্ট হেনে 
মিসির নানার চদা হিরা রিতা 

অমূল্য অত বোঝে না। বলে ফেলে, 'সাঁত্যি, সেটাই ভালো ছিল মেজদা । 
এমন হঠাং এদের ষাবার তো কোনো কথা ছিল না-, 

কথা ছিল না! 

আইন দেখাতে এসেছ! 

ফুটন্ত রন্তু উছলে ওঠে” 'বরাবর তোমার বাড়তে থেকে যাবে, এমন কথাও 
ছিল না নিশ্চয়;ঃ আমার পরিবার, তার ওপর আমার জোর চলবে নাঃ 

হঠাৎ নেপথ্যবার্তনী বোরয়ে আসে, বলে ওঠে, চলবে না কি বল 
একশোবার চলেব। ইচ্ছে হলে কোমরে দাঁড় বে'ধে কাঁটাবন 'দয়ে 'হপ্চড়ে 'নয়ে 
যাওয়াও চলবে ।...যান্ার আয়োজন করে দন আপাঁন ঠাকুরজামাই। গরুর 
গাঁড়কে তো বলে পাঠাতে হবে !...ঠাকুরঝি, তুমি মনখারাপ করো না। :'ন্দকে 
আমার আর তাতে রুচি নেই ভাই। মুখ ফুটে বললামই সে কথা! 

সৃবালা মনে মনে শিউরে উঠে বলে, দুর্গা দুর্গা! অমূল্যও বোধ কার 
বিচালত হয় এবং অমূল্যর মেজ শালা হঠাৎ গগনাঁবদারী চীৎকারে বলে ওঠে, 
'ধুনলে১ শুনলে তো? নিজ কর্ণে শুনলে তো? এই মেয়েমানূষকেও 
সতী বলে বিশ্বাস করতে হবে! তোমরা কি বল? মেয়েমানুষ স্বামীর 
অকল্যাণ চায়, তার রীত-চাঁরাত্তর ভাল, একথা বল তোমরা ?" 


কেউ আর কিছ বলে না। 

গরুর গাঁড় আসে। 

ছেলেমেয়েগুলো কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে ওঠে সে গাড়িতে। বড় আশা ছিল 
তাদের, আরো কিছুদিন থাকবে । কত সন্দর করে আজই তারা ইস্ট সাজিয়ে 
পাকা বাঁড় তোর করেছিল, সব গেল ঘূচে। 

সৃখ বস্তুটা তা হলে জলের আলপনা ; আত সুন্দর নক্সা নিয়ে ফুটে 
উঠেই মৃহূর্তে 'মাঁলয়ে যায় ? 

আনন্দ কি বস্তু, স্বাধীনতা কাকে বলে, ভারহাঁন মন কেমন জানিস, 
এখানে আস্বাদ পেয়োছিল তারা । কিন্তু কাঁদনই বাঃ ধঁশকারণ ঈগলপাখার 
গল্পের সেই ঈগলটার মতই যেন বাবা ঠকাস করে এসে নামলো আর ছোঁ মেরে 


১৯০ সবর্ণলতা 


নিয়ে গেল! 

কান, ভান আর চন্নন ওরই মধ্যে যতটা পারলো সংগ্রহ করে নিল-বষা 
পেয়ারা, কাঁচা কুল, টক বালতি আমড়া, ইত্যাঁদ। তা ছাড়াও থোড়, করমচা, 
গাব, মাদার পর্য্ত অনেক কিছুই জমে উঠলো তাদের সণয়ের ঘরে। 

তা জমে উঠতে উঠতেই তো জীবনের জমা-খরচ ! 

শুধুই ক জমে ওঠে ঘ্‌ণা ধিক্কার অসন্তোষ 2 জমে ওঠে না ভালবাসার 
সণয়, কৃতজ্ঞতার সণ্চয়, শ্রদ্ধার সঞ্চয় 2 

না জমলে পৃথিবীর ভারসামা রক্ষা হচ্ছে কি করে১ নিজের কেন্দে পাক 
পি খেতে এই যে তার অনন্তকালের পাঁরক্রমা, এ তো কেবলমান্র ভারসামোর 

পর! 

তাই স্বর্ণলতার শুকিয়ে ওঠা স্নায়ীশরার আবরণের মধ্য কাঠ হয়ে 
থাকা আগুনের ডেলার মত চোখ দুটো দিয়েও জল ঝরে পড়ে। 

বারে বারে পড়ে । 

সুবালা যখন আলতা পাঁরয়ে দিতে দিতে অনবরত হাটিঃতে মুখ ঘষটে 
চোখ মোছে তখন পড়ে, সুবালার ছেলেরা যখন সবর্ণর ছেলেদের জন্যে এক 
চুপাঁড় সেই ওদের মাঁটর ইট এনে রেখে যায় সুবর্ণর তোরত্গের কাছে তখন 
পড়ে, আর উথলে উপচে শতধারে পড়ে, যখন ফূলেশ্বরী তাঁর সুদূর 
ভাঁবষ্যতের প্রপৌন্রের উদ্দেশে রাঁচিত বহু পাঁরশ্রমসঞ্জাত আর বহু কারুকার্য- 
খাঁচিত কাঁথাখানি ভাঁজ করে এনে বলেন, 'শজানসের মতন জিনিস একট: হাতে 
করে দেবার ভাগ্য তো কাঁর নন মেজমেয়ে, একখান লালপেড়ে কোরা শাঁড় এনে 
দেবার সময়ও দিলেন না ছেলে । এইখানি রাখো, যে মানাষ্যটুকু আমার সংসারে 
কাদন বাস করে গেল অথচ কিছু দেখল না জানল না, তার জন্যে ঠাকুমার 
হাতের এই 'চহনটুকু-” 

তখন! 

তখন চোখের জলে পাঁথবী ঝাপ্‌্সা হয়ে গেল সুবর্ণর। 

সুবর্ণর মুখ ?দিয়ে কথা বেরোল না, সুবর্ণ শুধু সেই অমূল্য উপহারখান 
হাতে নিয়ে মাথায় ঠেকালো।... 


সুবর্ণর চোখে এত জল! 

সুবর্ণ আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মত যাযাকালে কেদে ভাসাচ্ছে! 

একট: যেন অপ্রাতভ হলো প্রবোধ, একটু যেন 'বাস্মত। যান্রাকালে তাই 
বোঁশ শোরগোল তুলল না, আর গরুর গাড়িতে ওঠার পর অমূল্য যখন বিরাট 
একটা বোঝা এনে চাঁপিয়ে দিল গাঁড়তে, তখনও বিনা প্রাতবাদে নল সেই ভার। 

আরও একবার চোখের জল! 

সুবর্ণ সেই বোবঝাটার দিকে তাকালো । স্বর্ণ মৃহ্‌তখানেক স্তব্ধ হয়ে 
রইল। *সববর্ণর চোখ দিয়ে আস্তে আস্তে বড় বড় মৃস্তোর মত কয়েকটি ফোটা 
গড়িয়ে পড়জো। 

ধুলো মাখা মলাট ছেড়া দাঁড় দিয়ে থাক করে করে বাঁধা একবোঝা 
পুরনো মাঁসকপর। 

শনয়ে এল অমজ্্য। 

বাস্ত ভলাগতে বললো, মেজদা, যদি একটা উপকার কর! বইগুঙ্ো 


পুবর্ণলতা ১৯১ 


কলকাতায় একজনকে দেবার কথা, তো এই সুযোগে তোমার গলায় চাপাচ্ছ, 
যাঁদ নিয়ে যাও__ 

প্রবোধ “আমার দ্বারা হবে না” বলে চেপচয়ে উঠল না। নিমরাঁজর সুরে 
বললো, 'তা আম কাকে দিতে যাবো" 

“আরে না না. তোমায় দিতে যেতে হবে না, সে যখন কলকাতায় যাওয়া- 
টাওয়া হবে, দেখা যাবে । তুম শুধু সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে তোমার ঘরে রেখে 
'দিও।' 

'এত জায়গা কোথায় : ঘর তো বোঝাই--' 

এইটুকু বলে প্রবোধ। 

অমূল্য আরো ব্যস্ততার ভাবে বলে, "চৌকির তলায়টলায় যে করে হোক! 
দেখতেই তো পাচ্ছ দামের 'জাঁনস নয়, তবে জহুরীর কাছে জহরের আদর! 
জায়গা একট; দিও দাদা 

চোখের জল পড়ে পড়ে এক সময় শুকিয়ে যায়, সুবর্ণ তবু 'ার্নমেষে 
সেই 'জহর'গলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। 

আর এক সময় খেয়াল হয় তার, আঁম্বকা নামের সেই উদোমাদা ছেলেটা 
মরল বটে. কিন্তু নির্বোধ নয়! 

কিন্তু এই নির্মল ভালবাসার উপহারগ্ীলর পাঁরবর্তে একটু নির্মল 


প্রণীতর কৃতজ্ঞ হাঁস হাসবার অবকাশও পেল না সংবর্ণ। হয়তো জশবনেও 
পাবে না। 


আগে ইচ্ছে হয়োছিজ, ওদের গ্রামের আওতা থেকে বোরিয়ে একবার রেল- 
গাড়িতে উঠতে পারলে হয়, সুবর্ণকে বুঝিয়ে ছাড়বে মেয়েমানৃষের বাড় বাড়লে 
তার কি দশা হয়। কিন্তু করায়ত্ত করে ফেলার পর সে দুরন্ত দু এনীয় 
ইচ্ছেটা কেমন যেন মিইয়ে গেল। আর বোধ কাঁর ওই গমইয়ে যাবার দর্নই 
হঠাৎ প্রবোধচন্দ্রের একট; 'বিচক্ষণতা এল। 

ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, ওদের সামনে ওদের মাকে বোঁশ লাঞ্থুনা না করাই 
ভালো । 

তবে? 

কাহাতক আর চুপ করে বসে থাকা যায় অপ্রাতভের চেহারা নিয়ে! 

হয়তো প্রবোধের ওই উগ্র মেজাজের গভীরতম মূজ শিকড়ের কারণটা 
এই। চুপ করে থাকলেই নিজেকে ওর কেমন অগ্রাতিভ আর অবান্তর লাগে, 
তাই হয়তো সর্বদাই ওই হাঁকডাকের ঢাকচোল! 

যাতে নিজের কাছেও না গিনজে খেলো হয়ে ষায়। যাতে নিজের ওই 
অবান্তর মৃর্তিটা কারোর চোখে ধরা না পড়ে। 

অতএব চুপ করে বসে থাকা যায় না। 

ছেলেদের সঙ্গেই কথা পাড়ে প্রবোধ। গনীচ্ছর “আকোচ-খাঁকোচ” নিয়ে 
এল যে? গিলাব ওইগুলো 2 

চন্নন তাড়াতাঁড় কোঁচড়ের পেয়ারাগুলো আঁচলে ঢেকে ফেলে বলে, 
সবগুলো খাবো নাকি 2, 

'আহা তা না হোক, 'িছহও যাবে তো! পেটে গেলে রক্ষে থাকবে ? ফেঙ্গে 
দে' ফেলে দে-' 


১৯২ সবর্ণলতা 


বাঃ রে 

চন্ননের স্বর অন্নাসিক হয়ে ওঠে. কত কম্টে গাছ ঠেঙিয়ে নিয়ে 
এলাম-_ 

'আহা কী অমূলা নাঁধ! প্রবোধ আবার কৌতুকরসও পাঁরবেশন করে, 
'অমূল্য ণপসের দেশের অমূল্য বন্তু! 

তারপর ভানু-কানুকেও কিছু উপদেশ দেয়, কিছু জেরা করে। এবং 
একট. পরেই গলাটা ঝেড়ে নেয়। 

সুবর্ণলতা কি বোঝে না কিছু ? 

বোঝে না. ছেলেদের সঙ্গে ওই বৃথা বাক্যব্যয়টা আসলে গোরচীন্দ্রকা! এই 
বার আসল পালা ধরবে! 

কম দিন তো দেখছে না লোকটাকে। 

তা অনুমান মিথ্যা হয় না। 

গোৌরচান্দ্রুক্য শেষ করে মূল পালায় আসে প্রবোধ। 

হাঁসর মত সুরে বলে, 'বাবাঃ, এমন কান্না জূড়লে তুমি, মনে হচ্ছিল যেন 
বাপের বাঁড়র মেয়ে *বশরবাঁড়িতে যাচ্ছে! 

বলা বাহুল্য উত্তর জুটল না । 

৯০৭১০০১২৬৮০ উচিত পে নরক ারেকন 

একট অপেক্ষা করে আবার বলে ওঠে, পক করবো, কাজ বলে কথা! 
মেয়েমান্ষের বোঝবার ক্ষমতাই নাই। তবে এও বাল, বাড়াবাঁড়টা িছই 
ভাজ নয়। জামাই, বেয়াই” ননদাই, এই সব হলো গিয়ে তোমার আসল কুটন্ব, 
তাদের বাঁড় থেকে আসছো। যেন সম্‌দ্দুর বহাচ্ছো। 

তবুও নিরুত্তর থাকে সুবর্ণ । 

ঘুপচাপ বসেই থাকে ছইয়ের মধ্যে আকাশের দিকে চেয়ে। 

প্রবোধ আবার বলে, 'যাই বল, আম একেবারে তাজ্জব বনে গোঁছি! কখনো 
যার চক্ষে জল দৌখাঁন, সেই মেয়েমান্ষ কনা কেদে ভাসালো! 

সুবর্ণ তবু তেমন 'নীর্বকার 'চত্তে বসেই থাকে। 

প্রবোধ এবার একটা নিঃবাস ফেলে। 

আপন মনে বলে, (উঃ, খাট্বীন যে কী জীনস! তা এই' শালাই হাড়ে 
হাড়ে টের পাচ্ছে! 

তবু সুবর্ণ নীরব। 

প্রবোধ এবার আর একটা নিঃ*বাস ফেলে। ক্রিষ্ট-ক্লাম্তর ভূমিকা নেয়। 
বলে, 'কথায় বলে ব্যথার ব্যথী! তা 'খিয়ে করা স্ত্ীই যার ব্যথার ব্যথী নয়, 
তার আবার কিসের ভরসা! এ কথা কারুর একবার মনে এল না যে, _তাই 
তো! লোকটা 'বনা নোঁটসে এমন হুট্‌ করে এল কেন? দোষটাই দেখে 
জগং, কারণটা দেখে না! 

তথাঁপ সুবর্ণর ঘাড় ফেরে না। 

এইবার অতএব শেষ চাল চালে প্রবোধ। 

“মাথাটা যা িপাঁটপ করছে, হাড়ের জবর টেনে না বার করে” 

এইবার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। সুবর্ণ এই ডাহা 'মধ্যেটা বরদাস্ত করতে পারে 
না। বলে ওঠে, শুধু জবর ? জবরাবকার নয় 2 

হয়তো প্রবোধের সাঁষ্ধর মনোভাব দেখে ঘেল্বাতেই বলে। 


সুবর্ণলতা ১৯৩ 


শুধু উদাস উদাস গলায় বলে, প্ুশি? 'কিজান! 'জিানিসটার আস্বাদ 
তো জানলাম না একাল অবাধ! 


২৩ ॥ 


মেয়ে-গাঁড়তে শুধু বৌকেই তুলে দেয় না প্রবোধ, সব ছেলেমেয়ে কটাকেই তুলে 
দেয়। মালপন্র তো বটেই। নিজে হাত-পা ঝেড়ে পাশের 
কামরায় বসে ননে মনে চিন্তা করতে থাকে, কি করে 
আবার অবস্থা আয়ত্তে আনা যাবে! 

নিতান্তই যে হাত পাঁড়য়ে রেধে খাওয়ার এবং 
তৎপরে মামীর বাঁড় গিয়ে গিয়ে খাওয়ার যল্মণাতেই 
বৌকে আনতে গিয়োছল সে, এবং গিয়ে মাত্র দেখতে না 
পেয়ে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল, সেটাই বোঝাতে হবে 
1বশদ ব্যাখ্যায়। ্‌ 

তা ছাড়া শরীর খারাপের ভানও করতে হবে একটু, নচেং যে পাষাণ 
মেয়েমান্য* মন গলবে না! 

আশ্চর্য এই, বৌ ষতই বেচাল করুক আর প্রবোধ তাতে যতই ক্ষেপে যাক, 
শেষ পর্যন্ত নিজেকেই যেন ক্ষ্র' মনে হয়। সুবর্ণকে কিছুতেই সাঁত্য 
'অসতণ মেয়েমানুষ' ভাবা যায় না। ও যেন আপন মাহমায় মাথা খাড়া করে 
দাঁড়য়ে থাকে। তখন নিজেকে সমর্থন করতে, কৌশল করতে বসা ছাড়া আর 
কি করা যায়? 

তা এবার সুবিধে আছে। 

ড়তে কেউ নেই। 

অত বড় বাড়িটায় শুধু তো তারা চার ভাই। আর গগয়ে পড়বে শুধু 
প্রবোধেরই নিজ পাঁরবারটুকু। অতএব__ 

কিন্তু হায় প্রবোধের কপাল! 

একবেলার জন্যে ঘুরে এসে দেখলো কিনা পাঁরাস্থাতি বিপরীত! বাঁড় 
লোকে লোকারণ্য। 

থেকে মুস্তকেশী এসে গেছেন নাতনীকে নিয়ে, বোনের বাঁড় 

থেকে উমাশশ এসে গেছে দশ ছেলেমেয়ে নিয়ে । 

প্রভাসের বৌ এসে গেছে নিজস্ব বাহনী 'নিয়ে। 

তা তার জন্যেই মুন্তকেশীর আসার সীবধে। সে ছিল কাটোয়ায় 'পাসর 
বাঁড়, শাশুড়ী রয়েছেন নবদ্বীপে, এই স্বাবধেয় পাঁসর সঙ্গে গিয়েছিল শ্রীপাট 
নবদ্বীপ দেখতে। মূন্তকেশী এমন সুযোগ ছাড়লেন না, 'ওকে ধরে বসে 
বললেন, 'আর দশর্ঘকাল পরের বাঁড় বসে থেকে কাজ নেই সেজবৌমা, চলো 

১৩ 





১৯৪ সৃবর্ণলতা 


চলে ধাই। রোগবালাই 'কছু গিরকাল থাকছে না। আর সব কথার সার কথা 
“রাখে কেম্ট মারে কে”? 

সেজবৌ সুবর্ণলতা নয়। 

নেবো ডা 
জানাই ছিল মা আপনার, ০০০০৪ 
কেন?, 

বললো না। বলতে জানলেও বলতো না। 

কারণ সেজবোৌও এ প্রস্তাবে বাঁচলো। 

আঁধক 'দিন যে পরের বাড় বাস সৃবিধের নয়, সে কথাটা সেও বুঝে 
ফেলেছে। 

অতএব সেই যান্লাতেই কলকাতার ট্রেনে চেপে বসা! পুরুষ আঁভিভাবক 
রা দরদ বছর ষোলর ছেলেটা, তা হোক, পুরুষ তো 

| 

পাকেচকে অথবা প্রবোধের গ্রহের ফেরে, ক্লূদ্ধ আভমানাহত 'দাঁদর নির্দেশে 
৪৮ সেই দিনই চলে এসেছে 'দাঁদর বাঁড় থেকে। এরা সকালে, ও 


“্প্রীরীত হী িররহরিিসিসনান রিন্ 
গেল প্রবোধের। কাবাডি না এলে দরে জাবের দিনে দিযে বৌকে 
গড়ে ?পিটে নতুনভাবে তৈরি করে নেবার স্বপ্ন গেল ভেঙে। অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ 
করেই মনে মনে সংসার-পাঁরজন সকলের সম্পর্কে একটা কটাক্তি করে বাড 
থেকে বোৌরয়ে গেল সে। 

আর আজ সুবর্ণর মত তারও মনে হল, বাড়তে বড় বোঁশ লোক! এত 
লোকের চাপে সাঁত্যই নিজের আর কিছু খোলে না। অথচ সুবর্ণ যখন দুমদাম 
করে বলে বসে, 'বাবাঃ, এ বাঁড়তে মানুষ আর "মানুষের" বাঁদ্ধ খেলাবে কোথা 
থেকে, বৃথা গজালি করতে করতেই 'দিনরাঁত্তর কেটে যায়, তখন প্রবোধ তাকে 
“একোলফেড়ে, আত্মসুখণী”" বলে গঞ্জনা 'দয়েছে। 

এখন মনে হচ্ছে বাস্তাঁবক এত লোকের চাপে নিজের মাহাস্ত্য ফোটানো 
যায় না কোথাও । মনে হচ্ছে, সেই রাতদুপুরের আগে আর সবর্ণর সঙ্গে 
মোকাবিলার উপায় নেই। 

দূর! শালার সংসারে নিকুঁচি, বেশ আছে জগুদা! তারপরেই মনে হয় 
মামীর বাড়তে খবর দেওয়া আবশ্যক। 


"ওরা তো সব এসে গেল।' 

নৈর্বান্তক সরে খবরটা ঘোষণা করলো প্রবোধ। 

শ্যামাস্‌ন্দরী দাওয়ায় বসে মালা ঘোরাচ্ছিলেন, ইশারায় প্রশ্ন করলেন, 

প্রবোধ তেমাঁন 'না্লপ্ত গলায় বলে, 'আর কে? মা আর মায়ের চেলা- 
চামৃন্ডো! তোমাকে আর ভাগ্েদের ভাত বাড়তে হবে না, সেই কথাই বলতে 
এলাম ।' 

জগ কোথায় যেন ছিল, ভাইয়ের গলা শুনে এদকে আসতে আসতে 


নৃবর্পলতা ১৯৫ 


ভাবাছল, আজ যে প্রবোধ এমন সকাল সকাল? খিদে লেগেছে বোধ হয়। 
যাক, মার তো বেলাবোলই রাল্লা প্রস্তুত হয়ে যায়। 

কানে এল, 'ভাত বাড়তে হবে না, সেই কথাই বলতে এলাম। 

এক পায়ে খাড়া হল জগু। 

রুষ্ধ গলায় বলে উঠল, 'সেই কথাই বলতে এক্সাম মানে? খাঁব না 
আজ ?, 

প্রবোধ অবহেলার গলায় বলে, 'আর দরকার কিঃ? এসেই গেছে যখন 
সবাই- রাল্াবামা হচ্ছে 

জগ আরো রুম্ধ হয়, 'দরকার নেই! বাঁজ মায়া-মমতা বলেও কি কোনো 
বস্তু নেই তোর শরাঁরে পেবো ? একটা বুড়ী আশা করে একঘর রে'ধে রেখেছে, 
আমি একটা পাগল-ছাগল দাদা আলাদা করে উঠোনে উনূন জেলে হাঁসের 
তুম নবাব আল এসে অমাঁন হুকুম দিলে, ভাত বাড়বার দরকার নেই, বাঁড়তে 
রাম্বা হচ্ছে। ধাঁন্য বটে! লেখাপড়া শিখে এমন বুনো জংলি হাজি কি করে 
রে পেবো? 

শ্যামাসূল্দরীর আর মালাজপা হয় না। শ্যামাসূন্দরণী প্রবোধের মেজাজ 
জানেন, অতএব শাঁঙকত শশব্যস্ততায় মালাটি কপালে ছইয়ে রূঢ় গলায় বলে 
ওঠেন, “তা তুই বা ভাল করে সব না শুনে গেছো বাঁদরের মতন কথা কইছিস 
কেন? হঠাৎ ওরা এল কেন, কে কে এল, ঠাকুরঝি' হা-ক্লান্ত হয়ে এসে হঠাৎ 
রাল্নাই বা করতে বসলেন 'কি করে এখুনি" শুধো সে সব?, 

শুধোতে আমার দায় পড়েছে! জগ বলে, 'দেখছ না দেমাকে, দমদম 
করছেন বাবু । “মা” এসেছে আবার কার তোয়াক্কা, কেমন ?, 

প্রবোধ বেজার গলায় বলে, "শুধু মা কেন, সগ্াীষ্টর যে যেখানে ছিল, 
সবাই তো এসেছে । যেন ভাগাড়ের শকুন, একসঙ্গে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল! খবর 
নেই বার্তা নেই-_ 

“এই শোনো উল্োপাল্টা__” জগ হাত উল্টে বলে, 'তবে যে পেকা বললো, 
পউিনিনিলিকালিগ কাটার আবার বলছিস খবর নেই বারা 

«আরে বাবা আনতে গেছলাম কে বললে ?' প্রবোধ সাফাইয়ে তৎপর হয়, 
ধগয়োছিলাম খবরাখবর তে । তোমাদের মেজবৌমা যে একেবারে 'কলকাতায় 
ফিরবো" বলে দাঁড়-ছেশ্ড়া হলো । ফ্যাশান তোঃ পাড়াগাঁয়ে আর পোষাঁচ্ছিল 
নাআর ?ি বাবর! ভাবলাম, এতই যখন ইয়ে, তখন চলুক । এসে দোখ-__ 

এসে কী দেখেছে প্রবোধ, সে কথায় কান না দিয়ে জগ সাল্প'্ধ গলায় 
বলছিস না তো হতভাগা? তোর তো সে-গৃণে ঘাট নেই! নিজেই ছাঁটস নি 
তো আনতে 2, 

প্রবোধ অবশ্য নিশ্চিন্ত হয়েই বলোছিল কথাটা । কারণ জানে যে সুবর্ণ 

: আর ভাসুর বা মামশশাশুড়ীর কাছে এসে প্রকৃত ঘটনা জানাতে যাচ্ছে 
তব বের টা রা হোক! বৌয়ের জন্যে হোঁদয়ে মরাঁছল সে, এ 
কথাটা উহ্যই 

কিন্তু জগ্‌ সেই নিশ্চাম্তির ঘরেই কোপ মারলো। মৃশাকল! আবার 


১৯৬ সুরর্দজঅ 


এখন ভেবে ভেবে কথা বানানো !-_'শোনো কথা, অকারণ মিছে কথা বলতে যাব 
কেন? যেতে মান্ই তো কে'দে পড়লো । বললো, আর এই পচা পুকুরের দেখে 
পড়ে থাকতে পারছি না। অগ্গত্যাই আমাকে নিয়ে আসতে হল। এসে দেখি, 
হরেকেম্ট! নদে থেকে মা, কাটোয়া থেকে সেজবৌমা, ব্যান্ডেল থেকে বড়বে৷ 
ছেলেপুলে সমেত, সব এসে হাঁজর। তাই ঝালাপালা হয়ে বোরয়ে পড়লাম । 
ন্দরী সকলের একসঙ্গে আসার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে তারপর 
বলেন, “তা এসেছে এসেছে। আজ আমাদের এখানে রাল্মাবান্না হয়েছে যখন, 
খেয়ে যাও চার ভাই। নচেৎ মনে বড় কস্ট হবে। আর ওই আমিষগুলোও 
নষ্ট হবে। জগা তো খায় না ওসব। তোরা খাঁব বলেই দু'রকম মাছ এনেছে, 
হাঁসের ডিম এনেছে-: 
বলা বাহ্‌ল্য সৌদন জগ মুখে ওদের শুধু "ডাল চচ্চাঁড়'র 'নরাশার বাধা 
শোনালেও, মামার বাঁড়র আদরই করাঁছল 1পিসতুতো ভাইদের । নিত্য নতুন। 
তবে আজকের পদ" দুটো শদনেই হঠাৎ মনটা চণ্চল হয়ে উঠলো প্রবোধের। 
সুবর্ণ ইলিশ মাছের পরম ভন্ত। হাঁসের ডিমেরও কম নয়। মন ভাল 


থাকলে তোড়জোড় করে বাঁড়সৃদ্ধ সকলকে 'ভোজ' খাওয়ানো বাতিক ওর। 
প্রায়ই সে ভোজের মূল হচ্ছে খিচাঁড়। এবং অনুপান উপকরণ ওই দুটো 
| 
ইাঁলশ আর হাঁসের ডিম ভাজা । 


উমাশশীর জন্যে ডিম হে*সেলে ওঠে না, সুবর্ণই আলাদা উন্ুন জেবলে 
মহোৎসাহে-তা নিজে ভাল না বাসলে কেউ শুধু পরের জন্যে এত করে? 

মনটা উতলা হতে লাগলো, শেষ অবধি এক কৌশল ফে"দে বসলো প্রবোধ। 

অমায়িক গলায় বললো, "বুঝছি সবই। তবে কিনা মাও তো এতদিন 
পরে “ছেলেরা” বলে হামলাচ্ছে। তা তুমি বরং এক কাজ কর মামী, ওই মাছটী, 
হাঁসের ডিমটা আর তোমার দিকের ব্যাল্ননের ভাল দু-একটা পদ বাগিয়ে 'নিরে 
যাবার মতন দুটো বাসন দাও, আম নিয়ে যাই। মা'র ভাতের সঙ্গে মামার 
বাঁড়র ব্যঞ্জন! আহা!' 

শনয়ে ধাবি তুই £ এখান থেকে বয়ে 2, 

জগু অবাক হয়। 

প্রবোধ হঠাৎ জগুর কাছে সরে আসে এবং নীচু গলায় ফিসাঁফস করে কি 
যেন বলে, সঙ্গে সঙ্গে জগ প্রবলভাবে ওর পিঠে একটা চাপড় 'দিয়ে হেনে 
ওঠে। হাসতেই থাকে হাহা করে। 

প্রবোধ লাঁজ্জত হয়, শ্যামাসুন্দরী বরন্ত। বলেন, পাগলের মতন 
হাসাছস যে ?, 

জগ আরো উদাত্ত হয়। 

আর একবার থাবড়া মারে প্রবোধের পিঠে । বলে. 'হাসব না2 কে বঙ্গে 
ভায়া আমার কাঠখোট্রা ? ভেতরে ভেতরে ভায়া-_ 


সুবর্ণও প্রথমটা এসে হতচাঁকত হয়ে গিয়েছিল বোকি। এসে যে বার্ড 
এমন গুলজার দেখবে সে ধারণা ছিল না। তবে চাঁপাকে দেখে ভাল লাগল। 
আবার দেখে চোখে জলও এল । কা হাল হয়েছে মেয়েটার! অথচ এরা ? ঝর 
জায়ের ছেলেমেয়েরা! মাসির ভাত খেয়ে বলতে নেই 'াব্য হয়ে উঠেছে! 


মুবর্ণলতা ১৯৭ 


মেয়ের রোগা হয়ে যাওয়ার কথা তোলে না সুবর্ণ । কে বলতে পারে সে 
কথায় কত কথা হবে! তোলে রঙের কথা । বলে, কী রু হয়েছেরে তোর 
চাঁপা 2 একেবারে যে কালি-ঝুল! গঞ্গার জলে নেয়ে নেয়ে চুলগুলোও তো 
গেছে! 

কথাটা মিথ্যা নয়। 

মৃস্তকেশী নিজেই পণ্চাশবার এ আক্ষেপ করেছেন, কিন্তু এখন সহসা 
চীপার মায়ের মুখের আক্ষেপবাণশতে অপমান বোধ করেন। যেন এই রং আর 
চুলের খর্বতার সঙ্গে মুস্তকেশীর রুটির কথা 'নাহত আছে। 

অথচ অস্বীকার করে উীঁড়য়ে দেওয়া যায় না, চুলের কথা বাদ [দলেও 
মেয়েটা শুধু কালোঝুলই হয় নি, রোগা দাঁড়ও হয়ে গেছে। আর সেটা আরো 
পাশে। 

মাঁসর বাঁড় থেকে এত শোলগাল হয়ে আসা কেন! এটা যেন মুন্তকেশী- 
কেই অপমান করা! 

অপমানের দাহে জলতে জব্লতে একসময় শোধ নেন। উল্টোপথে নেন। 

একটা নাতনীকে ডেকে বলে বসেন, “বড়লোক মাসীর বাড়ি গিয়ে খুব 
আদেখলার মত খেয়োছলি, কেমন 2? 

নাতিকে বললেন, 'নজর' লাগবে । মেয়েসন্তানে 'নজর' লাগে না। 

মেয়েটা থতমত খেয়ে বলে, “বাঃ, আমরা বাঁঝ চেয়ে খেয়োছি 2 

“চেয়ে খেয়েছিস কি মেগে খেয়োছিস তা জানি নে, তবে খেয়েছিস তা 
মালুম হচ্ছে। তা হঠাৎ চলে এঁল' যেঃ আরো থাকলেই পারতিস? ইস্কুল- 
স্কুল তো খোলে 'ন ভাইদের !' 

তাইদেরই! কারণ ওদের ইস্কুলের বালাই নেই! মেয়েমানুষের পড়ার 
ওপর দস্তুরমত খাপ্পা মুন্তকেশী। মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে বাচাল. আর 
চ্লেচ্ছ ভাষা শিখলে বিধবা হয়, এটা যে অবধাঁরত, তা তাঁর জানা আছে। 
কাজেই ওদের পড়ার বালাই নেই। 

তবু চাঁপাকে সুবর্ণ জবরদাঁস্ত করে বাঁড়তেই নিজে পড়ায়, কিল্তু চাঁপা 
আর এ পর্যন্ত 'কথামালা' ছাড়িয়ে 'বোধোদয়ে' উঠল না। বরং চন্ননটা দাদা- 
'দাদর বই টেনে টেনে নিজেই পব্য পড়তে শিখে গেছে । সেজমেয়ে পারুলটাও 
দুলে দুলে পড়া মুখস্থর ভান করে। কাকারা ওদের ঘরের দৃশ্য দেখতে পেলে 
বলে. 'মেজগিন্বীর পাঠশাল” ! 

কিন্তু সে যাক্‌, উমাশশণীর মেয়ে মোটা হওয়ার অপরাধে ধিক্কার খেয়ে 
অপ্রাতভ গলায় বলে, “নাই বা ইস্কুল খুললো! কুটুমবাঁড়তে কত 'দিন থাকা 
হবে 2" 

'থাকলেই বা! বড়মানুষ কুটমবাড়ি! তোর মা তো বোনের সংসারের 
গপৃপো করতে দিশেহারা হচ্ছে! 

হঠাৎ মেয়েটা আঁবিশ্বাস্য দুঃসাহসে বলে ওঠে, হবে না কেন? তোমার 
মতন তো ওখানে কেউ রাতাঁদন শিটখিট করে না? 

মৃস্তকেশশ স্তাম্ভত হয়ে যান। 

মুস্তকেশশ যেন আপন ভীবষ্যতের অন্ধকার ছাঁব দেখতে পান। মানবে 
না, আর কেউ মানবে না, মনে হচ্ছে মান-সম্মানের দিন শেষ হয়ে এল! এক- 


১৯৮ সবর্ণলজ 


জন চোপা করলেই সবাই সাহস পাবে। 
এইটি করলো মেজবৌমা। 
ঃসাহস ঢোকালো সবাইয়ের মধ্যে! 
মেজবৌমাই দেখালো গুরুজনের মুখে মুখে কথা কয়েও পার পাওয়া 


। 

মুস্তকেশীর তবে গাঁতি ক 2 | 
মাসতুতো বোন হেমের মতন 'পাশ-ঠেলা' বুড়ী হয়ে পড়ে থাকবেন ? 
হেমের দ্দশা তো নিজের চক্ষে দেখে আসছেন। তার তো ওই একটা 
বৌ থেকেই শনি ঢুকলো! 

কিন্তু মুস্তকেশী কি এখনই হার মানবেন ? 

মুস্তকেশী আর একবার শন্ত হাতে হাল ধরবার চেষ্টা করবেন না? 

করেন। 

অতএব সেই মেজবৌমাকেই 'নয়ে পড়েন। 

'বালি মেজবৌমা, পেবা নয় বেটাছেলে. এত কথা জানে না। তুমি কি বলে 
চলে এলে? তুমি জানো না' “আটে-কাঠে” চড়তে নেই ? এটা তোমার আট 
মাস পড়েছে না? 

সুবর্ণ এতক্ষণ বড় এবং সেজ জায়েদের সঙ্গে নিজ নিজ আঁভজ্ঞতার গল্প 
করাছল এবং বলতে কি মনটা একট, ভালই 'ছিল। চাঁপা 'নোঁটপোঁট' হয়ে 
গায়ের কাছে বসে ছিল আর ঠাকুমার গুরুবাঁড় সম্পকে ভাল-মন্দ গঞ্প তুলে 
হাসছিল। মোট কথা, একা বাঁড়তে এসে পড়ার থেকে, ওই জনারণ্য তার পক্ষে 
ভালই হয়োছিল যেন। 

কিন্তু শাশুড়ীর এই গায়ে পড়ে অপদস্থ করায় চাপা-পড়া আগুন জলে 
উঠল। কঠিন গলায় বলে উঠল সে, 'জানব না কেন মা? তবে সেই আদিখ্যেত 
করতে গিয়ে কুট্মবাড়িতে দাঁড়িয়ে জুতো খাব ?' 

'জুতো! 

মুন্তকেশী বলে ওঠেন, 'তুম খাবে জুতো? গলবস্ জোড়হস্ত সোয়া- 
মীকেই তো ফি হাত জুতো মেরে তবে কথা কইছ মেজবৌম্কা ? তাকে বলতে 
পারলে না, এখন যাওয়া চলবে না 2 সবালাও তো বুড়োমাগী, সে জানে 
না? 

সুবর্ণ তীব্রস্বরে বলে, 'সবাই সব জানে মা. শুধু আপাঁন আপনার ছেলেকে 
জানেন না। তবে “আটে-কাঠে” চড়ে যাঁদ কিছু বিপদ ঘটে তো বুঝবো সেটা 
আমার পৃণ্যফল। 

'পৃণ্যফল! বিপদ ঘটলে তোমার পূণ্যফল ? মুন্তকেশী যেন অসহ! 
কোধে এঁলয়ে পড়েন। মেজবৌমা, তুঁম না মা? 

“মা বলেই তো বলাছ মা।' সুবর্ণ এবার খুব শান্ত গলায় বলে? 'তবঃ 
তো পাঁথবীতে একটা হতভাগাও কমবে! 

“হতভাগা! মুক্তকেশী এবার স্বক্ষেত্রে আসেন। বলেন, “তা বটে! তোমার 
মত মায়ের গর্ভে ষে জল্মাতে এসেছে, তাকে হতভাগাই বলতে হবে ! 

'তা সেই কথাই তো আমও বলছি মা! কেনা বাঁদীর পেটের সন্তান হত: 
তাগা ছাড়া আর কি? 
চলে যায় সেখান থেকে। 


বায় 


সুবর্ণলতা ১৯৯ 


আর গল্পের আসরে গিয়ে যোগ দেয় না, চলে যায় নিজের ঘরে। আর 
দাঁড় বাঁধা-বাঁধা সেই পূরনো পাঁরিকাগুলো টেনে নিয়ে বাঁধন খোলে। 

হঠাৎ চোখে পড়ে একটা প্রিকাব খাঁজে ভাঁজ করা রয়েছে সেই কাঁবতার 
গ্ঠা দুটো! তার সঙ্গে আলাদা একটা টুকরো! যেটুকু হারয়ে গিয়োছিল । 
খুজে বার করে সঙ্গে 'দিয়েছে। 

সবর্ণর অজ্ঞাতসারে সুবর্ণর চোখ দিয়ে বড় বড় ফোটায় জল গাড়য়ে 
পড়ে। 

সুবর্ণর জন্যেও পাথবীতে শ্রদ্ধা আছে, সম্মান আছে. প্রশ্ঠীত আছে। 
নির্মল ভালবাসার স্পর্শ আছে। তবে পাঁথবীর উপর একেবারে বিশ্বাস 
হারাবে কেন সবর্ণ? কেন একেবারে হতাশ হবে £ সুবর্ণর গর্ভজাত সন্তান- 
দের ি 'ানুষের' পারচয় দিতে পারবে না সুবর্ণ? যে মানুষ পাঁথবীর 
উপর শ্বাস কাঁরয়ে আনতে পারে, আশা 'ফারিয়ে আনতে পারে, তেমন 
মানুষ 2 

কিন্তু সে কি এই পাঁরবেশে সম্ভব ? 

জলের ফোঁটাগুলো গাঁড়য়ে পড়ে আবার শাকয়ে যায়' বইগুলো ওল্টাতে 
থাকে সূবর্ণ। 

টের পায় না তখন--ওর জায়েরা ভাঙা গল্প জোড়া দিয়ে আবার জমিয়ে 
বসে হেসে হেসে বলছে, “ওর পেটের সন্তান হতভাগা 2? বাবা, ভাগ্যবল্ত তা 
হলে কে? বলে ও'র ছেলেমেয়ের আদর দেখলে--' 

যত্রকেই আদর বলে ওরা । 


ঘরে ঢ.কলো প্রবোধ। 

চোরের মত চাপ চুপি। 

কোঁচার খুটে ক যেন একটা চাপা দিয়ে। 

এ-ঘরটা বাঁড়র একটেরে, সুবর্ণর সেই গৃহপ্রবেশের দিনের আহত আঁভ- 
মানের ফলশ্রুুতি। সেইটাই কায়েম হয়ে গেছে। প্রবোধ অবশা বরাবরই আক্ষেপ 
জাঁনয়ে আসছে “ওণ্চা ঘর” 'িয়ে। তবে সুবর্ণ বলে, “এই ভাল! এ ঘরে যে 
সহজে কেউ ঢুকতে আসে না, সেই আমার পরম লাভ ! 

তা কেউ ঢুকতে আসে 'না জেনেও প্রবোধ আস্তে দরজাটা আধভেজানো 
করে ফিসাঁফস করে বলে, “এই' শোনো, চট করে এটুকু সেরে ফেল 'দিকি। 

সুবর্ণ এই আভনব ধরন-ধারণে অবাক হয়। এবং সেই জন্যই বোধ কাঁর 
গঞজীভূত আঁভমান দমন করেও কথা বলে। 

বলে, শক সেরে ফেলবো 2, 

'আরে এসো না এই জানলার ধারে । চট করে মুখে পুরে ফেল।' 

কেঁচার তলা থেকে বার করে ছেণ্ডা খবরের কাগজ আর শালপাতায় মোড়া 
তরকাঁরর ঝোলমাখা একটা চেপ্টে যাওয়া হাঁসের ডিম, আর একখানা ভেঙে 
টুকরো হওয়া ইলিশ মাছ! 

সংবর্ণ রাগ করতে ভুলে যায়।, 

সুবর্ণ স্তম্ভিত গলায় বলে, “এর মানে ৮ 

'আরে বাবা, মানে পরে শুনো” করবো গঞ্প। আগে খেয়ে তো নাও। 
ছেলেপুলে কে হঠাং ঘরে ঢুকে পড়বে। জানস দুটো তোমার প্রিয় বলেই 


২০০ সবর্ণজতা 


অনেক কৌশলে সারয়ে নিয়ে এলাম ।” 
“আমার প্রিয় বলে! আমার প্রিয়! 
৪৮০১৬ ৯ লালা০২০১৪৮-এপ 
সুবর্ণ সেই হাঁসির মধ্যে থেকে ষেন স্বপ্নাচ্ছন্ের গলায় বলে, 'কে বললো 
'জানস দুটো আমার প্রিয়? 

কে বললে? | 

তা রহস্যের হাসি প্রবোধের মুখেও ফুটে ওঠে। সেও বেশ একট: 
কৌতুকের গলায় বলে, “না বললে বোঝা যায় নাঃ আ'মই না হয় তোমার 
দু-চক্ষের বিষ, তুমি তো আমার-ধর ধর, গেল আমার কৌঁচাফোঁচা! তেলে 
ঝোলে একসা! 

সুবর্ণ কিন্তু স্বামীর এই বিব্রত ভাবকে উপেক্ষা করেই বসে থাকে, এবং 
স্থর গলায় বলে, কিন্তু বাহাদৃরি নৈওয়াটা আর হল না তোমার! দুটোর 
একটাও খাই না'আঁম।” 

“থাও না তুম! দুটোর একটাও ?, প্রবোধের গলায় ক্রুম্ধ আঁবশবাসের 
সুর ফুটে ওঠে। 

অনেক কসরত করে আনতে হয়েছে তাকে আঁকিশ্টিংকর 
জানস দুটো। এনেছে নেহাতই প্রাণের টানে। সাধ জেগোছিল, এনেই সুবর্ণর 
মূখে পূরে দিয়ে হাসাহাসি করে পূর্ব অপরাধের পাষাণভারটাকে সাঁরয়ে 
ফেলবে। কিন্তু মেয়েমানূষাঁট নিজেই যেন কাঠ-পাথর। এগিয়ে এলো না, 
দেখলো না, আবার মিছে করে বলছে “খাই না” !...আর কিছু নয়, পোষা ব্লাঙ্গ! 
আচমকা নিয়ে চলে আসার রাগাঁট পৃষে রেখেছেন! তাই স্বামীর এই বেপোট 
অবস্থা দেখেও মমতা নেই একট. 

তাই তারও গলায় ভালবাসার সুর মহছে 'গয়ে ক্রুদ্ধ সর ফোটে। 

খাও নাঃ ডাহা একটা মিথ্যে কথা বললে ?' 

সুবর্ণ খুব শান্ত গলায় বলে, "মধ্যে কথা বলতে যাব কেন শুধু শুধু ? 
আর মিথ্যে কথা বলা আমার স্বভাব কি না ভালই জানো তৃঁমি। ইলিশ মাছে 
আমার কাঁটার ভয় সেকথা বাঁড়র সবাই জানে । 

“38 সবাই জানে! শুধু আমি শালা_তা এটাতে তো আর কাঁটা নেই, 
এটা কি দোষ করলো ?” 

'গুতে আমার কেমন গন্ধ লাগে । তাছাড়া যে 1জানস রাল্াদ্বরে ঢোকে না, 
তা খেতে আমার রুচি হয় না।' 

ত্থাঁপ প্রবোধের এসব কথা বিশ্বাস হয় না। নিত্য এসব এত উৎসাহ 
করে আনায় সুবর্ণ অমনি নাঁক ? 

বলেও বসে সেকথা । 

'রূচি নেই বললেই হল! বাঙালকে আর হাইকোর্ট দৌখও না মেজবৌ! 
বারো মাস এত আহাদ করে আনাচ্ছ, রাঁধছ, আর নিজে খাও না! তাতো 
নয়, আমার আনা 'জানস খাবে না-ই বল।' 

সুবর্ণ ওর আভমানক্ষুব্ধ মুখের দিকে তাঁকয়ে দেখে। 

রি হ 
যাওয়া আর ভেঙে যাওয়া খাদ্যবস্তু দুটো যেন স্বর্ণ দিকে 
তাকায়। 


গুবর্ণলতা ২০১ 


তবু সুবর্ণ নরম গলায় বলে, 'ওকথা বলছো কেন ? তোমার আনা 'জানস 
খাব না! এমন অহঙ্কারের কথা বলবোই বাকি করে? আমি তো পাগল নয়! 
সাঁত্াই আম ওসব খাই না। ইচ্ছে হয় তো জিজ্ঞেস করে দেখো দিদিকে । 

এবার হয়তো বিশ্বাস হয় প্রবোধের। 

আর হয়তো এই আশাভঙ্গেই হঠাৎ তার চোখে জল এসে যায়। নিজেকে 
ভারী অপমানিত লাগে। অতএব আক্লোশটা গিয়ে পড়ে হাতের জিনিস দুটোর 
ওপর । 

চুলোয় যাক তবে! ফেলে দিই গে রাস্তায় !-বলে দ্রুতপদে চলে যায় 
ঘর থেকে। 


বইয়ের পাতা ওল্টাতেও ইচ্ছে হয় না আর। 

বইপত্তরগুলো সাবধানে চৌকির তলায় ঠেলে দয়ে, হাঁটুর ওপর মুখ 
রেখে বসে থাকে সুবর্ণ । 

আক মনে মনে তার 'বিধাতাকে প্রশ্ন করে, “আমার দাম কষতে একটা কানা- 
কাঁড় ছাড়া ক আর কিছুই জোটে নি তোমার ঠাকুর 2, 


7২৪ ॥ 


ওসব মেজদার ঘরের ওাঁদক থেকে 2 

পদ্য! 

পদ্য আওড়ানো হচ্ছে! 

কিন্তু এ তো ছোট ছেলেমেয়ের পড়া মুখস্থ নয়! 
এ যে নাটক! 





'বল বল বল সবে, 
শত বীণা বেণু রবে, 
ভারত আবার জ্গসভায় 
শ্রেষ্ঠ আসন লবে।' 
1সশড় থেকে নয়, পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেজদার দরজার কাছেই এসে 
পেশছায় প্রভাস, আর দুটোই স্পজ্ট হয়ে ওঠে তার কাছে। শোনা এবং দেখা। 
মেজাঁালী ইস্কুলই খুলেছেন। 
তিনি একখানা বই খুলে ধরে খাঁনকটা আওড়াচ্ছেন, আর তার পর কণ্টা 
আছে। 
ইস্কুলই বা কেন, কের্তনের দল বললেও তো হয়। 
তাই পরবতর্শ ঝঙ্কারে যখন ছোটরা ভূল-ভাল উচ্চারণে বলে ওঠে 
ধর্মে মহান হবে, কর্মে মহান হবে। 
নব 'দিনমাণ উদবে আবার-- 


২০২ সুবর্ণজতা 

| পুরাতন এ পৃরবে--' 
তখন চৌকাঠে পা রেখে চেশচয়ে ওঠে প্রভাস, “বাঃ বাঃ! কেয়াবাং! এ 
যে একেবারে পুরোপুরি কেন্তনের দল! মূল গায়েন সুর দিচ্ছেন, চেলা- 
চামুণ্ডারা দোয়ার দিচ্ছেন, শুধু তবলার বোলটাই বাঁক! তবে তোদের মাকে 
বলে দে চন্নন, পাশের ঘরে তোদের সেজখ্যাঁড়র ভাই এসেছে। শুনে শুনে 
তাক্জব হচ্ছে বোধ হয় ভদ্রলোকের ছেলেটা ! | 

বলা বাহুল্য চুপ হয়ে গিয়েছিল সকলেই। 

প্রভাসও এতেই যথেম্ট হয়েছে ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে চলে যাচ্ছল, সহসা 
শুনতে পেল বড়দার একটা নিতান্ত ছোট ছেলে বলে উঠলো, 'সেজকাকা, মেজ- 
খুঁড়মা আমাদের আবার গাইতে বলেছেন। বলছেন “এটা কেন্তন নয়”।' 

প্রভাস শেষ কথাটা শোনে না, প্রথমটাই শোনে । 

অসহ্য বিস্ময়ে বলে, “আবার গাইতে বললেন ! 

হ্যা গো।, বলছেন এ গান সবাইয়ের শেখা দরকার। এর পরে “বন্দে- 
মাতরং" শেখাবেন। 

“খবরদার !' প্রভাস হঠাৎ গর্জন করে ওঠে, ভেবেছেন কি তোদের মেজ- 
খুঁড়2 হাতে দাঁড় পরাতে চান তামাদের 2 বলে দে, চলবে না ওসব। এ 
1ভটেয় বসে এত বাড়াবাড়ি চলবে ৭1 

ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভিতর থেকে জবাব দেয়, 'মেজখাঁড়মা বলছেন, 
বাঁড়সুদ্ধ সকলের ওপর আপনার শাসনই চলবে 2) আর কারুর কোনো ইচ্ছে 
চলবে না 2? 

ছেলেটা কথা শিখেছে তোতাপাখীর মত। কথার গুরুত্ব কি, ওজন 'কি, 
তা শেখে নি. তাই বলতে পারে এত কথা । আর সব কটা আড়ম্ট হয়ে বসে 
থাকে । সেজকাকার মুখের ওপর কথা! এ কি ভয়ঙ্কর অঘচন! 

তা “সেজকাকা' নিজেও সেই বিস্ময়েই প্রথমটা স্তব্ধ হয়ে যান। তাঁর 
মুখের ওপর কথা! অবশ্য স্তব্ধতাটা মুহূর্তের। পরক্ষণেই মাঁটতে পা ঠুকে 
চীৎকার করে ওঠেন তিনি, 'বটে! বাড়তে তা হলে এখন এইসব কৃশিক্ষার চাষ 
চলছে; তা নিজের ছেলেদের মাথা খাচ্ছেন খান, পরের ছেলের মাথাটি চর্বণ 
করা হচ্ছে কেন ?...খোকা, উঠে আয় বলাঁছ! চলে আয় ও ঘর থেকে...আর 
বলে আয় তোর মেজখাঁড়কে, না, চলবে না। যার না পোষাবে, সে যেন পথ 
দেখে) 

এরপরই বজ্রপতন হয়। 

এবার আর “খোকা” নয়, স্বয়ং মেজবৌ-ই দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। 
খোকাকে মাধ্যম মাত্র করে বলে, “খোকা, জিজ্ঞেস কর তোর সেজকাকাকে, 
কি এ বাঁড়র কর্তা ইচ্ছেমত কাউকে রাখতে পারেন, কাউকে তাড়াতে 
পারেন? তা বাদ হয়, বলুন পল্ট করে, কালই “পথ” দেখবো । কিছু না 
জোটে, গাছতলা তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না!? 

তা অঘটনও ঘটে পৃথিবীতে । ূ 

নইলে এই দুঃসহ স্পর্ধা প্রকাশের পরও সবর্ণ সোজা সতেজে দাঁড়য়ে 
থাকতে পায়; আকাশের বাজ তো পড়েই না তার মাথায়, স্বয়ং সেজকর্তাও 
তেড়ে গিয়ে মেরে বসেন না। বরং হঠাৎ যেন লোকটা ভাষা হারিয়ে মৃক হয়ে 
বায়। 


সবর্ণজতা ২০৩ 


তারপর, কথা খন কয়, ষেন শিথিল সরল ভঙ্গীতে । চলে যেতে যেতে 
বলে, 'আমারই ঘাট হয়েছে, তাই শাসন করতে এসেছিলাম। পাশের ঘরে 
একটা কুটুমের ছেলে বসে, লজ্জা হল, তাই আসপর্দা প্রকাশ করতে এসে- 
ছিলাম। যাক্‌, তোদের খুড়ি চৈতন্য করিয়ে 'দিয়েছে। রাতাঁদন বই কাগজ নিয়ে 
পড়ে থাকা বিদুষা মেয়েমানুষ, হবেই' তো এসব! তবে বলে দে খোকা তোর 
খবড়ীকে, এ বাঁড়তে তাঁর ভাগ রয়েছে বলেই যে যা খনুশ করতে পারেন তা নয়, 
তা হলে তো বোমাও করতে পারেন তিনি।' 

চলে যায় প্রভাস, তীব্র বিদ্বেষে মুখ কালি করে। 

বলা বাহূল্য, পদ্য মুখস্থর পাঠশালা আর বসানো যায় না, সুর কেটে 
যায়। 

কিন্তু শুধুই কি 'সোঁদন' 2 

নাকি শুধু পদার ক্লাসের 'সৃর' 2 


কান্না! কান্না! 

কটু কুৎাসত কদর্ষ কান্না! 

শুনলে করুণা আসে না, মায়া আসে না, আসে বিতৃষ্ণ। 

গিরিবালা পোস্ত বাটতে বাটতে বলে. “মেজাদর এই শেষ নম্বরেরাটি যা 
হয়েছে_ উঃ! গলা বটে একখাঁন। মানুষের ছাঁ কাদছে কি জল্ত জানোয়ার 
চেশ্চাচ্ছে বোঝবার জো নেই।' 

'জল্মাবাধ রুগ্ন ষে-_* বলে উমাশশী। 

তুমি আর জগৎসহদ্ধ সবাইয়ের দোষ ঢেকে বোঁড়ও না দাদ" শারবালা 
ঠৈস দয়ে বলে, 'কে যে তোমায় 'কি দিয়ে রাজা করে দিচ্ছে, তুমিই জানো !' 

"দোষ ঢাকা আবার কি! উমা অপ্রাতিভ হয়, 'রুগ্ন তাই বলাছ।, 

গাঁরবালা কাজ সেরে শিল তুলে রাখতে রাখতে বলে, “আমার এই হয়ে 
গেজ বাবা, চললাম এবার। উনুন দুটো তো জহলে-পুড়ে খাক হয়ে গেল. 
যার পালা তার হুশ নেই! 

উমার ধারণা ছল এবেলার পালাটা আজ ছোটবৌয়ের. তাই বলে, 'কোথান্ন 
ছোটবৌ' 2? 

'ছোটবৌ? কেন ছোটবৌ কি করবে ? পালা তো মেজাঁদর ! 

'ওমা সে কি! আজ বুধবার না 2 

'বুধবারই! কিন্তু গেল হপ্তায় ছোটবৌয়ের বাপেরবাড় যাবার গোলমালে 
পালা বদলে গেল না?' 

উমাশশী বড়ো, উমাশশী নবোৌধ, উমাশশী গরীবের মেয়ে। আবার, 
উমাশশী কিছুটা প্রশংসার কাঙালও। তাই উমাশশী একাই সংসারের অর্ধেক 
কাজ করে। 

প্রাতাদন সকালে এই রাবণের গোম্ঠীর রান্না সে একাই চাজায়। আর 
[তিনজনে পালা. করে বিকেলে । 

সুবর্ণ অনেকবার প্রস্তাব করেছে একটা রাঁধুনী রাখবার। মাইনে সে 
একলাই দেবে। একটা ভদ্র বামূনের ঘরের আধাবয়সী বিধবা খুজলে না মেলে 
তা নয়। কিন্তু উমাশশশ শাশড়ীর 'সুয়ো” হতে সে প্রস্তাব নাকচ করেছে। 
বলেছে, 'ওমা, আমরা হাত পা নিয়ে বসে থাকবো, আর বামনীতে রাঁধবে, ছিঃ! 


২০9৪8 সুবর্ণলত। 


সুবর্ণ বলেছে, 'তবে মরো রে'ধে রে'ধে! আমার ছ্বারা তো একাদনও 
সকালে সম্ভব নয়। ওদের লেখাপড়া তাহলে শিকেয় উঠবে। 
কেনঃ হকালবেলা তো আঁমই-+ 

জান, তুমিই চালাচ্ছো! হাড়-মাস 'িষছো! কিন্তু সেটা বারো মাস 
দেখতেও ভাল লাগে না। তোমার মেজদ্যাওর তো করছে বোঁশ বোঁশ রোজগার, 
দেবে অখন মাইনেটা-_” 

উমাশশীই “না না" করেছে। 

অতএব স্যবর্ণর আর বিবেকের দংশন নেই। কিন্তু কে বলবে কেন 
উমাশশীর এমন বোকামী! কেন সে আঁবরত সংসারে সকলের মন রাখার চেষ্টা 
করে মরে? মন কি সাঁত্যই কারো রাখতে পেরেছে ? 

মন রেখে রেখে কি কখনো কারো 'মন রাখা” যায় £ 

যায় না। 

শুধু সেই মনের দাব আর প্রত্যাশা বাঁড়য়ে দেওয়া হয় মাত্ত। আর সেই 
ব্যর্থ চেম্টা আবরতই তাকে অবজ্ঞেয় করে তোলে। 

উমাশশশী বৃথা চেষ্টার বোঝা চ।1পয়ে চাঁপয়ে জীবনটাকে শুধু ভারাক্রান্তই 
করে তুলেছে, মন কারো রাখতে প.র 'ন। মুস্তকেশী সর্বদাই তার উপর 
ব্যাজার! মুস্তকেশী তোয়াজ করেন উাঁকল ছেলের বৌকে! 

কেন করেন সেটাই আশ্চর্য! 

এও এক মনস্তত্ৃ। 

নচেৎ টাকার সচ্ছলতা যাঁদ কেউ তাঁকে দেয়, সে তো মেজছেলে। তবু 
সেজবোৌকে ভয় করেন, তোয়াজ করেন। 

ছোঁয়াচ লাগার মত উমাশশণীও করে। তাই ভয়ে ভয়ে বলে, 'মেজবৌয়ের 
মেয়ে আজ যা কাণ্ড করছে, ও আর পেরেছে! 

'না পারেন, যে পারে করুক! আম বাবা উনূনের ছায়াও মাড়াচ্ছি না। 
আমার পালার দিনে কি কেউ হাঁড় ধরতে আসবে 2 বলে' “দুম দুম" করে 
চলে যায় গারবালা । 

সুবর্ণ নামে না। 

খবরটা দোতলায় ছাঁড়য়ে পড়ে। অসন্তোষ আর সমালোচনার কলগুঞ্জন 
প্রবল হয়ে ওঠে। এবং সব ছাপিয়ে প্রবলতর হয়ে ওঠে কান্না। 

কান্না, কান্না, কু্ধীসত কান্না! 

ওই আর্তনাদ যেন এই অন্ধকূপ থেকে আকাশে উঠতে চায়। 


“বাড়তে কি হচ্ছে কি? তব চীৎকার শোনা যায় প্রভাসচন্দ্রের। ভাসের 
আভ্ডা থেকে উঠে এসেছে লঙ্জায় আর বিরান্ততে। মেজাজ তাই সপ্তমে। 

“বাঁজ, কাঁদছে কোনটা! মেজবৌয়ের শেষ নম্বরেরটা না? মেজবো বাঁড় 
নেই নাঁক ?, 

বাঁড়! 

থাকবেন না আবার কেন 2 

বাঁড় ছেড়ে আবার যাবেন কোথায় ? 

মেয়ে কোলে নিয়েই বসে আছেন। 


পুবর্ণলতা ২০৫ 


'কোলে নয়ে বসে আছেন ? প্রভাস বিরান্তর সব বিষটা উপুড় করে "ঘিয়ে 
চল্গে' যায়' 'তবু গলা বন্ধ করতে পারছেন নাঃ মেয়ের গলার এমন শাঁখের 
বাদ্য) মুখে একমুঠো নুন দিতে বল, বন্ধ হয়ে যাবে! 

চল যায়। 

ঈঞ্বরের দয়া, সুবর্ণলতার কানে পেশছয় না এই হিত পরামর্শচুকু! 
সুবর্ণলতার কানের পর্দা কান্নার শব্দে ফেটে যাচ্ছে তখন। 


ওদিকে রান্নাঘরে ঝড় উঠেছে। 

উমাশশীই হাড় চড়াবার ভার 'নাচ্ছল, প্রবল প্রাতবাদ উঠেছে সেজবো 
আর ছোটবৌয়ের পক্ষ থেকে । সুবর্ণকেই বা এত আস্কারা দেবে কেন উমাশশী ? 
যার পাঁচ-সাতটা ছেলেমেয়ে, তার ঘরে তো 'নাত্য রোগ লেগে থাকবেই, তাই 
বলে ওই ছুতোয় সে 'দাব্য পার পেয়ে যাবে 2 

কই বলুক 'দাক কেউ, সেজবৌ ছোটবৌ কোনোদন “পালা' ফাঁক 
দিয়েছে! তাদের নিজেদের ঘর হেজে যাক মজে যাক, তবু সংসারের কাজ 
'ধাজিয়ে' দয়ে চলে গেছে । মেজাগন্নঈই বা ক এমন সাপের পাঁচ পা দেখেছে 
ষে ইচ্ছামত চলবে ? 

উমাশশনী যাঁদ এইভাবে একচোখোমি করে, তারাও ছেলের সাঁদণট হলেই 
কাজে কামাই দেবে, এই হচ্ছে শেষ কথা! 

উমা ভয়ে ভয়ে হাঁড়খানাকে তাক থেকে নাময়ে, চালের গামলা হাতে 
নিয়ে কিংকর্তব্যাবমূড় অবস্থায় দাঁড়য়ে আছে। জোর করে কর্তব্য করবার 
সাহস তার নেই। 

একথা বলবার সাহস নেই, তোমাদের তো কর্তে হচ্ছে না বাপু, তবে অন্ত 
গায়ের জালা কেন? 

কিন্তু কেন যে গায়ের জৰালা, সে কথার উত্তর কি নিজেরাই জানে ওরা ? 

যেখানে 'ছোট কথা ছাড়া আর কোনো কথার চাষ হয় না, সেখানে 'কড় 
কথা” 'মহৎ কথা' তারা পাবে কোথায় 2 ছোট কথাই জবৰালার জনক। 


'মেয়ে নিয়ে ঘরে বসে সোহাগ হচ্ছে? তোমার না আজ রাল্লার পালা £' 

ঘরের মধ্যে যেন হাতুঁড়ির ঘায়ের মত একটা হ-মাকি এসে পড়ে। 

নরবাচ্ছন্ন ক্রন্দনে শন্ত হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে চুপ করাবার বৃথা চেষ্টার 
1নজেই কাঁদো-কাঁদো হচ্ছিল সুবর্ণ, এই শব্দে চমকে পিছন ফিরে তাকায়। ভার 
পরই অগ্রাহ্ভরে মুখটা 'ফাঁরয়ে নিয়ে বলে, “পালা বজায় রাখতে যাবার মত 
অবস্থা দেখছো যে! 

এইমান্র নীচে বহূবিধ িরুষ্ধ সমালোচনা শুনে এসে প্রবোধচন্দের মেজাঙ্জ 
খাস্পা, তাই ক্লুদ্ধস্বরে বলে, তোমার অবস্থা অপরে শুনবে কেন শ্দান? ফেলে 
রেখে দিয়ে চলে যাও। মেয়ে নিয়ে এত আঁদখ্যেতা ! 

তেমাঁন আগ্রহের গলায় বলে, “কার কাছে ফেলে বাবো শ্বান ? 

তুম সামলাবে ?, 

'আম? আম সামলাতে বসবো তোমার ওই গুশধরী মেয়েকে; আমার 
তো ভূতে পায় ?ন ?' 

'আমার মেয়ে! একা আমার মেরে! সামলাতে ভূতে পায় তোমায় ? বলতে 


২০৬ সুবর্পলতা 


লঙ্জা'করল না?" উগ্রমৃর্তি সুবর্ণলতা উঠে বসে, 'আর যাঁদ এ ধরনের কথা 
বল, মান-মর্যাদা রাখবো না বলে 'দাঁচ্ছি!' 

প্রবোধ এ মৃর্তিকে ভয় পায়। 

তন্্রাচ ভয় পাওয়াটা প্রকাশ করে না। বলে. "ও, মান-মর্যাদা রেখে তো 
উল্টে যাচ্ছ! এখন যাও 1নজের মান রাখো তো, পালাটা সেরে 'দয়ে এসো !' 

'আমার মান এমন ঠুনকো নয় যে তাও বজায় রাখতে শ্পিশাচশ হতে হবে! 

মেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে স:বর্ণ। 

ভঙ্গীতে অবহেলা অবজ্ঞা । 

প্রবোধচন্দ্রের গায়ের রন্তু ফুটে ওঠে. তীব্রস্বরে বলে. 'শুলে যে? ইয়ার্ক 
পেয়েছ নাকি? রোজ রোজ তোমার ভাগের কাজই বা অন্যে করে দেবে কেন 
শনি? যাও উঠে যাও। একটু কাঁদলে মেয়ে মরে যাবে না।' 

সুবর্ণলতা তথাপি ওঠে না। 

শুয়ে শুয়েই বলে. 'একটা রাতে না খেলেও কেউ মরে যাবে না।” 

না খেয়ে! 

এ কি সাংঘাতিক শব্দ! 

তার মানে উঠবে না! শন্ত পাথর মেয়েমান্ষ! 

অতএব অন্য সুর ধরতে হয় প্রবোধকে। নরম সুর। 

'পাঁচজনে পাঁচ কথা বলবে: গায়ে পেতে নেবেই' বা কেন? এতে তোমার 
লঙ্জা হয় না? 

স্বর্ণ আবার উঠে বসে। 

উঠে দৃঢ়কণ্ঠে বলে, “না হয় না! আমার লজ্জা-সরমের জ্ঞানটা তোমাদের 
সঙ্গে মেলে না। আমার কাছে তার চাইতে অনেক বেশি লঙ্জার, নিম্দুকের 
মুখের দুটো “কথা” শোনার ভয়ে বুণ্ন সন্তানের দুর্দশা করা! যারা অমন 
করে তারা মা নয়, শয়তান, মা নয়. 'পশাচী।' 

“তারা শয়তান 2 তারা পিশাচ! 

এনশ্চয়! শয়তান, স্বার্থপর, মহাপাতকণী! 

তোমার সবই সাঁম্টছাড়া !' 

“হ্যাঁ আমার সবই স্াম্টছাড়া। ক করবেঃ ফাঁস দেবে? 

"আম বলাছি তুম যাও. মেয়ে আমি দেখাছি-_ 

না! 

না, সুবর্ণ সোঁদন বাঁধতে নামে 'নি। 

উমাশশীই রেধোছিল শেষ পর্যন্তি। 

আর আশ্চর্য, বাড়িসম্ধ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে নেমে এসে অন্লান 
বদনে সেই ভাত থেয়ে গিয়েছিল স্‌বর্ণ! ডাকতে পর্যন্ত হয় 'নি, হঠাৎ এক সমর 
রাল্নাঘরে এসে জল-কাদার উপর মাটিতেই ধপাস করে বসে পড়ে বলেছে, 'এই- 
বেলা আমায় চারটি দিয়ে দাও তো 'দাঁদ। অনেক কন্টে ঘুম পাঁড়য়োছ।' 


এত বড় বেহায়া মেয়েমানুষ, তব মুস্তকেশশ আশা করোছলেন, আজ 
হয়তো সকালবেলার রাল্নার তারটা মেজাঁগন্নী নেবে। কিন্তু সে আশা ফলবতশ 
হল না। 

সকালবেলায় দেখা গেল মেয়েটার গায়ে হাম বেরিয়েছে। 


সুবর্ণঙগতা ২০৭ 


কান্নার হাঁদস পাওয়া গেল। 

এবং রাল্লার ভরসাও গেল। 

একাঁদন আধাঁদন নয়। এখন অনেক দিন।... 

বলবার কিছু নেই। এ রোগ কারো হাতধরা নয়! 

কিছু নেই। 

তবু বলাবলি হয়। সকলের মধ্যেই হয়। 

কিন্তু সেই বলার মুখে এক প্রকাণ্ড পাথর পড়লো । বেলা বারোটা নাগাদ 
জগু এসে হাঁজর হলো, একটা আধাবয়সী বিধবা বামনী সঙ্গে নিয়ে। 

কই গো পিসি, এই নাও তোমার রাঁধূনী। কি করতে-টরতে হবে দেখিয়ে 
শুনিয়ে দাও। মা বলেছে কাজকর্ম ভাল হবে। 

মুস্তকেশী অবাক গলায় বলেন, 'রাধনী আনতে হুকুম করলো কে তোকে 2' 

জগ মেয়েলী ভঙ্গীতে বলে ওঠে, শোন কথা! তোমার 'নজের ব্যাটাই 
তো বলে এলো গো! মেজ পূত্তুর! বললো, মেজবৌমার খুকীর হাম 
বোরয়েছে, ওঁদকে বড়বৌমার খেটে খেটে জান নিকলোচ্ছে, সংসারের অচজ 
অবস্থা, রাম্নাবান্নার জন্যে একাঁটি বামুনের মেয়ে চাই। তোমার দোখ সাত কান্ড 
রামায়ণ শুনে সীতা কার পিতা ! 

মুস্তকেশী একবার জর্লন্ত দৃষ্টিতে মেজবৌয়ের ঘরের দিকে দাঁষ্টপাত 
করে বলেন, “বুঝেছি! কামরূপ কাঁমখ্যের ভেড়াটা ছাড়া এ কাজ আর কার 
4 
না বাড়তে! 

জগা বাঁরদর্পে বলে, 'দেবে নাট বললেই হলঃ তুমি ওদের আঁশহাঁড় 
নাড়বে 2 

“আম? আমার মরণ নেই 2, 

তবে? 

'যারা করবার তারাই করবে! লোকের দরকার নেই জগা! মিথ্যে বামৃনের 
মেয়েকে আশা 'দিয়ে নিয়ে এসে নিরাশা করা! 

জগু যে জগ, সেও এ পাঁরাস্থাততে থতমত খায়। 
যি অনুরোধ মাত্র লোক জুটিয়ে আনার মাঁহমায় উৎফলল্লে হচ্ছিল, কল্তু এ 

বোকার মত বলে, তাহলে বলছো দরকার নেই' ?' 

মৃন্তকেশী সেই কথাই বলতে যাঁচ্ছলেন, কিন্তু বলা হয় না। সহসা সেই 
ভরদ্পুরে শুকনো আকাশ থেকে বন্ত্রপাত হয়। 

সেই বন্রে ধংস হয়ে যায় সভ্যতা, ভব্যতা, সামাজিক নিরমনীত। 

আর ধ্বংস হয়ে যায় মুস্তকেশশর পদমর্যাদার মাহমা। 

হঠাৎ দরজার ওদিক থেকে সুবর্ণর পাঁরচ্কার গলার 'দ্বিধাহন ভাষা 
উচ্চারত হয়, 'আছে দরকার ! মা. ভাসুরঠাকুরকে বলে দিন যেন রেখে যান 
ওকে ।' 

মৃস্তকেশণ স্তাম্ভিত বিস্ময়ে বলেন, “আছে দরকার! রেখে যাবে! আম 
মানা করছি, তার ওপর তুমি এলে হনকুম চালাতে! 

'হুকুম চালাচালির কথা নয় মা! অবুঝের মতন রাগ করজে তো চজবে 
না। দাদ একা আর কত 'দক দেখবেন 2 'বামূনের মেয়ের কথা আমিই বলে 


২০৮ সুবর্ণলজ 


পাঞ্ডিয়েছি।...বামুনাঁদ, তুমি এসো তো এদিকে-” 


'জীতা রহো।' চেচিয়ে ওঠে মুখ্য জগ, এই তো চাই! আমার পাঁসাঁটর 
এই রকম শ্িক্ষারই দরকার ছিল।' | 


মুস্তকেশীর সংসারে যুগ-প্রলয় ঘটে। 

মুন্তকেশীর কলমের উপর নতুন কলম চলে ।...মুন্তকেশীর সংসারে মাইনে 
করা রাঁধুনী ঢোকে! 

এ যেন আঁনবার্থ অমোঘের একটা চিহ্ন! 

তা বোধ কাঁর এই প্রথম বিন্দু আর 'াঁরবালা সুবর্ণজতার তেজ আস- 
পর্দার সমালোচনা না করে তার উপর প্রসন্ন হয়। 

বাঁচা গেল বাবা! 

শুধু উমাশশীরই মনে হয় সে যেন সর্বহারা হয়ে গেছে! 

রান্নাঘর থেকে চ্যত হলে কিসের দামে বিকোবে উমাশশী ? মূলহারা এই 
দনগুলোকে নিয়ে করবে ক ? 

যখন তখন চোখে জল আসে তার। 

আর বামুনাঁদর পায়ে পায়ে ঘোরে তার সাহাব্যার্থে। 

তবু তো বোঝা যাবে, কিছুটা প্রয়োজন আছে উমাশশীর ! 

সুবর্ণলতার মত সে নিজের উপাস্থাতর জোরেই নিজেকে মূল্যবান ভাবতে 
পারে না। 


১২ ॥ 


কালো শ'টকো পেটে-পীলে ছেলেটার দিকে জহলন্ত দূষ্টি হেনে শ্যামাসুন্দরী 
বলেন, “ওকে বাড়তে জায়গা দিতে হবে? কণ করবো 
২৬৯৬] ওকে নিয়ে? 

| জগ তার বাইরের 'বাবু সাজ' আধময়লা ফতুয়াটা 
খুলে উঠোনের তারে ছাড়িয়ে দিতে দিতে অগ্রাহ্যের গলার 
|| বলে, 'করবে আবার কি, সময়ে দুটো ভাত-জল দেবে, 
|| খানিক পাঁচন সেম্ধ করে দেবে, আর ি! মাথায় করে 
টি নাচতে বাঁল নি।' 

শ্যামাসুন্দরী ক্রুদ্ধ গলায় বলেন, “মাথায় করে নাচার আবার হাত-পা কি 
আছে? সময়ে দুটো ভাত-জল দেব, পীলে পেটের জন্যে পাঁচন সেম্ধ করে 
দেব, কেন ক জন্যে 2 

এক জন্যে, সেকথা তো রাজকন্যেকে বলা, হলো আগেই । মা নেই, 'দাঁদমা 
পুষতো, সেটাও পটল তুলেছে, কে দুটো ভাত দেয় তার ঠিক নেই।' 

“38, আমাকেই তাহলে ওর "দাঁদমা হতে হবে % শ্যামাসুন্দরী মানাবকতার 
ধার ধারেন না, বলেন, “তুই আর আমার সঙ্গে জ্ঞাতশক্তুরতা করিস না জগা, 
চিরটা কাল জলে পুড়ে মরলাম। জগতে অমন ঢের মাতৃহারা আছে, সবাইকে 
দয়া করতে পারবি তুই ?' 

“সবাইকে পারবার বায়না নেবে জগা, এমন মুখ্য বামুন নয় মা, জগ, 







সুবর্পজতা ২৩৯ 


দপ্তস্বরে বলে, “একটার কথাই হচ্ছে।” 

'না হবে না-” শ্যামাসুন্দরী আরো দৃপ্ত হন, বলে আমার কে ভাত-জল 
করে তার ঠিক নেই, হিতৈষী ছেলে এলেন আমার ঘাড়ে একটা রুশ চাপাতে। 
রাগ বাড়াস নে জগা, যেখানকার নিধি, সেখানে রেখে আয়।' 

জগ্মা অবশ্য মায়ের এই শাসনবাক্যে বিন্দুমান বিচাঁলত হয় না, বলে, 'রেখে 
আসবার জন্যে নিয়ে এলাম যে! এই ছোঁড়া, হাঁ করে দাঁড়য়ে আছস যেঃ 

নতুন 'দাদমাকে পেক্সাম কর! দেখাঁছস- কেমন ভগবতশর মতন চেহারা! 
৮২০৬৭ পায়ে হাত নয়, দূরে থেকে আলগোছে। তুই বেটা এমন 
কি পুশ্যি করোঁছস যে আমার মায়ের চরণস্পর্শ করাঁব! পেলাম করে বোস 
ওখানে ।...মা, ছোঁড়াকে দুটো জলপাঁন দাও 'র্দীক, খদেয়-তেষ্টায় “টা টা” 
করছে। দেখো আবার দূহখণর ছেলে বলে খানিক “আকোচ-খাকোচ” ধরে দিও 
না! দেখছো তো পেটের অবস্থা ১ এক-আধটা রসগ্োল্লা-ফোল্লা আছে ঘরে ?' 

শ্যামাসুন্দরী ছেলেকে চেনেন, ওই পাঁলে-পেটাকে যে আর নড়ানো যাবে 
না, রসগোল্লা খাইয়ে রাজসমাদরেই' রাখতে হবে, তা তান র্নীচত অবলোকন 
করছেন। তবু সহজে হার স্বীকার না করে কুদ্ধ গলায় বলেন, “না থাকে 
আনতে কতক্ষণ! এখন তো ছুটতে পারো তুমি! কিন্তু বাড়তে না-হক 
একটা পষ্য বাড়াতে আমি পারব না জগা, বয়েস বাড়ছে বৈ কমছে না আমার! 
পারব না আর খাটতে, 

জগগু এবার উদ্দ'প্ত হয়। 

বলে, “মা তুমি যে দেখাঁছ তোমার ননদের ওপর এককাঠি সরেস হজে! 
মুখ ফুটে বলতে পারলে এ কথা? ওর জন্য কালিয়া পোলাও রাঁধতে হবে, 
বলোছ এ কথা ঃ দুবেলা দুমুঠো “পোরের” ভাত আর কাঁচকলা সেম্ধ, এই 
তো ব্যাপার। লোকে গর পোষে কুকুর বেড়াল পোষে. আর একটা মানুষের 
ছেলেকে দূর দূর করছো? ছি ছি!” 

'তা সে তুই আমায় শতেক পছ” দে'শ্যামাসূল্দরশ অনমনায় গলায় 
বলেন, “বুড়ো বয়সে একটা খোকা পুষে তার “পোরের” ভাত বাঁধতে বসতে 
পারব না, ব্যস্‌। ভারী হিতৈষী ছেলে আমার ! সেই যে বলে না_ ভাল 
করতে পার না মন্দ করতে পারি, কি দিবি তাই বল, তোর হয়েছে তাই ।”.. 
শ্যামাসৃন্দরী সহজে একসঙ্গে এত কথা বলেন না, কিনতু আজ ছেলের গোঁ 
বায়নায় মেজাজ খাস্পা হয়ে গেছে তাঁর। পাড়ার একটা 
দাঁদমা মরেছে 'কি ঠাকুমা মরেছে. তাব ভাত রাঁধবার লোক নেই, হতে 
কিনা একটা রুগগণীকে এনে মা'র গলায় গেথে দতে চায়! 

বামুনের ছেলে হলেও বা ভাবিষ্যতের একটা আশা 'ছিল। দনে আঁদনে, 
কিছু না হোক, জগাকেও এক ঘাঁট ভুল দিতে পারতো! কিন্তু এ কি! 

ছুতোরের ছেলে! 

একেবারে জল অচল! 

তারপর শন্তপোন্ত নয় যে চাকরের কাজও করবে। 

তবে? 

শুধু শুধু কেন শ্যামাসুন্দরী এই নির্বঞ্চাট সংসারে অত বড় একটা 
ধঞ্কাট ঢোকাবেন? একটা আট-দশ বছরের ছেলে, সেতো খোকার সাঁমল। 
বুড়ো বয়সে একটা খোকা পুষবেন শ্যামাসন্দরণ ? 

১৪ 


২১০ সৃবর্থলতা 


রেগে বলেন, গরু পুষে দৃধ আসে, কুকুর বেড়ালেও উপকার আছে. এর 
থেকে কি উপকার পাওয়া যাবে 2, 

উপকার!' 

জগু হঠাৎ সাত্যকার রেগে ওঠে। 

ফুলে দেড়া হয়ে উঠে বলে, উপকার পাবে কি না ভেবে তবে তুমি দয়া 
দেখাবে? থাক মা. দরকার নেই, তোমার ওই ওজন-করা দয়ায় দরকার নেই। 
উঃ, এমন কথা শোনার আগে জগার মরণ হোল না কেন! ঠিক আছে, ভাত 
তোমায় রাঁধতে হবে না, জায়গাও দিতে হবে না। চল রে নিতাই-_ভুল করে 
এনোছিলাম তোকে, বাঁড়টা যে জগার বাপের নয়, সেটা খেয়াল ছিল না।' 

ছেলেটার হাত ধরে টান দেয় জগু। 

বলে, 'ভালো বাঁড়তে এনেছিলাম তোকে, শিক্ষা পোল ভালো! এরপর 
আর কখনো বামুনবাঁড়র দরজায় এসে দাঁড়াস 'নি। হ্যাঁ, বরং কসাইয়ের বাড়তে 
আশ্রয় চাইবি, তবু বামুনবাঁড় নয়।. .কী কথা কনে শুনলাম, ছি ছি! কিনা 
ওকে যে আমি দয়া করবো. ও আমার ক উপকারে আসবে ?' 

জগ বাইরের দরজার দিকে পা বাড়ায়। 

শ্যামাসূল্দরণ প্রমাদ গণেন। 

বোঝেন জগ: সাত্য রেগেছে। 

আর সাঁত্য রাগলে পাঁচ দিন জলস্পর্শ করবে না! 

উপায় নেই। ছোঁড়াকে গলায় গাঁথতেই হবে । তবে নরম হওয়া তো চলবে 
না, তিনিও জগুর মা? তাই তীব্স্বরে বলেন, “দেখ জগা, রাগ বাঁড়য়ে দস 
নে! যা'ঁদাকনি এক পা. দোখ কেমন যাস! , 

“যাব না? তোমার কথায় নাকি?” বলে হঠাৎ পাক খেয়ে ঘরে দাড়ায় 
জগ, এবং উচ্চ উদাস স্বরে বলে. 'দেখ্‌ নিতাই, দেখে নে. এত বড় একটা বুড়ো 
মদ্দার মান-প্রাতিষ্ঠাটা একবার দেখে নে। রাগ করে বোঁরয়ে যাবার স্বাধীনতা- 
টুকুও নেই। এই অসহায় অবলা জীবটাকে আবার একটা মানাষ্য জ্ঞান করে 
তোর বাবা মুরুব্বী ধরেছে। হু! 

দাওয়ায় এসে বসে পড়ে নিতাইকে কাছে 'নয়ে। যেন সেও ওর মতই 
বাইরে থেকে প্রার্থা হয়ে এসেছে । নিতাই বিস্ময়াহত দৃষ্টি মেলে বসে থাকে। 

শদমাসূন্দরশ আর দ্বিরুত্তি না করে ঘর থেকে একখানা শালপাতায় করে 
পয়সায় দৃগণ্ডা রসমুন্ডির গোটাচারেক এনে ধরে 'দিয়ে জোরালো গলায় বলেন, 
'কলে মুখ দিয়ে জল খাওয়া চলবে, না গেলাসে করে 'দিতে হবে ?' 

সহসা জগ অন্যমর্ত ধরে। 

যেন সে মানৃষই নয়। 

চড়া গলায় বলে, 'গেলাসে করে জল দিতে হবে? কেন' আমার গুরু 
পৃত্তরের ঠাকুর্দা এসেছে 3 কলে মুখ দিয়ে জল ওর ঘাড় খাবে নাঃ দেখ্‌ 
নিতাই ওসব রাজকায়দা যাঁদ করতে আঁসস, পোষাবে না! বদ্ধ ব্রাঙ্গণ-কন্যা 
তোকে খাবার জল গাঁডয়ে দেবে, আর তুই তাই খাব? ছি ছি! হ্যাঁ, একথা 
যাঁদ' বাঁলস, “এই রসম্ন্ডি ক'টা আমার জঠরাগ্মির কাছে নাঁস্য হল গো দাঁদিমা, 
আর গোটা চার-পচি দাও", সে আলাদা কথা! ক্ষিদের কাছে চক্ষুলজ্জা নেই। 
তা বলে “কলে জল খাব না” এ বায়না করতে পাঁব না। 

শ্যামাসূন্দরী কড়া চোখে একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে আবার 


সূবর্ঙতা ২১১ 


একেবারে পুরো এক পয়সার রসমৃশ্ডি এনে বাঁসয়ে 'দিয়ে বলেন, 'আয় কিন্তু 
নেই জগা! কাল চার পয়সার এনোছালি, তার দরুন গোটাকতক ছিল। 

জগ. হস্টগলায় বলে, '্যস্‌ ব্যস, ওতেই হবে । আর কত চাই 2 হ্যাঁ রে 
নিতাই, শরীরে বল' পাচ্ছিস ? যে হাল হয়েছে, ওটাই প্রধান দরকার !...নিজে 
থেকে মনে করে করে দুধ চেয়ে নিয়ে খাবি, বুঝাল? এই যে ভগবতাঁকে 
দেখছিস+' এনার কাজের সাীমা-সংখ্যা নেই। ইনি যে হুশ করে তোকে ডেকে 
ডেকে দুধ খাওয়াতে বসবেন তা মনে কারস না।' 

মা'র প্রাতি এই কর্তব্যাট সেরে জগ হন্টচিত্তে বসে পড়ে বলে, 'যাক 
বাবা, আমার একটা দায় ঘুচলো। মাতৃহধীনকে মায়ের কোলে ফেলে দিলাম ।' 

হন্দরী ছেলের দক থেকে এদিকে চোখ ফেলে তব স্বরে বলেন, 
'এই ছেলেটা, তোর নাম কি? 

নিতাই এসেই যে পাঁরাস্থাতির মূখে পড়ছিল, তাতে তার কথা কওয়ার 
সাহস ছিল না, কিন্তু এখন চুপ করে থাকাও শন্ত। তাই সাবধানে 'নজের নাম 
বলে। 

ণশনতাই ॥, 

ও কি নাম বলার ছির রে নিতাই” জগ সদহপদেশ দেয়, 'ভদ্রলোকের 
মত বলাঁব, শ্রীনতাই দাস। নেহাৎ চাকর-বাকরের মত থাকলে তো চজবে 
না! ভদ্দর লোকের মতন থাকতে হবে?" 

শ্যামাসুন্দরী বোঝেন, এ হচ্ছে ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা দেওয়া! পাছে 
তিনি ছেলেটাকে চাকরের পর্যায়ে ফেলেন, তাই জগার এই শাসনবাণী। তা 
তানও সোজা মেয়ে নন. তাই' কড়া গলায় বলেন, "চাকরের মত হবে না কি 
রাজার মত হবে 2 এই নিতাই. তোর বাপ কি করে রে? 

নিতাইয়ের আগেই জগ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, 'বাপ ব্যাটা তো ছ্‌তোর! 
কাঠ ঘষে আর কি করে? যাক্‌ গে, ওসব কথা মনে নিতে হবে না। তুই 
নিজে মানুষ হবি, বুঝাঁল 2 ঘর-সংসার দৌখয়ে দই গে। 

এই সময় বহুকাল পরে মুস্তকেশীর আঁবর্ভাব ঘটে এবং মুহূর্তেই 
ছেলেটার দিকে চোখ পড়ে তাঁর। সন্দেহের গলায় বলেন, “এ ছোঁড়া কে? চাকর 
রাখাল বুঝি! 

জগদ আভূমি সেলাম করে বলে, 'কী যে বল 'পাঁস! জগা রাখবে চাকর ! 
ভারী তালেবর তোমার ভাইপো! কেন্টর জীব, কেষ্ট যখন যেখানে রাখেন, 
থাকে। 

শ্যামাসূন্দরী বিদ্ুপের গলায় বলেন, 'তা বটে! অন্তত যে কাঁদন 
নী ৪ মস নিপু সে কাঁদন এখানেই থাকবে ।' 

মুস্তকেশী খুশটয়ে জিজ্ঞেস করে ব্যাপারটা জেনে নেন। মুস্তকেশী 
গালে হাত দেন। তারপর বলেন, 'জাতটা কি?, 

এবার জগ মারমুখী হয়। 

'জাত নিয়ে কশ হবে পাস? জাত নিয়ে কি হবে? নাতজামাই 
করবে ?' 

'শোনো কথা!' মুস্তকেশী বলেন, 'এই তোকে আর আমার মেজবৌমাকে 
এক বিধাতায় গড়েছে দেখাঁছ! কথা কয়েছ কি আশ্িমার্ত! ঘরে-দোরে ঘুরে 
বেড়াবে, জাত দেখাব না ?, 


হি সবর্গজ, 


' খা দেখবো না। ঘরে-দোরে মশা মাছ পিশ্পড়েটাও বেড়ায় বেড়ার দর 
থেকে উঠে এসে বেড়ায়। তখন তো তোমাদের জাতের বিচার দোঁখ না?..ঞ& 
নিতাই, চল আমরা অনার যাই। দুটো বুড়ীীতে মিলে ক্টকচাজে গপ্পো 
করুক। গ্ররা আবার ধম্মকথা কইতে আসেন! মানুষ কেম্টর জব! আঁতীঁথ! 
নারায়ণ! যত ফক্ধিকার কথা! মুখের ওপর যে অপমানটা তোমরা ওই 
অভাগা নারায়ণটাকে করলে বসে বসে” নেহাৎ নারায়ণ বলেই' সহ্য করলো। 
যতই হোক বেটাছেলে! এ লক্ষন্ীঠাকরুণ হলে মনের ঘেশ্লায় পাতাল প্রবেশ 
করতো! মানৃষের ছানা দুটো খাবে, সেই নিয়ে খোঁচা দেওয়া! | 

জগ গট গট করে বেরিয়ে যায় নিতাইয়ের হাত ধরে। 

মৃন্তকেশশ পিছন থেকে সাবধান করেন, 'কাজটা কিন্তু ভাল করাল না| 
জগ! কে বলতে পারে ছোঁড়া স্বদেশ কিনা! শুনি পৃলিসের ভয়ে নাক 
অমন কত ছোঁড়া ন্যাকা সেজে_- 

কথা থমান। 

জগুর কানে প্রবেশ করাবার আশা আর থাকে না। | 

শ্যামাসুন্দরশীর কানে যেটুকু গেছে তাতেই যথেষ্ট! তাচ্ছিল্যভরে বলেন, 
তোমার ভাইপোর জন্যে ভেবে; না ঠাকুরাঁঝ! পালিসই' ওর ভয়ে দুগগা নাম 
জপবে !...এই বুড়ো বয়সে একটা কাচ খোকা এনে আমার গলায় চাপালো, 
আপাতত দেখিয়োছ তাতেই রাগ দেখছো তো ? যাক গে, তোমার খবর কি; 
অনেকদিন তো আর আসো না! 

মৃন্তকেশশ বলেন, আর আসবো কি! কোমরটা যে দিন দিন শত্তুরতাই 
সাধছে। বেশী হাঁটতে পারাঁছ না আর। ওই যো-সো করে গঙ্গাচ্ছানটক 
বজায় রাখা! এসোঁছ একটা খবর ?দতে। মেয়ে দুটোর বিয়ের ঠিক করে 
ফেল্পোছ. তাই তোমায় বলতে আসা! একদিন যাবে, ছেলেদের সঙ্গে এক 
বসে পরামর্শ হবে! 

শ্যামাস্‌ন্দরী বোঝেন কোন মেয়ে দুটো । 

মল্লিকা আর চাঁপা, আর কে! 

বলেন, 'তা বেশ! কোথায় সম্বন্ধ হলো ?” 

ও শবশুরবাঁড়র সম্পর্কে । ঘর-বর ভালো. দুই জ্যাঠতৃতো 
খুড়তুতো ভাই-_. 

সকৌতুকে বলেন, 'তা তোমার মেজবৌ তো ছোটকালে বিয়ে 
পছন্দ করে না, রাজশ হয়েছে ? 

“ছোটকালে ?' মুস্তকেশশ একট; চাপা ঝঞ্কার দিয়ে ওঠেন। 'ছোট আবার 
কোথায় বৌ ? তোমার কাছে তো আর কিছ অছাপা নেই? এগারো বলে 
চালাচ্ছ, তেরো ভরে গেল নাঃ তা মেজবৌমা আমার মুখে চুনকাদি 
নেপেছে! বিরাজের সেই সম্পকে ননদ কুটুম্ব-সূত্র ধরে এসসোছল কনে দেখতে। 
তুই বৌমানূষ, চুপ করে থাক্‌, বড়বৌমা তো মুখে রা কাড়ে ি। মেজবৌমা 
তাদের সঙ্গে গলগাঁলয়ে গপ্পো করে করে বলে বসোঁছল, “ওমা, এগারো 
আবার ক ? সে তো দু বছর আগে ছিল! দুজনই ওরা তেরো পুরে গেছে! 
মা বোধ হয় ভুলে গেছেন। নাঁত-নাতনীর সংখ্যা তো কম নয়! সু 
মেয়ের ঘর 'মাঁলয়ে কোন না পণ্টাশ ?৮...সেই নিয়ে কি হাসাহাসি! 
আমার বৌয়ের গণ! 


গ্বর্ণনতা ২১৩ 


শ্যামাসুন্দরশী বলেন, "একটু সাঁত্যবাদী আছে কিনা-_, 

ওগো সাঁত্যবাদশী আমরাও। তবে অত সাত্যবাদী হলে তো আর সংসার 
চালানো যায় না! সব দিক বজায় রাখবে তুমি ফিসের জোরে ? মানমর্াদা 
রক্ষে রাখবে কিসের জোরে! “মধ্যেই ঘরের আচ্ছাদন, “শমধ্যে”ই চালের 
খুশট! সংসার তো করলে না কখনো-: 

শ্যামাসুন্দরীর এই মুস্ত জীবনের প্রাতি মুস্তকেশীর বরাবরের ঈর্ষা! 

শ্যামাসন্দরণ বোঝেন, এখন প্রসঙ্গ পারবর্তনের প্রয়োজন। বলেন, 
বোসো ঠাকুরঝি, ডাব কেটে আনি । তা বিয়েটা কবে নাগাদ হবে ? 

'হবে” এই শ্রাবণের মধ্যেই দিতে হবে। নচেং তিন মাস হাত-পা গুটিয়ে 
বসে থাকতে হবে। যেও তা হলে।' 

'যাক। তৃঁমি বোসো।" ডাব কাটতে চলে যান শ্যামা। 


॥হ্৬ড | 


কিন্তু ভাগ্সেদের মেয়ের বিয়ের পরামর্শ দতে এসে যে এমন দিশেহারা দশ্যের 
পামনে পড়তে হবে, এমন ধারণা কি "ছল শ্যামাসৃন্দরীর ? 

দেখতে হবে এমন ধারণা তো ছিল না, 'বিষয়বস্তুটাও 
ধারণাতীত। 

তবু দেখতে হলো । 

দেখলেন সুবর্ণল্তা ছেলে 'িটোচ্ছে। বরাবর শুনে 
এসেছেন, সুবর্শলতা নাক ছেলেমেয়েদের গায়ে হাত 
তোলে না। নাক ছেলে ঠেঙানো তার দু-চক্ষের 'বিষ। 
অন্য জায়েরা ছেলে মারলে রাগ করে। বলে? “তোমার 
অধীনের প্রজা বলেই তুম মারবে? তাহলে আর তুমি যার প্রজা, সে-ই বা 
তোমায় ছেড়ে কথা কইবে কেন ?, 

সৃবর্ণলতা ছেলে 'পটোচ্ছে! 

অথবা শৃধ্‌ ?পটোচ্ছে বললে ছুই বলা হয় না। ক্ষ্যাপা জন্তুর মত 
ছেলেটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্য আরুমণে তাকে যেন শেষ করে 'দতে 

| 

বিধ্বস্ত হয়েছে নিজের কেশবেশ+ চেশ্চাবার শান্তও বুঝি নেই। শুধু 
৮৮৮৯০%-০০ উল্টেপাল্টে মারছে। 

উমাশশণ ছাড়িয়ে নিতে পারে নন, পারে নি ছোটবো বিন্দু, মুন্তকেশী 

তারস্বরে চেশ্চাচ্ছে, 'মেরে ফেলবে নাক ছেলেটাকে £ মেরে ফেলবে নাক ? 
ওমা এ কী খুনে মেয়েমানুষ গো! ওগো বেটাছেলেরা যে কেউ বাঁড় নেই গো, 
আঁম এ বৌকে নিয়ে কশ কার? অ সেজবৌমা-_ 

“সেজবৌমা' অর্থে শিরিবালা । 

পারেন নি, কারণ ওটাও ধারণা-বাহর্ভূত বস্তু। 

পরের ছেলেকে এমন মার মারে কেউ ? 

অবশ্য ছেলেটাই যে নীরবে পড়ে মার খাচ্ছে এমন নয়। চারখানা হাত- 
পায়েন্স সাহায্যে যৃগ্ধজয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। তাতেই সুবর্ণলতার 





২১৪ সুবর্ণলত 


কাপড় 'ছিড়েছে, চুল খুলে গেছে, গুড়ো হয়েছে হাতের শাঁখা। 

প্রহারের শব্দ, ছেলেটার চৎকারের শব্দ, বাঁড়র অন্যান্য ছোট ছেলেদের 
ভনত-কল্দন শব্দ আর সুবর্ণলতার অনমনশয় মনের তীব্র ঘোষণার শব্দ, 'মেরেই 
তো ফেলবো, খুনই করবো! এমন কুলাঙ্গার ছেলের মরাই উঁচিত।'.. 

এমন এক অদ্ভুত পাঁরবেশের সামনে এসে দাঁড়ালেন শ্যামাসূন্দরী। 

তারপর ব্যাপারটা বুঝে ফেলার পর ছুটে এসে মল্লযুদ্ধের দুই 'যোম্ধার 
মাঝখানে পড়ে বলেন, ক হচ্ছে মেজবৌমা 2 খুনের দায়ে পড়তে চাও 2 

বললেন। 

তব ব্যাপারটার কতটুকুই বা বোঝা হয়েছে তাঁর! 

ছেলেটা যে সবর্ণর নয়, গিরিবালার, তা বুঝতে পারেন নি। 

তবু বলে উঠোছলেন, 'ছেলেটাকে ?ক খুন করবে মেজবৌমা ?, 

হ্যাঁ, তাই করবো।' সংবর্ণলতা ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকে। 
ওকে একেবারে জন্মের শোধ খুন করে ফেলে ফাঁস যাবার বাসনাটাও ঘোষণ। 
করে। 
এ এই সময়ই 'ব্যাপারটা বুঝে ফেলেন শ্যামাসুন্দরী। বুঝে চমকে 
ও 1 

ছেলেটা গারবালার। 

তার মানে? এই প্রাণঘাতী প্রহারটা দিচ্ছে সুবর্ণ নিজের ছেলেকে নয়, 
পরের ছেলেকে 2 

সুবর্ণ কি তাহলে সত্যই বিকৃতমাঁস্তজ্ক ? 

শ্যামাসন্দরী এ পারস্থিতির জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। তব. শ্যামাসূন্দরাঁ 
নিজেকে প্রস্তুত করে নেন। ছেলেটাকে কাছে টেনে নিয়ে বলেন, 'বুঝোছ 
কোনো ঘোরতর অন্যায় করেছে ছেলেটা, তবু আঁমই ওর হয়ে মাপ চাইছি 
মেজবৌমা! 

এবার এতক্ষণে শারবালার মুখে বাকস্ফৃর্ত ঘটে, 'আপাঁন মাপ চাইলেই 
তো হবে না মামীমা, থানা-পুলিস করে ছাড়বো আমি! 

পারাস্থাত যাই হোক, গারবালার ওই 'থানা পুলিসে'র ঘোষণাটাও ঠিক 
বরদাস্ত করতে পারলেন না শ্যামাসুন্দরণ, অসন্তুষ্ট স্বরে বলে উঠলেন, শছ ছি 
সেজবৌমা, এ কী কথা! এ কথা উচ্চারণ করা তোমার ভাল হয় নি। ছেলে 
দোষ করেছে, জেঠি দু ঘা মেরেছে, এই তো কথাঃ বুঝলাম রাগের মাথায় 
মারটা একট: বেশীই হরে গেছে। তাসে তোমার নিজেরও হতে পারতো। 
তাই বলে জোঠকে তুমি পিসের ভয় দেখাচ্ছ ছেলের সমক্ষে ঃ ছি ছি! 

শ্যামাসুন্দরী নিতান্তই বাপের বাড়ির সম্পর্কে একমান্ন এবং নিতান্তই 
[িকটজন, তাই মুস্তকেশশ তাঁকে যথেন্ট পদমর্যাদা 'দয়ে থাকেন, তবু আক্জ 
আর দিয়ে উঠতে পারলেন না। 

বিরৃপ মন্তব্যের উপর ছার চালান. তুমি থামো বৌ! 

থানা-পৃলিসের লাম সেজবৌমা সহজে করে নি। ও তো মা, শি 
যে দাঁড়য়ে সহ্য করেছে, তাতেই বাহাদ্বার দাও ওকে! ওই 
পরভোলানীকে বুঝতে তোমার এখনো দেরি আছে বৌ। এতখানি বয়েস 
হলো. এমন জাঁহাবাজ মেয়ে দেখলাম না কখনো। ছেলেপুজে কোথায় কি 
খেলা করছে, সোঁদকে তোর নজর দেবার দরকার 'কি? আর দোষের খেলাই বা 


সৃবর্ণসতা ২১৫ 


কি খেলেছে ১ বড়বৌমার ছেলেরা সম্প্রীত দারোগা মেসোর বাঁড় ঘুরে এসে 
গপ্পোগাছা করেছে তাই শুনে “দারোগা” সেজে খেলবার বাসনা হয়েছে, এই তো 
কথা ১ খেলায় ছেলেপুলে কখনো রাজা হয়” কখনো মন্তী হয়, কখনো চোর 
হয়, কখনো জল্লাদ হয়, সেটা ধর্তব্য £' 

ঘটনাটা ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে শ্যামাসুল্দরীর। 

দারোগা-বাঁড়র গল্প শুনে 'গারবালার ওই বীর সন্তানাট দারোগা সেজে 
স্বদেশ পাজাদের শায়েস্তা করা করা খেলা করাছল। নিরীহ দু-চারটে কুচো- 
কাচাকে স্বদেশী সাজিয়ে নিজে জামা টুপ ও বুটজতোয় সাজ সম্পূর্ণ করে 
সেই সবুট পদাঘাতের সং্গে স্বদেশীদের প্রাতি যথেচ্ছ কটটীন্ত করার খেলাটা 
নাক হীতপূকে দু-একদন হয়ে গেছে, এবং সুবর্ণলতা নাক সে কথা শুনে 
কড়া নষেধ করে 'দিয়োছল। 

তথাপি অমন মনোমত খেলাট সে ছাড়তে পারে নি, আবার আজ তোড়- 
জোড় করে শুর করেছিল, আর পড়াঁব তো পড় খোদ মেজজেোঠরই সামনে । 

একেবারে বুটপরা পা তোলার মহামৃহূর্তে । 

পরবতর্ট দৃশ্য ওই । 

শ্যামাসৃন্দরীর জানা হয়ে গেছে ঘটনাটা, তাই শ্যামাসূন্দরী বলেন, “তা 
ওকেও বালি, জেঠি মখন দু-াতন দিন নিষেধ করেছে, তখন ওই খেলাঁটিই বা 
খেলা কেন ?' 

মুক্তকেশ বিকৃতকণ্ঠে বলেন, “ভারী আমার মহারাণী এসেছেন সংসারে! 
তাই সংসারসুদ্ধ লোক গর নির্দেশে ওঠ-বোস করবে!. বেশ করেছে ও ওই 
খেলা খেলেছে! ওই স্বদেশী মুখপোড়াদের অমাঁনই শাস্তি হওয়া উাচিত। 
ওই মুখপোড়াদের জন্যেই তো দেশে যত অশান্তির ছিম্টি হয়েছে। তাছাড়া 
অপরের ছেলে ?ক করেছে, না করেছে, তাতে তোর নাক গলাবার কি দরকার ? 


তুই মারবার কে ? 
চিরাদনের দোষ, শ্যামাসুন্দরী ন্যায়পক্ষ সমর্থন করে 

বসেন। 

অন্তত গুর কাছে যেটা ন্যায় মনে হয়। তাই শ্যামাসুন্দরী অসন্তুষ্ট 
গলায় বলেন, 'এ তোমার কি কথা ঠাকুরাঁঝ? ছেলে দোষ করলে জেঠি, খাঁড়, 
ঠাকুমা, পাঁসতে শাসন করবে না? 

'করবে শাসন, তাই বলে খুন করে নয়! সেজবৌমা ঠিক কথাই বলেছে, 
ওর হাতে দাঁড় পরানোই উচিত ।' 

হ্যাঁ, সেই কথাই বলেছে গারবালা। 

বলেছে, “গর হাতে যাঁদ আমি দাঁড় পরাতে না পারি তো আমার নাম 
নেই। আঁমও একটা উাকলের পাঁরবার। কিসে কি হয় জানতে বাকি নেই 
আমার!' 


কিন্তু উকিলের পাঁরবারের সেই দচ্ভোন্ত কি সাঁত্যই কার্যকরী 
হয়োছল 2 

সৃবর্ণলতা নামের বৌটার হাতে দাঁড় পড়োছিল ? 

তা যাঁদ হয়, তাহলে নিশ্চয়ই চাঁপা ও মাল্লকা নামে মেয়ে দুটোর বিয়ে 
হয়ে ওঠে নি? 


২১৬ সুবর্ণলতা 


সংসারে একটা ভয়াবহ তছনছ কাণ্ড ঘটে গেছে? 

তা সোদিনের সেই পাঁরাম্থাত মনে করলে তাই মনে হয় বটে! 

কিন্তু সেসবের কিছুই হয় নি, ষথারীতিই সবাবধ অনুষ্ঠান সহকারে 

হয়ে গেছে। 

না হবে কেন? 

একেই তো 'জল্ম, মৃত্যু, বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে।' 

উম এ প০২াস্পীিটিক জশব 
অঞ্পই আছে। 

এরা জলে ডোবে না, আগলে পোড়ে না, খাঁড়ায় কাটে না। মনে হয় 'গেল 
গেল সব গেল--', আবার দেখা যায়, কই কিছুই হল না। 

আবার থারশীতি সংসারে ভাত চড়ে, ডাল চড়ে, খাওয়া-শোওয়া হয়, কাঁচ- 
গুলো বড়ো এবং বড়গুলো বুড়ো হতে থাকে, এবং শতন বিধাতা” ঘাঁটিত ওই 

অব্যহত গাঁতিতে চলতে থাকে। 

মৃন্তকেশীর সংসারেও তার ব্যতিক্রম ঘটে 'নি। 

বিয়েতে শাঁক বেজেছে, উলু পড়েছে, লোকজন খেয়েছে, জগু এসে বিরাট 
হাঁকডাক সহযোগে যাঁজ্ঞ দেখেছে ও পাঁরবেশন করেছে এবং শ্যামাসৃল্দরণীও 
অন্তুঃপূুরের অনেক কাজ সমাধা করেছেন। এবং মুস্তকেশী 
নিয়ে রপারস করেছেন। 

মোটের মাথায় অনুষ্ঠানের ন্রুটি হয় নি। 

শুধু বিরাজ তখন আর একবার মৃত সম্তানের জের টেনে আঁতুড়ঘরে বসে 
থেকেছে, আসতে পারে দীন, আর আসা হয় নি সুবালার । 

সৃবালার সংসারে তখন দৃ-্দুটো বিপৎপাত। 

একে তো ফুলে*্বরী হঠাৎ মারা গেলেন, তার উপর হঠাৎ ওই অসময়়েই 
ঘাড়ের উপর উ*চোনো খাঁড়াখানা ঘাড়ে পড়লো সবালাদের। 

অম্বিকা ধরা পড়লো । 

অম্বিকার জেল হলো। 

হবারই কথা। 

আশঙ্কার প্রহরই তো গৃনাছল। সে যাক্‌__বিয়েতে যে আসা হল না 
সেটাই হচ্ছে কথ । 

তবে সব শৃনাতার পূরণ হয়ে গিয়োছল মুস্তকেশীর সুরাজের আসায়। 

বিয়েতে সূরাজ এসোঁছল। 

অবস্থা আরো ফিরেছে, স্বামীর আরো পদমর্যাদা হয়েছে। দুই ভাইঝিকে 
দু-দুখানা গহনা, 'দিয়েছে। 

আর তারপর ? 


বহ্হত্ভীক্ প্প্া 


১ 


তারপর 'দন গাঁড়য়ে যাচ্ছে। 

অনেকগুলো বর্ধা, নসন্ত" শীত, গ্রীল্মের আসা-যাওয়ার সূত্র ধরে 
মানুষের চেহারাগযলোর পরিবর্তন ঘটেছে । 

চেহারা 2 

ত। শুধু চেহারাই। 

দ্বভাং শামক বস্তুটার তো মৃত্যু নেই। ও নাকি 
ঘৃতুর ওপর পর্যন্ত ধাওয়া করে 'নজের খাজনা আদায় 
করে নেয়। 

তাই কাঁচা চুলে পাক ধরে, চোখ কান দাঁত আপন 
আপন ডিউটি সেরে বিদায় নিতে তৎপর হয়, শুধু 
দ্বভইব তার আপন চেয়ারে বসে কাজ করে চলে। 

দন আর রান্নিৰ অজস্র আনাগোনায় অনেকগুলো বছর কেটে গেছে কেটে 
গেছে অথশক বিষণ প্রহর, অনেক দুঃসহ দণ্ড আর পল। সৌদন যারা জীবন 
নাটকের ফাতাখানা খুলে মণ্টে ঘোরাফেরা করাছিল, অনেক অঙ্ক, অনেক 
গর্তাক পার হয়ে গেল তারা। 

স্বদেশী' নামের যে দুরন্ত ক্ষাপাঁমিটা তছনছ করে বেড়াচ্ছল শৃঙ্খলা 
আর শ্‌ঙ্খল, সেই ক্ষাপামটা যেন 'নজেরাই তছনছ হয়ে গেল গুলির বারুদে, 
ফাঁসর দড়িতে, অন্তহাঁন কারাগারের অন্ধকারে । হারিয়ে গেল অন্য শাসনের 
আশ্রয়ে পালিয়ে গিয়ে, চালান হয়ে গেল কালাপাঁন পারের 'পুঁস-পোলাও' 
নামের মজাদার দেশে ।...শুরু হলো পাকা মাথার পাকাম। আজাপ আব 
আলোচনা, আবেদন আরা নবেদন। এই পথে আসবে স্বাধীনতা। 

এরা বজ্ঞ, এরা পাণ্ডত, এরা ব্যাদ্ধমান। 

এপ্রা ক্ষ্যাপার দলের ক্ষ্যাপা নন। 

অনেক ক্ষ্যাপার মধ্যে একটা ক্ষাাপা আম্বকা নামের সেই ছেলেটা নাঁক 
কোথ।কার কোন্‌ গারদে পচছে+ কিন্তু তার জন্যে পৃথিবীর কোথাও কিছুই 
ক আটকে থাকলো * 

নাঃ, আটকে থাকলো না কিছুই ! 

শুধু অবহেলা আর অসতর্কনার অবসরে হাঁবয়ে গেল সুবর্ণলতার 
ক্রীবনর অনেকগুলো অধ্যায়। ছড়ানো ছেস্ডা পচ্ঠাগুলো বার বার উল্টে 

ল্টও কোথাও সেই হাতব্‌ত্তের সূত্রটা খশ্জে পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে 

সুব্ছিভার 'ঘরভাঙা'র বর্ণনা লীপবদ্ধ আছে। 

অথঢ দেখা যাচ্ছে, সূবর্ণলতা ঘর ভেঙে বোৌরয়ে এসে আবার ঘর্‌ গড়েছে। 

কিন্তু অধায়গুলোতে কি নতুনত্ব ছিল কিছু ১ চাঁপার পর চন্লনের বিয়ে 
হয়ে গিয়োছল : উল্লেখযোগ্য শুধু এইটুকুই। কারণ মানুষের ইতিহাসের 
বিষে তিনটি ঘটনার মধ্যে ওটা নাক অন্যতম । 

হা শুধু এ চল্লনের বিয়ে ! 

তা ছাড়া আর কি | 

সুবর্ণলতার বাঁক ছেলেগুলোর গায়ের জামার মাপ বাড়তে বাড়তে প্রমাণ 
সাইজে গিয়ে ঠেকেছিল, এটাও যাঁদ খবর হয় তো খবর। অথবা 'মুস্তকেশীর 





২২০ সুবর্ণলতা 


ছেলেদের চূলে পাক ধরোছিল, মুস্তকেশশর কোমরটা ভেঙে ধনুক হয়ে যাচ্ছিল, 
আর মুহ্তকেশীর বৌরা আর শাশুড়ীর দরজায় গিয়ে মা আজ কি কুটনো 
কুটবো? এই গুরুতর প্রশ্নটা করতে মাঝে-মাঝেই ভূলে যাঁচ্ছিল-_এসবকেও 
খবরের দলে ফেলতে চাইলে ছিল খবর ! 

কিন্তু সবচেয়ে বড় খবর তো '“দ্বভাব' নামক 'জিনিসটা নাকি মরে গেলেও 
বদলায় না। তাই বাঁক ঘটনাগুলোর ছাঁচ খুব বেশি বদলোছল বলে মনে 
হয় না। 

হয়তো সুবর্ণলতা তেমাঁনই আঁবশ্বাস্য-আঁবম্বাস্য দুঃসাহাঁসিক সব ঘটনা 
ঘটাচ্ছিল, হয়তো মুন্তকেশীর মেজ ছেলে তেমনিই সর্বসমক্ষে একবার করে 
তেড়ে উঠে বৌকে শাসন করাঁছল, আর একবার করে আড়ালে গিয়ে নাক-কান 
মলাছল আর পায়ে ধরাঁছল।... 

হয়তো সৃবর্ণলতা সেই ঘৃণায় আর ধিক্ারে আবারও ভাবতে বসৌছল 
কোনূটা সহজ 2. কোন্টা বোঁশ কার্যকরী? বিষ না দাঁড়? আগুন না 
জল? আর শেষ পর্যন্ত কোনোটাই সহজ নয় দেখে রান্নাঘরে নেমে গিয়ে 
বলাছিল, 'বামুনাঁদ, আমায় আগে চারাঁট দিয়ে দাও তো! শযয়ে পাড় গিয়ে! 

আর কি হবে? 

দরাজপাড়ার এ গালিটার মধে) তার কোন স্বাদের বাতাস এসে ঢুকবে 2 
আর কোন্‌ বোচত্রের বাণী উচ্চাঁরত হবে ১ 

তবে বোৌচন্লের কথা যাঁদ বলতে হয় তো বলা যায়-_মুক্তকেশীর বড়জামাই 
কেদারনাথ মুন্তকেশীর মুখরক্ষার চিন্তা না করেই দেহরক্ষা করেছেন, আর 
পেটরোগা সুশীলা হঠাৎ আলোচাল মটরডাল বাটার খপ্পরে পড়ে গিয়ে রস্তু- 
আঁতিসারে ভূগছেন। আর বৈচিন্য--উনিশ বছরের মাল্পকা বিধবা হয়ে এসে 
পায়ে হাজা ধাঁরয়ে বসেছে। 

মুস্তকেশ আক্ষেপ করে বলেন, 'মনে করোছলাম পোড়াকপালন সর্বখাকণ 
এসে তবু আমার একটু সুসার হলো, আমার হাত-নড়কুৎ হবে, আমাকে এক 
রাকা তা নয়, আম এই তিনঠেঙে বুড়শ এ দাস্যর ভাত রেখে 
রাঁছি!' 


বড় দুঃখেই বলেন অবশ্য। 

বৌদের শপতোশ' জীবনে কখনো করেন নি, এখনও চান যে অহঙ্কারের 
নাথায় নিজের ভাত 'নজে ফাঁটয়ে খেতে খেতে চলে যাবেন, কিন্তু কোমরটা 
বড়ই বাদ সাধছে। 

এখন টের পাচ্ছেন কেন বলে, 'কোমরের বল আসল বল!” 

মাল্লকাটার কপাল পোড়ায় নিজের কপাল ছে*চেছিলেন সাঁত্য, তব্‌ ভেবে- 
ছলেন, এ তো পরের মেয়ে নয়, ঘরের মেয়ে, এর কাছে একট 'পিত্যেশ করলে 
অহঞ্কারটা খর্ব হবে না। তা উল্টো বপরীত। তার ভাত নিয়েই ডেকে ডেকে 
মরতে হয়, স্নান আর শেষ হয় না তার। 

তা ছাড়া বৌরাই বা কে কোথায় ? 

সেই বাঁধানো সংসার আর নেই এখন। বড়বৌয়ের শরীর ভেঙেছে, মন 
ভেঙেছে, মেজবৌ বরের পয়সার দেমাকে এ বাঁড়র ভাগ ছেড়ে দিয়ে অন্যনত বাঁড় 
হাঁকড়েছেন। সেজ. ছোট, দৃই বৌ একই রাম্নাঘরে ভিন হাঁড়।...মূত্তকেশী 


সুবর্ণলতা ২২১ 


এখন ভাগের মা! 

তনু মেজটারই চোখের চামড়া আছে, দূরে থেকেও মুন্তকেশীর ব্যয়ভার 
বহন করে সে, সময় অসময়ে দেখে, মুস্তকেশশর ইচ্ছেপুরগের খাতে যা খরচাপন্র 
হয় দায় পোহায়। 

সুবোধের সামান্য কশট টাকা পেনসন, করবেই বা কি; আর দুটো তো 
কঞ্জসের একশেষ।...নিজের সেই জমজমাট সংসার আর দাপটের দিনগলোর 
কথা মনে পড়লে নিঃ*বাস পড়ে মুস্তকেশীর...নিতান্ত রাগের সময় ঘরে বসে 
আঙুল মটকানো আর গাল দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। এমন কি গলাটা 
সৃদ্ধ বাদ সেধেছে, চেশচয়ে কাউকে বকতে গেলেই কাশতে কাশতে দম আটকে 
আসে ।...মুস্তকেশী অতএব আঙুল মটকান, আর ভাঙাগলায় থেমে থেমে 
বলেন, 'মরছেন সব চক্ষুছরদের অহঙ্কার মরছেন! আঁমও মুস্তকেশী বামন, 
এই বাণসমূখে বলে যাচ্ছ, যে দুগৃাত আমার হচ্ছে' সে দুগৃগাত তোদেরও 
হোক। 

[িল্তু দেই 'ওরা' কারা £ 

শুধু কি মুস্তকেশীর বৌ কটা? 

তা বললে আঁবিচার করা হবে। মূন্তকেশী অত একচোখা-নন। মৃস্তকেশী 
তাঁর ?নজের মেয়েকেও বলেন। বিরাজ যখন বেড়াতে এসে ভাই-ভাজদের কাছে 
সারাক্ষণ কাটিয়ে চলে যাবার সময় একবার এ-ঘরে এসে ঢোকে. বলে 'মা কেমন 
আছ গো?" তখন মুক্তকেশী ভারীমুখে বলেনঃ খুব হয়েছে! আর মা'র 
সোহাগে কাজ নেই' বাছা। যাদের চক্ষুছরদ আছে, তাদের কাছেই বোসো গে।' 

আর চলে গেলে বিড় বিড় করেন। 

[কম্তু সে তো শেষের 'দিকে। 

সুবর্ণ যুখন ঘর ভাঙলো তখন কি মুতকেশীর কোমর ভেতোছল 

নাঃ. তখনও মুস্তকেশীর কোমর ভাঙে নি! 


তখনও মুস্তকেশী কিছুটা শন্ত 'ছিলেন। 
তখন মুস্তকেশীর শাপ-শাপান্তের গলা আকাশে উঠেছে। তখন 


মুস্তকেশী বৌ 'ভেন্ন' হয়ে যাওয়ায় বুক চাপড়েছেন, নেচে বেড়িয়েছেন এবং 
ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, 'আবার মাথা হেপ্ট করে ফিরে আসতে হবে ॥। থোঁতামুথ 
ভোঁতা হবে!" 

হবেই। 

কারণ ভেম্ন হয়ে বুঝবে কত ধানে কত চাল। এখন পাঁচজনের ওপর দয়ে 
সংসারের দায় উদ্ধার হচ্ছে। 

ণকল্তু মূস্তকেশীর সে বাণী” সফল হয়ান। 

সুবর্ণ ফিরে আসৌন। 

সুবর্ণ সেই 'ভাড়াটে বাঁড়' থেকে ণনজের বাঁড়'তে উঠে গিয়োছল। 

এজমাল এই বাঁড়টার নিজের অংশের ঘরখানা চাঁববন্ধ করে রেখে যায় 
নন সুবর্ণ, তার জন্যে টাকাও চায় নি। এমন ক ধারে ধীরে যে দু চারটে 
আসবাবপত্র জমে উঠোছল 'কাঁচা-পয়সা'ওলা প্রবোধের, সে-সবেরও কিছু নিয়ে 
যায় নি। 

নয়ে যায় নী নিজের বাসনপন্ন। 

শুধ; পরবার কাপড়-চোপড় আর শোয়ার বছানা- এই সম্বল করে বৌরয়ে 


২২ সৃবর্ণলতা 


পড়েছিল এই গাঁল থেকে । একদা যে গাঁলতে ঢুকে মর্মান্তিক রকমের ঠকোছিল 
সুবর্ণ। নতুন চুনের আর নতুন রঙের কাঁচা গন্ধে ভরা একখানা বাড়ির 
গোলকধাঁধায় ঘুরে বোঁড়য়েছিল দাক্ষণের বারান্দা খু'জতে। 

অবশেষে দাঁক্ষণের বারান্দা হলো স.বর্ণলতার! বড় রাস্তার ধারে! 

সবুজ রোলং ঘেরা, লাল পাঁলশ-করা মেঝে, চওড়া বারান্দা । 

সেই বারান্দার কোলে টানা লম্বা বড় ঘর। 

পৃবে জানালা, দাক্ষণে দরজা । 

এঁ পৃবটাকে আচ্ছন্ন করে কোনো বাঁড় ওঠে নি। খোলা একখানা মাঠ 
পড়ে আছে। ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে ভোরবেলায় সূর্য-ওঠা দেখতে পাওয়া 
যায়। 

আর কি তবে চাইবার রইল সুবর্ণলতার ? 

আর কি রইল অসন্তোষ করবার? আঁভযোগ করবার ? উত্তাল হবার 2 
বিষণ হবার 2 . 

সুখী, সন্তুষ্ট, সব আশা [মটে যাওয়ায় “সম্পূর্ণ” আর পারতৃপ্ত 
সুবর্ণলতার জণবনকাহিনগতে তবে এবার 'পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়া বায়। 

এরপর আর 'কি? 

বাঙালী গেরস্তঘরের একটা মেয়ে এর বোশ আর ক আশা করতে পারে 2 
আর কোন  প্রাপ্যের স্বপ্ন দেখতে পারে ? 

চরম সার্থকতা আর পরম সুখের মধ্যে বসে একটির পর একটি ছেলের 
বিয়ে 'দিয়ে ঘরে বৌ আনা, আর বাকি মেয়ে দুটোকে পার করা। এই তো! 

তা তাতেই বা কোথায় ঠেক খেতে হবে ? 

£তনটে ছেলে তো মানুষ হয়ে উঠলই, ছোটটাও হবে নিশ্চিত। লেখা- 
পড়ায় ধীতিমত ভালো। শেষের দিকের মেয়ে দুটো পারুল আর বকুল, দেখতে- 
শুনতে তো 'দিব্বি সুন্দরী, কাজেই ওদের নিয়ে ঝামেলা নেই। যে দেখবে 
পছন্দ করবে। 'পণে'র টাকা দিতেও পিছপা হবে না প্রবোধ। 

টাকা সে রোজগারও যেমন করে অগাধ, খরচেও তেমাঁন অকাতর এখনো 
হয়তো এ নেশা ধাঁরয়ে দিয়েছে সুবর্ই। খরচের নেশা !...কিন্তু হয়েছে 
নেশা! 

অতএব ? 

অতএব সুবর্ণলতাকে নিয়ে লেখার আর কিছু নেই। 

গৃহপ্রবেশের সময় কিছহ হয় নি, তাই তার কাছাকাঁছ সময়ে এই উপলক্ষটা 
নিয়ে লোকজন খাইয়োছিল প্রবোধ। 

কন্তু এ ঘটনার মধ্যে সে প্রশ্নের উত্তর কোথায় ? 

এ তো রাঁতিমত সুখাবহ ঘটনা! 

তবে সুবর্ণলতার রশীত অনুযায়ী হয়তো দঃখের। ওর তো সবই 
[বপরাঁত। যারা ওকে নিয়ে ঘর করেছে আর জবলেপুড়ে মরেছে তারা সবাই 
বলেছে, শবপরীত ! সব বিপরীত! বিপরীত বা্ধ, বপরণত 'চন্তা, গিবপরপত 
আচার-আচরণ !' 

অতএব ঘটনাকে 'লাপবদ্ধ করেই দেখা যাক। 

প্রথমে নাঁক প্রস্তাবটা তুলোছল প্রবোধই। আর সেই প্রথমে নাকি 
সুবর্ণলতা বলোছল, 'গুরু-মল্মটন্ 1্নাচ্ছ না এখন। যাঁদ কখনো তেমন ইচ্ছা 


নুবর্ণলতা ২২৩ 


হয ষাঁদ কাউকে এমন দেখি মাথা আপাঁন নত হতে চাইছে “গুরু” বলে. তখন 
দেখা যাবে। 

আলাদা হয়ে আসার পর কছাাদন চক্ষুলজ্জায় "ও-বাঁড়' যেতে পারে গন 
গ্ুবোধ, কিন্তু সুবর্ণলতার প্ররোচনাতেই যেতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। "মায়ের 
হাতখরচ' বলে মাঁসক পণচশ টাকা করে 'দয়ে পাঠিয়েছে সুবর্ণ একরকম জোর 
করে। 

প্রবোধ বলেছে, “অত ধান্টামো করতে আম পারবো না। ও টাকা মা পা 
দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবেন! 

সুবর্ণ বলোছল, “একবার ফেলে দেন, তুম বার বাব পায়ে ধরে 'িইয়ে 
ছাড়বে! মায়ের পায়ে ধরায় তো লঙ্জাও নেই, অর্মান্যও নেই! 

তা শেষ পর্যন্ত যেতে হয়োছল। 

যাঁদও ছোট ভাইরা বাঁকা হাঁসি হেসে “তুমি যে হঠাং ? বলে উত্তরটা না 
নিয়েই চলে গিয়েছিল, এবং সুবোধ গম্ভীর-গম্ভীর বিষপ্ন -বিষগ্ন মুখে বলে 
ছিল, 'ভাল আছ তো? ছেলেপুলে সব ভালো 2 আর বাঁড়র ছেলেমেয়ে- 
গুলো আশপাশ থেকে উপকঝ্‌পক মারহ্থিল, কথা বলে নি, আর মাস্তকেশী 
দেখেই ডুকরে কেদে উঠোছলেন, তথাঁপ ট্রাকাটার সদশগগতি হয়োছিল। 

পা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন নন মূন্তকেশী। শুধু ভারী মূখে বলোছলেন, 
'হুমি যখন লজ্জার মাথা খেয়ে আগ্রহ করে দিতে এসেছ, তখন আর তোমার 
মূখটা ছোট করবো না! দিচ্ছ রাখাঁছ। তবে কেন আর ছেণ্ডাচুলে খোঁপা 
বাঁধার চেম্টাঃ তৃঁম তো সব সম্পর্ক তুলেই দিয়েছ! 

উেনো খাঁড়া ঘাড়ে পড়ে নি। এ পর্তেই হয়েছে। 

তা সৌদনের সেই নশ্চন্তার পর থেকে প্রবোধ নিত্য ওপাড়ার ঘাত্রণ। 
ওপাড়ার তাসের আভন্ডাও 'প্রবোধহনন' হচ্ছে না। 

আর মজা এই- বাঁড়তে থাকাকালে দিনান্তে মায়ের সঙ্গে যতটুঞ্ গল্প 
হতো, মায়ের কাছে যতটকু বসা হতো, তার “চতৃর্গণ' হচ্ছে এখন। আর সেই 
অবসরেই মুস্তকেশশ তাঁর অন্য ছেলে-বৌদের সমালোচনা করে করে মনের ভার 
মস্ত হয়ে একাদন এ গুরুমন্যমের কথা তুলোছিলেন। 

ওটা না হলে তো আর হাতের জল' শুদ্ধ হবে না! এতখান বয়েস 
হলো, অদীক্ষিত শরীর নিয়ে থাকা! ছিঃ! 

তা ছাড়া মরণের তো ধরন ঠিক করা নেই। কাজেই হঠাৎ একাঁদন যাঁদ 
দেহই রক্ষা করে বসে সুবর্ণলত তো সেই অদশীক্ষত দেহের গাঁত হবে ? 

সুবর্ণলতা বরের মুখে শুনে হেসে উঠোছল। বলোছিল, “গাঁতটা কি 
দেহের? না আত্মার ঃ তোমাদের এঁ কুলগৃরুর বংশধর বলেই যে এ গাঁজাখোর 
শ'টকো ছেলেটাকে গুর্‌ বলে পা-পৃ্জো করতে বসবো, সে আমার দ্বারা 
হবে না।' 
| ারন্জাজ দারদা নারির চার? করে- 
ছল ! 

বলোছিল, 'এসব হচ্ছে টাকার গরম ! 

এমন কি যার টাকার উত্তাপে এত গরম সৃবর্ণলতার, সেই প্রবোধই বলে- 

, “দুটো টাকা হয়েছে বলেই তার গরমে ধরাকে সরা দেখো না মেজবৌ! 
সেই ষে মা বলে, “ভগবান বলে-_দেব ধন, দেখবো মন, কেড়ে নিতে কতক্ষণ 2” 


২২৪ সুবর্ণলত 


সের্টাই হচ্ছে সার কথা! ভগবান মানুষকে দেন, দিয়ে পরণক্ষা করেন।' 

সুবর্ণলতা হেসে ফেলোছল। 

তোমার মুখে ভগবানের বাণী! এ যেন ভুতের মুখে রামনামের মত 
কিন্তু ক করবো বল? যাকে গুরু বলে মন সায় না মানে” 

প্রবোধ রেগে উঠে বলোছিল, 'তা তোমার গুরু হতে হলে তো মাইকেল 
নবীন সেন, বাঁঙ্কমচন্দ্রু, কি রাঁবঠাকুরকে ধরতে হয়! তাঁরা আসবেন তোমা 
দম ভার নতে দক্ষাহীন দেহের হাতের জল শব হয না তা জানো? 

এই কথা! 

যেন কে না জানে, 'এই কথা! বলে স্বর্ণ যেন একট মান্রা-ছাড়া হাঁ 
হেসোছল। তারপর হাঁসর চোখমুখ সামলে বলোছল, শুধু দেহ? তা; 
জন্যে এত দুশ্চিন্তা? তা নেব তাহলে “মন্তর”! & তোমাদের গেজের 
গুরুপুত্ুরের কাছেই নেব! দেহটার মালিক যখন তুম, তখন তোমার মনের 
মতন কাজই হোক ।' 

প্রবোধ অবশ্য এঁ হাঁস আর কথার মানেটা খুব একটা হদয়ঙ্গম করে নি 
মিরর কররক হদয়ঙ্গম করতে বোঝা যাচ্ছে রাজী হয়ে গেছে, আঃ 
ভয় নেই। 

কারণ একবার যখন কথা দিয়েছেন মেজা গল্নী, আর সে কথার নড়চড় হবে 
না। এই বেলা লাগয়ে দেওয়া যাক! 

অতএব__ 

অতএব গুরু্মন্তে দীক্ষা হলো সুবর্ণলতার। এ উপলক্ষে সমারোহে? 
কথা তো আগেই বলা হয়েছে। বিস্তর খরচ করে ফেললো প্রবোধ, বিস্তর 
গুরুদাক্ষণা দিলো। বললো, “এতটা কাল ধরে এত রোজগার করাছ, গে 
রোজগারে ভূতভোজন ছাড়া কখনো সংকাজ হয় 'নি। এ তবু একটা সংকাজ 
একটা মহৎ কাজে লাগলো ।' 

মুস্তকেশী এসে “যজ্ঞে”র হাল ধরোছিলেন। যজ্শেষে হম্টচিত্তে সকলবে 
বলে বেড়াতে লাগলেন, 'জানি আমার “পেবো” যা করণ-কারণ করবে, মানুষের 
মতনই করবে । মেজবৌমারও স্বভাবটাই ক্ষদপাটে, নজর উচু! আর চিরকালের 
ভন্তিমতী! দেখোছ তো বরাবর, গোন্রাহ্গণ, গুরু-পুরূত, কালী-গঞ্গা যখন 
যাতে খরচ করোছ, সব খরচ মেজবৌমাই যুগিয়েছে। যেচে যেচে সেধে সেে। 
তা ভগবানও তেমান বাড়বাড়ন্ত বাড়াচ্ছে। মনের গুণে ধন। 

মেয়েদের বিয়ের সময় যখন এ পেবোই একট: খরচপত্তর বৌশ করে 
ফেলেছিল, মূস্তকেশী “'ন ভূতো ন ভাবব্যতি' করোছলেন। বলোঁছলেন' 
“চালচাঁলয়াঁত দেখানো এসব! 

1কলন্তু এখন অন্য কথা বললেন। 

এখন কি তাঁর সেই একদার ভবিষ্যংবাণীর পরাজয়ে লঙ্জত হয়েছেন 
মুন্তকেশ? নাক ছেলের এই বাঁড়ঘর, এশবর্য, 'বিভাতি সব দেখে আভিভূত 


হচ্ছেন 2 

তাই মুন্তকেশীর ম্খ দিয়ে বেরোয়, 'কী খাসা ভাঁড়ারঘর মেজবৌমার, 
দেখলে প্রাণ জুড়োয়! 

পেবো অবশ্য অনেকবার চাঁপচ্পি অনুরোধ জানিয়োছল মাকে, এই 
থাকাতেই থেকে যেতে। 


সুবর্ণলতা ২২৫ 


সুবর্ণলতাও তার স্বভাবগত উদারতায় বলে ফেলোছল সে কথা ।-_-তা 
বেশ তো- এখানেই কেন থাকুন না। এটাও তো আপনারই' বাঁড়।' 

কিল্তু কেন কে জানে, মুস্তকেশী রাজী হন নি। 

মূন্তকেশী 'যাঁজ্ঞ' তুলে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন। 

আর কখনো সেকথা নিয়ে কথা ওঠে 'ন। 

শুধু সুবর্ণলতার বড় মেয়ে চাঁপা, যে নাক এই উপলক্ষে এসোঁছল. সে 
বলেছিল 'ঢের ঢের মেয়েমানূষ দেখোঁছ বাবা, আমার মাটর মতন এমন বেহায়া 
দুটি দোখ নি! আবার সাহস হলো ঠাকুমাকে এখানে থাকার কথা বলতে ?" 

কিন্তু সেটা একটা ধর্তব্য কথা নাক ? 

চাপা তো চিরটা কালই' তার মায়ের সমালোচনা করে। ওটা কিছু নয়। 

তবে? তবে দুঃখটা কোথায় 2 

তবে কি সেই পারুর স্কুলে ভার্ত করার কথাটাতেই ? 

তা হতেও বা পারে! 

চিরকালই তো 'তলকে তাল করা সুবর্ণলতার স্বভাব । 


॥* ॥ 


'পার্‌ বকুকে ইস্কুলে ভার্ত করার ক হলো? কতাঁদন ধরে বলাছ ষে-_' 

ভানুর কাছে এসে আবেদন জানিয়েছিল সুবর্ণলতা । 
বড় ছেলে, তার ওপর আস্থা এনোছল, বলোছিল, “তোদের 
বাপের দ্বারা তো হবে না, তোরা বড় হয়োছিস, তোরা 
1নাব ভার।, 

ভানু “আজ-কাল' করে এড়াচ্ছিল। একাঁদন ভুরু 
কোঁচকালো। ঠিক ওর সেজকাকা যেমন ভঙ্গীতে ভূর? 
কোঁচিকায়। 

ভুরু কুচকে বলোছল, “পারুকে এখনো ইস্কুলে ্‌ 
ভার্ত করার সাধ তোমার? আশ্চর্য মা! অত বড় ধিজ্গী মেয়ে ইস্কুলে যাবে 2 

'যাবে।' 

স্থর স্বরে বলেছিল সুবর্ণলতা । 

ভানু তথাঁপ কথা কেটেছিল, “গয়ে তো ভার্ত হবে সেই ক্ষুদে ক্ষুদে 
মেয়েদের সঙ্গে! লজ্জা করবে না? 

সুবর্ণলতা একবার ছেলের এ 'বিরন্তি-কুশ্ঠিত মুখের 'দিকে ননানমেষ দৃষ্টি 
হেনে বলোছল, “লজ্জা তো ওর করবার কথা, লজ্জা করবার কথা ওর বাপ-ভাই- 
য়ের নয় বাবা। কিন্তু একের অপরাধের লজ্জা অপরকে বইতে হয়, এই হচ্ছে 
আমাদের দেশের রীতি। তাই হয়তো করবে লঙ্জা। কিন্তু উপায় কি? 
একেবারে ঘরে বসে থাকলে তো লজ্জা আরো বেড়েই চলবে। 

ভানু যে মাকে ভয় করেনাতানয়! 

ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট করে। 

কিন্তু অতটা ভয় করে বলেই হয়তো বাইরে নভরয়'-এর ভাব ফোটাবার 
চেস্টা করে। তাই অগ্রাহ্ভরে বলে, 'লঙ্জার কি আছেঃ 'দাঁদ, চত্ন, ও- 

১৫ 





২২৬ সুবর্ণলত 


বাড়ির সব মেয়েরা, সবাই লজ্জায় একেবারে মরে আছে । আর এই বুড়োবয়ছে 
তোমার পারুলের ইস্কুলে ভার্ত হয়ে হবেটা কিঃ রাতাঁদন তো নাটক-নভেল 
গেলা হচ্ছে মেয়ের, আবার শুন পদ্য লেখেন, আর দরকার 2, 

স্‌বর্ণলতা আজকাল অনেক আত্মস্থ হয়েছে বোক। অনেক নিরুত্তাপ। 
তাই ফেটে না পড়ে সেই নরুত্তাপ গলায় বলে, মনের অন্য কোনো খোরাক 
নেই বলেই নাটক-নভেল পড়ে। লেখাপড়ার চাপ থাকলে করবে না। . যাক. 
তুম পারবে কনা সেটাই বল! 

“পারা না-পারার কথা হচ্ছে না, ভানু বিরন্ত গলায় বলে, “এরকম বিঃ 
কাজ করতে যে কী মুশাঁকল লাগে সে ধারণা নেই তোমাদের । তোমরা স্রেফ 
হুকুম করেই খালাস। তালগাছের মত এক মেয়ে নিয়ে ভার্তি করাতে যেতে 
হবে প্রাইমারী স্কুলে! মাথা কাটা যাবে না? 

সুবর্ণলতার বড় সাধ ছল যে তার ছেলেরা বাঁড়র এ অকালবৃদ্ধ কাদের 
ভাষা থেকে অন্য কোনো পৃথক ভাবায় কথা বলবে । যে কথার ভাষা হবে 
মাজত” সভ্য, সন্দর। যাতে থাকবে তারুণ্যের ওজ্জবল্য, কৈশোরের মাধূর্য, 
শৈশবের লাবণ্য। 

পুবর্ণর সে সাধ মেটে নি। 

পাগলের সব সাধ মেটাও শন্ত বোক। 

তা ছাড়া কথা শেখার সমস্ত বরেসটা পার করে ফেলে তবে তো এঁ অকাল- 
বদ্ধদের আবেষ্টন ছেড়ে আসতে পেরেছে সুবর্ণলতার ছেলেরা ! 

তা ছাড়া একখান বড় রকমের “আদর্শ তো চোখের সামনেই আছে! 

তাই ভানু কর্তাদের ভাষাতেই কথা বলে। 

বলে, “মাথাটা কাটা যাবে না? 

সুবর্ণলতা এঁ মাথা কাটার কথাটা নিয়ে আর কথা-কাটাকাঁট করে না। 
সুবর্ণলতা শুধু ঠোঁটটা কামড়ে বলে, “প্রাইমারী ইস্কুলে ভার্ত করতে হবে 
কেন? বলেছি তো অনেকবার, পারু নিজের চেম্টায় যতটা শিখেছে তাতে 
চার-পাঁচটা ক্লাসের পড়া হয়ে গেছে। সেই বুঝে উ্চ্‌ ইস্কুলেই দেবে?” 

ভানু অগ্রাহ্যের হাঁস হেসে বলে, “হ্যাঁ, মেয়েরা তোমার ঘরে বসে অর 
দত্ত তরু দত্ত হচ্ছে! তাই এখন থেকেই পদ্য ! 

কথা শেষ করতে পারে না। 

সুবর্ণলতা তঈব্রস্বরে বলে ওঠে' চিপ, চুপ। আর একটাও কথার দরকার 
নেই। মধ্যেই আশা করে মরোছলাম, চিনোছ তোদের সবাইকে । বুর্বোছ 
জীবনের সর্বস্ব “সার” দিলেও আমড়া গাছে আম ফলানো যায় না।' 

হ্যাঁ, সুবর্ণলতা বুঝেছে আমড়া গাছে আম ফলানো যায় না! 

তিল তিল করে বুঝেছে! 

বুঝে-বুঝেও চোখ বুজে অস্বীকার করতে চাইছিল এতাঁদন। যেমন 
অন্ধকারে ভূতের ভয়কে ঠেকিয়ে রাখতে চায় লোকে খোলা চোখকে বন্ধ করে 
ফেলে। 

কিন্তু ক্রমশই ধরা পড়ছে, আর মনের সঙ্গে মন-ভোলানো খেলা চলবে 
না। আর ছেলেমানুষের মুখের শেষ বাল” বলে ডীঁড়য়ে দেওয়া যাবে না। 

ভানুর বিদ্ুপব্যঞ্জক মুখভাঞ্গিমায়, চোখের পেশীর আকুণ্টনে, আর 
বাঁ্কম রেখায় স্পম্ট দেখতে পেয়েছে স্বর্ণলতা, এদের বংশের প্রথম 


স্বর্শলতা ২২৭ 


প্রভাসচন্দ্রকে। সংবর্ণলতাকে ব্যঙ্গ করাই 'ছল যার প্রধানতম আনন্দ। 

আর সব ভাজেদের আর বোনেদের এবং জানাশুনো সব মেয়েদেরই সুবর্ণ 
লতার সেজ দ্যাওর অবজ্ঞা করে এসেছে বার বার, কিন্তু সুবর্ণলতাকে অবজ্ঞা 
করে যেন সম্যক সুখ হতো না তার। 

তাই অবজ্ঞার সঙ্গে মেশাতো বিদ্রুপ । 

সেই বিদ্রুপ অহরহ প্রকাশ পেতো চোখের আকুণুনে, ঠোঁটের বাঁঙ্কম রেখায়, 


সুবর্ণলতার আর বুঝতে বাঁক নেই, সে গাছ কোনো মহশীর্হ হয়ে ওঠার 
প্রতিশ্রুতি বহন করছে না। সে গাছ বাঁশঝাড় মান্র। 

ষে বাঁশঝাড় বংশধারার অতুলন তুলনা ! 

আজ আর সন্দেহ নেই। 

আজ শুধু নিশ্চিত জানার স্তব্ধ নিশ্চেম্টতা। 

আজ আর নতুন করে আতথ্তের কিছু নেই। 

হঠাৎ আতাঁঙ্কত হয়োছল সেই একাঁদন। অনেকাঁদন আগে সেই যোদন 
'বড় হয়ে ওঠা" বড় ছেলের কাছে এসে হাঁস-হাঁস মুখে বলেছিল সবর্ণ, 'ভান,, 
তুই তো বড় হয়োছস, পাস দিলি, কলেজে ঢুকাঁলি, আমায় এক জায়গায় নিয়ে 
ষেতে পারাব? একলা চুপি চুপি” 

একলা চাঁপ চাপ! 

ভানু অবাক গলায় বলোৌছল. “তার মানে ? 

“মানে পরে বোঝাবো, পারাব কি না বল আগে! 

ভানু এই রহস্য-আভিযানের আকর্ষণে উৎসাহিত হয় নি। ভানু নিরস্তাপ 
গলায় বলেছিল. “কোথায় যেতে হবে না জেনে কি করে বলবো ?. 

“আহা' আম কি বাপু তোকে 'িলেতে নিয়ে যেতে বলছি! সবর্ণর চোখ 
তুরু নাক ঠোঁট সব যেন একটা কৌতুক-রহস্যে নেচে উঠোঁছল, “এখান থেকে 
এমন কিছুই দূর নয়, বলতে গেলে তোর কলেজেরই পাড়া-- 

ভানূর বোধ কাঁর হঠাৎ একটা সন্দেহ জেগোছিল, তাই' ভানু ভূরদ কুচকে 
প্রশন করোছিল, শক, তোমার সেই বাপের বাঁড় বুঝি? সে আমার দ্বারা 
হবে-টবে না।" 

সবর্ণর মুখের আলোটা দপ্‌ করে নিভে গিয়েছিল, সবর্ণর চোখে জল 
এসে গিয়োছল, সবর্ণর ইচ্ছে হয়োছল বলে, “থাক্‌. দরকার নেই, কোথাও 
যেতে চাই না তোর সঙ্গে ।' 
তাই জোর করে গলায় সহজ সুর এনে বলোছিল, “বাপের বাঁড়র কথা তোকে 
বলতে আঁস দন আঁম। তোদের মা হচ্ছে ভূ'ইফোঁড়, বাপেরবাঁড়-টাড়ি কিছ? 
নেই তার। বলছিলাম ছেলেবেলার সেই ইস্কুলটাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করে। 
সেই যে গরমের ছাঁটতে চলে এলাম, ইহজীবন আর চক্ষে দেখলাম না-_ 

হঠাৎ চুপ করে গিয়োছিল সুবর্ণ, অন্যাদকে মুখ 'ফাঁরয়োছিল। 

িন্ত ভানু মায়ের এই ভাব-বৈলক্ষণ্য বুঝতে পারে নি, অথবা বুঝতে 
চেষ্টাও করে ীন। ভানু যেন ব্যজ্গের গলায় বলে উঠেছিল, 'তা আবার গিয়ে 


২৬ সবর্ণলত 


ভর্তি" হবে! 

সবর্ণ তখনো আতঙ্কিত হয় নি, সুবর্ণ মনে করেছিল সবটাই ছেলে- 
মানুষের ছেলেমান্যূষ কৌতুক। 

যোলো বছরের ছেলেকে 'ছেলেমানুষ'ই ভেবোছল সুবর্ণ। 

তাই বলে উঠেছিল, হ্যাঁ, হবো ভা্ত! তুই জ্যাঠামশাই হয়ে আমাকে 
ঘাগরা পাঁরয়ে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ভার্তি করে দাবি! আরে বাবা, রাস্তা 
থেকে একবার চোখের দেখাটা দেখবো ।' 

'রাস্তা থেকে! 

ভানু যেন পাগলের প্রলাপ শৃনেছে। 

তা তবুও সুবর্ণ প্রলাপ বকেছে, “হ্যা, রাস্তা থেকে । হাঁ করে দাঁড়য়ে 
দাঁড়য়ে। ভয় নেই বাবা, গাঁড় থেকে নামতে চাইব না, শুধ গাঁড়টা একবার 
সামনে দাঁড় করাবি, জানলা দিয়ে একটু দেখবো । 

বলোঁছল আর ঠিক সেই সময় সেই হাসির আভাস ফুটে উঠোঁছল ভানুর 
মুখে, যে হাঁসি এ বাড়ির প্রথম গ্র্যাজ:য়েট প্রভাসচন্দ্ের একচেটে। আর তখনই 
ধরা পড়োছল ওর মুখের গড়নটা ওর সেজ কাকার মত। 

সংবর্ণ সহসা শিউরে উঠেছিল। 

তথাঁপ সংবর্ণ যেন মনে মনে চোখ বুজোঁছল। সুবর্ণ ভেবৌছল, কক্ষনো 
না, আম ভুল দেখোঁছ। 

তাই সুবর্ণ আবার তাড়াতাঁড় কথা বলে উঠেছিল, যেমন ভাবে ছোট 
ছেলেকে বক মায়েরা বলে, এত বড় হাল এটকু আর পারাৰ নাঃ তবে আর 
তুই বড় হয়ে আমার লাভটা 'কি হলো 2 

ভানু নিরুত্তাপ গলায় বলোছল, “কারুর লাভের জন্যে ক আর কেউ বড় 
হয়! বয়েস বাড়লে বড় হওয়া নিয়ম তাই হয়। ও তুমি বাবার সঙ্গো যেও, 
আমি বাবা মেয়েমান্ষকে নিয়ে কোথাও যেতে-টেতে পারবো না। সাধে তোমায় 
পাগল বলে লোকে! যত সব কিম্ভুতাঁকমাকার ইচ্ছে! 

সেই 'দিন। 

সেই দিন ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কে হাত-পা হিম হয়ে গিয়োছিল সবর্ণব। 
সুবর্ণ তার ছেলের মুখে তার সেজ দ্যাওয়ের ছায়া দেখতে পেয়োছিল। 

সুবর্ণ যে মনে মনে কল্পনা করে আসছে এযাবং, ভান বড় হয়ে উঠলেই 
সে একট: স্বাধীন হবে, সে পাথবশীর মুখ দেখতে পাবে, আর সেই দেখার 
পারাধ বাড়াতে বাড়াতে একাঁদন ট্রেনে চেপে বসবে বহযীদনের হাঁরয়ে যাওয়া 
একখানি মূখ দেখতে ! | 

কারো কোনো মন্তব্য প্রকাশের সাহস হবে না, সুবর্ণ বড় গলায় বলবে, 
ধ'আমার ছেলের সঙ্গে ফাঁচ্ছি আম, বলুক 'দাক কেউ 'কছু! উপয্স্ত ছেল্লর 
মা আম, আর তোমাদের কাঁচ খুকী বৌ নই! 

এবং তার সেই উপযুস্ত ছেলেও বলে উঠবে, 'সাত্যই তো, আম বড় হয়েছি 
আর আমার মাকে তোমরা অমন জাঁতার তলায় রাখতে পারবে না। 

কিন্তু স্বপ্ন ভেস্তে গেল। 

সবর্ণলতার ছেলে বললো, 'মেয়েমানুষকে নিয়ে রাস্তায় যাওয়া আমার 
বারা হবে না।' 

মেয়েমানুষ! 


সৃবর্ণজতা ২২৯ 


প্রাতটি অক্ষরে যেন মুঠো মুঠো অবজ্ঞা ঝরে পড়ছে। 

সা 

অশোধ্য খণের কু 

'ধবানাটর প্রাতিধান সদা ব্যলা করে, 
ধ্বনির কাছে খণণ সে যে পাছে ধরা পড়ে।" 

একদা যে এই মেয়েমানুষের দেহদূর্গে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, সে কথা 
অস্বীকার করার উপায় নেই। নিতান্ত অসহায় অবস্থায় তার সহায় ছাড়া গত 
[ছল.না. সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, তাই অবজ্ঞা দিয়ে ঢাকা দিতে 
হবে দেই খণ। 

অথবা আর এক উপায় আছে. 'আঁতিভান্ত'র জাঁকজমক। যেটা মুস্তকেশীর 
ছেলেদের, আরো অমন অনেক ছেলেদের । 

স্‌বর্ণর ছেলে দ্বিতীয় পথে যায় 'নি। 

সুবর্ণর ছেলে সহজ পথটা ধরেছে। 

রন্ত-মাংসের এই খণটা অশোধ্য একথা স্বীকার না করে সবটাই অবঙ্ঞ। 
দিয়ে ওড়াবে। 

আর তারপর ? 

যখন বড় হবে ? 

যখন ওর নিজের রন্ত-মাংস ওর শত্রুতা করবে 2 

যখন সেই শন্লুর কাছে অসহায় হবে? দূর্বল হবেঃ চির অবজ্ঞেয় ওই 
জাতটার কাছে 'ভক্ষাপান্র 'নয়ে দাঁড়ানো ছাড়া গাঁত থাকবে না ১ 

তখন আরো আক্লোশে মরীয়া হবে, অন্ধকারের অসহায়তায় সাক্ষণীকে 
মানুষ! মেয়েমানুষ ? 

'বেথুন ইস্কুলের বাঁড়খানা আর একবার দেখবার' বাসনাটা মেটে 'ন সোঁদন 
সূবর্ণলতার, তবু সৈ তখনো একেবারে হতাশ হয় 'ান। তখনো খেয়াল করে 
নি, বংশধারার মূল উৎস থাকে আস্থমজ্জার গভীরে, পরিবেশ বড় জোর পালিশ 
দিতে পারে, যেটা হয়তো আরো মাবাত্বক। কখন কোন্‌ মুহূর্তে যে সেই 
পাঁলশের অন্তরাল থেকে বর্বরতার রূঢ় দাঁতি উপক মারবে ধারণা থাকবে না, 
দাঁতের তাঁক্ষ্যতায় দিশেহারা হতে হবে। 

সবর্ণলতা তার ছেলেকে পরিবেশ-মুস্ত করে নিয়ে এসেছিল, তাই তার 
ছেলের গায়ে পালিশ পড়েছে, নিষ্প্রভ করে দিয়েছে সে তার এ বাঁড়র প্রথম 
গ্রাজুয়েট কাকাকে। 

তবে কি কানু, মান্‌ আর সবলও এই এক রকমই হবে 2 দরাঁজপাড়ার 
সেই গাঁজটা এসে বাসা বাঁধবে সবর্ণলতার এই হাল্কা ছিমছাম ছবির মত 
গোলাপ রঙা বাঁড়টার মধ্যে ? 


৩৪ 


কিন্তু সুবর্ণলতাই বা এমন অনমনীয় কেন 2 

[কিছুতেই ভেঙে মাঁটতে লুটিয়ে পড়বে না কেন? ভেঙে পড়তে পড়তে 
আবার খাড়া হয়ে ওঠে কেন? এত প্রাতিব্ধকতাতেও 
৯$] ধাঁড় মেয়ে পারুলকে সে স্কুলে ভর্তি করতে বদ্ধপাঁরকর 
[| কেন? 
প্রবোধচন্দ্র বাইরে থেকে ঘুরে এসে রাগে গনগন 
| করতে করতে বললো, 'এসব কি শুনাছ! পাশের বাড়ির 
)1 পারমলবাবুর ছেলেকে দিয়ে নাঁকি পারুকে ইস্কুলে ভাত" 
টু করতে পাঠিয়েছিলে ! 

নে চির িদাত 

চূলোম্স ফাক বকুল! পারুকে পাঠিয়েছিলে ক বলে 2: 

'এ পরযন্তি ওটা ওর হয়ে ওঠে নি বলে।" 

'হয়ে ওঠে নি বলে! প্রবোধ সহসা একটা কুৎসত মৃখভঙ্গী করে ওঠে, 
'সেই ভয়ঙ্কর দরকার কাজটা হনে ওঠে নি বলে রাজ্য রসাতলে গেছে? পাঁথবা 
উল্টে গেছে 2 চন্দ্র-সূর্য খসে পড়েছে? তাই তুমি একটা ছোঁড়ার সঙ্গে ওই 
ধাঁড়ধজ্গী সোমন্ত মেয়েকে 

'থামো! অসভ্যতা করো না।' 

'ও£, বটেঃ অসভ্যতাটা হল আমার 2 আর তোমার কাজটা হয়েছে খুব 
সুসভ্যঃ পরের কাছে মুখাপেক্ষী হতেই বা গেলে কোন্‌ মুখে 2 এদিকে তো 
মানের জ্ঞান টনটনে ! 

“অভাবে স্বভাব নম্ট চিরকেলে কথা-_" স্বর্ণ বলে, 'ষার নিজের তিন 
কুলে করবার কেউ না থাকে. পরের দরজায় হাত পাতবে এটাই স্বাভাবিক! 

"38! তোমার কেউ কিছু করে নাঃ আচ্ছা নেমকহারাম মেয়েমানূষ 
বটে! বলে সারাটা জীবন এই 'ভেড়াটাকে একাঁতল স্বাস্ত দিলে না, শান্তি 
দলে না, বিশ্রাম দিলে না, নাকে দাঁড় দিয়ে ছুটিয়ে মারলে, তবুও বলতে 
বাধছে না কেউ কিছ করে না? 

সুবর্ণ স্থির স্বরে বলে, 'যা কিছ করেছ সব আমার জন্যে? 

'তানাতো কি? আমার জনো? আমার কী এত দরকার ছিল £ মায়ের 
ছেলে মায়ের কাছে পড়ে থাকতাম__ 

সুবর্ণ ওই অপাঁরসীম ধৃষ্টতার দকে তাকিয়ে বলে, "শুধু মায়ের ছেলে? 
আর তোমার জের জঞ্জালের স্তূপ 2 তারা 2 তাদের কথা কে ভাবতো 2' 

“তারা তাদের বংশের ধারায় মানুষ হতো! এক-একটি সাহেব বাব করে 
তোলার দরকার ছিল না কিছু। বলে দিচ্ছি, বকুল যায় যাক. পারুর কিছ-তেই 
বিন্দনি দলিয়ে ইস্কুলে যাওয়া চলবে না, বাস! 

“পারু যাবে। 

“ক বললে? আম বারণ করাছি তবু পারু যাবে? 

তোমার সঙ্গে তর্ক করতে চাই না। আমি যা করোছি বুঝেই করোছ। 
আর সেটা হবে। এই হচ্ছে আমার শেষ কথা। 

শেষ কথা ! 





সুবর্ণলতা ২৩১ 


এই শেষ কথার উত্তরে আর কোন্‌ কথা বলতে পারতো সবর্ণর স্বামী 
ক লানে, কিন্তু সুবর্ণর ছেলে কথা কয়ে উঠল। পাশের ঘর থেকে। 

পাশের ঘরে কানু বসে খবরের কাগজ পড়ছিল এবং দু ঘরের মাঝখানের 
দরজা খোলা থাকার দরুন মা-বাপের প্রমালাপ শুনাছল, হঠাৎ অসাহষ্ণু গলায় 
বলে উঠলো, মা'র মুখে চিরদিনই ঠাকুমাদের সমালোচনা শুনে এসৌছ, আর 
স্বভাবতই ভেবে এসোছ দোষ তাঁদের-ই। এখন বুঝতে পারছি গলদটা কোথায় ! 

বললো। 

এই কথা বললো সুবর্ণর মেজ ছেলে। 

অসাহষ্ণু হয়ে বলে উঠুলো । 

বাবা যখন মাকে 'নেমকহারাম মেয়েমানুষ' বিশেষণে বিভূঁষিত করেছিল, 
তখন অসাহ্ষ্কু হয়ে ওঠে নি সে. যখন বাবা নিজের মেয়ে সম্পর্কে শাথিল মন্তব্য 
কার রাগ প্রকাশ করোছিল তখনও চুপ করে থেকোছল, অসাহষ্কু হয়ে মন্তব্য 
গ্রনধাশ করে উঠল মায়ের দুঃসহ স্প্বীয়। 

বলে উঠলো. এখন বুঝতে পারাঁছ গলদটা কোথায় ! 

কিন্তু আশ্চর্য, সংবর্ণলতা ধমক 'দিয়ে থামিয়ে দিল না তাকে, চীৎকার 
করে প্রতিবাদ করে উঠলো না। সুবর্ণলতা ষেন হঠাৎ চড়-খাওয়া মুখে শাথিল 
গখালত গলায় প্রশ্ন করল" “ক বলাল? কি বলছি৷ তুই 2” 

বললো আর মাটিতে বসে পড়লো । 

কানু মায়ের সেই নিষ্প্রভ অসহায় মুখের দিকে ক্ুদ্ধ দাঁ্ট হেনে ও-ঘর 
থেকে অনা ঘরে চলে গেল খবরের কাগজখানা হাত থেকে আছড়ে ফেলে 'দিয়ে। 
কানুর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধবানত হল, “আর কি, জানো তো খাল মূর্ঘা 
যেত" ওইতেই সবাইকে জব্দ করে রাখতে চাও)” 

আর কিছু করল না। 

'জল জল, পাখা পাখা" বলে ব্যস্ত হলো মুস্তকেশীর ছেলে। 

সূবর্ণলতার জীবনটা যার সঙ্গে আম্টেপৃন্ঠে বাঁধা, যে নাগপাশের বন্ধন 
থেকে মুক্তির উপায় খুজে পায় নি সুবর্ণলতা। 

সুবর্ণর সংসারতাগিনী মা নাক সংসার ত্যাগের প্রাক্কালে বলে গিয়ে" 
ছল, ওটা 'নাগপাশই' না লতাপাতার বন্ধন, তাই দেখবে বাকী জীবনটা । 

কিন্তু তাতে সংবর্ণর কি হলো? 

সুবর্ণ কি পেল তা থেকে 2 

পেল না কিছহ। 

পায় না। 


এইটাই যে নিয়ম পাথিবীর, অনেক দিনের সাধনা চাই। এক যুগের 
তপস্যা আর সাধনা পরবতর্ণ যূগকে এনে দেয় সাধনার সিদ্ধি, তপস্যার ফল। 
যায় অন্ধকারে, তারপর আসে আলোর 'দিন। 

তবু 

যারা অন্ধকারে হারিয়ে গেল, তাদের জন্যেও রাখতে হবে বোকি একাঁবন্দু 
ভালবাসা, একবিল্দ; শ্রদ্ধা, একবিন্দু সমীহ । 

হয়তো সুবর্ণলতার জন্যেও আসবে তা একাঁদন। 

হয়তো সুবর্ণলতার আত্মা সেই পরমপ্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে একটু 


২৩২ সুবর্ণলতা 


পারতৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। 
বলবে, “সারাজীবন যার জন্যে জবলেছি আর জবালিয়োছ, পৃড়োছি আর 
পুঁড়য়োছ, কোথাও কোনোখানে তবে সার্থক হয়েছে সে! 
কিন্তু কবে সেই পাঁরতপ্তির নিঃ*্বাসটুকু ফেলতে পাবে স্বর্ণলতার 
আত্মা ? 


আজো কি অগাঁণত সুবর্ণলতা মাথা কুটে মরছে না এই “আলোকোজ্জবণ 
যুগের চোরাকুঠুরীর ঘরে? রুদ্ধ কণ্ঠে বলছে না, “তোমরা শুধু সমাজের 
মলাটটুকু দেখেই বাহবা” দিচ্ছ, আত্মপ্রশংসায় বিগাঁলিত হচ্ছ, আত্মপ্রচারের 
জৌল্‌সে নিজেকেই 'নিজে বিভ্রান্ত করছ, খুলে দেখছ না ওর ভিতরের পৃঙ্ঠা ? 
দেখ সেই ভিতরের পছচ্ঠায় কোন: অক্ষর, কোন্‌ ভাষা, কোন্‌ 'লাঁপ ? 

সেখানে যে অগাণিত স্ববর্ণলতা আজও অপেক্ষা করছে * কবে পাপের শেষ 
হবে তার প্রতীক্ষায়' ! 

বলছে না তারা-_ 

'কবে অহঙ্কারী পুরুষসমাজ খোলা গলায় স্বীকার করতে পারবে, তুমি 
আর আমি দুজনেই ঈশবরস্‌স্ট! তুমি আর আম দুজনেই সমান প্রয়োজনীয়! 

কবে ঈর্ষাপরায়ণ পুর্ষসহ্াজ মুস্ত মনে বলতে পারবে, “তোমাকে যে 
রাত দিতে গার ন সেটা তোমা টির ফল নর, আমার রি বল্ল! তোমার 

মাহমাকে মর্ধাদা দিতে বাধে সেটা জামার দুর্বলতা, তোমার শাস্তকে প্রণাম 
করতে পাদীর না সেটা আমার দৈন্য। নিজেকে তোমার : “প্রভূ” ভাবার অভ্যাসটা 
ত্যাগ করতে আমার আঁভমান আহত হয়। তাই দাস সেজে তোমায় “রাণ” 
কার। আজো তোমাকে মুগ্ধ করে মূঠোয় পুরে রাখতে চাই, তাই চাটুবাক 
তোয়াজ কাঁর। আর আমার শিল্পে সাহিত্যে কাব্যে সঙ্জাঁতে যে তোমার 
বন্দনাগান কার, সে শুধু নিজেকে বিকশিত করতে । তুমি আমার প্রদীপে 
আলোকিত হও এই আমার সাধ, আপন মাহমায় ভাস্বর হও এতে আমার 
আপাত্ত। তাই তুম যখন গুণের পাঁরচয় দাও তখন করুণার হাঁস হেসে পিঠ 
চাপড়াই, যখন শান্তর পাঁরিচয় দাও তখন 'বিরান্তর ভ্রুকুটি নিয়ে বাল “ডেপোমি, 
৮-49 তখন তোমাকে খর্ব করবার জন্য উঠে পড়ে 
গা।... 

“তোমার রূপবতী মার্তর কাছে আম মুখ্ধ ভভ্ত, তোমার ভোগবতা 
মৃর্তর কাছে আম বশম্বদ, তোমার সেবাময়ী মর্তর কাছে আঁম আত্মাবক্রীত, 
তোমার মাতৃ-মৃর্তর কাছে আমি শিশু মার ।...কিন্তু এগুলি একান্তই আমার 
জন্যে হওয়া আবশ্যক। হ্যাঁ, আমাকে অবলম্বন করে যে তুমি সেই “তুমি 
[টকেই মানত বরদাস্ত করতে পাঁর আমি। তবে বাইরের “তাঁমি' হচ্ছ বিধাতার 
. একটি হাস্যকর সাচ্টি।' 

কে জানে কবে এসব বলতে পাবে সবর্ণলতার আত্মা ! 

হয়তো পাবেই না। এই তে পুরুষের হদয়রহস্য। 

৯৩৪৩ সন্ত পুল মনে হয় 
না। শুধু আধৃদনকতার বুলি আউড়ে দেখাবে, 'দেখ আম কত উদার! আঁম 
কত মৃত্ত! সর জং লাগিয়ে রে “দেখ তোমাকে কত বর্ণাঢ্য করে 
তুলোছ।' সে রং পৃতৃলের রং। প্রাতিমায় প্রাণ প্রীতন্ঠা করবার সাধনা 
নেই তার, পৃতুলে রং লাগয়েই খুশি। সেই রংচঙ্ে পৃতুলগ্ীল তুলে ধরবে 


সৃবর্ণলতা ২৩৩ 
বিশবসমক্ষে, বলবে, দেখেছ 2 দেখ দেখ আমাদের কত এঁশবর্য !' 


“বদ্যেবতশর আর বাড়ির 'িদ্যেয় কুলোচ্ছে না? 

খবরের কাগজখানা আছড়ে ফেলে দিয়ে কানু তঁবর 'বরান্তভরে এঘরে এসে 
পারুকে উদ্দেশ করে বলে ওঠে ওই কথাঁটি। 

কানুর এই গায়ে পড়ে ব্যঙ্গ করতে আসায় রাঙা হয়ে উঠলো পারুর 
মুখ, ঠোঁটটা কামড়ে চুপ করে রইল। সবর্ণলতার অন্তর-প্রকাঁতর সঙ্গে 
হয়তো হিল আছে তার, [মল নেই বাইরের প্রকতির। 'চোপা" কররার দুরন্ত 
ইচ্ছেকে দমন করে চুপ করে থাকে সে। 

এখন চুপ করেই থাকে হাতের খোলা বইখানা মুড়ে । 

কানু একবার তার সেই বইখানার দকে দাঁম্টপাত করে বলে: নাটক- 
নভেলের তো শ্রাদ্ধ করেছো, ওই মাথায় আর যোগাঁবয়োগ গুণভাগ ঢুকবে £' 

পারুল এবার কথা কইলো । 

বললো, 'ঢুকবে কিনা সে পরীক্ষা তো করা হয় নন! 

'ইস* কথা শেখা হয়েছে যে দেখাছ খুব! নভেলের যা ফল! লেখাপড়া 
শেখা তোর কর্ম নয়, বুঝাঁল £ আমার একটা বন্ধুর ছোট বোন, মানে তোর মতন 
একটা মেয়ে” আসছেবার এন্ট্রেন্স পরাক্ষা দেবে, বুঝাঁল 2 সে-সব মাথাই আলাদা ।, 

মাথাটা নিয়েই বোধ হয় জল্মেছিল তোমার বন্ধুর বোন ?” 

কানু ব্যঙ্গহাঁস হেসে বলে, “ভা ছাড়া! তোমার দ্বারা িসয হবে না, 
বুঝলে 2 শুধু মাতৃদেবীর মত বড় বড় কথা শিখবে তুমি ! 

পারু তার প্রকাতিটা লঙ্ঘন করতে চায় না, তব সে বলে ফেলে. 'মা ভাগ্যস 
ওই বড় বড় কথাগুলো িখোছিলেন মেজদা, তাই তোমারও এত “বড় কথা” 
বলার সুযোগ হচ্ছে! 

'সাত্য! বাঃ, বেশ বাঁদ্ধ হয়েছে তো দেখাঁছ খেপ্দুর। নাঃ, ভাল দেখে 
একটা বর তেকে দিতে হচ্ছে! বলে চলে যায়। কানু ভানুর মত অত 


সিরিয়াস নয়, তাই ব্যঙ্গাই করে সে। 


॥৪॥ 


পালাঁক সাঁত্যই এবার উঠে যাচ্ছে। 

“যাই যাই করাছল অনেক 'দিন, এবার মনে হচ্ছে একেবারেই যাবার পথে 
পা বাঁড়য়েছে। রাস্তায় বোরয়ে খন-তখন তো দূর- 
স্থান, বলতে গেলে চোখেই পড়ে না। 

পালকির সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেক কিছুই 
অবল্দাপ্তর পথ ধরবে তাতে আর সন্দেহ কঃ পালকিই 
বলে যাবে মানুষের কাঁধের উপর মানুষ চড়া 
নর্লজ্জতা!..মরে গিয়ে 'শবদেহ' হয়ে যাবার পর. চড়ো 
মানুষের কাঁধে, তার আগে নয়।- বলে যাবে আস্ত 
লা মা রা 
ঘিরে "য়ে যাওয়াটা হাস্যকর, আঁম বিদায় নিচ্ছি ওই ঘেরাটোপ আর পর্দার 
অঞালগুলো কুঁড়িয়ে নিয়ে। পথ যে পার হচ্ছে, পথটা সে যেন দেখতে পায়। , 





২৩৪ স.বর্ণলতা 


বলে যাবে, দ্রুতযানের সন্ধান কর এবার তোমরা । পাঁথবশটা অনেক বড়, 
তাকে দেখো চোখ মেলে, ছোটো ঘোড়ার খরে ধুলো ডীঁড়য়ে, ছোটো হাওয়ার 
বেগে হাওয়াগাড়িতে, ওড়ো মাটি ছাঁড়য়ে আকাশে ।...তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে বসে 
আপন পাঁরমন্ডলাটকেই সমগ্র পৃঁথবী জ্ঞান করে আলবোলায় সৃখটান দেবার 
দিন গত হলো।' 

হাজার বছরের অভ্যাসের এঁতিহ্য আর হাঁতিহাসের ধারা মুছে নিয়ে যারা 
চলে যায়, তারা কিছু বলে যায় বোক। চলে যাবার মধ্যেই বলে যাওয়া । 

কালম্োভ যে কাউকে কোথাও নোঙর ফেলতে দেয় না, দ্বীর্নবার বেগে 
ভাঁসয়ে নিয়ে যায়, এইটাই আর একবার বলে যায় সে। আজকের পরম প্রয়ো- 
জনীয় পরবতকালে জঞ্জালের কোঠায় ঠহি পায়, এই হলো পুঁথবশীর পরমতম 
সত্য আর চরমতম ত্র্যাজোড। 

তবু সহজে কেউ মানতে রাজী হয় না সে কথা। তারা সেই বিদায়ী 
পাঁথকের বসনপ্রান্তটুকু মুঠোয় চেপে ধরে রাখতে চায়, আর আলবোলায় শেষ 
সুখটানঢুকু দিতে দিতে বলে. 'এসব হচ্ছে কী আক্তকাল! সব যে রসাতলে 
গেল!' 

যারা দাশশনক তারা উদাস হাসি ”৬তস বলে যাবেই তো, সবই যাবে।' 

মুস্তকেশীও একটা তাঁর ছোট্ু এতনীর সঙ্গে বাক্যালাপ প্রসঙ্গে বলে- 
ছিলেন একথা, “পালাক আর কই! ক্লমৈই কমে আঙছে। যাবে সবই উঠে 
যাবে। 

তবু দেখা যাচ্ছে এখনো মুক্তকেশী তাঁর বয়সের ভারে জীর্ণ দেহখানা 
[নয়ে চলেছেন পালকি চড়ে। 

একাই চলেছেন! 

থাঁনকটা গ্গিয়ে একখানা গোলাপী রঙের দোতলা বাঁড়র সামনে এসে 
মুন্তকেশী মুখ বাঁড়য়ে বেহারাগুলোর উদ্দেশে আদেশজার করলেন, থাম: 
মুখপোড়ারা, এই বাঁড়! চলেছে দেখো হুম হুম করে! 

যেন বাঁড়খানা তাদের চিনে রাখার কথা। 

নিমেষে বেহারাগুলোর 'হুমৃহম শব্দ থেমে গেল" পালকিও থামলো। 
চার-চারটে জোয়ানমর্দ লোক পালাঁকখানা নাঁময়ে কোমরে বাঁধা গামছা খুলে 
গায়ের ঘাম মুছতে লাগলো । 

চারটে দাস্যলোক, অথচ একটা বুড়ীকে বইতে হমাঁশম খেয়ে গেছে! 
পদ্ধাতিটা বুদ্ধিহশীন বলেই। িকশাগাঁড়রা তখনও আসরে নামে নি. দেখিয়ে 
দেয় ন একটা লোকই টেনে নিয়ে যেতে পারে চারটেকে ! 

পালাকর দরজা ঠেলে নামলেন মুক্তকেশী। 

নড়বড়ে কোমরটা কম্টে টান করে প্রায় সোজা হয়ে দাঁড়ালেন মৃহূর্তকাল, 
তারপর আঁচলের খ*ুট থেকে দুটি ডবল পয়সা বার করে চারটে বেহারার মধ্ো 
একজনের হাতে দিয়ে বললেন, “নে যা, ভাঙিয়ে ভাগ করে নেগে যা! 

কোমরটা দুমড়ে যাওয়া পযন্ত মুস্তকেশনীর ধারণা হয়েছে. পূর্ব সম্মানের 
সবটুকু আর জুটছে না। তাই অপর পক্ষের মুখোমুখি দাঁড়াতে হলেই প্রাণপণ 
চেষ্টায় সোজা হন। অনেক সময় হাড়ের খিল ছেড়ে যাওয়ার একটা শব্দ হয়, 
শিরদাঁড়াটা কনকনিয়ে ওঠে, তবু সাধ্যপক্ষে হেট হওয়ার অগৌরব বহন করতে 
রাজ নন মুস্তকেশণী। 


সুবর্ণলতা 


তথাপি অপরপক্ষ সম্মান রক্ষায় উদাসীন হল। 

কলে উঠলো, “কেতো দদিপ্টাঁছ ?, 

'যা দেবার ঠিকই 'দিয়েছি-+ বার্ধক্য-মালন পুরনো চোখের তারায় একাঁট 

ত দৃপ্তভঙ্গী ফুটিয়ে তুলে মুন্তকেশী সদর্পে তাকালেন, 'আবার 
ঈকসের ট্যা-ফোঁঃ চাস কত? পুরো তঙকা?, 

লোকগুলো মুখের প্রত্যেকাঁট রেখায় অসন্তোষ ফুটিয়ে বলে, “আটো 
পয়সা দিয়! 

'কী বললিঃ আট পয়সা? গলায় ছুঁর 'দাব নাক: প্রসা গাছের 
ফল 2. মবস্তকেশী সদর্পে বলেন. “আর এক আধলাও নয়। কার হাতে পড়োছিস 
তাজানিসঃ এখেন থেকে এখেন, আট পয়সা! হণ, যা বেরো! 

আশ্চর্য ! 

আশ্চর্য বৌক যে লোকগুলো সাঁত্যই পালাঁক তুলে নিয়ে চলে যায় নিতাল্ত 
ব্যাজার মুখে। 

তারাও জানছে এ পেশার দিন শেষ হয়ে আসছে ওদের । মুস্তকেশীর মত 
দু-একটা বুড়নটুড়ী ছাড়া এরকম শবযান্রার ভঙ্গীতে মানুষের কাঁধে চড়ে শূন্যে 
দুলতে দুলতে আর যেতে চাইছে না মানুষ৷ 

তাই বেত 'ছ্ড়ছে. ডাঙা ভাঙছে, রং চটে দাঁত বৌরয়ে যাচ্ছে, তবু পালকি 
মেরামতের কথা ভাবছে না ওরা। দলের অনেকেই তো ক্লমশঃ গলায় একটা 
পৈতে' ঝ্ীলয়ে রধিনী বামুনের চাকার নিচ্ছে । তার চাহদা বরং দ্রুতগাঁততে 
বাড়ছে। 

বাড়ছেই । 

মেয়েরা ক্রমশই বাবু হয়ে উঠছে, রান্নার ভারটা চাপাচ্ছে উীড়য়া কুল- 
তিলকের হাতে। 


২৩৫ 


বন্ধ দরজা খোলবার জন্যে কড়া নাড়া অথবা দরজায় ধাক্কা দেবার যে একটা 
প্রচলিত রাঁতি আছে সে রীতিকে আগ্রাহ্য করে মুস্তকেশী ভাঙা ভাঙা অথচ 
সতেজ গলায় ডাক দেন, 'পেবো পেবোন' 

হ্যাঁ, এ পাড়ার প্রবোধবাবুকেই ডাক দেন তাঁন। বাঁড়র ছোট ছেলে- 
পুলেদের নাম ধরে ডাক দেবার যে একটা রীতি প্রচালত, সেটাকেও অস্বীকার 
করে থাকেন 'তান। এ বাঁড় তাঁর ছেলে 'পপেবো'র, তাকেই ডাকবেন 'তান। 
স বাঁড়তে থাক বা না থাক্‌ । 

অবশ্য যখনই আসেন, প্রবোধচন্দ্রের উপাস্থাঁতর সম্ভাবনা অনুমান করেই 
আসেন। 

তা এক ডাকেই কাজ হলো। 

যাঁদও “পেবো' বা সেই জাতীয় কেউ নয়, দরজা খুলে দিল বছর দশেকের 
একটি মেয়ে । মুস্তকেশসঈ যতটা সম্ভব তঁক্ষ] দাষ্টতে একবার ওর আপাদমস্তক 
দৈখে নিয়ে তীব্র গলায় বলে উঠলেন, “কপাট খুলে দিতে হুট করে বোরয়ে 
এল যেঃ বাঁড়তে আর লোক নেই ? 

মেয়েটা এই প্রশ্নবাণের সামনে থতমত খেয়ে বলে" সবাই আছে । 

“আছে তো তুই তাড়াতাঁড় আসতে গোল কেনঃ আম না হয়ে যাঁদ 
অপর কোনো ব্যাটাছেলে হতো? “পাঁর”র বিয়ে হচ্ছে না বলে বাঁঝ তুই 


২৩৬ সুবর্ণলতা 


কাঁচ খুক আছসট 
মেয়েটা তাড়াতাঁড় বলে, 'ছাদ থেকে দেখলাম তুমি এলে, তাই-_, 
রই সন ্ 
পুরনো 
£ চোখ আবার ধারালো হয়ে ওঠে, রদুপদরে ছাদে কা 


কাপড় শুকোঁচ্ছিল, মা বললেন, তুলে আন।' 

হু, তা বলবেন বৌক মা। ১৯স্টটি বিলাল 
আছে 

'আছেন। ঘৃমোচ্ছেন।” 

তা তো ঘুমোবেই। মুভ্তকেশ ধিক্কারের স্বরে বলেন, “সঙ্গগণের 
মহিমা! বুকের ওপর পাহাড় মেয়ে, আরো একটা ধিঙ্গ হয়ে উঠলো, ছ-ট- 
ছাটার দিন কোথায় মাথায় সাপ বেধে ছ:টোছুটি করে বেড়াবে, তা নয় নাকে 
সর্ধের তেল শ্য়ে ঘুমোচ্ছেন। নে চল! 

মৃন্তকেশখ আজকাল মাঝে-মাঝেই আসেন। 

ভেল্ব হওয়া রূপ দুরাচারের জন্যে অনেকগুলো 'দিন পূত্রবধূর মুখ দেখেন 
নি মুল্তকেশী, কম্তু পুত্রের আঁকণ্ল ও তোষামোদে সে ভাবটা কেটে গগিয়ে- 
ছল। তারপর সেই সুবর্ণলতার গুর,মন্ত নেওয়ার সময় বাঁধ ভাঙলো।। রাশেব, 
তেজের, লজ্জার। 

সময়ে সবই' সয়। সর্বতাপহ্র। 

সময় সবই সহজ করে আনে । এবং মুক্তকেশশ “মেজবৌমা' 'মোজবৌমা'ই 
বেশি করেন। তার জনো ঘরে থাকা অন্য বৌদের 'হংসের অবধি নেই” কিন্ত 
এখন যে প্রবোধচন্দ্রের মাতৃভন্তিটা প্রায় ভরতের ভ্রাতৃভান্তর তুল্য মলাবান! 
পারি ডো 

অতএব এখন মবুক্তুকেশী যখন-তখন মেজ ছেলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন, 
হুকুম আর শাসন চালিয়ে যান. এবং অপর ছেলে-বৌদের সমালোচনায় মুখর 
হন। হাত-খরচির টাকায় ঘাটাত পড়লেই সেকথা কোনো ছলে মেজবৌমার 
কর্ণ গোচর করেন এবং নিজের মেয়ে-জামাই নাতি-নাতনী বাবদ অর্থর্থাটত ঘা 
কিছু সদিচ্ছা, সেও মেজছেলের কাছে প্রকাশ করে যান। 

বলেন, “ওদের বাল না, জানি তো বোন বলে এতটুকু মন কারো নেই। 
তোর তবু সে মন একটু আছে তাই বলা ।' 

প্রবোধ অবশ্য মায়ের ধারণা অনুযায়ী বোনেদের প্রতি মনের আঁভনয়ই কবে 
চলে তারপর। বলে উঠতে পারে মা-মন আমারও নেই মা। তারা ভি 
মাটিতে শিকড় নামিয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগ কোথায় 2 একদা 'তারা 
আর আমরা একই আধারে থেকৌঁছ, শুধ্‌ এইটুকু সুবাদের জের আর কতকাল 
টানা যায় 2 

বলে না। 

বলে উঠতে পারে না। 

অতএব সূবর্ণলতার এই গোলাপী রঙের দোতলাটির মধ্যেও মৃস্তকেশী 
বেশ পুরো চেহারা নিয়েই অবস্থান করেন। 

সুবর্ণলতা একবারই পেরোছিল অসাধ্য সাধন করতে। একবারই দোখিয়ে- 
ছিল 'অসমসাহাসিক' শব্দটার মানে আছে। 


সৃবর্পলতা ২৩৭ 


কিন্তু সে ওই একবারই। সে আওতা থেকে সরে এসে স্বামী-সন্তানদের 
নিয়ে নিজের ইচ্ছেমত সংসার গড়ে তোলবার বাসনা হয়েছিল, সে বাসনাটা 
ধূসর হয়ে যাচ্ছে। সেই আওতাটা রয়েই গেছে, হয়তো বা আরো নিরঙ্কুশ 
হয়েছে। 

সুবর্ণলতার জীবনের এ এক অদ্ভুত ট্র্যাজেডি । কারণ নিজেও সে মৃক্ত- 
কেশীর সংসারে বসে যত সহজে মুস্তকেশীর 'বিরুদ্ধাচরণ করতে পারতো, আপন 
কেন্দ্রে বসে তা পারে না। ভদ্দুতায় বাধে, চক্ষুলজ্জায় বাধে, আর সব চেয়ে 
আশ্চর্য_-মমতায় বাধে। 

অস্বীকার করে লাভ নেই, এখনকার ওই নখদল্তহীন মানৃষাঁটর প্রা 
একটা মমতাবোধে সুবর্ণলতাকে নিরূপায় করে রেখেছে। 


মৌজের 'দিবানদ্রাট ছেড়ে আস্তে আস্তে উঠে এসে প্রবোধ মায়ের চরণ- 
বন্দনা করে, নিজ হাতে হাতপাখা তুলে নেয়। 

মুস্তকেশী আসন পারিগ্রহ করে বলেন, 'থাক্‌ বাতাসে কাজ নেই, বাল 
নাকে তেল "দয়ে ঘুম দিলেই হবে! মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না?” 

মুন্তকেশীর কথার জোর কমেছে বলে যে কথার সুর বদলেছে 

তা নয়। সুরটা ঠিক আছে, ধরনটা ঠিক আছে, শুধু ভারটা খুজে পাওয়া 
ঘায় না। 

তবৃ-_ 

তব সবর্ণলতা যেন আজকাল হঠাৎহঠাং ওই মানুষটাকে ঈর্ষা করে 
বসে। মুস্তকেশী যখন তাঁর পণ্ঠাশোত্তীর্ণ ছেলেকে বলে ওঠেন 'লক্ষনণছাড়া 
হতভাগা, পোড়ারমুখো বদির" তখন অদ্ভুত একটা ঈর্যার জালা যেন দাহ 
ধরায় সুবর্ণলতাকে। 

অথচ নিজে কি সুবর্ণলতা কখনো দরাজ ভাষায় ছেলেদের সাম্বোধ.. করবার 
বাসনা পোষণ করেছে ? 

এই গ্রাম্যতা ক সুবর্ণলতার অসহ্য নয়? 


তবু 

এই 'তবু'র উত্তর নেই, প্রশ্ন জমে ওঠে আরো । 

সুবর্ণলতার ছেলেরা কি এই মাতৃভন্ত বংশের ছেলে নয়? 
,  সুবর্ণলতা ক তার মাতৃকর্তব্যে কোনো ব্রা করেছে 2 সবর্ণলতা তো 
বরং সেই কর্তব্যের দায়ের কাছেই নিজের সবশীস্ত 'বাঁকয়েছে বসে বসে। 

তথাপি সুবর্ণলতার বিয়ে হওয়া মেয়েরা “বাপের বাঁড়' বলতে সুবর্ণলতার 
প্রাণ দিয়ে গড়া এই গোলাপন রঙের দোতলাটাকে বোঝে না, বোঝে সেই দাঁর্জ- 
পাড়ার গাঁলর বাঁড়টা। তাদের প্রাণ পড়ে থাকে সেখানেই । সেখানে এসে তারা 
পুরনো দালানের তেলচিটে দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসে তাদের মায়ের চালচলনের 
ব্যাখ্যানা করে। 

আর সুবর্ণলতার ছেলেরা ? 

তারা অবশ্য সেই দেয়ালে তেলধরা জানালায় চূনের হাত মোছা এবং দরজার 
পছুনে ?পছনে পানের পিক ফেলা ধাঁড়টাকে আদৌ পছন্দ করে না, তার প্রাত 
একাঁবন্দুও মমতা পোষণ করে না, তবু এই বাঁড়টাকেও “আমাদের বলে পরম 
স্নেহে হৃদয়ে নেয় না। 


২৩৬ সুবর্ণলতা 


' সুবর্ণলতার ছেলেরা ষেন বাধ্য হয়ে তাদের এক প্রবলপ্রতাপ প্রাতপক্ষের 
এন্তারে পড়ে আছে, তাই সুযোগ পেলেই ছোবল বসাতে আসে। 

ছোটটাকে অবশ্য এখনো ঠিক বোঝা যায় না, সে যেন বড় বেশি নীলপ্তি। 
সেজটাও আমোদ-প্রমোদ বাবুয়ানা 'বলাসতাটুকু হাতের কাছে পেয়ে গেলে 
তেমন হিংম্্র নয়, কিন্তু ভানু-কানু ? 

যারা নাক প্রমাণ সাইজের জামা পরে তবে এ বাঁড়তে এসেছে! : 

তারা যেন ঠিক কাকাদের প্রাতমৃর্তি। 

বিশেষ করে ভানু। 

হঠাং যখন পাশ দিয়ে চলে যায়, দি চান করে এসে গামছাখানাকে জোরে 
জোরে ঝাড়ে, অথবা মুখ নিচু করে ভাত খেতে খেতে কেমন একটা কাঠন 
ভঙ্গীতে চোয়ালটা নাড়ে, দেখে চমকে ওঠে সৃবর্ণলতা। 

মনে হয় সেজ দ্যাওর প্রভাসকেই দেখতে পেল ব্ঝি। 

অপর পাঁচজনেও বলে, “ভানুকে দেখো যেন আঁবিকল ওর সেজকাকা! 

শুনে অন্ধ একটা রাগে হাত-পা কামড়াতে ইচ্ছে করে সুবর্ণলতার। 

সূবর্ণর রন্ত-মাংসে গড়া, সুবর্ণর ইচ্ছে চেষ্টা সাধন শস্তি দিয়ে লালিত 
সন্তান সূবর্ণর পরম শনুর রুপ নিয়ে সুবর্ণর চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবে এ 
কী দুঃসহ নিরুপায়তা ! 

কন অস্বাস্তকর বড় হয়ে গেছে ভান্-কানু! 

কী বিশ্রী লম্বা-চওড়া ! 

গলার স্বরগুলোই বা কী রকম মোটা । আস্ত দুটো “লোক' হয়ে গেছে 
ওরা! 

অন্য লোক। 

সুবর্ণলতার সঙ্গে যাদের জীবনের আর কোনো যোগ নেই, সংবর্ণলতাকে 
যাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই । 

সুবর্ণলতার সাধ্য নেই আর ওদের নাগাল পাবার। 

আস্তে আস্তে মানু সুবলও হয়তো এই রকমই হয়ে যাবে। তাদের 
মুখের চেহারল্ল প্রকট হয়ে উঠবে মূন্তকেশীর ছেলেদের মুখের কাঠামো । 

নরূপায় সুবর্ণলতাকে বসে বসে দেখতে হবে এই পাঁরবর্তন। 

মুন্তকেশীর ছেলেদের ঘৃণা করা যেত অবজ্ঞা করা যেত, এদের বেলায় 
কোনো উপায় নেই। 

আর এদের সম্পর্কে নাঁলশেরও কোনো পথ নেই। এরা সুবর্ণলতার 
ইচ্ছানুরুপ শিক্ষিত হয়েছে, -সভ্য হয়েছে' চৌকস হয়েছে। সংবর্ণলতার 
জখবনের প্রত্যেকটি অণুপরমাণুর ধ্বংসের মূল্যে যে সম্পদ সঞ্চয় করেছে 
সুবর্ণলতার ছেলেরা, সেই সম্পদের অহঙ্কারেই তারা অহরহ স্ববর্ণলতাকে 
অবজ্ঞা করছে। 

হয়তো বা সূবর্ণলতার ক্ষেত্রেই নয়, অন্য সব ক্ষেত্রেও এমানই হয়। 

'বোধ' জল্মালেই ণবোধ'ও জন্মায়, আর সেই ধণবোধের দাহই ফণা তুলে 
থাকে ছোবল হানতে । যেখানে ধণের ঘর হালকা, সেখানে বুঝি আপন হওয়া 
যায়, সহজ হওয়া যায়। 

নচেৎ নয়। 

অথচ আজীবনের স্বপ্ন ছিল সবর্ণলতার, তার সন্তানেরা তাকে বুঝবে, 


গুবর্ণলতা ২৩৯ 


তার আপন হবে। কিন্তু তারা আপন হয় নি, তারা সুবর্ণলতাকে বোঝে নি। 

হয়তো বুঝতে চায়ও 'নি। 

কারণ সুবর্ণলতার ছেলেরা তার মায়ের সেই মধুর আশার স্বপ্নের সন্ধান- 
টুকু পায় দন কখনো। তারা শুধু যোদ্ধা সুবর্ণলতাকেই দেখে এসেছে, 
“দক্ষিণের বারান্দালোভা স্বপ্লাতুর' 'সংবর্ণলতাকে দেখে নি কখনো! 

যুম্ধবিক্ষত স্‌বর্ণলতার বিকৃত আর হিংঘ্র মার্তটা অতএব বিরান্তি আর 
ঘণারই উদ্রেক করেছে তাদের। সম্ধান করে দেখতে যায় 'ন সংবর্ণলতার ভিতরে 
'বস্তু' ছিলো। 

ভেবে দেখে নি বস্তু ছিলো, স্বপ্ন ছিলো 'মান্ষের মত' হয়ে বাঁচবার 
দুদ্দমনীয় সাধ। ছিলো ভব্যতা, সভাতা, সৌকুমার্য। শুধু সে সম্পদ ক্ষয় 
হয়ে গেছে যুদ্ধের রসদ যোগাতে যোগাতে । 

তবে ভেবে দেখবেই বা কখন তারা? 

আজো কি যুম্ধের শেষ হয়েছে সবর্ণলতার ? 

হয় 'ন। 

হয়তো যুদ্ধের কারণগুলো আর তত বোঁশ প্রথর নেই হয়তো অনভূতি- 
গুলোও তত কৌশ তাঁর নেই তবু সবর্ণলতা এক আপসহীন সংগ্রামের 

| 

নোংরামি আর কুশ্রীতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে [নজে যে সে কত 
নোংরা আর কুশ্রী হয়ে গেছে, ভব্যতা সভ্যতা শালীনতা সৌন্দর্য বজায় রাখবার 
লড়াইয়ে যে নিজের চাঁরঘ্ের সমস্ত সৌন্দর্য শালীনতা জবাই দিয়ে বসে আছে, 
সে খবর আর নিজেই টের পায় না সে। 

সুবর্ণলতার সল্তানেরা মায়ের এই অপ্পরচ্ছন্ল মৃর্তটাই দেখতে পাচ্ছে। 

অতএব তারা অসাহষ হচ্ছে 

অতএব তারা মাকে ঘণা করছে। 

মা'র দিকে ব্যঙ্গের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। 

সারা জীবনের এই সণ্টয় সুবর্ণলতার। 

অথচ সুবর্ণলতার সন্তানদেরও দোষ দেওয়া যায় না। 'মুন্তকেশীর শন্ত 
বেড়া” কেটে বিরাট পাঁরবারের মধ্যে থেকে সুবর্ণলতা তাদের শুধু উদ্ধার করেই 
এনেছে, “আশ্রয়” 'দিতে পারে 'ন। 

শুধ্‌ যেন ছাঁড়য়ে ফেলে রেখেছে। 

তাদের সদ্য-উন্মোচিত জ্ঞানচক্ষুর সামনে অহরহ উদঘাঁটত হচ্ছে মা- 
বাপের দাম্পত্যলশলার যুদ্ধ আর সান্ধির বহ কলাত্কত অধ্যায়। 

তারা জানে তারা সুবর্ণলতার ক্ব্ন-সাধনার বস্তু নয়, যাদ্ধের হাতিয়ার মানন। 

এই অদ্ভূত যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে যত বোঁশ ধাক্কা খাচ্ছে তারা, তত বেশি 
বিতৃষ্ণ হচ্ছে, তত বোঁশ আঘাত হানছে। 

পারু পড়তে চায়, কিন্তু পারুর গড়াকে কেন্দ্র করে সবর্ণলতা যে ঘার্ণ 
ধড় তোলে. সে কড়ের ধুলো-জজালের দিকে তাঁকয়ে পার পড়ায় াতস্পহে হয়। 
হয়। 

পারু নিজেই বে'কে বসে। 

পার, প্রাতজ্ঞা করে, “লাঠালাঁঠ” করে আদায় করা বস্তুকে গ্রহণ করে কৃতার্থ 
হবে না সে। পারুর আত্মমর্ধাদাজ্ঞান তীত্র গভীর । 


২৪০ সুবর্ণলতা 


কিন্তু প্রবোধের পক্ষে মেয়ের সেই প্রাতজ্ঞা জানার কথা নয়। তাই প্রবোধ 
মায়ের প্রশ্নে অসহায় দৃষ্টতে এদিক-ওদক তাকিয়ে বলে, 'তোমার মেজবো যে 
বলে গো, আজকাল আর অত সকাল সকাল 'বিয়ে নেই! বরং একটু লেখাপড়া? 

মুস্তকেশী অবশ্য এতে বিচালত হন না। মুস্তকেশী দপ্তগলায় বলেন, 
'কণ বলাল লক্ষরছাড়া বামুনের গর:! মেয়ের এখন বিয়ে না দিয়ে লেখাপড়া 
শেখাতে বসাঁব ? তা বলাঁব বোক, তোর উপয্স্ত কথাই বলোছস। 1চরটাকাল 
তো হালকা বুদ্ধিতেই চলাল।' 

না, এখন আর 'বৌয়ের বাক্ধতে চলাল' বললেন না বৃদ্ধমাত মুস্তকেশণ। 
বললেন; হালকা বুদ্ধিতে চলল! 

প্রবোধ অবশ্য প্রীতবাদ করে না। 

মুস্তকেশী বলেন. ওসব কথা বাদ দে, কোমরে কাঁস গুজে লেগে যা। 
গলার কাঁটা উদ্ধার না হলে তো ছেলেদের বিয়ে দিতে পারাঁব না! এঁদকে মেয়ে 
'নয়ে লোকে আমায় সাধাসাধ করছে । আম থাকতে ছেলের বিয়ে 'দাঁব, এই 
আমার সাধ। সুবোটার তো প্রথম ঈদকে শুধু মেয়ের পাল!' 

কথাটা শেষ হবার আগেই গলার কাঁটা ঘর থেকে বিদায় নেয়, আর 
সুবর্ণলতা একটঃক্ষণ স্তব্ধ থেকে বলে, হুকুম তো একটা করে বসলেন! কিন্তু 
ছেলেদের এক্ষ্ান বিয়ে কিঃ পাসই করেছে, রোজগার তো করতে শেখে নি! 
কানুর তো পড়াও শেষ হয় নি!” 

কানু ডান্তারী পড়ছে, কাজেই তার পাস করে বেরোতে দৌর। মন্তকেশী 
সেই কথার উল্লেখ করে ব্যঙ্হাসি হেসে বলেন, ছেলে ডান্তার হয়ে বেরুলে 
তবে বিয়ে দেবে মেজবৌমা 2 তার থেকে বল না কেন, ছেলের এখনো চূল 
পাকে ?ন, বিয়ে দেব কি? ছেলেরা রোজগার না করলে বৌরা এসে তোমার 
সংসারে দুটি ভাত পাবে না? 

সুবর্ণলতা শান্ত গলায় বলে, ভাত কেন পাবে না! তবে ভাতটাই তো 
সব নয় মা!' 

“আহা, হলো না হয় গহনা-কাপড়ই সব" মুস্তকেশী কিদের গলায় বলেন, 
'সে তুমি ছেলের "বিয়ের সময় বেহাইয়ের গলায় গামছা "দে দশ বছরের মতন 
আদায় করে নেবে। ততাঁদনে তোমার ছেলে আঁবাশ্যই উপায়শ হবে।' 

সুবর্ণলতা আরো নগ্র হয়, তব দূড়গলায় বলে, সে তো আনাশ্চত, 
রোজগারপাতি না করলে_' 

“দেখ মেজবৌমা, তকে তোমার সঙ্গে জিততে পারব না আঁম, তবে গুরু- 
জন হিসেবেই বলাছ, বামুনের ছেলে খেটে খেতে না পারে ভিক্ষে করে খাবে, 
তাতে লঙ্জা নেই। বিয়ে একটা “সংস্কার”, সেটা সময়ে দরকার। তবে সব 
আগে তোমার ওই তালগাছকে পার করো- | 

সবর্ণলতা উঠে দাঁড়ায়। 

বলে, “রোদ থেকে এসেছেন, ডাব আনি একটা” 

ডাবে ছোঁওয়া লাগে না, তাই মুক্তকেশীর আসার আশায় প্রায়শই ডাব 
মজৃত থাকে। সূবর্ণলতারই ব্যবস্থা । 

ডাব, গঙ্গাজল আর তসরের থান। 

কাপড় ছেড়ে হাতেমূখে গঞ্গাজল 'ছাটিয়ে ডাবাঁট খেয়ে ছেলের সংসারের 


সুবর্ণলতা ২৪১ 


কল্যাণ করেন মুস্তকেশণ। 

আজ কিন্তু “হাঁহা করে উঠলেন। 

বললেন, 'থাক্‌, থাক্‌ আজ-- 

সুবর্ণলতা তবু থাকবে কেন' বলে চলে গেল। 

আর স্ববর্ণলতা চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই সহসা গলা নামালেন মূন্তকেশী। 
ফিসাঁফস করে কণ যেন বললেন ছেলেকে, ঈষৎ চমকে উঠলো ছেলে, মূখে ষেন 
বিপন্ন ভাবের ছায়া পড়লো তার, বারকয়েক মাথা নাড়লো “আচ্ছা, এবং 'না' 
বাচক, ভার পর সাবধান হয়ে সোজা হয়ে বসলো। 

সুবর্ণলতার অঞ্চলপ্রান্তের আভাস দেখা গেছে। 

প্রসঙ্গ চাপা দেবার জন্যেই যেন গলাটা আবার তুললেন মক্তকেশী, বললেন, 
'আজ আর বসবো না বেশিক্ষণ, “বুদো”র জন্যে একটা কনে দেখতে যাবার কথা 
আছে সুবোর, দোখ গে। বললাম একা না ভ্যাকা, বাপ-কাকা যাক, তা পেকা- 
পেভা দুজনেই ঘাড় নাড়লো। ছেলেরা বদ্যেববাদ্ধ কম, তার বিয়ের কথা কইতে 
ওনাদের মান্যে আঘাত লাগবে । সৃবো আমার ভালমানুষ-_ 

হঠাৎ ওঘর থেকে পারু এসে উদর হর, একটু তীক্ষহাঁস হেসে বলে, 
'ঠাকুমা বুঝি এবার ঘটকাজি পেশা ধরেছ ?" 

ট থতমত খান। 

মুস্তকেশ অবাক হন। 

কারণ এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না মুক্তকেশশী, তবে সামলাতে [তান জানেন। 
সামলে 'নয়ে বলেন, “ওগো অ মেজবৌমা, এ মেয়েকে আরো বিদ্যেবতী করতে 
চাও ? এখুনি তো উকিল-ব্যারিস্টারের কান কাটতে পারে গো তোমার মেয়ে। 
কথার কণ বাঁধান! আমি নয় ঠাকুমা, ঠাট্টার সম্পর্ক ঠাট্টা করেছে, তবে অন্য 
ক্ষেত্রে এরকম বোলচাল নিন্দের।' 

তোমার কাছে কোন্টাই বা নিন্দের নয় ঠাকুমা, পারুল হেসে ওঠে, 
মরা হিরাগ্কাদত ই্কুলে পড়লে বাচাল হয়, ইর্খরাজ শিখলে 
ধবা হয়__ 

হয়, চোখের ওপর দেখছি লো। তোর বাবার নাঁলন কাকার নাতন? 
পান্তর অবস্থ দেখাল নাঃ ঘটা করে মেয়েকে মেম রেখে ইংরাজি শেখানো 
হয়োছলো, বিয়ের বছর ঘূরল না, মেয়ে বিধবা হল না! 

পার ফট করে বলে, “কিন্তু জ্যাঠামশাই তো বড়াঁদর জন্যে মেম রাখেন নি 


বড়াদ অর্থে মল্লিকা। যার সবস্ব গেছে। 

মুস্তকেশী মুখ কাল করে বলেন,  প৬০০২০৯ 
ওপরে উঠাঁল পার! তোর বাপেরই জীবন অন্ধকার। যাই আজ উঠি।' 

ডাব খেলেন না। 

বললেন পেট ভার। 

পিছু উৎকৃষ্ট গোঁবন্দভোগ চাল, এক বোতল গাওয়া ঘি, পোয়াটাক সাগহ, 
এক সের মিগ্রী, গোটাপাঁচেক টাকা, আর একখানা নতুন গামছা নিয়ে আবার 
রা রো গাগা জিনা? 
ডাবটাও পালাঁকতে তুলে দিল সুরর্ণলতা। 

পালাক-বের়ারাদের হাতে ছটা পয়সা দিতে যাচ্ছিলো প্রবোধ, মৃন্তকেশী 

১৬ 


২৪৭ স্ববর্গলতা 


ছোঁ মেরে পয়সাটা কেড়ে নিলেন ছেলের হাত হাত থেকে, খরখর ক'রে বলে উঠলেন্‌ 
রেট: বাড়াসনে পেবো, বাপের পে দুটো পরসার মুখ দেখতে পেয়েছি 
বলেই মা-লক্ষরবকে অবহেলা কাঁরসনে। চার পয়সায় বরাবর যাচ্ছি-আসাছ। 
দয়াদাক্ষণ্য করে তুমি দু পয়সা বোঁশ দিলে অন্যের তাতে ক্ষোতি করবে, .তা 
মনে বঝো। একবার বোশি পেলে আর কমে মন উঠবে 2 

এবারে বেয়ারা চারটে 'কিল্তু প্রাতিবাদ করে ওঠে এবং প্রবোধও মায়ের দিকে 
করুণ মিনতি নিয়ে তাকায়, কিন্তু মূস্তকেশী অনমনয়া ! 

সদর্পে বলেন, 'দূর হ! দূর হয়ে যা পালাক নিয়ে! ভাত ছড়ালে আবার 
কাকের অভাব? বাল পালাঁকর বেত তো ছিড়ে ওয়ার হয়ে গেছে, পড়ে গিয়ে 
সোয়ারির হাড়গোড় না চূর্ণ হয়, ইদিকে পয়সার লালসটি তো খুব আছে! 
যাবি, না যাব না? 

এটি সিরা রা রী সানির রানার 
নাকাঁই? 

'বেশ, ওই চার পয়সাতেই যাব ।, 

বীরদর্পে গিয়ে পালাঁকতে ওঠেন মুস্তকেশী। 

পালাঁক-বেয়ারাদের পাঁরচিত ধৰাঁনটা শোনা যায় কাছ থেকে ক্রমশ দুরে। 

আরো দরে গিয়ে যেন ক্ষৃব্খ হৃদয়ের চাপা আর্তনাদের মত শুনতে লাগে। 


মুন্তকেশী বতক্ষণ 'ছিলেন প্রবোধের প্রাণে ধেন বল ছিল, মা চলে যেতেই 


তাই সুবর্ণলতার কাছে গিয়ে ইতস্তত করে বলে, মা তো একটা বার্তা 
দিয়ে গেলেন! 

সুবর্ণ অবশ এই 'বাতণ' সম্পর্কে বিশেষ উৎসুক হল না, শুধু মুখ 
ভুলে তাকালো । 

প্রবোধ “জয় মা কাল+”র ভষ্গীঁতে বলে ফেললো, 'তোমার বাবা যে ও 
বাড়তে এক খবর 

সুবর্ণলতা চমকে ওঠে। 

তোমার বাবা! 

খবর পাঠানো! 

এ আবার দি আভনব কথা ? 

সুবর্ণলতার যে একজন বাবা এখনো অবস্থান করছেন এই পাঁথবীতে। সে 
কথা কে মনে রেখেছে? 

সূবর্ণলতা চমকে ওঠে, কিন্তু প্রশ্ন করতে পারে না। প্রবোধই আবার 
বলে, 'মানে এ বাড়ির ঠিকানা তো জানেন না। তোমারও একবগশা গে 
আমারও ইয়ে হয় না_বাপ বলে কথা! সে যাক, খবর পাঠিয়েছেন, খুব নাঁক 
অসুখ, তোমাকে একবার দেখতে চান-” 

তোমাকে একবার দেখতে চান! 

বাবা সৃবর্ণকে একবার দেখতে চান 2 
এটী ক সম্থ্যাবেলা ? 
এই একটু আগেই না দুপুর ছিল? 


র্ণলতা ২৪৩ 


তবে এখন কেন চারাঁদক ছায়াচ্ছ্ হয়ে আসছে? 

সুবর্ণ সেই হঠাৎ অন্ধকার হয়ে আসা পাঁরপার্বিকের দিকে অসহায়ের 
মত তাকায় । 

এ দৃষ্টি বুঝি সুবর্ণলতার চোখে একেবারে নতুন। প্রবোধও তই 
অসহায়তা বোধ করে। অতএব তাড়াতাড়ি বলে, “আয়ে বৌশ ভয় পাবার 
নেই, মানে বয়স হয়েছে তো- মানে অসুখটা বোশ করেছে হঠাৎ, মানে আর 
কি ইয়ে তোমার এখুনি একবার যাওয়া দরকার । 

সৃবর্ণর চোখে জল নেই। 

সুবর্ণর চোখ দুটো যেন ইস্পাতের 

সেই ইস্পাতের চোখ তুলে সুবর্ণ বলে, “ষাবার দরকার কি আছে এখনো 2?" 

শবলক্ষণ! নেই মানে ? প্রবোধ যেন ধধক্কার দিয়ে ওঠে, 'এই কি ফান- 
আঁভিমানের সময় ; যতই হোক জল্মদাতা 'িতা-+ 

'সে কথা হচ্ছে না- সুবর্ণ যেন কথাও কয় ইস্পাতের গলায়, বাবার 
মরা মুখ দেখতে যেতে চাই না আম! 

বললো এই কথা সংবর্ণ! 

কারণ সুবর্ণর সেই কথাটা মনে পড়লো । বহুবার মনে পড়া, আর ইদানীং 
ধূসর হয়ে যাওয়া, সেই কথাটা । সবর্ণ সৌঁদন জলাঁবন্দুটি পর্যন্ত না খেয়ে 
চলে এসোছিল বাবার কাছ থেকে, বাবা বলেছিল, “আচ্ছা, যেমন শাস্তি 'দয়ে 
যাওয়া হলো, তেমন টের পাবে! এই বাপের মরা মুখ দেখতে আসতে হবে।' 

বলেছিল, বলে সুবর্ণকে নিয়ে ঘোড়ার গাঁড়তে উঠোঁছল সৃবর্ণর বাবা 
নবকুমার। আর একটাও কথা বলে নি। 

সেই শেষ কথা! 

সেই কথাটাই মনে পড়লো সবর্ণর, তাই বলে ফেললো, মরা মুখ দেখতে 
যেতে চাই না আম? 

প্রবোধ হাঁহাঁ করে ওঠে, কী আশ্চর্য, তা কেন ভাবছো? মানুষের অসৃখ 
করে না? 

সুবর্ণ চুপ করে দাঁড়য়ে থাকে। 

প্রবোধ বলে, “কানু কলেজ থেকে 

“কেন, কানু কেন? সুবর্ণলতা বলে, “তুমি নিয়ে যেতে পারবে না 2: 

“আহা পারবো না কেনঃ তবে কথা হচ্ছে পারু একা থাকবে” 

“একা মানে ? সুবর্ণ সেই ঝকঝকে শুকনো চোখে চেয়ে বলে, 'পারু বকুল 
পুজ্ধনে নেই ? মানু সুবল এরাও তো এসে যাবে এখাীন_- 

“আহা ওরা আবার মানুষ! মানে-মা বলে গেলেন নেহাৎ খবরটা দিয়েছে, 
না গেলে ভালো দেখায় না-_ 

“থাক্‌, বেশী কথা ভালো লাগছে না, তুমি একখানা গাঁড় ডেকে দাও, 
আমি একাই যাবো- 


৫ ॥ 


৫১০৯০ এর চাইতে অসম্ভব কথা আর কি আছে ঃ 

সবর্ণলতা পাঙ্গল তাই এমন একটা অল্ভূুত আর অস্বাভাঁবক কথা বলে 
বসেছিল। অস্বাভাবিক বোৌক। বিধবা বুড়ীরা কালণঘাট 
গ্রঙ্গাঘাট করে বেড়ায়, সে আলাদা কথা। বলতে গেলে 
তারা বেওয়াঁরশ। কমবয়সশ বিধবারাও মাঝে মাঝে পথে 





অল্পবয়সে যারা সবস্ব হাঁরয়ে বসে আছে, সমাজের 

কাছে এটুকু কৃপা তারা পায়। অথবা সমাজের উপর 
সারির অবশ্য বুড়ীদের মধ্যে সপ্তরথশ বোম্টত অবস্থায় 
তাদের খিদমদগারণী করতে করতেই যাওয়া। 

তা হোক_ তবু রাজরাস্তায় পা ফেলবার সৌভাগ্য ! 

এপ 

নৈব নৈব চ! 

তারা তো আর বেওয়ারশ নয় যে, যা খঁশ করতে চাইলেই করতে পারে? 
তবে আর মেয়েতে পুরুষেতে তফাৎ কিঃ কাছাকোঁচা দিয়ে কাপড়ই বা পরবে 
নাকেন তবে? 

তবুও যাঁদ সুবর্ণ বাইরের জগৎ থেকে নজীর এনে এনে দেখাতে চায়, 
যাঁদ বলে, “ওরা মেয়ে নয়? এই বাংলা দ্দেশের মেয়ে 2 তারও উত্তর আছে। 

যারা বেম্ম, ধারা খ্রীষ্টান, যারা সনাতন ধর্মত্যাগী ইঞ্গবগ. যারা বাঙালা 
হয়েও "সাহেব" তাদের ঘরের মেয়েরাই যা নয় তাই করছে । তাদের 
করে রাস্তায় বেরোচ্ছে, শীপারাল' করে শাড়ী পরছে, জুতো-মোজা পরছে। 
ছেলেদের মতন 'খেলাঘরে'র ছাতা হাতে নিয়ে বেড়াচ্ছে। 

তাদের মত হতে চাও তুমি ঃ সেটাই আদর্শ ? 

গেরস্তঘরের মেয়েরা সবাই ধযাঁদ বাঁড়র চৌকাঠ ডিঙোতে চায়, তাহলে 
সমাজ বলে আর রইল কি? 

লাখ লাখ মেয়ের মধ্যে দু-পাঁচটা মেয়ে কি করছে, সেটাই দেখতে হবে? 
বাকি মেয়েরা কোথায় রয়েছে সেটা দেখ ? 

এই যে প্রবোধের ওপাড়ার বন্ধ শশীশেখরদের বাড়ি ১ স্বর্ণ জানে না 
তাদের কথা ?...এখনো তাদের বাঁড়র মেয়েরা চন্দ্র-সূর্যঘ কেমন তা জানে না, 
ভাদ্রবৌরা কখনো ভাসরের সামনে বেরোয় না। 'শশীশেখরের দাদা যখন 
বৈঠকখানার দিক থেকে অন্দরের দিকে আসেন বা তিনতলা থেকে একতলায় 
নামেন, ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে পদক্ষেপ করেন নাঃ ছোট একটা পেতলের ঘণ্টা 
থাকে না তাঁর হাতে ? 

কেন? 

না, পাছে ভাদ্রবৌরা অনবাহত থাকে, পাছে অসতর্কতায় মুখ দেখা হয়ে 
যায়। তা ওরা না হয় একটু বেশণ, কিন্তু প্রবোধের জানাশোনা আত্মীয় কুট 


স্বর্ষজতা ২৪৫ 


কাদের বাঁড়তে সুবর্ণ ইচ্ছান্যায়শ বেহায়াপনা চাল: 

রা না 
বাড়তেই শাকওয়ালী, ঘণুটেওয়ালী, চুঁড়ওয়ালী। অথচ সুবর্ণ নিজের বাঁড়তে 
দুম করে একটা জোয়ানমর্দ গোয়ালা ঠিক করে বসলো সেবার! যান্ত কিঃ 
না দুধ ভাল দেবে! নিকুঁচি করেছে ভাল দূধের! পন্রপাঠ বিদায় দিয়েছে 
তাকে প্রবোধ। পাঁরমলবাবূদের নজর মানে 'নি। 

নজীর দেওয়াই একটা রোগ সুবর্ণর। 

আর নিজের গণ্ডীর নজীর ছেড়ে গণ্ডির বাইরের নজরে নজর। 

তর্ক উঠলেই গড় গড় করে আউড়ে যাবে-_বিধুমুখী: চল্দ্রমুখী, কাদম্বিনী 
গাঞ্গুলণ, স্বর্ণকৃমারণ দেবী, সরলা দেবী, সরোজনশী নাইড., কামিনী রায়, 
জ্ঞানদানান্দনী, লেডি অবলা বসু, আরও গাদাগুচ্ছির। মানবে না যে ওরা 
তোমার মত 'হন্দু বাঙালীঘরের মেয়ে নয়। ঘরে বসে বসে এত খবর 
বাকি করে কে জানে ঃ মাঝে মাঝে তো তাজ্জব হয়ে যায় প্রবোধ। এই তো 
তার ঘরের মধ্যেই তো আছে চিরটাঁদন, অথচ বাইরের খবর প্রবোধের থেকে 
বেশী রাখে। পাড়া বেড়াতেও যায় না, পাঁচটা সখীসামন্তও আসে না, অথচ-_ 

আশ্চর্য । 

মেয়েমানুষের এত জানা. এত 'বিশ্বর্রক্ধান্ডের খবর রাখা হচ্ছে অনর্থের 
মূল। ও থেকেই সন্তোষ নষ্ট, শান্তি নষ্ট, বাধ্যতা নম্ট। আদার ব্যাপারীর 
জাহাজের খবর নিয়ে দরকার কি বাগ? £ বিধাতাপুরুষ যখন গোঁফদাড়ি দিয়ে 
পাঠায় নি, তখন রাঁধোবাড়ো, খাওদাও, স্বামীপুত্তরের সেবা কর, নিদেন না 
হয় হারনাম কর কিংবা পরচর্ঠা কর। চকে গেল লাঠা। তা নয় লম্বা লম্বা 
বাল, বড় বড় আম্বা! 

তবে সোঁদন সুবর্ণ এত কথা বলে নি। এসব ওর মতবাদ । যা মনে পড়ে 
প্রবোধ একটা তর্কাতীর্কর মুখোমুখ হবার ভয় করাছল!...কন্তু তর্ক সুবর্ণ 
করে নি সৌদন. বেশী কথাও বলে নি, শুধু বলোছিল. “আম নিজেই যাব।' 

প্রবোধ ভুরু কোঁচকালো। 

আবার সোজা করলো সে ভূরু। 

তারপর বললো, “সে তো আর সম্ভব কথা নয়। তোমার যখন এতই 
ব্যস্ততা, তখন আমাকেই যেতে. হবে পেশছতে ॥' 

না! 

নাঃ না মানে? 

“মানে নিজেই যাব, সেই কথাই হচ্ছে। ঠিকানা বলে দিলে গাড়োয়ান 
ঠিকই নিয়ে যেতে পারবে।' 

ণঠকানা 2" প্রবোধ একট: উচ্চাঙ্গের হাঁসি হাসে, *বশুরবাঁড়র ঠিকানা 
আর জানলাম কবে? জন্মের মধ্যে কম্ম' সেই তো একবার দরজা পর্যন্ত 
আমি আবার ঠিকানা বলবো-' 

সুবর্ণ উত্তাল অসাহফণ্‌ চিত্তকে স্থির করে শান্তগলায় বলে, “তোমায় বলে 
[দিতে হবে না।' 

প্রবোধ স্‌বর্ণর স্থিরতাকে ভয় করে। 

প্রবোধ ভারী আবহাওয়াকে ভয় করে। 

তাই প্রবোধ আবহাওয়াকে হালকা করে ফেলবার চেষ্টায় ছাবলাগোছের 


২৪৬ স্বর্ণধজ 


হাঁসি হেসে বলে, তবে বলবেটা কে? তুমি? সেই মাম্ধাতার আমলের স্মৃতি 
উট্‌্কে? মাথা খারাপ! সে কি এখনো মনে আছে তোমার ? তি বলতে 
[ক বলবে_+ 

এত কথা আমার খারাপ লাগছে। তোমায় গাঁড় ডেকে দিতেও হবে না, 

রীষ্তায় বোরয়ে আম নিজেই; 

৮৪৮৭-১১-০২ লৃনিরররিনির : 

প্রবোধ বুঝলো একবার যখন ধরেছে, ঠেকানো যাবে না। বিশেষ করে 
পরিস্থিতিটা গোলমেলে। তাই “আচ্ছা আচ্ছা হচ্ছে' বলে বেরিয়ে পড়ে একখানা 
স্থোড়ার গাঁড় ভাড়া করে এনে সশব্দ সমারোহে বলে, 'পারু্‌, দোরটা বম্ধ করে 
দিয়ে যা। ভাল করে দিবি, কেউ কড়া নাড়লে বারান্দা থেকে দেখে তবে-:+ 

সুবর্ণ একখান। ফর্সা শাঁড় পরে নেমে এসেছিল ততক্ষণে, সুবর্ণর চোখ 
লালচে, মুখ লালচে, তবু সুবর্ণ দঢ়গলায় বলে, 'অত কথা হচ্ছে কেন? বলাঁছ 
তো আম নিজেই যাব।' 

প্রযবোধও অতএব দড় হয়, বললেই তো হল না? কলকাতার রাস্তা বলে 

কথা! তার ওপর মোছলমান গাড়োয়ান কোন- পথে নিয়ে যেতে কোন- পথে 
টেনে ছুট দেবে-” 

স্মবর্শ সহসা ঘুরে দাঁড়ায়, গসপড়র দিকে এগোয়, বলে, এঠক আছে 
ধাব না। 

আরে বাবা, হলটা কিঃ বলাছ তো নিয়ে যাচ্ছি-_' 

নানানা!, 

সুবর্ণ সিপড় দিয়ে উঠে যায়। 

'ধেস্তার 'নিকুচি করেছে_.. প্রবোধ জেরবারের গলায় বলে, “আমি শালা 
সবতাতেই চোরদায়ে ধরা পড়েছি। চুলোয় যাক, আমার কি? 

তারপর গট গট করে বোঁরিয়ে গাড়োয়ানটার হাতে একটা এক আন দিয়ে 
বলে, 'দরকার লাগবে না বাবা, যা! 

দোতলায় উঠে এসে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়য়ে গলা তুলে বলতে থাকে৷ 
বুঝলাম মন খারাপ, তবু সবেরই একটা সামঞ্জস্য থাকা দরকার। মা-বাপ তো 
তোমার জ্যান্তে মরা, এখন যে “অসুখ” বলে খবর পাঠিয়েছে সেটাই আশ্চর্য ! 

ঘরের মধ্যে থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না. দেখাও যায় না কোণের 
দিকে কোথায় বসে আছে। 

নিজেরই তো ঘর, তবু কেন কে জানে হঠাং ঢুকে পড়বারও সাহস হয় না। 
বাইরে থেকেই আরো কিছুক্ষণ স্বগতোন্ত করে আস্তে আস্তে নীচের তলায় 
নেমে গিয়ে বৈঠকখানা ঘরে বসে থাকে। 


“বাবা-_ 
অনেকক্ষণ পরে বকুল এসে ঘরে ঢোকে। 
বেন খুব একটা বিচলিত দেখায় তাকে। 
88 “বাবা, মা কোথায় 2 
মা কোথায়! 
এ আবার কেমন ভাষা ! 
প্রবোধ কাছা সামলাতে সামলাতে উঠে পড়ে; “তার মানে 2 


সুবর্ণলতা ২৪৭ 


বকুল শুকনো গলায় বলে, 'কোথাও দেখতে পাচ্ছি না) 

পা থেকে মাথা পরন্তি হিমপ্রবাহ বয়ে যায়, তবু মেয়ের সামনে 
“আবচলিত” ভাব দেখাতে চেষ্টা করে প্রবোধ, 'ছাতে উঠে বসে আছে বোধ 
হয়। 

'না। ছাতে দেখে এসোছি।' 

হ্যাঁ, সর্বই দেখেছে ওরা । 

ছাতে, স্নানের ঘরে, ঘুটে-কয়লার ঘরে, এমন কি ঝয়ের বাসনমাজার 
গাঁলতে পর্য্তি। 

কোথাও নেই সংবর্ণলতা ! 


॥৬॥ 


নবকুমার বিছানার সঙ্গে মাঁশিয়ে আছেন। 

নবকুমার হয়তো আশা ছেড়েই পড়ে আছেন। 

ওদের বাড়তে খবর দেবার পর থেকেই প্রাতি 
নৃহ্তে অপেম্ষা করছেন, আশা করছেন, দরজাটা ঝতাসে 
নড়লেও চমকাচ্ছেন, আবার বারেবারেই হতাশ নিঃশ্বাস 
ফেলে বলছেন, 'সে আর এসেছে !.. আসবে না কক্ষনো। 
আসবে না।' 

এমান অনেক বন্ণাময় মূহূর্ত পার করে, অনেক 
হতাশ নিঃ*বাদ ফেলে যখন নবকুমার প্রায় শেষ 
নিঃশ্বাসের জনা প্রস্তুত হচ্ছেন, তখন সহসা শুনতে পেলেন, “এসেছে ৮ 

এসেছে সুবর্ণ! 

নবকুমারের মেয়ে! 

নবকুমারেখ জীবন থাকতে সে কোনোদিন এল না। 

নন্কুমারের সেখ দিয়ে জ্। গাঁড়য়ে পড়লো, নধকুমার ক্ষীণকশ্ঠে কি যে 
বললেন, বোঝা গেল না। 

তারপর নবকুমার আর একটু অচেষ্ট হলেন, আদ্তে আস্তে ভেঙে ভেঙে 
কথা বললেন, বোঝা গেল। 

নবকুমার বললেন, 'সেই এলে শুধু সব যখন শেষ হয়ে গেল! 

সুবর্ণ ডুকরে কেদে উঠতে পারতো, কিল্তু স্বর্ণ তা করল না। 

স্বর্ণ শুধু মাথাটা নিচ করলো । 

সুবর্ণ কাঁপা কাঁপা ঠোঁটোকে কামড়ে ধরলো । 
এসেছে ।' 

সুবর্ণ মাথা তুলে একবার তাকালো, আবার মাথাটা 'নচ: করলো । 

নবকৃমার আস্তে থেমে থেমে বললেন. জানি ক্ষমা চাওয়ার কথা আমার 
মুখে আনা ডীচত নয়, তবু এই শেষকালে তোর কাছে একবার ক্ষমা না চেয়ে 
মরতেও তো পারছি না!' 

'বাবা! সুবর্ণ রুষ্ধকণ্টে বজে, ও কথা বলে আমায় শাস্ত দেবেন না 





২৪৬ সুবর্ণলতা 


ঙ 


বাবা! 

'শাস্তি নয় রে সুবর্ণ, এ একেবারে সাঁত্যকার অপরাধীর কথা! যে 
অপরাধ আমি তোর কাছে 

সুবর্ণ আরো কাছে সরে আসে, আরো রম্ধেকপ্টে বলে, “তাই যাঁদ হয়, 
তর শাঁস্তও কম পান ?ন বাবা! 

তা বটে! নবকুমারের নিষ্প্রভ দুটি চোখ 'দয়ে আর এক ঝলক জল 
গাঁড়য়ে পড়ে, সে কথা মিথ্যে নয়! এক-এক সময় মনে হতো, বাঁঝ বা লঘু 
পাপে গুরু দণ্ডই হয়েছে আমার! আবার যখন তোর জশীবনটা দেখোঁছ. তখন 
মনে হয়েছে, নাঃ, এ দণ্ড আমার ন্যাষ্য পাওনা! তবে একটা কথ্য বলে যাই 
রে, যা করোছি, না বুঝে করেছি। বুঝে জেনে অত্যাচার করতে কার নি! 
কিন্তু সেই একজন তা বুঝল না কোনোঁদন-_ 

থামলেন, জলের গ্লাসের দিকে তাকালেন। 

সবর্ণ জল দিতে গেল, দিতে পেল না, সাধনের বৌ এগিয়ে এসে তাড়া- 
তাড় মুখের কাছে গেলাসটা ধরে বলে উঠলো, “এই ষে বাবা, জল খান।' 

নবকুমার মুখটা কৌঁচকালেন। 
. নবকুমার আধ ঢোক জল খেয়ে সাঁরয়ে 'দলেন, তারপর বললেন, “ক্ষমা 
করতে যাঁদ পাঁরস তো-_” 

বাব, আপনি চুপ করুূন। আম সব বুঝতে পারছি। আপনার কষ্ট, 
আপনার দুঃখ, সব বুঝোছ 

নবকুমার একটা 'িঃ*বাস ফেললেন, তারপর বললেন, “ক্ষমা চাইলাম, সারা 
জশবনে তো পাঁর নি, এখন এই মরণকালে-_তবু আমার নিজের জন্যে তোকে 
ডাঁক নি সুবর্ণ, ডেকেছিলাম এইটা 'দিতে !'.. হাতটা তোশকের তলায় ঢুকিয়ে 
একট বুলিয়ে নিয়ে টেনে বার করলেন একটা ভারী খাম। বললেন. “এইটা 
আগলে নিয়ে বসে আছ, তোকে দেব বলে! 

সুবর্ণ হাত বাড়ায় না। 

সুবর্ণ ক এক সন্দেহে আরন্ত হয়ে ওঠে। 

সুবর্ণ অস্ফুটে বলে, 'কী এ? 

নবকুমার বোধ কার বুঝতে পাঁরেন। তাই তার সন্দেহভঞ্জন করেন। সামান্য 
মিডিরেল রাগ রা লি কার কান উঃ ারিজ সদা রী 

1, 

শচঠি! 

“হ্যাঁ নবকুমার কাঁপা গলায় বলেন, “তোর মা'র চিঠি! 

মা'র চিঠি! 

সুবর্ণর মা'র চিঠি! 

কাকে লেখা? 

সুবর্ণকে নয় তো! 

হু, তাই আবার হয়? হতে পারে? সুবর্ণর এত ভাগ্য ঃ 

কি জান কি! 

সূবর্ণ তাই নিষ্পলকে তাঁকয়ে থাকে। নবকুমার হাতের উল্টোঁপঠে 
চোখটা মুছে নিয়ে বলেন, পচরাঁদনের একবগৃশা মানুষ, কি ভেবে কি করে 
কেউ বোঝে না। কখনো কোনো বার্তা করে না। তোর ছোড়দা যাই ওদিকে 


সুবর্ণঙ্গতা ২৪৯ 


কাজ নিয়েছে, তাই' জানতে পার বেচে আছে। হঠাৎ একবার তার হাত 'দিয়েই 
পুটো চিঠি পাঠালো, একটা আমাকে লেখা, একটা তোকে লেখা 

'বাবা, আপনার কষ্ট হচ্ছে, একসঙ্গে বৌশ কথা বলবেন না। 

'না রে সুবর্ণ, আর আমার কোনো কষ্ট নেই, তুই ক্ষমা করস আর নাই 

করিস, আঁম যে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম, এতেই মনটা বড় হালকা 
রে এবার শান্তিতে মরতে পারবো ।...হ্যাঁ সেই চাঠি-' 

হ্যা, সেই চিঠির একখানা নবকুমারের, একখানা সুবর্ণর। 

“এএকবগৃশা' সত্যবতণর নাকি কড়া নিষেধ ছিল তার জীবংকালে যেন এ 
চাঠি খোলা না হয়। মততযুসংবাদটা অবশ্যই পাবে নবকুমার, তখন সংবর্ণরটা 
সুবর্ণকে পাঠিয়ে দেবে, নিজেরটা খুলে পড়বে। 

সে সংবাদ এসেছে-_ 

না, শেষরক্ষা হয় 'ন। 

. সুবর্ণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে পারে ন। সুবর্ণ তাঁর তাক্ষ] একটা 
ডাকের "সঙ্গে ভেঙে পড়োছিল। ডাক নয় আর্তনাদ! "বাবা! 

শুধু ওই! 

শুধু “বাবা' বলে একটা তীব্র আর্তনাদ! তারপর স্তব্ধতা। 

পাথরের মার্তর মত স্তথ্খতা! 


পাশের ঘরে প্রবোধ তখন তার শালাজকে প্রশ্ন করছে, ক হয়োছল 
বললেন ?...কছ হয় নি2 আশ্চর্য তো! একেই বলে পণ্যের শরীর! তবে 
আপনাদেরও বাঁল-যতই যেমন হোক “মা' বলে কথা! মরে গেল. আপনারা 
একটা খবর দিলেন না! বাঁল চতর্থাঁটাও তো করতে হতো আপনার ননদকে ? 
হ্যাঁ, প্রবোধ এসে পড়েছে বৈকি। উধ্বশ্বাসেই ছুটে এসেছে, সবর্ণলতার 
সংবাদে । 

 শালাজ মূদুস্বরে বলে, শক বলবো বলুন? হাত-পা বাঁধা যে! কড়া 
দেওয়ার পাওয়া গত ফন বাবার চি খোলা 
না হয়, আর ঠাকুরঝির চিঠি ঠাকুরাঁঝকে দেওয়া না হয়। আর চতুথ করার 
কথা বলছেন? সেও তো হুকুম ছিল, তাঁর জন্যে কেউ যেন অশোচ পাঙ্গন না 
করে।, 

প্রবোধ কৌতূহলী হয়ে বলে, “সন্ন্যাস নিয়োছলেন বাঁঝি ?, 

'না না, তা তো কই শান নি। নাকি বলোছিলেন, বহুকাল সংসারকে 
ত্যাগ করে এসোছি, তার সুখ-দুঃখের কোন দায়ই নিই নি, এতকাল পরে মরে 
তাদের গলায় এত বড় একটা দ:ঃখের দায় দিতে যাব কেন? 

তা ভাল! প্রবোধ বলে. ওই মানুষাঁটর সণচ্টছাড়া বুদ্ধির জনোই দু 
দুটো সংসার মজলো ! এই তো *বশরমশায়েরও তো পাঞ্গাপানে পা” দেখতে 


সাধনের বৌ বলে, 'তা সেও ওই একই কারণ! যেই না খবর এল ওনার 
কাশীলাভ হয়েছে, শবশুরঠাকুর যেন একেবারে ভেঙে পড়লেন। বলতে গেলে 
সেই যে শুয়ে পড়েছিলেন, সেই শোয়াই এই শেষ শোয়া! কবরেজ তো বলেছে, 
বড় জোর আর দু-চারটে 'দিন! 

প্রবোধ কখনো শালাজ রসের আস্বাদ পায় 'নি, তাই প্রবোধ কথা থামাতে 


২৫০ সবর্ণলতা 


চায় না, কথার 'পঠে কথা গেথে গেথে চালিয়ে যায় আলাপ, আর সেই সন্েই 
জানতে পারে, রোগবালাই কিছুই' ছিল না নবকুমারের, এখনো এই বয়সে 
এগুলি করে খেতে পারতেন, নিজে বাজারে না গিয়ে থাকতে পারতেন না, 
আর গিয়ে রাজ্যের শাক-পাতা কিনে এনে বলতেন' “রাঁধোে', আর সেইগুলো 
খেয়ে হস্তম করতেন। মেজাজটা আঁবাঁশা 'তীরক্ষি ছিল. তা তো বরাবরই 'িল। 
সুধীরবালা বিয়ে হয়ে পধন্তিই তো দেখছে, সব্দাই যেন মেজাজ “ঙে' চড়ে 
বসে আছে। কিন্ত স্বাস্থ্য, শক্তি ছিল। অথচ স্ব মারা যেতেই একেবারে 
গুড়ো হয়ে পড়লেন। 


প্রবোধ এসব শুনে-ট্‌নে হেসে মন্তব্য করে, 'ভেতরে ভেতরে এখনো এত 


সাধনের বো মদ হাসে। 

প্রবোধ আবার বলে, তবে উচিত ছিল পায়ে ধরে সেধে নিয়ে আসা” 

বৌ মাথা নাড়ে। 

'মাথা খশড়লেও আসতেন না। শুনোছ তো প্ররাঁতর কথা। তব নিজের 
ছেলের কাছেই শনেছি। একেবারে অন্য ধরনের -- 

হি মেয়েটিও তাই হয়েছেন” প্রবোধ আক্ষেপ কারে বলে. “আপনার 
কাছে বলেই বলগ্ছি-_- আপনার ন*১. ঠিক তাই। একেবারে সাষ্টছাড়া। 
আমি শালা চিরকাল চোর হয়ে ও আহি ''হরাণর মেজাজের কাছে। অথচ এই 
তো আপানি--দাব্ব সোজাসহীজ ?' 

“কশ করে জানলেন 2 শালাজ হাসে" জল্ো তৈ একবার দেখলেন 2? 

তাতে কিঃ পাকা রাঁধুননরা হাঁড়র একটা ভাত দেখলেই বুঝতে পারে 
কেমন সেদ্ধ হয়েছে । যাক-, *বশুবমশাইয়ের তানস্থা তাহলে শেষাবস্থা 2 

'তাই তো বললে কবরেজ। তা বয়েসও তো হয়েছে_' 

প্রবোধ কথাটা লূফে নেয়। হেসে ওঠে। 

“তা বটে! তবে কিনা রোগবালাই হল না. পত্ীশোকে প্রাণটা গেল, এটাই 
বা দুঃখের কথা। ন্রেতাষগে রাজা দশরথের পাত্রশোকে প্রাণ গিয়েছিল, আর 
কাঁলফূগে এই আমাদের *বশুরঠাক্রের পত্ীশোকে-_ টেনে টেনে হাসতে থাকে 
প্রবোধ ষেন ভার একটা রাঁসকতা করেছে ! 

ঠাকুরাঁঝকে কি রেখে যাবেন ?' 

ঠাকরজামাইকে জামাইজনোচিত ভলখাবারে আপ্যায়ন করে শালাজ প্রশ্ন 
করে। 

প্রবোধ হাত উল্টে বলে, সে আপনার ঠাকুরঝিব মাঁজজ! যাঁদ বলেন 
“থাকবো”, পাঁথবী উল্টে গেলেও রদ হবে না। যাঁদ বলেন “থাকবো না” 
পায়ে মাথা খুড়লেও বদলাবে না--? 

সুধীরবালা হাসে, আপান তাহলে বেশ মজায় আছেন বলুন 2? 

'হশৃ, সে কথ্ধা আর বলতে ! মজা বলে মজা! তব আপনার ক মনে হয় ? 
আজ রাত্তরের মধোই কিছ হয়ে-টয়ে যাবে ? 

সুধারবালা মাথা নাড়ে। 

বলে, 'আন্-কালের মধোই পিছ; হবে বলে আঁবাশ্য মনে হয় না। কেন, 
এক রান্তরও গিলশকৈ ছেড়ে থাকতে পারবেন না বাঁক 2 

'কশ যে বলেন? এই বন্পসে আবার অত--_” গ্রবোধ হ্যা-হ্যা করে হাসতে 


সংবর্ঘতা ২৫১ 


থাকে, “তা ছাড়া আপনার ঠাকুরাঝঁটি তেমান কিনা! একটি পাঁলশ সেপাই! 

প্রবোধেরও একটা দুঃখের দিক আছে বৌকি। প্রবোধ দেখে সংসারের সবাই 
দাব্ধ সহজ স্বাভাবক, শুধু বেচারা প্রবোধের বৌটাই স্াম্টছাড়া। আজীবন 
এই দু্খেই জলে মলো বেচারা । 

এই তো. একটা মেয়েমানূষ! সূবর্ণলতার মত অত রূপ না থাক, দিব্বি 
মেয়েলণ লাবণ্য রয়েছে, মেয়েলী কথাবার্তা, প্রাণটা সহজ হয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। 
আর দুবর্ণ? তার দিকে যেতেই তো ভয় করছে! বাপ-বোঁটতে কোনোকালেও 
মুখ দেখাদেখি নেই, অথচ মরছেন খবর শ.নে দিশেহারা হয়ে একা ছুটে এলেন! 
কত বড় দূর্ভাবনা গলায় গেথে দিয়ে এল তা ভাবি না! 

প্রবোধ যেন কেউ নয়! 

প্রবোধকে যেন চিনতে পারছে না! 

কে বলতে পারে নিয়ে যাওয়া ষাবে. কি বাপের রোগশয্যে আঁকিড়ে পড়ে 
থাকবে! 

বপদের ওপর পদ! 

এই সময় আবার মাতৃশোক-সংবাদ ! 


মার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ছিল না, ৭ ভৈতরে ভেতরে তো ভান্তর 
সমূন্দুর ভরা ছিল প্রাণে। 
তা কপালই বলবো । 


একই সঙ্চে মাতৃপিত-বিয়োগ ! 

মা মরেছে আজ দশ-বিশ দিন, খবর নেই বার্তা নেই। এখন একেবারে 

প্রবোধেরই গেরো! 

গেরো কি সোজা 2 [তান যতই খলে যান. তাত্র মরণে কেউ যেন 'অশোচ' 
না নেয়, সমাজ তা মানবে 2৪ এখান তো প্রবোধকে মায়ের কাছে ছটতে হবে 
-_ নিয়মকানূন জানতে । তারপর পরুতবাঁড়! 

বেচে থেকে কোনোকালে উপশ্গার করলেন না শবশুর-শাশুড়ী, এখন মরে 
যল্ণা "দিয়ে যাচ্ছেন। 

একেই বলে পৃবর্জল্মের শনুতা । 

প্রবোধের দিক থেকে এসব যাান্ত আছে বৌকি। 

কিন্তু সুবর্ণ! 

সুবর্ণ কোন্‌ য্যন্ত দিয়ে ক্ষমা করবে তার মাকে ? 

মরে গিয়ে তবে সুবর্ণকে উদ্দিশ করে গেল মা? চাঠিখানা পড়ে উত্তর 
দেবার পথটা প্ষক্তি না থাকে 

কেন? কেন? কেন মা আজল্ম এভাবে শল্লুতা করল সুবর্ণর সঙ্গে 2 

ত্যাগই তো করেছিলে' মরে গেল তবু জানতে পেল না সুবর্ণ এখন তবে 
আবার কেন একখানা চিঠি দিয়ে আগুন জালিয়ে যাওয়া 3 


প্রবোধের ভয় অমূলক । 

সুবর্ণ থাকতে চাইল না। 

সুবর্ণ বাপের পায়ের ধুলো নিয়ে চলে গেল। বললো, এই শেষ দেখা 
দেখে গেলাম বাবা। শাপ দিয়েছিলে মরা মুখ দেখতে, সেটুকু থেকে যে অব্যাহতি 
পেলাম, সেই পরম ভাঁগ্য। 


২২ স:বর্থলতা 


“আর আর্সাব না? 

৮০০ দুজন 'আর ক করবে বাবা 2 
রি রতি মনে জানবো একই 1দনে মা-বাপ হারিয়েছে হতভাগণী 

॥ 


যেন সেই পরলোকগতার পিছ পিছ গিয়ে ফেটে পড়ে বলতে ইচ্ছে করছে 
রি দাস সা রারিবনিসানির ব্রার 
তাকে? 


॥৭॥ 


লতা বলোছল, 'মনে জানবো একই 'দিনে মা-বাপ হারালাম আমি! 
পাক মাপ ছিল সর তই হারানোর প্রম্ন ? 


কবে পেয়েছে সেই থাকার প্রমাণ 2 

তবে? 

ষে বস্তু ছিল না, তার আর হারাবার প্রশ্ন কোথায় ? 
তবু নির্বোধ স্ববর্ণলতা অসীম নক্ষত্ে ভরা 
আকাশের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে একটি নতুন নক্ষত্রের 
| সন্ধান করতে করতে সেই বলে-আসা কথাটাই আবার 
মনে মনে উচ্চারণ করে, একই দিনে মা-বাপ দুই-ই 





কোনো এক নতুন নক্ষত্র কি শুনতে পাবে সে কথা? আর শুনতে পেয়ে 
সু বলবে, 'ঘা ছিল না তাই নিয়ে হারানোর দুঃখ ভোগ করতে 

বসাঁজ তুই? ছি, ছি! 

সূবর্ণলতা সে হাঁসি সে কথা শুনতে পাবে না হয়তো। তাই সবর্ণলতা 
ওই আকাশটা থেকে চোখ সরাতে পারছে না। 

এ বাঁড়তে আকাশ আছে। 

সুবর্ণলতার এই গোলাপন-রঙা দোতলায়। কারণ এ বাঁড়তে আছে ছাদে 
ওঠার. সিশড়। আছে দক্ষিণের বারান্দা। যে বারান্দায় বাতাসের অফুরন্ত 
দাঁক্ষণ্য, যে ছাদে অন্তহীন অল্ধকারের নাঁবড় গভীর প্রগাঢ় প্রশাল্তি। 

ছাদেই তো মস্ত! 

এখানে- উধর্যসীমায় স্থির হয়ে আছে লেই অসংখ্য নক্ষত্রের মালা-পরানো 
নর্মল আকাশ। 

সুবর্ণলতার কি তবে ভাগ্যকে ধনাবাদ দেওয়া উচিত নয়? যাঁদ না দেয় 
তো সুবর্ণ অকৃতজ্ঞ। 

কিন্তু সুবর্ণ অকৃতজ্ঞ নয়। 

তই সে যখন সেই জল্তহশীন অন্ধকারের মাঝখানে উঠে এসে দাঁড়ায়, তার 
হৃদয়ের শান্ত ধন্যবাদ উঠে আসে একটি গভীর 'নঃ*বাসের অন্তরাল থেকে। 

এখানে ছাদে উঠে আসতে পারে সংবর্ণলতা। 

আর সেটা পারে বলেই দুদণন্ডের জন্যেও অন্তত ভূলে থাকতে পারে 


স-বর্ণজতা ২৫৬৩ 


সৃবর্ণলতা নামের মানষটা হচ্ছে একটা কর্মে উত্তাল আর শব্দে মুখর স্থূল 
আর ক্ষুদ্র সংসারের গৃহিণী । ভুলে থাকতে পারে, সেই সংসার তার স্ধ্লতা 
আর ক্ষুদ্রতা নিয়ে অহরহ সুবর্ণলতাকে ডাক 'দিচ্ছে। তার দায় এড়াবার উপায় 
নেই সুবর্ণলতার। 

তবু আজ বোধ হয় আর কেউ ডাক 'দিতে আসবে না। 

আজ সবর্ণলতাকে বোধ হয় কিছ 'কীণৎ সমীহ করবে সুবর্ণলতার 
ছেলেমেয়েরা । 

ডাক দেবে না, অতএব সুবর্ণলতা স্তব্ধ হয়ে বসে মনে ভাবতে পারে, ম৷ 
ছিল তার! রাজরাজেশবরী মা! 

ছিল সুবর্ণর সমস্ত চেতনার মধ্য, সমস্ত ব্যাকুলতার মধ্যে, সমস্ত অনু- 
ভবের মধ্যে। মূর্খ সুবর্ণলতা শুধু একটা মৃঢ় অভিমানে মুখ ফিরিয়ে থেকেছে 
সেই মায়ের 'দক থেকে। 

নইলে একবার ফি সবাঁদকের সব মান-আভমান ধুলোয় 'ৰাকয়ে দিয়ে 
মায়ের কাছে গিয়ে আছড়ে পড়া যেত না? বলা যেত না. মা. তোমায় একবার 
দেখবার জন্যে বন্ড ইচ্ছে হাচ্ছিল তাই চলে এলাম! 

সুবর্ণ তা করে নি। 

সুবর্ণ তার আভমানকেই বড় করেছে। সুবর্ণ ভেবেছে, 'মা তো কই 
একবারও ডাক দেন নি।” 

সুবর্ণ ভেবেছে, স্বামীর কাছে হেট হব না আমি! 

তাই সুবর্ণর মা শছল না"! 

এখন সুবর্ণলতা সব মান-অভিমান ধুলোয় লুটিয়ে দিলেও আছড়ে পড়ে 
বলতে পারবে না সেই কথাটি। 

'মা, তোমাকে একবার দেখবার জন্যে মরে যাচ্ছিলাম আঁম।' 

িল্তু আঁভমান কি দূর হয় ? 

এখনো তো বাপের উপর একটা দুরল্ত আঁভমানে পাথর হয়ে আছে সুবর্ণ! 
সেই পাথর যাঁদ ফেটে পড়তো তো. হয়তো কপাল কুটে কুটে চাঁংকার করে 
উঠতো. কেন১ কেন তোমরা সবাই মিলে আমাকে ঠকাবে ১ কেন এমন করে 
নিষ্ঠুরতা করবে আমার সঙ্গে ঃ কী ক্ষাতি হতো যদি তোমার সুবর্ণলতার 
মায়ের চিঠিটা সুবর্ণলতাকে চুপি চাপ পাঠিয়ে দিতে ? 

যাঁদ বলতে. “সুবর্ণ রে. তোর মা বলছে. সে মরে না গেলে চিঠিটা না দিতে, 

আম পারলাম না অত 'নষ্ঠুর হতে, আম দিয়ে গেলাম তোকে । এখন 
তুই বোঝ, খুলাঁব কি খুলাঁব না! 

সুবর্ণ বুঝতো! 

িল্তু সৃবর্ণর বাবা তা করেন নি! 

আর সবর্ণর মা তার চিঠির জবাব চায় না বলে বলে গেছে-'আঁম মরলে 
তবে দিও সবর্ণকে! 

কী দরকার 'ছিল এই মৃষ্টাভক্ষায় ? 

সারা শরীর তোলপাড়-করা একটা প্রবল বাছ্পোচ্ছৰাস যেন সেই পাথরকে 
ভাঙুতে চাইছে। 

হাতের মুঠোর মধ্যে বন্ধ রুয়েছে সেই মার্টাভক্ষার নমুনাটনকু। 

বন্ধ খাম বন্ধই রয়েছে। 


২৫৪ সুকারলিতা 


সুবর্ণলতা খুলবে না ও খাম, দেখবে না ক লেখা আছে ওতে। 

নিরুচ্চার থাক- সুবর্ণলতার 'িষ্তুর মায়ের নিষ্ঠুরতার নমুনাটা। 

মাকে বাদ দিয়েও যদি এত বড় জীবনটা কেটে গিয়ে থাকে 'সংবর্ণর তো 
বাকী জীবনটাও যাবে। 

সবর্ণলতা ভাবুক' যে বস্তু ছল না, তার আবার হারানো কি? 
সুবর্ণলতার মা নেই, মা ছিল না। 


কিন্ত সত্যই কি ছিল না? 
কোনোদিনই না? 
সুবর্ণলতার জীবনের নটা বছর একেবারে "নয়, হয়ে যাবে 2 

সুবর্ণলতার সেই ন'বছরের জীবনের সমস্ত জীবনাকাশ জুড়ে নেই 
একখানি আনর্বাণ জ্যোতি 2 সেই জ্যোতির পাঁরমণ্ডলে ও কার মুখ? 

সবর্ণলতার্‌ মায়ের মুখ কি ভূলে গেছে সুবর্ণ? 

সংবর্ণর জবন-জাকাশের সেই জ্যোত চিরতরে মুছে গেছে? মৃছেই 
যাঁদ গেছে তো সুবর্ণলতা কোন আলোতে দেখতে পাচ্ছে ওই ফক-পরা ছোট 
মেয়েটাকে 2 

যে মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরেই হাতের বইখাতা নামিয়ে রেখে দূদ্দাঁড়য়ে 
ছুটে এগিয়ে গেছে তার মায়ের কাছে দু হাত বাঁড়য়ে 2 

“সা! মা। মা! 

মা অবশ্য হাঁহাঁ করে উঠেছে, 'ছুদ্সনে, ছদ্সনে, ইস্কুত্ের জামা- 
কাপড় 

শকন্তু মায়ের চোখের কোণে প্রশ্রয়, মায়ের ঠোঁটের কোণে হাসি। 

'সার শোনে কেউ তাঁর মিথ্যে নিষেধের সাজানো বাল ' জীড়িয়ে না ধরে 
ছাড়ে 2 

অন্ধকার, নিঃসীম অন্ধকার। এই অন্ধকারের সমুদ্রে তাঁলয়ে গিয়ে বি 
এ ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছে সুবর্ণ। 

ণন্ত ওই অতল অন্ধকারের মধ্যে দৃষ্ট তেমন চলে না। শুধু শব্দ- 
তরঙ্গ পড়ে আছড়ে আছড়ে। 

সেই তরঙ্গে তরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে সুবর্ণ। 

চাকা? শব্দ ! 

স্মতর কৌটোয় ভরা বুঝি স্তরে স্তরে? আজকের ধাকা লেগে তারা 
উঠে আসছে, ভাডরে গড়ছে নতুন করে ধীনত হচ্ছে। 

প্রথম ভোরে যে শব্দটা সেই ছোট মেয়েটার ঘূমের শেষ রেশকে সচাকিত 
করে ধাক্কা দিয়ে যেত, চস হচ্ছে হাড়-পাঁজরা বার করা ঘোড়ায় টানা ময়লা-গাঁড়র 
ঝনাৎ ঝনাং শব্দ। 

একটা জঞ্জালের স্তৃপ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা। আর শব্দ 

উঠছে ঝন-ঝন্-ঝনাং। সেই' শব্দের সঙ্গো আর এক শব্দ, "স্বর্ণ এবার উঠে 
পড়।, সৃবর্ণ অবশ্যই এক কথায় উঠে পড়ত না, তখন একট: মৃদু ধমক। 
কিন্তু সেই ধমকের অন্তরালে যেন প্রশ্রয়ের মাধনূর্য। সুবর্ণ উঠে পড়তো, জার 
শব্দ শুনতে পেতো মায়ের রাম্াঘরের বাসনপন্র নাড়ার শব্দ। সেই শব্দের 
মধ্যে মা মাখানো । দুপুরের নির্জনতায় আর একটা শব্দ উঠতো, 'উং উং ঠ'। 


সযবর্ণলতা ২৫৫ 


বাসনওলা চলেছে চড়া রোদ্দুরে, তার মাথার ওপর বাসনের বাঁকা, আর হাতে 
একটা কাঁসর সঙ্গে একটুকরো কাঠ। সেই কাঠটুকুতেই কাঁসির গা থেকে 
শহ্দ উঠছে-_ঠং, ঠং. 

সে শব্দ 

দুপুরের নিজনিতায় যেন একটা শিহরণ জাগিয়ে দিয়ে যেত। মনটা হু 
হু করে উঠতো। শেলেট পেনাসল রেখে মায়ের কাছে গিয়ে গা ঘেষে বসতে 
ইচ্ছে করতো । 

মা বলতো; শক হলঃ 'িলখতে লিখতে উঠে এলি যে? 

মেয়েটা মায়ের গা ঘেষে বসে বলতো, 'এমান।, 

মা মেয়েটার ঝূমরো চ.লগুলো কপাল থেকে সাঁরয়ে দিতে দিতে স্নেহ- 
তরা গলায় বলতো, 'এমান মানে? এমাঁন কিছু হয় লাক 2, 

মেয়েটা মায়ের গালে গাল ঘষে ঘষে বলতো, 'হয়, হয়! এই তো হলো! 

তখন যাঁদ দুপুরের সেই 'নজ্নতা ভেদ করে আবার হাঁক উঠতো, 
'টাঁপারি, টোপাকুল, নারকুজে কু-ল!' 

কি উঠতো--্চশীনের পিপ্দুর! চাই চীনে-র িপ্দুর-" কিছুই 

এসে যেত না মেয়েটার । 

বুক গুরগুর করে উঠতো না, গা ছমৃছম্‌ করে উঠতো না। যেন সব ভয় 
জয়ের ওষুধ মজূত আছে এ মাণ্ট গন্ধেভরা গা-টার মধ্যে! 

কিসের সেই মিষ্টি গন্ধ £ 

চুলের 2 শাঁড়র ১ না শুধু মাতৃহৃদয়ের ? 

শব্দ উঠতো-- 

'বেলোয়াঁর চাঁড় চাই, কাচের পুতুল লনা চাই! সাবান, তরলংালতা 
চাই!' শব্দ উঠতো, পাখা বরো-ফ' পাং। বরো? 

তখন আর ভয় নয়, আহাদ । 

আহমাদ, আগ্রহ, উৎসাহ । 

শুনতে পেলেই জানালার কাছে ছুটে যেত মেয়েটা, তারপর সরে এসে 
উতলা গলায় বলতো, “মা? মাগো ! 

মা হেসে হেসে বলতো, 'ভারী যে আদর দেখছি! কণ চাই শুনি 2" 

'কাচের পুতুল একটা-- 

'আর পৃতুল কি হবে রে? কত রয়েছে 

মেয়েটা তণক্ষ] গলায় বলতো, 'বা রে, আমার বুঝি কাঁচ পূতুল আছে 2 

অতএব কচি পৃতুল! 

অথবা বরফ পাংখা বরফ! তখন ম। বলতো, “দর, দূর, ও বরফ 
বাঁচ্ছার জলে তোর হয়। ওসব ক খায় মানুষে ?, 

'থায় না তো দা করে কেন? পরনে খাটো ফ্রুক থাকলেও তর্কে খাটো 
ছিল না মেয়েটা। বলতো, "খায় না তো বাক করে কেন? 

মা পয়সা বার করতো আব বলতো, পবাক্ তো সাপের বিষও করে। খাঁব্‌ 
তাই?, 

বলতো, আবার পয়সা 'দিতো। 

বলতো, "শুধু আজ, আর নয় 'কিল্তু।' 

তাই, তাই, ভাতেই সই। 


২৫৬ স্বর্ণলত 


' 'নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শূন্য থাক।' আর এক- 
দিনের কথা পরে ভাবা যাবে। 

এক-একাঁদন আবার মা বকতো। 

বলতো, “কেবল কেবল পড়া ফেলে উঠে আসিস কেন বল তো? মন নেই 
কেন পড়ায় £, 

মেয়েটা বলে ফেললেই পারতো ভরদুপুরে ওইরকম সব শব্দ শুনলে ভয় 
করে আমার। বললে অনেক ছু সোজা হয়ে যেত। কিন্তু মেয়েটা তা বলতো 
না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো। 

মা বলতো, যাও, হাতের লেখা করে ফেল গে।' 

মেয়েটা আস্তে আস্তে চলে যেত। 

আর সময় মানট গুনতো কখন রাত্তর আসবে। রাঁত্তরে তো আর মা 
ঠেলে সাঁরয়ে দিয়ে বলতে পারবে না, 'ষাও পড় গে! 

রাস্তরে মায়ের বুকের কাছে ঘে'ষটে শুয়ে গায়ের ওপর হাত রেখে পরম 
সুখময় একট? আবেশ নিয়ে কয়েক মৃহূর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া! 

ছোট সেই মেয়েটার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে থাকে সবর্ণলতা। তার মায়ের 
কাছে বসে চুল বাঁধে, ভাত খার, পড়া মুখস্থ করে। বই-খাতা গুছয়ে নিয়ে 
স্কুলে যায়। 

যায় দুর্গাপ্জার প্রাতমা দেখতে । যেখানে যায় তার নামগুলো যেন 
ভেসে ভেসে উঠছে চালচিত্রঘেরা জগজ্জননা মূর্তির ধারে ধারে। 

রাণী রাসমাঁণর বাঁড়, শোভাবাজারের রাজবাঁড়, শ্যামবাজারের মা্তর- 
বাঁড়।...কোথায় যেন নাগরদেলা চডে আসে, কোথায় যেন সের পৃতুল 
দেখে। 

তারপর ব্যথা-করা পা নিয়ে বাঁড় ফিরে ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে, 'মা, মাগো, 
কতো ঠাকুর দেখোছি জানো? পাঁচ-খানা! 

মা হেসে বলতো, ঠাকুর তো দেখোঁছিস 2 নমস্কার করোছিস ?, 

'আহা রে নমস্কার করবো নাঃ আম যেন পাগল! 

মা ওর কপালের চুলগুলো গ্যাছয়ে দিতে দিতে বলতো, “করোছস 
তাহলে? নমস্কার করে কি বর চাইীল? 

'বর ১ এই যা কিছু চাই নি তো? 

মা হেসে ফেলতো। ৃ 

চাস নি? তা ভালোই করোছস! না চাওয়াই ভালো। তবে এইটুকু 
চাইতে হয়, মা, আমার যেন 'বদ্যে হয় £ 

বিদ্যে! 


1বদ্যে ! 

উঠতে বসতে মা ওই কথাই বলতো । 

শবদ্যেই হচ্ছে আসল, বুঝাঁল2 মেয়েমানুষের বিদে-সাঁধ্য নেই বলেই 
তাদের এত দহদরশা!...তাই তাদের সবাই হেনস্থা করে। আর যে-সব মেয়ে- 
মানৃষরা গদ্যে করেছে, করতে পেরেছে, বিদুষা হয়েছে 2...কত গৌরব তাদের 
-__কত মান্য। সেই মান্য, সেই গৌরব তোরও হবে। 


সংবর্ণলতার সর্বশরীরে প্রবল একটা আলোড়ন ওঠে। 


স্যবর্পজতা ২৫৭ 


সুবর্ণলতা ছাদে ধুলোর ওপর শুয়ে পড়ে মুখটা ঘষটে বলে, 'শেষরক্ষা 
করতে পারনি মা! শুধু তোমার দেওয়া সেই মল্যের দাহে সারাজীবন জজশীরত 
হয়েছে তোমার সুবর্ণ! 

অনেক চোখের জল ফেলে ফেলে দুঃসহ যল্দণাটা 'স্তাঁমত হয়ে 
আসে। সুবর্ণলতা আবার এখন তাই দেখতে পায়। শব্দের তরষ্গে ভাসতে 
ভাসতে দৃশ্যের ঘাটে এসে ঠেক খায়। 

তাই সুবর্ণলতা দেখতে পায়, সুবর্ণলতার মা রাল্নাঘরে বসে রাঁধছে' মা 
ছাদে উঠে কাপড় শুকোতে দিচ্ছে, মা ঝেড়ে ঝেড়ে বিছানা পাতছে!...মা মাটিতে 
আরাশ রেখে চূল বাঁধছে! 

ধবধবে মুখখানি ঘিরে একরাশ কালো পশমের মত চুলের বাঁশ! কপালে 
ঘষে-যাওয়া 'স'দুর-টিপের আভাস! 

প্রাণভরা, বৃকভরা, চোখভরা ! 

আশ্চর্য! 

এতখানি মা ছিল সুবর্ণর, আর সুবর্ণ কিনা তুচ্ছ একটু আঁভমান নিয়ে 
নিজেকে 'ঘিরে প্রাচীর তুলে রেখে বসোছল! 

ঠিক হয়েছে সুবর্ণ, তোর উপযুক্ত শাঁস্তই হয়েছে! মা একটা চিি 
রে রিদরাদলারি ররর ররর রিল 
1? 

এ ছাড়া আর কি হবে তোর ? 

আর আত্মধিক্কার এরা দুজন যেন ঠেলাঠোঁল করে নিজের 'শিকড় 

পৃ“ততে চায়। 

আর শেষ পর্যন্ত আত্মধিক্কারই বুঝি জয়ী হয়। 

মা, মাগো, এই নিম্মাঁয়ক লোকটার পায়ে ধরেও কেন একবার দেখতে 
গেলাম না তোমায়? এখন যে আমার জাবনের সব গান থেমে গেল, সব 
আলো মুছে গেল! 

টের পাই নি আমার জীবনের অন্তরালে তুমি ছলে আলো হয়ে, গান 
হয়ে। যেন আমার একটা বিরাট এঁশ্বর্য নিজের লোহার সিন্দুকে ভরা 'ছিল। 
মনে হতো, ইচ্ছেমত ওটাকে খুলবো আঁম। খুললেই দেখতে পাবো! 

তে পারিনি, হঠাৎ একাদিন দেখব শ্যে হযে গেছে সে সদ. 
কেবল অন্যের দোষই দেখোঁছ আমি, আর আঁভমানে পাথর হয়েছি। নিজের 
দোষ দোখ নি। মা না হয় দূরে ছিল আমার, কিন্তু বাবা? 

বাবাকে অপরাধণ করে রেখে ত্যাগ করোছিলাম আমি। আজও ত্যাগ করে 
এলাম। জাবন্ত মানুষটার মুখের উপর বলে এলাম, 'মনে জানবো আম মা- 
বাপ দুই-ই হারিয়োছি। 

আমি কি! 

আম ক গো! 

শুধু কঠোর কঠিন! 

সারাটা জীবন শুধু সেই কাঠিন্যের তপস্যাই করলাম! আমার ছেলে- 
মেয়েরা কি অনেকাঁদিন পরে ভাবতে বসবে মায়ের কাছে এলেই কিসের সেই 
সৌরভ পেতাম £ চুলের 2 না শুধু মাতৃ-হদয়ের ? 


১৭ 


২৫৮ সুবর্ণলতা 


কিন্তু সুবর্ণলতা কবে কখন সময় পেয়েছে সেই স্নেহ-সৌরভে কোমল 
হতে ঃ সুবর্ণলতাকে যে আঁবরাম যুদ্ধ করে আসতে হচ্ছে। সুবর্ণলতা যাঁদ 
কোমল হতো; মুক্তকেশীর সংসার থেকে মৃন্ত পেত কোনোদন?; পেত না। 
মৃস্তকেশখর ছেলে গ্রাস করে রেখে দিত তাকে। তার ইচ্ছায় উঠতে বসতে 
হতো, তার চোখরাানিতে জড়সড় হয়ে যেতে হতো, আর তার জ্ ইচ্ছার 
দাসীত্ব করতে করতে আত্মাকে 'বাকয়ে দিতে হতো! 

ণকন্ত আজো কি আছে সেই আত্মা ? 

“বাঁকিয়ে যেতে দেব না' পণ করে যুদ্ধ করতে করতে ধংস হয়ে যায় নি? 

সেই ধৰ্ংস হয়ে যাওয়া আত্মাকে কি আবার গড়ে তুলতে পারা যায় ১ 

চেষ্টায়, যত্রে, সাধনায় 2 

হয় না! 

হতে পারে নী! 

সুবর্ণ বলে ওঠে, অসুরের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হলে দেবীকেও চাম.্ন্ডা 
হতে হয়। বাঁণাবাদিনী সরস্বতীর, কড়ির ঝাঁপ হাতে লক্ষত্ীর সাধা নেই সে 
ভূমিকা পালনের । 

সবর্ণলতা কি তবে লড়াই থেকে অব্যাহতি নেবে এবার? তার সংসারকে 
ণনজের ইচ্ছেয় চলতে দেবে ? 

শীানজেকে গুটিয়ে নিয়ে একান্তে বসে ধবংস-আত্মার ইতিহাস লিখবে বসে 
বসে? লিখে রাখবে 2 

খে রাখবে শুধু একজন সুবর্ণলতাই নয়, এমন হাজার হাজার ক্ষ 
লক্ষ সুবর্ণলতা এমান করে দিনে দিনে তিলে তিলে ধংস হচ্ছে 2 কেউ লড়াই 
করে চর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে কেউ ভীর্তায় অথবা সংসারের শান্তর আশায় 
আপন সত্তাকে বাঁকিয়ে দিয়ে পূরুষসমাজের 'ইচ্ছের পততুল' হয়ে বসে আছে। 

'আগে আম ওদের অবজ্ঞা করতাম সবর্ণলতা ভাবে. যারা লড়াইয়ের 
পথ ধরে 'ন, ধনার্চারে বশ্যতা স্বীকার করে বসে আছে। এখন আব অবজ্ঞা 
কার না তাদের। বুঝতে পার, এদের লড়াইয়ের শান্তি নেই, তাই নিরুপায় 
হযে এ "দ্বিতীয় পথটা বেছে 'নয়েছে। 'ওদের অনুভূতি নেই, ওরা ওতেই 

সত্তার বদলে শান্তি কনেছে ওবা, আত্মার বদলে আশ্রয়। কারণ এ ছাড়া 
আর উপায় নেই ওদের! 

সমাজ ওদের সহায় নয়, আঁভভাবকরা ওদের অনুকূল' নয়” প্রকাতি পর্যন্ত 
ওদের প্রতিপক্ষ! ওরা অন্ধকারের জশব! 

খামে বন্ধ চিঠিটা একবার হাত নিয়ে অনুভব করলো সবর্ণলতা। এই 
[নঃসীম অন্ধকারে বসে যাঁদ পড়া যেত! 

যাঁদ দিনের আলোয় ক দীপের আলোয় এমন একট 'নঃসীম নিজনিতাও 
পেত সূবর্ণ. হয়তো খুলে ফেলতো বুদ্ধ কপাট । বিহ্বল দষ্ট মেলে দেখতো 
কোন কথা 'দয়ে গেছে তাকে তার মা। 

ধন্ত কোথায় সেই নিজনতা ? 

ারাঁদকে চোখ। 

বিদ্রুপে অথবা কৌতুকে, কৌতহলে অথবা অনসাঁদ্ধৎসায় যে চোখেরা 
সর্বদা প্রথর হয়ে আছে। কত বোৌশ চোখ পৃথিবীতে! সৃবর্ণলতার এই 


গুবর্ণজতা ২৫৯ 


নিজের গোলাপী-রঙা দোতলাটাতেও এত বেশশ লোক জমে উঠেছে? এত 
বেশী চোখ 2 অথচ এদের জন্যে অসাঁহফ হওয়া চলে না, এরা সুবর্ণলতার। 
এদের সমস্ত দায়-দায়িত্ব বহন করেই চলতে হবে শেষ 'দিনাট পর্যন্ত। এদের 
দিয়ে দিতে হবে, সংসারী করে দিতে হবে, অসুখ করলে দেখতে হবে, আঁতুড়ে 
ঢুকলে আঁতুড় তুলতে হবে, আর এদের মন-মেজাজ বুঝে বুঝে কথা বলতে 
হবে। এদের অবহেলা করা চলবে না, এড়ানো যাবে না, তুচ্ছ করা যাবে না। 
তা করতে গেলে এরা তৎক্ষণাৎ ফোঁস করে উঠে তার শোধ নেবে। কারণ 
সৃবর্ণলতাই এদের শাখয়েছে-সব মানুষই সমান। শিখিয়েছে মানুষ 
মান্রেরই স্বাধীনতার আঁধকার আছে। 

ওরা যাঁদ শিক্ষার আলাদা একটা অর্থ বোঝে. 'নশ্চয় সেটা ওদের দোষ 
নয় দোষ সুবর্ণলতার শেখানোর । 

নিজের হাতের তৈরি ড্রাগনের হাঁ থেকে পালাবে ক করে সুবর্ণ? 

সুবর্ণ উপায় খোঁজে । 

পালাবার, অর্থাৎ পায়ে প্রাণ বাঁচাবার চিরাচরিত পদ্ধাতগুলোয় আর 
রুচি নেই সূুবর্ণর। অনেকবার চেম্টা করেছে, যম তাকে ফেরত 'দয়ে গেছে, 
একবার নয়, বার বার। 

আহা, যাঁদ অকারণ শুধু শুয়ে পড়ে থাকা যেত! কোনোঁদিকে তাকাতে 
হতো না. শুধু দনে-রাতে আকাশের দিকে তাঁকয়ে পড়ে থাকা! 

মৃত্যুর পরে যেমন করে সংসারের দিকে মুখ িরোয় মানুষ তেমাঁন! 

আজ এই ভয়ঙ্কর একটা শ্নন্যতার মুহূর্তে সংসারটা যেন তার সমগ্র মূল্য 
হাঁরয়ে একটা মৃধাপন্ডের মত পড়ে থাকে। সবর্ণলতা সেই মৃতপিন্ডটাকে 
তাগ করবার উপায় খোঁজে। সুবর্ণলতা বুঝি এঁ মাটির বোঝার ভার আর 
বইতে পারবে না। 


1৮ 


'শুনেছ মা, তোমার ভাগ্নের বাঁড়র খবর ? 

জগ বাজার থেকে ফেরে একজোড়া ডাব হাতে ঝুলিয়ে, পিছন িছন 
নিতাই কাঁধে ধামা 'নিয়ে। ূ 

ভার জিনিস-টিনিসগুলো 'নাজেই বয়ে আনে জগ, 
হালকাগুলো 'নিতাইয়ের ধামায় দেয়। দেয় নেহাতই 
মাতৃভয়ে! ফুলকোঁচা 'দয়ে ধুতি পরতে শিখেছে নিতাই, 
গায়ে টুইজ শার্ট। খাওয়া-দাওয়া বাবুয়ানার শেষ নেই। 
এর ওপর যাঁদ দেখা যায়, খালি হাত নাড়া 1দয়ে বাজার 
থেকে ফিরছে নিতাই, আর জগ্‌ আসছে মোট বয়ে, রক্ষে 
রাখবে না মা। 

অবশ্য মা'র চোখে পড়বার সুযোগ বড় একটা হয় না* কারণ বাজার থেকে 
যখনই বাঁড় ঢোকে জগ, চেশ্চাতে চেশ্চাতে আসে, “বাজার-টাজার করা আর 
চলবে না, গলায় ছুরি-মারা দর হাঁকছে! ডবল পয়সা ভিন্ন একটা নারকোল 
দিতে চায় না, ডাবের জোড়া ছ পয়সা। আর মেছুনী মাগীগুলোর চ্যাটাং 





ই৩ স্বর্ণ জতা 


স্টপ পন, ৯০৯৯ 
মি ভাবলাম ছোঁড়াটাসুম্থ আমাদের সঙো জৃটে নারামাধ্য 
গলে গিলে মরে, আজ 'নয়ে যাই পোয়াটাক কাটা পোনা, ভা বলে কিনা চান 
আনা সের!...গলায় ছুরি দেওয়া জায় কাকে বলে! একটা আধলা ছাড়ল না, 
পৃরো আনিটা নিল। গলায় ছুরি আর কাকে বলে! 

এমনি বহুবিধ ধুয়ো নিয়ে বাঁড় ঢোকে। 

সেই ধূয়োর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যান শ্যামাসূন্দরী। ইত্যবসরে জঙ্ 
হাতের মালপত্র নামিয়ে ফেলে। 

তারপর নিতাইকে নিয়ে হাঁকডাক শুরু করে দেয়। ছেলেটা যে শ্যামা- 
সুন্দরীর হদয়মধ্যাস্থত বাৎসল্য রস আদায় করে ফেলেছে, এটা টের পেয়ে 
গেছে জগ, যতই কেন না সেটা চাপতে চেষ্টা করুন শ্যামাস্দন্দরী। তাই জঙ্গ্‌ 
এখন 'নীশ্চন্ত এবং সেই নিশ্চন্ততার বশেই ছেলেটাকে শাসন করার ভান 
করে। 

'হাত-পা গায়ে বসে রইলি যে? সংসারে একটা কাজে লাগতে পার 
নাঃ ক একেবারে কুইন ভিক্লোরয়ার দৌত্তুর এসেছো তুমি? একেই বলে 
_কাজে কু'ড়ে আর ভোজনে ছেড়ে! 

শ্যামাসৃম্দরী এক-এক সময় বলে ওঠেন, থাম জগা, আর ফাঁকা বন্দৃকের 
আওয়াজ কারস না। ওর উপকারের বদলে মাথাটাই খোল ওর। গরীবের 
ছেলেকে লাটসাহেব করে তুলাঁল-_. 

জগু আবার তখন অন্য মূর্ত ধরে। 

বলে, “লাটসাহেব হয়ে কেউ জল্মায় না। আর গরীবের ছেলে বলেই 
চোরদায়ে ধরা পড়ে না। লাটসাহেবী! লাটসাহেবীর কি দেখলে? একটা 
ফরসা জামাকাপড় পরে, তাই 2 বাঁল ভগবানের জাঁব নয় ছোঁড়া?" 

প্রতাহ প্রায় একই ধরনের কথাবার্তা, শুধু আজকেই বাঁতক্রম ঘটলো। 
আজ জগ তার মা'র কাছে অন্য কথা পাড়ে। 

বলে, 'শুনেছ তোমার ভাগ্মের বাঁড়র কাণ্ড ?" 

ছেলের কথায় কান দেওয়া শ্যামাসূন্দরীর স্বভাব নয়, দেনও না, আপন 
মনে হাতের কাজ করতে থাকেন। জগ ক্রুদ্ধ গলায় বলে, 'বড়লোকের মেয়ের 
যে দেখাঁছ গরীবের ছেলের কথাটা কানেই গেল না! বেচারা বৌটা একসঙ্গো 
মা-বাপ হাবালো” সেটা এমন তুচ্ছ কথা হলো ? 

একসঙ্গে মা-বাপ হারালো ! 

বেচাবা বৌটা ! 

এ আবার কোন ধরনের খবর ? 

কাদের বৌ? 

এবার মার ওঁদাসীন্য দেখানো যায় না। মান খুইয়ে বলতেই হয় শ্যামা- 
স্‌ন্দরীকে, 'হলোটা কী? 

“হলো না-টা কি তাই বল: মা গেল খবরটাও দিল না কেউ তারপর 
ণপঠাঁপঠ কাঁদন পরেই বাপ গেল, তখন খবর। নে এখন জোড়া চতুর্থাঁ করে 
মর! 

শ্যামাসুন্দরীও ক্রুদ্ধ হন। 

বলেন, 'কার বৌ, কি বৃত্তান্ত বলাঁব তো সে কথা?" 


সুবর্ণজভা ২৬৯ 


'কার ঝৌ আবার ? শ্রীমান প্রবোধবাবুর বৌয়ের কথাই হচ্ছে। বেচারা 
মেজবোঙ্গার কথা। বাপ বুঝ মরণকালে একবার দেখতে চেয়োছল, তাই গিয়ে- 
ছিলেন মেজবৌমা! তখন বলেছে, “মা তোর মরেছে, তবে অশোচ নেওয়া 
নিষেধ ।” দুদিন বাদে নিজেও পটল তুললো ।, 

শ্যামাসৃল্দরী যাঁদও বুড়ো হয়েছেন, কিল্তু কথায় সতেজ আছেন। তাই 
সহজেই বলেন, 'তোর মতন মৃখ্যর স্পো কথা কওয়াও আহাম্মক! বাঁজ 
খবরটা তুই পোল কোথায় 2 

“আরে বাবা, স্বয়ং তোমার ভাগ্সের কাছেই। আসাছল এখানেই, বাজারে 
দেখা। আসবে, এক্ষুনি আসবে । দু-দুটো চতুর্থ ব্যাপার তো সোজা নয়, 
খ্বটা পটা হবে। তাই আমার কাছে আসবে পরামর্শ করতে । এই জগা শর্মা 
না হলে যাঁজ্ সুশৃঙ্খলে উঠুক দোখি? হণ বাবা! 

শ্যামাসুন্দরী এ উৎসাহে যোগ দেন না। বাঁলরেখাঁঙ্কত কপালে 
আরো রেখা পাঁড়য়ে বলেন, "ঘটাপটাটা করছে কে?, 
এএসিনীটি তোমার ভাশ্নেই করছে । বললো, তোমার মেজবৌমার বড় 


শ্যামাসূন্দরশ অবাক গলায় বলেন, 'মেজবৌমার ইচ্ছে; মা-বাপের সঙ্গে 
তো কখনো-_+ 
"ওই তো-_এখন অনুতার্পাট ধরেছে। সেই যে কথায় আছে না, “থাকতে 
দিলে না ভাত-কাপড়, মরলে করলো দানসাগর* তাই আর 'কি।' 
শ্যামাসুন্দরী দড় গলায় বলেন, 'মেজবৌমা সে ধরনের মেয়ে নয়৷, 
জগ অবাক গলায় বলে; “তাই নাক? তবে ষে পেবো বললে- 
কথা শেষ হয় না, স্বয়ং পেবোই ঢোকে দরজাটা ঠেলে। 
বলে, “এই যে মামী, তুমিও রয়েছ। পরামর্শ করতে এলাম। মায়ের তো 
পরীর খারাপ, এখন তুমিই ভরসা । দায়টা উদ্ধার করো তোমরা মায়ে-ছেলেয়। 
সোজা দায় তো নয়, *বশুরদায় শাশড়ীদায়। মাতৃদায় পিতৃদায়ের আঁধক।' 
আপন রসিকতাশান্তর পুলকে টেনে টেনে হাসতে থাকে প্রবোধ হ্যা্যা করে। 


॥৯॥ 


অনেকগৃলো বছর জেলের ভাত খেয়ে অবশেষে একাঁদন বাঁড় ফিরল 
আম্বকা। কালো রংটা আরও একটু কালো হয়ে গেছে, 
পাকাঁসটে চেহারাটা যেন আরো পাকাঁসটে আর জীর্ণ হয়ে 
গেছে, চুলের গোড়ায় গোড়ায় বিবর্ণ সাদাটে ছাপ। যেন 
পাকতে শুরু করে 'ন বটে, কিন্তু একসঙ্গে সবই পাকবে 
বলে নোটিশ 'দিয়েছে। 

তবু মোটামুটি যেন তেমন কিছু বদল হয় ন। 
মনে করা যায় এতগুলো বছর পরে সেই আঁম্বকাই ফিরে 
এল। 

1ফরে এল আঁম্বকা তার দাদা-বৌঁদির কাছে । বলতে গেলে সৃবালার কাছেই। 

সুবালার চেহারায় অবশ্য অনেক পাঁরবর্তন হয়েছে। সুবালার চুলগুলো 





২৬২ সুবর্ণলতা 


বেশ পেকেছে, ঠিক সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেছে, আর রংটা জবলে-পড়ে 
গেছে। দারদ্ুকে যে কেন অনলের সঙ্গে তুলনা করা হয় সেটা অনুভব করা 
যাচ্ছে তাকে দেখে। 

তথাপি সুবালার প্রকাঁতিতে খুব একটা পাঁরবর্তন হয় নি। সুবালা 
আম্বকাকে দেখেই প্রথমে আহয্রাদে কে'দে ফেললো। তারপর সুবালা শাশুড়ীর 
নাম করে কাঁদলো, কাঁদসো আম্বকার বাড়তে চোর পড়ে যথাসর্বক্ব নিয়ে 
গেছে বলে, আর অভাবের জ্বালায় যে সেই চোর-অধ্যুষিত বাঁড়টার ভাঙা 
পাঁচিল আর ভাঙা জানালা মেরামত করে প্লাখতে পারে দিন সুবালারা, তা নিয়ে 
কাঁদলো এবং সর্বশেষে কাঁদলো আম্বিকাকে আর বিপদের পথে পা না বাড়াতে 
মাথার 'দাব্ব 'দয়ে। 

শেষ কথাটার শেষে আম্বকা একট; ক্ষুব্ধ হাঁস হেসে বলে, আর বিপদ 
কোথা ? দেশ তো বেশ ঠাণ্ডা মেরে গ্েছে। "বপদ” যারা বাধাচ্ছিল তাদের 
শায়েস্তা করা. হয়েছে, এখন দেশের কেন্টীবম্টু নেতারা কথার জাল ফেলে 
ফেলে স্বাধীনতারূপ বোয়াল মাছটি টেনে তোলবার তাল করছেন। এর মধ্যে 
আর আমরা কোথায় পা বাড়াতে যাব; আমরা এখন দাবার আদ্ডায় বসে 
ক্ষাদরাম, কানাইলাল, প্রফললল ঢাকিঃ বাঘা ধতানের আলোচনায় উদ্দীপ্ত হবে। 
আর বসে বসে দিন গুনবো কবে কখন সেই "স্বাধীনতা" নামের রসালো ফলা 
গাছ থেকে টপ করে খসে পড়ে।, 

তা আঁম্বকার ষে একেবারেই পাঁরবর্তন হয় নি তা বলা যায় না। আগে 
আম্বকা ব্যঙ্ের সুরে কথা জানত না, এখন সেটা িখেছে। 

কিন্তু সুবালা এসব প্রসঙ্গের ধারে-কাছে আসতে চায় না, কারণ স্বালা 
অত বোঝে না। হয়তো বা বুঝতে চায়ও না। 

তাই সুবালা তাড়াতাঁড় বলে, 'যাক গে বাবা ওসব কথা। আদার 
মি জাহাজের খবরে দরকার কি? আমার কথা হচ্ছে-এবার তোমার 

দেব!" 

হ্যাঁ, এই সত্কক্পই স্থির করেছে এখন সুবালা, ওই বাউণ্ডুলে ছেলেটার 
বিয়ে দেবে। বয়েস একটু বোৌশ হয়ে গেছে, তা' যাক, দোজবরে তেজবরে তো 
রি রানা টাকার ওর ডবলবয়সী হয়েও বিয়ে করতে 

| 

মেয়ের অভাব হবে ন্া। 

বাংলা দেশে আর যে কিছুরই অভাব থাক না কেন, কনের অভাব নেই। 
নাত বিয়ে না করে বাড়য়ে যাওয়ার মত দুঃখের আর কিছু 

] 

সুবালা ইতিমধ্যে তার দুই ছেলের বিয়ে দিয়ে কাজ সেরেছে। যাঁদও 
সংসারের অবস্থা সবধের নয়, 1কল্তু সংসারের 'অবস্থা' বিয়ের প্রাতকূল 
হয়েছে কেন এ তর্ক করেছে সুবালা। আর শেষ অবাধ তর্কে সে জিতেছে 
তাই এখনও বললো, বয়ে দেব। জানে-_ 

কিন্তু অম্বিকা ছিটকে উঠলো, বললো, য়ে? 

আম্বিকা হেসে ফেলল। 

ণিল্তু আগের মত সেই হো হো হাঁসির প্রাণখোলা সুরটা যেন অনুপাঁস্থত 
রইল সে হাঁসিতে। এ হাঁস ফেমন একরকম নিরুত্তাপ হাঁসি। 


সুবর্ণনতা ২৬৩ 


তব হাসি। 

হেসেই উত্তর । 

শবয়ে! নাঃ, আপাঁন দেখাঁছ চুলগ্‌লো 'মাছামাছই পাঁকয়েছেন, বয়েসে 
সামনে না হেটে পিছনে হাঁটছেন! 

সুবালা অবাক হয়ে কলে, 'তার মানে 2, 

অমূল্য এতক্ষণ 'মাটামাট হাসাছল বসে বসে। এবার বলে, 'মানে আর 
কি আম্বকার মতে তোমার শুধু চুলই পেকেছে, বাাঁদ্ধ পাকে নি।" 

'কেন 2 কাঁচা বুদ্ধির কি দেখলে শুনি 2, 

আঁম্বকা হাসে, 'পুরোপ্ারই দেখলাম। এখনো আপনার দ্যাওরের বয়ে 
দেওয়ার শখ! 

হ্যাঁ, এই রকম করেই বলে আম্বকা। 

হৈ-হৈ করে বলে ওঠে না, কাঁচা বুদ্ধ নয়? শুধু [ঘয়ের মতলবটি 
এ'টেই বসে আছেন, কই কনে রেডি করে রাখেন নিঃ টোপর চেঁসি ঠিক করে 
রাখেন নি? কে বলতে পারে আবার কখন শ্রীঘর থেকে ডাক পড়ে? 

আগেকার আম্বকা হলে এই রকমই বলতো! 

এখনকার আঁম্বকা বলে, "এখনো আপনার দ্যাওরের বিয়ে দেওয়ার শখ ? 

সুবালা ভাঙা দাঁতের হাস্যকর হাঁস হেসে বলে, 'তা কখন আর শখ 
করবার সবাবধা পেলাম শান 2 তুম তো বসে আছ শ্রীঘরে, এীদকে কত ঘটনাই 
ঘটে গেল, ঘটে চলেছে। তোমার চার-চারটে ভাইপোন-্ভাইঝির তো বিয়ে হয়ে 
গেছে ইীতিমধো ! 

চার-চারটে ভাইপো-ভাইঝি ! 

অম্বকা অথই জলে পড়ে। 

এতগুলো ছেলেমেয়ে বিয়ের যোগ্য হয়ৌছল অমূল্যর? তাছাড়া বিয়ের 
যোগ্যতা! ওর মধ্যে কোনটা মেয়ে কোনটা বা ছেলে! হঠাৎ কারো নাম মনে 
পড়ছে নাকেনঃ বড় বড় ছেলে দুটোর নাম রাস আর বঙ্কু ছিল না? 
রাসবিহারী, বখ্কাবহারী, কন্তু, তারপর? সার সার অনেকগুলো ছিল 
যেঃ 

কশ আশ্চর্য! 

এমন স্মতিভ্রংশ হল' অম্বিকার 2 | 

দাদার ছেলেমেয়েগুলোর নাম ভুলে গেল 2 ভুলে' গেল কোন্টা কত বয়সের 
ছিল ১ মুখই-বা মনে পড়ছে কই তেমন করে ? 

পড়ছে আস্তে আস্তে। 

নামও...ভাবতে ভাবতে ভেসে উঠেছে, রাসু বজ্কু িঙ্কু কুল নেড়? 
টে*পু.. আরো ফি কি যেন! একটা দল হিসেবেই তাদের দেখেছে আঁম্বকা, 
খুব যেন আলাদা করে নয়। 

দাদার ছেলেমেয়েরা! 

এই অনুভবের মধ্যে ছিল তারা! 

কিন্তু সেই বালাখলোর দ' এত লায়েক হয়ে উঠল এর মধ্যে? 

উঠল। 

তার মানে সময়ের সেই বরাট অংশটা হাঁরয়ে ফেলেছে আঁম্বকা তার 
জশবন থেকে । আম্বকা বুড়ো হয়ে গেছে! 


৪ সুবর্ণলতা 


'কিল্তু 'জীবনে'র ওপর কবে মোহ "ছল আম্বিকার ? কবে ছিল লোভ? 
তাই হারিয়ে ফেলেছে বলে মনটা "হায় হায়' করে উঠল? 

হয়তো এমনিই হয়। শুধু আম্বকার মত পাগলাদের নয়, সকলেরই! 

যে মায়া-হারণের পিছনে ছটতে ছুটতে সময়ের জ্ঞান হাঁরয়ে ফেলে 
মানূষ, সেই হরিণটা যখন একটা “দুয়ো' দিয়ে দিগন্তের ধৃসরতায় 'মালয়ে 
যায়, তখন মনটা এমানি 'হায় হায়' করে ওঠে। মনে হয়, এতগুলো 'দন-াি 

গেল! কি করলাম 2 কি বা পেলাম? 

হ্যা, সেটাই হাহাকারের স্বর। 

“কী পেলাম! কাঁ পেলাম! 

যেন কে কোথায় অঞ্গণকার করে রেখোঁছল পাইয়ে দেবে অনেক 'কছু। 

যেন বলে রেখোঁছল” 'তোমার ওই 'দিনরাব্িগলো আমার কারবারে ফেল, 
তার বিনিময়ে পাওনার পাহাড় জমবে তোমার । 

কেউ দিয়েছিল সেই আশ্বাস ? 

কেউ করোছি্গ সেই অঙ্গাঁকার £ 

কেউ এমন একখানা মূল্য নির্ধারণ করে রেখোঁছিল, আমার এই 'দিনরান্তিতে 
গড়া জাঁবনের? 

জানি না। 

দেখি নি তেমন কাউকে । 

তবু ওই প্রাপ্তর ধারণাটা আছে বদ্ধমূল। 'নীশ্চন্ত হয়ে আছ এই 
ভেবে যে আমার সোনার 'দনগুলো 'বিকোট্ছি বসে বসে, তার বদলে জমা হচ্ছে 
স্বর্গের সোনা। খানিকটা এগিয়ে গেলেই সেই স্বগণয় সোনার তালটাকে ধরে 
নেব খপ্‌ করে, ভরে নেব মৃঠোর মধ্যে। 

কিন্তু সে 'সোনা'র আশ্বাস মায়া-হরিণের মতোই অনেক ছটিয়ে মেরে 
অকস্মাং কখন একসময় দিগন্তের ধৃূসরতায় 'মালিয়ে যায়, তখন ক্ষৃত্ধ নিঃ*বাস 
মর্মীরত হয়ে ওঠে, 'পেলাম না, আমি আমার হথার্থ মূজ্য পেলাম না। আমি 
ঠকে গেলাম। আমি কত 'দলাম, কী বা পেলাম! যেন আমার মনিব আমায় 
০০০০০০০০ 

|| 

কে বলেছে আমার এই জীবনটা ভারী এক দামী 'জাীনস? কে বলেছে 
আমার এই 'দিনরানিগুলো সোনার দরের ? 

দিজেই নিজের দাম কাছ, মোটা অঞ্কের টিকিট মারাঁছ তার গায়ে, ভেবে 
দেখাছ না কেন তা করছি! করছি হায় হায়'! ভেবে দেখাছ না আম কেউ 
রি রা বাসা রদ 

৮৮১৭ 


না, কেউ ভাবে না। 


তাই কেমন যেন 'দিশেহারার মত বলে উঠলো, 'কাদের বিয়ে হয়ে গেল? 
“কেন রাস, বজ্কু, টেপপ আর নিভার। নিভাটার আবিশ্যি একটু সকাল 
সকালই হয়ে গেল, ভাল পাত্র পেয়ে যাওয়া গেল। আর দিতেই তো হবে। 


সবর্পলতা ২৬৫ 


চারটের 'হিল্লে হয়েছে, বাকি ছটার হয়ে গেলেই আমাদের ছাট। তারপর বুড়ো- 
বুড়ী কাশীবাস করবো । 

বাকি ছটার হয়ে লহ 

আঁম্বকা ওই দুঃসাহসী আশার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে। তারপর 
ভাবে, হয়তো সেই অসাধ্যসাধন করেই ফেলবে ওরা, হয়তো সাঁত্যই শেষ অবাঁধ 
নিজেদের পাঁরকল্পনা অনুযায়ী তীর্ঘবাস করতেও যাবে। আর সমস্ত কর্তব্য 
সমাধা করার যে একটা আত্মতৃপ্তি, সেটকু রাঁসয়ে উপভোগ করবে। 

আম্বকা অন্তত তাই ভাবলো । 

তাই অদ্বিকা সহসা ওদের জশবনটাকে 1হংসে করে বসলো । 

অনেকাঁদন জেলের ভাত খেয়ে খেয়ে এ উন্নাতট্‌কু তা হলে হয়েছে 
আম্বকার! আম্বকা তার স্বপ্ন' থেকে স্খালত হয়ে "তুচ্ছ জীবনে'র দিকে 
তৃষ্ণার দৃম্টিতে তাকাচ্ছে। 

আঁম্বকা তাই কাঁচা-বৃদ্ধি সুবালার কাঁচাঁম-টাকেই দশর্ঘ বিলম্বিত করে 
দেখতে চাইছে। 

অতএব আম্বকা বলে উঠেছে, "আরে ব্যস, সব ব্যবস্থা কমীপ্রট : তা 
আমিও তো তাহলে 'দাঁব্য একখানি “*বশুর” হয়ে বসৈ আছ! আমাকে নিয়ে 
তবে আবার ডাংগীল খেলবার বাসনা কেন ?" 

সুবালা এ পাঁরহাসটুকুর অর্থ বোঝে। 

সৃবালা তাই হেসে উঠে বলে, "তুমি যাতে আর ডাংগুলি খেলে বেড়াতে 
না পারো তার জন্যে। শন্ত শেকল এনে বাঁধতে হবে তোমায়। করাছি তার 
যোগাড় ।' 

“কেন, আমার অপরাধ 2 

'এই তো অপরাধ । জীবনটা 'মাঁছামাছি 'বাঁকয়ে দিলে ।' 

আম্বকা সুবালার এই আক্ষেপে 'অবোধ' বলে অনকম্পার হাঁস হাসল 
না। আম্বকা চমকে উঠল। আম্নকা ভাবলো, "আম কি এই কথাই 
ভাবাঁছলাম না। 

তারপর অম্বিকা বলে, 'আপাঁন তো শেকল যোগাড়ে লাগবেন, বলি 
শেকল তো আর ভূ'ইফোড় নয়? মা-বাপ থাকতে আর কে এই জেলখাটা 
আসামীকে মেয়ে দেবে শান ? 

“শোনো কথা! সৃবালা গালে হাত দেয়। “এ কী চুরি-জোচ্চার খুন- 
জখমের আসামী? লোকে যে তোমাদের এই “স্বদেশী জেলখাটা”দের পায়ে 
ফুলচম্বন দেয় গো! 

অশ্বকা এবার যেন পুরনো ধরনে হেসে ওঠে । বলে, পায়ে ফৃলচম্লন 
দেয় বলেই যে হাতে মেয়ে দেবে, তার কোনো মানে নেই? 

দেবে না? 

সৃবালাই এবার অনুকম্পার হাঁস হাসে, সৃবালা যেন তার মূল্যবান 
দ্যাওরাঁটর মূল্য সম্পর্কে আরো বৌশ অর্বাহত হয়। বলে, 'আচ্ছা, দেয় কি 
নাদেয় সে আম বুঝবো! ব্যাটাছেলে বয়ে করতে চাইলে আবার মেয়ের 
ভাবনা ? 

এবার আঁম্বকা অমূজ্য দুজনেই হেসে ওঠে । অমূল্য বলে, আহা, এ 
আশ্বাস যাঁদ কিছুদন আগে পেতাম তো আর একবার 'চেয়ে' দেখতাম। 


৬৬ সবললতা 


' এখনও দেখ না।' সুবালা হাসে। তারপর গ্রামের কোন কোন ঘরে 
এমন কটা বুড়ো ঘরে গশ্নী থাকতেও 'দিব্বি আর একটা বিয়ে করে মজায় আছে, 
তার আলোচনা এসে পড়ে। 

আম্বকা নিথর হয়ে গিয়ে বলে, 'বল কি দাদা ১ দত্ত জ্যাঠামশাই 2, 

অমূল্য হাসে' সেই তো, সেটাই হচ্ছে সব চেয়ে অসহ্য। গিয়োছজেন 
ভাগ্ননর ছেলের জন্যে কনে দেখতে-+ 

'দেখে আর চোখ ফেরাতে পারেন না, নাতির হাতে তুলে দিতে বুক 
ফাটলো--', সুবালা হেসে হেসে বলে, “সম্পক্টা আবাশ্য খারাপ হল না। 
নাতবৌ হতো, বৌ হলো। তেরো আর তেষাঁট্র! 

আঁম্বকা হাসে না, আঁম্বকা হঠাৎ রূঢুগলায় বলে ওঠে, “লোকটাকে ধরে 
এক দিন হাটতলায় দাঁড় কাঁরয়ে চাবকাতে পারলে না কেউ?" 

এরা চমকে উঠলো । 

সুবালা আর অমূল্য। 

আম্বকার গলায় কখনো এমন রূঢ় স্বর শোনে ন এর আগে। তা যতই 
হোক, দত্ত জ্যাঠামশাই গুরুজন! 

আম্বকা সেটা বুঝতে পার/লা । 

আম্বকা নিজেকে সামলে নিল, *!প্রোতিভ গলায় বললো, জেলের ভাতের 
এই গুণ ধরেছে, রাগ চাপতে পারি না। অসভ্যতা দেখলেই মেজাজ আগুন 
হয়ে জ্বলে ওঠে । বাস্তীবক, এদের শাস্তি দেওয়া, উচিত কিনা তোমরাই বল 2 

“উচিত তো! কিন্তু শাস্তিটা দিচ্ছে কে? 

'আম তুমি, এরা ওরা, সবাই ।' আম্বকা দটুগলায় বলে, শকছুদিন 
প্রেফ ধোলাই চালালেই এ ধরনের পাজাীরা শায়েস্তা হয়ে যাবে ।' 

সবালা যেন অবাক হয়ে আম্বকার মুখের দিকে তাকায়। বলে, 'ধোলাই 
মানে 2 

আম্বকা আর একবার অগ্রাতিভ হয়। বলে, ওই তো! সঞ্গগুণের সুফল! 
যত সব চাষাড়ে কথার চাষের মধ্যে তো বাস ছিল। ধোলাই মানে ধরে ঠ্যাঙানো ! 
দু-পাঁচজন মার-ধোর খাচ্ছে দেখলেই আর পাঁচজন সামলে যাবে। 

অমূল্য ক্ষুব্ধ হাঁস হাসে, 'তোর ওই “ধোলাই” তা হলে পান্তরকে না 
দিয়ে পারীর বাপকেই দেওয়া উচিত। তারা মেয়ে দেয় কেন? 

সুবালা বলে ওঠে, 'দেয়ঃ ভাজ ঘরে-বরে দিয়ে উঠতে পারে না ৰলে? নচেৎ 
টাকাকাঁড়র লোভে। এই তো তোমাদের দত্ত জ্যাঠামশাইয়ের ব্যাপারই তাই। 
মেয়ের বয়েস বোশ হয়ে গেছে, জাত যাবার ভয়ে কাতর বাপ হাতের সামনে 
একটা বড়লোক বুড়ো পেয়ে. 

'জাত! জাত যাবার ভয়! আশ্চর্য, এত অনাচারে জাত যাচ্ছে না, জাত 
যাবে শুধু মেয়েকে সাতসকালে বিয়ে না দিলে! আম্বকা বলে, 'এ পাপের 
ফল একদিন পাবেই সমাজ!_তা দত্তজেঠিমা কোথায় ? 

“কোথায় আবার 2 সুবালা বলে, 'ঘর-সংসার ছেড়ে যাবেন কোথায় ? 
আছেন। প্রথম প্রথম খুব গালমন্দ করোছলেন, সত+নটাকে বাঁটা মারতে 
যেতেন, ক্রমশঃ সয়ে গেছে। এখন তাকে রে'ধে ভাতও দিচ্ছেন। সেও মহা 
দুষ্টু মেয়ে! সংসারে কিছু করে না, কেবল সাজেগোজে আর কর্তার তামাক 
সাজে।' 


সুবর্ণলতা ২৬৭ 


হছ। ওটাকেই আশ্রয় ভেবেছে । বুড়ো মরলে তখন ছেলেরা কে 
কোথায় 2 

বড় তো রাগ করে বাপের সঙ্গে পৃথক অন্ন হয়ে গেছে। আর সবাই 
আছে। 

'তা যান পৃথক অন্ন হলেন, মাকে ভাইদের নিয়ে হতে পারলেন না?” 

“ক যে বল, তার কি ক্ষমতা? বাপ তো তাকে তেজ্যপুত্তুর করেছেন। 
আসল কথা, পয়সাওলা লোকেদের সব দরজা খোলা, বুঝলে ঠাকুরপো ? মরণ 
শুধু গরীবদের। পাঁথবী জুড়েই এই), 

আম্বকা বলে, হয়তো এর শাঁস্তও আসবে একদিন পাঁথবীতে। তবে 
আমার মতে” কবে কি হবে না ভেবে এখনই একটা বৌ বে'চে থাকতে আর 
একটা বয়ে করা আইন,করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত ।” 

অমূল্য হাসে, 'আইনটা কে করবে শান ?' 

'করবো আমরা, তোমরা, সবাই। চিরাদন ধরে ভয়ঙ্কর একটা পাপ চলতে 
পারে না।' 

সুবালার এসব কথায় অস্বাস্ত। 

_ সুবালা এবার প্রসঙ্গকে অন্য পথে পরিচালিত করে। স:বালা তার ছেলের 
বোদের আর জামাইদের কথা তোলে, তাদের প্রশংসায় পণ্মুখ হয়, বলে, 
'আমার ভাগ্যে বাবা সবাই খুব ভালো জটেছে-- 

আম্বকা হেসে ফেলে। 

আঁম্বকা বলে, 'আপনার ভাগো “মন্দ” হবার জো কিঃ আপাঁন কি 
কাউকে ভালো ছাড়া মন্দ দেখবেন 2 

সূবালা লজ্জিত গলায় বলে, “আহা! বলে" নাও বাপু, বল এখন কি 
খাবে ১ কতকাল বাঁড়র রান্না খাও 'নি-- 

বলে, তবে মনে মনে ভাবে, কই বা জোটাতে পারবো! আহা, বেচারা 
এত'দন পরে এল! সজনেডাঁটাটা ভালবাসে, মৌরলা মাছটাও খূব ভালবাসতো। 
আর অড়র ডাল। দেখি যাই-- 

সূবালা ঢলে যায় রান্নার যোগাড়ে, এরা দুই ভাই কথা বলে, গ্রামের কথা, 
পড়শীর কথা। 

আর এর মাঝখানেই হঠাৎ একসময় প্রশ্ন করে ওঠে অম্বিকা, “তোমার 
*বশুরবাড়র খবর কি? 

হ্যাঁ, তোমার সেই-ইয়ে, মেজবোঁদ, তাঁর ছেলেমেয়েরা-আর শ্রীযন্ত 
বাবু মেজদা 2; 

একটু ভয়ে-ভয়েই বলে। 

মনকে প্রস্তৃত করে দু-একটা দুঃসংবাদ শোনবার জন্যে। 

কিন্তু আশ্চর্য, শুনতে হলো না তা। 

বরং ভালো খবর। 
নতুন বাঁড়ি করেছে নিজস্ব, আলাদা হয়ে চলে গেছে। মোটের মাথায় হতাশার 
থবর নয়। 

অথচ আশ্চর্য, আম্বিকা যেন খুব একটা হতাশ হয়। 


২৬৮ সুবগজজা 


'অদ্বিকা যেন এসব খবর শোনবার জন্য প্রস্তুত ছিল না। 

কিল্তু কী শোনবার আশাতেই বা ছিল তবে সেঃ অমূল্যর *বশরবা 
সম্পর্কে খুব একটা দুঃসংবাদ 2 কে জানে কি! তার মনের কথা সে-ই জানে। 
তব্‌-_ মনে হলো, অম্বিকা যেন ওই খশর খবরগুলোয় খাঁশ হলো না। 

তবু অম্বিকা নতুন বাঁড়র ঠিকানা জানতে চাইল। বলল, 'ষাবো তো 
কাল-পরশু কলকাতায়। একবার দেখা করে এলে তো হয়। অবশ্য চিনতে 
পারবেন কিনা জানি না।' 

“শোনো কথা! সুবালা হাসে, 'তোমায় পারবে না চিনতে ? তোমাকে 
কত পছন্দ হয়োছল তার। আম তো ভাবছিলাম-_; 

হেসে চুপ করে বায় স্মবালা। 

ধক ভাবাঁছলেন ? 

সুবালা 'মাঁটামটি হেসে বলে, 'ভাবাঁছলাম তোমাকে তারই জামাই করে 
দই! মেয়েটা তো বেশ বড় হয়ে উঠেছে-- 


'আমাকে-__জামাই- 
আঁম্বকা এবার নিজস্ব ভঙ্গীতে হেসে ওঠে সেই আগের মত, চমৎকার! 
এটা ঠিক আপনার উপযুক্ত কথা হয়েছে । বাঃ! বাঃ!বাঃ! তাহলে বৃথা আম্বাম 


দিচ্ছিলেন না, কনে রেডি? কি ষে' হলাম আম মেয়োটর 2 মামা ? 

“আহা, মামা আবার ক?" সুবালা সতেজে বলে, শকচ্ছুই নয়। জানো 
টরিনটি হি সরারারিনলালির তুমি হচ্ছো পিসের 

'ব্যস! ব্যস! শাস্মবচনও মজুত!” আঁম্বকা বলে, শীকল্তু এত সব ছেলে- 
মেয়ের বিয়ে হল, তাঁর মেয়েরই বা হয় না কেন?, 

সুবালা সন্দেহের গলায় বলে, “তার কোন্‌ মেয়েটার কথা নলছো তুম 2 

'আহা, সেই তো সেই যে তোমার এখানে আসে 'নি। নবদ্বীপে না কোথায় 
যেন গিয়েছিল! 

আশ্চর্য যে এটা ভুলে যায় 'ন আঁম্বকা। 

কল্তু সে কথা তুলে হাসে না সুবালা। হাসে আঁম্বকার অজ্ঞানতায়। 

'সেই মেয়েঃ সেই মেয়ে এখনো বসে আছে, এই ভাবছো তুমি? হার 
হায়! চাঁপা তার কবে বিয়ে হয়ে গেছে, মেজ মেয়ে চম্ননেরও হয়েছে। এ 
হচ্ছে, সেই পারুল সব সময় যে ছোট্ট মেয়েটা চুপচাপ থাকতো-_ 

পারুল! মানে সেই যে দোলাই গায়ে জাঁড়য়ে মাঠে-বাগানে ঘুরে 

রঃ 

হ্যাঁ, হ্যাঁ । ৬১৯ 
মেয়েটাই তো সব চেয়ে সুচ্ছির মেজবৌয়ের 

অদ্বিকা আবার বলে, 'চমংকার! দত্ত জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে একট: ইতর- 
বিশেষ এই যা।'' 

'শোনো কথা, তার সঙ্গে কিসের তুলনা? আমি বাপু ওর কথাই ভাব- 

“আপনার ভাবনার দাঁড়টা একটু খাটো করুন বৌদি, বন্ড লম্বা হয়ে যাচ্ছে! 

আঁম্বকা আবার হাসতে থাকে হা-হা করে। 

সুবালা একসময় অমূল্যকে চ্াপচ্প বলে, 'ঠাকুরপো কিন্তু ঠিক 


সুবর্পজতা ২৬১ 


তেমনটিই আছে, একট:ও বদলায় ি।' 


অমূল্য আস্তে বলে, কে বললে বদলায় নি? বদলেছে বক! অনেক 
বদলোছে!' 


না যাঁদ বদলাতো আঁম্বকা, সেটাই হতো অস্বাভাঁবক। 

বদলায় না শুধু অজ্পবাদ্ধরা। 

বাঁম্ধর চাকার অভাবে ওরা একই' জায়গায় দাঁড়য়ে 
থাকে। সুবালা তাদের দলের, তাই সুবালা সুখী। 
সুবালার সুখ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সুবাল৷ 
যাঁদ দুঃসহ কোনো শোক পায়, সংবালা কে'দে বলবে, 
“ভগবান 'নিয়েছেন-” | 

অতএব সুবালা সুখী হবে। ূ 

যারা কার্যকারণের 'বিচার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসে, যারা 
জগতের ষত অনাচার আঁবচার অত্যাচার, সব কিছুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রশ্ন তুলতে 
বসে, তারাই জানে না সুখের সম্ধান। 

কিন্তু সন্ধান কি তারা রাখতেই চায় ঃ সুখকে কি তারা আরাধনা করে ? 

সুখেতে যে তাদের ঘৃণা! 

নইলে সবর্ণলতা-_ 

হ্যাঁ, নইলে সুবর্ণলতার তো উচিত ছিল তার স্বামীর সুবিবেচ.॥ আর 
পত্রীপ্রেমের পরিচয়ে আহনাদে ডগমগ হওয়া । 

স্লীকে আকস্মিক আনন্দ দেবার রোমাণ্চময় পাঁরকঞ্পনায় সে যে তার 
সমীর বাপের চতুর্থ উপলক্ষে মস্ত একটা যাঁজ্ঞব আয়োজন করে ফেলেছে 
চঁপচঁপ-এটা কি কম কথা নাঁক* কম সুখের কথা? 

কিন্তু সুবর্ণলতা হচ্ছে বিধাতার সেই অক্ভুত সৃষ্ট সুখে যার বিতৃষা, 
সে যার ঘুণা। 

তাই কর্মবীর জগ যখন অকস্মাৎ গোটা শীতনেক" মৃটের মাথায় রাশীকৃত 
বাজার, ফলমূল, কলাপাতার বোঝা, মাঁটর খাঁর-“লাস ইত্যাদ নিয়ে তার পিস- 
ততো ছোট ভাইয়ের বাঁড়তে এসে ঢূকে হাঁক পাড়লো, “কই রে, কে কোথায় 
আছস? এসব কোথায় নামাবে দোখিয়ে দে- 

তখন সৃবর্ণলতা পাথরের মত মুখে এসে দাঁড়িয়ে একটা ধাতব গলায় বলে 
ওঠে, 'এসব কি? এর মানে? 

দোভাষণর প্রয়োজন স্বীকার করে না। 

গলা স্পন্ট পাঁরচ্কার। শুধু মুখটা অন্য দিকে। 

তবে জগনও অত নশীতি-নিয়মের ধার ধারে না। তাই বলে ওঠে, “এই 
মরেছে! এ যে সেই “যার বিয়ে তার মনে নেই, পাড়াপড়শনীর ঘুম নেই 1 
বাঁ তোমার বাপের ছেরাম্দ, জায় তুমি আকাশ থেকে পড়ছো 2 চতুর্থার 





সি স্বর্ণ লতা 


যোগাড়, দ্বাদশ ব্রাহ্মণের ভোজের রসদ, আর তোমার 1গয়ে আত্মকুটুদ্বও কোন্‌ 
না বাট-সম্তরজন হবে। একা আমার 'পাঁসর ডালাপালাই তো, জগ একট 
উচ্চাঙ্গের হাসি হেসে কথা শেষ করে, “তাদের একট: ভালোমন্দ খ্যাটের 
যোগাড় 

হঠাৎ থেমে যায় জগু। 

রর মুখের দিকে তাকানো অশাস্বণয় এটা জানা থাকলেও বোধ কাঁর 
হঠাৎই তাকিয়ে ফেলোছল সে। অথবা ভয়ঙ্কর একটা নীরবতা অনুভব করে 
তাকিয়েছিল কে জানে । তবে থেমে যাবার হেতুটা তাই। ওই' মুখ! 

মুখ দেখে ভয়ে প্রাণ উড়ে যায় ওই বাজখাঁই লোকটার। তাড়াতাঁড় ডাক 
দেয়, 'পার্‌ পার, দেখ তোর মার শরীর-টরশর খারাপ হলো নাঁক ? 

মুটেগুলো এতক্ষণ অপেক্ষান্তে রাগ-ভরে নিজেরাই স্থান 'নর্বাচন করে 

গুলো নামাতে শুরু করে, এবং সারাও করে আনে। হাঁতমধ্যে পার 
এসে দাঁড়ায়, সমস্ত দশ্যটার ওপর একবার দষ্টটা বুলিয়ে নিয়ে সেও অবাক 
গলায় বলে, “এসব ক বড় জ্যাঠা ?* 

এবার বিস্ময়-প্রশ্নের পালা জগ্‌র। 

“তোদের কথায় আর আম কি উত্তর দেব রে পার. আমিই যে তাজ্জব বনে 
যাচ্ছ! বাল তোদের বাবা কি আমার সঙ্গে ন্যাকরা করে এল? তোদের 
বাড়তে কোনো কাজকর্ম নেই ? দাদামশাই 'াঁদমা মরে নি তোদের? সব 
ভুল? 

পারু আস্তে বলে, 'ভুল নয়। তবে তার জন্যে এসব__ গলাটা একট; 
নামায়, আস্তে বলে, 'জান একটা মরণকে উপলক্ষ করে মানুষ এমন ঘটা লাগায়, 
কিন্তু জানেনই তো মাকে! মা এসব একেবারেই ইয়ে করেন না। তা ছাড়া 

গারুর কথা থেমে যায়। 

সহসা পারুর মায়ের কণ্ঠ কথা কয়ে ওঠে, “পারু' ভাসুরঠাকুরকে বল, 
যেন আমার অপরাধ না নেন। লোকে যা করে, আমার তার সঙ্গে মেলে না। 
আমি আমার জ্যান্ত মা-বাপকে কখনো এক ঘাঁট জল এগিয়ে দিই নি, আজ 
মরার পর আর তাঁদের ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে অপমান করতে পারব না। আঁম- 

সহসা একটা অভাবিত ব্যাপার ঘটে। 

অন্তত পারুর তাই মনে হয়। 

মায়ের চোখ 'দয়ে ঝরঝর করে জল ঝরে পড়তে কবে দেখেছে পার 2 সে 
চোখে তো শুধু আগুনই দেখে এসেছে জ্ঞানাবাঁধ। 

[কিন্তু বোৌশক্ষণ সে দৃশ্য দেখবার সুযোগ দেয় না পারুর মা, দ্র€তপায়ে 
শী চলে যায় শুধু পারুকেই নয়, আরও একটা মানুষকে পাথর করে 

। 

পাগল-ছাগল জগ আরও একবার শাস্বীয়াবাধ বিস্মত.হয়ে ভাদ্রবোয়ের 
মুখের দিকে তাঁকয়ে ফেলোছল, এবং বলা বাহুল্য সে মূখে অবগ্যণ্ঠনের খুব 
একটা বাড়াবাঁড় ছিল না। কাজেই দেখায় অসম্পূর্ণতা ছিল না। 

পাগল-ছাগল বলেই কি হঠাৎ এত আঘাত খেল জগ? নাকি এরকম 
একখানা ভয়ঙ্কর দৃঃখ হতাশা শ্লানি ক্ষোভ বেদনা বিদ্রোহের সাঁম্মালত ছাঁব 
সে জশবনে আর দেখে 'ন বলেই? 

স্তথ্থ হয়ে দু-এক মূহূর্ত তাঁকয়ে থেকেই দ্ুতকণ্ঠে 'আঁম এসব কিছ; 


সুবর্ণলতা ২৭১ 


জানি না পারু, আম এত সব কিছু জান না। আমার তোর বাবা গুচ্ছর 
টাকা হাতে গুজে দয়ে বলে এল-“তোমার বৌমার খুব ইচ্ছে", তাই আ'ম- 
বলেই কেচার খুটে চোখ চেপে একরকম ছুটে বোঁরয়ে যায় জগ বাঁড়র সদর 
চৌকাঠ পার হয়ে। কে বলবে, তার দু চোখেও সহসা জলের ধারা ঠেলে আসে 
কেন? 

মুটে কটা এতক্ষণ ঝাঁকা খালি বরে কান্ত অপনোদন করাছল. 'বাবু 
ভাগলবা দেখে তারাও ছুট দেয়। পার তেমাঁন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়য়ে খাক। 
পারু সহস। যেন আর এক জগতের দরজায় এসে দাঁড়ায়। 

জ্ঞানাবাধ শুধু মা'র তীব্রতা আর রুক্ষতাই দেখে এসেছে পালু, মার 
জশীবনের প্রচ্ছন্ন বেদনার দিকটা দেখে ন। আজ হঠাং মনে হলো তার, মা'র 
প্রীতি তারা শুধু আবিচারই করে এসেছে। 

কোনোদিন সেই “অকারণ' তীবুতার কারণ অন্বেষণ করবার কথা ভাবে 'নি। 

একথা ঠিক, বাবাকেও তারা ভাই-বোনেরা কেউ একাতিলও শ্রদ্ধা করে না, 
তব কদাচ কখনো একট করুণা করে, অনুকম্পা করে। কিন্ত মাকে? 

মা'র জন কিসের নৈবেদ্য রাখা আছে তাদের অন্তরে 2 

ভাবলো সে কথা পারু। 

কারণ সহসা পারু তার মা'র একটা নিজ্ন ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো । 
যে ঘরের সন্ধান সে কখনো জানতো না, ষে ঘরের দরজা কখনো খোলা দেখে 
[ন।...অসতর্ক একটা বাতসে একাঁটবার খুলে পড়েছে সে দরজা, তাই থমকে 

ওই জনহশীন শ-ন্যঘরটা এখানে ছিল চিরকাল ? 

অথচ ওরা-_ 

পর্দাদ' বকুল এসে দাঁড়ালো, বললো, “দাদা বললো, তোকে যে কা *স্ট্টায় 
বোতাম বাঁসিয়ে রাখতে বলেছিল, সেটা কোথায় 2? 

পারুল চোখে অন্ধকার দেখলো। 

পারুলের গলা শাঁকয়ে এল। 

আস্তে বললো, 'বোতাম বসানো হয়নি, ভূলে গোছি!' 

ভূলে গোঁছস ১ সর্বনাশ! কোথায় সেটা 2? 

“মা'র ঘরে প্যাটিরার ওপর ।' 

“সেরেছে, দাদা তো সেখানেই বসে !' 

বকলেরও যেন হাত-পা ছেড়ে যায়। 

হ্যাঁ, এমাঁন ভয়ই করে তারা দাদাদের। 

অথবা ভয় করে আত্মসম্মান-হাঁনর। জানে যে এতটুক ভ্ুটি পেলেই 
"খশচয়ে উঠবে তারা” ঘণা ধিক্কার আর শ্লেষ দিয়ে বলবে. 'এটুকুও পার নি? 
সারাঁদন 'কি রাজকার্য কর? নভেল পড়া আর বাবার অন্নজল ধংসানো ছাড়া 
আর কোনো মহৎ কর্ম তো করতে দোঁখ না।' 

যেন অন্য অনেক “মহৎ কর্মের দরজা চিনয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের । যেন 
দাদাদের জামায় বোতাম বসানো” কি ঘর গোছানো, তাদের জুতো ঝেড়ে রাখা, 
ক ফতুয়া গোঁঞ্জ সাবান কেচে রাখাই ভারী একটা মহৎ কর্ম! 

ওরা দি ওদের মহৎ পুরুষজীবনের শুল্ক আদায় করে নেবার পদ্ধাতটা 
রপ্ত করে রাখছে এই মেয়ে দুটোর ওপর দিয়ে 2 


২৭২ সকর্ধজতা 


' এ কথা ভাবে পারুল। 

তবু প্রতিবাদ করবার কথা ওঠে না। 

প্রাতবাদের সুর শুনলে শিশ্ন বাড়বে বৈ তো কমবে না। 

কিন্তু আজ পারুল সহসা কঠিন হলো। 

বললো; “অত ভয় পাবার কি আছে? বলগে যাহয় নি, ভুলে গোছ। 

'ও বাবা, আমি পারবো না।' 

ঠিক আছে আমি যাচ্ছি” 

যাঁচ্ছল, যাওয়া হল না। প্রবোধ এসে ঢুকলো বাইরে থেকে এক বোতল 
ক্যাওড়ার জল হাতে করে। 

প্রবোধের মুখ রাগে থমথমে । 

এসেই কড়াগলায় বলে ওঠে, 'জগুদাকে কে কি বলেছে ?" 

বলেছে! 

বলবে আবার কে কি? 

পারুল বকুল দুজনেই অবাক হয়ে তাকায়। প্রবোধ আরো চড়া গলায় 
বলে, নিশ্চয়ই কিছু একটা বলা হয়েছে, বড়োমদ্দ একটা লোক চোখ মুছতে 
মুছতে বোঁরয়ে যেত না। আমাকে বলে গেল, “আমার দ্বারা কিছু হবে না, 
আম তোর বামুভোজনের বাঁজশালায় নেই”: শৃড এমন কথাটা বলবে 
এমন পরোপকারণ মানুষটা £ বলেছ, তোমরাই কেউ কিছ. বলেছ। মায়ের 
শিক্ষায় শাক্ষত হয়েছ তো সবাই, গুরূলঘ, জ্ঞান করতে জানো না, গুরজনদের 
মান-অপমানের ধার ধারো না। উদ্ধত আঁবনয়ী এক-একাঁট রত তৈরণ হয়েছ 
তো!: 

বকুল এর বিন্দুবিসর্গ'ও জানে না, তাই বকুল হাঁ করে চেয়ে থাকে। তবে 
পারুলও উত্তর দেয় না কিছু । কারণ পারুল জানে, এসব কথার লক্ষাস্থল 
পারুল বকুল নয়, তাদের দাদারা। 

এই স্বভাব বাবার, মুখোমুখি কিছু বলবার সাহস হয় না ছেলেদের, তাই 
এমন শব্দভেদী বাণ নিক্ষেপ! 

ওরাও তাই শিখেছে। 

'জবাব' দেয় না, ঠৈস দিয়ে কথা বলে দেওয়ালকে শুনিয়ে । 

ছেলে বলেই অবশ্য এতটা সাহস তাদের ! মাকে বোধ কাঁর তুচ্ছ মেয়ে- 
মানুষ জাতটার একটা অংশ হসেবে) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কটু-কাটব্য করে, আর 
বাপকে অবজ্ঞা করে। 

কিন্তু ওদেরই বা দোষ কি? 

ওরা ওদের মা-বাপের মধ্যে শ্রদ্ধাযোগ্য কী দেখতে পাচ্ছে? 

হয়তো শুধু 'মা-বাপ' এই হিসেবেই করতো ভয়-ডন্তি, যাঁদ ওদের দাাজ্টটা 
আচ্ছন্ন থাকতো অন্য অনেকের মত। কিন্তু তা হয় নি, সুবর্ণলতা অন্য পাঁচ 
জনের থেকে পৃথক করে মানুষ করতে চেয়েছিল তার সন্তানদের । তাদের 
“খোলা চোখে দেখতে শেখাবার চে্টা করোছল, ওরা সে চেষ্টা সফল করেছে। 
ওরা শুধু 'মা-বাপ' বলেই ভীন্ত-্রম্থা করবে এমন নির্বোধের ভূমিকা আঁতনয়ে 
রাজী নয়। 

না করুক, সমতলে নেমে আসুক! 

প্রবোধ অন্তত তা চায়। 


সুবর্ণলতা ২৩ 

প্রবোধের ইচ্ছে করে, ছেলেমেয়েরা তার মুখে মুখে চোটপাট জবাব করুক, 
সেও তার সমূচিত জবাব দেবার সুযোগ পাক। কিন্তু তা হয় না! ছেলেরা 
তো দরের কথা, মেয়েরা পর্যন্ত যেন কেমন অবজ্ঞার চোখে তাকায়। 

সে দৃষ্টিতে আগুন জহলে উঠবে না মাথার মধ্যে? 

তাই এখনও আগুনজবালা কন্ঠে চঈংকার করে প্রবোধ, “কেউ িছ বলে 
নি বললেই মানবো আমি? ওই অবোধ-অজ্ঞান মানুষটা কখনো মান-আঁভি- 
মানের ধার ধারে না, সে হঠাৎ এতটা আঁভমান করে_” 

বাপের কণ্ঠ-মাধূর্ে আকৃন্ট হয়ে ভায়েরা এসে দাঁড়ালো, একটু থমকে 
বলে উঠলো. শীক ব্যাপার ? বাঁড়তে ভোজটোজ নাক ; পারুর বিয়ে বুঝি 2 

পারুর বিয়ে! 

হতবাক প্রবোধ বলে, 'পারুর বিয়েঃ তোমরা জানবে না সেটা? 

'বাঃ এই তো জানাছি। ভাঁড় খুরি এসে গেছে!" 


জর সেজকাকার ভঞ্গশতে। 

প্রবোধ অসহায়ের মত এঁদক-ও'দক তাকালো ! বললো” এইভাবে জানবে £ 
বাঃ কেন, আর কোনো ঘটনা ঘটে "ন সংসারে? তোমাদের মা'র চতুর্থর 
বামূন-ভোজন-_ 

তাই নাকঃ ওঃ!” 

ভানু ভুরু কোঁচকায়। 

ভানূর সেই ভূরুতে ব্যজ্গের হাসি ছায়া ফেলে। 

প্রবোধ হঠাৎ সেই দিকে তাকিয়ে চেশচয়ে ওঠে, “তা এতে হাসবার ক 
হলো? হাসবার কি হলো? যে মানুষটা তোমাদের সংসারে প্রাপপাত করছে, 
তার একটা পাওনা নেই সংসারের কাছ থেকে 2 

কি উত্তর ভানু দিত কে জানে! 

সহসা কোন ঘর থেকে যেন বোরয়ে এল তার মা। খুব শান্ত আর 'স্থধর 
গলায় বললো, 'তোমাদের এই সংসার থেকে আমার যা প্রাপ্য পাওনা, সেটা 
তাহলে শোধ হচ্ছেঃ অনেক ধন্যবাদ যে শোধের কথাটা তবু মনে পড়েছে 
তোমার। কিন্তু ওতে আমার রুচি নেই, সেই কথাটাই জানিয়ে দিতে এলাম 
তোমায়। এসব আয়োজন করার দরকার নেই, করা হবে না।, 

করা হবে না! 

প্রবোধ যল্মচালিতের মত বলে, “আজ হবে না? 

'না। আজ না কোনাঁদনই না! 

এরপরও যাঁদ রেগে না ওঠে প্রবোধ, কিসে আর তবে রেগে উঠবে 2 

অতএব রেগেই বলে, “হবে না বললেই হলো? রাজ্যসম্ধ লোকজনকে 
নেমন্তল্ন করে এলাম--+ 

খনেমল্তম্ব করে এলে ?' সুবর্ণলতা স্তব্ধ হয়ে তাকায়। কিন্তু প্রবোধ ভয় 
পায় না, প্রবোধ এমন স্তব্ধতা অনেক দেখেছে । তাই: প্রবোধ বলে, এলাম তো! 

বলেছে, সে সকলের আগে আসবে-_-আর ও-বাঁড়র সবাই একটু দৌর 
করবে, কারণ-- 

“পাক, কারণ শুনতে চাই না। লোকজন আসে ভালই, তোমরা থাকবে। 
আমি অন্য কোথাও 'গিয়ে থাকবো। 

১৮ 


২৭৪ সুবর্ণলতা 


তুম অন্য কোথাও গিয়ে থাকবে ? 
প্রবোধ আর পারে না, খিপচয়ে উঠে বলে, 'বাপের ছেরাম্দটা তাহলে 
করবো 2? 
হঠাৎ সুবর্ণ ঘুরে দাঁড়ায়। কাতর গলায় বলে, আমায় এবার তুমি ছনীট 
দাও। আর মন্দ কথা বালও না আমায়। আর পারাছ না আম। 
চলে যাঁচ্ছল দ্ুতপায়ে, ঠিক এই মহামুহূর্তে ঝ এসে খবর দেয়, “বাবুর 
বোনের দেশ থেকে আম্বকেবাব না কে একজন এসেছে, খবর দতে বললো! 


১৯0 


তারপর 2 তারপর সুবর্ণলতা-- 

কিন্তু স্বর্ণলতা ক বা এমন মানুষ যে, তার প্রাতাদনকার 'দিনাঁলাপ 
বাঁধানো খাতায় তোলা থাকবে, আর পর পর মেলে ধরে 
দেখতে পাওয়া যাবে! আ-বাঁধা একখানা খাতার ঝ্‌রো 
ঝুরো পালা থেকে সুবণজিতাকে দেখতে পাওয়া ! 

সুবর্ণলতা যখন নাজেই হাতড়ে হাতড়ে খুজছল 
সেই ঝূুরো খাতার প্রথম দিকের পৃন্ঠাগুলো তখনই কি 
সবগুলোর সন্ধান মিলোৌছল? কই আর? 
. শুধু ওর মাথা কুটে মরার দিনগুলোই-_ 
হ্যাঁ সাদাসিধে দিনগুলো সাদা কালিতে লেখ।র মত কখন যেন বাতাস 
লেগে মিলিয়ে গেছে, আর পৃজ্ঠাগুলোই ঝরে পড়েছে অদরকারী বলে, শুধু 
ওই মাথা কোটার মত দিনগুলোই' গাঢ় কাজিতে লেখা হায় 

কিন্তু মুশাকল এই-কিসে যে সতবর্ণলতা মাথা কোটে বোঝা শস্ত। 

কারো সঙ্গে মেলে না। 

নইলে একটা জেলখাটা আসামী, কবে কোনৃঁদনের একটু আলাপের সূত্র 
ধরে সুবর্ণলতার সঙ্গে দেখা করবার আবদার নিয়ে ওর বাঁড়র দরজায় এসে 
দাঁড়য়েছে দেখে ওর স্বামী-পুত্তুর তাকে দরজা থেকেই বিদায় 'দয়োছল বলে 
মাথা কোটে ও ? 

বলে, 'ভগবান' এ অপমানের মধো আর কতাঁদন রাখবে আমায়! এবার 
ছুটি দাও. ছুটি দাও!” 

অথচ সতোর মূখ চাইলে বলতে হয়, আসলে অপদস্থ ষাঁদ কেউ হয়ে থাকে 
তো সে সুবর্ণলতার স্বামী-পুত্তই হয়ৌছল। 

ওরা সাধারণ সংসারী মানুষ! অতএব একটা জেলখাটা আসাম সম্পর্কে 
সহসা হদয়দ্বার খুলে দিতে পারে না। তাই ঘরের দ্বার খুলে দেয় নি। ওরা 
জেরা করোছল। বলোছল, কি দরকার, কাকে চান, কতাঁদন জেল থেকে ছাড়া 
পেয়েছেন, সুবর্ণলতার সঙ্গে খুব কোন জরুরী প্রয়োজন যাঁদ না থাকে, এত 
কম্ট করে এতদূর আন্সবার মানে "ক, ইত্যাঁদ ইত্যাঁদ! 

বাঁড়র কর্তা হিসাবে প্রবোধই করাছিল প্রশ্ন, তবে জনুও ছিল দাঁড়িয়ে 
তা বাঁড়র কর্তাকে বাঁড়র িরাপভা, পারিবারের সম্দ্রম- এসব দেখতে হবে না? 
তাই দেখাছল প্রবোধ। সহসা দেখল সৃবর্ণলতা অন্তঃপুরের সভ্যতার গাঁণ্ড 





চৃবর্ণলড়া ২৭৫ 


ডেঙে বাঁড়য় বাইরে সদর রাস্তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 

ভাবা যায়? দেখেছে কেউ কখনো এমন দৃশ্য ? 

ওটা ওর স্বামীর পক্ষে লজ্জার নয় ঃ অপমানের নয় 

তার উপর কিনা, প্রবোধ যখন রন্তবর্ণ মুখে বলেছে, “তুমি বেরিয়ে এলে 
যেঃ এর মানে? ভানু, তোর মাকে বল বাঁড়র মধ্যে ষেতে-_ 

তখন কিনা সূবর্ণলতা, তুমি স্বামীর দিকে দৃষ্টিপাত না করে বলে 
উঠলে, “ক সর্বনাশ আম্বকাঠাকুরপো, তুমি এখানে 2 পালাও, পালাও! এ থে 
ভূতের বাঁড়! মেজবৌঁদর সঙ্গে দেখা করতে এসেছ? কী আশ্চর্য, কেউ 
তোমায় বলে দেয় নি সে কবে মরে ভূত হয়ে গেছে! এটা তার প্রেতাত্মার 
বাসভূঁমি ! 

এতে অপদস্থ হলো না তোমার স্বামী পত্র? 

পরে যাঁদ তোমার ছেলে বলেই থাকে, “বাবা, তুম বৃথা রাগ করছো, মা 
তো বোশ কিছ করেন নন! যা চিরকালের স্বভাব, তাই শুধু করেছেন। অন্যকে 
অপদস্থ করা, গুরুজনকে অপমান করা-এটাই তো প্রকাত গর, এতেই তো 
আনন্দ! সেও কিছু অন্যায় বলে 'নি। 

তার দন্টতৈ তো আজীবন ওইটাই দেখেছে সে। 

আর সুবর্ণ, তুমি তো আঁম্বকার সামনে শুধু 'ওইটুকু বলেই ক্ষান্ত হও 
নি) আরও বলেছ। আঁম্বকা যখন তৎসত্তেও প্রেতাত্মাকেই হে্ট হয়ে প্রণাম 
করতে গিয়োছল, তুমি শশব্যস্তে পা সাঁরয়ে নিয়ে বলেছ, “ছি ছি ভাই, প্রণাম 
করে আর পাপ বাঁড়ও না আমার, একেই তো পূর্বজন্মের কত মহাপাপে 
বাঙালীর মেয়ে হয়ে জন্মোছ, আর আরও কত শত মহাপাপে এই মহাপুর্যদের 
ঘরে পূড়েছি। আর কেনঃ প্রণাম বরং তোমাদেরই করা উাঁচত। তোমরা 
যারা নিজের সৃখদঃখ তুচ্ছ করে দেশের গলাঁন ঘোচাতে চেস্টা করছ। 

ক এ? প্রবোধ যা বলেছে তাছাড়া আর কি? 

নাটক ছাড়া আর কি ? 

পুরো নাটক! 

কল্তু এই ঘরগেরস্ত লোকদের সংসারটা 1থয়েটারের স্টেজ নয়। অথচ 
সারাজশবনে তুমি তা বুঝলে না। এখনও বুড়ো বয়সেও না। 
আর কণ হলো? সবটাই ব্যর্থতা! তখন তুমি নাটকে ভাষাতেই উত্তর দিলে, 
“কেন ব্যর্থতা জান ঠাকুরপো £ তোমাদের সমাজের আধখানা অঙ্গ পাঁকে পৌঁতি 
বলে। আধখানা অঙ্গ নিয়ে কে কবে এগোতে পারে বল১ এ অখদ্যে অবদ্য 
ততদিন তোমাদের মাস্তি নেই, মপীন্তর আশা নেই। চাকরানীকে পাশে নিয়ে 
কি তোমরা রাজাসংহাসনে বসবে 2? 

বললে! 

একবার ভাবলে না, তোমার স্বামী-পুত্রের মাথাটা কতখানি হেন্ট হলো 
রাস্তার ধারে দাঁড়য়ে তোমার ওই নাটক করায়। 

অগত্যাই ওদের কঠোর হতে হয়েছে। 

অগত্যাই ধমকে উঠে বলতে হয়েছে, “পাগলাঁম করবার আর জায়গা পাও 
নি?” আর ওই পাগলামির দর্শককেও কটু গলায় বলতে হয়েছে, 'আপাঁনও 


২৭৬ সুবর্দলত 


তম আচ্ছা মশাই, ভদ্রলোকের ঘরের মান ইঞ্জত বোঝেন না! দেখছেন একটা 
মাথাখারাপ মানুষ ঘর থেকে ছিটকে এসেছে-_” 

এরপরেও অবশ্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। 

অন্তত অম্বিকার মত শান্ত সভ্য মাঁজতস্বভাব লোকে 'নশ্চয় পারে না। 
মাথা হেস্ট করে চলে গিয়েছিল সে। 

তবু সৃবর্ণলতা তৃমি হেসে বলে উঠোছল, ঠক হয়েছে! কেমন: জব্দ ? 
ভুতের বাঁড় আসার ফল পেলে? 

ভাবো নি এরপরও তোমাকে তোমার স্বামী-পৃন্ধের সামনে মুখ দেখাতে 
হবে, পিছনের ওই চৌকাঠ পার হয়েই আবার ঢুকতে হবে। 


কিন্তু ঢুকতে হলেই বা কি! 

সৃবর্পলতার শরীরে কি লজ্জা আছে? কতবারই জে বোরয়ে পড়েছে 
সুবর্ণলতা বাঁড়র বাইরে, আবার এসে ঢোকে নি? 

চুকেছে। আবার ঢুকেছে, আবার দাপট করেছে। মরমে মরে শিয়ে চূপ 
হয়ে যায় নি। এঁদনও তা গেল না। যখন প্রবোধ গর্জে উঠলো, আর ভান, 
উপধূত্ত ধক্কার দেবার ভাষা খুজে না পেয়ে শুধু ঘৃণার দৃস্টিতে দশ্ধ করা যায় 
দিনা তার চেত্টা করলো, তখন ধকনা সুবর্ণলতা বিন্দুমাত্র অপ্রাতভ না হয়ে 
অনায়াসে বলে উঠলো, “কী আশ্চর্যি। এতে তোমাদের মুখ পোড়ানো হলো 
কোথায়? মুখ উজ্জবলই হলো বরং। পাগল পাগলের মতই আচরণ করলো, 
চুকে গেল ল্যাঠা। তোমার কথার মান বজায় রাখলাম, আর বলছো কিনা মৃখ 
পোড়ালাম ?' 

ঘুণায় মুখ ফিরিয়োছল সৌঁদন একা স্ববর্ণলতার বড় ছেলেই নয়, মেজ- 
সেজও 'আশ্িদন্টি হেনে বলেছিল, চমৎকার! মার শোক হয়েছে ভেবে আর 
মমতা আসে নি ওদের। ছোট ছেলে সৃবলের কথাই শুধু বোঝা যায় না, সে 
বরাবরই মুখচোরা। সে যে কোথা থেকে তার এই চাপা স্বভাব পেয়েছে! 

তু সুবর্ণলতার মেয়েরা ? 

যে মেয়ে দুটো এখনো পরের ঘরে ধায় ন? পারুল আর বকুল ? 

তা ওদের কথাও বোঝা যায় নি। 

মনে হচ্ছিল ওদের চোখে একটা দশেহারা ভাব ফুটে উঠেছিল। যেন 
ওরা ঠিক করতে পারাছল না, মায়ের উপরে বরাবর যে ঘূণা আর বিরাস্ত পোষণ 
করে এসেছে' সেটাই আরো পুষ্ট করবে, না নতুন চিন্তা করবে? 

বকুল ছেলেমানদয। 

এত সব ভাববার বয়স হয় নি তার। 

কিন্তু তাই ক? 

সুবর্ণলতার ছেলেমেয়েরা ছেলেমানুষ থাকবার অবকাশ পেল কবে? জ্ঞান 
হয়ে পর্যন্ত তো ওরা শুধু ওদের মাকে বিশ্লেষণ করেছে, তার তিন্ততা অর্জন 
করেছে। তাই করতে করতেই বড় হয়ে উঠেছে। 

ওরা অনেক কিছ জেনে বুঝে পাঁরপক। 

বাপকে ওরা ঘৃণা করে না করে অবহেলা । কিন্তু মাকে তা পারে না। 
মাকে অবহেলাও করতে পারে না, অস্বশকারও করতে পারে না, তাই ঘ্‌ণা করে 

শুধু আজই যেন ওদের দষ্টিভঙ্গী বদলাচ্ছে। আঁদ্বিকার ফিরে চলে 


সুবর্ণজতা খ্থ্থ 


ধাওয়ার মধ্যে ওরা বুঝি সমস্ত মেয়েমানুষ জাতটার দুঃসহ অসহার়তা টের 
পেয়ে গেছে। তাই দিশেহারা হয়ে ভাবছে, “গৃহিণী” শব্দটা কি তাহলে একটা 
ছেলেভোলানো শব্দ নাক দাসী শব্দেরই আর একটা পাঁরভাষা ? 

গৃহিণাঁর যাঁদ তার গৃহের দরজায় এসে দাঁড়ানো একটা আঁতাথকে “এসো 
বসো' বলে ডাকবার আঁধিকারটুকুমান্র না থাকে, তবে গাঁহণী' শব্দটা ধোঁকা- 
বাজ ছাড়া আর কি? ওই ধোঁকায় ধোঁকায় দাঁষ্ট আচ্ছন্ন করে দিয়ে দাসন্ব 
করিয়ে নেওয়া! 

সংসার করা মানে জ হলে শুধু সংসারের পরিচর্যা করা, আর কিছ: না! 
আশ্চর্য, যেখানে এক কানাকড়াও আধকার নেই' সেখানে কেন এই গালভরা 
নাম ? 

খুব স্পন্ট করে মনে না পড়লেও মেজাঁপসীর বাঁড় গিয়ে থাকার কথাটা 
পারুলের কিছু কিছু মনে আছে বোক। মনে আছে আঁম্বকাকাকার নাম, জছাড়া 
ছেলেবেলায় কতবারই না শুনেছে সে নাম মায়ের মুখে । কত শ্রম্ধার সঙ্গে, 
কত প্রীতির সঙ্গে. কত স্নেহের সঙ্গে উচ্চারত হয়েছে সে নাম। অথচ সেই 
মান্ষটাকে “দর দূর" করে তাঁড়য়ে দেওয়া হলো সববর্ণলতারই সামনে! 

গৃহিণণর সম্ভ্রম দিয়ে সুবর্ণলতার ক্ষমতা হলো লা তাকে ডেকে এনে ঘরে 
বসাবার! 

পার্ল দেখেছে সেই অক্ষমতা । হয়তো বকুলও দেখেছে । আর অনুভব 
করেছে, এ অক্ষমতা বুঝি একা সূবর্ণলতারই নয়। 

তই দৃম্টিভ ঞ্গাী পালটাচ্ছে ওদের! 


কিন্তু সুবর্ণলতার বাপ-মায়ের সেই “চতুর্থ শ্রাদ্ধে' ক হলো? খ্ব 
একটা সমারোহের আয়োজন করোছিল না তার স্বামী ওই উপলক্ষে। বলে 
সপ 'না বাবা, এ হলো গিয়ে “বশুর-শাশুড়ীর দায়”, পিতৃমাতৃদায়ের 
চতুগণ! 

তা সেও একরকম ধাম্টামো করেই হলো বোক। সহজ সাধারণ কিছ 
হলো না। হব কোথা থেকে ও 

সহজে কিছু কি হতে দেয় সুবর্ণলতা ? সব কিছুকেই তো বিকৃত করে 
ছাড়ে ও! 

সূবর্ণলতা তাই বলে বসলো, 'আঁম ওসব করবো না। 

'করবে নাঃ ভুঁজ্য উচ্ছগঢ্যও করবে না তুমি মা-বাপের 2: 

না।' 

না! 

শব্দজ্গতের চরমতম কঠোর শব্দ । 

নষ্তুর, অমোঘ । 

আশ্চর্য, আশ্চর্য! 

অত সব আয়োজন তাহলে ? 

নষ্ট গেল 2 

আবার কি! 

পুরোহিত এসে শুনে হাঁ রুরে দাঁড়য়ে পড়লেন। তাছাড়া আর করবেন 
কি? প্রবোধ যাঁদ বা বলোছল--'ওর তো আবার জবর হয়ে গেছে রাত থেকে 


২৭৮ গৃবর্ণলতা 


কাজ করা হবে কিঃ জহর গায়ে তো-+ কিন্তু সৃবর্ণলতা তো সে কথাকে 
দাঁড়াতে দেয় নি। বলে উঠোঁছল, “উনি ঠিক জানেন না ঠাকুরমশাই, জহর-উর 
কিছু হয় নি আমার-” 

'জবর-টর হয় নি? তবে? 

“কিছু না। ইচ্ছে নেই সেটাই কথা! 

পুরোহিত একবার প্রবোধের আপাদমস্তক দেখে নিয়ে চলে গিয়ৌছলেন 
শালগ্রামশিলাকে উঠিয়ে নিয়ে! 

এ বাহাদীরটুকুও কি লা দেখালে চলতো না?” হেরে ধাওয়া গলায় 
কলেছজ প্রবোধ, 'ও-বাঁড়র পৃরুত উাঁন_” 

সুবর্ণলতা চুপ করে তাকিয়ে 'ছিজ। 

প্রবোধ আবার বলেছিল. গচরকালের গুরুবংশের ছেলে-_”' 

'জান, সুবর্ণলতাও প্রায় তেমনি হেরে যাওয়া গলায় উত্তর 'দিয়োছল, 
প্ুরুবংশের ছেলে, পুরোহিতের কাজ করছেন, তাতে শালগ্রাম তাঁর সঙ্গে, আর 
জলজ্যান্ত মিথ্যে কথাটা কইতে ইচ্ছে হলো না।, 

হলো না। 

হলো না তখন সে ইচ্ছে! 

অথচ নিজেই সবর্ণলতা ঘণ্টাকয়েক পরে 'শরাঁর খারাপ লাগছে, বোধ হয় 
জর আসছে-_' বলে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো গিয়ে। 

'মাঁছামিছিই বলল বোৌক। 

গ্াতো ঠাণ্ডা পাথর! 

বললো কাদের) কেন, ষত সব আত্মীয়-কুটুম্ধদের ! বাঁড় বাড়ি ঘুরে 
যাদের যাদের নেমন্তম্ব করে এসেছে প্রবোধ, তার স্ত্রীর মা-বাপ মরার উপলক্ষে । 

তারা 'কি জানে, সংবর্ণলতা 'পিতৃ-কার্ধ করতে ইচ্ছে হয় ন বলে পুরো- 
হিতকে বিদায় দিয়েছে, আর আত্মীয়দের মুখ দেখতে ইচ্ছে হয় নি বলে চাদর 
ঢাকা দিয়ে পড়ে আছে ? 

তবে সুবর্ণলতার পড়ে থাকার জন্য ক কিছ আট্কোছিল ? 

কিছু না। কিছ না। 

প্রবোধের গা্টর সবাই এল, ভোজ খেল, সুবর্ণলতার শুয়ে থাকার জনে 
হা-হুতাশ করলো, চলে গেল। 

সুবর্ণলতাই শুধু চাদর মাড় দিয়ে গলদঘর্ম হতে থাকলো । 


[কন্তু সুবর্ণলতার মায়ের সেই চিিটা 2 

সেটার কি হলো? 

সে চিঠি কি খুললো না সুবর্ণলতাঃ কবরের নীচে চিরঘুমন্ত করে 
রেখে দিল তার মায়ের আন্তিম বাণী? 


এত কাঠিন্য ? 
তা প্রথন্নটা তাই ছিল বটে। কতাঁদন যেন সেই খাম মুখবন্ধ হয়ে পড়ে 
রইল সূবর্ণলতার দ্রীঙ্কের নীচে কাপড়চোপড়ের তলায়। 
সেই গভীর অন্তরাল থেকে সেই অবরদ্ধবাণী অনুক্ষণ সুবর্ণলতার 


গুবর্গলতা ২3৯ 


সমগ্র চেতনাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বলেছে, "সুবর্ণ, তুমি কি পাগল 2 সুবর্ণ 
এ তুমি কী করছো? আর অরপর হতাশ হতাশ গলায় বলেছে, 'সুবর্ণ, 
তোমার এই অভিমানের মর্ম কে বুঝবে ১ কে দেবে তার মুজ্য ?, 

অবশেষে একাঁদন এই ধাক্কা অসহ্য হলো । সংবর্ণ দ্রাঞ্কের তলা থেকে ওর 
মায়ের সেই আঁল্তমবাণী টেনে বার করলো। 

দিনটা ছিল একটা রাঁববারের দুপুর । যাঁদও জ্যৈষ্ঠ মাস, তবু কেমন যেন 
ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা মেঘলা দুপুর । আকাশটা যেন ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কোনো রকমে 
এদনসই' করেই সন্ধ্যার কুলায় আশ্রয় নেবো নেবো করছে। বাঁড় থেকে কারো 
বেরোবার কথা নয়, তবু আকাঁস্মক একটা যোগাযোগে আশ্চর্য রকমের নির্জন 
ছিল বাঁড়টা। 

গারবালার সাবত্রীবরতের উদযাপন সোঁদন। সেই উপলক্ষে বাহ্মণ- 
ভোজনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মজন-ভোজনেরও ব্যবস্থা করেছিল সে' তাই ভাসুরের 
বাঁড়র সবাইকে নেমন্তন্ন করে পাঠিয়েছিল ছেলেকে দিয়ে । 

কবে যেন ব্রতী ধরোছল "গারবালা 

সুবর্ণ ও বাঁড়তে থাকতেই না? 

উদযাপনের খবর মনে পড়ৌছিল বটে সুবর্ণর। কারণ ওই ব্রতটাকে উপলক্ষ 
করে অজন্রবারের মধ্যে আরো একবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিস সবর্ণকে। 

মুন্তকেশী বলোছলেন, 'বড়বৌমার কথা বাদ দই. ওর না হয় ক্ষ্যামতা 

নেই, কিন্তু তোমার সোয়ামীর পয়সা তো ওর সোয়ামীর চেয়ে কম নয় মেজ- 
বৌমা, : 'খরুূচে বন্তটা”র সেজবৌমা বুতী হলো, আর তুমি অক্ষমের মতন 
ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে দেখবে ?" 

হক্সতো ইদানীং শিরিবালার স্বাধীনতাও ভাল লাগাঁছল না মুস্তকেশীর, 
তাই এক প্রাতিপক্ষকে দিয়ে আর এক প্রাতিপক্ষকে খর্ব কববার বাসনাতেই এ 
উস্কান 'দাচ্ছলেন। কল্তু সুবর্ণলতা তাঁর ইচ্ছে সফল করে নন" সে 
অহ্লানবদনে বলোছল, "ও ধান্টামোতে আমার রুচি নেই। 

ধাণ্টামো ! 

সাবন্রীব্রত ধাম্টামো ! মুস্তকেশী দ্তাম্ভিত দৃষ্টি ফেলে বোবা হয়ে আঁকয়ে 
[ছলেন। 

ধগারবালাও মুখ লাল করে বলে উঠোছল, “এ কথার মানে ক মেজাঁদ ? 

মেজাদ আরো অন্লানবদনে বলোছল, “মানে খুব সোজা । যার সবটাই 
ফাঁকা তা নিয়ে আডূম্বর করাটা ফাঁক ছাড়া আর কিঃ অনাকে ধোঁকা দেওয়া, 
আর নিজেকে ফাঁক দেওয়া, এই তো? সেটাই ধাম্টামো!' 

'বামীভান্তটা তাহলে হাঁসর বস্তু 2 

সুবর্ণলতা হেসে উঠে বলোছিল, “ক্ষেত্ীবশেষে নিশ্চয় হাঁসর। ফুল-চন্দন 
নিয়ে স্বামীর “পা” পূজো করতে বসোঁছ আমরা, এ কথা ভাবতে গিয়েই সে 
হাঁস উলে উঠছে আমার! 

শনজেকে দিয়ে সবাইকে বিচার কোরো না মেজাঁদ, ভান্ত যার আছে-_ 

মেজাঁদ এ 'ধব্কারকে নস্যাৎ করে দিয়ে আরো হেসে বলোছল, 'ভীন্ত 2 ওই 
ভেবে মনকে চোখ ঠারা, এর মধ্যে ভান্তও নেই, ম্ান্তও নেই সেজবৌ। আছে 
শুধু শখ অহামিকা! 

সেই অকথ্য তীন্তর পর বাড়িতে কোট"কাছারি বসে গিয়োছল। যে দ্যাওর 


২৮০ সুবণলতা 


ডেকে কথা আর কইত না ইদানশং, সেও এসে ডেকে বলোছিল, শবষটা নিজের 
মধ্যে থাকলেই তো ভাল ছিল মেজবৌ, অন্যের সরল মনে গরল ঢেলে দেবার 
দরকার ক ? স্বামীকে সত্যবান হতে হবে তবে স্ব্শরা সাঁব্শ হবে, নচেত নয়, 
এমন 'বালাত কথার চাষ আর নাই বা করলে বাড়তে! 

আর প্রবোধ বাড়ি ফিরে ঘটনা শুনে দেওয়ালে মাথা ঠৃকতে গিম্পোছিল, 
বলোছিল, 'হবে 'বদেয় হতেই হবে আমায় এ বাঁড় থেকে । এভাবে আর: 

সৃবর্ণলতা বলোছল, “আহা এ সূমাঁত হবে তোমার 2 তাহলে পায়ে না 
হোক, মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক তোমার !' 

অবশ্য বিষমল্ম দেওয়া সত্বেও ব্লত নেওয়া বন্ধ থাকোনি গারবালার, এবং 
দেখা যাচ্ছে চোদ্দ বছর ধরে নিষ্ঠা সহকারে পাঁতিপূজা করে এখন সগৌরবে ব্রত 
উদযাপন করতে বসেছে সে। 

স্বর্ণলতা কি ওর সুখী হবার ক্ষমতাকে ঈর্ধা করবে ? 

না সুবর্ণলতা শুধু হাসবে ? 

তা এখন আর হেসে ওঠে নি সুবর্ণ শুধু ছেলেটাকে বলোছিল, “যেতে 
পারবো না বাবা সুশীল” মাকে বাঁলস মেজজেঠির শরীর ভাল নেই। আর 
সবাই যাবে ।' 

সেই উৎসবে যোগ দিতে চলে গেছে সুবর্ণর স্বামী, সন্তানেরা । অবশ্য 
পার্ল বাদে। পারুলের থেকে বয়সে ছোট খুড়তুতো-জ্যাঠতৃতো বোনেদের 
বিয়ে হয়ে গেছে, পারুর হয় নি, এই অপরাধে প্রবোধ বলোছল, “ওর যাওয়ার 
দরকার নেই। 

পারু মনে মনে বলেছে, 'বাঁচলাম।' 

কে জানে, হয়তো বাড়ির কোন কোণে একখানা বই নিয়ে পড়ে আছে 
পারুল, হয়তো বা তার কবিতার খাতাটা 'নয়েও বসতে পারে, এই অকস্মাং 
পেয়ে যাওয়া একখণ্ড অবসরের সুযোগে । সুবর্ণ জানে, পারু তার 'নিজনিতায় 
ব্যাঘাত ঘটাবে না। 

কিন্তু তখন কি ভেবোছল সুবর্ণ, ওরা চলে গেলে মায়ের চিঠিখানা 
খুলবো আম ? 


শুধু অনেকটা কলকোলাহলের পর হঠাৎ বাঁড়টা ঠাণ্ডা মেরে যাওয়ার 
সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ানক একটা মন উচাটন ভাব হয়োছল সংবর্ণর ! 

আর তখনই মনে হয়েছিল ওর, 'আমি কি সেজবৌয়ের সুখী হওয়ার 
ক্ষমতাকে হিংসে করাছি 2...তা নয়তো কেন আজই এত করে মনে আসছে 
সারাজীবন আম কি করলাম! 

আঁবশ্রান্ত একটা প্রাণপণ যুম্ধ ছাড়া আর কোনোখানে যেন কিছ চোখে 
পড়ে না। কোথাও যে একটু সুশণতল ছাস্কা আছে, কোনোখানে যে একবিদ্দদ 
তার জল মিলোছল, সে কথা যেন ভুলেই যাচ্ছে সুবর্ণ । সুবর্ণ দেখতে 
পাচ্ছে আঁবরত সে শুধু আক্রমণ ঠেকাচ্ছে, তবু এগিয়ে যাবার চেষ্টায় নিজেকে 
ছিত্বাভন্ন করেছে। 

নিজের উপর করুণায় আর মমতায় চোখে জল এসে গেল সবর্ণর, ভিতরটা 
যেন হাহাকার করে উঠলো, আর তখনই মনে হলা, দেখব আজ আমি দেখব_- 
ভগবান আমাকে শেষ 'ি উপহার পাঠিয়েছেন! 


“বণ লতা ২৮৯ 


খাম 'ছণ্ড়তে হাত কাঁপাছল সুবর্ণর, আর বুকের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছিল। 
যেন ওটা ছেণ্ড়ার সঙ্গে সঙ্গোই মস্ত একটা কিছ, ফায়ে যাবে ওর! 

কী সে? 

পরম একটা আশা ? 

নাক ওই খামটার মধ্যে ওর মা এখনও জীবন্ত রয়েছে, খোলার সঙ্গে 
সঙ্গেই শেষ নিঃবাস ফেলবে 2 

তা তেমাঁন একটা কম্টের মধ্যেই খামটা খুললো সংবর্ণলতা। আর তার 
পরই একটা জলের পর্দা যেন ঢেকে দিল সমস্ত 'বিশ্বচরাচর ।...ঝাপ্‌সা হয়ে 
"গল কালো কালো অক্ষরের সারি, ঝাপ্‌্সা হয়ে গেল বুঝি নিজের ওই' কাগজ 
ধরা হাতখানাও। পর্দাটা পড়ে যাবার আগে শুধু একটা শব্দ ঝলসে উঠোছল 
-সেই শব্দটাই বাজতে লাগলো মাথার মধ্যে। 

“কল্যাণীয়াসু_- 

স্বর্ণ" 

কল্যাণীয়াসু...সুবর্ণ। 

এ নাম তা হলে মনে রেখেছে সুবর্ণর মাঃ 

আজো কেউ তা হলে সুবর্ণ নামে ডাকে তাকে ? 

না না, কোনোঁদন ডাকে নি, কোনোদনও আর ডাকবে না। শুধু নামটা 
মনে রেখোঁছল, অথচ একাঁদনের জন্যে সেই মনে রাখার প্রমাণ দেয় 'ন সে। 

জলের পর্দাটা মুছে ফেলবার কথা মনে পড়ে নি সুবর্ণর ৷ যতক্ষণে বাতাসে 
শুকিয়ে গেল, বঝিবা বেশিই শুকিয়ে গেল, ততক্ষণে ওই কল্যাণ সম্বোধনের 
পরবতর্শ কথাগুলো চোখে পড়লো। 


“কল্যাণীয়াস 

স:বর্ণ, 

বহবাদন পূর্বে মায়া যাওয়া কোনও লোক চিতার তল হইতে উঠিয়া 
আসিয়া কথা কাহিতেছে দোখলে যের্প বিস্ময় হয়, বোধ হয় সেইর্‌্প বিস্ময় 
বোধ কারতেছ! আব নিশ্চয় ভাবিতেছ, 'কেন আর 2 কি দরকার 'ছিল ?' 

কথাটা সত্য, আমিও সে কথা ভাবিতোছ। শুধু আজ নয়, দীর্ঘীদন ধাঁরয়া' 
ভাবিতোছি। যোঁদন তোমাকে ভাগ্যের কোলে সমর্পণ কাঁরয়া চালয়া আসিয়াঁছ, 
সেইদন হইতেই এই পত্র লেখার কথা ভাবয়াছ, এবং দ্বিধাগ্রস্ত হইয়াছি। 
ভাবয়াছ, কেন আর ১ আম তো তাহার আর কোনো উপকারে লাগব না! 
(জলের পর্দাটা আবার দুলে উঠেছে. সেই সঙ্গে সুবর্ণর ব্যাকুল আবেগ ।...মা, 
মা, সেটাই' তো পরম উপকার হতো! তোমার হাতের অক্ষর, তোমার স্নেহ- 
সছ্বোধন, তোমার “সুবর্ণ নামে ডেকে ওঠা, ৮৮৪০৫০৬৪০৬২ 
তোমার সংবর্ণর!) তথাপি বরাবর ইচ্ছা হইত তোমায় একটি প্র দিই তব 
দৈওয়া। হয় নাই। কেন হয় নাই, সেটা এখন বাঁঝতে পারি দেওয়া হয় নাই 
কেবলমার্র লঙ্জায়। তোমার কাছে আমার অপাঁরসধম লঙ্জা, তোমার কাছে 
আমার অপরাধের সীমা নাই। সে অপরাধের ক্ষমা নাই। 

জশীবনের এই শেষপ্রান্তে আসিয়া পেসছাইয়া মনের সঙ্গে যে শেষ বোঝা- 
পড়া কারতোঁছ, তাহাতেই আজ এই সত্য নির্ধারণ কাঁরতেছি, তোমাকে অমন 
করিয়া নিষ্ঠুর ভাগ্যের মূখে ফেলিয়া আসা আমার উচিত হয় নাই। হয়তো 


২৮২ সুবর্ণলতা 


তোমার জন্য আমার কিছু করবার ছল! 

তব ভগবানের দয়ায় তুমি হয়তো ভালই আছো। তোমার ছোড়দার কাছে 
জানিয়াছিলাম তোমার কয়েকাটি সন্তান হইয়াছে ও খাইয়া পিয়া একরকম 
সুখেই আছো। “তবু এমনই আশ্চর্য, চিরাঁদনই মনে হইয়াছে তুমি বোধ হয় 
সুখে নাই ।...মা মা, তুমি কি অন্তর্ধামী 2 সত্যই দুঙখাঁ, বড় দুঃখী, তোমার 
সুবর্ণ চিরদুঃখী!) এই অদ্ভুত চন্তা বোধ করি মাতৃহদয়ের চিররহস্য_-যাঁদও 
মাতৃহদয়ের গোরব করা আমার শোভা পায় না!...কল্ত সুবর্ণ ভাঁবতোছ 
তুম কি আমার চিঠির ভাষা বুঝিতে পাঁরতেছ ? জান না তোমার জশবন 
কোন্‌ পথে প্রবাহিত হইয়াছে, জানি না তুমি সে জীবনে শিক্ষাদণক্ষার কোনো 
সুযোগ পাইয়াছ কিনা! আজ তুমিও আমার অপাঁরাঁচত. আঁমও তোমার 
অপারাঁচত। 

1কল্তু সত্যই কি তাই ঃ 

সতাই ক আমরা অপাঁরচিত 2 

তবে কেন সবরদাই মনে হয়, সুবর্ণ ভাঙ্গিয়া পড়ে নাই, সৃবর্ণ ভাতঙ্গিয়া 
পাঁড়তে পারে শা। সে সমস্ত প্রাতিকল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ কাঁরতে কাঁরতে 
অগ্রসর হইতে পারিবে । তোমার মধো সে মঙ্কুর ছিস। যে কয়াট দিন তোমাকে 
দেখবার সুযোগ পাইয়াছ, তাহাতে ৬ ধাবণাই ব্ধমূল ছিল। 

তাই মনে হয়, তুমি হয়তো দতাণার হৃদয়হশীন মাকে কতকটা বুঝিতে 
পারো। হয়তো আবরত ীধক্বার দিবার প্ণরবর্তে একবার একট ভালবাসার 
মন নিয়ে চিন্তা করো! 

একদা সংসারের প্রাতি বিশ্বাস হারাহয়া সংসার হইতে চলিয়া আপিয়া- 
ছিলাম। তুমি জানো, তোমাকে উপলক্ষ করিয়াই সেই ঝড়ের সাঁ্ট। বেশি 
বিশদ কাঁরয়া সেসব কথা৷ লি'খিতে চাহ না। তবে এই সদণর্ঘকাল সংসার 
হইতে দূরে থাঁকয়া আঁবরত মানুষকে [বশেলষণ কারিতে কাঁরিতে এইটা 
বৃঝিয়াছি এ সংসারে যাহাদের 'অনায়কার' বলিয়া চিহত করা হয়, তাহারা 
সকলেই হয়তো শাঁষ্তির যোগ্য নয়। তাহারা ষা কিছু করে, তার সবটাই দুজ্ট- 
বৃদ্ধি প্রণোদত হইয়া করে না। মাধকাংশই করে না বাঁঝয়া। তাহাদের 
বাদ্ধহঈনভাই তাহাদের অঘটন ঘটাইবার কারণ। কাজেই তাহারা ক্রোধের 
যোগ্যও নয়। তাহারা বড় জোর বিরান্তর পান্ন, এবং করুণার পান্। 

ণিন্তু খন এই বৃদ্ধিহীনতার স্গে একটা জীবনমরণের প্রশ্নের সংঘর্ষ 
লাগে, তখন মাথা ঠান্ডা রাঁখয়া বিচার করা সহজ নয়। আর এও জান, সৌঁদন 
আমার পক্ষে এ ছাড়া আর কিছু সম্ভব ছিল না।...তোমার পিতা ও ভ্রাতারা 
না হওয়ায়, কাশীতে আ'সয়াও অনুরোধ উপরোধ ও তিরস্কার কারয়া গিয়াছেন। 
কিন্তু যাহা ত্যাগ কারয়া আঁসয়াছ, তাহা আর হাতে তুলিয়া লওয়া চলে না। 
সেই ফোঁলিয়া আসা সংসার-জীবনের সাঁহত আবার নিজেকে খাপ খাওয়ানোও 
অসম্ভব। তুমি জানো হয়তো, তোমার দাদামহাশয় তখন কাশীবাসী। তাঁহার 
কাছে সংস্কৃত শিক্ষা কাঁরয়া তদানীন্তন বহু কাশীবাসা পাঁণ্ডিতের নিকট নানা 
শাস্ অধ্যয়ন কাঁরয়া সন্ধান করিয়াঁছ হিন্দু বিধাহের মূল তাৎপর্য কি, 
মূল লক্ষ্য কি, 'এ বন্ধন যথার্থই জন্ম-জল্মান্তরের কিনা । কিন্তু যখনই প্রশ্ন 
তুঁলয়াছি, এই বষ্ধনের দূঢ়তা পুরুষ ও নারীর পক্ষে সমান নয় কেন, 


সুবর্ণলতা ২৮৩ 


পূরুষের পক্ষে শববাহ' একটি ঘটনা মান, অথচ নারণর পক্ষে চির-অলগ্ঘ্য কেন, 
সদুত্তর পাই নাই। উপরন্তু এই প্রশ্নের অপরাধে অনেক স্নেহশল পাঁণ্ডতের 
স্নেহ হারাইয়াছ। ক্লমশ বাঁঝয়াছি এর উত্তর পুরুষ দিতে পারবে না, ভাঁবষ্যৎ 
কালই দিবে। কারণ কোনো একটি মম্পীস্ততে ভোগ-দখলকারণ ব্যান্ত স্বেচ্ছায় 
সহজে দানপন্র 'লাঁখয়া দেয় না।...স্ীঁলোকের যাহা কিছ্‌তে অনাঁধকার, তাহার 
আধকার অর্জন কাঁরতে হইবে স্তীজাতিকেই! 

কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের! 

ইহাই সার কথা, ধৈর্য ব্যাতরেকে কোনো কাজই সফল হয় না। এই কথাট 
বুঝতে আমার সমগ্র জীবনটি লাগিযাছে, আর এই কথাই মনে হইয়াছে, একথা 
বাঁলয়া যাওয়া প্রয়োজন। কন্তু কে কান দবেঃ তোমাকে বাঁলবার ইচ্ছা 
হইয়াছে, সঙ্কোচে কুণ্ঠায় নীরব থাঁকয়াঁছ। তাছাড়া এই ভয়ও ছিল. হয়তো 
আমার পন্র তোমার সাংসারিক জীবনে অশান্তির সূষ্টি কাঁরবে। তাই ইহা 
আমার মৃত্যুর পর তোমার হাতে পেশছাইবার নিরেশ 'দিয়াছ। হয়তো তখন 
তোমার এই সংসারত্যাঁগনী মাকে তোমার স্বামীর সংসার একট. সদয়াচত্তে 
বির করিবে । হয়তো ভাববে উহাকে দিয়া আর কি ক্ষতির সম্ভাবনা ঃ 

তোমাকে এত কথা 'লাখিতোছ, কারণ বুদ্ধ ও যুক্তির দ্বারা বাঁঝ, তুম 
এখন একাঁট বয়স্কা গৃহিণী । কিন্তু মা সুবর্ণ” তোকে যখন দেখিতে চেষ্টা 
কার, তখন একাঁট ক্ষুদ্র বালিকা ভিন্ন আর কিছুই দেখিতে পাই না। পরনে 
ঘাগরা, মাথায় চুল বেণণ কাঁরিয়া বাঁধা, হাতে বই-খাতা-স্লেট, একটি স্কুল-পথ- 
যাত্রণী বালিকা! 

তোর এই মাৃর্তিট ভিন্ন আর কোনো মাাতহি আমার মনে পড়ে না। এই 
মূর্তিই আমার সুবর্ণ! সেই যে তোকে তোর স্কুলে পাঠাইয়া "দিয়া দরজায় 
দাঁড়াইয়া থাকতাম, সেই মৃতিটই £নের মধ্যে আঁকা আছে। 

কন্তু তেমন ইচ্ছা কাঁরলে কি আম তোমায় আর একবার দেখিতে পাইতাম 
নাঃ আর তৈমন ইচ্ছা হওয়াই তো উঁচত িল। কিন্তু সত্য কথা বাজ, 
না।...তোমাকে লইয়া আমার অনেক আশা ছল, অনেক সাধ-স্বপ্ন ছিল, কিন্তু 
সব আশাই চূর্ণ হইয়া গিয়াঁছল, তবু ওই মৃর্তিটা আর চূর্ণ করিতে ইচ্ছা 
হয় নাই।...তৃমি হয়তো ভাবিতেছ এসব কথা এখন আর 'জাঁখবার অর্থ কি ? 
হয়তো কিছুই অর্থ নাই, তব্‌ মানৃষের সব চেয়ে বড়। আকাক্ক্ষাই বাঁঝ কেহ 
তাহাকে যথার্থ কাঁরয়া বুঝুক!...আমাকে কেহ বুঝিল না- এর বড়ো আক্ষেপ 
বোধ হয় আর কিছুই নাই। পুরুষমানুষের একটা কর্মজীবন আছে, সেখানে 
তাহার গৃণ কর্ম রুচি প্রকাতির বিচার আছে। সেখানেই তাহার জীবনের 
সার্থকতা অস্সার্থকতা। মেয়েমানৃষের তো সে জবন নাই, তাই তাহার একান্ত 
ইচ্ছা হয়, আর কেহ' না বুঝুক' তাহার সন্তান যেন তাহাকে বুঝে যেন তাহার 
জন্য একট; শ্রদ্ধা রাখে, একটু মমতার নিঃ*বাস ফেলে ! সেইট্কুই তার জীবনের 
যথার্থ সার্থকতা । হয়তো মৃত্যুর পরেও এ ইচ্ছা মরে না, তাই এই পন্র। 

হয়তো তুমি চিরাদনই তোমার মমতাহীন মাকে 'ক্কার 1দয়াছ, কিন্তু 
মৃত্যুর পরও যাঁদ সে ভাবের পাঁরবর্তন হয়, বৃিবা আত্মা কাণিৎ শাঁদ্তলাভ 
কাঁরিবে। তাই মৃত্যুর দ্বারে আসিয়া এই পন্ন লাখবার বাসনা । 

সুবর্ণ: তুমি আমাকে ভুল বৃকিও না। 


২৮৪ সবর্ণলতা 


তোমার ছোড়দাদা মোগলসরাইতে কাজ করে, মাঝে মাঝে আসে। নিষেধ 
শোনে না। মনে হয় সে হয়তো আমাকে কিছুটা বোঝে, তাই কখনো তোমার 
দাদার মত মায়ের অপরাধের বিচার কাঁরতে বসে না। এখানে আপসিয়াই আম 
যে মেয়ে-স্কুলাট গাঁড়য়াছিলাম, তাহার পাঁরসর এখন যথেষ্ট বাঁড়য়া গিয়াছে। 
তোমার ছোড়দা স্বেচ্ছায় মাঝে মাঝে ভাহার দেখাশুনা করে। মনে হয়, আমার 
মৃত্যুর পর স্কুলাট টাকয়া থাকতেও পারে। প্রথম প্রথম বাঁড় বাঁড় ঘরয়া 
ছাল্লী সংগ্রহ কারতে হইত । রুমশ অবস্থার পাঁরবর্তন ঘাঁটয়াছে, পিতামাতারা 
স্বেচ্ছায় আগাইয়া আঁসতেছেন, এবং অনুধাবন করিতেছেন, দেশে স্মী-শিক্ষার 
প্রসারের প্রয়োজন আছে। 

আশা হয় এইভাবেই 'কালে'র চেহারার পাঁরবর্তন হইবে। মানুষের বাষ্ধ 
বা শৃভবুদ্ধি সহজে যাহা কাঁরয়া তুলিতে সক্ষম না হয়, 'প্রয়োজন” আর ঘটনা- 
প্রবাহই তাহাকে সম্ভব কাঁরয়া তোলে। 

কেবলমাত্র পশঁথপন্রে বা কাব্যে-গানে নহে, ভাবষ্যতে জগতের সর্বক্ষেত্নেই 
পুরুষমানূষকে একথা স্বীকার কারতেই হইবে মেয়েমানুষও মানুষ! বিধাতা 
তাহাদেরও সেই মানুষের আধলার ও কর্মদক্ষতা দিয়াই পবীথবীতে 
পাঠাইযাছেন! এক পক্ষের সুবিধ "সৎপাদনের জনাই তাহাদের সাম্ট নয়। 

মহাকালই পুরুষজাতিকে এ শিক্ষা 'দিবে। 

'তবে এই কথাই বাঁল-_এর জন্য মেয়েদেরও তপস্যা চাই। ধৈর্যের, সহোর, 
তাগের এবং ক্ষমার তপস্যা । 

মনে কারও না উপদেশ দিতে বাসয়াছি। 

সময়ে যাহা দিই নাই, এখন এই অসময়ে আর তাহা দিতে বাঁসব না। 
শুধু নিজের সমগ্র জীবন দিয়া যাহা উপলাব্ধ কাঁরয়াছি, সেই কথাঁট কাহাকেও 
বাঁলয়া যাইতে ইচ্ছা হইতেছে। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আর কাহাকে বালব ? 
আর কে-ই বা কান দিয়া শুনিবে ? স্ীলোকেরা তো আজও অজ্ঞতার অহঙ্কার 
ও শমথ্য। স্বর মোহে তমসাচ্ছন্ন। তাহারা যেন বিচারব্দ্ধর ধার ধারিতেই 
চাহে না। ভাবনা হয় সহসা যোদন তাহাদের চোখ ফুটিবে, যৌদন বুঝিতে 
শাখিবে ওই স্বর্গের স্বরূপ (রিনা নরক বোধ কার সোৌঁদনের 
পথানর্ণয় আরো শতগুণ 

রানার এরানানি কানা গা বান 
আঁসয়া, এবং আপন জীবন পর্যালোচনা কীঁরয়া এই সিদ্ধান্তে উপনশত 
হইয়াছি, যাঁদ সংসারের মধ্যে থাঁকয়াই জীবনের সর্বাবধ উৎকর্ষ সাধন কাঁরিয়া 
পূর্ণতা অন সম্ভব হয়, তাহাই প্রকৃত পূর্ণতা । 

তেমন “সম্ভব কয়জনের পক্ষেই বা সম্ভব ? প্রতিকূল সংসার তো 
আঘাত হানিয়া হানিয়া সে পূর্ণতার শান্তকে খর্ব কারতে বম্ধ- 

পাঁরকর।...মেয়েমান্ষ মমতার বল্ধনে বন্দ৭'...মায়ের বাড়া নিরুপায় প্রাণী 
আর নাই”, এ তথ্য বুয়া ফেলিয়াই না পুরুষের গড়া সমাজ এতো সাবধা 
নেয়, এতো অত্যাচার কাঁরিতে সাহস হয়! তবে এ বিশ্বাস রাখি, একাঁদন এ 
টির রানার স্মশজাতির পরাধীনতাও 
পরি 1 

শুধু আশা করিতে ইচ্ছা হয়, ভাবষ্যৎ কালের সেই আলোকোজ্জবস দিনের 
মেয়েরা আজকের এই অন্ধকার দিনের মেয়েদের অবস্থা চিন্তা কাঁরয়া একটি 


পধ্বগ লতা ২৮৫ 


দীর্ঘ*বাস ফেলিতেছে, আজকের দিনের মেয়েদের অবস্থা চন্তা কাঁরয়া একাবন্দু 
অশ্রহবিস্জন করিতেছে, আজ যাহারা যজ্ধ কাঁরতে কাঁরতে প্রাণপাত কাঁরল, 
তাহাদের দিকে একট: সম্রদ্ধ দুষ্টিপাত কাঁরতেছে। 
মা সুবর্ণ এসব কথা না লাঁখয়া যাঁদ 1লাখিতাম-_“সুবর্ণ, এবাবংকাল 
আমি তোমার জন্য কাঁদয়াছ_+ হয়তো তুমি আমার হদয়টা শাক 
বুঝিতে । কিন্তু সুবর্ণ আম তো শুধু আমার সুবর্ণর জন্যই কাঁদ নাই, 
দেশের সহস্র সহপ্র সুবর্ণলতার জন্য কাঁদিয়াছি! তাই এই সব কথা। 
তাছাড়া আঁবরত শূক্ক জ্ঞানের চর্চায় কাটাইতে কাটাইতে ভাষাও শনক্ক হইয়া 
গয়াছে, তাই মাঝে মাঝেই মনে হইতেছে, তি ি এত কথা বুঝিতে পাঁরতেছ 
ন বছর বয়স হইতেই তো তোমার বিদ্যাশিক্ষায় হাতি হইয়াছে। আমার দু 
বিশ্বাস হইতেছে, তুমিও নিশ্চয়ই এসব কথা ভাবো, তুমিও কেবলমার নিজের 
কথাই নয়, আরো সহম্র মেয়ের কথা চিন্তা করো । 
আধক আর কি 'লাঁখব, আমার শতকোটি আশশর্বাদ গ্রহণ করো । তোমার 
পাঁরজনবর্গকেও জানাইও। আর যাঁদ সম্ভব হয়, তোমার এই চিরানয্ঞুর মাকে 
_ অন্তত তার মৃত্যুর পরও ক্ষমা করিও। ইতি 
তোমার তা আঃ মা" 


অনেকবার অনেক ঝলক জল গালের উপর গাঁড়য়ে পড়েছে, অনেকবার সে 
জল শুকিয়েছে, এখন শুধু গালটায় লোনাজল শুকিয়ে যাওয়ার একটা 


র অনুভাতি। 
নাকি শুধু গালেই নয়, অসার অনুভূতি দেহমনের সর্ব! 

স্তব্ধ, মৃত্যুর মত স্তব্ধ! 

যেন এ স্তব্ধতা আর ভাঙবে না কোনদোদন। এই স্তব্ধতার অন-সালে 
বহে চলবে অন্তহীন একটা হাহাকার । 

সুবর্ণর মা নিজেকে জানিয়ে গেল, সুবর্ণকে জেনে গেল না। 

সংবর্ণর মা সন্দেহ করে গেল সূবর্ণ এত সব কথা নিয়ে ভাবে কিনা। 

সুবর্ণর মা শুধু আশা করে গেল, হয়তো সংবর্ণ সহস্র মেয়ের কথা ভাবে 
আর 'িছ্‌ নয়। আর কিছু করার নেই। 


৯২] 


দেখলে পারুকে 2" 

সৃবালা তার ভাঙা দাঁতের হাঁস হেসে অভাম্ত ভঙ্গীতে সকৌতুকে বলে, 

'বল শুনি কেমন লাগলো. ?, 
অবাক হয়। | 
আম্বকা যেন আর এক জগং থেকে এসে পড়ে। 

'পারু মানে? পারু কেত 
| 'পারু কে কিগোঃ মেজদার মেয়ে নাঃ এই 
| সুবালাসুন্দরীর ভাইঝি। তোমার সামনে বেরোয় নি 
রী বাব? না বেরোনোই সম্ভব, বড় হয়েছে তো! তা 
মেজবৌ কিছু বললো 2? 

আম্বকা 'বাচন্র একটু হেসে বলে, 'বললেন।' 

সুবালা আশ্বস্ত গলায় বলে, 'যাক, তাহলে সেজদা আমার 'চঠিটার মান 
রেখেছে । মেজদার নতুন বাঁড়র ঠিকানাটা ঠিক জান না তো, কি জানি পেপছয় 
না-পেশছয়, তাই সেজদার “কেয়ার অফে” মেজদাকে একটা চিঠি 'দিয়োছলাম 
তোমার কথা উল্লেখ করে। তা এখন বল বাপু শুনি, কি সব কথা-টথা হলো ? 
আমার তো ইচ্ছে-এ মাসেই লাগিয়ে 'দিই।' 

আঁম্বকা যেন একটু গম্ভীর হয়। 

বলে ওঠে, কী মুশীকল! আপানি এসব কী যা-তা আরম্ভ করলেন! এ 
রকম চালালে 'কন্তু ফের পালাবো ! 

সুবালা শাঁওকত হয়। 

সূবালা বোঝে অবস্থাটা আশাপ্রদ নয়। মেজবোৌ বোধ হয় তেমন আগ্রহ 
দেখায় নি। তা হতে পারে, মানুষটা তো আছে একটু উল্টো-পাল্টা! 
আম্বকাকে যতই ভালবাসুক, মেয়ের সঙ্গে বয়সের তফাংটা মনে গেথে রেখেছে। 
ঠাকুরপোর একটু অপমান বোধ হয়েছে তা হলে। বলতে 'কি একট আশায় 
আশায়ই তো গেল তাড়াতাড়ি! বিয়ের মন হয়েছে, সেটা বুঝতে পারছে 
সুবালা। ভাবে, যাকৃগে-পারু না হোক গে, আমি তোড়জোড় করাছি। কনের 
আবার অভাব ঃ আবার ভাবে, তবে অত বয়সের মেয়ে সহসা পাওয়া যাবে না। 
মেজবৌ ডাকাবুকো- তাই মেয়েকে অতখানি বড় করছে বসে বসে। 

কিন্ত সৃবালা চট করে কিছু বলে না, আস্তে দ্যাওরের মন-মেজাজ বুঝতে 
বলে, 'শোনো কথা, আম আবার কী চালালাম ?" 

'এইসব বাজে বাজে কথা? বিয়ে-টয়ের কথা শুরু করলেই 'কল্তু জেনে 
রাখবেন আমি হাওয়া! 

সুবালা ভয়ে ভয়ে বলে, 'মেজদা- বৃঝি-; 

“দোহাই বৌদি, আপনার ওই মেজদাঁটর নাম আমার সামনে করবেন না।' 
বসোঁছিল, উঠে পড়লো। পায়চাঁর করতে করতে বললো, “আপনার ওই' মেজদা 
আর মেজবৌঁদিকে পাশাপাশি দেখলেই মনে হয় যেন বধাতার একট; নষ্ঠুর 
ব্যাঞ্গের জবলন্ত নমুনা! 

সুবালা অবাক গলায় বলে, শকসের নমুনা 2, 

যাক গে, ও আপনাকে বোঝানো যাবে না। তবে আপনার পৃজনীর় 





সুবর্ণলতা ২৬৭ 


মেজদার বাড়তে চোকবার সৌভাগ্য আমার হয়নি, এইটাই জেনে রাখুন।' 

সুবাজলা হতভম্ব গলায় বলে, তবে যে বললে মেজবৌ কথা বলেছে__ 

হ্যাঁ, বলেছেন, আঁম্বকা একটা জৰালাভরা গলায় বলে, 'রাস্তায় বোরয়ে 
এসে বলেছেন। আর বোশ কিছ জিজ্ঞেস করবেন না আমায় বৌদি! 

“তার গানে, মেজদা তোমায় অপমান করেছে! জেলখাটা আসামী বলে বাঁড় 
ঢুকতে দেয় নি।' আস্তে বলে সুবালা, 'বুঝতে পারাছি আসল কথা-_ 

আম্বকা সহসা স্থির হয়! সামনে সয়ে আসে। বলে: 'আসল কথা 
বোঝবার ক্ষমতা আপমার ইহজাীবনেও হবে না বৌদি! আপনি এতই ভালো 
যে. এসব কথা আপনার মাথাতেই ঢুকবে না। শুধু বলে রাখ, যাঁদ হঠাং 
কোনোদিন শোনেন আপনার মেজবৌঁদি পাগল হয়ে গেছেন, অবাক হবেন না। 
হয়তো শীগ্‌শিরই শুনতে হবে।...আশ্চর্য, আপনার ওই মেজদার মত একাঁট 
শয়তানের কোনো শাস্ত হয় না! না দেয় সমাজ. না দেন আপনাদের ওই 
তগবান।...কছু মনে করবেন না বৌদ, না বলে পারলাম শা। কড় যন্বণা 
হলো দেখে । হছেদজও তো দেখলাম ঠিক বাপের মতন " 

সরে গেল সামনে থেকে, পায়চাঁর করতে লাগলো । একটা জহালাভরা 
গলার আক্ষেপ শোনা গেল, "এইভাবে জীবনের অপচয় ঘটে, এইভাবে এই 
হতভাগা দেশের কত মহৎ বস্তু ধংস হয়! এ পাপেব প্রায়শ্চিন্ত কবতেই হবে 
একাঁদন সমাজকে ।' 

না. অম্বিকাকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করবার সাধ আর মিটলো না সুবালার। 
আম্বকা পায়ে হেটে ভারত দ্রমণ করতে বেরোলো। সবাজা বুঝতে পারছে, 
মুখে ও যতই বলুক 'এই' ভারতবর্ষটাকে একবার দেখতে চাই. দেখতে চাই 
বাংলা দেশের মত হতভাগা দেশ আর কোথাও আছে কিনা", তবু বুঝতে 
পারছে সৃবালা, সেসব দেখেশুনে ফিরে আর আসছে না। ছন্নছাড়। ভ"রেই 
হয়ে যাবে! 

'ওর মা-বাপ থাকলে জীবনটাকে নিয়ে এমন ছানমান খেলতে পারতো 
না ও।' 

অমল্যর কাছে কেদে পড়ে বলোছিল সুবালা। 

অমূল্যর চোখটাও লালচে হয়ে উঠোছিল। 

ভার ভারী গলায় বলেছ্ছিল, "ওটা তোমার ভূল ধারণা! ওর মা থাকলে 
যে তোমার থেকে বোশ ভালবাসতে পারতো, একথা আম 1ব*্বাস কার না। 
ণকন্তু তা তো নয়, মায়ার বাঁধন সবাইকে বাঁধতে পারে না! বদ্ধদেবের কি 
মা-বাপ ছিল না? নদশয়ার নিমাইয়ের ছিল না মা, বো? আসলে এই জগতের 
আঁবচার-অত্যাচার দুঃখ-দূর্দশা দেখে যাদের প্রাণ কাঁদে, তারা পাঁচজনের মতন 
খেয়ে শুয়ে দিন কাটাতে পারে না। ঘরে তিষ্ঠোনো দায় হয় তাদের ৷ মা-বাপও 
বেধে রাখতে পারে না, স্লী-পুত্রও বেধে রাখতে পারে না। তব ভালই হল 
যে একটা পরের মেয়ে গলায় গেথে দেওয়া হয় ন ওর! 

পদেশ দেশ, স্বাধীন পরাধশন, এই সব করেই এইটি হলো ওর" -সুবাঙ্া 
চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, 'এই গাঁয়েই জন্মালো, এই তোমাদের বংশেই 
বড় হলো, কোথা থেকে যে ওসব চিন্তা মাথায় ঢুকলো. ভগবান জ্ানেন।' 

তাছাড়া আর কি বলবে সৃবালা ? 

মানুষের জানার সীমানা ছাড়ালেই বলে 'ভগবান জানেন'। একা সবালা 


৮৮ সুবর্ণলতা 


কেন, সবাই বলে । আর খুব বখন কষ্ট হয়; তখন ভগবানের বিচায়ের দোষ দেয়। 
সুবালাও 'দল। 

আর তার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ মুছতে মুছতে ওই ছন্নছাড়ার যাল্লাকালে 
জোর করে সঙ্গো দিয়ে দিল একগাদা চিখড়ের নাড়ু, 'তিলপাটালী-নারকেলের 
গজা! যা সব একদা আম্বকার বড় প্রিয় ছিল। 

আম্বিকা মূখে খুব উৎসাহ দেখায়। বলে, 'বাঃ বাঃ! চমৎকার! . পথে 
পথে ঘুরবো, কোথায় কি জুটবে কে জানে, যোঁদন কোথাও কিছু না জুটবে 
ওইশুলি বার করবো, আর আপনার জয়গান করতে করতে খাবো! 

থাক, আর আমার জয়গান করতে হবে না। আমার ওপর যে আোমাব 
কত মায়া আছে তা বোঝাই গেছে।' | 

বুঝে ফেলেছেন তো? বাঁচা গেল!' আম্বকা হাসে। তারপর বলে, 
রামকৃষ্ণ পরমহংসের সব চেয়ে বড় ভন্ত বিবেকানন্দের নাম শুনেছেন ১ এক 
সময় তান ঘুরাছলেন পথে পথে, হাতে এক কপর্দকও নেই, মনের জোর করে 
বললেন, “দেখি আমার চেম্টা ছাড়াই খাদ্য আসে কিনা”! এসে গেল। আশ্চর্য 
উপায়ে এসে গেল ! একটা 'মাষ্টর দোকানের দোকানণ স্বপ্ন দেখলো অমূক 
জায়গার এক উপবাসী সাধু এস বসে আছেন, খাওয়াগে যা তাকে চব্যচোষ্য 
লেহা পেয়। কাজেই ঠিক করোছ, তেমন অস্বিধেয় পড়লে সাধু বনে যাব!' 

জোর করে টেনে টেনে হাসে। 

সূবালা রেগে উঠে বলে, “আহা. সাধু বনে যাবে! তুমিই না বল দেশের 
ওই গেরুয়াধারীরাই হচ্ছে সর্বনাশের গোড়া! ওরাই “জগৎ মধ্যে” না কি 
বলে বলে দেশের লোকগুলোকে কৃণ্ড়ের বাদশা করে রেখে দিয়েছে! সবাই পর- 
কালের চিন্তাতেই বাস্ত, ইহকালের কথা ভাবে না! 

“বলি, বলবোও। তবে এক-একজনকে দেখলে ধারণা পালটে যায়। যাক. 
আপনি মন খারাপ করবেন না। আমাদের ধর্মের দেশে “হারিবোল” বললেই 
অন্ন মেলে! 

“তাই তো. ভিক্ষে মেগেই যে খাবে তুমি' সুবালা রেগে বলে, 'তাই ভিটে 
জমি সর্বস্ব 'বাক্করী করে দিলে! 

ওই, ওটাই হচ্ছে সব চেয়ে দূশ্চিন্তার। যে মানুষ িটেমাঁট বেচে চলে 
যায় সেকি আবার ফিরে আসে ? 

অথচ কটা টাকাই বা পেলো? 

সুবালার যাঁদ টাকা থাকতো, নিশ্চয় দিয়ে দিতো । বলতো, 'দেশ বেড়াবার 
জন্যে ভিটে বেচবে তুঁি, আর তাই' আমি দেখবো বসে বসে ?.... কিন্তু ভগবান 
মেরেছেন সুবালাকে! 

অমূল্য সঙ্গে গেল খানিকটা এগিয়ে দিতে। 

সুবালাও এলো গরুর গাড়ির সঙ্গে যতটা যাওয়া যায়। তারপর দাঁড়িয়ে 
পড়ে দেখতে লাগলো যতদ্‌র পর্যন্ত দেখা যায়। 

অনেকক্ষণ পরে যখন উড়ন্ত ধূলোও নিথর হয়ে গেল তখন ফিরে এল. 
একটা দশর্ঘীনঃ*বাস ফেলে আপনমনে বললো, 'বেটাছেলে, কোনো বন্ধন নেই; 
বয়ে করবো না তো করবো না। ঘর ছেড়ে চলে যাবো তো চলে যাবো! ব্যস! 
নিন্দের কিছু নেই। পোড়া মেয়েমানুষের সকল পথ বন্ধ! আমাদের 
যদি বেটাছেলে হতো, সেও বোধ হয় এই রকম হতো। বয়ে করতো না 


নুবর্ণল্তা | ২৮৯ 


সংসারে থাকতো না। মেয়েমানুষ, বল্দীজাত, খাঁচার মধ্যে ঝটপটানি সার ! 


॥১৩ 1 


কিন্তু ঝটপটান ক আছে আর £ 

সমস্ত কটপটান থাঁময়ে ফেলে একেবারে তো নিথর হয়ে গেছে সুবালার 
মেজবৌ। ও যেন এইবার সহসা পণ করেছে, এবার ও 
'সাধারণ' হবে। যেমন সাধারণ তার আর তিনটে জা, 
তার ননদেরা, পাড়াপড়শশ আরো সবাই। 

অপ্রাতবাদে 'কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম মেনে ীানয়ে করছে 
সংসার । 

আর ইচ্ছা যাঁদ প্রকাশই করে তো সেটা হবে 
'সাধারণে'র ইচ্ছা । তাই সুবর্ণ তার স্বামীকে তাক 
নাগয়ে দিয়ে একাঁদন ইচ্ছে প্রকাশ করলো, "পারুলের 
জন্যে একটা পান্র দেখো, এই শ্রাবণেই যাতে বিয়েটা হয়ে যায়। তারপর অগ্রাণে 
ভানু-কানু দুজনের একসঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা" 

প্রবোধ অবাক হয়ে তাকায়। 

তারপর বলে, 'ভূতের মুখে রামনাম! তোমার মুখে ছেলেমেয়ের কথা ?' 

স্বর্ণ হাসে. 'তা ভূতও তো পরকালের চিন্তা করে! 

তারপর হাসি রেখে বলে: 'না ঠাট্টা নয়, এবার তীড়াতাঁড় করা দরকার ! 

সৃবর্ণ কি ওর মা'র ওপর শোধ নিচ্ছে 2 

সুবর্ণ কি রাত্রর অন্ধকারে 'বানদ্র শষ্যা ছেড়ে বারান্দায় বোরয়ে দাঁড়য়ে 
আকাশের 'দকে তাঁকয়ে কোনো এক উজ্জল নক্ষত্রকে উদ্দেশ করে বলে, “ঠিক 
হচ্ছে তো? বল! একেই “পূর্ণতা” বলে? বেশ তাই হোক! শুধু আমার 
সারা জীবনের অন্তর ইতিহাসের কথা গলখব আম বসে বসে ।...লখোঁছ 
কখনো কখনো, টুকরো টুকরো, বিচ্ছিন্ন ।...আস্ত করে ভাল করে লিখবো। 
যারা আমার শুধু বাইরেটাই দেখেছে আর ধক্কার দিয়েছে, আমার সেই স্মত- 
কথার ভিতর 'দিয়েই তাদের- না, মুখের কথায় কখনো কাউকে কিছু বোখাতে 
পাঁর নি আম- আমার আঁভমান, আমার আবেগ, আমার অসাঁহফূতা, আমার 
চেম্টাকে পন্ড করেছে । আমার খাতা-কলম এবার সহায় হোক আমার ।' 

কে জানে বলে কিনা, কি বলে আর না বলে। 

'পাগল' মানুষটার কথা বাদ দাও। তবে দেখা গেল সুবর্ণলতার সেই 
গোলাপশরগ্জা দোতলার ছাতে বারে বারে তিনবার হোগলা ছাওয়া হল, স্বর্ণ 
লতার বাঁড়র কাছাকাছি ডাস্টীবনে কলাপাতা আর মাটির গেলাম খনরির 
সমারোহ লাগল এক এক ক্ষেপে দু-তিনাঁদন ধরে। 

তারপর আদ অল্তকাল যা হয়ে আসছে তারই পুনরাভনয় দেখা গেল 
ও-বাঁড়র দরজায়। 

কনকাঞ্জালর একথালা চালে আজীবনের ভাত-কাপড়ের খণ শোধ করে 
দিয়ে মেয়ে বিদায় হলো আর এক সংসারের ভাত-কাপড়ে পুষ্ট হতে, আর 
জলের ধারা মাঁড়য়ে এসে দুধে-আলতার পাথরে বৌ দাঁড়ালো এ সংসারের 

৯৯ 





২৯০ সুবর্ণলতা 


অন্জলে দাবি জানাতে। 

' দুটো দূশ্যেই অবশ্য শাঁখ বাজলো, উলু পড়লো, বরণডালা সাজানো হলো, 
শুধু ভিতরের সুরের পার্থক্যটুকু ধরা পড়লো সানাইয়ের সুরে । সানাইওলারা 
জানে কখন আবাহনের সুর বাজাতে হয়, আর কখন িসজ'নের। 

তা স্বর্ণলতা তো এবারে একটু ছুটি পেতে পারে ১ বৌরা সেকালের 
দু মাস পরেই ঘুরে এসে মবশুরঘর করতে লেগেছে । পারুল চলে গেছে তার 
নতুন ঘরে, আর অবহেলিত বকুল কখন কোন্‌ ফাঁকে তার খেলাঘরের ধূলো 
ঝেড়ে নিঃশব্দে পারুলের জায়গায় ভার্তি হয়ে গেছে। 

এখন সহবর্ণ না দেখলেও অনেক কাজ সশৃঙ্খলে হয়ে যাচ্ছে। এখন 
বৌরা সব সময়েই বলছে, 'আপাঁনি আবার কেন করতে এলেন মা, আমাদের বলুন 
নাকি করতে হবে। 

অতএব সবর্ণর তার খাতার পাতায় কলমের আঁকবুূকি কাটবার অবকাশ 
গ্‌ | স 
কিন্তু কোন্খান থেকে শুরু হবে সেই স্মৃতিকথা) আর সেটা কোন্‌ 
ধারায় প্রবাহত হয়ে আসবে সুবর্ণলতার জীবনের সমাপ্টি-সমদ্রে 2... 

প্রথম যেদিন মুন্তকেশীর শস্ত বেড়ার ঘধ্যে এসে পড়লো সুবর্ণ নামের 
একটা সর্বহারা বালিকা মেয়ে, সেই দিনটাই কি স্মৃতিকথার প্রথম পৃচ্ঠায় ঠাঁই 
পাবে ? 

কিন্তু প্রতিটি দিনের ইতিহাস কি লেখা যায় ঃ প্রাতিটি অনুভূতির ? 


তাছাড়া 

বুত্তকেশী যে সেই ক্লন্দনাকুল মেয়েটার একটা "নড়া” ধরে 'হশ্চড়ে নিয়ে 
যেতে যেতে বলোছলেন, 'ঢের হয়েছে, আর ঠাট করে কাঁদতে হবে না, কান্না 
থামাও দক? মৃখ-চোখের চেহারা হয়েছে দেখ না, মা তো তোমার মরে নি 
বাছা, এত ইয়ে কিসের ৮ এইটা দিয়েই শুরু করবে, না সেই যখন শিন্নীরা 
এঁদক ওদিক সরে গেলে একটি প্রায় কাছাকাছ বয়সের বৌ' পা টিপে টিপে 
এসে ফিসাফস করে বলেছিল, 'আমি তোমার বড় জা হই, বুঝলে ; তোমার 
শাশুড়ীর ভাসুরপো-বৌ। উঠোনের মাঝখানে যে পাঁচিল দেখছো, তার 
ও1দকটা আমাদের। আসতে দেয় না, এই বিয়ে-বাঁড়র ছ্‌তোয় আসার হুকুম 
মিলেছে। তা একটা পথ আছে"_বলে হাদিস 'দিয়োছল 1সশড়র ঘূলঘূলি 'দয়ে 
কি ভাবে যোগাযোগ হতে পারে। 

ছাদের 'সিপড়র সেই ঘুলঘলি পর্যন্ত চোখ পেশছত না তখন সবর্ণর, 
তাই ঠিক তার নীচেটায় দুখানা ইট এনে পেতেছিল। তার উপর দাঁড়য়ে চার 
চোখের মলন হতো। সেই' ঘুলঘুলির ফাঁক দয়ে আদানপ্রদান হতো শুধু 
হৃদয়ের নয়, রীতিমত সারালো বস্তুরও। 

কুলের আচার, আমের মোরব্বা, মাথা তেতুল, কয়েখবেল, ফূল্ার, রসবড়া 
অনেক কিছুই । বলা বাহুল্য নিজের ভাগের থেকে এবং প্রায়শই. খেতে খেতে 
তুলে রাখা । সুপার মশলা পান পর্যন্ত। 

সাবেকি বাঁড়র সেই ভাঙা দেওয়ালের অন্তরালে যে বছরগুলো কাটিয়ে- 
ছিল সুবর্ণ, তার মধ্যে মরুভূমিতে জলাশয়ের মত ছল ওই সখীত্ব। আর 
একটু যখন বয়েস হয়েছে, তখন আদানপ্রদানের মাধ্যমটা আর -কুলের আচারের 


পুবর্ণলতা ২৯৯ 


মধ্যেই সীমিত থাকে নি, ঘৃলঘুীলির মাঝখানের একখানা ইস্ট ঠুকে ঠুকে সারে 
ফেলে পথটাকে প্রশস্ত করে নিয়ে সেই পথে পাচার হতো বই। 

নাত সুরা স খেকে রহ দেয়ার হালা! ওর কাজ শুধু ফেরত 
দেওয়া ! 

যোগান দিত জয়াবতাঁ। 

মুস্তকেশীর ভাসুরপো-বোৌ। 

তার বর মুস্তকেশীর ছেলেদের মত নয়। সে সভ্য, মাজত, উদার। তার 
বর বৌকে বই এনে এনে পড়াতো, যাতে বোয়ের চোখ-কান একটু ফোটে। 

বলেছিল তাই জয়াবতাঁ। 

বলোছল, “দনের বেলা সবাইয়ের সামনে তো পড়তে পারি না, লকয়ে 
রাস্তিরে। তুই বই পড়তে ভালবাঁসস শুনে, ও তো আর একটা লাইব্রেরীতেই 

হয়ে গেছে। হেসে বলেছে, তোমাদের সেই ঘুলঘুল-পথেই পাচার 
কোরো ।, 

জয়াবতীর বয়েস তখন তেরো-চৌম্দ, জয়াবতীর বয়ে হয়েছে তিন বছর, 
তাই বরের গ্প আছে তার। আর সেই গল্পেই তার উৎসাহ । 

জয়াবতাঁর মুখে বরের গঞ্প শুনে শুনে স্পন্দিত হতো স্বর্ণ, আর 
ভাবতো, আশ্চর্য! এরা একই বাঁড়র! 

বিয়ের পর একটা বছর অবশ্য কড়াকড়িতে রাখা হয়েছিল সুবর্ণকে, বৌকে 
নিজের কাছে নিয়ে শুতেন মুস্তকেশী। বাপেরবাঁড়র বালাই তো নেই, কাজেই 
'বরবসতের প্রশ্নও নেই। নচেৎ একটা বছর তো সেখানেই থাকার কথা। 
এক বছর পরে যখন সুবর্ণ সেই 'পরম আঁধকার' পেল ?...রাতের অধিকার ! 

সুবর্ণ কি সেই পরম সৌভাগ্যকে পরম আনন্দে নিয়েছিল ? 

সে ইতিহাস কি লেখার ? 

লিখে প্রকাশ করবার ? 

কলম হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ ভেবেছে সুবর্ণ, তারপর আস্তে আস্তে 
কলম নামিয়ে রেখেছে। 

তারপর জয়াবতীর কথা 'দয়েই শুরু করেছে। 

জয়াবতশ বলতো, গোড়ায় গোড়ায় ভয় করে রে, তারপর সয়ে যায় । আর 
দেখ্‌ এ সংসারে ওই লোকটাই তো একমাত্র আপনার লোক, ওর জন্যেই তাই 
প্রাণটা পড়ে থাকে। দোখস তোরও হবে।' 

সুবর্ণ বলতো, 'আহা রে, তোমার বরাঁটর মতন কিনা ?, 

সংবর্ণর সেই ছেলেমানূষ ভাসূরের উপর শ্রদ্ধা ছিল, ভালবাসা ছিল, 
সমীহ ?ছিল, জয়াবতীর সঙ্গে সখীত্বের সূত্রে ঠিক 'ভাসুরও ভাবতো না ষেন, 
বাম্ধবীর বর হসেবেই ভাবতো ! 

সুবর্ণরা যতাঁদন সেই. পুরানো বাঁড়তে ছিল, জীবনের নঈরেট দেওয়ালে 
এই একটা ঘুলঘাল ছিল তার, কিন্তু সে ঘুলঘ্ীলও বন্ধ হয়ে গেল! 

ভাসুরপো আর দ্যাওরদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি মামলাবাঁজ করে শেষ পর্য্ত 
বাড়ির অংশের টাকা ধরে নিয়ে আলাদা বা ফাঁদলেন মক 

সঙ্গে দেখা হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল সুবর্ণলতার। 

অনেক অনেক দিন পরে আবার সে পথ খুলোছিল সংবর্ণলতা, কিন্তু তখন 

আর সেই আনন্দময় জয়াবতীর দেখা মেলে নি। 


জিত, স্বর্ণা 


: জয়াবতী তখন তান সাদা সি্শখটার লজ্জায় মুখ তৃলতো না, মুখ 
খুলতো না। 

তব্‌ আজীবন যোগসূত্র আছে। বাইরের না হোক হদয়ের। 

তাই সুবর্ণপতার স্মতিকথা শুরু হলো সেই 'ঘুলঘ্বাল' পথে আসা 
একমঠো আলোর কাহিন? নিয়ে। 

জয়াঁদ ঘরে-ফিরে কেবল বরের কথা বলে। বর কি রকম দুজ্টূমি করে 
রাগায়, কেমন এক-এক সময় বৌয়েব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বৌকে বড়দেব 
বকুনি থেকে বাঁচায়, আবার জয়াদির বাপের বাঁড় যাবার কথা উঠলেই কেমন 
নুখভারী করে বেড়ায়, কথা বলে না, এই সব। 

ওর সঙ্গে আমার কোনটাই মেলে না। 

আমার 'বাপের বাঁড়' বলতে কিছু নেই। আর দোষ ঢাকা 2 বরং ঠিক 

। মায়ের কাছে 'ভালো ছেলে' নাম নেবার তালে আমার বর কেবল 
আমার দোষ জাহির করে বেড়ায়। দেখে তো মা ওতেই সব থেকে সন্তুষ্ট 
হন। 

তা বেশ, করো তাই। 

মায়ের সুয়ো হও। 

কিন্তু সেই মানুষই যখন আবার বৌকে আদর করতে আসে? রাগে 
সর্বশরীর জলে যায় নাঃ? আদর? আদর না হাতি! ইচ্ছে হয় ছে ঘর 
থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে যাই! নয়তো চলে যাই ছাতে! ঠান্ডা হাওয়ায় 
পড়ে থাক 'একলা ! 

£, কী শাস্ত, কণ শাস্তি! 

আচ্ছা জয়াদর বরও কি এই রকম ? 

তাই কখনও হতে পারে 2 হলে জয়াঁদ অমন আহ্যাদে ভাসে কি করে? 
আমার নিশ্চিত বিশ্বাস ওর বর সভ্য ভদ্দু ভালো । 

হলদে হয়ে যাওয়া পুরনো খাতার একটা পাতায় এইটুকু লেখা ছিল, 
সেই লেখার দিকে তাঁকয়ে তাকিয়ে ভাবছিল স্বর্ণ” কী বয়েস 'ছিল ওই 
মেয়েটার ১ অথচ সে কথা কেউ ভাবোন। বরং শাশুড়ীর বান্ধবীরা এসে 
শ্ষিসাফস করে কথা কয়েছেন, আর তারপর গালে হাত দিয়ে বলেছেন, "ওমা 
তাই নাক? বোৌ' তা হলে হুড়কোঃ তাছেলের বিয়ে দিয়ে হলো ভাল 
তোমার !' 

মেয়েরাই ছেলেদের শন্রু। 

গৃহিণী মেয়েরা যাঁদ এতটুকু সহাননভূঁতিশীল হতো, হতো এতটুকু মমতা- 
ময়ীী, হয়তো সমাজের চেহারা এমন হতো না। তা হয় না, তারা ওই অত্যাচারী 
পদরুষসমাজের সাহাষ্ই করে। যে পুরুষেরা 'সমাজ-সৌধ' গঠনের কালে 
মেয়ে জাতটাকে ইন্ট পাটকেল চ্‌নস:রককি ছাড়া কিছু ভাবে না। হ্যাঁ” গাঁথুনির 
কাজে যথ্ন যেমন প্রয়োজন, তখন সেই ভাবেই ব্যবহার । 

বেওয়ারিশ বিধবা মেয়েগুলোর দায়দায়িত্ব কে নেয়, তাদের ভাত-কাপড়ের 
ভার! মারো তাদের জ্যান্ত পণড়য়ে, মিটে যাক সমস্যা 

দেশে মেয়ের সংখ্যা বেশ, পুরুষের সংখ্যা কম। করুক এক-একটা 
পুরুষ গণ্ডা গণ্ডা বিয়ে, ঘুচুক সমস্যা। হয়তো এই দেশেই আবার কালে- 
ভাঁবষ্যতে এমন দিন আসবে যে বদনে যাবে পালা, তখন হয়তো ওই সমাজ- 


গুবর্ণলতা ২৯৩ 


পতিরাই নির্দেশ দেবে...সব মেয়ে দ্রৌপদশ হও সেটাই মহাপন্ণ্য। 

একদা বাল্যবিবাহের প্রয়োজন ছিল, তাই মেয়ের বাপের কাছে প্রলোভন 
বছোনো ছিল, কন্যাদান করে নাকি তারা পৃথিবশদানের ফল পাবে, পাবে 
গৌরাঁদানের।...বিপরীত চোম্দপুরদুষ নরকম্থ! 

অর্থসমস্যা আর অশ্নসমস্যার চাপে কন্যাদানের পৃণ্যলাভের স্পৃহা মুছে 
আসছে সমাজের। অতএব এখন আর চৌন্দপ্রুষ নরকস্থ হচ্ছে না। হয়তো 
বা এমন দিন আসবে যৌদন এই সমাজই বলবে, “বাল্যবিবাহ কদাচার, বাল্য- 
ববাহ মহাপাপ।, 

কোথায় কোন্‌ দেশে নাঁক খাদ্যসমস্যা সমাধান করতে মেয়ে জন্মালেই 
তাকে মেরে ফেলে, পাছে তারা দেশে মানুষ বাড়ায়। আবার এদেশে বাঁজা 
হওয়া এক মস্ত অপরাধ, 'শতপত্নের জননী' হতে উৎসাহ দেওয়া হয় মেয়েদের। 
কে জানে আবার পালাবদল হলে এই দেশেই বলবে কিনা 'বহুপ্রবতণকে 
ফাঁসিতে লটকাও 1, 

মেষেদের নিয়েই যত ভাঙচূর। 

অথচ এমন কথার কৌশল চতুর পুরুষজাতটার যে: মেয়েগুলো ভাববে, 
'এই ঠিক ধর্ম! এতেই আমার ইহ-প্রকালের উন্নাতি'! 

পাঁত পরম গুরু! 

স্বামীর বাড়া দেবতা নেই! 

ধোঁকাবাজ! ধাস্পাবাজি ! 

কিন্তু কতকাল আর চলবে এসব? চোখ ফি ফুটবে না মেয়েমানুষের 2 

কে জানে, হয়তো ফুটবে না! অথবা ফুটলে ওই চতুর জাতটা নতুন আর 
এক চালের আশ্রয় নেবে। হয়তো 'দোহপদপল্লবমুদারমে'র বাণী শুনিয়ে 
শৃনিয়েই মেয়েদের ওই ঘাঁনগাছেই ঘ্বারয়ে নেবে! 

বোকা, বোকা, নীরেট বোকা এই জাতটা, তাই টের পায় না, অহরহ তাকে 
[নিয়ে কী ভাঙচুর চলছে! 

ভাবছে, আহা আম কা মূল্যবান। আমায় ভালবাসছে, আমায় পাঁজ্য 
করছে, আমায় সাজাচ্ছে। 

আমার দেহটা যে ওর সোনা মজৃতের সিন্দুক তা ভাব না, আমার সাজ- 
সঞ্জা যে ওর এ*্বর্ষের বিজ্ঞাপন তা খেয়াল কাঁর না, আমি গহনা-কাপড়ে লুয্ধ 
হই, ভালবাসার প্রকাশে মোহিত হই। ছ ছি! সাধে বলাছ একের নম্বরের 
বোকা! 


॥ ১৪ ॥ 


গার তাঁতনী এসেছে তাঁতের শাঁড়র বোঁচকা 'নয়ে। 'ভালো ভালো সমলে 
ফরাসডাঙার শাড়ি নিয়ে গেরস্তর বাঁড় বাঁড় ঘুরে 
ছু] বেড়ানো কাজ ারর। উত্তর কলকাতা থেকে মধা 
কলকাতা পর্যষ্ত সব্ত তার অবাধ গাত। সকলের 
| | অল্তঃপুরের খবর তার জানা। 
ও | অনেক বাড়িতেই তার যাতায়াত। মু্ত- 
ক কেশীর সংসারেও শাঁড় যৃগিয়ে এসেছে বরাবর_ 
. 1 [বয়েখাওয়ায়, পৃজোয়। গার যে বাজারের থেকে দাম 
| বোঁশ নেয় সে কথা সকলের জানা, মুন্তকেশী তো মুখের 
উপরেই বলেন, "গলায় ছুরি দিচ্ছিস যে গার ১ কাপড়খানা বন্ড পছন্দ হয়েছে 
বুঝেই বুঝি-মোচড় 'দিচ্ছিস!' তবু সেই বোশ দামেই নেনও। কারণ আরও 
এক কারণে সবই গারর প্রশ্রয় আছে। 
আরও একটা ব্যবসা আছে 'গাঁরর। 
সেটা হচ্ছে ঘটকশীগাঁর ! 
কাপড় যোগানোর সরে গর বহু সংসারের নাড়ীনক্ষত্রের খবর রাখে 
বলেই কাজটা তার পক্ষে সহজ। 
তবে ইদানীং যেন সে ব্যবসায় কিছ: িন্টিৎ িমে পড়েছে। 
ঘটক দিয়ে বিয়ের সম্বন্ধ করতে কেউ আর তেমন গা করে না। সবাই 
স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে, নিজেরাই চেনাজানার সূত্র ধরে কিংবা কাজকর্মের 
বাঁড়তে দেখাশোনার সূষোগ ধরে বিয়ের সম্বন্ধ গড়ে ফেলে, কারণ ঘটকীরা 
নাকি মিছে কথা কয়। 
শোনো কথা! 
[মছে কথা নইলে বিয়ে হয় ? 
'অদ্যোভক্ষ্যকে শাঁসালো, আর আবলুশ কাঠকে চাঁপাফুল বলতে না পারলে 
আবার ঘটকালির মাহাত্ম্য কি ? | 
কথায় বলে 'লাখ কথা' নইলে বিয়ে হয় না। তা সেই লাখ কথায় দশ-বিশ 
হাজার অন্তত মিছে কথা থাকবে না? যা সাঁত্য তাই যাঁদ বলে' তা হুলে ঘটক 
বিদায়টা ক মুখ দেখে দেবে লোকে 2 কিন্তু লোকে যেন আর বৃঝছে না সে 
কথা! কাজেই াঁরর "দ্বিতীয় ব্যবসা কিছু মে! 
ঢমে পড়েছে, তবু শাঁড়র বস্তা নামিয়ে পা ছাঁড়য়ে বসে দোস্তার কৌটো 
খুলতে খুলতে শির বলে, 'সেজবৌঁদদি ছেলের বিয়ে দেবে না নাক গো? 
তোমার বড় খোকার বয়েসে যে সেজবাবু দু ছেলের বাপ হয়োছল গো! 
নামে নামে মিলি আছে বলে গিঁরবালার সঙ্গে গিরি তাঁতিনীর যেন 
রঙ্গরস বেশি। 
তাছাড়া ইচ্ছেমত দূ-পাঁচখানা শাড়ি কিনে ফেলার ক্ষমতা গিঁরবালার 
যেমন আছে, ছোটবৌ বিন্দুর তেমন নেই, তাই গিরবালার ঘরের সামনেই 
তাঁতিনী গিরির পা ছড়িয়ে বসার জায়গা । 
বন্দু যে এক-আধখানা নেয় না তা নয়, তবে সেও তো সেই 'বাঁকতে'। 





সুবর্ণলতা 


গিরিবালার অনেকটাই নগদ । 

অতএব গার ভাঁতনীর রসের কথা এখানেই ঢেউ তোলে বোঁশ। 

সেজবাবুর অতাঁত ইতিহাস তোলার সঙ্গে এমন একটি মৃখভঙ্গাশ করে 
গিরি, যা নাকি নিতান্তই অর্থবহ । 

শিরিবালাও তেমাঁন একি অর্থবহ কটাক্ষ করে বলে, 'ওতে তো আর 
পয়সা লাগে না লো, হলেই হলো। একালে দিনকাল খারাপ, বৌ এসে কি খাবে 
নৈটা আগে চিন্তা করতে হবে।' 

'ত হবে বৌক!' ০৮০4১০১৮০৬৭ পুন্পন 
ধখন সব্ধস্ব গ্রাস করে রেখেছে! তা তুম বুঝি মেজবৌদাদর পাঠশালে 
পড়েছ 2 তানও তো ওই কথা বলে বলে এই অবাঁধ ছেলে দুটোর বে তুলে 
রেখোছিল। কা সৃমতি হলো, জোড়া বেটার বে দিল।, 

ারবালা সহাস্যে বলে, “ঘটক বিদেয় মোটা পেয়েছো তো?' 

গিঁরর ঘটকালিতে অবশ্য বিয়ে হয়ান, তবু বিয়ের বখাঁশশ বাবদ বেশ 
কিছু বাঁগয়েছে গার, তাই সেও সহাস্যে বলে” 'তা হক কথা বলবো বাপ, 
মেজাগন্নশর হাতখান 'দরাজ আছে।' 

গারবালা সহসা প্রসংগ পাঁরবর্তন করে বলে ওঠে, 'তা বোঁচকার গিট 
খোলো! দেখি কি এনেছ! নতুন ধরনের কিছু আছে ?, 

পারি কবে নতুন ছাড়া পুরনো মাল এনে ঢুকেছে গো--, বলে সর্ব 
ভঙ্গঈতৈ বোঁচকা খোলে গিরি। 

মৃন্তকেশীর আমলে মোটা তাঁতের শাড়ির চাঁহদাই বেশি ছিল, এখন 

কিন্তু মুস্তকেশী ? 

1তাঁন গত হয়েছেন? তাই তাঁর আমলও বগত ? 

না, দেহগত হিসাবে গত হনানি অবশ্য মুস্তকেশী, তবে তাঁর আমলটা যে 
একেবারেই গত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নাস্তি। 

গার ঢুকেই একবার চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করেছিল, 'বৃড়ী 
কোথায় ?, 

গাঁরবালা ভ্রভঙ্গশর সাহায্যে উত্তর দিয়েছিল, 'আছেন 'নজের কোটরে। 

বোঁচকার গিট খোলে গার, কিন্তু আবরণ উল্মোচন সহজে করে না। 
তাতে সস্তা হয়ে যেতে হয়। 

হাই তুলে বলে, 'এক ঘাঁট জল খাওয়াও 'দাঁক আগে। রোদে এসে শরার 
জবলে যাচ্ছে। 

গগারবালা তাড়াতাঁড় উঠে দালানের কু'জো থেকে এক ঘাঁট জল গাঁড়য়ে 
দেয়। 


শিরি এক নিঃশ্বাসে জলটা খেয়ে আচল দিয়ে বাতাস খেতে খেতে বলে, 
'বড়মানূষ হয়ে সেজবৌদাদ কেপ্পন হয়ে গেছে। আমাকে জল "দিয়ে পান 
গদতে হয় তা আর মনে নেই! 

গাঁরবালা ভাড়াতাঁড় মেয়েকে ডেকে পানের আদেশ দেয়, গার ধীরে- 
সুস্থে বোঁচকা খোলে। 

নয়নমনোহর শাঁড়র গোছা-কল্কাপাড়, তাবিজপাড়, রেলপাড়, 
এলোকেশশ পাড়, সি'থেয় 'লিশ্দুরপাড়, পাঁতিসোহাগপাড়, বসঞ্তবাহারপাড়। 


২৯৫ 


২৯৬ সুবর্ণলতা 


সাদা ছাড়া রাঁঙউনের দিকেও আছে-_কালাপানি, বৌপাগলা, ধূপছায়া, ময়র 
কণ্ঠী। শুধু লা আর কালো সুতোর টানাপোড়েনেই লানান বর্ণের বাহার। 

দাম বেশ দিয়েও এসব শাঁড় নিতে হয়॥। দোকান থেকে কেনা মানেই 
তো পুরুষের পছন্দর ওপর 'নর্ভর, আর সে পছন্দ যে কেমন তা তো মেয়ে- 
মানুষেরা হাড়ে হাড়ে জানে। তার ওপর ফেরা-ঘোরার কথা বলজেই মারমুখী 
হয়ে ওঠেন বাবুরা। তা ছাড়া গার বাকিতে দেয় বজে লুকয়েও কেনা যায় 
শু এসব ক কম স্মাবধে 2? পরমুখাপেক্ষী জাতের জবালা যে 
কত | 


তা গিরি এসব খুব বোঝে, তাই জায়গা ধুঝে মোচড় দেয়, জায়গা বুঝে 
উদারতা দেখায়। 

ও খদ্দেরের কাছে অনায়াসে বলে; “ও কাপড়ের দাম তোমায় দিতে হবে 
হী নল উস বলে, 'বোঁদদির ফরসা রঙে জেল্লা 
যা খুলবে, এ কাপড় তোমায় একখানা না পরাতে পেলে আমার .জেবনই 
মিথ্যে। দামের কথা ভেবো না বৌদাঁদ, তোমার শাউড়ীকে বোলো, গার 
আমায় অমান দিয়ে গেছে। এইভাবেই গছায় সে। 
কারবালা প্রসমমহণ বলে, কাপড় তো বেশ এনেছো, এখন দর করো 

টা 

'দর! তোমার স্গে আবার দরাদার কি গো সেজবৌদিদি, আজ নতুন 
হলে নাঁক 2, 
িটিসিত রি াদিযালরি টির: পছন্দ করতে ভরসা 

'শোনো কথা! তোমার আবার নির্ভরসা!' শির অবহেলায় বলে? 'বড়- 
মানুষের শিন্নী, ট্যাকার গোছা ফেলো, কাপড়ের গোছা পছন্দ করো! সাত- 
হাতি আট-হাতি সব রকমই আছে? খুকীদের জন্যে নাও 'দিকি দৃ-পাঁচখানা। 
কই গো খুকীরা_- 

গিরিবালা তথাপি কাপড় নাড়তে নাড়তে দাম জিজ্ঞেস করে, এবং জবাব 
পাবার পর অপ্রসম্ন গলায় বলে, “দেবে না তাই বল! দেবার ইচ্ছে থাকলে 
এমন দর হাঁকিতে না! বাঁল ও বাঁড়র 'তিন-তনটে বিয়েতে তো বিস্তর লাভ 
করেছ। সে হল বড়মানুষের ব্যাপার, এই গাঁরবের সঙ্গে একট: দয়া-ধর্ম করে 
কাজ করো না! 

গার দরাজ গলায় বলে, 'তা মধ্যে বলবো না, অনেক কাপড়-চোপড় 
1নয়েছে মেজবোদিদি, তবে মানুষটার প্রাণে যেন সুখ নেই! 

গ্িরিবালা ভিতরের কথার আশায় গলা নাঁময়ে চঁপচূপি বলে, “ওমা যাঁর 
এত সুখ সম্পান্তি, তাঁর আবার সখের অভাব! 

গিরি বলে, 'তা একো একো মানুষের অকারণ দুঃখ ডেকে আনা রোগ 
যে। মেজবৌদাদর তো সে রোগ আছেই। তাছাড়া মনে হলো বৌরা সুবিধে 


সিটিনীরিনিতা রর হিজর 
পদ্ধাত, অথবা কারো ঘরে বৌ “সুবিধে না হওয়াটা ষেন অসম্ভব ঘটনা, তাই 
ঘেন আকাশ থেকে পড়লো । 

ওমা সে কি কথা! তবে যে গনলাম খুব ভালো বৌ হয়েছে! 


সবের্ণলতা ২৯৭ 


"ওগো দেখতেই ভালো । ওপর ভালো, ভেতর কালো। তা নইলে ঘরুণী 
শগল্লশ দাস) মাগী এক্ষুীণ বৌদের হাতে সংসার ছেড়ে দেয় ! 

"ওমা বল কি? তাই বুঝি?" 

'তাই তো--" গিরি দুই হাত উল্টে বলে, 'তবে আর বলাছ কি! মাগী 
নাকি এখন রাতাদিন খাতা-কলম নিয়ে সেরেস্তার মতন নেখা নিখছে। 

'তা এসব কথা বললে কে তোমাকে ?' 

'কে আর! মেজদাদাবাবূই রাস্তায় এল সঙ্গে সঙ্গে' নানান দুঃখের 
গাথা গাইল। বৌরা *বশূর বলে তেমন মান্যমান করছে না, শাউড়ীকে দেখে 
না, আরো একটা মেয়ে ডাগর হয়ে উঠলো, এই সব! 

কথা ক্রমশই গভগর হয়ে আসে, গিরিবালা ইত্যবসরে খানাঁতনেক শাড়ি 
পছন্দ করে ফেলে এবং বাঁকির প্রশ্নও ওঠে না। তবে ও-বাঁড়র মেজবৌদাঁদর 
রিনি লগাজিাররলাহ্ন দারানিররার 

। 

এই সময় ঘর থেকে মুস্তকেশীর ভাঙা-ভাঙা কণ্ঠস্বর শোনা যায়, শগরি 
এসোৌছস নাক? অ শার!..সেই থেকে গলা পাচ্ছ মনে হচ্ছে, এদিকপানে 
উশকও দিচ্ছিস না দেখাঁছ!' 

ওই হলো জবালা'_-গির খাদের গলায় 'বিরান্তটা প্রকাশ করে গল। 
ডে 'এই যাই গো খ্াঁড়, এখানে সেজবৌঁদাঁদ কাপড় িনলো পাঁচখানা, 

'পাঁচখানা! পাঁচখানা কাপড় কিনলো সেজবৌমা! তা কিনবে বৌক! 
সোয়ামীর পয়সা হয়েছে-_ 

মরণ বুড়ী! বলে গার ও-ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, আর তৎক্ষণাং 
তার কাংস্যকণ্ঠ ধ্বানত হয়, 'কী সববোনাশ, এ কী হাল হয়েছে তোমার খাঁড়! 
ঞাঁ, এ যে মাঁড়পোড়ার ঘাটে যাবার চ্যাহারা! বাঁল কবরেজ বাদ্য দেখাচ্ছে 
বেটা বেটার বো 2" 

এই। 

এই হচ্ছে গিরর নিজস্ব ভঙ্গী। আর তাই সবাই গিাঁরকে ভয় করে। 

গার যে অন্তঃপূরের বার্তা রাখে। তার বাড়া ভয়ঙ্কর আর কি 
আছে? 

মুস্তকেশীর ছেলে, ছেলের বৌরা যে দেখছে না, এ খবর রাঁটয়ে বেড়াবে 
নাসে2 তাই শিরবালাও তাড়াতাঁড় শাশড়ীর ঘরে এসে ঢোকে। 

মৃন্তকেশণ নীচ গলায় কিছু একটা বলছিলেন, বৌকে ঢুকতে দেখে 
বেজার মূখে চুপ করেন। শুধু চোখের ইশারায় কি যেন বাঁঝয়ে বদায় 
সম্ভাষণ করেন। 


তা গার তাঁতনী ইশারার মান রাখে। 

পরাদনই এ বাড়িতে এসে হাজির হয়। 

এবং সাড়ম্বরে ঘোষণা করে, 'কাপড় গছাতে আসান গো মেজবোদিঁদ, 
এসোঁছি একটা বারা নিয়ে।' 

সুবর্ণলতা বোরিয়ে আসে, প্রশন করে না, শুধু সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায়। 
গার বলে ওঠে, 'বাঁল বূড় শাউড়র খবর নাওঁন কতাঁদন ?, 


২৯৮ সুবর্ণলতা 


' সুবর্ণ অবাক গলায় বলে, 'কেন১ ইনি তো মাঝে মাঝেই-_ 

"হ্যাঁ, তা শুনলাম।' শারি টিপে টিপে বলে' 'মেজদাদাবাবু পেরায় পেরায় 
যায়! তবে বেটাছেলের চোখ কি তেমন টের পায়! বুড়শর তো দেখলাম শেষ 
অবস্থা ।' 

'তার ম্লানে 2" 

'মানে আর কি, রন্তু আঁতিসার।' শিরি যেন যুদ্ধজয়ের ভঙ্গী নেয়, ও 
আর বেশিদিন নয়। আর মরতে তো একাঁদন হবে গো! চেরকাল কি থাকবে £ 
বয়সের তো গাছ-পাথর নেই, কোন্‌ না চার কৃঁড় পেরিয়েছে। তা আমায় 
[মনুতি করে বললে, মেজবৌমাকে একবার আসতে বাঁলস গার, আর আসবার 
সময় নাঁকয়ে পাকা দেখে দুটো কাশণর প্যায়রা আনতে বাঁলস।' 

'পেয়ারা !' সুবর্ণ বলে, "রন্ত-আতসার বললে না?" 

'আরে বাবা, হলো তো বয়েই গেল। বাল খাওয়ায় সাধধান করে 
শাউড়শীকে আরো বাঁচিয়ে রাখতে সাধ! না তুই পারবে? মহাপ্রাণীর খেতে 
ইন্ছ হয়েছে, দেওয়াই দরকার। বাঁচবার হলে ওতেই বেচে থাকবে :: 

সুবর্ণ অবাক হয়ে তাকায়। 

সংবর্ণ ভাবে, এরা কত সহজে সমন্যার সমাধান করে ফেলতে সক্ষম! 
রাখে কেম্ট আর মারে কেন্টর তথ্যে এরাই প্রকৃত বিশ্বাসী । 

সুবর্ণর ভাবার অবসরে গার আর একবার বলে, “তা প্যায়রা নে যাও 
আর না যাও, ষেও একবার! বুড়ী “মেজ্গবৌমা মেজবৌমা" করে হামলাচ্ছে 

'যাবো, কালই যাবো। 

গার হম্টচিত্তে বলে, 'আঁবাশ্য আভই একটা কিছ ঘটে যাবে তা বলাঁছ 
না। তবে এযাতা যে আর উঠবে না বূুড়ী, তা মালুম হচ্ছে? 

গিরি চলে যায়, সুবর্ণ কেমন অপরাধণর মত বসে থাকে। বাস্তবিক, বড় 
অন্যায় হয়ে গেছে। বহঁদন যাওয়া হয়নি বটে। সেই কতাঁদন যেন আগে 
নিজেই এসোছলেন মুক্তকেশ, সেই শেষ দেখা । 

মেজবৌমাকে দেখতে চেয়েছেন মূস্তকেশ আর সে খবর জানিয়েছেন। 
জগতে কত অন্ভুত ঘটনাই ঘটে! 

মৃন্তকেশী সংবর্ণলতার প্রাতিপক্ষ। 

মন্তকেশণ সুবর্ণলতাকে বহুবিধ বন্বাণার স্বাদ যুঁগিয়ে এসেছেন চিরাদিন, 
তব মান্্ুকেশী সংবর্ণকে দেখতে চেয়েছেন শুনে যেন মনটা বিষ বেদন্যাবধুর 
হয়ে উঠলো। 

হয়তো ব্যাপারটা হাস্যকর, তধ্‌ 'নিভেজাল। 

শঘু যাঁদ শান্তমান হয়, তার জন্যেও বুঝি মনের কোনোখানে একটা বড় 
ঠাঁই থাকে। রাবণের মৃত্যুকালে রামের মনস্তত্ব এ সাক্ষ্য দেয়। 


বহ:কাল হলো এ বাঁড়তে আসেনি স্বর্ণ । 

আগে মাঝে মাঝে ভাসরাঁঝন্যাওরবিদের বিয়ে উপলক্ষে আসা হতো, 
ইদানশং যেন বিয়ের হূল্লোডটাও কমে গেছে। তাই আর হয় না। 

কিন্তু এসে যে মৃন্তকেশীকে সাত্যই একেবারে মৃত্যুপষযায় দেখতে হবে 
একথা কে ভেবেছিল? সংবাদদাতী তো আশ্বাস দিয়েছিলো-_'আজ-কালই 
আর কিছু হচ্ছে না! 


স্বর্ণলতা ২৯৯ 


কিন্তু হঠাৎ গতরান্েই নাক অকস্মাৎ কেমন বিকল হয়ে গেছেন 
মৃন্তকেশশ। মুখ দিয়ে ফেনা কাটছিল, পা 
সবাইকে ডেকেছে। রাত্রে তার হেপাজতেই তো থাকেন মুন্তকেশশ। 

ডাক শুনে সবাই এসেছে, ছেলেরা শত-সহশ্রবার 'মা মা' ডাক দিয়েছে, 
মৃস্তকেশণ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছেন, সাড়া দিতে পারেনান। সকাল 
হয়েছে, দুপুর গড়ালো, একই অবস্থা । কবরেজ এসে দরাজ গলায় সবোধকে 
ধলে গেছেন, 'আর কি, এবার কোমরে গামছা বাঁধূন।' 

সবর্ণ এসব জানতো না, সবর্ণ এমানই এসেছল। 

গাঁড় থেকে নেমে গাঁলটুকু হেটে আসতেই হাঁপাচ্ছিল সুবর্ণ। এসে 
বসতেই বিরাজ চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, "ওমা এ ক+, তোমার এমন 
চেহারা হয়েছে কেন মেজবোৌ 2 

সুবর্ণলতা হাঁপ ছেড়ে ওর কথার উত্তর না 'দয়ে প্রশ্ন করলো. 'মা কেমন 
আছেন 2 

“আর থাকারথাক-__. বিরাজ আবার কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলে, 'কবরেজ তো 
বলে গেল রাত কাটে কিনা ।' 

'তা আমাদের ওখানে তো একটা খবরও- 

হঠাৎ গলাটা বৃজে এল সবর্ণর। 

চুপ করে গেল। 

ঘরে যারা ছিল তারা কি একবার ভাবল না, 'মাছের মায়ের পূত্নশোক ! 
অথবা মাছ মরেছে বেড়াল কাঁদে-_' 

তা ভাবলে অসঙ্গতও হবে না। 

তবে মূখে কেউ কিছু বলে না। 

বিরাজই আবার বলে, “দত খবর, আমায় তো দিয়েছে! কিন্তু মার না 
হয় যাবার বয়েস, চার ছেলের কাঁধে চড়ে চলে যাবেন, বাঁন তোমারও যে যাবার 
দাঁখল চেহারা! অসুখ-বিসুখ কিছু হয়েছে নাঁক ? 

'না, অসুখ আর কি!' 

বলে স্বর্ণ এগয়ে যায় মু্তকেশীর দিকে। খুব ধারে বলে, 'না আমায় 
ডেকৌছিলেন 2" 

মূস্তকেশর চোখ 'দয়ে দু ফোঁটা জল গাঁড়য়ে পড়লো । 

দিস নিন চংকার করে 
বলে উঠলেন, 'মুস্ত চলি ? আমায় ফেলে রেখে চলে যাব ? 

মুস্তকেশশ ফ্যালফেলিয়ে তাকালেন। 

হেমাঞ্গিনীর কান্নায় উপাস্থিত সকলেরও যেন কান্না উলে এল। 

এসময় শ্যামাসন্দরীও এলেন একটি পিতলের ঘাঁটি হাতে। খুব কাছে 
এসে বললেন. চন্লামেত্তর খাও ঠাকুরাঁঝ। মা কালীর চন্নামেত্তর ৷ 

বোঝা গেল সবাইকে খবর দেওয়া হয়েছে, শুধু প্রবোধচন্দ্র বাদে। 

সুবর্ণলতা 'নার্নমেষে তাকিয়ে থাকে। 

বোধ কার মনকে মানাতে চেষ্টা করে এ অবহেলা তার প্রাগ্য পাওনা! 

সঃ 

িরিি নু লির গনিন চোখের ইশারায় বোঝালেন 

বুঝতে পেরেছেন, হাঁ করবার চেষ্টা করলেন, পারলেন না। 


৩০০ সুবর্থলতা 


' সুবর্ণ অর একবার কাছে ঝুকে বললো, “মা, আমায় কেন ডেকোঁছলেন ?) 

মূক্তকেশীর চোখ দিয়ে আবার দুফোঁটা জল গাঁড়য়ে পড়লো । চেয়ে 
রইলেন সুবর্ণলতার মুখের দকে। তারপর আস্তে আস্তে ডান হাতটা 
তুললেন, সুবর্ণলতার মাথা অবাঁধ উঠল না হাতটা, স্থালত হয়ে পড়ে গেস 
তারই কোলের ওপর...চোখটা বূজে গেল। 

উনআশাী বছরের তাক্ষ। তীব্র খোলা চোখ দুটো 'চিরাদনের জন্যে ছুটি 
পেলো। 

কিন্তু ছুটি নেবার আগে কোন্‌ কথা জানয়ে গেল তারা £ 

আশীর্বাদ! ক্ষমাপ্রার্থনা ! 


১৫ ॥ 


'বৃযোধসর্গ!, সুবোধনন্দ্ হাসলেন, 'অত বড় ফর্দ করে বসবেন না ভটচাষ 
মশাই। তেমন রেস্তওলা যজমান ষে আপনার আম 
&1 নই, সে কথা আপাঁনও ভালই জানেন। আমার ওই 


ভটচায ক্ষুঞগ্নভাবে বলেন, 'বহু প্রাচীন হয়োছলেন 
| তিনি. চারকাঁড়র সি তাই বলা। 
তাছাড়া তুমি তেমন উপায়শ না হলেও তাঁর আরও তিনি 
নি রোজগারী, নাতিরাও সব কৃতী হয়ে 


সুবোধচন্দ্র বাধা দিলেন, "ওর সবই আম জান ভটচায মশাই, তব আমার 
যা ক্ষমতা, আমি সেই মতই চজবো।, 

তুমি জ্যেষ্ঠ, শ্রাম্ধাঁধকারী-_ 

“সে নিয়মকানুন তো সবই পালন করাছ--' 

'তা জান, তোমার নষ্ঠাকামন্ঠা সবই শুনলাম তোমার কন্যার কাছে। 
এফ্‌গে এতটা আবার সবাই পারে না। 

“ওকথা থাক্‌ ভটচায মশাই, আপাঁন ওই একটা ষোড়শের ফর্দ দন ।' 

“একটা? ভটচায আহত গলায় বলে ওঠেন, "চার ভাই চারটে ষোড়শও 
করবে নাঃ আর নাতরা এক-একটা ৃ 

“আম আমার কথাই বলছি ভটচায মশাই, আপনি বুঝতে পারছেন না কেন 
তাই আশ্চর্য! 

ভটচাষ তবু নাছোড়বান্দা গলায় বলেন, 'জাঁন তোমাদের হাঁড় ভিন্ন, 
তৎসত্বেও মাতৃশ্রাম্ধের সময় একন্র হয়ে করাই শাস্ত্রীয় বিধি। যার যা সাধ, 
তুমি বড় তোমার হাতে তুলে দেবে, তুমি সৌম্ঠব করে- 

সুবোধচন্দ্র এবার হেসে ওঠেন। 

হেসেই বলেন, 'শাস্রশয় বিধিটাই জানেন ভটচাষ মশাই, আর একথা 
জানেন না, “ভাগের মা গঙ্গা পায় না”! কেন আর বৃথা সময় নষ্ট করছেন ? 
আমার ফর্দটা 'ঠক করে দন, সময় থাকতে-+ 

ভটচাষ বিদায় নিলে সুবল এসে দাঁড়ায়। 





গযর্ণঙতা ৩০৬ 


বলে, 'জ্যাঠামশাই, মা একটা কথা বলছেন।' 

মা! 

সুবোধচজ্দ্র একটু নড়েচড়ে বসলেন। সুবলের মার আবার বন্তব্য কি! 

'ঘাটকামান' না হওয়া পর্যন্ত প্রবোধকে আর সুবর্ণলতাকে এ বাড়তেই 
থাকতে হয়েছে, পাড়া-প্রাতিবেশশ জ্ঞাতিগোন্রের এই নিরেশ। 

তাই বকুলকে নিয়ে এ বাঁড়তেই রয়েছে সবর্ণ, ছেলেরা যাওয়া-আসা 
পু এঁদকে তো চাঁপা এসেই গেছে' চন্নন পারুল ওরাও আসবে শ্রাদ্ধের 

| 

সে যাক্‌, ওসব ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুবোধ নেই। সংবর্ণ যে রয়েছে এ 
বাড়িতে, তাও ঠিকমত জানে কিনা সন্দেহ । কাজেই “মা আপনাকে একটা কথা 
বলবেন” শুনে সান্দগধ গলায় বলেন, “ক কথা ! 

সূবল মাঝখানে শিখাণ্ডস্বরুপ থাকলেও সুবর্ণলতার কণ্ঠটাই স্পন্ট 
শোনা গেল, মার চার ছেলে বর্তমান, নাতিরাও অনেকেই কৃতী হয়ে উঠেছে, 
মার তো বৃষোৎসর্গ হওয়াই উচত।, 

সুবোধচন্দ্র অবশ্য তাঁদের বাঁড়র মেজবৌকে কোনাদনই লঙ্জাশশলা মনে 
করেন না, কাজেই এই' স্পম্ট কণ্ঠস্বরে খুব একটা অবাক হন না। তবে বোধ 
কার একট. 'বিচাঁসিত হন। গম্ভীর গলায় আস্তে বলেন, 'উাঁচিত সে কথা জান 
মেজবৌমা, কিন্তু ক্ষমতা বুঝে কথা । আমার ক্ষমতা কম।, 

এবারে সৃবলের মাধ্যমেই কথা হয়, 'মা বলছেন, তা হোক আপানি এগোন, 
আপনার পেছনে সবাই আছে।' 

'আমার 'পিছনে-_” সুবোধচন্দ্রের গলাটা যেন কাঁপা-কাঁপা আর ভাঙা- 
ভাঙা শোনায়, “আমার পিছনে কেউ নেই সবল, শুধু সামনে ভগবান আছেন, 
এইটুকু তোর মাকে বলে দে বাবা। গত'চাল এসব আলোচনা হস -গছে, 
আমার তিন ভাই-ই সাফ জবাব [দিয়ে গেছে, তিরিশ টাকা করে দেবে, ত'র বোশ 
[দতে পারবে না। আমার অবস্থাও তদ্রুপ। কাজেই ও নিয়ে আর- তোর 
মাকে বাঁড়র মধ্যে যেতে বল সবল । 

এটা অবশ্যই বাক্যে যবাঁনকা পাতের ইশারা । 

তন্রাচ সুবর্ণলতা ষবানকা পাত করতে দেয় না। 

হয়তো প্রবোধের এই নীচতার খবরে এখনো নতুন করে বিস্ময়বোধ করে' 
তাই কথা বলতে একটু সময় যায়, আর বলে যখন তখন গলার স্বরটা প্রায় বুজে 
আসার মত লাগে তব্‌য বলে, “সুবল, বল- জ্যাঠামশাই, মার একটা নাতি 
রাখতেই হবে। 

নাত! 

রাখতেই হবে! 

সুবোধচন্দ্র বিব্রত বোধ করেন। 

চিরকেলে পাগলা মানুষটা দি-না-কি আবদার করে বসে! 

কে জানে কি সংকল্প নিয়ে এমন তোড়জোড় করে তাঁর দরবারে এসে 
হাঁজর হয়েছে! মৃহূর্তের মধ্যেই অবশ্য এসব চিন্তা খেলে যায়। পরমুহূর্তে 
সুবোধের কণ্ঠ থেকে প্রায় হাসির সঙ্গে উচ্চারিত হয়, 'রাখতেই হবে! তোর 
লিজা জরি নিযাসাকা রজার দি বল: 

ঢঃ 
ঙ 


৩০৪ স্ববর্থলতা 


, মা নিজেই বলছেন-_. 

বলে সুবল সরে দাঁড়ায়। 

গৃণ্ঠনবতা সবর্ণলতা তার পাশ 'দিয়ে এসে দাঁড়ায়, আর ছেলেকে এবং 
ভাসুরকে প্রায় তাঞ্জব করে 'দয়ে মৃদ7 চাপা স্বরে বলে ওঠে, “সুবল, তুই 
একট অনন্ত ষা তো বাবা-- 

সুবল তুই অনার যা! 

তার মানে ভাসুরের সঙ্গে একা 'নরজনে কথা বলতে চায়! 

এর চাইতে অসম্ভব অসমসাহাঁসকতা আর 'কি হতে পারে? 

সুবোধচন্দ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, কি ষেন বলতে যান। সৃবল চলে 
যায় আস্তে আস্তে, আর স্বর্ণ এগিয়ে এসে ভাসুরের পায়ের কাছে কিছ, 
জানস ফেলে দিয়ে মৃদ্‌ দূঢ়স্বরে বলে, 'এগুলো নিতে হবে আপনাকে এই 
মনাত। আপনার নিজের বলে মনে করে বেচে 'দিয়ে ইচ্ছেমত ভাবে খরচ করে 
মা'র কাজ করুন।' 

সুবোধ ঘেন সাপের ছোবল খেয়েছেন। 

সুবোধ নার্নমেষ দৃম্টতে সেই উজ্জল স্বর্ণখণ্ডগুজির দকে তাঁকয়ে 

হাস্যে বলেন, 'এ তো মিনতি নয় মেজবৌমা, হুকুম। কিন্তু সে হুকুম 

পালন করবার ক্ষমতা আমার নেই মা। তুমি আমায় মাপ কর।' 

গলার মোটা হেলে হার! 

হাতের চুঁড়র গোছা! 

সুবর্ণ সেই বস্তুগুলোর দিক থেকে চোখ 'ফাঁরয়ে বলে, 'এ তো শুনোছ 
স্তীধন, এতে নাকি স্বামী-পৃত্তরের কোনো দাবি থাকে না। তবে আপাতি 

রী 

সুবোধ এবার আরো ভারী গলায় বলেন, 'এ তুমি কি বলছো মেজবৌমা ! 
তোমার গায়ের গয়না বেচে মাতৃশ্রাম্ধ করবো আম? গরীব বলে কি- 

মেজবৌমা মূদুস্বরে বলে, "মায়ের কাজে রুটি থেকে যাবে, আর মায়ের 
বৌরা গায়ে সোনাদানা চাঁড়য়ে ঘুরে বেড়াবে, এটাও তো আনয়ম ! 

আনয়ম। 


সুবোধচন্দ্র যেন একটু চমকান, তারপর একটু হেসে বলেন, “অনিয়ম তো 
জগৎ জুড়ে মা, চন্দ্র-সূর্ষের নিয়মটা আছে বলেই আজো পৃথিবীটা টিকে 
আছে। কিন্তু সেকথা থাক, তুমি এগুলো উঠিয়ে নিয়ে যাও মা। তুমি যে 
[দিতে এসেছিলে, এতেই তাঁর আত্মার তৃপ্তি হয়ে গেছে।, 

'তাঁর হতে পারে, কিন্তু আমাদেরও তো তৃপ্ত শান্তি হওয়া চাই। আপনার 
পায়ে পড়াছ, এটুকু আপনাকে করতেই হবে। মনে করুন এ টাকা আপনার, 
তা হলেই তো সব চিন্তা মুছে যাবে। মার কুপূত্র ছেলেরা টাকা হাতে থাকতেও 
“নেই” বলেছে, সে পাপের প্রায়শ্চন্তেরও তো দরকার। আম যাচ্ছি, এ আর 
আপাঁন অমত করবেন না। যদি অমত করেন, যাঁদ না নেন, তাহলে বুঝবো 
আম “পাঁতিত" তাই-_-”, গলার স্বরটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সূবর্ণর। “আম 
যাই” বলে নীচ্‌ হয়ে গলায় আঁচজ জড়িয়ে একটি প্রণাম রেখে তাড়াতাঁড় উঠে 
চলে যায় সুবর্ণ, সুবোধকে আর কিছু বলবার সুযোগ না 'দয়ে। 

সুবোধ হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন। 

সুবোধ এখন এই সোনার তালগুলোকে 'নয়ে কি করবেন 2 


সৃবর্ণলতা 6০৩ 


অ শেষ পযন্ত সেগুলো নিলেন সুবোধচন্দ্র। 

সুবর্ণলতার ওই 'রুদ্ধকণ্ঠ' হয়ে চলে যাওয়ার মধ্যে তানি একটা পরম 
সত্য উপলাব্ধ করলেন যেন। 

সেই সত্য সব দ্বিধা মুছে দিল বৃঁবঝি। 

সমারোহ করেই বৃষোতসর্গ শ্রাদ্ধ হলো মুস্তকেশীর। 

কে জানে তাঁর আত্মা সতাই পারতৃপ্ত হলো কিনা! তবু সুবোধ মনে 
করলেন 'হলো'। সুবোধের মুখে রইল সেই পাঁরতৃপ্তর ছাপ। 

যাঁদও আড়ালে আবৃডালে সবাই বলাবাল করতে লাগলো, সুবোধ কি 
রকম 'ভেতর চাপা"! এই যে খরচাঁট করলো, টাকা তোলা ছিল বলেই তো! 
অণ্চ কেউ বুঝতে পেরেছে ? 

সে কথা প্রবোধ এসেও মহোংসাহে বলে, 'দেখলে তো 2 চিরকাল দোঁখয়ে 
এসেছেন যেন হাতে কিছু নেই!" 

স্বর্ণ একবার 'স্থিরদৃম্টিতে স্বামীর 'দকে তাকিয়ে বলে, 'বেশ তো, 
হাতের টাকা তো মন্দ কাজে বায় করেন নি, সদ্ব্যয়ই করেছেন! তা তোমার তো 
হাতে টাকার অভাব নেই, তুমি একটা সংকাজ কর না2 তোমার মায়ের একটা 
ইচ্ছে পালন কর না অনেক কাঙালণ খাওয়াও না? মার খুব ইচ্ছে ছিল।' 

প্রবোধ সচাঁকিত হয়ে বলে 'এ ইচ্ছে আবার কখন তোমার কানে ধরে বলতে 
৬৪৫ মা তুমি যখন গিয়ে পড়োছলে, তখন তো বাকরোধ হয়ে 

মাছল।' 

ক্ষীণ একট হাসলো সুবর্ণ। 

বহুকাল পরে হাসলো । 

বললো, 'না' এ ইচ্ছে প্রকাশ তখন করেন নি। যখন পুরোদস্তুর বাকা- 
মতরোত ছিল, এ তখনকার কথা । তোমাদের ওখানের জগন্নাথ ঘোষের ম' খন 
মারা গেলেন, তখন কাঙালণ খেয়োছিল মনে আছে? দেখে মা বচ্ছলেন, 
আম যখন মরবো, আমার ছেলেরা কি এমন করে কাঙালী ভোজন করাবে! 

"38, এই কথা! প্রবোধ ফ.ৎকারে ডীঁড়য়ে দেয়। বলে. 'জ্যান্ত থাকতে 
জল্মভোর অমন কত কথা বলে মানুষ! সে-সব ইচ্ছে পালন করতে গেলেই 
হয়েছে আর কি! 

'তা বেশ। ধরো যাঁদ আমারই ইচ্ছে হয়ে থাকে ৮ 

প্রবোধ বিশ্বাস করে সেকথা । এটাই ঠিক কথা। তাই বলে, “তোমার 
তো চিরাদনই এই রকম সব আজগুবা ইচ্ছে! শ্রাদ্ধ হয়ে গেল সেখানে, এখন 
কাঙালশী ভোজন হবে এখানে । ওসব ফ্যাচাং তুলো না। অত বাড়াবাঁড় করার 
দরকার নেই।, 

'তবে থাক্‌" সুবর্ণ বলে, "দরকার যখন নেই, ভাজই হলো, তোমার 
ছেলেদের সৃবধে হলো। ভাঁবষ্যতে তাদেরও আর মেলাই বাজে খরচ করতে 
হবে না। মনে জানবে মা-বাপের শ্রাম্ধর বেশ বাড়াবাড়ির দরকার নেই।' 

প্রবোধ এ ব্যঞ্গে জবলে উঠে বলে, '৩$, ঠাট্টা! ভারী একেবারে ! আমার 
মা'র মরুণকালের ইচ্ছে নিয়ে আমি কাতর হলাম না, উনি হচ্ছেন! বাঁল 
শাশুড়ীর ওপর ভাঁন্ত উলে উঠলো যে! এ ভান্ত ছিজ কোথায়? চিরটা কাল 
তো মানুষটাকে হাড়ে-নাড়ে জালিয়ে পাঁড়য়ে খেয়েছ।' 

স্বর্ণ এ অপমানে রেগে ওঠে না, বরং হঠাৎ হেসে উঠে বলে, “সাঁত্য বটে। 


৩০৪ সবর্ণলতা 


স্মরণশন্তিটা আমার বড় কম। মনে কাঁরিয়ে দিয়ে ভালই করলে ।' 
তারপর উঠে গেল। 

সেই ওর ছাতের ঘরের কোটরে গিয়ে বসলো খাতাখানা নিয়ে। 

কিন্তু খাতাখানা কি শুধু সুবর্ণর অপচয়ের হিসেবের খাতা ? 

সুবর্ণলতার জীবনের খাজখানার মতই ? 

নইলে স_বর্ণর সেই খাতাখানার পাতা উল্টোলেই এই সব কথা চোখে পড়ে 
কেন 2... 

..মেয়েমানুষ হয়েও এমন বায়না কেন তোমার সুবর্ণ তুমি সং হবে, 
সুন্দর হবে, মহৎ হবে! ভুলে যাও কেন' মেয়েমানুষ হচ্ছে একটা হাত-পা-বাঁধা 
প্রাণী! মানুষ নয়, প্রাণী! হাত-পায়ের বাঁধনটা যাঁদ 'ছিড়তে যায় সে তো 
হাত-পা-গুলো কেটে বাদ 'দিয়ে দিয়ে 'ছিশড়তে হবে সে বাঁধন ?... 

কেন লেখা থাকে...'তবু বাঁধন ছেস্ড়ার সাধনটা চায়ে ষেতে হবে তাকে। 
কারণ তার বিধাতা ভারী কৌতুকাপ্রয়। তাই ওই হাত-পা-বাঁধা প্রাণীমারর- 
গুলোর মধ্যে হঠাং হঠাৎ ঢুকিয়ে দিয়ে বসে থাকেন বুদ্ধ, চেতনা, আত্মা) 


১৬ 


বহদন পরে মামা*বশুর-বাঁড়তে বেড়াতে এল সুবর্ণ । 

বড় ছেলে ভানু সম্প্রীত একটা গাড়ি কিনেছে, বড়বো 
বললো, 'আপনার ছেলে আসূন না মা, তখন বরং 
যাবেন_” 

সুবর্ণ তবু ভাড়াটে গাঁড় করেই গেল। বললো, 
"ও বাঁড়তে বরাবর ভাড়াটে গাঁড় করেই গোছ বৌমা, 
জ্যাড়গাড়ি থাক। 

বৌ বিড়বিড় করে বললো, 'যত্র-আদর না নিলে আর 
কে দেবে? 

সবর্ণ গাঁড়তে গিয়ে উঠলো । 

শ্যামাস্‌ন্দরী সমাদর করে ডাকলেন, এসো মা, এসো। 

বয়েস কম হয় নি, মুস্তকেশীর থেকে কম হলেও তাঁর দাদার স্ত্শী। তবু 
শন্ত আছেন 'দাব্য। এখনো নিজে রে'ধে খাচ্ছেন, হে'টে গঙ্গাস্নানে যাচ্ছেন! 

অনেকাঁদন দেখে নি সুবর্ণ দেখে আশ্চর্য হলো । 

প্রণাম করে পায়ের ধূলো নিল, হয়তো দু অর্থে। 

কুশল প্রশ্ন করতে লাগলেন খুটিয়ে খুুটিয়ে। 

'ছেলেপ্লেরা কেমন আছে? গাঁপা, চল্লন, পারুল সব ভাল আছে তো? 
সেই যা তোমার শাশুড়ীর কাজের সময় সকলের সঙ্গে দেখাসাক্ষাং হলো !' 

এটা ওটা উত্তর দিতে দিতে হঠাৎ একসময় বলে বসে সুবর্ণ, 'ভাসুরঠাকুর 
বাঁড় আছেন ?" 

'কে? জগা?' শ্যামাসৃল্দরী মুখ বাঁকয়ে বলেন, “থাকবেন না তো যাবে 
আর কোথায় 2 এখন তো সর্বক্ষণ বাড়তেই স্থিতি ।...আমার কানের মাথা খেতে 
ঘে বাঁড়র মধ্যে এক ছাপাখানা খুলে বসে আছেন! 





নুবর্ণলতা ৩০৫ 


সুবর্ণলতা এ খবরে অবাক হয় না। 

-বর্ণলতা যেন এ খবর জানে। 

শুধু সৃবর্ণলতার মুখটা একটু উজ্জল দেখায়। 

বলে, 'বেশ চলছে ছাপাখানা; জাল ছাপা হয় ?, 

'জাঁননে বাছা--” শ্যামাসুন্দরী অগ্রাহ্ভরে বলেন, 'রাতাঁদন শব্দ তো 
হচ্ছে। বলে নাক খুব লাভ হচ্ছে। বলে, বয়েসকালে এ বাদ্ধ হলে লাল হয়ে 
যেতাম ।.. সাতজন্মে তো রোজগারের চেষ্টা দেখি নি। ওই ফোঁনি কাটতো আর 
মালা ঘুরাতো। তছাড়া পাড়ার লোকের জল্ম, মৃত্যু, বিয়ে, রোগ, শোক, 
দৃ্গেৎসব এইসব নিয়েই ছিল, হঠাৎ এই খেয়াল। মাথায় ঢাঁকয়েছে ওই 
নিতাই। জের আখের গোছাতেই বোধ হয় এ প্ররোচনা দিয়েছে বলে, 
বাঁড়খানা থেকে কিছু উসুল কাঁর...তা তোমার সঙ্গোর ওই ঝিয়ের হাতে আবার 
অত সব কি বৌমা ? 

সুবর্ণ কুশ্ঠিতভাবে বলে” ণঁকছু না, চারাঁট ফল, আপানি একটু মুখে 
দেবেন, ভাসনরঠাকুর একট;_ইয়ে, আপনাকে আজ একটা কথা বলতে এসো 


শ্যামাসুন্দরশ স্বর্ণর কুষ্ঠিত ভাব দেখে আশ্চর্য হন। বলেন, ধক গো 

৭৪ 

'বলাছিলাম 'ি- ইয়ে-_ 

থেমে যায় সুবর্ণ । 

শ্যামাসূন্দরী সমাধক অবাক হন। সুবর্ণলতার এমন কুণ্ঠিত মার্ত! ও 
তো সদাই সপ্রাতভ। তা ছাড়া কুণ্ঠার মধ্যে কেমন ষেন প্রার্থা ভাব! টাকা 
ধার চাওয়ার ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। কিন্তু সুবর্ণলতার ক্ষেত্রে তো সে 
আশঙ্কা ওঠে না। 

তবে? 

শ্যামাসুন্দরর প্রশ্নমুখর দৃম্টর সামনে একটু অগপ্রাতভ হাঁসি হাসে 
সুবর্ণ। তারপর অঁচিলের তলা থেকে একখানা মলাট বাঁধানো মোটা খাতা বার 
করে বলে ফেলে, 'ভাসুরঠাকুর ছাপাখানা খুলেছেন শুনোৌছলাম, 
একটু শখ হয়েছে, সেই ইয়েতেই আসা। আম তো আর নিজে মুখে বলতে 
পারবো না, আপনি ফাঁদ বলে দেন! 

বার্ধক্যের চোখে কৌতূহল ফুটিয়ে বলেন, শক জন্যে কি 

বলবো, আমি তো কিছ: বুঝতে পারাছি না বৌমা! 

সুবর্ণলতা মৃদু হাসে, বুঝতে পারবেনও না। তাহলে বাল শুনুন, 
ছেলেবেলা থেকে আমার একটু লেখার «শখ আছে, জীবনভোর সকলের 
অসাক্ষাতে একট:-আধটু লিখেছি, এই' পদ্যটদ্য আর কি। এদানীং গল্পটজ্পর 
ধরনেও কছ_ লেখা হয়েছে, তবে ছাপাবার কথা স্বপ্নেও ভাব নি। ভাসুর- 
ঠাকুর ছাপাখানা খুলেছেন শুনে অবধি মনে উদয় ইয়েছে, একখানা বই' মতো 
করে যাঁদ ছাপানো যায়। যা খরচা লাগে আমি দেব, শুধু আগে কেউ যেন 
জানতে না পারে। একেবারে বই হলে জানবে দেখবে । তা আপাঁন একটু বলে 
দেখুন না মামীমা, যদ একটু দেখেন এখন ভাসুরঠাকুর ! 

-প্রোচ সুবর্ণলতার চোখে যেন ভাবাকুল অবোধ িশোরণীর দূষ্টি। 

যে স্বর্ণলতা সমুদ্রের স্বপ্ন দেখতো-সে সবর্ণলতা কি আজও মরে 

ন0 


৩০৬ সববর্ণ লতা 


[নঃ কোথাও কোনখানে এতটুকু প্রাণ আহরণ করে বেচে আছে 2...কোথায় 
আছে সেই অফুরন্ত আঁগ্ম, যা আজীবন বরফজল নিক্ষেপেও নিভে যায় না 2 
রঃ শ্যামাস্‌ন্দরী তবুও বাস্মত প্রণন করেন, 'বই ছাপা হবে? কোথায় সেই 

রঃ 

সুবর্ণ মৃদু হেসে বলে, 'বই তো পরে। ছাপা হবে এই খাতাটা। এইটা 
না হয় নিয়ে যান ভাসুরঠাকুরের কাছে, উনি ঠিক বুঝতে পারবেন।, 

খাতাখানা হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে শ্যামাসুন্দরী হতভম্ব গলায় 
বলেন, 'এসব লেখা তুমি লিখেছ? এই খাতা-ভার্ত? 
:. *ওই তো পাগলামি--” হাসে সুবর্ণ । 

পশনজের মন থেকে? না কিছু দেখে ? 

সুবর্ণলতা ছেলেমানুষের মত শব্দ করে হেসে ওঠে, 'নাঃ, দেখে লিখবো 
কি? তা হলে আর নিজের লেখা হলো কোথায় ? 

শ্যামাসূন্দরীর বিস্ময় ভাঙে না, তা হ্যাঁগো মেজবৌমা” এত কথা তোমার 
মনে মাথায় এলো কি করে? 

সুবর্ণলতার মুখে আসে, মনে মাথায় আসে, তা লিখতে পারলে এ রকম 
সহম্রখান খাতাতেও কুলোতো না মামীমা। তবে বলে না সে কথা। 

শযামাসুন্দরী উঠে যান। 

কিছুক্ষণ পরে প্রেসমাঁলক জগন্নাথচন্দ্র এসে অদূরে দাঁড়ান। 

চেহারা প্রায় একই রকম আছে, তেমাঁন আঁটসাঁট খাটমৃগুরে গড়ন, তেমাঁন 
হত্তেলের মত রং, বদলের মধ্যে কিছু চুল পেকেছে। 
আগের মতই পরনে একটা লাল ছালটি গলায় রূদদ্রাক্ষ, কপালে রন্তচন্দনের 

। 

তার মানে এই' বেশেই ছাপাখানায় বসেন তানি। 

এসে দাঁড়য়ে গলাখাঁকার দিয়ে বলেন, 'মা, জিজ্ঞেস করো তো বৌমাকে, 
এ হাতের লেখা কার ? 

ইশারায় উত্তর পেয়ে শ্যামাস্‌ন্দরী মহোৎসাহে বলেন, 'বললাম তো সবই 
বৌমার লেখা! 

চমৎকার হাতের লেখা তো! 

সপ্রশংস দৃষ্টিতে খাতার পৃচ্ঠাগুলো উল্টোতে উল্টোতে জগু বলেন, 
'মেয়েছেলেদের হাতের লেখা এমন পাকা! সচরাচর দেখা যায় না। কিসে 
থেকে নকল করেছেন ? 

শ্যামাসুন্দরী বলে ওঠেন, 'এই দেখো ভূতুড়ে কথা! বললাম ষে, এ সমস্ত 
বৌমা নিজের মন থেকে বানিয়ে বানিয়ে লিখেছে বই-লাঁখয়েরা যেমন লেখে 

বল কিঃ এই গদ্য-পদ্য সব? 

“সব।' এখন আবার শ্যামাসুন্দরী জ্ঞানদানরী। 

জগন্নাথ মহোৎ্সাহে বলেন, “তুমি যে তাজ্জব করে দিলে মা! এতকাল 
দেখাছ, কই এসব তো শুনি নি!, 

শ্যামাসূন্দরী বলেন, শুনাব কোথা থেকে! মেজবৌমা তো নিজের গুণ 
জাহর করে বেড়ানো মেয়ে নয়? তোর ছাপাখানার বাত্রা শুনে সাধ হয়েছে, 
বলছে যা খরচা পড়বে দেবে; তুই শুধু দেখেশুনে- 


স্বদ লতা ৩০৭ 


“খরচের কথা আসছে কোথা থেকে 2 খরচের কথা! জগ হৈহৈ করে 
ওঠেন, “আমার প্রেসে আবার খরচ কি? রেখে দিয়ে যান বৌমা, কালই প্রেসে 
চাঁড়য়ে দেব। কিন্তু অবাক হয়ে যাচ্ছ বৌমার গুণ দেখে । নাঃ, পিসির 
সংসারে এই মেজবৌমাটি এসোছলেন সাক্ষাৎ লক্ষী । ভগবান 'দিয়েছেনও 


তাই ঢেলে মেপে! মনের গুণেই ধন। বহু ভাগ্যে এমন লক্ষ্মী পেয়ৌছল 
পেবো।' 


8১৭৪ 


কানায় কানায় পূর্ণ মন 'নয়ে বাঁড় ফিরলো সুবর্ণলতা। 

ভাবতে লাগলো ভগবানের উপর আঁবশবাস এসে 
গেলেই বাঁঝ 'তাঁন এইভাবে আপন করুণা প্রকাশ 
করেন। 

মানুষের উপর প্রত্যাশা হারালেই ভগবানের উপর 
আসে আঁবশবাস। তবু কোথাও বুঝি কিছু একটু আশা 
ছিল, তাই দ্বিধগ্রস্ত' চিত্ত নিয়ে সেই আশার দরজায় 
একটুকু করাঘাত করতে গিয়েছিল সূবর্ণলতা, রুদ্ধ 
কপাট খোলে কনা দেখতে । দেখলো দু'হাট হয়ে খুলে 
গেল। ভিতরের মালিক সহাস্য অভ্যর্থনায় বললো, এসো এসো! বোসো, জল 
খাও ।? 

হ্যা, সেই কথাই মনে হয়েছিল সুবর্ণলতার। 

একথা সেকথার পর আবার মামণমার মাধ্যমে ছাপার খরচার কথাটা 
তুলোছল সুবর্ণ, সুবর্ণলতার জগু-ব১ঠাকুর সে প্রস্তাব তুঁড় দিয়ে ওড়ালেন। 
বললেন, "দূর! কাগজের আবার দাম! বস্তা বস্তা কাগজ কেনা আছে 
আমার। এই তো এখনই তো দু হাজার বর্ণপাঁরচয় ছাপা হচ্ছে। বৌমা বই 
1িসখেছেন, এটা কি কম আহ্মাদের কথা! ছেপে বার করে বুক ফুলিয়ে বলে 
সন লোককে । কী গুণবতী বৌ আমাদের! বুকটা দশ হাত হয়ে 

শুনে তখন সহসা ভূমিকম্পের মতো প্রবল একটা বাষ্পোচ্ছবামে সুবর্ণ 
লতার সমস্ত শরীর দুলে উঠোছিল। জীবনের তিন ভাগ কাটিয়ে এসে 
সুবর্ণলতা এই প্রথম শুনলো সে গ্ণবতী! শুনলো তার কোনো গণ নিয়ে 
কেউ গৌরব করতে পারে! 

অথচ এই গুণই- 

হ্যাঁ, এই গুণই দোষ হয়েছে চিরকাল ! 

আজীবনই তো একটু-আধটু লেখার সাধ ছিল। 1 কন্তু সে সাধ মেটাতে 
অনেক দাম দিতে হয়েছে । কত সঙ্গোপনে, কত সাবধানে, ভরতো রান্রে যখন 
ওদকে তাসের আড্ডা জমজমাট, অথচ এঁদকে ছেলেরা ঘুমিয়েছে, তখন বসেছে 
একট; খাতা-কলম নিয়ে, প্রবোধ কোনো কারণে ঘরে এসে পড়ে দেখে ফেললো, 
ব্যস, শুরু হলো ব্যঙ্গ তিরস্কার । 

আর তার জের চলতে লাগলো বেশ 'িছুকাল। যে সংসারে মেয়েমানুষ 





৩০৮ সবর্ণজতা 


পীবদ্যেবতণ' হয়ে উঠে কলম নাড়ে, তাদের যে লক্ষ্মণ ছেড়ে যাওয়া আঁনবার্য এ 
কথাও ওঠে। তাছাড়া কলম ধরা হাত যে আর হাতাবেড়ি ধরতে চাইবে না, 
তাতে আর সন্দেহ কি! 

অনেক সময় অনেক কট;ন্তি হজম করেছে সুবর্ণলতা তার “খাতা নিয়ে। 
০০৯৭১৭০৭ কটুন্ত না হোক বক্লোন্ত! 

কানে আসে 

আর সে উীন্ত এটহা সময়ই আসে ছেলেদের ঘর থেকে। 
সুবর্ণলতার রন্তে-মাংসে গঠিত ছেলেদের ! 

ব্যাপারটা কিঃ কোনো পশরথাঁসসৃটিসিস্‌”" লেখা হচ্ছে নাকি ঃ..মা কি 
রাম্নাঘরটা একদম ছেড়ে দিলেন নাকি রে বকুল £ দেখতেই পাওয়া যায় না!_ 
সুবল, তুই তো অনেক জাঁনস, মহাভারত লিখতে বেদব্যাসের কতাঁদন 
লেগোঁছল জানিস সে খবর ? 

অথবা প্রবোধের আক্ষেপ-উীনস্ত শোনা যায়, “কশ রাম্া-বাম্া হচ্ছে 
আজকাল £ বকুল, এ মাছের তরকারি রে'ধেছে কে? তুই বুঝি? মুখে করা 
যাচ্ছে না যে 

জানে বকুল নয়, ছেলের বোৌরা রে'ধেছে। তন্রাচ ওইভাবেই বলে। বোধ 
কাঁর সেই চিরাচরিত মেয়েলী প্রথাটাই বজায় রাখে । ঝিকে মেরে বৌকে 
শেখায়। 

আবার এ আক্ষেপও করে ওঠে, হবেই তো! বাঁড়র 'গিল্লশ যাঁদ সংসার 
ভাঁসয়ে দিয়ে খাতা-কলম 'িয়ে পড়ে থাকে, হবেই নম্ট-অপচয়, আবাল, বে- 
বন্দোবস্ত! 

সুবর্ণর কানে আসে। 

ণিল্তৃ সুবর্ণ কানে নেয় না। সব কিছ কানে নেওয়া থেকে 'বিরত হয়েছে 
সুবর্ণ, আভমানশুন্য হবার সাধনা করছে। 

অতএব জবাব দেয় না। 

সূবর্ণলতা তার সংসারের সব প্রশ্নের 'জবাব' তৈরী করছে বসে শেষ 
আদালতে পেশ করার জন্যে। হয়তো সেই 'জবাবী বিবৃতি'র মধ্য থেকে সেই 
সংসার সুবর্ণলতাকে বুঝতে পারবে। 

আর সেই কোঝা বুঝতে পারলেই বুঝতে পারবে নিজের ভুল, নিজের 
বোকাম, নিজের নি্লজ্জতা। 

স্‌বর্ণলতার “সমতিকথা' সুবর্ণলতার জবানবন্দী । 
খাতার কারাগার থেকে আলোভরা রাজরাস্তায়। 

ঈশ্বরের করুণা নেমে এসেছে মানুষের মধ্য 'দিয়ে। 

আজীবনের ক্পনা সফল হতে চললো এবার, লা ডি 
এ যেন একটা অলোঁকিক কাহিনী । যে কাঁহনীতে মন্ত্বলের মাঁহমা কীর্তত 
ছয়। নইলে চিরকালের বাউণ্ডুলে জগ-বট্ঠাকুরের হঠাং ছাপাখানা খোলার 
শখ হবে কেন ? 

ভগ্বানই সুবর্ণলতার জন্যে-_ 

পাঁথবশটাকে হঠাৎ ভার সুন্দর লাগে সুবর্ণর, ভার উজ্জবল। খুশি- 
ঝলমলে সকালের আলোয় এই বিবর্ণ হয়ে আসা গোলাপণ-রঙা বাড়িটা যেন 


সুপ তা ৩০৯ 


সোনালী হয়ে ওঠে। নিজের সংসারটাকেও যেন হঠাৎ ভাল লেগে যায়। 

এই তো, এই সমস্তই তো সুবর্ণলতার নিজের সৃষ্টি, এদের উপর কি 
বাঁতশ্রদ্ধ হওয়া যায়ঃ এদের উপর বিরূপ হওয়া সাজে? 

এরা যে সবর্ণলতাকে ভালবাসে না, সে ধারণাটা ভুল ধারণা সুবর্ণলতার। 
বাসে বৈকি, শুধু ওদের নিজেদের ধরনে বাসে। তা তাই বাসুক। সবর্ণলতাও 
চেষ্টা করবে ওদের বুঝতে। 

হয়তো জীবনের এই শেষপ্রান্তে এসে জীবনের মানে খুঁজে পাবে সুবর্ণ, 
আর তার মধ্যেই খুজে পাবে জীবনের পূর্ণতা । 

ক্মশই যেন প্রত্যাশার দিগন্ত উদ্ভাঁসত হতে থাকে নতুন সূর্যোদয়ের 
প্রতীক্ষায়। 

শুধুই বা ওই জবানবল্দী কেন 

আরও তো লিখেছে স্বর্ণলতা' যা শিল্প, যা সৃষ্ট 

যেখানে সুবর্ণলতা একক, যেখানে তার ওপর কোনো ওপরওয়ালা নেই। 
যেখানে থাকবে স্বর্ণলতার আস্তত্বের সম্মান। যেখানে সে বিধাতা । 

৫, এ কজ্পনায় কী অপূর্ব মাদকতা! | 

এ যেন কিশোরী মেয়ের প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি। অনুক্ষণ মনের 
মধ্যে মোহময় এক সুর গুঞ্জরণ করে। সে সুর রান্লির তন্দ্রার মধ্ও আনা- 
গোনা করে। 

নিতা নূতন বই লেখা হচ্ছে, নিত্য 'নত্য বই ছাপা হয়ে বেরোচ্ছে সে সব, 
অবাক হয়ে যাচ্ছে সবাই' সবর্ণলতার মাঁহমা দেখে, আর ভাবছে 'তাই তো"! 

এসি আশ্চর্য! কা হাস্যকর ছেলেমানাষই করে এসেছে এতাঁদন 
সুবর্ণ! 

এই তুচ্ছ সংসারের বিরূপতা আর প্রসন্নতার মধ্যে নজের মূল্য খুজে 
এসেছে! হিসেব কষেছে লাভ আর ক্ষতির! 

অথচ সবর্ণলতার নিজের মুঠোর মধ্যে রয়েছে রাজার এম্বর্! 

সুবর্ণলতার ওই' হলুদ পাঁচফোড়নের সংসারখানা নিক না যার খুশি, 
নিয়ে বরং রেহাই দিক জুবর্ণলতাকে। সুবর্ণলতার জন্যে থাক্‌ এক 
আনব্চনীয় মাধূযলোক। 


কণ অনাস্বাদত সুখস্বাদ! 

সুবর্ণলতার জাীবনখাতার এই অধ্যায়খানি যেন জ্যোতির কণা 'দয়ে 
লেখা । 

স্‌বর্ণলতা রান্নাঘরে এসে বলে, ও বড়বৌমা, বল বাছা কী কুটনো হবে? 


বসে। 

বড়বৌমা শাশুড়ীর এই আলো-ঝলসানো মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে 
অবাক হয়। তবে প্রকাশ করে না সে বিস্ময়। নরম গলায় বলে” আমি আবার 
ক বলবো? আপনার যা ইচ্ছে” 

বাঃ» তা কেন? তুমি রাঁধবে-তোমার মনের মত রাম্নাটি হওয়াই তো 
ভাল।' বলে বঁটটা টেনে নেয় সৃবর্ণ। 

আবার হয়তো বা একথাও বলে, “তোমরা তো রোজই খেটে সারা হচ্ছ বৌমা, 
আমার অভ্যাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি রান্না হবে বল, আঁম রাঁধি।' 


৩১০ নুহর্ণলত 


* বৌরা বলে, আপনার শরীর খারাপ-- 

সুবর্ণ মিষ্ট হাঁসি হাসে, “খারাপ আবার কি বাপ? খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুরাছ 
ফিরছি! তোমাদের শাশুড়ী চালাক মেয়ে, বুঝলে ঃ কাজের বেলাতেই তার 
শরীর খারাপ! 

ওরা অবাক হয়। 

ওরা শাশুড়ীর এমন মধুর মূর্ত দেখে নি এসে পর্যল্ত। ওরা. ভাবে 
ব্যাপারটা ক? 

সুবর্ণ ওদের বিস্ময়টা ধরতে পারে না, সুবর্ণ আর এক জগৎ থেকে 
আহরণ করা আলোর কাঁণকা মুঠো মুঠো ছড়ায়। 

'ভানু মাছের মুড়ো দিয়ে ছোলার ডাল ভালবাসে, তাই বরং হোক আজ । 
কানুটা বড়া দিয়ে মোচার ঘন্টর ভন্ত, হয় নি অনেকাঁদন, দুটো ডাল ভিজোও 
তো মেজবৌমা !...ওগো আজ মোচা এনো তো।" 

বাজার করার ভার প্রবোধের! 

এই মহান্‌ কর্মভার অবশ্য সে স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছে। ছেলেরা 
চক্ষুলঙ্জার দায়ে কখনো কখনো বলে বটে, 'আমাদের বললেই পারেন! নিজে 
এত কম্ট করার 'ক দরকার!' তবে সে কথা গায়ে মাখে না প্রবোধ। 

কিন্তু সেই বাজার-বেলায় সূবর্ণলতা তাকে ডেকে হেকে বিশেষ কোনো 
জাঁনস আনতে হুকুম দিয়েছে. এ ঘটনা প্রায় অভূতপূর্ব! অন্তত বহুকালের 
মধ্যে মনে পড়ে না। 

বোধ কাঁর ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছোট, তখন তাদের প্রয়োজনে বিস্কুট 
[কি লজেন্স, বাল কি মৌলন্স ফুড্‌ ইত্যাদর অর্ডার দিতে এসেছে বেরোবার 
মুখে। কিন্তু মুখের রেখায় ওই যে আহত্রাদের জ্যোতি! 

এ বস্তু কি দেখা গিয়েছে কোনোদন £ 

দেখা যেত-ওই আলোর আজ দেখা যেত কখনো কখনো সুবর্ণর মুখে, 
কিন্তু সে আভা আগুন হয়ে প্রবোধের গানদাহ ঘটাতো। 

স্বদেশী হুজুগের সময় যখনই কোনো বিদঘুটে খবর বেরোতো, তখনই 
সুবর্ণর মুখে আলো জঙ্লতো। আলো জবলতো যখন নতুন কোনো বই হাতে 
পেত-_ আলো জব্লতো যখন বাঁড়র ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে একে বাঁসয়ে 
'পাঠশালা পাঠশালা” খেলা ফেদে তারস্বরে তাদের দিয়ে পদ্য মৃখস্থ করাতো-_ 
আলো জবলতো যাঁদ কেউ কোনখান থেকে বৌঁড়িয়ে বা তীর্থ করে এসে গলপ 
জুড়তো। 

তা ছাড়া আর এক ধরনের আলো আর আবেগ ফুটে উঠোছল সুবর্ণলতার 
মুখে, ইংরেজ-জার্মীন যুদ্ধের সময়। সে এক ধরন। যেন সবর্ণলতারই জীবন- 
মরণ নিয়ে যুদ্ধ হচ্ছে! দেশের রাজা বাটশ' অথচ সঃবর্ণর ইচ্ছে জার্মানরা 
জতুক। তাই তর্ক, উত্তেজনা, রাগারাগি । মেয়েমানুষ, তাও রোজ খবরের 
কাগজ না হলে ভাত হজম হবে না! 

তা সে প্রকাতিটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে। 

এই তো ইদানীং আবার যে 'স্বরাজ-স্বরাজ' হুজুগ উঠেছে, তাতে তো 
কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। বরং যেন অগ্রাহ্য। বলে, 'আহংসা করে শর 
তাড়ানো যাবে এ আমার বিশ্বাস হয় না।...বলে, 'দেশসহম্ধ লোক বসে বসে 
চরকা কাটলে “স্বরাজ” আসবে £ তাহলে আর পৃথিবীতে আঁদ-অন্তকাল এত 


সবর্ণলতা ৩১১ 


অস্ব্রশস্ঘ তোর হতো না। উত্তোজত হয়ে তর্কটা করে না, শুধু বলে। 

শন্তি-সামর্থাটা কমে গেছে, ঝিমিয়ে গেছে। 

তাই মুখের সেই ওজ্জওলাটাও বিদায় নিয়োছিল। বিশেষ করে সেই অদেখা 
মায়ের, আর চাঁকতে দেখা বাপের মত্যুশোকের পর থেকে তো-_ 

হঠাং যেন সেই 'ঝামিয়ে পড়া ভাবটার খোলস ছেড়ে আবার “নতুন' হয়ে 
ওঠার মত দেখাচ্ছে সুবর্ণকে। 

কেন? 

মার্থার দোষ-টোষ হচ্ছে না তো? 

পাগলরাই তো কখনো হাসে কখনো কাঁদে। 

তা ষাক্‌, এখন যখন হাসছে, তাতেই কৃতার্থ হওয়া ভালো । 

কৃতাথই হয় প্রবোধ। 

বিগাঁলত গলায় বলে- “মোচা ঃ মোচা আনা মানেই তোমার খান গো, 
ও ক আর বৌমারা বাঁগয়ে কুটতে-ফুটতে পারবেন 2 

সুবর্ণ বলে. শোনো কথা! সব করছে ওরা। কিসে হারছে? তবে 
আমারই ইচ্ছে হয়েছে, রান্নাবাশ্রা ভুলে যাব শেষটা 2” 

কৃতার্থমন্য প্রবোধ ভাবতে ভাবতে বাজার ছোটে, 'আহা, এমন 'দিনাট কি 
[চরাঁদন থাকে না? 

এই জীবনটাই তো কাম্য! 

গল্লী ফাইফরমাস করবে, এটা আনো ওটা আনো বলবে, কর্তা সেইসব 
বরাতি বস্তু এন্.সাতবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাবে, বাহবা নেবে, শিল্প গাঁছয়ে- 
গাছিয়ে রাঁধবে বাড়বে, বেলা গাঁড়য়ে পরিপাটী করে খাওয়া-দাওয়া হবে, আর 
অবসরকালে কর্তা-গিন্নী পানের বাটা নিয়ে বসে ছেলে বৌ বেয়াই বেয়ানের 
[নন্দাবাদ করবে, এযৃগের ফ্যাশান নিয়ে সমালোচনা করবে এই তো এই বয়সের 
মিড ছবি! প্রবোধের সমসামায়ক বন্ধৃবান্ধবরা তো এই' ধরনের সুখেই 

। 

প্রবোধের ভাগ্যেই ব্যাতক্রম। এই সামান্য সাধারণ সুখটুকুও ইহজাীবনে 
জু্‌টলো না। 

গিন্লী ষেন সিংহবাহনীণ। 

তাসের আন্ডাটা যাই আছে প্রবোধের, তাই 'টিকে আছে বেচারা । 

তা এতদিনে কি ভগবান মুখ তুলে চাইছেন ? 

“পাগল-ছাগল' হয়ে সহজ হয়ে যাচ্ছে সুবর্ণ ? 

নাক এতাঁদনে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ? 

তা সে যে কারণে যাই হোক, সুবর্ণ যে সহজ প্রসশ্রমূখে ডেকে বলেছে, 
ওগো বাজার যাচ্ছ, মোচা এনো তো'--এই পরম্‌, সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে 
বাজারে যায় প্রবোধ, আর প্রয়োজনের আঁতারন্ত মাছ-তরকার এনে জড়ো করে। 

সুবর্ণ তখন হয়তো অনুমান করতে চেষ্টা করছে, তার ওই খাতাটা ছাপতে 
কতাঁদন লাগতে পারে, কতাঁদন লাগা সম্ভব! ধারণা অবশ্য নেই কিছুই, তব 
কতই আর হবে? বড় জোর মাস দুই, কমও হতে পারে। তারপর-_ 

আচ্ছা, জগৃ-বট্ঠাকুর আমার নামটা জানেন তো? কে জানে! কিন্তু 
জানবেনই বা কোথা থেকে ঃ কবে আর কে আমার নাম উচ্চারণ করেছে ও'র 
সামনে ? 


৩১২ সুবণলত। 


তাহলে? 
বিনা নামেই বই ছাপা হবে? 
নাকি মামীমার কাছ থেকে জেনে নেবেন ডীন? 


০০ পৃ জু যে হাতের 
লেখার প্রশংসা করেছেন জগৃ-বট্‌ঠাকুর, সেই হাতের লেখাঁটিকে আরো সূছাঁদ 
সূন্দর করে ধরে ধরে নামাট লেখে নি একবার সুবর্ণ? 

হ্যাঁ, পরম যত্রে পরম সোহাগে কলমটিকে ধরে ধরে লিখে রেখোঁছল 


চোখ এাঁড়য়ে যাবে না। 

নামতা মুখস্থ করার মত বার বার মনে মনে এই কথা উচ্চারণ করতে থার্কে 
রগ সনিরি। বইয়ের উপর লেখা থাকবে শ্রীমতী সুবর্ণলতা 

॥ 


সুবর্ণলতার মা জেনে গেল না এ খবর! 

এত আনন্দের মধ্যেও সেই বিষণ্ন বিষাদের সুর যেন একটা অস্পম্ট মৃ্নায় 
আচ্ছনন করে রাখে । 

মা থাকতে এই পরম আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটলে, মাকে অন্তত একখণ্ড বই 
পার্শেল করে পাঠিয়ে দিত সুবর্ণ। এ বাড়ির কাউকে দিয়ে নয় অবশ্য, মামীমাকে 
1দয়ে ওই জগ বট্ঠাকুরকে বলেই করিয়ে দিতো কাজটা । 

মা প্রথমটায় পার্শেল পেয়ে হকচকিয়ে যেত, ভাবতো, কী এ? তারপর 
সির দেখতো! দেখতো বইয়ের লোখকা শ্রীমতন সুবর্ণলতা 


তারপর ? 

তারপর কি মা'র চোখ 'দিয়ে দূ ফোঁটা জল গাঁড়য়ে পড়তো না? 

সুবর্ণলতার মনটা যেন ইহলোক পরলোকের প্রাচীর ভেঙে দিতে চায়। যেন 
তার সেই অদেখা বইটা সেই ভাঙা প্রাচীরের ওধারে নিয়ে শিয়ে ধরে দিতে চায়! 
সুবর্ণ দেখতে পায়, সুবর্ণর মা সুবর্ণর স্মাতিকথা পড়ছেন। 

পড়ার পর ? 

শুধুই কি সেই দু ফোঁটা আনন্দাশ্রুই ঝরে পড়ে শুকিয়ে যাবে? সেই 
শুকনো রেখার উপর 'দিয়ে ঝরণাধারার মত ঝড়ে পড়বে না আরো অজন্ত্র ফোঁটা? 
দেখতে পাচ্ছেন, কীভাবে কাঁটাবনের উপর 'দয়ে রক্তান্ত হতে হতে জশবনে এতটা 
পথ পার হয়ে এসেছে সুবর্ণ ! 

মা বুঝতে পারছেন সংবর্ণ অসার নয়। 

কোন্‌ কোন্‌ অংশটা পড়তে পড়তে মা বিচাঁলত হতেন, আর কোন: কোন্‌ 
অংশটা পড়ে বিগাঁলত, ভাবতে চেস্টা করে স্‌বর্ণ। 

নিজের হাতের সেই লেখাগুলো যেন “দৃশ্য হয়ে ভেসে ওঠে। 

পর পর নয়, এলোমোলো। 


সুবর্ণলতা ৩১৩ 


যেন দৃশ্যগুলো হুড়োহুঁড় করে সামনে আসতে চায়। যেন এক প্যাকেট 
তাসকে কে ছাঁড়য়ে 'দয়েছে। 

অনেক বয়সের অনেকগুলো সুবর্ণ ছাঁড়য়ে পড়ে সেই অসংখ্য দৃশ্যের 
মধ্যে। মাথায় খাটো, পায়ে মল, একগলা-ঘোমটা বালিকা সংবর্ণ, হঠাৎ লম্ব! 
হয়ে যাওয়া সদ্য কিশোরী সুবর্ণ, নতুন মা হয়ে ওঠা আবেশাবহবল সুবর্ণ, 
তারপর-_ 

আচ্ছা, ওই ঘোমটা দেওয়া ছোট মাপের সবর্ণর ঘোমটাটা হঠাং খুলে 
গেল যে! 

কি বলছে ও? 

কন বলছে. সে কথা শুনতে পাচ্ছে সুবর্ণলতা ! 

“তাঁড়য়ে দিলে তোমরা আমার বাবাকে তাঁড়য়ে দিলে ? আমাকে নিয়ে 
যেতে দিলে না ? কেন 2 কেন 2 কী করোছ আমি তোমাদের, তাই এত কষ্ট দেবে 
আমাকে ...কে বলোছিল আমাকে তোমাদের বৌ করতে 2 শুধ্‌ শুধু ঠাঁকয়ে 
ঠকিয়ে বিয়ে দিয়ে. চলে যাব, আমি তোমাদের বাঁড় থেকে চলে যাব--তোমাদের 
মতন নিম্ঠুরদের বাড়তে থাকলে মরে যাব আমি ।' 

সংবর্ণলতা অন্য আর এক গলার উচ্চ নিনাদও শুনতে পাচ্ছে, ওর নিজের 
কলমের অক্ষরগুলোই যেন সশব্দ হয়ে ফেটে পড়ছে, “ওমা, আম কোথায় যাব! 
এ কী কালকেউটের ছানা ঘরে আনলাম গো আম! চলে যাবি? দেখ না 
একবার চলে গিয়ে! খুন্তি নেই আমার? পাযাঁড়য়ে পাড়িয়ে ছ্যাকা দিতে 
জানি না2... “বাপকে তাঁড়য়ে দিলে ” দেব না তো কি, ওই বাপের সঙ্গে নাচতে 
নাচতে যেতে দেব তোকে ?...সইমা আমার পুবজল্সের শু ছিল, তাই তোকে 
আমার গলায় গাঁছয়ে পরকাল খেয়েছে আমার । আর ওমুখো হতে দিচ্ছি না 
তোকে...ইহজনবনে কেমন আর বাপের বাঁড়র নাম মুখে আনিস, দেখবো! 
বাপের বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তোর যাঁদ না ঘোচাই তো আ'ম মুক্তবামনী নই! 
বাপ চলে যাচ্ছে বলে ঘোমটা খুলে রাস্তায় ছুটে আসা বার করাঁছ।' 

সেই ঘোমটা খোলা, বালিকা সুবর্ণকে টেনোইহণ্চড়ে ঘরে এনে পুরে শেকল 
তুলে দিয়ে গেল ওরা, বলে' গেল, 'মুখ থেকে আর টু শব্দ বার করাব না!” 

সুবর্ণ স্তব্ধ হয়ে গেল। 

এই আঁবশবাস্য নিষ্ঠুরতায় যেন নিথর হয়ে গেল।.. তবু তখনো সাত; 
শবশ্বাস হয় নি তার, সেই নিষ্ঠুরতার কারাগারেই চিরদিনের মত থাকতে হবে 
তাকে ।...মনে করাঁছল, কোনমতে একবার এদের কবল থেকে পালয়ে যেতে 
পারলেই সব সোজা হয়ে যাবে। 

তাই পালাবার মতলবই ভে'জেছিল বসে বসে! 

রাস্তা চেনে নাঃ তাতে কিঃ রাস্তায় বেরোলেই রাস্তা চেনা যায়। 
রাস্তায় লোককে জিজ্ঞেস করলেই হবে।...সুবর্ণদের বাড়িটা রাস্তার লোক যাঁদ 
না চেনে তো স্বর্ণ তার ইস্কুলটার নান করবে। ইস্কুলটাকে নিশ্চয়ই সবাই 
চেনে, বেখুন ইস্কুলে তো নামকরা জায়গা ।.. হে ঠাকুর, একবার সুবর্ণকে সুযোগ 
দাও পালিয়ে 'যাবার !...সৃবর্ণ রাস্তার লোককে জিজ্ঞেস করে করে একবার 
ইস্কুলে গিয়ে পেণছে যাক। তারপর আর বাঁড় চেনা আটকায় কে 2...রোজ 
যেমন করে চলে যেতো তেমাঁন করেই চলে যাবে। 

চলে গিয়ে? 


৩১৪ সুবর্ণলতা 


'চলে গিয়ে বাবাকে বলবে, 'দেখলে তো বাবা, তুমি আনতে পারলে না, আম 
[নজে নিজেই চলে এলাম! আর মাকে বলবে, মা! মাকোথায়2 এরা তে৷ 
কৈবলই বলে তার মা চলে গেছে! কোথায় চলে গেছে মাঃ এতাঁদনেও আসে 
নিঃ ঠিক আছে, সুবর্ণ শিয়ে পড়ে দেখবে কেমন না আসে মা? দাদার 


[বয়ে হবে, কত মজা, আর কত কাজ মা'র, কোথায় গিয়ে বসে থাকবে 


2 
ঙগ্‌ ৪৪৪০৫ ৬ 


ইস্‌ ভগবান, একবার এদের বাড়ির লোকগুলোর দৃস্টি হরে নাও, সুবর্ণকে 
পালাতে দাও। কে জানে সুবর্ণর দাদার বিয়ের সময়েও হয়তো যেতে দেবে না 
এরা সুবর্ণকে। 

আচ্ছা, ইস্কুলের মেয়েরা যাঁদ জিজ্ঞেস করে, 'এতাঁদন আঁসস নন কেন? 
যাঁদ স্‌বর্ণর মাথায় সপ্দুর দেখে হেসে উঠে বলে, “এ মা, তোর বিয়ে হয়ে 
গেছে! কা উত্তর দেব? 

বলব কিবআমার ঠাকুমা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে 2...নাঃ, 
সে কথা শুনলে ওরা আরো হাসবে !...তার চাইতে 'সিপ্দুরটা আচ্ছা করে মুছে 
নেব রাস্তায় বেরিয়ে। রাস্তার কলে ধুয়ে ঘষে সাদা করে ফেলবো । ও-বাঁড়র 
দাদি. জয়াবতশীদাঁদ, ওকেই শুধ্‌ বেশ যাব আম চলে যাচ্ছি! ও আমায় যা 
ভালবাসে, ঠিক মুস্তারামবাবূর স্ট্রীটে গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করবে! ওর 
*বশুরবাঁড় এমন বিচ্ছিরি নয়, ও কত বাপের বাঁড় যায়! 

'পালাবো পালাবো" এই' ছিল ধ্যান-জ্কান। 

পালাতে পারে নি সবর্ণ। জাীবনভোর পারল না।...দেখেছে 

পালানোটাকে যত সোজা ভেবেছিল তত কঠিন । 

একদণ্ডের 'জন্যে পাহারা সরায় না এরা । 

ক্লমশই তাই বেখুন ইস্কুল, ঠনঠনে কালাীতলা, মুস্তারামবাবু স্ট্রীট, 
আঠারোহাত কালীর মান্দর, সব কিছুই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে...স্পম্ট আর প্রখর 
হয়ে উঠছে সিশথর ওই িপ্দুরটা। ওটাকে ঘষে ঘষে মুছে ফেলার কথা যেন 
অবাস্তব মনে হচ্ছে ।...সেই তার নিজের জাবনে. সাত্যিকার জীবনে যে আর 
ফিরে যাওয়া যাবে না, সেটা যেন 'স্থিরীকৃত হয়ে যাচ্ছে। 

সৃবর্ণর বই খাতা স্লেট পৌঁন্সল সব যে তাদের কুলুঙ্গিটার মধ্যে পড়ে 
রইল, সেকথা তো কেউ ভাবলো নাঃ সামনেই যে সুবর্ণর হাফ-ইয়ারাল এক- 
জাঁমন, সে কথা মা'রও তো কই মনে পড়ল নাঃ 

সুবর্ণর সমস্ত প্রাণটা যেন ওই কুল্বীগ্গটার উপর আছড়ে পড়তে যায়। 

এতাঁদন না পড়ে পড়ে সুবর্ণ যে সব ভুলে যাচ্ছে! 

ভগবান, সুবর্ণ তোমার কাছে কি দোষ করেছিল যে এত কষ্ট 'দিচ্ছ 
তাকে 2 রোজ সকালে ঘম থেকে উঠে কি তোমাকে নমস্কার করে নি? রোজ 
ইস্কুলে গিয়ে 'প্রার্থনা' করে 'নি...রাত্তিরে শুতে যাবার সময় কি বলেন “ঠাকুর, 
[িদ্যে দিও, বুদ্ধি দিও, সূমাত দিও"! 

যা যা শাখিয়েছিল মা, সবই তো করেছে সুবর্ণ, তবে কেন এত শাস্তি 
দিচ্ছ সুবর্ণকে ? 

কেন? কেন? কেন? 

ওই 'কেন'র ঝড় থেকে বালিকা সৃবর্ণ হারিয়ে যাচ্ছে, তার খোলস থেকে 
যুবতী জল্ম নিচ্ছে, তবু সেই 'কেন'টাই ধূসর হয়ে যাচ্ছে না। সে যেন আরো 


সুবর্ণবতা ৩১৫ 


তত্র হয়ে উঠছে। 

আমি কি এত পাজ” হতে চাই £...আম কি গুরুজনদের মুখের পব 
চোপা করতে ভালবাসি £ আম 1 বুঝতে পাঁর না, আমি চোপা কার বলেই 
আমার ওপর আক্রোশ করেই ওর আমাকে আরো বেশি বোঁশ কষ্ট দেয় ? 

কিন্তু ক করবো? 

এত 'নম্ঠুরতা আমি সহা করতে পাঁর না, সহ্য করতে পার না এত 
অসভ্যতা । আমার ওই বর, ও কেন এত বিচ্ছার! এর থেকে ও যাঁদ খুব 
কালো আর কুচ্ছত দেখতে হতো. তাও আমার ছিল ভালো। কিল্তু তা হয়নি। 
ওর বাইরের চেহারাটা 'দাব্য সুন্দর, অথচ মনের ভেতরটা কালো কু্ছিত 'বাচ্ছার। 
...ও াঁছিমিছি করে আমাকে বলোছিল, লুকিয়ে আমাকে আমার বাপের বাঁড় 
নিয়ে যাবে। সেই কথা বিশ্বাস করে ওকে ভালবেসোছিলাম আম, ভীন্ত করে- 
ছিলাম, ওর সব কথা রেখোঁছলাম। -খারাপ ববাচ্ছার সব কথা !-_ ওর 
কথা ও রাখে নি। রোজ ভূলিয়ে ভুলিয়ে শেষ অবাধ একাঁদন হ্যা-হ্যা করে হেসে 
বলোছিল: “ও বাবা, একবার গিয়ে পড়লে কি আর তুমি আসতে চাইবে! নির্ঘাত 
সেখানে থেকে যাবে। এমন পরীর মতন বোট আম হারাতে চাই না 
বাবা! 

কত 'দাব্য গাললাম যে আবার ফিরে আসবো, তবু বি*বাস করল না। 

ও আমায় বিশ্বাস করে না. আঁমও ওকে বিশ্বাস কার না। ও নাকি 
আমায় ভালবাসে, বলে তো তাই সব সময়, কিন্তু ভগবান, আমার অপরাধ নও 
না, আঁম ওকে ভালবাস না। ওকে ভালবাসা আমার পক্ষে অসম্ভব। ওর সঙ্গে 
একবিন্দ মিল নেই আমার। 

তবু চিরাদন ওর সঙ্গে ঘর করতে হবে আমায় 2 


..আজ আবার সেই, হলো! 

আজ আবার ওরা ছোড়দাকে তাঁড়য়ে দিল। 

আমার সঙ্গে দেখা করতে দল না। 

দাদার বিয়েতে নাক ঘটা করে নি বাবা, মা চলে গেল বলে নমো নমো করে 
সেরেছে। দাদার মেয়ের 'মুখেভাতে' একটু ঘটা করবে। তআই' ছোড়দা আমায় 
নিতে এসোছল। বাবা নাক অনেক মিনাত করে চিঠি লিখে দিয়োছিল ওর 
গার রর লনা রানার জান রান 
দেয় 'ন। 

বলেছে: “ছেলের বিয়ে শুনলাম না' নাতনীর ভাত! এমন উনচুটে বাড়িতে 
আমাদের ঘরের বৌ যাবে না।, 

ছোড়দা নাঁক ভয় করে নি. ছোড়দা না?ুক এ বাঁড়র সেজ ছেলের মুখের 
ওপর চোটপাট শুনিয়ে দিয়ে গেছে। নাক বলেছে, 'আপনাদের মত লোকের 
জেল হওয়া উঁচত।' 

এ বাঁড়র সেজ ছেলে সেই অপমান সহ্য করবে ১ 

উল্টো অপমান করবে না2১ করবে না গালমন্দ ? 

তবু তো এ বাঁড়র মেজ ছেলে তখন বাঁড় ছিল না. থাকলে ছোড়দার 
কপালে আরো কি ঘটতো কে জানে! 

বাঁড় ফিরে শুনে তো অদৃশ্য লোকটাকেই এই মারে তো সেই মারে! বলে" 


০১৬ সুবর্ণলতা 
কি, শুধু চজে যেতে বলাঁল? ঘাড়ে ধাক্কা 'দিয়ে বার করে দিতে পারাল না 
শালাকে 2 


আম যখন রাগে ঘেল্নায় কথা বাল 'ন ওর সঙ্গো, তখন হ্যা-হ্যা করে হেসে 
বললো, 'শালাকে শালা বলবো না তো বেয়াই বলবো?" হ্যাঁ, আম প্রশ্ন করে- 

সপ৮ আমার ভাইদের মান নেই ?, 

সেই শুনে এমাঁন হাসি হেসেছিল.ও, আমি কাঠ হয়ে গিয়োছিলাম। তার- 
পর সবাইকে ডেকে বলছিল, “আরে শুনেছ, শালাকে নাক সম্মান করা উচিত 
[ছিল আমার! পাদ-অর্থণ দেওয়া উচিত ছিল 

ঠিক আছে, ভগবান যখন আমাকে এই নিষ্ঠুর আর অসভ্যদের কাছেই 
রেখে দিয়েছে তখন তাই থাকবো । আর যেতে চাইব না এ বাঁড়র বাইরে। 
ভুলে যাব আমারও মা ছিল, বাপ ছিল, ভাই ছিল, বাঁড় ছিল। ওদের বাঁড় 
থেকে বেরোবো একেবারে নিমতলাঘাটের উদ্দেশে । 

তাই--তাই হোক। 

মরেই দেখিয়ে দেব, আটকে রাখবে বললেই আটকে রাখা যায় ন 


িকল্তু শুধু কি এইসব কথাই গলখেছে সংবর্ণ তার স্মৃতিকথায় ? 

সুবর্ণ ষেন ছাপাখানায় পঠিয়ে দেওয়া খাতাখানার পাতাগুলোর মধ্যে 
ডুবে যাচ্ছে, হারিয়ে ষাচ্ছে।... 

সুবর্ণ দেখতে পাচ্ছে? 'সপড়র ঘুলঘ্লি থেকে বৌরয়ে আসছে একটা বই, 
তার সঙ্গে মাষ্ট একটু কথা । মানুষটাকে দেখা যায় না, শোনা যায় শু্ধ কথা । 
হাঁস-হাঁস গলার ঝগকার। 

'এই নে, বইটা আর তোকে ফেরত দিতে হবে না; তুই পদ্য পড়তে ভা 
বাঁসস শুনে তোর ভাসুর তো মোহিত। বলেছে, এটা তুমি উপহার দিও 
বন্ধুকে । 

পাথবীতে এই নানূষও আছে ভগবান! 

তবে তোমার উপর রাগ করে ?ক করবো? 

“আমার ভাগ্য! এ ছাড়া বলার কছু নেই। 

িন্তু কী বই দিল জয়াদি ? 

এ কী জানিস! 

মানুষ এমন লিখতে পারে ? 

এ যে চেশচয়ে পড়বার, লোককে ডেকে শোনাবার! 

এ কি সেই কাঁবর কথা? না আমার কথা ? 

এ যে আম মনে মনে পড়ে মনের মধ্যে ধরে রাখতে পারছি না গো 

আজ এ প্রভাতে রাবর কর, 
কেমনে পশিল প্রাণের 'পর, 
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে 
প্রভাত-পাখার গান। 
না জান কেমনে এতদিন পঞ়্ে 
জাগিয়া উঠিল প্রাণ ॥ 
এর কোন্‌ লাইনটাকে বেশ ভাল বলবো আমি, কোন্‌ লাইনটাকে নয়? 
'জাগিয়া উঠিছে প্রাণ, 


সুবর্থলতা ৩১৭ 


ওরে উলি উঠিছে বারি। 
প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখতে নার। 
থর থর কার কাঁপছে ভুধর-_” 
এ পদ্য আমি সবটা মুখস্থ করবো। 
ওদের সংসারের জ্বালায় আর কষ্টবোধ করবো না। ওরা ঘা চার 
তাই করে 'দিয়ে নিজের মনে এই বই নিয়ে বসবো। আরো ষে সব পদ্য আছে, 
সব শিখে ফেলবো । 
জয়াদি দেবী, তাই এই স্বর্গের স্বাদ এনে দিল আমায়। জয়াদর স্বামী 
দেবতা, তাই তাঁর মনে পড়েছে আম পদ্য ভালবাস । ভগবান, ওদের বাঁচিয়ে 
রাখো? সহখে রাখো । 
“আজ এ প্রভাতে রাঁবর কর, 
কেমনে পাঁশল প্রাণের পর-” 
এর সব কথা আমার, সব কথা আমার জন্যে লেখা! 
কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন 
চাঁরাদিকে তাঁর বাঁধন কেন 2 
ভাঙ- রে হৃদয় ভাঙ্‌ রে বাঁধন... 
সাধ রে আজকে প্রাণের সাধন-” 
উঃ, কী চমতকার, কী অপূর্ব! আম ক করবো! 
বর্গ বলে কি সাঁত্যই কোন রাজ্যপাট আছে ? সাঁত্যই মাঁটি থেকে অনেক 
উপ্চৃতে মেঘেরও ওপরে সেই জগৎ, সেখানে দুঃখ নেই, শোক নেই, অভাব নেই, 
নিরাশ নেই, খলতা-কপটতা নেই, এক কথায় বলতে গেলে এই পৃথিবীর ধুলো- 
ময়লার কোন কিছুই নেই! 
নাকি ওটা শুধুই কাবকজ্পনা 2? আমাদের এই মনের মধ্যেই স্বর্গ নর্তা, 
পাতাল! এই মনের 'অনুভবাই পাঁথবীর ধুলোমাটি থেকে অনেক উচ্চুতে, 
মনের বত মেঘ তারও ওপরে উঠে গিয়ে স্বর্গ-রাজ্যে পেশীছয় 2. 
কে জানে কি! আমার তো মনে হয়, শেষের কথাটাই বুঝ ঠিক। আর 
উশ্চ্দরের কাবিরা পারেন সেই অনুভবের উশ্চ: স্বর্গে নিয়ে যেতে । সেখানে 
গিয়ে পেণছলে মনেই পড়ে না পৃথিবীতে দুঃখ আছে, জঞালা আছে, ধুলো- 
ময়লা আছে। 
শুধু আনন্দ, শুধু আনন্দ! 
চোখে জজ এসে যাওয়া অন্য এক রকমের আনন্দ! 
1কন্তু মানুষকে কেন 'নয়ে ষেতে পারেন না কবিরা? পারেন না বলেই লা 
সেই আনন্দের দেশ থেকে হঠাং আছাড় খেয়ে মাঁটতে পড়তে হয় ! 
অন্তত সৌদনের সেই সংসারব্দীষ্ধহশনা বাঁলকা সবর্ণলতা তাই 
পড়োছিল। সেই আছাড় খাওয়ার দু খে তার বিশ্বাসের মূজ যেন আলগা হলে 
গিয়োছিল। মানুষের ওপর বিশ্বাস, ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস, ভগবানের ওপর 
বিশ্বাস। সব বিশ্বাস বুঝি শাথিল হয়ে গেল। 
সুবর্ণর স্বামী রূঢ় রুক্ষ, সুবর্ণ জানে সে কথা, কন্তু সে যে এত বেশী 
নীরেট নর্বোধ, এত বেশি ক্র, সে কথা বুঝি জানতো না তখনো। 
জানলো, আছাড় খেয়ে জানলো । 
এই বহুদূরে এসে সেই সংসারব্যাম্ধহীন আবেগপ্রবণ মেয়েটার দিকে 


৩১৮ সুবর্ণলতা 


তাকিয়ে করুণা হয় সুবর্ণর, ওর আশাভঙঞ্গের আর বিশবাসভঙ্গের দুঃখে চোখে 
জল আসে। মেয়েটা যে একদার 'আমি', ভেবে ভেবেও মনে আনতে পারে না। 

কিন্তু ওই 'আমি'টার মত এত ভয়ঙ্কর পাঁরবর্তনশশল আর কি আছে? 
'আম'তে 'আম'তে কী আমল! 

তবু তাকে আমরা “আমিই বাঁল__ 

অবোধ স:বর্ণও ভেবেছিল, এই' আনন্দের স্বাদ ওকেও বোঝাই। আমার 
স্বামীকে । তখনো তার ওপর আশা সংবর্ণর! 

আশা করোছিল ওরও হয়তো মনের দরজা খুলে যাবে! তাই বলোছল, 
“তোমার খাল “শুয়ে পড়া যাক, শুয়ে পড়া যাক।” বোসো তো একট, শোনো। 
কণ চমৎকার !' 

হ্যাঁ, প্রদীপটা উস্কে দিয়েছিল, স্বর্ণ তার সামনে ঝুকে পড়ে পড়ে- 


হৃদয় আজ মোর কেমনে গেল খুঁজি, 
জগং আস সেথা কাঁরছে কোলাকুলি, 
ধরায় আছে যত মানুষ শত শত, 

আসছে প্রাণে মম, হাসছে গলাগাঁল।” 

ও সেই সুবর্ণকে থাঁময়ে দলো, বেজার গলায় বললো, 'জগংসুদ্ধ সবাই 
এসে কোলাকৃঁল করছে ১ তাই এত ভাল লাগছে? বাঃ বাঃ, বেড়ে চিন্তাঁট 
তো! শত শত মানুষ এসে প্রাণে পড়ছে? তোফা! এমন রসের কাঁবতাটি 
লিখেছেন কোন্‌ মহাজন ?? 

সুবর্ণ বলল. 'আঠঃ, থামো না! শেষ অবাধ শুনলে বুঝবে-” 

আবার পড়তে শুরু করে। পড়ছে,_হঠাং ও ফস করে বইটা কেড়ে নিল, 
বলে উঠলো, 'তোফা তোফা! এ যে দেখাছ রসের সাগর! কি বললে, “এসেছে 
সখাসাঁখ, বসেছে চোখাচোখি” ? আর যেন কি, “দাঁড়য়ে মুখোমীখ” 2 বাল 
এসব মাল আমদান হচ্ছে কোথা থেকে ?...ব্যজ্গের সুর গেল, ধমক 'দয়ে 
উঠলো, “কোথা থেকে এল এ বই? 

চোখে জল এসে গেল মেয়েটার, সেটা দেখতে দেবে না, তাই কথার উত্তর 
দেয় না। 

ও বইটা নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখল। তারপর সাপের মত হিসাঁহাসয়ে 
বলে উঠলো. “এই যে প্রমাণ-পত্তর তো হাতেই। “প্রাণাধিকা ভাঁগন” শ্রীমতী 
সুবর্ণলতা দেবীকে স্নেহোপহার--”* বাল এই প্রাণাধক ভ্রাতাঁট কে? কোথা 
থেকে জোটানো হয়েছে এটিকে ?' 

লেখাটা যে মেয়েমানৃষের হাতের, তা কি ও বুঝতে পারে নি! নিশ্চয় 
পেরেছিল! সাঁত্য বেটাছেলে ভাবলে বইটাকে কি আস্ত রাখতো 2 কুঁচি কুঁচ 
করে ছিস্ডতো, পা 'দিয়ে মাড়াতো! এ শুধ্‌ সবর্ণকে চারটি বাচ্ছার-বাচ্ছার 
কথা বলে নেবে বলেই ছল করে-_ 

চোখ 'দয়ে খুব জল আসাঁছল. তবু সুবর্ণ জোর করে চোখটা শুকনো 
রেখোঁছল, শন্ত গলায় বলোছল, “দেখতে পাচ্ছো না মেয়েমানুষের হাতের লেখা £ 
ও-বাঁড়ির জয়াঁদ দিয়েছেন !' 

ওর মুখটা শন্ত হয়ে উঠলো, “ও-বাঁড়র জয়াদ মানে? জয়াদাট কে? 

“জানো না, তোমাদের নতুনদার বৌ! জয়াবতী দেবা।' 


সুবর্ণলতা ৩১৯ 

'বটে! নতনদার বৌ! বাল তান ক আসা-যাওয়া করছেন নাক ? 
আশ্চর্য বেহায়া মানুষ তো! এঁদকে জোর তলবে মামলা চলছে, আর গাঁদকে 
[তান প্রাণাধিকা ভাঁগনীকে স্নেহ-উপহার ঘুষ দিতে আসছেন !” 

আম সুবর্ণলতা দেবী রেগে িয়েছিলাম। 

আমি বলেছিলাম, “মামলা ওরা করে নি, তোমরাই করেছ। জানতে বাঁক 
নেই আমার! আর “ভালবাসা” 'জানসটা জানো না বলেই ঘুষ বলতে ইচ্ছে 
করছে তোমার !' 

'ভালবাসা! ওঃ! বইখানা পাঁকয়ে মোচড় দিতে দিতে বললো, “তুমি 
যে 'জানিসটা খুব জানো তা আর আমারও জানতে বাঁক নেই। যারা আমাদের 
শনুপক্ষ, উন ঘর-জহালানে পর-ভোলানে মেয়ে যাচ্ছেন তাদের সঞ্গে ভালবাসা 
জমাতে! মাকে বলে দিতে হচ্ছে, ও-বাঁড় থেকে লোকের আসা বন্ধ করাছ!' 

বলে বইটা নিয়ে নিল ও। 

বললো; যাক, আর কাঁব্যতে দরকার নেই! এমাঁনতেই তো সংসারে মন 
নেই! এসো দাক এখন-” 

বলে প্রদীপটা ফু দিয়ে 'নীভিয়ে ঘরটাকে অন্ধকার করে দিল ও। 

কিন্তু শুধু ক ঘরটাই অন্ধকার করে দিল? 

ন বছর বয়সে এদের বাঁড়তে এসোছিলাম, আর এই তেরো বছর পার করতে 
চললাম, অনবরত শুনছি 'সংসারে মন নেই'! শাশুড়ী বলেন, তাঁর ছেলে 
বলেন। দ্যাওররাও তো বলতে ছাড়ে না। ক জাঁন “সংসারে মন' কাকে বলে! 
কাজকম্ম সবই তো কার। আমার গায়ে জোর বোশ বলে তো বোঁশ বোঁশই 
করি। আর ক করতে হয়! আমার ওই বড়জায়ের মত-_সব সময়ে রাম্াঘরে 
ভাঁড়ারঘরে থাকতে পার না. এই দোষ। তা আর কি করবো! 

ও আমার ভাজ লাগে না। 

পন্তু 'দাদরই ক সাঁত্য ভাল লাগে» ওর ইচ্ছে করে না, দোতসায় উঠে 
আসে. নিজের ঘরে এসে বসে, মেয়েকে দেখে 2 

করে ইচ্ছে। বুঝতে পারি। 

তব দাদ সখ্যাতির আশায় ওইরকম রাতাঁদন 'িনচের তলায় পড়ে থাকে। 
ক না.লোকে বলবে, কী লক্ষ্মী বৌ! সংসারে ক মন 

আচ্ছা, ক লাভ তাতে ? 

ওই সব স্বার্থপর আর নিম্ঠুর লোকেদের মুখের একটু স্খ্যাঁত পেয়ে 
লাভ কিঃ আর চিরকালই ক ওরা সুখ্যাতি করে? দিনের পর দন “ভাল' 
হয়ে হয়ে আর খেটে খেটে যে স.নামটুকু হয়, তা তো একদণ্ডেই মুছে যায়। 
দেখান কি? এত কল্না করে "দাদ, একাঁদন' দ্বাদশীতে ভোরবেলা উঠে এসে 
শাশুড়ীকে তেল মাখিয়ে দিতে দেরী করে ফেলোছিল বলে কা লাগ্থনাই খেলো! 
দ্বাদশশতে নাকি নিজে হাতে তেল মাখতে নেই। জানি না, এইসব এই করতে 
নেই, আর “ওই করতে নেই'-এর মালা কে গে'থোঁছল বসে বসে! 

মাও বলতেন বটে “করতে নেই'। 

সে আর কি 'বেলা অবাধ ঘুমোতে নেই'” ইস্কুলের মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া 
করতে নেই', 'বড়দের সামনে বেশি কথা বলতে নেই" “গরীব মানুষকে তুচ্ছ 
করতে নেই" গভাঁখারদের তাড়িয়ে দিতে নেই- এইসব! মিষ্টি করে ব্াঝয়ে 
দিতেন মা সেসব। 


চির? সুবর্ণলতা 


এদের বাঁড়তে যে কণ অনাছষ্টি সব কথা! মানে নেই! শুধু করতে 
নেই সেটাই জানা! 

আর বৌ-মানুষদের যে কত-ই নেই! 

বৌ-মানুষের তেষ্টা পেতে নেই, খিদে পেতে নেই, ঘুম পেতে নেই, আবার 
হাঁসও পেতে নেই! লক্ষণ বৌ" নাম নিতে হলে কথাও বলতে নেই! এত 
সাধনার শেষ মূল্য অথচ শেষ পর্যন্ত ওই। একাদন একটু দোষ করে ফেললেই 
সেই ছুতোয় চিরাদনের সব নম্বর কাটা । 

কণ লাভ তবে ওই বৃথা কম্টে? 

আর ওই ভাল হওয়াটা তো মিথ্যে বানানো, বলতে গেলে একরকম ছলনা। 
হ্যাঁ, ছলনাই। আম যত ভাল নই, ততটা “ভাল' দেখানো মানেই তো ছলনা। 
তবে তা দেখাবো কেন আমাকে ? 

ওসব মিথ্যে আমার ভাল লাগে না। 

দিদি আঁবাশ্য সাঁত্যই ভাল মেয়ে। তবু আরো দেখাতো চেস্টা করে। তাই 
রি রানানারা রা নান মাখাবার আঁধকার অর্জন করে 


ই ছাপার নিয়ে এক ঘট দেখলে আমার হা গায় দিদি কেদে 
মরছে দেখে হেসে মরছিলাম আঁম। কিন্তু সোদন 

দি জসপুরেপ ননী 

যোদন নিশ্চিত জেনেছিলাম 


হবে না আমার 2 সোঁদন কি হাসতে পেরেছিলাম ঃ ওর বোকামি দেখে, ্ 
নীরেটক্ দেখে? পাঁর নি। রাত্তিরে লুকিয়ে কে'দে বালিশ 

অবশ্য জশবনের এই দীর্ঘপথ পার হয়ে এসে জেনৌছ, নেন মিল শট 
একটা হাস্যকর অর্থহশন শব্দ। 

ও হয় না। 

মনের মিল হয় না, মনের মত হয় না! 

[নিজের রন্তে-মাংসে গড়া, 1নজের আপ্রাণ চেষ্টায় গড়া সন্তান-তাই 'কি 
মনের মত হয় ? 

হয় না' হয় নি। আমার ছেলেমেয়েরা? 

ওরা আমার অচেনা । 

শুধু আমার শেষের দিকের তিনটে ছেলেমেয়ে, পারুল, বকুল আর সুবল, 
যাদের দিকে আম কোনাঁদন ভাল করে তাকাই 'ন, যাদের 'গড়বার' জন্যে বৃথা 
চেষ্টা করতে যাই দন, তারাই যেন মাঝে মাঝে আশার আলো দেখায়। মনে হয় 
ওই দাঁজঁপাড়ার গাঁলতে বোধ হয় ওদের শেকড় বসে নি, ওরা স্বতল্ম। ওরা 
[নজের মনে ভাবতে জানে। 

তবু ওদের সঙ্গেই কি আমার পাঁরচয় আছে? 

ওরা কি আমার অন্তরঙ্গ ? 

নাঃ বরং মনে হয়, ওরা আমাকে এড়ায়, হয়তো বা-হয়তো বা আমাকে 
ঘেক্া করে। 

আর ভয় তো করেই, আমাকে নয়, আমার আচরণকে। ওরা হয়তো 


স,বণ লঙ। ৩২১ 


আমাকে বুঝতে চেম্টা করলে বুঝতে পারতো । কিন্তু তা করে 'নি। 

ওরা অনেক দরের। 

তবু ওরা যে ওদের দাদা-দাঁদর মতন নয়, সেইটুকু আমার সান্ত্বনা আমার 
সুখ । 

. পারুর মুখে আম মাঝে মাঝেই আর এক জগ্গতৈর আলো দেখাঁছ, পারু 
লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখে এ আম বুঝতে পারতাম । কিন্তু পারুর জন্যে 
আমার দুঃখ হয়, পারুর জন্য আমার ভাবনা হয়। বড় বোঁশ আঁভমানী ও। 
ওর ওই আঁভমানের মূল্য কি এই সংসার দেবে? বুঝবে ওর স্বার্থবুদ্ধিহধীন 
কাঁবমনের মূল্য ? 

হয়তো আমার মতই যন্ত্রণা পাবে ও। আঁভমানের জৰীলাতেই আমি জীর্ণ 
হলাম! 

তবু আম চিরদিনই প্রাতিবাদ করোছ, চেশ্চামেচি করেছি, অন্যায় আঁবচারের 
[বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করোছি। 

ও তা করবে না। 

ও ওর মায়ের মত অসভ্য হবে না, রূঢ় হবে না, সকলের অপ্রিয় হবে না! 
কারণ ও শান্ত, ও মৃদু ও সভ্য। ও শুধু আভমানীই নয়, আত্মাভিমানী। ও 
ওর প্রাপ্য পাওনা না পেলে নীরবে সে দাবি ত্যাগ করবে, ও অন্যায় দেখলে 
নিঃশব্দে নিজেকে 'নালপ্ত করে নেবে । ও অপরকে “ভালো” করে তোলবার বৃথা 
চেষ্টা করবে না। 

জানি না পারুকে যার হাতে তুলে দিয়েছি, সে পারুকে বুঝতে চেম্টা করছে 
িনা। ওকে বোঝা শত্ত। নিজের সম্পর্কে ওর ধারণা খুব উশ্চু। ও আমার 
এই শেষাঁদকের অবহেলার মেয়ে। চাঁপা-চন্ননের মত অত রূপও নেই, বিদুষণ 
হবার সুযোগও পায় নি, তবু নিজেকে ও 'তুচ্ছ' ভাবতে পারে না। ওর এই 
মনের 'দায়' কে পোহাবে? হয়তো সেই দায় ওকে নিজেকেই পোহতে হবে। 
আর সেই ভার পোহাতে পোহাতেই ওর সব সুখ-শান্ত যাবে। নিজেকে বই- 
বার কম্ট যে কী, সেতো আম জান! “পারুকে আমরা রীতিমত সপান্রের 
হাতে দিতে পেরোছ'_ এই আমার স্বামীর গর্ব। আরও দু জামাইয়ের থেকে 
অনেক বিদ্বান আর রোজগারী পারুর বর। 

আর রোজগার, কুলীন আর বনেদী ঘর, এই তো “সুপাত্রের 
হিসেব, এই দেখেই তো বিয়ে দেওয়া। কে কবে দেখতে যায়, তার রুচি, 
চিন্তা কি. জীবনের লক্ষ্য কি? 

দেখতে যায় না বলেই এত আমল! 

তলায় তলায় এত কান্না! 

শুধু যে মেয়েমানুষই কাঁদে তাও তো নয়। পুরুষেও কাঁদে বৌক। তার 
অন্তরাত্মা কাঁদে। 

সবাই তো সমান নয়, কেউ হয়তো ছোট সুখ, ছোট স্বাঁস্ত, ছোট গাঁণ্ডি_ 
এইতেই পরম সন্তুষ্ট, কারো বা অনেক আশা নিয়ে ছুটোছুটি। 

দোষ কাউকেই দেওয়া যায় না। 

শৃধূ ভাগ্যদেবী যখন দুটো দ; প্রকাতির মানুষকে এক ঘানতে জনড়ে 
দিয়ে মজা দেখেন তখনই অশেষ কল্ট। 

আমার স্বামীকে স্বামী পেয়ে সুখী হবার মত মেয়েই কি জগতে 'ছিল 


৯ 


৩২২ সবর্ণলতা 


লা? 

অথচ তারা হয়তো উদার, হৃদয়বান, পণ্ডিত স্বামীর হাতে পড়ে সে 
স্বামীকে অতিম্ঠ করে মারছে। 

বিরাজের কথাই ধার না। 

[বরাজ তো তার ভাইদের মতই স্বার্থপর, সঙ্কীর্ণীচত্ত. পরশ্রীকাতর আর 
সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, অথচ তার স্বামী কত ভাল, কত উদার, কত ভদ্র! 

বিরাজ মৃতবৎসা। 

ডান্তারে বলেছে এটা বিরাজেরই দেহের ুটি, তবু বিরাজ স্বামণীকেই 
দোষ দেয়. স্বামীর চাঁরন্লে সন্দেহ করে। বিরাজকে নিয়ে ঠাকুরজামাই চিরাদন 
দণ্ধাচ্ছে। 

প্রকীতির পার্থক্য! এর বাড়া দুঃখ নেই। 

তাই মনে হয়, হয়তো পারুর কপালেও দুঃখ আছে। 


কিন্তু বকুল? 

বকুল একেবারে ভিন্ন প্রকাতির। 

বকুল নিজের তুচ্ছতার লঙ্জাতই সদা কুণ্ঠিত। ছেলেবেলা থেকেই দেখোছি 
ও যেন নজের জল্মানোর অপরাধেই মরমে মরে আছে। ও যে ওর মায়ের বুড়ো 
বয়সের মেয়ে, ও যে অনাকাঁজ্ক্ষত. ও অবহেলার, ও.যে অবান্তর, এই দুঃখময় 
সতাট বুঝে ফেলে সংসারের কাছে ওর না আছে দাঁব, না আছে আশা! তাই 
এতটুকু পেলেই যেন বর্তে যায়। পারুর ঠিক উল্টো । 

পারৃও মুখ ফুটে কোনাঁদনই কিছ: চায় লা, কন্তু পারুর মুখের ভাবে 
ফুটে ওঠে, ওর প্রাপা ছিল অনেক, খেলোমি করার রুচি নেই বসেই ও তা নিয়ে 
কথা বলে না। 

আশ্চর্য! একই রন্তমাংসৈ তৈরি হয়ে, একই ঘরে মানুষ হয়ে, এমন সম্পর্ণ 
[বপরণত প্রকৃতি কি করে হয় 2 

কোথা থেকে আসে নিজস্ব 'চল্তা ভাব ইচ্ছে পছন্দ ? 

অথচ দুই বোনে মতান্তরও নেই কখনো । বেচারী বকুলের যা কিছ কথা 
সবই তো তার সেজদির সঙ্গে । আবার পারুলের যা কিছ স্নেহ-মমতা. তা 
বকুলের ওপর । 

মা-বাপের কাছে কোনাঁদন আশ্রয় পায় নি ওরা, বড় ভাইবোনের কাছে পায় 
ন প্রশ্রয়, তাই ওরা যেন নিজেদের একটা “কোটর' তৈরি করে নিয়ে তার মধ্যে 
আশ্রয় নিয়োছল। 

সে কোটর থেকে চলে যেতে হয়েছে পারূকে, বকুল একাই 'ননজেকে গুটিয়ে 
রেখেছে তার মধ্যে। 

তবে পারুর মত নিজের মধ্যেই নিজে মখন নয় বকুল সকলের স:খাবধানের 
জন্যে যেন সদা তৎপর। 

সংসার জায়গাটা যে নিষ্ঠুর, তা জেনে-বুঝেও ও যেন সংসারের ওপর 
মমতাময়শী। ওর মধ্যে বিধাতা একটি হৃদয় ভরে দিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে তার 
প্রকাশ বোঝা গেছে। ভীতু-ভীতু নীরব প্রকাশ। 

ওকে কাছে ডেকে গায়ে হাত বুূঙ্গোতে ইচ্ছে হয় আমার। কিন্তু চিরাদনের 
অনভ্যাসের লজ্জায় পার না। যাঁদ ও অবাক হয়, যাঁদ ও আড়ম্ট হয় ? 


গৃবর্ণলতা ৩২৩ 


আর সুবল 
সৃবজকে ঘিরে পাথরের পাঁচল! 

সুবলের মধ্যে “বস্তু আছে, সূবলের মধ্যে হৃদয় আছে, কিন্তু সুবল যেন 
সেই 'থাকাটুকু' ধরা পড়ে যাবার ভয়ে একটা পাথরের দুর্গ গড়ে তার মধ্যে 
আত্মগোপন করে থাকতে চায়। 

হয়তো-_ 

এদের বাঁড়তে “হৃদয়” ক্িনিসটার চাষ নেই বলেই সেটাকে নিয়ে এত সঙ্কোচ 
আমার ছোট ছেলের। 

কিন্তু সুবল কি এই পৃথিবীর ঝড়-ঝাপটা সয়ে বোশাঁদন টিকবে? দুর্বল 
স্বাস্থ্য ক্ষীণজশবী এই ছেলেটার দিকে তাকাই আর ভয়ে বুক কাঁপে আমার। 
কিন্তু প্রাতকারের চেষ্টা করবো সে উপায় আমার হাতে নেই। 
টি যাঁদ বাল “সুবল, তোর ম.খটা লাল-লাল দেখাচ্ছে কেন. জবর হয় নি তো? 

খ-- 

সুবল মুখটা আরো লাল' করে বলবে, 'আঃ দেখবার ক আছে ; শুধু 
শুধ্‌ জবর হতে যাবে কেন? 

যাঁদ বাঁল, “বন্ড কাশছিস সুবল: গায়ে একটা মোটা জামা দে!” 

সুবল গায়ে পরা পাতলা কামজটাও খুলে ফেলে শুধু গোঁঞ্জ পরে বসে 
থাকবে। 

রোগা বলে সুবলের জন্যে একটু বোঁশ দুধের বরাদ্দ করেছিলাম, তদবাঁধ 
দুধ একেবারে ত্যাগ করেছে সে। সেবার ভানুকে দিয়ে একবোতল টাঁনক 
আনিয়োছলাম, বোতলটার মুখ পর্যন্ত না খুলে যেমনকে তেমন লেপের চাঁলিতে 
তুলে রেখে দিল সুবল, বললো; 'থাক্‌, দামী জানস উচু জায়গায় তোলা থাক।, 

অদ্ভুত এই অকারণ আঁভিমানের সঙ্গে লড়াই করতে পার, এমন অস্ত 
আমার হাতে নেই। 

আমার বড়জা হলে পারতো হয়তো । 

হাউ হাউ করে কাঁদতো, মাথার 'দাব্য দিতো, নিজে 'না খেয়ে মরবো'- 
বলে ভয় দেখাতো। সেই সহজ কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষ হার মানতো। 

কিন্তু আম তো আমার বড় জায়ের মত হতে পারলাম না কোনাঁদন। 

সহজ আর সস্তা। 

তা যাঁদ পারতাম, তাহলে জয়াঁদর ভালবাসার উপহার সেই বইটাকে 
চিরকালের জন্যে হারাতাম না। চেয়ে-চিন্তে, কে'দে-কেটে, যেভাবেই হোক 
আদায় করে নিতাম। কিন্তু আম তা পার নি। সেই যে ও কেড়ে নিল, 
কোথায় লুকিয়ে রাখলো, আমি আর তার কথা উচ্চারণও করলাম না। বুক 
ফেটে যেতে লাগলো, তবু শন্ত হয়ে থাকলাম। পাছে ও বুঝতে পারে ভয়ানক 
কষ্ট হচ্ছে আমার বইটার জন্যে তাই সহজভাবে কথা কইতে লাগলাম। কাজেই 
€ বাঁচলো। 

বইটাই চিরতরে গেল! 

ণরটাঁদন এই জেদেই অনেক কিছু হারিয়েছি আমি। অনেক অসহ্য কম্ট 
সহ্য করোছ। ও আমাকে কম্ট 'দয়েছে, আঁম অগ্রাহ্য করেছি। অল্তত অগ্রাহ্যর 
ভাব দৌখয়োছ। 


৩২৪ সুবর্পজতা 


ভেবোছি গ্রাহ্য করলেই তো ওর উদ্দেশ্য দিম্ধ হলো! আমাকে যল্মণ 
দেওয়ার উদ্দেশ্য । ও কি আমার মনোভাব বুঝতে পারে নি? 

ভেবেছে, তাই আরো হিংন্্র হয়েছে। 

আশ্চর্য, আশ্চর্য! 

দুই পরম শত্রু বছরের পর বছর একই ঘরে কাটিয়োছ, এক শয্যায় শুয়োছ, 
এক িবেয় পান খেয়েছি, কথা কয়োছ, গল্প করোছ, হেসেওছি। 

ওর বেশি অসুখ করলে আমি না খেয়ে না ঘাঁময়ে সেবা করোছি, আমার 
কোনো অসুখ করলে ও ছটফাঁটয়ে বোড়য়েছে, আর তারই ফাঁকে ফাঁকে ও 
আমাকে, আর আম ওকে ছোবল দেবার চেম্টা করে ফিরোছ। 

অদ্ভূত এই সম্পর্ক, অদ্ভুত এই জীবন! 

দা্জপাড়ার সেই বাঁড়তে আর তিন-তিন জোড়া স্বামী-স্ত্রী ছিল, জানি 
না তাদের ভিতরের রহস্য কি? 

বাইরে থেকে দেখে তো মনে হতো, ওদের স্লঈরা স্বামীদের একান্ত বশখ- 
ভূত ক্রুঁতদাসের মত। স্বামীদের ভয়ে তটস্থ, তাদের কথার প্রাতিবাদ করবার 
কথা ভাবতেও পারে না। 

আমার ভাসূর অবশ্য এদের মত নয়, সরল মানুষ, মায়ামমতাওলা মানূষ, 
কিন্তু দিদির প্রকাতিই যে ভয় করে মরা! ও জানে *বশুরবাঁড়র বেড়াল কুকুর- 
টাকে পর্যন্ত ভয় করে চলতে হয়। স্বামীকেও করবে, তাতে আর আশ্চর্য কি! 

কিন্তু এদের? সেজ আর ছোটর ? 

এদের মধ্যে সম্পর্ক যেন প্রভু-ভৃত্যের। 

তবু মাঝে মাঝে মনে হয়, বাইরে থেকে যা দেখতে পাওয়া যায়, সেটাই 
কি সাঁত্য? আমার স্বামীকেও তো বাইরে থেকে দেখে লোকে বলে স্ত্রীর 
'দাসানুদাস', বলে 'কেনা গোলাম', বলে 'বশংবদ' ! 


গিরবালা সাবিব্লীব্রত উদযাপন করলো, 'গারবালা স্বামীর সঙ্গে একতে 
গুরুদীক্ষা নিয়ে তীর্থযান্রায় বেরোলো। শারবালা সেই যাল্রাকালে মেজ- 
ভাসুরের বাঁড় বেড়াতে এসে গল্প করে গেল কাশীতে কাঁদন থাকবে, কাঁদন 
বা বৃন্দাবনে, মথুরায়। 

গিরবালার মুখে সৌভাগ্যের গর্ব ঝলসাচ্ছিল। 

আম মূঢ়ের মত তাঁকয়ে ছিলাম সেই মুখের দিকে । ভেবে ঠিক করতে 
পারাছলাম না. এ কী করে সম্ভব! আমার সেজ দ্যাওরকে তো আম জানি! 

চারতদোষের জন্যে খারাপ অসুখ হয়োছিল ওর। এ কথা লুকোছাপা করেও 
লুকোনা থাকে নি! তাছাড়াও মানুষের শরীরে যত অসৎ বৃত্তি থাকা সম্ভব, 
যত নীচতা, যত ক্লুরতা, তার কোন্‌টা নেই ওর মধ্যে ? 

তব্‌ গারবালা আহনাদে ডগমগ করছে. লোককে দোখয়ে দেখিয়ে 
সৌভাগ্যকে ভোগ করছে। 

একে কি 'সাত্য' বলবো ? 

না এ শুধু মনকে চোখ ঠারা ? 

কে জানে মন-ঠকানো, না লোক-ঠকানো! 


বন্দ, আবার আর এক ধরনের । 


গুবর্ণলতা ৩২৫ 


ওর রাতাঁদন কেবল হা-হৃতাশ আর আক্ষেপ। ও প্রতিপন্ন করতে চায়, 
জগতের সেরা দুঃখী ও।...যেমন করতে চায় আমার বড়মেয়ে আর মেজমেয়ে 
চাপা আর চন! 

কিন্তু সাঁতযই কি ওরা আমার মেয়ে ? 

ওই চাঁপা আর চম্নন? 

আমার বিশ্বাস হয় না। মনে হয় নিতান্তই দৈব-দর্ঘটনায় ওরা পৃথিবশতে 
ভূমিষ্ঠ হবার আগে দিছৃদিনের জন্যে আমার গর্ভে আশ্রয় নিয়েছিল। ওদের 
থেকে বাঁঝ আমার ননদরা আমার অনেক বোঁশ নিকট। 

কিন্তু তার জন্যে আর আক্ষেপ নেই আমার, আক্ষেপ শুধু এই পোড়া 
বাংলা দেশের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেয়ের জন্যে । আজও যারা চোখে ঠুল 
এ'টে অন্ধ নিয়মের দাসত্ব করে চলেছে। 

আজও যারা জানে, তারা শুধু মানুষ" নয়, “যেয়েমানুষ' | 


কিন্তু সুবর্ণলতার স্মৃতিকথায় স্থানকালের ধারাবাহকতা নেই কেন? 
অততে আর বর্তমানে এমন ঘেষাঘেশষ কেন ? 

অনেক 'সুবর্ণলতা একসঙ্গে মুখর হয়ে উঠতে চেয়েছে বলে? যে যখন 
পারছে কথা কয়ে উঠছে 2..তাই সূত্র নেই ? 

গোড়ার দিকের পাতাগুলো তবু ভরাট ভরাট, তারপর সবই যেন খাপছাড়া 
ভাঙাচোরা । 

হঠাং লিখে রেখেছে, মানুষের ওপর শ্রদ্ধা হারাবো কেন? জগ বট- 
ঠাকুরকে তো দেখোঁছ, দেখোঁছ বড় ননদাইকে, দেখলাম আম্বিকা ঠাকুরপোকে। 
আবার তার পরের পাতায় এ কোন্‌ জনের কথা ? 

বাবাকে...অপমান করে চলে এলাম।...বাবার চোখ দিয়ে জল গাড়য়ে 
পড়লো। কিন্তু ক করবো এ ছাড়া আর কিছ করার ক্ষমতা ছিল না 
আমার |... 

এনকটজনদের দুঃখের কারণ হবো”__এই হয়তো আমার 'বাঁধাঁলীপ। 

আমার 'নম্ঠুরতাই দেখতে পাবে সবাই, আমার ফেটে যাওয়া বুকটা কেউ 
দেখবে না! শুধু জানবে সংবর্ণ কঠোর, সুবর্ণ কঠিন। 

জানূক। তাই জানুক... 

ভৈবোৌছলাম এই অপমানিত জীবনটার শেষ করে দিয়ে এ জন্মের দেনা 
শোধ করে চলে যাব। 

হল লা। 

ভগবানও আমাকে অপমান করে মজা দেখলেন, যমও আমাকে ঠাট্টা করে 
গেল। দেখ তবে এর শেষ কোথায়? নিজের দিক থেকে চোখ 'ফাঁরয়ে 'নয়ে 
তাকিয়ে দেখছি চারাঁদকে, দেখতে পাচ্ছি শুধু আমি একা নয়, সমস্ত মেয়ে- 
মানুষ জাতটাই একটা অপমানের পঙ্ককুণ্ডে পড়ে ছটফটাচ্ছে। কেউ টের পাচ্ছে, 
কেউ টের পাচ্ছে না। 

কারণ ? 

কারণ তারা রোজগার করে না, অপরের ভাত খায়। হ্যাঁ, এই একমানর 
কারণ। 

আর স্বার্থপর পুরুষজাত সেই অবস্থাকেই কায়েমী রাখতে মেয়েমানূবকে 


৩২৬ সুবর্ণলত 


শিক্ষার সুযোগ দেয় না, চোখ-কান ফুটতে দেয় না। দেবে কেন? বান 
মাইনের এমন একটা 'দিনরাতের চাকরান পাওয়া যাচ্ছে এমন সুযোগ ছাড়ে 
কখনো £ 

পা বেধে রেখে বলবো, ছি ছি, হাঁটতে পারে না"! চোখ বেধে রেখে 
বলবো, রাম রাম, দেখতে পায় না! আর সমস্ত আঁকার কেড়ে নিয়ে বলবো, 
দুটো ঠঁুটো' ! এ ক কম মজা? 

চিরাদন এইরকমই তো করে আসছে পৃরুষসমাজ আর সমাজপাঁতরা। 

মেয়েমানুষ পরচর্চা করে, মেয়েমানুষ কোঁদল করে, আর মেয়েমানুষ ভাত 
সেম্ধ করে” এই হল তোমাদের ভাষায় মেয়েমানুষের শববরণ। ভেবে দেখ ন। 
আর কোন্‌ মহৎ কাজ করতে 'দয়েছ তোমরা মেয়েমানূষকে ? 

দেবে না, দিতে পারবে না। 

দুবেলা দুমুঠো ভাতের বদলে আস্ত একটা মানুষকে নিয়ে যা খুঁশ করতে 
পারার আধকার, এ কি সোজা সুখ 2 ওই দুমুঠোর বানিময়ে সেই মানৃষটার 
দেহ থেকে, মন থেকে, আত্মা থেকে, সব কিছ থেকে খাজনা আদায় করা যাচ্ছে 
_তার ওপর উপাঁর পাওনা নিজের নীচতা আর ক্ষুদ্রতা বিস্তার করবার একটা 
অবাঁরত ক্ষেন্র। 

মেয়েমান্ষ যে পূরুষের পায়ের বোৌঁড়' 'গলগ্রহ' শপঠের বোঝা” উঠতে 
বসতে এসব কথা শোনাবার সুখ কোথায় পাবে পুরুষ, মেয়েমানূষ যাঁদ লেখা- 
পড়া শিখে ফেলে নিজের অন্লসংস্থান করতে সক্ষম হয় 2 

তাই পাঁকের ভরা পূর্ণ আছে। 

মুখ্য মুখ্য, বুঝবে না ওই পাঁকে নিজেরাও ডৃবছে। 

তব 

বুঝতে একাদন হবেই। 

তীব্রদৃত্টি তীক্ষকণ্ঠ এক জঞলন্তদৃ্টি মেয়ে যেন আঙুল তুলে বলছে, 
“এই মেয়েমানুষদের অভিসম্পাত একাঁদন লাগবে তোমাদের । সোঁদন বুঝতে 
পারবে চিরাঁদন কারুর চোখ বেধে রাখা যায় না। “পাঁত পরম গুরুপ্র মন্তর 
চরাদন আর চলবে না।' 

আরো কত কি যেন বলছে সেই মেয়ে, আগুনঝরা চোখে, রূটুকঠিন গলায়, 
প্ায়াশ্ন্ত করতে হবে, এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অত্যাচার আঁবচার 
এর মাপ হয় না। 


িন্তু দশ্য থেকে দৃশ্যান্তর হচ্ছে। সে অঙ্নিমৃর্তি মেয়ের এ আবার কোন্‌ 
রূপ! 

উদাস বিহব্ল স্বগ্নাচ্ছনন! 

ক বলছে ও? 

অন্ভুত অসম্ভব । 

ও না তন-ীতনটে ছেলেমেয়ের মা? 

ও ক ভূলে গেছে তাদের কথা £ তাই ওই মেঘলা দুপুরে হাতের বইখান। 
মুড়ে রেখে স্বগ্নাচ্ছন্ন চোখে ভাবছে, প্রেম, প্রেম! কি জানি কেমন সেই গজনিস 
কেমন স্বাদ ? সে কি শুধুই নাটক-নভেলের 'জানস ? মানুষের জীবনে তার 
ঠাঁই নেই? প্রেম-ভালবাসা সবই মিথ্যে, অসার ? 


সুবর্ণলতা ৩২৭ 
আমার ইচ্ছে হয় কেউ আমায় ভালবাসুক, আম কাউকে ভালবাসি। 
জানি এসব কথা খুব নিন্দের কথা, তবু চাপ চুপ না বলে পারাঁছ না- 

প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয় আমার। 
যে প্রেমের মধ্যে কাবরা জগতের সমস্ত সৌন্দর্য দেখতে পান, যে প্রেমকে 

নিয়ে জগতের এত কাব্য গান নাটক... 
একটা শিশুকে ধরে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলে, আর একটা বাঁলকাকে 


ধরে জোর করে “মা করে দলেই তার মনের সব দরজা বল্ধ হয়ে যাবে 2 যেতে 
বাধ্য ? 


॥৯৮ ॥ 


বড় ইচ্ছে হচ্ছিল স্বর্ণর, আর একবার জগন-বট্ঠাকুরের বাঁড়তে বেড়াতে 
ধায়। নিজের চোখে একবার দেখে কেমন করে ছাপা হয়। 
কমন করেই বা সেই ছাপা কাগজগুলো মলাট বাঁধাই হয়ে 
বই আকারে বোরয়ে আসে আঁট-সাঁট হয়ে। 

বই বাঁধাইয়ের কাজও নাক বাড়তেই হয় গুর, 
বাড়তে দপ্তরী বাঁসয়ে। ঘুটে-কয়লা. রেখে নিচের তলায় 
যে ঘরখানাকে বাতিলের দরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, 
সেটাই জগর দপ্তরীখানা। | 

পুন ১০৯টি নি টিন নি গা 
[জিজ্ঞেস করে। কোন কিছ খশুটিয়ে তো দরস্থান, জিজ্ঞেস করাই স্বভাব নয় 
সৃবর্ণর, তাই আশ্চর্যই হয়োছিলেন বোধ হয় শ্যামাসুন্দরী, তবু বলেও ছিলেন 
গুছয়ে গুছিয়ে কোন্খানে কা হয়! 

সূবর্ণর প্রাণটা ষেন সর্বদাই শতবাহ বাড়িয়ে ছুটে যেতে চায় সেই' জায়গা- 
গুলোয়। [ি পরম বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটছে এখন সেই চিরকালের পাঁরাঁচত 
জীর্ণ বাঁড়খানার ভাঙা নোনাধরা বালিখসা দেওয়ালের অন্তরালে । টানবেই 
তো সেই অলৌকিক স্বর্গলোক সুবর্ণকে তার সহশ্র আকর্ষণ দিয়ে। 

তাছাড়া শুধুই যে কেবলমাত্র একবার দেখবার বাসনাতেই তাও ঠক নয়, 
কেবলই ইচ্ছে হচ্ছে ওই “স্মৃতিকথা'র খাঁজে খাঁজে আরও দু-চার পাতা 'কথা' 
গুজে দিয়ে আসে। 

সুখস্মৃতিও আছে বৌক কিছু কিছু । লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা। 

যেবার সেই প্রথম থিয়েটার দেখতে গিয়োছিল সুবর্ণ প্রবোধের সঙ্গে 

হ্যা, তেমন অঘটনও ঘটোছল একবার । সেই যেবার সুরাজ এসে কতাঁদন 
যেন ছিল বাপের বাঁড় সেবার। বরাজ বেড়াতে এসে ধরে পড়লো, ণথয়েটার 
দেখাও 'দাক মেজদা! সেজদ সেই কোথায় না কোথায় পড়ে থাকে_ 

মেজদাকে ধরার উদ্দেশ্য, মেজবোৌঁদর কলকাঠি নাড়ার গুণে ঘটবেই 
ব্যাপারটা । নচেৎ আর কে এই "খরচের আবদার বহন করবে ? 

সুবোধের তো সংসার টানতে টানতেই সব' যাচ্ছে, সেজদাঁটি কিপটের রাজা, 
ছোড়দা তো 'িজেই রাতাঁদন 'নিজেকে 'গরাব' বলে বাঁজয়ে বাঁজয়ে সংসার 
থেকে সব কিছু সুখ-সাবধে আদায় করে নিচ্ছে। অতএব মেজদা! কর্তব্য- 





৩২৮ সবর্শজতা 


পরায়ণা আর চক্ষুলঙ্জাবতা মেজবৌদি যার কর্ণধার। 

' িবরাজের *বশুরবাঁড়র অবস্থা ভাল, যাত্রা থিয়েটার এসব তারা দেখে, 
বলা বাহুল্য বৌদেরও দেখায়! কিন্তু কথাটা তো তা নয়। বাপের বাঁড়তে 
এলাম, ভাইয়েরা আদর করলো, এসব দেখানোর সঙ্গো একটা মহৎখ্সুখ নেই! 
'যা করছো তোমরাই করছো”, এমন দৈন্য ভাবটা তো গৌরবের নয়। 

তা বোনের সে আবদার রেখোঁছল প্রবোধ, নিয়ে গিয়ৌছল দুই বোনকে 
আর তার সঙ্গে বৌগুলোকেও। এমন কি উমাশশীও তার হাঁড়র বন্ধন থেকে 
মুন্ত হয়ে স্পন্দিত হয়োছল। দপু্রবেলাই রান্নাবান্না সেরে নিয়োছল সে 
চলর বেগনভাজা করে। সূরাজ রাবড়ী আর রসগোল্লা আনিয়ে- 

| 

অতএব ব্যাপারটায় ষেন একটা উৎসবের সমারোহ লেগোঁছল। 

আর সৌঁদন যেন প্রবোধকে একটু সভ্য আর ভদ্র মনে হয়েছিল সংবর্ণর। 
হয়োছল ভদ্র সৌঁদন প্রবোধ। 

কেন: -. 

কে জানে! 

কে জানে সবর্ণরই ভাগ্যে, না প্রবোধেরই ভাগ্যে! মোট কথা প্রভাস 
যখন ওদের বেরোবার প্রাক্কালে বলে উঠোছল, থয়েটার দেখতে যাওয়া 
হচ্ছে না থিয়েটার করতে যাওয়া হচ্ছে'? এবং প্রকাশ তাতে “দোয়ার' দিয়ে 
আর একট; ব্যাখ্যানা করোছিল, 'যা বললে সেজদা মাইরি, থিয়েটারউীলদের 
বেহদ্দ হয়ে বেরুচ্ছেন দেখছি 'বাঁবরা-+ তখন প্রবোধই ভদ্ুকথা বলোছিল। 
বলোছিল, 'যা মুখে আসে বজলেই হল নাক রে পেকা ? গুর্দ-লঘ্‌ জ্বান নেই 
তোদের; এ বা ি, আরো কত সেজে আসে মেয়েরা! আর কত বেহায়াপনাই 
করে! দোতলার জালগুলো তো কেটে ওয়ার" করে দিয়েছে ছুড়ীরা। এ 
বাঁড়র বৌ-ঝির মতন সভ্য তুই কটা পাঁবট' 

সুবর্ণ বিগাঁলত হয়েছিল সোদন সেই মহান কথা শুনে। 'বাঁনময়ে তার 
খাটো ঘোমটার ফাঁক থেকে একাঁটি সরৃতজ্ঞ দষ্টিক্ষেপ করোছিল ওই সহসা ভন 
হয়ে ওঠা স্বামীর চোখে চোখে । আর সোৌদনই' যেন প্রথম মনে পড়োছল 
সুবর্ণর, তার স্বামীর রূপ আছে। 

রূপ ছিল প্রবোধের, বয়সের তুলনায় এখনও আছে। আর আছে এবং 
ছিল সাজসজ্জার শোৌখিনতা। টিলেহাতা গিলেকরা পাঞ্জাব পরোছল' সৌদন 
প্রবোধ, পরোছিল চুনট-করা ফরাসডাঙা ধীত, কানে আতরমাখা তুলো. মাথায় 
পারপাটণী টোর। 'যাঁদও পুরুষমানুষের এত সাজ হাসির চোখেই দেখতো 
সুবর্ণ, তবু সোঁদন যখন সুরাজ বলোছল, 'বাবাঃ, মেজদার কী বাহার গো, যেন 
বিয়ে করতে যাচ্ছে? আর তার মেজদা হেসে বলে উঠোঁছজ, "থাম তো পোড়ার- 
মুখী, ভার ফকড় হয়োছস' তখন সাত্য বলতে বেশ ভালই লেগেছিল স্মবর্ণর 
সেই হাসিটুকু। 

হয়তো প্রবোধের সোঁদন মেজাজ শরণফ ছিল, ওই নারীবাহিনীতে 'দ্বতায় 
আর কোনো পুরুষ ছিল না বলে. আর কোনো লোভী চক্ষু* তার একান্ত 
ধনজস্ব সম্পাত্তাটর ওপর দৃষ্টি দিচ্ছিল না, অতএব-- 

তাছাড়া নিজে খরচখরচা করে গাঁড়ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে এদের, এর 
টিপ এর তাই সৌঁদন উদার হয়েছিল প্রবোধ, 


গৃবর্ণলতা ৩২৯ 


ভয হয়োছিল. সুন্দর সৌদনের স্মৃতিকথা পাঁরচ্ছল্ল করে মাজা একটি প্লাসে 
এক গ্রাস জলের মত 'স্নশ্ধ শতল। 

তা সেই জলের কথাটাও না হয় থাকুক স্বর্ণর আগুনের অক্ষরের পাশে 
পাশে। নইট হয়তো বিধাতার কাছে অকৃতজ্ঞতা হবে। একটি সন্ধাও তো 
তন সুধায় ভরে দিয়েছিলেন! 

মূল বইটা ছিল শবজ্বমত্গল', তার আগে কি যেন একটা হাঁসির নাটক 
ছিল ছোট্ট একটুখানি। নাম মনে নেই, কিন্তু পাঁচ ননদ-ভাজে মলে যে 
হাসতে হাসতে গাঁড়য়েছিল তা মনে আছে। 

তারপর "বজ্বমঙ্গল'! প্রেম আর ভীন্তর যুগপৎ আবেগে গড়া সেই নাটক 
অশ্রুর মালা ঝাঁরয়োছল চোখ 'দিয়ে। হাঁস ও অশ্রুতে গড়া সেই সন্ধ্যাটর 
প্রত্যেকাট ঘটনা, প্রাতাট শব্দও যেন জীবন্ত হয়ে আছে। 

*বশুরবাঁড় থেকে একটা কায়দা শিখোছিল বিরাজ, থিয়েটারে আসতে 
কৌটো ভার্ত-ভার্ত পান সেজে আনতে হয়। পান খাবে মুঠো মুঠো, আর 
'দ্রপাঁসন' পড়ার অবকাশকালে লেমনেড খাবে, কুলাঁপ খাবে' ঠোঙা ঠোঙা খাবার 
খাবে, তবে না থিয়েটার দেখা ? 

তা করেছিল এসব প্রবোধ। 

একাঁদনের রাজা হয়ে মেজাজটাই রাজসই হয়ে গিয়েছিল তার। 

1নচে থেকে ঝিকে দিয়ে পাঁঠয়ে দিয়েছিল শালপাতার ঠোঙাভার্ত হিঙের 
কচুরি, আলুর দম, খাস্তা গজা আর অমৃতি এবং পাঁচ বোতল লেমনেড। 

উমাশশী বার বার বলোঁছিল, “ওমা, বাঁড়তে যে ছান্ট রে'ধেবেড়ে রেখে 
আসা হয়েছে গো-এখন এইসব এত খাওয়া! ৃ 

বিরাজ বলেছিল, 'ভয় নেই গো বড়গিল্নী, সে সবও উঠবে। ফহার্তর 
চোটে পেটে ডবল 1খদে।, 

আশ্চর্য, সুবর্ণরও সোৌঁদন ওই নেহাং মোটা কৌতুকের কথাগুলোও দিব্যি 
উপভোগ্য মনে হয়োছিল, খেয়োছল। সকলের সঙ্গে, আর কখনো যা করে নি 
তাই করোছিল, মৃঠোভার্তি পান খেয়োছল। 

প্রথমে খেতে চায় নি, সুরাজই জোর করোছল, "খাও না বাবা একটা' জাত 
যাবে না।, ২ ৫০ এ 
এনেছে বিরাজবালা-_ 

ধতবে দাও তোমাদের নবাবী পান একটা, দোথ খেয়ে বেগম বনে যাই কি 
না-_» বলে হেসে একটা পান নিয়ৌছল সূবর্ণ। তার পরই কেমন ভাল লেগে 
গেল, পর পর খেয়ে নল অনেকগুলো । তারপর বাঁক ঝাঁক লেমনেড্‌। তার 
স্বাদটা কি লেগে আছে গলায়? 

থিয়েটারের সেই িটার ভাঙা কাঁসরের মত গলার স্বরটা যেন হঠাৎ সেই 
দূর অতীত থেকে এসে আছড়ে পড়ল-_দ্জপাড়ার সুবোধবাবুর বাঁড় গো? 
-'দার্জপাড়ার সুবোধবাবুর পেবোবাবূর বাঁড় গো"! 

অভ্যাসবশত প্রথমে দাদার নামটা বলে ফেলে শেষে আবার নিজের নামটাও 
গুজে দিতে সাধ হয়োছল প্রবোধের। 

থিয়েটার দেখা হলো, খাওয়া-দাওয়া হলো, শেষ অবধি আবার ঘোড়ার 
টি ০০-০৭-০৬৫৯ 


৩৩০ সুবর্ণলতা 


মাথায় উঠে গাড়োয়ানের পাশে গিয়ে বসলো প্রবোধ, নেহাংই উমাশশশী গাঁড়তে 
আসান বলে। তবু বিরাজ যখন বলে উঠলো, “যাই বল বাপ, মেজদার সঙ্গে 
বোরয়ে সুখ আছে" তখন বড়ভাজের উপাস্থাত ভূলে বলেই ফেলল প্রবোধ, 
'সুখ না দিয়ে রক্ষে আছে? মহারাণীর মেজাজ তা হলে সপ্তমে উঠবে না? 

থিয়েটার কি আর কখনো দেখে নি তারপর সংবর্ণ 2 

দেখেছে বৌক। দেখে নি বললে পাতক। কিন্তু সে আস্বাদ আর আসে 
নন, দেখেছে মানে 'দেখিয়েছে'। যখন ননদরা এসেছে, গেছে, অথবা কাউকে 
আদর জানানোর প্রয়োজন পড়েছে. থিয়েটার 'দেখানো” হয়েছে। আর কে সেই 
দায় নেবে সুবর্ণ ছাড়া ? 

অতএব মাঝে মাঝে নিজেকেও যেতে হয়েছে তাদের সঙ্গে। 

একবার তো প্প্রহ্তাদ চঁরিত' দেখাতে মুস্তকেশী এবং তস্য সখী 
হেমাঙ্গনীকে নিয়েও যেতে হয়েছিল। আর সঙ্গে ছিল সৃশীলা। এবং 
প্রবোধ। 

মা. মাসী. দাদর সঙ্গে বৌকে নিয়োছল প্রবোধ। এ বেহায়াপনাটুক্‌ 
করেছিল সে। সন্ধ্যেবেলা বাঁড়তে অতক্ষণের জন্যে রেখে যেতে যেন মন সায় 
দেয় না। তাস খেলতে খেলতে তবু এক-আধবার ছুতো করে উঠে এসে দেখে 
যাওয়া যায়, এতে তো সে উপায়ও দেই । অতএব চক্ষুলজ্জার দায়মুক্ত হওয়াই 
শ্রেয়। 

পাঁচজনকে অবশ্য শুনিয়ে শুনিয়ে ললতে হয়েছে, “মা তো জানেই না 
কোথায় বসতে হয়, কখন কখন উঠে আসতে হয়। মেজবৌ তবু ওতে পোল্ত।' 

সুবর্ণ অবশ্য এই একা সুযোগ নেওয়ার পক্ষপাতী নয়, কিন্তু ইদানীং 
সেজবাবু ছোটবাবু তাঁদের বৌদের হ্যাংলার মত অপরের পয়সায় থিয়েটার 
দেখতে যাওয়ায় মানের হান বোধ করাছলে্ন, তাই নানা অজৃহাত দোঁখথয়েছেন 
তাঁরা। আর উমাশশীর তো 'সংসারের অসুবিধে ভাবলেই মাথায় আকাশ 
ভাঙে। 

তাই ইদানীং যা যাওয়া হয়েছে, যেন কর্তব্য করতে । সেই প্রথম দিনের 
উচ্ছল আনন্দ অনুপস্থিত থেকেছে । সোঁদনটি আছে সোনার অক্ষরে লেখা ।... 

কারণ_কারণু সে সন্ধ্যার রান্রটাও হয়োছল বড় সুন্দর। সরাজ 
বলোছল, 'আজ রাতটা আমরা ননদ-ভাজে গল্প করে কাটাবো ঠিক করোছি 
মেজদা. তোমার ঘরেই আমাদের স্থাতি। তুমি বাপু কেটে পড়। শুয়ে পড়গে 
ও-ঘরে।, 

আর আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রবোধ জলে ওঠে নি, কট ক? বলে ওঠে নি 
এবং কলে-কৌশলে শেষ অবাধ সবর্ণকে কবাঁলিত করবার চেষ্টা করে ি। এবং 
একটা হাই তুলে বলোঁছল, 'গল্প করে রাত জাগার কি ব্? এতক্ষণ থিয়েটাব 
দেখে এসে? আমার তো ঘূমে শরীর ভেঙে আসছে! 

আর তারপর হঠাৎ একট: হেসে উঠে বলেছিল, “আর যা নাটক দেখে এলাম 
বাবা, মনে হচ্ছে স্ব্ী-পুর্ের ওপর এতটা আসান্ত না রেখে ভগবান-টগবানের 
কথাই ভাবা উাঁচত।, 

"রে বাস, একেবারে কা তব কান্তা কস্তে পাত্র! অনুচ্চ হাস হেসে 
বলে উঠোছল সুবর্ণ, আর প্রবোধ অলক্ষ্যে তার পিঠে একটা চিমটি কেটে 
সত্যই চলে গগিয়োছল শয়নকক্ষের দুরন্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে।... 


কী মুক্তি! 

কী মুন্তর আস্বাদ! 

সহবর্ণর বিবাহত জাঁবনের মধ্যে সে ম্যান্তর স্বাদ আর কবে এসেছে তার 
আগে অথবা পরে ? 

কবে এমন স্বেচ্ছায় দাবি ত্যাগ করে ঘুমোতে চলে গেছে প্রবোধ ? কাজের 
বাঁড়টাড়িতে অসুবিধেয় পড়ে ঘরের অকুলান হলে গজরেছে. ছতো করে এসে 
আগে-ভাগে শুয়ে থেকেছে। 


যারা গল্প করে রাত কাটাবে বলে আহমাদ জানিয়োছল, তারা তো তখনি 
গড়াগাঁড়। স্বর্ণ ঘুমোয় নি সে রাতে। এই মধুর অবকাশটুকু তাঁরয়ে 
তারিয়ে উপভোগ করেছিল। আর অচ্ভুত একটা কাজ করে বসোঁছল সে সেই 
রাতে। 

সেই প্রথম। 

হাঁ” সেই প্রথম একটা পদ্য লিখে ফেলোৌছল সুবর্ণ। 

এখন অবশ্য সে পদ্য ভাবলে হাঁসি পায়, তবু সেই তো প্রথম। পুরনো 
পচা একখানা খাতার হলদে হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠায় আজও আছে সেটা । ছিশড়ে 


এবং আশ্চর্য, আজও মুখস্থ আছে সেটা! 
কালটা তো আগের, ভাষাও অতএব তদ্রুপ । কিন্তু সৌদন সেই কাঁবতা 
লিখে ফেলে কী অপূর্ব পুলকস্বাদে ভরে শিয়োছিল মন! মনে হয়োছিল 
কাঁবদের মতই তো হয়েছে ঠিক! গুরাও কি এই রকমেরই লেখেন না! 
অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশেতে থাঁক, 
পাথবীর পানে কি গো মেলে থাকে আঁখি? 
দেখিলে দেখিতে পাবে তারই দিকে চেয়ে 
জাগিয়া কাটায় এক প্াণথবীর মেয়ে। 
শিঞ্জরের পাখীঁসম বন্দী তার প্রাণ, 
উধর্ আকাশেতে ষেন কি করে সন্ধান! 
কিন্তু হায় কাটে সুর, ভেঙে যায় মন, 
রুদ্ধ করি দিতে হয় মূস্ত বাতায়ন । 
নজ্চুরা পৃথবী আর প্রভাত নিম্ঠুর। 
নিশনথের সব স্বপ্ন করে দেয় চূর। 
জেগে ওঠে শত চক্ষু, আসে দরখ গ্লানি, 
নীরবে ঘোরাতে হয় নিত্যকার ঘানি। 
তা এই সেকেলে ভাষার পদ্যকে আর একালের খাতায় স্থান দেবার বাসনা 
নেই, কিন্তু সেই 'দিনটাকে ঠাঁই দিতে ইচ্ছে করে। 
জনবনের প্রথম পদ্য লেখার 'দন। 
সেই 'দনাঁটর পুলক-স্বাদ নিয়ে খাঁনকটা লিখে ফেলে। 
আর একবার মামীশাশুড়ীর বাঁড় যাবার সংকল্প স্থির করোছিলো সুবর্ণ, 
তবু হচ্ছেও না যেন। 
কারুরই কিছু মনে করবার কথা নয়, মা একটা ঘোড়ার গাঁড় ভাড়া করে 
বাঁড়র বিয়ের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে, এতে আর এখন অবাক হয় না সুবর্ণর 


৩৩২ সুবর্ণলতা 


ছেলেমেয়েরা। মুস্তকেশীর মৃত্যু ও শ্রাম্ধকার্ধের ব্যাপারে ওটা হঠাৎ কেমন 
চালু হয়ে গেছে। কিন্তু সূবর্ণলতার কেন মনে হচ্ছে ওরা সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে 
ভাববে, হঠাৎ মামীশাশুড়ীর ওপর এত ভান্তর হেতুঃ এই তো সোঁদন 
গেলেন! 

যাই যাই' করেও তাই দিন গড়ায়। 


১৯) 


কন্তু সুবর্ণলতার স্মণতর পক্ঠায় 'কবিতা লেখার দিনে'র স্মৃতি আর কইঃ 
তার পাতায় পাতায় খাঁচার পাখীর ডানা ঝটপটানির 
গব্দটাই তো প্রথর। 

তবে তাকে তার সেই স্মাতির জানলা থেকে-কাঁবিতা 
পড়তে দেখতে পাওয়া যায়। কে জানে কোথা থেকে 
সংগ্রহ করে, আর কেমন করেই বা পায় ছাড়পন্ত্র, তবু 
দেখা যায়, যে বাঁড়তে ছেলেদের পাঠ্যপুস্তক আর 
নুতন পার্জিকা ২'গ্া আর কোনো বই আসত না, সে 
বাড়তে কোণের দিকের একটা ঘরে খাটের তলায়, দেয়াল- 
আলমারতে. জানলা-দরজার মাথার তাকে তাকে থাকে-থাকে জমে ওঠে বই, 
কাগজ, পন্রপান্রকা। 

হয়তো ঘরের প্রকৃত মাজিক শাসন করে করে 'এলে' গিয়ে হাল ছেড়ে 
দিয়েছে। নইলে কিশোরী সুবর্ণলতার স্মৃতির ইতিহাসে তাত্র বই কেড়ে নিয়ে 
ফেলে দেওয়া, ছিড়ে ফেলা, পুড়িয়ে দেওয়া, সব িছুর নাজরই তো আছে। 
শাসনকর্তা শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়েছে । অথবা হয়তো দেখেছে, এতেই পাখাঁটা 
ঝটপটায় কম। 

আরও পাখী তো আছে এ-বাড়ির খাচায়, কই তারা তো এমন করে না! 
বরং তারা আড়ালে বলাবাঁল করে, ধাঁন্য বেহায়া মেয়েমানুষ বাবা, এত 
অপমানের পরও আবার সেই কাজ । আমরা হলে বোধ হয় জীবনে আর ও বস্তু 
আঙুলের আগা দিয়েও ছূস্তাম না। আর মেজবাবুরও হচ্ছে মুখেই মর্দানি! 
বজ্জআঁটুনি ফস্কা গেরো ! 

সুবর্ণলতা তার 'আড়ালে'র কথা টের পায় না। সবর্ণলতা তার আপন 
আবেগ আর অনুভূতির পাঁরমন্ডলে বিরাজ করে। তাকে বেহায়া বজ বেহায়া, 
অবোধ বল অবোধ। 

তা হয়তো এক হিসেবে অবোধই। 

নইলে উমাশশীদের কাছেও এক এক সময় ছুটে যায় সে এক-একটা নতুন 
অনুভূতির আবেগ 'িয়ে। হয়তো শীতের দুপুরে উমাশশী রোদে বসে বাঁড় 
দিচ্ছে, ারবালা পশমের রং মিলিয়ে খুণ্চেপোষ' বুনছে আর বিন্দু রোদেই 
একট: গাঁড়য়ে নেবে বলে মাদুর বিছোচ্ছে, স্বর্ণ সেখানে যেন আছড়ে এসে 
পড়ে। উত্তেজিত আরন্ত মুখ আরো লালচে করে বলে, দাদ, জীবনভোর শুধু 
বাঁড়ই দিলে, জানলে না এ জগতের কোথায় ক আছে! শোনো, শোনো এক- 
বার, পুরুষ কবি কেন করে ফুটিয়ে তুলেছেন মেয়েমনের কল্ট-দুঃখ!' বলে, 





খা. । ০৩৩ ৩৩৩ 


কিন্তু চেয়ে দেখে না, ওরা "জগতের কোথায় কি আছে" জানবার জন্যে 
উদস্্রীব হয়ে তাকাচ্ছে, না পরস্পর কোতুকদৃণ্টির 'বাঁনময় করছে । কৌতুক 
তো করেই তারা সবর্ণকে নিয়ে। ওটি ষে একাঁদকে যেমন তেজণী অহঙ্কার 
আসপদ্দাবাজ, আর একাঁদকে তেমান বদ্ধ পাগল। হাসবে না ওকে নিয়ে £ 
ওরা সবর্ণর ওই ছেলেদের পড়া মুখস্থর মতন চেশচয়ে চেপচয়ে পদ্য পড়া 
দেখলে হাসে। বদ্ধ পাগলটা অবশা ততক্ষণে শুরু করে দিয়েছে-_ 
“বেলা যে পড়ে এল জল্‌কে চল! 
পুরনো সেই স্‌রে কে যেন ডাকে দ্‌রে_- 
আবেগে থরথর করে গলা, চোখ "দিয়ে অসতর্কে কখন জল গাঁড়য়ে পড়ে। 
আর ভাবে, পদ্য না বুঝুক প্রাণশানংডানো ওই মর্মকথাটুকু তো ওদের মর্মে 
[গিয়ে পেশছচ্ছে।...বেচারীরা চোখ বুঝে দিন কাটাচ্ছে, হঠাৎ হয়তো এতেই 
চোখ ফুটে যাবে। বুঝতে পারবে এই প্রাণপাত করে সংসার করা, ওই ভয়ে 
সশাঁঙ্কত হয়ে থাকা' সব বৃথা, এখানে আমাদের কেউ 'আপন' ভাবে না। 
এখানে সবাই আমরা-_ 
“ফুলের মালাগাঁছ বিকাতে আঁসয়াছি 
পরখ করে সবে করে না স্নেহ। 
আর এও বুঝূক, জগতে এমন হদয়বান মহৎ পুরুষও আছেন, যান 
নিরুপায় মেয়েমানুষের এই যন্ণা অনুভব করেন, তাকে ব্যন্ত করবার ভাষা 
যোগান। আশ্চর্য, আশ্চর্য! কি করে জানলেন রাঁব ঠাকুর-_ 
'এখানে মিছে কাদা 
দেওয়ালে, পেয়ে বাধা, 
কাঁদন ফরে আসে আপন কাছে।' 
কি করে টের পেলেন__ 
“সবার মাঝে আম 
[ফার একেলা, 
কেমন করে কাটে 
সারাটি বেলা, 
ইন্টের পরে ইপ্ট, 
মাঝে মানৃষ-কীট, 
নাঁহক ভালবাসা 
নাহক খেলা? 
এমন স্পম্ট করে বলাও বুঝতে পারবে না চিরবান্দিনী উমাশশী 2 বুঝতে 
পেরে ভাববে না-আমাদের এই যে অবস্থা, তা তো কই আগে জানতাম না! 
ক অন্ধই 'ছলাম ! 
ওদের চোখ খুলতে বসে সুবর্ণ” আর হঠাৎ একসময় নিজেরই চোখ খনলে 
ধায় ওর। 'গারবালা সহসা শশব্যস্তে বলে ওঠে. 'গলাটাকে একটু খাটো করো 
মেজাঁদ, নিচে যেন কার চাঁটর শব্দ পেলাম, ছোটঠাকুরপো এলেন বোধ হয়, 
আর সেই বলে ওঠার ঢিল খেয়ে চমকে তাকিয়ে উঠে দেখে স্বর্ণ, উমা- 
শশশর ইত্যবসরে দ:কুলো বাঁড় দেওয়া হয়ে গেছে, আর বিন্দু ঘুমের অতলে 
তাঁলয়ে গেছে। 
“মর, চটির শব্দে কান খাড়া করেই মর তোমরা । জেলখানাই সুখের সাগর 


৩৩৪ সুবর্ণজতা 


তোমাদের” বঙ্গে রাগ করে উঠে যায় সুবর্ণণ আর নিজের ঘরে বসে বইটা 
ভুলিয়া আছস হাঁ গো, 
ফোঁটা ফোঁটা করে জল গাঁড়য়ে পড়ে বড় বড় চোখ দুটো 'দিয়ে। 


এমন ঘটনা কতাঁদনই ঘটে। 
প্রবোধ প্রায়ই ভারণ থমথমে অন্য জগতে হারিয়ে-বাওয়ামন সপেকে কাছে 
পায়। 
কাজেই দোষ দেওয়া যায় না জকে যাঁদ সে বলে, 'এই এক রাঁব ঠাকুর 
হয়েছেন দেশের মাথাটা খাবার জন্যে! মেয়েমানূষগুলো যাবে এবার উচ্ছম্নে। 
সেই যে বলে না__ 
“পদ্ম গেল পটল গেল গুগলি হল আঁখি, 
আর শাঁলক গেল ফিঙে গেল আরশোলা হল পাখী!" 
“হেম বাঁড়ুয্যে, ঈশ্বর গুপ্ত তো ছার- তোমার মতে বোধ হয় তোমার ওই 
রাব ঠাকুর মাইকেলের চেয়েও' বড় কাব! 
সুবর্ণ মাথা তুলে ওই বিুপমাখা মুখের দিকে তাকায়, আর তারপর 
এঁতিহ্য সম্পূর্ণ ধূলিসাং করে মুখ 'ফাঁরয়ে বলে, 'তোমাদের মত 
মুখ্যাদের কাছে আম ছুই বলতে চাই না 


কিন্তু এসব কবেকার কথা ? 

খাঁচার পাখীর এই ডানা ঝটপটানির কাহনী! 

এসব তো সুবর্ণলতার বহু পুরনো কথা। 

যেসব কথা খাতায় লিখে গেলে মূল্যহীন, বিবর্ণ, একঘেয়ে । তাই খাতায় 
তোলা হয় না, শুধু স্মৃতির ঘরের চাঁবট। খুললেই একসঙ্গে বোরয়ে আসতে 
চায় অনেকে হুড়মুডিয়ে একাকার হয়ে। 

কিন্তু খাঁচার পাখীর ডানা ঝটপটানোর বাইরের বৃহৎ পৃথিবী তো 'স্থির 
হয়ে থাকে না। 

খাঁচার পাখী আকাশের দিকে চোখ মেলে আর্তনাদ করে, পাখার মালিক 
খাঁচার শিক শন্ত করতে চেষ্টা করে, বৃহৎ পাঁথবী তাকে উপহাস করে এগিয়ে 
যায়, আকাশকে হাতের মুঠোয় ভরে ফেলবার দুঃসাহসে হাত বাড়ায়...কাঁবরা 
শিল্পীরা নিঃশব্দে আপন মনে অচলায়তন ভাঙার কাজ করে চলে, বিচারকের 
মন সশব্দ প্রাতবাদ তোলে, শিকলদেবীর পূজার বেদীতে শাবল-গাইতির ঘা 
পড়ে, তার মধ্যে দিয়ে সমাজ-মন আবিরাম ভাঙা-গড়ার পথে দ্রুত ধাঁবত হতে 
থাকে। 

তাই সহসা একদিন সচকিত হয়ে দেখা যায় কখন কোন্‌ ফাঁকে অবরোধের 
বস্্রমন্ট যেন শাথল হয়ে এসেছে, অবগনণঠন হুস্ব হয়ে গেছে, রাজরাস্তাট। 
যে একা পুরুষের কেনা জায়গা নয়, সেটা ওই স্বপাবগুশ্ঠিতারা যে বুঝে 
ফেলেছে, ওদের চোখে-মুখে আচারে-আচরণে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। 

আর কতকগুলো দুঃসাহসী মেয়ে ইতিমধ্যেই ঝাঁপয়ে পড়েছে সেই 
রাস্তায়। তারা গিকোঁটং করছে, মার খাচ্ছে, জেলে যাচ্ছে। আসমদ্রহিমাচল 
একাঁট নামে স্পাঁন্দিত হচ্ছে, একাঁটি কণ্ঠের ডাকে ছুটে আসছে। 


নুবর্ণলতা ৩৩৬ 


সে নাম "াম্ধীজশী'। 

সে ডাক “একলা চল রে।। 

কবির ভাষা প্রোমকের কণ্ঠে উচ্চাঁরত হচ্ছে। 

দেশপ্রোমক, মানবপ্রোমক! 

দর্জপাড়ার গাঁলও বুঝি আর চোখে ঠ্ল এ*টে থাকছে না। সেখানেও 
নাক ছেলেরা বলছে শবাঁলাত সাবান মাখা হবে না আর' এবং বন্দ আর 
'গাঁরবালা নাকি 'বালীত নূন আর চাঁন বাঁতল করে 'ককর্চ' আর 'দোলো' 
খাচ্ছে, এবং বাজার থেকে 'বালাত কুমড়ো বালতি আমড়া আর 'বালাত বেগুন 
আনা নিষেধ করে দিয়েছে। 

আবাল-বম্ধ-বনিতা, ইতর-ভদ্র, শাক্ষিত 'নরক্ষর সবাই এক কথা কইছে, 
কেউ আর এখন বলছে না 'রাজত্বটা বৃঁটিশের' ৷ সবাই বুঝে ফেলেছে ওরা অন্যায় 
করে দখল করে আছে, অতএব ন্যায়ের দখল নিতে হবে। সবাই জেনে গেছে 
মহাত্মা গান্ধী "্বরাজ এনে দেবেন 

'ফাঁসর মণ্টে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান" এ হয়তো তাদেরই ধস্তে 
ভেজা মাটির ফসল। তারা বীজ পুতে রেখে গেছে। এখন এসেছে আর এক 
মালী তাতে জল দতে। 

ফল ? 

খাবে দেশের লোক। খেলো বলে। 

সদ্য ফল যে হাতে হাতেই 'মিলবে। যারা পুলিসের গুতো খাচ্ছে, বুটের 
ঠোক্ধর খাচ্ছে, জেলের ভাত খাচ্ছে, তারা কম্টের শেষের পুরস্কার খাবে সেই 
ফল। 

কিন্তু সুবর্ণলতার মনের মধ্যে কেন তেমন সাড়া নেই? যে সুবর্সলতা 
স্বদেশীর নামে টগবাঁগিয়ে ফুটতো, সে কেন স্বরাজের ব্যাপারে এমন 'মইয়ে 
আছে? 

দেশে যখন নিত্য-নতুন ঢেউ আসছে, যখন কলভাঙা প্লাবন আসছে, 
প্রবোধের তো তখন সবদা সশ্শাঙকত অবস্থা । আর বুঝ রাখা যাবে না ওকে 
গৃহ-কোটরে। হঠাৎ কোনাঁদন শুনবে, মেয়ে দুটোকে নিয়ে পিকোঁটং করতে 
বোরয়ে গেছে স:বর্ণলতা লাজ-লজ্জা বিসর্জন 'দিয়ে। 

িল্তু কই? তেমন উন্মাদনা কই? 

কানু যোদন একটা চরকা কিনে বললো, 'মা, বাজে গাল-গল্পে দিন না 
কাটিয়ে এবার প্রা মানট সূতো কাটতে হবে, এই চরকা-কাটা সুতোয় 
কাপড় বুনিয়ে পরতে হবে সবাইকে” সোঁদন তো কই সংবর্ণ ওই নতুন জানস- 
টার ওপর ঝাঁপয়ে এসে পড়ল না ? বলল না, 'তোকে দু হাত তুলে আশীর্বাদ 
কার কানু, আমার মনের মত কাজ করালি তুই 

না, সে কথা বলল না সবর্ণ, শুধু একট হেসে বললো” 'গাল-গল্প আবার 
কে করছে রে এত ?' 

'আহা গাল-গল্প না হোক. নাটক-নভেল পাঠ! একই কথা! মোট কথা 
সময়ের অপচয়। আর অপচয় করা চলবে না।, 

চলবে না বুঝি? আরও একটু হেসোঁছল স্বর্ণ, “তবে চরকাটাই চালা। 
তোদেরই এখন সামনে সময়। আমার তো এখন সময়ের সম্বল সব পেছনে 
ফেলে চলে আসা জশীবন।' 


৩৩৬ সুবর্ণলতা 


'চমংকার! কত কত আশী-নব্বুই বছরের বুড়ো-বুড়ী চরকা কাটছে তা 
জানো? রাস্তায়-চল-মানুষ পর্যন্ত তকিন কাটতে কাটতে চলেছে ।, 

'তা চলতেই পারে। যখন যা ফ্যাশান ওঠে! 

'ফ্যাশান! একে ফ্যাশান বলছো তুমি ?, 

কানু স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। 

এমন কি কানূর বাবাও। 

সুবর্ণর মূখে এ কথা অভাবনীয় বোক। 

সাধে কি প্রবোধ এই অদ্ভূত 'উল্টো-পাল্টা-কে নিয়ে গোলকধাঁধায় ঘুরে 
মরলো চিরাঁদন ? 

কানু মাকে অনেক 'ব্ধার দিয়োছল। 

বলোঁছল, 'স্বরাজ অমান আসবে না। তার জন্য ক্লেশ চাই, দুঃখ চাই। 

মস্তকেশীর নাতি, প্রবোধের বংশধর বলেছিল এ কথা উত্তোঁজত 
গলায়। 

অতএব বলতেই হবে দেশের মজা নদতে বান ডেকোঁছল। তরথাঁপ 
সংবর্ণ উত্তোজত হয় ন। সুবর্ণ আবার হেসে উঠে বলেছিল, “তা তোর এই 
সদতো কাটার মধ্যে ক্লেশই বা কই? দুঃখই বা কই? আর গেরস্তথঘরের মেয়ে- 
মানুষের অবসরই বা কই? 

কানু আরও জঙলেছিল। 

আর একবার নাটক-নভেলের খোঁটা "দিয়েছিল, সুবর্ণলতার দু-দুটো বড় 
হয়ে ওঠা মেয়ে কি রাজকার্য করে তার হিসেব চেয়েছিল। হ্যাঁ, দুটো মেয়ের 
পি কান. তখনো পারুর ঘরবসত হর নি, আর কানুর বিয়ে হয় 

। 

কানুর বিয়ে লাগলো ওই চরকার ঢেউটা একটু কমলে। অনেকের 
বাড়তেই তখন আধভাঙা চরকাটা ছাতের পসিশড়তে হি চিলেকোঠায় আশ্রয় 
পেয়েছে। শুধন কারুর দেওয়ালে চরকা-কাটা-রত গৃহিণীর বা বধূর ফটোটি 
ঝুলছে উজ্জল মাঁহমায়। 

তা সে যাই হোক-_পারুল-বকুলের কথা তুলেও মাকে নোয়াতে পারে নি 
কানু । সুবর্ণ বলেছিল, “সে ওদের ানজের থেকে ইচ্ছে হয়, প্রেরণা আসে 
করবে ওরা । আমি হুকুম দিতে যাব কেন? বিশেষ করে আমার যাতে [শ্বাস 
আসছে না।, 

তা হলেই বল উল্টোপাল্টা কনা ? 

দু-পাঁচটা ছেলে ঘরে বসে দুটো হাতবোমা বানিয়ে আর পূলিস মেরে 
দূর্ধর্য বাটশের গোলা-কারুদের শান্তকে নিঃশেষ করে ফেলবে এ বিশ্বাস 
তোমার ছল, আর এতে তোমার 'বশ্বাস নেই 2 

তা কানুর রাগের মানে অবশ্যই আছে। 

সংবর্ণর ভুল। 

কোনোটাই 'নরর্থক নয়। কোনো প্রাপ্তিই হঠাৎ আসে না। কাজ চলে 
নানা চিন্তায় নানা হাতে। বহু পরীক্ষা-ীনরীক্ষার মধ্য দিয়েই তো পরমকে 
পাওয়া যায়। 

কিন্তু একবগৃগা সূবর্ণ বলে, 'পরমকে পেতে হলে চরম মৃজ্য দিতে 
হয়।' 


সুবর্ণলতা ৩৩৭ 


অথচ ওই চরমট যে কি সেকথা বললে না। হয়তো সে ধারণাও ওর 
নেই। শুধু একটি 'বড় কথা বলনেওয়ালা ভাবের ফানুস' বৈ তো নয়। 

তবে মোটের মাথায় দেখা গিয়েছে সুবর্ণ এতখানি সূবর্ণ-সুযোগেও রাজ- 
পথে নামে নি। রাজপথের কলকোলাহলের দিকে দর্শকের দৃষ্টিতে 
দেখেছে শব্ধ । 

তবে বিদেশী জানিস বর্জন! 

সেতো বহুকাল আগে থেকেই হয়ে আসছে। ইচ্ছেয়অনিচ্ছেয় মেনেই 
নিয়েছে সবাই সুবর্ণলতার এই জবরদাঁষ্তি। হয়তো বা রাগারাঁগ কেলেওকারির 
ভয়েই। ঘরে পরে কাউকেই তো রেয়াৎ করে না সুবর্ণ! 

এ পাড়ায় বাঁড় করবার সময় থেকেই পাশের বাঁড়র পাঁরমলবাবুদের সঙ্গে 
ভাব। পাঁরমলবাবূর স্তী সর্বদা আগবাঁড়য়ে এসে নতুন-আসা পড়শীদের 
সৃবিধে-অসবিধে দেখেছেন। ৯ 
একদিন পাঁরমলবাবুর স্ব যখন বেড়াতে এসে বলোছলেন, 'দেশশ দেশলাই 
দেখেছ বকুলের মা 2 দেখে আর হেসে বাঁচ না। জব্লবার আগেই 1নভছে। 
একটা উনুন জবালাতে একটা দেশলাই লাগবে। 'বালাতর সঙ্গে আর পাল্লা 
দিতে হয় না বাবা কিছুর ।” 

তখন সুবর্ণ ফস করে বালাঁত দেশলাই কাঠির মত জলে উঠে 
বলেছিল “এসব গর্প আমার কাছে করবেন না দাদ, আমার শুনতে খারাপ 
লাগে) 

পাঁরমলবাবূর স্ত্রী মানুষ জল, তবে মাঁটর মানুষ তো নয়! অতএব হয়ে 
গিয়োছল বিচ্ছেদ। 

অনেকাঁদন লেগোঁছল মনের সেই মালিন্য ঘুচতে। বোধ কারি ছেলেমেয়ে- 
দের কারো বিয়ে উপলক্ষেই আবার আসা-যাওয়ার পথে পনার্মল। তাছড়া 
পারমলবাবুর ছেজে সৃনির্মল তো কোনোদিনই ওসব মনোমালিন্যের ধার ধারে 
ন। ঘরের ছেলের মত এসেছে, বসেছে, খেয়েছে। 

সেই আসা-যাওয়ার অন্তরালে-_ 

কিন্তু সেকথা থাক। 


॥ ২০ ॥ 


সুবর্ণর অগাধ সমুদ্রের এক অঞ্জাল জল” অগাধ স্মৃতিকথার একমুঠো কথা 
গরবার আলোর মুখ দেখবে। তাই স্বর্ণলতা মর্মীরত 
ছচ্ছে। তাই সুবর্ণ তাঁকিয়ে দেখছে না তার অন্তঃপুরে 
পা সমস্ত অনুশাসনগুলি 'নর্ভূুল পালিত 
ছচ্ছে | 


৯১-০১০ দ্বধা-দ্বন্ কাটিয়ে তার সেই 
প্রথম কাঁবতার 'দিনটি'র কাহনীখাঁন * অক্ষরের বন্ধনে 
ধল্দী করে দিয়ে একবার মামীশাশুড়ীর বাঁড় যাবার জন্যে 
প্পান্দত হাচ্ছিল।... 

তাই ছেলেকে ডেকে বলাছল, “সবল, একখানা গাঁড় ডেকে এনে দিতে 
পারবে 

১৬ 





৩6৮ সবের্গজতা 


তা এই রকমই কথা স্বর্ণর। 

'সৃবল, একটা গাঁড় ডেকে এনে দে' না বলে “এনে 'দিতে পারবে' ? 

মা-ছেলের সহজ সম্ন্ধের ধারার মর্ধযে যেন দূরত্বের পাথর পড়ে আছে 
চাঁই চাই, তাই জলটা বয়ে যায় ঘোরাপথে। 

কে জানে এই পাথরটা কার রাখা ? 

মায়ের না ছেলের ? 

সৃবলও তো বলল না, “কী আশ্চর্য, পারব না কেন? যাবে কোথায় ঃ 
চল পেশছে দিচ্ছি গিয়ে 

সুবল শুধু যাঁল্তিক গলায় উচ্চারণ করলো, “কখন দরকার ? 

সৃবর্ণলতা আহত দৃষ্টিতে তাকায়। 

সুবর্ণলতা' যেন বড় অপমান বোধ করে। 

সুবর্ণলতা তো জানে, ওর এই ছোট ছেলেটার ভিতরে হদয় আছে। তবে 
সুবর্ণলতার বেলায় কেন সে হৃদয়ের এতটা কার্পণ্য 2 যেন চেম্টা করে 
হদয়টাকে শক্ত মূঠোয় আটকে রাখে সংবর্ণলতার ছোট ছেলে। কছনতেই যাতে 
না অসতক একট স্খালত হয়ে পড়ে। 

আশ্চর্য ! 

“মা' বলে কতাঁদন ডাকেন সুবল ? 

ইচ্ছে করে না এই কাঠিন্যের সামনে এসে কোনো আবেদন করতে । তবু 
একআধ-সময় উপায়ও তো থাকে না। একা একটা ভাড়াটে গাঁড় করে এবাঁড়- 
ওবাঁড় করার সাহসটাই তো অসমসাহাঁসকতা। তবু সে সাহস দেখায় সবর্ণ, 
দুটো *বশুরবাড় একাই যাওয়া-আসা করে। তাই ৰলে পথে বোরিয়ে রাস্তায় 

থেকে গাঁড় ধরে নিয়ে যাওয়া তো চলে না? সেটাযেন সাহস নয়, 
অসভ্যতা । অন্তত সুবর্ণর মাপকাঠিতে। 

সুবল না হোক, অন্য ছেলেরা এই নিয়ে শোনাতে ছাড়ে না। বলে, 'আর 
গাঁড় ডেকে দেওয়ার “ফার্স কেন বাবা? বেশ তো স্বাধীন হয়েছ, যাও না, 

ম পড়ে ডেকে নাও গে না একথানা। 

বলে আরো বৌদের কাছে তীক্ষ! হুল খেয়ে। 

বৌদের একা এক পা বেরোবার হনকুম নেই, অথচ শাশুড়ী দব্বি_ 

তা সৃবল কিছু শোনাল না। শুধু বলো, “কখন দরকার ?' 

সুবর্ণও অতএব সেই যাল্পিক গলাতেই উত্তর দেয়, “এখনই দরকার। তা 
নইলে বলতে আসবো কেন? ঝি আসে 'ি এখনো-” 

কথা শেষ হয় না, হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে ওঠে সবর্ণর। 

নিচে ও কার গলা ? 


জগ বট্ঠাকুরের না? 

ফেন? 

এমন অসময়ে কেন ডীন ঃ 

তবে ফি বলতে এসেছেন ও বই ডান ছাপতে পারবেন না? 


িদ্তু সেই দির্জতার বিস্ময়ে অমন গলা ছেড়ে বাদ-বিতশ্ডা করবেন? 
কার সঙ্গে করছেন? 


গুবর্ণ লতা ৩৩৯ 


একটা হিন্দুস্থানীর গলা না? 

গাড়োয়ান ? পয়সা নিয়ে কচকঁচি করছেন ? 

আর বেশিক্ষণ ভাবতে হয় না। 

ছাপাখানার মালিক জগল্লাথচন্দ্রের হে+ড়ে গলা আকাশে ওঠে, “সুবজ, কই 
রে সুবল! এই যে বৌমা, তুমিই এসে গেছ। তোমার বই এনে দলাম। 
পাঁচশ' কাপ ছাঁপিয়োছ, বুঝেছ? প্রথম বই, বিয়ের পদ্যর মত 'বিলোবে তো 
চাট্রি! বোশ থাকাই ভাল। মুটে ব্যাটা কি কম শয়তান! ওই কখানা বই 
এপাড়া-ওপাড়া করতে কিনা ছ পয়সা চার়। চার পয়সার বোঁশ হওয়া উচিত ? 
বল তো বৌমা? রাগ করে দু'আঁনটাই ছণুড়ে 'দিলাম। বাল, “নে ব্যাটা, 
পান খেগে যা) 

এই বাক্যনত্রোতের মাঝখানে বকুল এসে নীরবে জ্যাঠাকে প্রণাম করে, তাদের 
জগ জ্যাঠামশাইয়ের এমন অসময়ে আবির্ভাবের কারণ ঠিক অনুধাবন করতে 
পারে না। সশো ওগুলোই বাকি? 

তা জগ কাউকে বোঁশক্ষণ অন্ধকারে ফেলে রাখেন না। সহর্ষে বলেন, 'এই 
যে তোমাদের মা'র বই হয়ে গেছে । নাও এখন বন্ধৃবাষ্থবকে বিলোও। সার্থক 
মা তোমাদের, লোকের কাছে বলতে কইতে মুখ উজ্জবল। ছাপাখানার লোকেরা 
তো শুনে তাজ্জব ।' 

বলা বাহূল্য, বকুল এর বিন্দু-বিসর্গও বুঝতে পারে না। 

মা'র বই! সেটা আবার কি জানিস! 

তাই অবাক হয়ে মা'র মূখের দকে তাকায়। 

বাকশান্ত হারিয়ে ফেলেছে সুবর্ণও। 

বই ছাপা হয়ে গেছে! 

ছাপা এত শীগৃগির হয়! 

নতুন পাঁরচ্ছেদটা আর দেওয়া গেল না তাহলে? না যাক্‌। কিন্তু 
কোথায় বই 2 ওই বঝাঁড়টায়? ঘে বাড়িটা 'সশড়র তলায় বসানো রয়েছে 2 

পুরনো খবরের কাগজে মোড়া দাঁড়বাঁধা স্ত্পণীকৃত কতকগুলো প্যাকেট- 
ভার্ত মস্ত ঝাঁড়টা জগন্রাথচন্দ্র এবার টেনে সামনে নিয়ে আসেন। 

একটা অপ্রত্যাঁশত স্তত্ধতায় আবহাওয়াটা ষেন নিথর হয়ে গেছে। 

মোটাব্‌দ্ধি জগম্বাথও যেন টের পান, কোথায় একটা স্বর কেটে গেছে। 
ভাদ্রবো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে পূলক প্রকাশ করবে না সাঁত্য, তবু ভাবে-ভঙ্গাতে 
তো বোঝা যাবে! 

যোঁদন সুবর্ণ খাতাখানা নিয়ে ছাপার কথা বলতে গিয়োছল, সোঁদনও 
কিছ আর ভাদ্রবৌয়ের রীতি পুরোপ্যার রক্ষিত হয় 'নি। আহ্মাদের একটি 
প্রতিমূর্তি দেখিয়োছিল মানুষটাকে । 

আর এখন ? 

যেন হঠাৎ সাপে কেটেছে। 

ঘোমটা তো দশর্ঘ নয় ও-বাঁড়র বৌদের মত, মুখ দেখতেই পাওয়া 
ধায়। 
অপ্রতিভের মত এদিক-ওদিক তাকান জগন্াথ, তারপর শনকনো-শখকলনো 
গাজায় বলেন, 'বাবা বাঁড় নেই? ৃ 

বকুষ আস্তে বলে, 'না, পাশের বাঁড় দাবা খেলতে গছেন। 


৩৪০ সুবর্পলতা 


অন্যাদন হলে নির্ঘাত জগন্নাথ সঙ্গে সঙ্গে হে'কে বলে উঠতেন, "গেছে 
তো' জানি। চিরকেলে নেশা । কথায় আছে, তাস দাবা পাশা, তন সর্বনাশা। 
আর ভায়া আমার ওই তিনাঁটতেই ভূবে আছেন।, 

৭ ০০ জগন্নাথের বাকস্ফত হয় না' “আচ্ছা আম এখন 
যাচ্ছি এখন যাচ্ছি।' চটিটা পায়ে গলান। 

আর এতক্ষণে সংবর্ণ মাথায় ঘোমটা টানে। আঁচলটা গলায় দিয়ে আস্তে 
গায়ের কাছে একটি প্রণাম করে। 

থাক্‌ থাক্‌, হয়েছে হয়েছে-_-', বলে চলে যান জগু। 

আর পথে বোঁরয়ে ভাবতে ভাবতে একটা সিদ্ধান্তে পেশছান_আর কিছ 
নয়, আত আহম্রদে। কথাতেই আছে, 'অক্প সুখে হাসামুখে নানা কথা কয়, 
বোঁশ সূখে চোখে জল-_-চুপ করে রয়। 

আর বকুলটা? 

ও বেচারা হকচাঁকয়ে গেছে আর কি! 

বোবা ছে বাড়িতে বি জান না 

পন এবার জোরে জোরে পা ফেলেন জগ, “ওঃ, প্রবোধ- 
০০০ সাতপরুষে কেউ কখনো বই' লেখে নি, লিখল 
কিনা ঘরের বৌ! 

মাকে গিয়ে বলতে হবে, বুঝলে মা, আহতাদে তোমার মেজবৌমার আর 
মুখ 'দিয়ে কথা সরে না! 

তা প্রবোধচন্দ্রের প্রথমটা চোখ কপালে উঠোছল বোকি। 

তারপরই বাঁড়তে উঠলো হাসির হল্লোড়। 

ছেলেরা বোধ কার এমন হৈ-ঠৈ করে হাসাহাসি করে 1ন বহুকাল “বাবা 
বলে ডেকে কথাই বা কয় কবে? 

'বাবা, মা'র বই! জগ জ্যাঠামশাইয়ের ছাপাখানার মাল! দেখো দেখো! 

1 

প্রবোধ আকাশ থেকে পড়ে, “মার বই! তার মানে 2, 

“তার মানে ? হচ্ছে, আমরা তো কেউ কখনো মা'র কিছ করলাম না, তাই 
মা নিজেই হাল ধরেছিলেন, চপ চাপ জগ জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ি শিয়ে ছাপতে 
দিয়ে এসৌছলেন। সেই “বই” ছেপে এসেছে।' 

প্রবোধ মেয়েদের মত গালে হাত 'দয়ে বলে ওঠে, 'বাঁলস 'কি রে ভানু, এ 
যে সাঁত্য সেই কলাপাতে না এগোতে গ্রন্থ লেখা সাধ! তোদের গভর্ধারিণর 
একেবারে গ্রল্থকার হবার বাসনা! 

হ”ু।' ভানু হেসে ফর ফর করে বইয়ের পাতাগুলো উড়িয়ে দিয়ে বলে, 
'আহা, গ্রল্থই বটে। গ্রন্থের নমূুনাটি লোককে দেখাবার মত!” 

তা হাসাটা নেহাৎ অপরাধ নয় ভানুর, “সুবর্ণলতর স্মৃতিকথা'র নমৃনা 
দেখলে কে-ই বা না হেসে থাকতে পারতো! 

জগন্নাথচন্দ্র “পয়সায় দুখানা বর্ণপাঁরচয়ে'র কাগজে বই ছেপে 
দিয়েছেন সংবর্ণলতার, ভান্খা টাইপ আর পুরু কা 'দিয়ে। অবশ্য সেটা ঠিক 
জগর দোষ নয়, জগ্‌র ছাপাখানার দোষ। অথবা সুবর্ণলতার ভাগ্যেরই 
দোষ। 

বই দেখে পর্যস্ত বুঝি সুবর্ণ তার ভাগের ম্বর্পটা স্পন্ট কয়ে দেখতে 


নখ ৩ ৩865 


পেয়েছে। নাঃ, আর কোনো সংশয় নেই, আর কারো দোষ নেই, সবটাই সংবর্ণ- 
লতার ভাগ্যের দোষ! 

শুধুই কাগজ 2 শুধুই মুদ্রাষল্মের প্রমাদ ? 

মূদ্রাকরের প্রমাদ নেই ? 

যা নাক ছুরির মত বুকে এসে বিখছে! 

রাঁসয়ে রাসিয়ে আর চেশচয়ে চেশচয়ে আগেই পড়া হয়ে গিয়োছল, আর 
একবার পড়া হতে থাকে বাপের সামনে, শুনুন বাবা শুনে যান। এই অর্পূর্ব 
প্রেস, আর এই অপূর্ব প্রুফরশীডার ?নয়ে ব্যবসা চালান জগু জ্যাঠামশাই। 
নাম-ধাম কিছু নেই বইয়ের, বই ছাপা হয়েছে নাম হয়নি। প্রথমেই শৃর 
শুনুন, ভূমিকা--“আম একি নিপুরায় রঙ্গনাড়ি, আমার একমান্র পরিচয় আমি 
একটি অন্বপৃরির মেজবৌ! আমার--"' | 

প্রবোধ হঠাৎ প্রায় ধমকে ওঠে" ও আবার 'কি রকম পড়া হচ্ছেঃ কণ ভাষা 
ওসব 2১ 

বাংলা ভাষাই । যা লেখা আছে তাই পড়ছি। আরো নমৃনা আছে দেখুন 
না। কৌতুকের হাঁসতে চণ্চল দ্রুতকণ্ঠে পড়তে থাকে ভানু “আমার মন আচে 
বুদ্দি আচে, মাঁস্তজ্ক আচে, আত্মা আচে. কিন্তু কেহ আমার সত্মাকে শীকার 
করে না। আমি যে ্‌ 

খুক খুক করে একটা হাঁসর শন্দ শোনা যায়। বৌয়েরা হাসছে মৃথে 
কাপড় চাপা দিয়ে। ভানূর ভঙ্গখীতেও যে হাঁসর খোরাক! 

কন্তু হঠাং একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। 

একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা! ঘটে। 

কোথায় 'ছিল স্বর্ণ লতা, অকস্মাৎ ক্রুদ্ধ ব্যাঘ্রীর মত এসে প্রায় ঝাপয়ে 
প্ড়ে বিয়ে-হয়ে-যাওয়া মস্ত বড় ছেলের ওপর। 

ব্যাঘ্রশর মতই একটা গোঁ গোঁ শব্দ শোনা যায় সুবর্ণলতার গলা থেকে! 
বইখানা কেড়ে নিয়ে কুঁচিকুঁচি করছে। 

বহুকাল আগের মত আবার একাঁদন ছাদে আগুন জব্ললো। সুবর্ণলতার 
গোলাপী রঙের বাঁড়র ছাদে। .না যত উদত্রান্তই হোক সে. তদ্দণ্ডেই বাঁড়র 
যেখানে-নেখানে আগুন জেবলে একটা আঁগ্রকান্ড করে বসে 'নি। 

ধীরে-সৃস্থে সময় এনিয়ে জৰ্বালয়েছে আগুন, অনেক সময় নিয়ে। 

“পয়সায় দুখানা বর্ণপাঁরচয়'-এর কাগজে ছাপা, তেমাঁন মলাটেই বাঁধাই, 
পাঁচশোখানা বই পুড়ে ছাই হতে এতক্ষণ লাগলো 2 না, সেগ্‌লো বেশী সময় 
নেয় নি। সময় নিয়ে আর চোখ-জবালানো ধোঁয়া উদগিরণ করে যেগুলো 
পূড়লো" সেগুলো হচ্ছে অনেক কালের হল্‌দে হয়ে যাওয়া পাতা, আর বিবর্ণ 
হয়ে যাওয়া কালিতে লেখা অনেকগ্‌লো খাতা! সদ্য কেনা নতুন চকচকে 
মলাটের খাতা! খাতার রাশ! 

ধ্বংস হয়ে গেল আজীবনের সণয়, 'নাঁশ্চহ হয়ে গেল চিরকালের গোপন 
ভালবাসার ধনগাঁল। সুবর্ণলতার আর কোনো খাতা রইল না। 

যে খাতাগ্ঁল দীর্ঘকালের সঙ্গী ছিল, তিলে তিলে ভরে উঠোছিল বহু 
সুখ-দুঃখের অনুভূতির সম্বলে! লোকচক্ষুর অন্তরালে কত সাবধানেই' লেখা 
আর তাদের রাখা! এক-একখাঁন খাতা সংগ্রহের পিছনেই ছিল কত আগ্রহ, 
কত ব্যাকুলতা, কত চেস্টা, আর কত রোমন্টময় গোপনতার হইীতিহাস! 


৩৪২ সুবর্ধলতা 


, হাতে পরসার অভাব তার কখনই ছিল না একথা সাঁতা, উমাশশশর মত 
বিন্দুর মত দুঃখময় 'শন্যহাতে'র আঁভজ্ঞতা কদাচ না, প্রবোধের ভালবাসার 
প্রকাশই ছিল “খরচ কোরো' বলে কিছ টাকাপয়সা হাতে গুজে দেওয়া। কিন্তু 
দেওয়াটা লোকের চোখের আড়ালে হলেও, সেই খরচ'টা তো আড়াল 'দয়ে 
হওয়া সম্ভব ছিল নাঃ সূবর্ণ তো আর নিজে দোকানে যাবে না? 

কাউকে 'দিয়ে আনানো ঃ 

তা সদর রাস্তার পথ ধরে থে বেরোবে আর ঢুকবে সে মশা ম্যাছ হয়ে করবে 
না সেই কাজটা ? প্রথমবার যখন সুবর্ণ অবোধ ছিল, অতএব অসকর্তও ছিল, 
দুলোকে আনতে দিয়োছিল মলাট-বাঁধানো খাতা একখানা । সহস্র 'কথা'র জনক 
হলো সেই খাতা! 

“কেন, কি দরকার, এমন দামী আর শোঁখিন খাতা কোন কাজে লাগবে, 
পয়সা থাকলে ধোপা-গয়লার হিসেবও তাহলে চার আনা ছ আনার খাতায় 
ওঠে' ইত্যাদ ইত্যাদি । 

সেই থেকে সাবধান হয়ে গিয়োছল সংবর্ণ। 

গোপনতা সে ভালবাসে না। “কিন্তু এমন উদ্ঘাটিত হতেও ভাল লাগে না। 
তাই ঘরের জানলা. থেকে পাশের বাঁড়র একটা ছোট ছেলের হাতে সুকৌশলে 
থাতার পয়সা এবং তার ঘুঁড়-লাট্রুর পয়স চালান করে করে মাঝে মাঝে খাতা 
আনাতো। বাঁধানো রূলটানা খাতা। 

লোকচক্ষুর অগোচরে আনিয়েছে তাদের মালিক, লোকচক্ষুর অন্তরালেই 
রেখে দিয়েছে। লালন করেছে হদয়রস 'দয়ে, পুষ্ট করেছে জীীবন-বেদনার 


কতাঁদন কত নিভৃত ক্ষণে ভালবাসার হাতে হাত বুলিয়েছে তাদের গায়ে, 
ভালবাসার চোখে তাঁকিয়েছে। যেন তারা শনধ প্রাণতুল্য কোনো বস্তুই নয়, 
প্রাণাধক কোনো জীবন্ত 'প্রিয়জন। 

সেই তাদের অহত্কার হলো, আলোর মূখ দেখতে চাইল তারা । 

অন্ধকারের জীব তোরা, কিনা আলোর মুখ দেখবার বাসনা 2 অতএব 
পেতে হলো সেই দুঃসহ স্পর্ধার শাস্তি ! 

সেই ভালবাসার হাতই তাদের গায়ে আগুন লাগালো, সেই ভালবাসার 
চোখই নিষ্পলক বসে বসে দেখল তাদের ভস্ম হয়ে যাওয়া! 

ছাতের িশড়র দরজাটা বন্ধ করে 'দিয়োছিল সুবর্ণ” ভেবোছল এই নশংস 
হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী না থাকে। 

ণকল্তু ?িসপড়র দরজাটায় ছিটাকানি আলগা ছিল, দরজাটা ধরে টানতেই 
খুলে গিয়োছল। তাই রয়ে গেল একজন সাক্ষী । 

হঠাং স্তব্ধ দুপুরে কাগজ-পোড়া-গন্ধে আশঙ্কিত হয়ে এঘর-ওঘর দেখে 
ছুটে ছাতে উঠে এসেছিল সে। 

দরজাটা টেনে খুলোছিল, আর স্তব্ধ হয়ে গিয়োছল। 

ওখানটায় চিলেকোঠর দেওয়ালের ছায়া পড়োছিল, তাই এই প্রচণ্ড রোদের 
মাঝখানেও সবর্ণর মুখে আগুনের আভার ঝলক দেখা যাচ্ছিল। সেই আভায় 
চরপারাচত মা যেন আন্ত একটা অপারিচয়ের প্রাচীর নিয়ে স্থির হয়ে 


কিন্তু ওই অপাঁরচিত মুখটার প্রতোকটি রেখায় রেখায় ও কিসের ইতিহাস 


গুবর্ণলতা 


আঁকা? 

জীবনব্যাপাী দুঃসহ সংগ্রামের ঃ 

না পরাজিত সৌনিকের হতাশার, ব্যর্থতার, আত্মাধন্ধারের 2 

কে জানে কি! 

যে দেখোঁছল, তার কি ওই রেখার ভাষা পড়বার ক্ষমতা ছিল ? 

হয় তো ছিল না। তাই মুহূর্তকাল বিহবজ বিচলিত দৃষ্টি মেলে দেখেই 
ভয় পাওয়ার মত ছুটে পাঁলয়ে এসেছিল দিপড় বেয়ে। 

তারপর ? 

তারপর সেই হত্যাকাণ্ডের দর্শক এক নতুন চেতনার অথৈ সমুদ্ধে হাতড়ে 
বোৌঁড়য়েছে সেই রেখার ভাষার পাঠোদ্ধারের আশায়। 

অজ্ঞাতে কখন তার চোখ দিয়ে জল গাঁড়য়ে পড়েছে, মনে মনে উচ্চারণ 
করেছে সে. ণচরাঁদন তোমাকে ভূল বুঝে এসৌঁছ আমরা, তাই আঁবচার করোছি।" 

তারপর 2 তারপর এল এক নতুন ঢেউ। 


৩৪৩ 


॥২১৯ ॥ 


ঢেউটা আনলেন জয়াবতী। 

সুবর্ণলতার সঙ্গে যাঁর চিরকালের সখাত্ব বন্ধন। 

ত্য দেখা হয় তা নয়, চিঠিপত্রের সেতু রচনা করেই 
ষে হৃদয়ের আদানপ্রদান বজায় তাও নয়, অথচ আছে সেই 
বন্ধন অটুট অক্ষয়। সেই শৈশবের মতই নির্মল. উজ্জ্বল, 
স্নেহ আর সম্দ্রমের সীমারেখায় সুন্দর। 

জয়াবতী এখানে কদাঁচিংই আসেন। 

যাঁদও বাপের বাড়তেই থাকেন আঁধকাংশ সময় এবং 
সে বাঁড়টা বড়লোকের বাঁড়, কাজেই তাঁর গাঁতাঁবাধর 
উপর যেমন কোনো 'নয়ন্তরণাদেশের চাপ নেই, তেমনি 
আসা-যাওয়ার অসুবিধেও নেই, তথাঁপ যোগাযোগ রাখার ১৯ বরং সুবর্ণ 
লতাকেই দিতে হয়। অনেককাল দেখা না হলে স্‌বর্ণই গিয়ে পড়ে এক এক- 
দন জয়াবতাঁর বাপের বাঁড়। 

প্রবোধ এতে মান-আভিম্ানের প্রশ্ন তুললেও সুবর্ণ সেটা গ্রাহা করে না। 
সুবর্ণ সে প্রশ্নের উত্তরে বলে, “ও এসে হবেটা কিঃ আমার এই' নিরবাচ্ছিল 
সংসারের মধ্যে নি্চান্দ হয়ে দুটো গল্প করবার সময় পায় ? এই এটা, এই 
সেটা, চোদ্দবার উঠাঁছ আর ছূটছি। তার থেকে আম যে সংসারের দায় থেকে 
খাঁনক ছুটি নিয়ে চলে ন শিয়ে বাস, সেটা অনেক স্বাস্তির। ওর তো ওখানে 
ফোনকে তোমার যাঁদ গাঁড়ভাড়ার পয়সাটা গায়ে লাগে তো 
বল. মান-সম্মানের কথা তুলতে এসো না। 

১ 





তাতে কি? 
আপন-পর ধরণের বাঁধা সড়ক ধরে কোনোঁদনই চলতে পারে না সুবর্ণ, 
কাজেই ওকথা বলে লাভ নেই। সামান্য একটা অনুষ্ঠানের সূত্রে মৃন্তকেশশর 


০8৪9 সুবর্ণলত। 


সংসার-পাঁরজনের পোষা বিড়ালাঁট পর্যন্ত সুবর্ণর 'আপন', আর তার বাইরে 
দুনয়ার আর কেউ 'আপন' হতে পারবে না, এ নিয়মে বিশ্বাসী নয় 
সুবর্ণ । 

কাজেই মন কেমন' করলে সুবর্ণ গিয়েছে প্রবোধের খশুৎখদুতেমি 
উপেক্ষা করে। 

কিল্তু ইদানীং বহুকাল বুঝি যায় 'ন। 

তাই জয়াবতশই এলেন এক দিন। 

উকিল ভাই কোর্টে যাবার সময় গাঁড় করে এনে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। 
ফেরার সময় নয়ে যাবেন! 

সবর্ণর দাদাও উকিল, আর তাঁরও নাকি গাঁড় আছে। সবর্ণলতার 
ছেলেরও গাঁড় আছে। কিন্তু থাক্‌ সে কথা। জয়াবতী এলেন, একটা ঢেউ 
নিয়ে এলেন। সেটাই হচ্ছে আসল কথা। 

জয়াবতীরা কয়েকজনে দল বেধে বদরিকাশ্রম যাচ্ছেন, সূবর্ণলতাও চলুক 
না! বাইরের কেউ নয়. জয়াবতীর দুই বোন, একজন ভাজ আর একাঁট ননদ । 
তা সে তো সবর্ণরও ননদ । 

সঙ্জে যাবে ৰাঁড়র এক পুরানো সরকার, আর ওখানকার পান্ডা । অতএব 
দলটা ভালোই । 

আর জয়াবতীরও খুব ইচ্ছে হচ্ছে, সুবর্ণ চলুক। 

সুবর্ণলতার জবরের মত যাচ্ছে কীদন, সুবর্ণলতা শুয়েছিল। উঠে বসলো, 
বললো, হ্যা যাবো । 

জয়াবতী হাসলেন, “ড়া বাপু! আগে বরের মত নে, তবে দালিলে সই 
কর। যাব বললেই তো হবে না! 

সুবর্ণ সংক্ষেপে বলে' 'হবে। তুমি আমার ব্যবস্থা কর। আর কি কি 
সঙ্গে নিতে হবে, কত কি লাগবে সেটাও-' 

মেজ ঠাকুরপো আবার এতাঁদনের বিরহে চোখে অন্ধকার দেখবে না তো? 
জয়াবতশী হেসে বললেন, “তাড়াতাঁড়র িছু নেই, ভেবে-চিন্তে বললেই হবে, 
এখনো মাসখানেক সময় হাতে আছে।' 
কোথায় পালাই, তুমি ভগবান হয়ে এলে! 

জয়াবতাঁ ভগবান হয়ে এলেন সুবর্ণকে দ্যীদনের জন্যে কোথাও পালাবার 
জায়গা খুজে দিতে । কিন্তু সবর্ণর ভাগ্যের ভগবান 2 দ-ঃসাহসী সুবর্ণ যাকে 
জিজ্ঞেস না করেই দলিলে সই করে বসলো? সেক চুপ করে থাকবে? 

নাক আহ্]াদে গলে শিয়ে বলবে, তা বেশ তো! এমন একটা সুযোগ 
যখন এসেছে, যাও না! যাও নি তো কখনো কোথাও ! 

তা বললে হয়তো মহত্ব হতো, কিন্তু অত মহৎ হওয়া সবাইয়ের কুষ্ঠীতে 
লেখে না। বাঁড় ফিরে খবরটা শুনে উত্তাল হলো প্রবোধ, “ঢেঁট আনলেন 
কে? ঢেউ? ও-বাড়র গিন্লী? তা তাঁর উপযুস্ত কাজই' করেছেন, িরটা- 
কালই তো মনসার মান্দরে ধুনোর ধোঁয়া দিয়ে এসেছেন তান! বলে দি, 
"যাওয়া সম্ভব হবে না”।' ' 

সুবর্ণ শান্ত গলায় বলে, 'বলে “দয়োছি যাব ।' 

“বলে 'দিয়েছ ; একেবারে কথা দেওয়া হয়ে গেছে 2 প্রবোধ ক্ষৃত্খ ক্রোধের 


গুব্ণলতা ৩৪৫ 


গলায় বলে, “আম একটা বুড়ো যে আছি বাড়তে, তা বাঁঝ মনেই পড়ল 
নাঃ বলতে পারলে না “না জিজ্ঞেস করে কি করে বলবো ।” 2 

সুবর্ণ অনেকার্দন পরে আবার আজ একটু হাসলো, বললো, “তা আমও 
তো বুড়ো হয়োছ গো! নিজের ব্যাপারে. একটা ইচ্ছে-আঁনচ্ছে চলবে না, এটাও 
তো দেখতে খারাপ! 

একটা ইচ্ছে-আনিচ্ছে! 

প্রবোধ যেন মাথায় লাঠি খায়। 

'একটা ইচ্ছে-আনিচ্ছে ১ কোন্‌ কাজটা না তোমার ইচ্ছেয় হচ্ছে ? 

সুবর্ণ আবারও হাসে, “তাই বাঁঝ? তা হলে তো গোল মিটেই গেল। 
সবই হচ্ছে, এটাও হবে ।' 

“না, না, হবে-টবে না।' 

প্রকোধ যেন ফু দিয়ে তুলোর ফুলাঁক ওড়ায়। 

“এই শরীর খারাপ, নিত্য জ্বরের মতন, এখন চলবেন মরণবাঁচনের 
তীঁর্থে! তীর্থ পাঁলয়ে যাচ্ছে! 

“তীর্থ পাঁলয়ে যাচ্ছে না সাত্য', স্বর্ণ মৃদু হাঁসির সঙ্গে বলে, “আমি 
তো পালিয়ে যেতে পার ?' 

সহজ কথার পথ অনেকাদন রুদ্ধ ছিল, হঠাৎ একবার এক অলো?কিক 
মলন্লে খুলে গিয়েছিল সেই বন্ধ দরজা । শ্যামাসুন্দরী দেবীর ছেলে জগন্নাথ 
চাটুয্যের নিচের তলার একটা স্যাঁতসেতে ঘরে প্রাণ পাচ্ছিল সেই মন্ম, তারপরে 
ভেস্তে গেল সব, মন্দ গেল হারিয়ে । আবার বন্ধ হয়ে গেল দরজা । শুধু আবরণ 
একটা থাকলো । জবরভাব। নিত্যই যাঁদ জবরভাব হয় মানুষটার, সহজ ভাব 
আর আসবে কোথ্য থেকে £ 

আজ আবার অনেকাদন পরে হেসে কথা বললো সবর্ণ আম তো 
পালিয়ে যেতে পারি 2? 

িন্তু প্রবোধ কি এই ছেলেভোলানো কথায় ভুলবে 2 প্রবোধ হাঁহাঁ করে 
উঠবে না? বলবে না, 'মেজাজ খারাপ করে দিও না মেজবৌ, ওই সব ছাই- 
ভস্ম কথা বলে। আম বলে ্ীচ্ছ--এই শরীর নিয়ে কোথাও যাওয়া-টাওয়া 
হবে না তোমার। ভানু কাল কোর্টে নতুন গিন্নীর দাদার কাছে খবরট' 'দিয়ে 
আসবে। 

“তা হয় না-” সুবর্ণ বলে, কথা 'দিয়োছি। শরীর বরং পাহাড়ে হাওয়ায় 
ভালই হবে।' 

ভাল হবেঃ বললেই হলো ? প্রবোধ দ:পাক ঘুরে হঠাৎ বলে ওঠে, 
'যাব বলছো মানে ? বড়বৌমার ছেলেপলে হবে না? 

সুবর্ণ শ্রান্ত গলায় বলে, স্‌ হবে, ওর মা'র কাছে হবে। ও নিয়ে তুমি 
পৃরুষমানূষ মাথা ঘামাচ্ছো কেন 

'আমি মাথা ঘামাব নাঃ এন নর বর হঠাৎ জামার হাতটা 
একবার চোখে ঘষে প্রবোধ, তারপর ভাঙা গলায় বলে, 'ৰৌমা বাপের বাঁড় চলে 
যাবে, আর আম আমার কাজকর্ম ফেলে তোমার ওই ধাঁড় আইবুড়ো মেয়েকে 
আগলাবো ?” 

সুবর্ণর ইচ্ছে হয় চাদরটা মুখ অবাধ টেনে পাশ ফিরে শোয়, তব সে ইচ্ছে 
দমন করে আস্তে বলে, 'আগ্‌লাবার কথা উঠছে কেন? ছোট বৌমা তা কোথাও 


৪৪৬ লবন লত। 


যাচ্ছে নাঃ দুজনে থাকবে-” 

থাকবে! হঠ্াং যেন গর্জন করে ওঠে প্রবোধ, “থাকবে কি উড়বে ত৷ 
ভগবানই জানে! তোমার রাগের ভয়ে বলি না ছু, বোবাকালা সেজে বসে 
থাঁক। কিন্তু এই বলে 'দচ্ছি, তোয়ার এই ছোট মেয়েটির ভাবভষ্গাগ ভাল 
নয়। পাঁরমলবাবূর ছেলেটার সঙ্গে তো যখন-তখন গৃুজগ্‌জ! কেন? ওর সঙ্গ 
এত সের কথা? আম বলে 'দাচ্ছি মেজবৌ, তুমি যাঁদ তখর্থ করতে উধাও 
হও, এসে মেয়েকে ঘরে দেখতে পাবে কিনা সন্দেহ! হয়তো-_" 

স্বর্ণ উঠে বসে, স্বর্ণ প্রবোধের পদকে স্থিরদম্টিতে তাকায় একট; 
তারপর তেমাঁন 'স্থির গলায় বলে, “তা যাঁদ দৌখ, সে সাহস যাঁদ দেখাতে পারে 
ও, বুঝবো আমার রন্তমাংস একেবারে বৃথা হয় ন। একটা সন্তানও মাতৃখ্খণ 
শোধ করেছে ।' 

শ"য়ে পড়ে আবার । 

প্রবোধ সহসা একটা যেন চড় খেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর ভাবে, বৃথা 
দোষ দিচ্ছি, মাথাটা খারাপই! ছটফাঁটয়ে বেড়ায় খাঁনক, তারপর আবার ঘুরে 
আসে । আর আবারও নিলণজ্জের মত বলে ওঠে, 'রাগের মাথায় বলে তো দিলে 
একটা কথা, কিন্তু সব দিক বিন্চেনা করে তবে তো পরের কথায় নাচা-” 

হয়তো ঠিক এমনভাবে কথা বলার ইচ্ছে তার ছিল্‌ না, তবু অভ্যাসের বশে 
এ ছাড়া আর কিছু আসে না মুখে। 

সুবর্ণ এবার সাত্যই পাশ ফিরে শোয়। 

শুধু তার আগে আরো একবার উঠে বসে। রুদ্ধ কণ্ঠে বলে, "তোমার 
কাছে হাতজোড় করে কটা দিন চাইছি, সেটুকু দাও তুমি আমাকে । সব 
চাকরিরই তো ছু না কিছু ছাট পাওনা হয়, তোমার সংসারে এই ছারিশ 
বছর দাসত্ব করাছ আম, দুটো মাসও ক ছুটি পাওনা হয় নি আমার! 


॥২২॥ 


আভিমানী পারুল স্বেচ্ছায় স্বর্গের টীকিট ত্যাগ করেছিল। একদা তার আর 
বকুলের স্কুলে ভার্ত হওয়া নিয়ে যখন সংসারে ঝড় 
উঠেছিল, তখন পারুল বে*কে বসৌঁছল, বলোছল, 'এত 
অপমানের দানে রুচি নেই আমার । 

অথচ ওই কুল" নামক জায়গাটা সাঁতাই তার 
আজল্মের স্বগ্ন-স্বর্গ ছিল। সামনে-পিছনে আশেপাশে 
যে বাঁড়গুলো দৃষ্টিগোচর হতো, সকালের দিকে সেই 
বাড়গুলোর দিকে লক্ষা রাখা একটা কাজই ছল 





আর বাদের যাদের বাড়ির দরজায় সেই একটি খড়খাঁড় আটা টানা লম্বা 
গাঁড় এসে দাঁড়াতো, পোশাকপরা চালক বিশেষ একটি সুরে হাঁক দিত, এবং 


স্বর্ণলতা ৩৪৭ 


একট; বড় বয়সের মেয়েরা খোঁপাবাঁধা ঘাড়টা একটু হেট করে তাড়াতাড় 
বোরয়েই গাঁড়তে গিয়ে উঠতো! 

তাদের দিকে ছিল ব্যাঝ বৃভুক্ষার দৃষ্টি, ঈর্ষার দৃম্টি! 

'জগতের আনন্দযজ্ঞে সবার নিমল্মণ।” 

নিমল্মণ নেই শুধু পারুলদের ! 

যেহেতু তারা ভারি একটা পণ্যময় সনাতন বাঁড়র মেয়ে। তাই পারুল 
শুধু তাদের জানলার খড়খাঁড় তুলে সেই 'নিমল্মণ-যান্লার দৃশ্য দেখবে। 

বড় হওয়া অবাঁধ বারান্দায় দাঁড়ানোয় শাসনদৃষ্টি পড়োছিল, তাই ভরসা 
ওই 'পাধণ' দেওয়া জানলা! পারুল বকুলের মা চেয়েছিল ওই টিকিট তাদের 
জন্যে যোগাড় করে দিতে । সম্পূর্ণ কৃতকার্য হয় নি। 

ঝড় উঠোছল, সেই ঝড়ের ধুলোয় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল আভমানিন? 
পার্ুল। পারুল বলোছিল, “আমার দরকার নেই। 

বকুলের আঁভমান অত দূর্জয় নয়। 

বকুল অবজ্ঞা আর অবহেলায় ছ*ুড়ে দেওয়া টিকিটখানা পেয়েই ধন্যবোধ 
করোছল। 

তা হয়তো ওইটুকুও জুতো না, যাঁদ বকুলের সামনের লাইনে তার দাদ 
না থাকতো । 

সেজাঁদ! 
টিটি কা রর ররর রনান্া রন দি 
2+ 

আর তার বিদ্বান বিজ্ঞ ছেলেরা বলোছল, শীবদুষী হয়ে হবেটা কিঃ 
কলাপাতে না এগোতেই তো গ্রন্থ লিখছে! 

অতএব পারুল সেই রণক্ষেত্র থেকে বিদায় নিয়োছিল। আর এক কড়া 
স্কুলে ভার্ত হয়ে চলে গিয়োছল সেখানের বোঁডঙে! 

নঃশব্দচারিণী নিঃসঙ্গ বকুল তার স্বর্গে যাওয়া-আসা করাছল। 

কিন্তু সেই আসা-যাওয়ার পথের দিকে যাঁদ কেউ চোখ ফেলে দাঁড়য়ে 
থাকে, যাঁদ চোখোচোঁখি হওয়া মান্র আনন্দে ভাস্বর হয়ে ওঠে সেই চোখ, বকুল 
ক করবে? 

বকুল বড় জোর বলতে পারে, 'রোজ রোজ এখানে দাঁড়য়ে থাক যে? 
কলেজ নেই তোমার ?' 

সে তো সঙ্গে স্পো জবাব দেবে, “স্কুল বসবার পরে কলেজের টাইম, এই 
একটা মস্ত স্বিধে ! 

বকুল যাঁদ লাল-লাল মৃখে বলে, “বাঃ তাই বলে তুমি রোজ রোজ-_ 

সে সপ্রাতভ গলায় বলে ওঠে, থাকি তা কিঃ তোর 'কি ধারণা তোকে 
দেখবার জন্যে দাঁড়িয়ে থাঁক ? 

আর 'কি বলতে পারে বকুল ? 

আর কিভাবে প্রাতকার করতে চেম্টা করবে 2 

. ওর সঙ্গে কথা কইতে যাওয়াতেও যে ভয়! ওর চোখের তারায় যেন অজন্র 
কথার জোনাকি, ওর কথার ভল্গাঁতে যেন অসীম রহস্যলোকের ইশারা ! 

তবু ওর বেশি নয়। 


৩৪৬ সুবর্ণলতা 


' যেন উদঘাঁটত হতে রাজ নয় কেউই। 

যা বঙ্গবে কৌতুকের আবরণে। 

কল্তু বলবে অনেক ছলে, আর দেখা করবে অনেক কৌশলে। 

তবু সে কৌশল ধরা পড়ে যাচ্ছে অপরের চোখে। 

অন্তত বকুলের বাপের চিরসম্ধান সন্দেহের চোখে। আর সে ওই নযাড়র 
মধ্যেই পর্বত দেখছে, চারাগাছের মধ্যেই মহাীরুহ। 

অতএব সর্বনাশের ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে। 


কন্তু শাসন দিয়ে সর্বনাশকে ঠেকানো যায় 2 বাঁলর বাঁধ দিয়ে সমুদ্রকে £ 
তথাকাঁথত সেই সর্বনাশ তো এসে যাচ্ছে নিজের বেগে। বন্যার জল যেমন 
মাঠ-পথ গ্রাস করে ফেলে বাঁড়র উঠানে এসে ঢোকে। 

সব গিকেই উপক মারছে সে" যখন-তখনই সমাজে সংসারের গাঁণ্ডভাগ্তার 
ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে! 

আর মজা এই, সেই ভাঙনে যেন কারুর লজ্জা নেই, বরং গর্ব আছে। 
পাঁরমলবাবূর ভগ্রী যে বাঁড়তে ওস্তাদ রেখে কালোয়াঁত গান শিখছে, সেটা 
যেন পাঁরমলবাবুর গর্বের বিষয়, সামনের বাঁড়র যোগেনবাবূর নতুন জামাই 
যে বিলেতফেরত, সেটা যেন যোগেনবাব £র সামাজিক মর্যাদা বাদ্ধর সহায়ক, 
ভানুর কোন মামাতো শালার ভায়রাভাই যে নৌ নিয়ে বিলেত গেছে, সেটা যেন 
রাজাসম্ধ লোককে বলে বেড়াবার মত প্রসঙ্গ, আর বিরাজের দ্যাওরাঁঝ যে শুধু 
একটা পাস করেই ক্ষান্ত হয় নি. একটার পর দুটো, এবং দুটোর পর তিনটে 
পাস করে ফেলে গ্রাজ.য়েট হয়ে বসলো, এটা রখীতমত একটা বুক ফুলিয়ে 
বলবার মতো খবর। এ খবর যেন বিরাজের সনাতন বনেদী শবশু 
একাঁট গৌরবময় উচ্চস্তরে তুলে দিয়েছে। 

মেয়েদের ঘোমটা খুলেছিল ওদের কবেই! যবে থেকে জ্যাড়গাঁড় বাতল 
করে মোটরগাঁড় বিলেছে, তবে থেকেই ওরা খোলা গাড়িতে মুখ খুলে বসে 
হাওয়া খেতে শুরু করেছে। তবু সেটা যেন অনেকটা শবধু পয়সা থাকার 
[চহন। আর এটা হচ্ছে প্রগ্গাতশলতার চিহ। 

যাঁদও খবরটা বিরাজ িন্দাচ্ছলেই শানিয়ে গেল, কারণ জা-দ্যাওরের 'নন্দে 
করে হাল্কা হবার জন্যেই মাঝে মাঝে মেজদার বাঁডি বেড়াতে আসে বিরাজ, 
অতএব সুরটা নিন্দের মতোই শোনালো, তরু তার মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন রইল ওই 
প্রগাতর গবট:কু. ত প্রচ্ছরর থাকলেও ধরা পড়তে দোর হলো না। 

িন্তু প্রগাঁত যে ক্রমশই আপন বাহ: প্রসারত করছে, বস্তার করছে 
আপন দেহ। নইলে কানুর শালা মাস্টারনী হয়ে বসে? 

পাস অবশ্য করেছে সে মাত দুটো, [কিন্তু তাতে মাস্টারনী হওয়াটা বাধা- 
প্রাপ্ত হয় নি। চু ক্লাসেও তো আছে ছেলে-মেয়ে, তাদেরই' পড়াবে। 

তা উচু ক্লাস নিচ ক্লাসটা তো কথা নয়, কথাটা হচ্ছে_কানদুর পিসতুতো 
শালী নিত্য দুবেলা 'ারাল করে শাঁড় পরে. কাঁধে ব্রোচ এটে, আর পায়ে 
জুতো-মোজা চা়িয়ে একা রাস্তায় যায়া-আসা করছে। 

আর 'পিসম*বশুর-বাঁড়র এই প্রগ্গাততে কান নিন্দায় পণ্চমুখ না হয়ে 
গৌরবে মাহমান্বিত হচ্ছে। কথায় কথায় বিচ্ছ্বীরত হচ্ছে সেই গোরব। 

কল্তু এসব কি সমাজে এই নতুন এল ? 


গুবগলতা ৩৪১ 


আসে নি এর আগে? 

তা একেবারে আসে নি বললে ভুল হবে। 

এসেছে। 

এসেছে আলোকপ্রাপ্তদের ঘরে ; এসেছে ধনীর ঘরে। 

কিন্তু সেটাই তো সমাজের মাপকাঠি নয়? মাপকাঠি হচ্ছে মধ্যাবত্ত 
সমাজ। 

যার। সংস্কারের খশুটিটা' শেষ পর্যন্ত আটকে থাকে। 

ভাঙনের ঢেউটা যখন তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে সেই খুটি উপড়ে ভাঁসয়ে 
নিয়ে যায়, তখনই নিশ্চিত বলা চলে--এসেছে নতুন, এসেছে পাঁরবর্তন। 

অতএব ধরতেই হবে ষে এসেছে পরিবর্তন. এসেছে প্রর্গাত। আর প্রথমেই 
নাশ করছে ভয় আর লজ্জা । 

নচেৎ ভানুও একাদন বড় মুখ আর বড় গলা করে তার এক বড়লোক 
বন্ধুর ভাইঝির জলপানি পাওয়ার গল্প করে 2 

এন্ট্রেস পাস করে জলপাঁন পেয়েছে বন্ধুর ভাইঝি, সেই উপলক্ষে ভোজ 
দিচ্ছে বন্ধ, সেই গৌরবের সংবাদট;কু পারবেশন করে ভান; তার নিজের ছোট 
বোনকে একহাত নেয়। 

স্বাভাবিক ব্যঙ্গের সুরে বলে. “তার বয়স কত জানিস মাত পনেরো! 
আর তুমি ধাঁড় মেয়ে থার্ড-ক্লাসে ঘষটাচ্ছো। লজ্জা করে না! 

বকুল আনন্দোজ্জবল মুখেই দাদার বন্ধুর ভাইঝির গুণকীর্তন শুনাছল, 
হঠাং এই মন্তব্যে উজ্জল চোখে জল এসে গেল তার। আর হঠাৎ আহত হওয়ার 
দরুনই বোধ হয় সামলাতে না পেরে বড় ভাইয়ের মুখের উপর বলে বসে' 
শনজেই তো বললে তোমার বন্ধ ভাইঝির জন্যে চাল্পশ টাকা খরচ করে িন- 
1তনজন মাস্টার রেখোছলেন-_' 

তা ভানু অবশ্য বোনের এই উঁচতবাক্যে চৈতন্যলাভ করে না। 

জগতে কেই বা করে? 

উঁচতবাকোর মত অসহনীয় আর কি আছে 2 

ভান্‌ও তাই অসহনীয় ক্রোধে বলে ওঠে, মাস্টার? তোমার জন্যে যদ 
চারশো টাকা খরচ করেও মাস্টার পোষা হয়” কিছু হবে না, বুঝলে ; ওসব 
আলাদা ব্রেন। তোমার জন্যে মাস্টার রাখলে তুমি আর একটু গদ্ধত্য শিখবে, 
আর একট; অসভ্যতা । হু!" 

বকুল আর কিছু বলে না. বোধ কার অশ্রুজল গোপন করবার চেম্টাতেই 
তৎপর হয়। বলে বকুলের মা, যে এতক্ষণ নিঃশব্দে একটা লেপের ওয়াড় সেলাই 
করাছিল দালানের ওপ্রান্তে বসে। 

হয়তো বেছে বেছে এইখানটাতেই এসে বন্ধুর ভাইঝির গৌরবগাথা শোনা- 
নোর উদ্দেশ্য ছিল ভানূর। মাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে না করলেও মাকে 
শোনানোর ইচ্ছেটা প্রবল । মেয়েদের “পড়া পড়া" করে কত কাণ্ডই করেছেন, বাঁ, 
এইরকম মেয়ে তোমার 2 এ মেয়ে ক্লাসে একবারও ফাস্ট ভিন্ন সেকেন্ড হয় 
নন, আর এখনও এই দেখ! 

তা যতক্ষণ সেসব বলেছিল ভানু বোনকে এবং বৌকে উপলক্ষ করে ততক্ষণ 
কিছুই বলে নি সুবর্ণলতা। মনে হচ্ছিল না শুনতে পাচ্ছে, হঠাৎ এখন কথা 

কয়ে উঠলো। বললো, ও-ঘরে গিয়ে গল্প কর গে তোমরা, আমার বজ্ড মাথার 


৩৫০ সূবর্ণজতা 


যল্মপা হচ্ছে, কথা ভালো লাগছে না।' 

মাথার যল্মণা ? 

যে মানুষ ছ*ুচ-সতো নিয়ে সেলাই করছে, তার কনা .কথার শব্দে মাথার 
যল্লণা ? 

ভান; বোধ কাঁর এই অসহ্য অপমানে পাথর হয়ে গিয়েই কোনো উত্তর 

পারে না, শুধু “ওঠ বলে গটগট করে উঠে চলে যায়। 

সঙ্গে সঙ্গে ভানুর বৌও। 

শুধু বকুলই বসে থাকে ঘাড় হেট করে। 

হয়তো অন্য কিছুই নয়, তাকে উপলক্ষ করে দাদার এই যে অপমানটা 
ঘটলো, তার প্রতিক্রিয়া কি হবে তাই ভাবতে থাকে দিশেহারা হয়ে। 

সুবর্ণ হাতের কাজটা ঠেলে রেখে চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর 
হঠাৎ বলে ওঠে, 'সুনির্মলকে একবার ডেকে দিতে পারাঁব ? 

সুনির্মল! 
তাকে ডেকে দেবার আদেশ বকুলকে ? 

এ আবার কোন রহস্য! 

আর বর্তমান প্রসঙ্গের সঙ্গে স্বীনর্মলের সম্পর্ক ক? এ যে অবোধ্য! 

শাঁঙকত দৃন্টি মেলে মা'র দিকে তাকায় বকুল। সুবর্ণ সেইাঁদকে এক 
৪৯০ “একটা মাস্টারের জন্যে বলবো. ওকে।” 

1 


বকুলের জন্য মাস্টার! 

ধরণ দ্বিধা হচ্ছো না কেন? 

ছেলের সঙ্গে হার-জতের খেলায় মা ক এবার বকুলকে হাতিয়ার করযেন ? 
হে ঈশ্বর, দূর্মীতি কেন হচ্ছে মা'র? অথচ দাদার থেকে মাও কিছ কম 
সপ তবু ভয় জয় করে বলে ফেলে বকুল, “না না, ওসবে দরকার 

আও 

দরকার আছে 'ক নেই সে কথা-আঁম বুঝবো । তুই ডেকে 'দাব।, 

হাতের কাজটা আবার হাতে তুলে নেয় সুবর্ণ । 


২৩) 


তাতো হলো। 
ণকল্তু সুবর্ণর সেই কেদারবদরণী যাবার কি হলো? এটা কি তার ফিরে 
আসার পরের কাহিনী ? 
8]. দূর, যাওয়াই হলো না তার ফিরে আসা! 
সুবর্ণলতার ভাগ্যই যে বাদ, তা তার তপর্থ হবে 
কোথা থেকে ? 
1].ি বাঁড় থেকে বেরিয়োছল যাল্লা করে. দুস্ঘণ্টা পরেই 
& আবার ফিরে আসতে হলো সেই বাঁড়তে। 
মা. কথা ছল যারা যারা যাবে, জয়াবতীর বাপের বাড়িতে 
এসে একন্র হবে, সেখান থেকেই রওনা । সুবর্ণও তই 
'গিয়োছিল। জয়াবতশর মা'র কাছেই খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। 





গুবর্ণলতা ৩৬১ 


প্রাক্কালে একবার খাওয়াবেন সবাইকে এই তাঁর বাসনা। 

অনেক রাগের আর অনেক নিষেধের পাহাড় ঠেলে বোরয়ে পড়োছিল 
সুবর্ণ, মনের মধ্যে অপাঁরসাঁম একটা ক্লান্তি ছাড়া আর যেন কিছুই ছিল না। 
তবু এদের বাড়তে এসে পেশছে যেন বদলে গেল মন। 

যান্াপথের সঙ্গীরা সবাই আগ্রহে আর উৎসাহে, আনন্দে আর ব্যাকুলতায় 
যেন জবল্‌জবল্‌ করছে। তার ছোঁয়াচ লাগল সংবর্ণর মনে। 

নিজেকে যেন দেখতে পেল অনন্ত আকাশের দিচে, বিরাট মহানের সামনে, 
অফুরল্ত প্রকীতির কোলে। 

চির-অজানা পৃথিবীর মুখোমুখ হবে সুবর্ণ, চিরকালের স্ব্নকে প্রত্ক্ষে 
পাবে! 

আনন্দে চোখে জল আসছিল সুবর্ণর। 

তা চোখ মুছছিল সবাই। 

আর ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলাছল, 'বাবা বদরাবশালের কী কৃপা! 
আমার মত এই অধমকেও করুণা করেছেন- 

স্বর্ণ চোখ মুছছিল না, সুবর্ণর চোখের জল চোখের মধ্যেই টলমল 
করাছস। সুবর্ণ ওদের গোছগাছ দেখাঁছল। 

যখন তাড়াহুড়ো করে খেতে বসতে যাচ্ছে-_-তখন--তখন এল সেই ভয়ঙ্কর 
খবর। 
এটি টানার রেরিলির উরি রী কপালে করাঘাত করলো 

সৃবর্ণলতার স্বামীর কলেরা হয়েছে। 

কলেরা! 

দলের মধ্যে একজন মানত সধবা যাচ্ছিল, তারও এই! তা যাওয়া ৮. আর 
হতে পারে না তার এযান্না! 

কিন্তু রোগটা হলো কখন? এত বড় একটা মারাত্মক রোগ! এই ঘণ্টা 
তিনেক তো এসেছে সুবর্ণ বাঁড় থেকে! 

তাতে কি, এ তো 'তাঁড়ঘাঁড় রোগ! 

তা ছাড়া সূচনা তো দেখেই এসোঁছিল সুবর্ণ। যে খবর 'দিতে এসোঁছল, 
সে বললো সেকথা । 


স্বর্ণ দিকে িকারের দষ্টিতে তারীয় সবাই, দেখে এসেছে, তব্‌ চলে 
এসেছে! তা ছাড়া বলেও 'ঁন একবার কাউকে 2 

ধান্য মেয়েমানুষের প্রাণ তো! 

পাছে যাওয়া বন্ধ হয়, তাই স্বামীকে ষমের মুখে ফেলে রেখে চলে এসে 
মুখে তালা-চাবি এটে বসে আছে! 

বিস্ময়ের সাগরে কূল পায় না কেউ! 

জয়াবতশর দাদা শুধু বিস্মিতই হন না, বিরস্তও হন! বলেন, রোগের 
সূচনা দেখেও তুম কি করে চলে এলে সুবর্ণ?" 

সুবর্ণ মৃদু গলায় বলে, 'বৃকতে পা নি, ভাবলাম বদহজম মত 
হয়েছে 


৩৫২ সংবর্থলতা 


, তথাপি জয়াবতণর দাদা অসল্তুষ্ট গলায় বলেন, 'সেই ভেবে নিশ্চান্দ হয়ে 
চিলে এলে তুমি ১ না না, এ ভারী লঙ্জার কথা! এক্ষেত্রে তো তোমার আর 
তঁর্থে যাওয়ার প্রশন ওঠে না। এখন শীগাঁগর চল, গাঁড় বার করছে।' 

তথাপি নিলজ্জ আর হদয়হশীন সুবর্ণ বলেছিল. “ভগবানের নাম করে 
বোৌরয়েছি, আমি আর শফরবো না দাদা! ছেলেরা তো রয়েছে, বৌমারা 
রয়েছে 

এবার একযোগে সবাই 'ছি-ছক্কার করে ওঠে, এ কী অনাসৃষ্টি কথা! 
ছেলে-বৌ রয়েছে বলে তুমি স্বামীর কলেরা শুনেও যাবে না? কলেরা রুগীর 
সেবাটাই বা করবে কে 2... 

ভগবান £ 

আর স্বামীর আগে তোমার ভগবান ? 

জয়াবতী মুদুস্বরে বলেন, 'বুঝতে পারাছ তোর ভাগ্যে নেই। যা এখন 
তাড়াতাড়ি, দাদা রাগ করছেন। চল যাই তোর সঙ্গে, দেখে আস একবার-” 
যান্রা স্থগিতের কথা কেউ তোলে না। 

অন্য সকলের পক্ষেই এই যাল্রাটা-অলত্ঘ্য অপাঁরহার্য অমোঘ, শুধু 
সুবর্ণলতার যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না! 

কই একথা তো কেউ বলল না, সুবর্ণ, তোকে ফেলে 'ক করে যাব, আজ 
নাই গেলাম, দৌখ তোর ভাগ্যে কি লিখেছে ভগবান! 

না, তা কেউ বলল না। 

বরং সুবর্ণ যে স্বামীর এই আসন্ন মৃত্যুর খবর শুনেও উদ্ভ্রান্ত হয়ে 
ছুটে রাস্তায় বোরয়ে পড়লো না, বরং কথা কাটলো, তীর্থের লোভাঁটকে 
আঁকড়ে রইলো, এতে ধিক্কারই দল। 

“ছেলেরা আছে, ডান্তার-কবরেজ দেখাবে, সেরে যাবে এ একটা কথা ? 

বলি কোন্‌ প্রাণে হিমালয় ভাঙবে তুমি 2 তাছাড়া আর সকলেই বা কোন্‌ 
গ্বাস্ততে সঙ্গে নেবে তোমাকে? যে জায়গায় যাচ্ছ সেখানে তো খবর আনা- 
গোনার পথও নেই! তবে £ 

তার মানে তুমি বিধবা হয়েও শাড়ি চুঁড় পরে ঘুরবে সবাইয়ের সঙ্গে, 
সব কিছু ছোঁবে নাড়বে ! 

হলেই হলো! আহমাদ ? 

দাদা আর একবার অসাহফ গলায় প্রায় ধমক দিয়ে গেলেন, কি হলো : 
সুবর্ণ, তুমি কি আমায় দোষের ভাগী করতে চাও 2 বেশ তো_এদের তো 
এখনো যান্রার ঘণ্টাঁতিনেক দোর রয়েছে, গিয়ে দেখো কি অবস্থা- 

“অবস্থা আমার জানা হয়ে গেছে দাদা-_, বলে আস্তে গিয়ে গাড়িতে 
ওঠে সুবর্ণ! জয়াবতনকে সঙ্গে আসতে দেয় না। 

কেন, এই শৃভযান্রার মুখে একটা কলেরা রোগীকে দেখতে যাবে কেন 
জয়াবতণ ? ছাড়া বিপদের ভয়ও তো আছে। শুধু একা নিজেরই নয়, অন্য 
পাঁচজনেরও। 

গাঁড়তে ওঠবার সময়ও জয়াবতণী আর একবার মৃদু প্রশন করেন, “ভেদবামি 
তুই দেখে এসোঁছিলি ?' 
সুবর্ণ গুর চোখের দিকে নিার্নমেষে তাকিয়ে দেখে বলেছিল, “এসে- 
1 


গু 


পুব্ণ লতা ৩৫৩ 


জয়াবতাঁ কপালে হাত ঠেকান। 

গাঁড় ছেড়ে দেয়। 

কৈ জানে রোগীরও এতক্ষণে নাড়শ ছেড়ে গেছে কিনা ? 

সুবর্ণ চলে যাওয়ার পর অবিরত সুবর্ণর সমালোচনাই চলতে থাকে এবং 
একবাকো। শির হয় এরকম হদযহীন আর আবেলহন মেযেমানয পাতে 
আর দু 

খবর দিতে এসোছিল সৃবর্ণর ঝি। সে বার বার কপালে হাত ঠেকাঁচ্ছিল 
আর বলাছল, 'হে মা কালণ, গিয়ে ষেন বাবুকে ভাল দেখি-_ 

তবে তার বলার ধরনে 'মনে হয়োছল, গিয়ে ভাল তো দূরস্থান, বাবুকে 
জ্যান্ত দেখার আশাও সে করছে না! 

সবর্ণর সঙ্গে কথা কইবার চেস্টা করলো সে অনেকবার, বাবুর রোগের 
ভয়াবহতার কথা স্মরণ কাঁরয়ে দিতে চেম্টা করলো বারকয়েক এবং শেষ অবাঁধ 
বিরন্ত হয়ে বললো, টনি রানিগ্রারা ছেলেপুলে 'নিয়ে ঘর করি, 
মা ওলাবিব বুঝবেন 

রা 

স্তব্ধতা ভাঙলো বাঁড় এসে দোতলায় উঠে। 

যেখানে বিছানায় পড়ে কাতরাঁচ্ছিল প্রবোধ, আর বকুল বাদে অন্য মেয়ে- 


এসে পড়ে, কলেরা রগ বলে ভয় খেলে যার চলবে না, ভর খাওয়াটা যার 
পক্ষে ঘোরতর 

৯7০-রনিজী বর চি রি কেউ কিছ বলল 
না শুধু দেখল মা উঠে গেল নীরবে । 

হ্যাঁ, একেবারে নীরবে। 

১৮০০৯-পৃস্নির নর নস িনিদ 
গলায় প্রশ্ন করলো, 'ক আউন্স ক্যাস্টর অয়েল খেয়েছিলে? 

হ্যা, এই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর কথাটা বর্পোছল স্বর্ণ সেই মরণোন্মুখ 
লোকটার মুখের উপর। যার জন্যে তার নিজের পেটের মেয়ে চাঁপা বলেপ্ছল, 
'বুঝতে পাঁর না মাকে, মানুষ না কষাই! আমাদের ভাগ্যে বাবা এষান্লা বে*চে 
উঠলেন তাই, খাদ সাঁত্যই একটা িছ? ঘটে যেত? ওই মুখ তুমি আবার 
লোকসমাজে দেখাতে 'কি করে 2 

'তুমি' দিয়ে বললেও আড়ালেই বলেছিল অবশ্য, চন্লন 'ছিল শ্রোতা । চন্নন 
বোঁশ কথা বলে না, সে শবধন মন্চাক হেসে বলোঁছল, 'মা'র আবার মুখ দেখা- 
নোর ভয়! 

বাপের অসুখ শুনে ছুটে এসোছিল তারা, আর অনেকাঁদন পরে আসা 
হয়েছে বলেই দূচারাঁদন থেকে গিয়েছিল। থেকে গিয়োছল আবাশ্য ঠিক 
বাবার সেবার্থ নয়, দুই বোন এক হয়েছে বলেই। 'রাজায় রাজায় দেখা হয় তো 
বোনে বোনে দেখা হয় না”। এই তো পারুলের সঙ্গে কি হলো দেখা? সেতো 
সেই কোন বিদেশে । 

গকন্তু প্রবোধচন্দ্ের অসুখের কারণ সম্পর্কে এই নিল্জ সন্দেহ কি একা 
সুবর্ণলতারই হয়োছল'? সুবর্ণলতার প্রখর-বৃগ্ধি ছেলেদের হয় নি? 

১৬৩] 


৩৫৪ সুবর্ণজতা 


হয়েছি বৌক, তাছাড়া প্রমাণপত্ই .তো ছিল তাদের হাতে। কিন্তু তব্‌ 
পাপন পপ ক্লু 
আছে তাদের 'তাঁড়ঘাঁড়' খবর 'দয়ে বসেছিল। আবাঁশ্য. সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও 
কু দিয়োছল-_খবর দেওয়া উচিত তাই জানালাম, তবে রোগটা ছোঁয়াচে, 

বঝে-- 

তা সেই 'বুঝটা সুবোধ আর উমাশশী বাদে আর সকজেই বুঝোছল, 
বুঝেছিল বিরাজের বাঁড়র সবাই, বৃুঝোঁছল প্রবোধের জামাইরা, তবে মেয়ের 
বোঝে নি, আর বোঝে নি জগু। 

শ্যামাসুন্দরশও অবশ্য একটু অবুঝ হচচ্ছিলেন, জগ: নিবৃত্ত করে এলেন 
মাকে, হডিমাউ করে কে'দে বললেন, 'ধা হবে তা তো বুঝতেই “পারছি, শিবের 
অসাধ্য ব্যাখি, তাঁমি আশী বছরের বৃড়ী সে দৃশ্য দেখতে পারবে ?, 

“দেখতে পারবো একথা আর কে বলতে পারে? অতএব জগ একাই 
কাঁদতে কাঁদতে এসে হাজির হয়োছলেন। 

এসে ভ্ুদখেন বিচারসভা বসে গেছে। 

রুগী আছে শুধু বকুলের হেফাজতে, সুবর্ণলতাকে ঘিরে বাকি সবাই। 

না, কটু কথা বলছে না কেউ কিছ, শুধু এইট-কু বলছে, “পারলে তুমি 
এ কথা বলতে ? কি করে পারলে? “হৃদয়” বলে বস্তুটা কি সাঁত্যই নেই 
তোমার 2? 

শ্রাপ্ত সুবর্ণলতা একবার শুধু বলেছে, “তাই দেখাঁছ, সাঁতাই নেই। এত 
[দনে টের পেলাম সে কথা । 

উমাশশী কাঠ হয়ে বর্সোছল, সুবোধচন্দ্র বললেন, “তুমি এখন যাবে, না 
থাকবে? আমার তো আবার-_” 

আঁফসের দোরর কথাটা আর মুখ ফুটে বলেন না। পেল্সন হয়ে যাবার 
পর ধরাধার করে চাকারর মেয়াদ আরো দু বছর বাঁড়য়ে দিয়েছেন, কিম্ত 
কোথাও যেন সক্ষর একটু লজ্জা আছে সেটার জন্য। তাই পারতপক্ষে 
'আঁফিসের বেলা” কথাটা উচ্চারণ করেন না সবোধচন্দ্ু। যেন ওটা এজে-বেলে, 
ওটা অন্যের কাছে অবজ্ঞার ব্যাপার। 

উমাশশী চাঁকত হয়। 

উমাশশ' যাবার জন্যে ব্গ্র হয়। 

কলেরাকে ভয় করছে না. উমাশশশী, ভয় তার এই পাঁরাঁস্থাতটাকে ভয় তার 
মেজজাকে। চিরটা দিন যাকে বুঝতে পারল না সে। সেই দুবোধ্যকে চির- 
দিনই ভয় তার। নইলে ইচ্ছে ণক আর করে না মাঝে মাঝে আসে, দণ্ড 
মেজবৌয়ের এই সাজানো-গোছানো চকচকে সংসারটায় এসে বসে! লক্ষী 
ওথলানো সংসার দেখতেও তো ভাল লাগে। 

কিন্তু কি জান কেন স্বস্তি পায় না। 

মনে হয় তার ?পঠোঁপাঠি ওই জাঁটি যেন সহত্র যোজন দূরে বসে কথা 
বলছে তার স্গে। 

অথচ বলে তো সবই। 

ছেলেমেয়েদের খবর কিঃ নাঁতিরা কে কোন ক্লাসে পড়ছে? মেয়েদের 
আর কার কি ছেলেমেয়ে হলো? সবই জিজ্ঞেস করে। আদর-যত্র করে 
খাওয়ায় মাথায়, সঙ্গো মাটি বেধে দেয়, তবু কে জানে কোথায় ওই দূরত্বটা? 


সুবর্পলতা ৩৫৬ 


শারবালা, বিন্দু, ওরা তো বড়জাকে একেবারেই পেপছে না, এক ভিটেয় 
বাস করেও প্রায় কথা বন্ধই । নেহাৎ উম্বাশশী সেই 'মরুভূঁমিটা' সহ্য করতে 
পারে না বলেই যেচে যেচে দুটো কথা কইতে যায়। তবু ওদের সঙ্গেও যেন 
নেই এতটা ব্যবধান, 'ওরা কাছাকাছি না হলেও-_কাছেরই মান্ষ। তাই উমাশশখ 
এখানে বসেই ভাবছিল, রোগটা ছোঁয়াচে বলে আসতে পারলো না বটে, খবরটার 
জন্যে হাঁ করে আছে ওরা, গিয়েই জানাতে হবে ভয়ের কারণটা নেই আর, রোগশ 
সামলেছে একট. । 

কাঁপন কথা নেই, এ একটা, বরং সৃযোগ এল। 

বললো, 'না, আমি চলেই যাই তোমার সঙ্গে। থাকা 

মানেই তো আবার পেশছনোর জন্যে ছেলেদের ব্যস্ত করা! চাঁপা-চন্নন এসে 
গেছে, মেজবৌ এসে গেছে, আব্র ভবনা কার না। উঃ, ভগবানের ক অনন্ত 
দয়া যে মেজবৌ রওনা দেয় নি! 

আজকাল একটু উত্মাত হয়েছে উমাশশশীর, ঘোমটা 'দয়ে হলেও সকলের 
সামনে বরের সঙ্গে কথা. কয়। সেই সকলরা যে সকলেই তার কাঁনম্ঠ, এতাঁদনে 
যেন সে খেয়াল হয়েছে উমাশশশর। 

তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে ঘোড়ার গাড়িতে গিয়ে বসে উমাশশী। সুবর্ণকে 
একটু বলে গেজে ভাল হতো, কিন্তু পাঁরাষ্থাতিটা যে বড় গোলমেলে। এসেই 
তো শুনেছে চাঁপার মুখে, কী কথা বলেছে সুবর্ণ তার স্বামীকে! 

হতে আর্বাশ্য পারে। মেজ ঠাকুরপো চিরাদনই তে। ওই রকম বৌ-পাগলা, 
বৌকে একবেলার জন্যে চোখের আড় করতে পারে না। সেই বৌ একেবারে 
বদারকাশ্রম যাবার বায়না করে বসেছে দেখেই করে বসেছে এই কেলেঙ্কাঁর 
কান্ড। জানে তো বারণ শোনবার মেয়ে নয় মেজবৌ! 

তবু সাঁত্যও যাঁদ তাই-ই হয়, বড় বড় ছেলে, ছেলের বৌদের সামনে মানৃষ- 
টাকে এমন হেয় করাব তুই ঃ তা ছাড়া যে কারণেই হোক, বলতে গেলে প্রায় 
তো মরতেই বসেছে! নাড়ী ছাড়বার যোগাড় । তাকে এমন লাঞ্চনা! 

ছি ছি, এ কি নির্মাঁয়কতা ? 

গাঁড়তে উঠে বসে ঘোমটাটা একটু খাটো করে সেই কথাই বলে ফেলে 
উমাশশশ। 

সুবোধের দিকে জানলাটা খোলা ছিল, সুবোধ সেই জানলার বাইরে 
তাঁকিয়োছলেন, হঠাৎ সচাকত হয়ে বলেন, 'কার নির্মাঁয়কতার কথা বললে ?' 

'মেজবৌয়ের কথাই বলাছি__+ 

হঠাৎ সুবোধ স্বভাব-বাহর্ভৃত তীব্র হন। সুবোধের প্রো চোখে যেন দপ 
করে একটা আগুনের শিখা জলে ওঠে, বলে ওঠেন, 'মেজবৌমার কথা ? মেজ- 
বৌমার নির্মায়িকতার কথা ? মেয়েমানুষ হয়েও তুম শুধু ওই 'দিকটাই দেখতে 
পেলে বড়বৌ? পেবো জক্ষমীছাড়ার নিজ্ভঞুরতা তোমার চোখে পড়ল না? 
অবস্থার গাঁতকে আম তোমায় কখনো কোনো তীঁর্থ-ধর্ম করাতে পাঁর 'ন, 
আমার বলা শোভা পায় না, তবু পেবোর “অবস্থা” ছিল বলেই বলাছ. অবস্থা 
সত্তেও তুই মানুষটাকে কোনাঁদন আকাশ-বাতাসের মুখ দেখতে 'দাঁল না! 
নিজের স্বার্থে খাঁচায় পুরে রেখে দিয়েছিস, লজ্জা করল না তোর এই বুড়ো 
বয়সে এই কেলেন্কারিটা করতে 2 স্বামী হয়ে তুই ওর এত বড় একটা তীর্থ- 
যার সুযোগ পণ্ড করাল? সুযোগ বার বার আসে ? বোটা যে চিরাদন 


৩৫৬ সুবর্ণজতা 


আকাশ বাতাসের কাঙাল, তা জানিস না তুই ? আর তাও যদি না হয়, হিন্দু 
বাঙালীর মেয়ে তো বটে! “বদরানারায়ণ” যারা করাঁছল, কত বড় আশাভল্গ 
হলো তার, সেটা তুমি বুঝতে পারলে না বড়বৌ ?" 

একসঙ্গে এত কথা কইতে স্মবোধকে জাঁবনেও কখনো দেখেছে কনা 
উমাশশী সন্দেহ, তাই সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বামীর মুখের 'দিকে 
আর বোধ কাঁর কথাগুলো অনুধাবন করতে চেষ্টা করে। সুবোধও বোধ হয় এই 
আবেগ প্রকাশ করে ফেলে লঙ্জিত হলেন, তাই এবার শান্ত গলায় বলেন, 
'মেজবৌমা মানুষটা আলাদা ধাতুর, গুকে তোমরা কেউ বুঝলে না। আর 
পেবোটা হচ্ছে_” চুপ করে যান। 

তা কেউ বাঁদ সকলের দুর্বোধ্য হয় তো সে দোষ কার ? তাব, না সকলের ? 

কাবিন আর গারিালা 'নে খো' করে রালা সেরে তাড়াতাড়ি হাড় ভাত 

চুকিয়ে নিচ্ছিল, কে জানে কখন ক খবর আসে । মাঁল্পকা নেই, কাঁদনের জনো 
*বশৃরবাঁড় গেছে, শাশুড়ীর অসুখ শুনে। কাজেই চক্ষুলজ্জা করবার মত 
কেউ নেহ। নইলে যা কট্‌কটে মেয়ে, খুড়ীদের এখন ভাতের কাঁসি নিয়ে 
বসা দেখলে কট্‌কট করে কথা শোনাত। নেই বাঁচা গেছে। 

অতএব দুজনে ছেলেপুলেকে ভাত দিয়েই একই রান্নাঘরের দুই প্রান্তে 
দু কাঁ'স ভাত বেড়ে নিয়ে বলাবাঁজ করাছল, “যা হবে তা তো দেখাই যাচ্ছে, তবে 
মেজদির এবার কি হবে তাই ভাবনা। ণচরটা দিন তো ওই একটা মানুষের 
ওপর দাপট করে তেজ-আসপদ্দার ওপরই চালিয়ে এলেন, এখন পড়তে হবে 
ছেলে-বৌয়ের হাতে !” 

এরা দুজনে যে পরস্পরের প্রাণে সখাঁ তা নয়, দুজনের আলাদা অবস্থা, 
আলাদা কেন্দ্র পাড়া-পড়শীর সঙ্গে দুজনের গলায় গলায় ভাব (যেটা মন্ত- 
কেশীর আমলে সম্ভবপর ছিল না) হলেও সেই পড়শীরা ভিন্ন ভিন্ন দলের, 
এবং সেখানেই নিশ্চিন্ত হয়ে পরস্পরের সমালোচনা করে বাঁচে। তবু একেবারে 
কথা বন্ধ, মুখ দেখাদেখি বন্ধটা নেই, বরং মিলই আছে। ক্ষুদ্রতার সঙ্গে 
ক্ষুদ্ুতাব, সঙ্কার্ণতার সঙ্গে সঙ্কীর্ণতার, স্বার্থ বোধের সঙ্গে স্বার্থবোধের এক 
ধরণের হদ্যতা থাকে, এ সেই হৃদ্যতা। গারবালা আছে. তাই বিন্দু একজনকে 
ঈর্বা কবতে পায়, বিন্দু আছে, তাই ধগারবালা তার অহামকা বিকাশের একটা 
ক্ষেত্র পায়-_.ওদের কাছে তারও মুল্য আছে বৌক। 

তা ছাড়া কেউ তো উদার নয় যে, একের অপরের কাছে “ছোট' হয়ে যাবার 
প্রন আছে। উমাশশীর পয়সা নেই, তাই সে পয়সা খরচে কৃপন, কন্তু হৃদয়ে 
কৃপণ নয় উমাশশী। তাই উমাশশীকে ওরা দেখতে পারে না। 

তবু উমাশশীই যেচে ষেচে আসে । বলে. “ক রে সেজবৌ, আজ কি 
রাধাল ?.. ও জু জীিপনুছি ভি 

ওরা গ্রাহ্য করে উত্তর দিলে গল্পটা এগোয়, ওরা অগ্রাহ্য-ভাব দেখালে 
উমাশশী আস্তে সরে আসে । আজ ভাবাছল মেজবৌয়ের ধাঁড়র খবর নিয়ে 
বেশ খাঁনকক্ষণ গজ্প চালানো যাবে, কিন্তু হঠাৎ মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে 
মি বারে বাবে কানে বাজছে, "দ্য এইটাই তোমার চোখে পড়লো 
বড়বো 25 

বোঁশ কথা আর বলল না, রুগী সামলেছে, প্রাণের ভয় নেই, শুধু এই 
টুকুই জানিয়ে দিয়ে আস্তে চলে এল উমাশশী। 


সৃবর্ণলতা ৩৫৭ 


'তবে আর সাত-সকালে গিলে মার কেন' মনে মলে এই কথাটুকু উচ্চারণ 
করে বাড়াভাতে এক-একখানা গামলা চাপা দিয়ে, দুই জা দুজনের 'দকে তাকিয়ে 
একট তীঁক্ষ! হাঁস হেসে বলে, 'ভাঁগ্যটা দেখলে 2 এ বাবা ভ্্রেফ মেজাদর 
ভাগ্যের জোরে- নইলে এ হলো শিবের অসাধ্য ব্ামো " 


তা জগ্‌ও সেই কথাই বলতে বলতে এসেছিলেন এবং রুগীর বিছানার 
ধারে বসে পড়ে কেদে বলে উঠোছলেন, শক রে পেবো' মায়ের ছেলে মায়ের 
কাছে চলাল ? 

প্রবোধ কষ্টে বলোছিল, 'যেতে আর পারলাম কই 2 এ হতভাগ্যকে যমেও 
ছোঁয় না। তোমাদের ভাদ্রবৌ তো বলে গেল, রোগ না ছল! 

গেঙিয়ে গোঁঙয়ে বললেও বুঝতে পারা গেল এবং বলা বাহুল্য অবাকই 
হলেন জগু। মেজবৌমা কি তাহলে সাঁতাই "মাথা খারাপ' রুগী; নচেৎ এই 
যমের দোরে পেশছনো মানুষটাকে এই কথা বলে? 

আঁবাশ্য মাথা খারাপ হলে কথা নেই, কিন্ত না হলে? নাঃ. মাথাটাই 
ঠিক নয়, দেখলাম তো-_ 

কন্তু খাঁনক পরে সহসা এই রুগীর বাঁড়তেই সেই মানুষেরই হা-হা 
হাঁসির শব্দ ছাদে 'গয়ে ধান্ধা খায়। 'আ্যাঁ, তাই নাক 2 মেজবৌমা বদরী- 
নারায়ণ যাচ্ছলেন, চলে আসতে হলো! ও* তাহলে আর দেখতে হবে না কানু, 
এ স্রেফ আমার মগজওলা ভায়ার কারসাজি! নাঃ, ব্যাদ্খ একখানা বার করেছে 
বটে!...কল্তু ভার অন্যায়। যাচ্ছিলেন একটা মহাতীথে! তাছাড়া নিজেরও 
বয়েস হয়েছে, যাঁদ হয়ে যেত একটা কিছু ঃ তখন তুম পাঁরবারের হিল্লা 
দল্ী যাওয়া বন্ধ করতে আসতে ১ যাক গে, ছলই হোক আর সতাই হোক, 
ভায়া পট্‌্কে গেছে খুব । এখন স্রেফ জলবার্লঘী! পুরো তিনটে দিন স্রেফ 
জলবা্ল! বকুল রে. বাবা ভাত খেতে চাইলেও দার না।.. যাই, সেই আশী- 
বছুরে বৃডবটা মরছে ধড়ফাঁড়য়ে বলি গে তাকে।' 

একে একে সকলকেই ধড়ফড়ানো থেকে রক্ষা করা হলো। শুধু জয়াবতাঁর 
বাঁড়তে খবর দেবার কিছ নেই। জয়াবতীরা রওনা হয়ে গেছে। হয়তো এখন 
তাদের বিশবাস আর ভগ্ষিন গলা থেকে উচ্চাঁরত হচ্ছে, জয় বাবা নদরী- 
নারায়ণ! জয় বাবা বদরী[বিশাল কি জয়। পাশ্ডাঠাকুরের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে 
৮ ৮৮৮৮7৮ ২০ 

কে জানে স্বর্ণলতার 'ওই ভান্তির ঘরটায় ফাঁক ছিল 'কিনা। নইলে তার 
কণ্ঠস্বরটুকু আকাশে ওঠবার সুযোগ পেল না কেন: 

জয়াবতীর ননদ, অতএব সূবর্ণরও সম্পার্কত ননদ সেই কথাই বলাবাঁল 
করে. “কেবলই তো হিমালয় দেখবো, হিমালয় দেখবো চিন্তা দেখলাম, বাবার 
নাম তো একবারও শুনলাম না। ..ঠাকুর অন্তর্যামী, দেখছেন সব। 

আশ্চর্য, ওই কথাই বলে লোকে। 

ভয়ঙ্কর এই ভূল কথাটা । 

কোটি কজ্পকাল ধরে বলে আসছে। 

হয়তো বা আরো কোট কল্পকাল ধরে বলবে! যারা উল্ল্টা কথা বলতে 
চাইবে, তারা সমাজে পাঁতিত হবে। 


& ই ॥ 
কিন্তু চিরাঁদনের উল্টো-পাল্টা সূবর্ণলতা ফি সৌদন উল্টো কথা বলোছল ? 
না ওই কোটি কম্পকালের কথাটাই. একবার উচ্চারণ 
করোছল ? 
কে জানে! তারপরও তো আবার দেখা 'যাচ্ছে 


ডি সুবর্ণসতা দুঃসহ স্পর্ধায় তার ঘোল বছরের আইবৃড়ো 
॥ মেয়েকে বলছে, 'সৃনির্মলকে একবার ডেকে দে তো!' 






৯১০41 সি নুর “আপনি” বলছে ভানু। 

'বলব আবার কি! প্রবোধ ক্রুদ্ধ গলায় বলে, 'বলব, তোমার ওই জোয়ান 
ছেলের এসে এসে আর আমার ওই ধাঁড় 'ধঞ্গখ মেয়েকে পড়াতে হবে না। 

; যাঁদ' বলেন, ধনজের মেয়েকে না সামলে আমায় বলতে 

এসেছ কেন 2, 

কথাটা প্রণিধানযোগ্া, তাই প্রবোধ গম হয়ে যায়, তারপর আবার বলে 
ওঠে, ণঠক আছে, ওই ছেলেটাকেই শাসিয়ে দিচ্ছ 

ভানু যেন একটা মজা দেখছে এইভদবে বলে, দতে পারেন। তবে 
সেখানেও অপমানিত হবার ভয় আছে! এয্‌গের ছেলে, ওদের গুরু-লঘু জ্ঞানটা 
তো ঠিক আপনাদের িসেবমত নয় ! 

প্রবোধের একটা কথা মুখে এসোছিল, সামলে নিয়ে বলে, “তবে ওই 
হারামজাদা মেয়েকেই শায়েস্তা করছ আমি, রোসো। সূনির্মলদার কাছে পড়া 
করছেন! পড়ে আমার গাঁম্টর মাথা উদ্ধার করবেন! কী করবো- শাঁখের 
করাতের নিচে পড়ে আছ আম, নিজের সংসারে চোর, তা নইলে-_ 

তা নইলে কি হতো তা আর বলে না, চলে বায়। ্‌ 

ভানু কেমন একটা ব্যঙ্গাাশ্রত দৃম্টিতে তাঁকয়ে থাকে। কী ফুটে ওঠে 

দাল্টতে? 


মানুষটা ক অপদার্থ” ? 


যাক, ভানুর দৃষ্টিতে কিছু গেল এল 8০ 
পড়াতে আসা নিয়ে সংসারে একা ঘূর্ণাবর্তের সষ্টি করলেন প্রবোধচন্দ্র এবং 
“পদার্থের পরাকাচ্ঠা দোখয়ে সোঁট বন্ধ করতেও সমর্থ হলেন। কে জানে ফি 
কলকাঠি নাড়লেন, পাঁরমলবাবুর স্ত্রী দীর্ঘাঁদন পরে এ বাড়িতে এলেন, এবং 


নুবর্ণলতা ৩৫৯ 


আগুনের সেই চিরন্তন উদাহরণাঁট নতুন করে আর একবার স্মরণ কারয়ে 
মা 
দিতে! শধেু শু; কেন আমার ছেলেটাকে চণ্তল করা ভাই! একেই তো ছোট 
থেকে-- 

সুবর্ণ সহসা প্রাতবেশিনীর একটা হাত চেপে ধরে রুদ্ধকণ্ঠে বলে ওঠে, 
'নেবেন আপনি বকুলকে 2 

ভদ্রমাহলা হাত ছাঁড়য়ে নিয়ে বলেন, “আম নিতে চাইলেই কি বকুলের 
বাবা দেবেন? তুমি না হয় আলাভোলা মানুষ, অত ধরবে না, তোমার 
ছেলেরা ? তোমার কর্তা 2 না ভাই, গৃহবিচ্ছেদ বাধাতে চাই না আমি। মেয়ে 
পাহাড হয়ে উঠেছে, বিয়ে দিয়ে ফেল, আর পাঁড়য়ে কি হবে চাকরি করতে 
তো যাবে নাঃ মনে কিছু কোরো না ভাই, “স্ীন” আর আসবে না।' 

এরপরও কি সুবর্ণ বলবে, হাঁ, তাকে আসতে হবে? 

তা বলা সম্ভব নয়, তবু সেই স্ীনর্মলকে ধরেই অসম্ভবকে সম্ভব 
করোছিল সবর্ণ। মাইনে করা মাস্টার ঢুকিয়োছল বাঁড়তে ষোল বছরের 
মেয়ের জন্যে। 

বদ্ধ জদ্রলোক, কোন এক সরকারী স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন, এখন 
টিউশাঁন করে চালাচ্ছেন। চযান্তপত্রে সই করে ছাব্-ছাত্রীকে তালম দেন। অনেক 
মেয়েই তো প্রাইভেটে পড়ে পরাক্ষা দিচ্ছে আজকাল। 

বকুলের জ্যাঠামশায়ের চাইতে বষেস বোঁশ, এ মাস্টারকে নিয়ে আর কিছু 
বলবার আছে? 


রাস্তায় দেখার সুযোগ ব্লমশই কমছে, বাঁড়তে আসার পাটটাও এই একটা 
বেদান্ত আলোড়নে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, তবু একসময় দেখা হলো। মৃদু 
হাসলো বকুল শক সূনির্মলদা, পেয়েছ খুজে 'াশ্চন্ত নিরাপত্তা? টাক 
মাথা. কৃ'জো পিঠ 

স্নর্নল 'এদিক-গাঁদক তাকিয়ে টূক করে ওর মাথায় একটা টোকা মেরে 
বলে, পেলাম। ওদের জন্যে না হোক, আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যেই 
থনজণতে হলো! 

“তোমাদের বাঁড়টা তো আমাদের বাঁড়র থেকে এক তলও অগ্রসর নয়, 
সাহস করোছলে কি করে তাই ভাবাছি! হয়েছ তো এখন জব্দ 2 

'ভুব্দ আবার কি, ভার ফাজিল হয়োছস! বলে চলে যায় তাড়াতাড়। 

তা জব্দ সে সাঁত্যই হয় নি। আগে থেকেই আঁটঘাট বেধোঁছল। 

স্‌বর্ণলতা যখন প্রস্তাব করোছল, তখন সূনির্মল বিপূল পুলক গোপন 
রেখে 'আচ্ছা, আসবো সময় করে। এই আহয়াদণ, নভেল পড়াটা একট; কমাস-_+ 
বলে চলে গেলেও বাঁড় "গয়ে মা'র কাছে বলোছল, 'এই' এক হলো ঝঞ্জাট! 
এমন সব অন্যায় অনুরোধ করে বসে মানুষ! ও-বাঁড়র খুড়ীমা ডেকেভূকে 
অনুরোধ করে বসলেন কি জানো? রোজ গিয়ে ওই মেয়েটাকে পড়াতে 
হবে! 

বলা বাহলল্য, স্টন্মসের মা এতে পুলাকত হলেন না, কুদ্ধই হলেন। 
বললেন, “তার মানে 2 

মানে আর কি! ঘষটাচ্ছে তো এখনো থার্ড ক্লাসে। অথচ বাদ্ধ-সৃগ্ধি 


৩৬০ সুবর্ণজতা 


৯৯ তাই বাসনা, গাঁড়য়ে-পিটিয়ে সামনের বছরেই প্রাইভেটে পাস 
দেও 

পাস দেওয়াবেন! মেয়েকে পাস 1দইয়ে কি চতুর্বর্গ হবে শুনি? 

'তাকেজানেবাবা! বললেন! কথা এড়াবো কি করে? 

কথা এড়াবো কি করে ? চমৎকার! কেন- বললেই তো পারাঁতস আমার 
এখন এম-এ ক্লাসের পড়া-_ 

, বললেন, একটু সময়-টময় করে। মুখের ওপর “না” করা 

ধায় ? 

পারমল-গৃঁহণীও এটা স্বীকার করেন। তাই শেষতক বলোছলেন, 
“বেশ, পড়াও তো ওর মা'র সামনে বসে পড়াবে।” 

তাই চলাছল, এটাই জানতেন পাঁরমল-গন্ষশ। কিন্তু জল অনেকদূর 
গড়ালো। অতএব রঙ্জামণ থেকে বিদায় দিতে হলো তাকে, বাষাট বছরের 
পাণেশবাবুকে আসন ছেড়ে 'দিয়ে। 

গণেশবাব্দ সম্পর্কে কী আর আপান্ত তুলবে স্মবর্ণর সনাতনী সংসার ? 

এঁদিকে তো চতুর্দক থেকে রকম রকম খবর আসছে ঝপাঝপ। 

সুরাজের ছোট ছেলে 'বিলেতে ব্যারিস্টারী পড়তে গিয়ে মেম বিয়ে করে 
এনেছে, সৃরাজ সেই ছোটবৌকে সমাদরে ঘরে তুলেছে। বৌ-ছেলের জন্যে 
আলাদা বাবুর্চি ঢুকেছে বাঁড়তে। 

এঁদকে সুবালা যে সুবালা, সেও নাকি একটা মেয়েকে বারেন্দ্র বামূনের 
ঘরে বিয়ে দিয়ে বসেছে, আর অমূল্য বলেছে, ণঠক আছে বাবা, আমায় সবাই 
যাঁদ জাতে ঠেলে তো বাকি যে কটা পড়ে আছে ওই বারেন্দর-টারেন্দর দেখেই 
দিয়ে দেব! 

এদিকে... 

উাঁনশ বছর বয়েস থেকে হাবিষ্যি শিলে আর শুচিবাই করে করে যে 
মাল্পকার জন্মের শোধ আমাশার ধাত, হাতে-পায়ে হাজা, সেই মল্লিকার নিজের 
খুড়*বশুর ত্রা্মধর্ম না নিয়েও বিধবা মেয়ের 'বিয়ে দিলেন। 

স্যর বল কে করকে 'পাতত, আদার সাদী করেই হলো 
সে | 

তা ছাড়া হরদমই তো পথে-ঘাটে মেয়ে দেখা যাচ্ছে, দ্রীমগাঁড়তেই যেয়ে 
উঠে বসছে । মেয়ে-ইস্কুলের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে-মাস্টারনীও বাড়ছে; এই 
বন্যার মুখে মাস্টার নিয়ে খুুতখসুত করে আর কি হবে 2 

তবু শেষ চেষ্টা করোঁছল প্রবোধ 'আমার অত পয়সা নেই' বলে। সবর্ণ 
সংক্ষেপে বলেছে, “তোমায় 'দতে হবে না।' তারপর ঈশ্বর জানেন, সুবর্ণ কাকে 
দিয়ে দুখানা গহনা বার করে ফেলেছে। 

কে জানে গার তাঁতিনী এই কাজে সহায় হয়েছে কিনা। বৌদের তো 
তাই বি*বাস। নইলে আজকাল এত আসে কেন ও? 

আচ্ছা প্রবোধই বা 'নজে দি করছে ১ এত বড় আইবুড়ে মেয়ে নিয়ে বসে 
আছে নাঃ কারণ? কারণ ঘরে ঘরে বড় বড় মেয়ে রয়েছে পড়ে, সেই 
সাহস! 


৪২৫ 


হ্যাঁ, চলাছল 'গাঁরর আনাগোনা। 

মাঝে মাঝেই কাপড়ের বোঁচকা নামিয়ে পা ছড়িয়ে বসে জল খেতে দেখা 
যায় তাকে এ বাড়িতে, পান চাইতে দেখা যায়। কাপড় 
না গাঁছয়েও চলে যাচ্ছে, আবার আসছে। 

গার এখনো যেমনাঁট ছিল যেন ঠিক তেমনাটই 
আছে। 

সুবর্ণলতার চেহারায় কত ভাঙচুর হলো, সুবর্ণ 
লতার স্বাস্থ্যে কতই, ক্ষয় ধরলো, গার অটুট অক্ষয়। 
শুধু কাপড়ের মোটের মাপটা একটু ছোট হয়েছে তার 
ইদানীং। তা সে বোঁশ বইতে পারে না বলে না বেশ 
গছাতে পারে না বলে, তা কে জানে! এ ধলা 
কাপড় কেনার থেকে দোকানের ওপরই বোঁশ ঝোঁক। 

তাই গার আর মোটা আটপোৌরের বোঝা বোশ বয়ে বেড়ায় না, বাছাই 
বাছাই জারপেড়ে শান্তিপুরী, মাহ মাহ ফরাসডাঙ্গার আধুনিক ধরনের 
পাড়ের দু-চারখানি শাঁড়, এই নিয়ে বেরোয়। 

আর এসেই বলে, "শ'বাজারের রাজবাঁড়তে 'দিয়ে এলাম এককুড়ি শাড়ি, 
ওতোরপাড়ার রাজাদের বেয়াইবাঁড়তে 'দয়ে এলাম এককাঁড় সাতখানা শাড়, 
নাটোরের মহারাণার বাপের বাঁড়তে দুকাঁড় শাড়ির বরাত আছে, যেতে হবে 
সেখানে । 
৷ রাজবাড়ি ছাড়া কথা নেই আজকাল গিরির মুখে । দিন 'গত' হয়ে আসবার 
আভাস যত স্পম্ট হয়ে উঠছে, ততই কি শুধু প্রচারের জোরে প্রাতিষ্ঠা বজায় 
রাখবার চেষ্টা গাঁরর 2 

ঘটকাঁল তো গেছেই, এ ব্যবসাটাও যেন গেল গেল। 

কন্তু ঘটকাঁলিটা কি একেবারে গেছে ? 
এ বাড়তে তবে আজকাল কোন্‌ কাজে আনাগোনা তার? হ্যাঁ, সেই 
পুরনো ব্যবসাটাই আবার ঝালাতে বসেছে গর! 

সুবর্ণলতার সেজ ছেলে মানূর জন্যে একটি কনের সন্ধান এনেছে! 

মানুর বিয়ের বয়েস আগেই হয়োছিল, বছরের আড়াআঁড় পিঠোপিঠি 
ভাই তো ওরা-_ভান;, কানু মান্্‌। তবে মানু কৃত হয়ে বিদেশে চারুর করতে 
চলে যাওয়ার দরুন বিয়েটা পাছয়ে গেছে। আর হয়তো বা সববর্ণলতার অনা- 
গ্রহেও গেছে। 

নচেৎ মেয়ের বাপেদের তো মেয়ে নিয়ে ধরাধারর কামাই নেই। 

সুবর্ণলতা বলে, 'ছেলে ছুটিতে বাঁড় আসুক, তখন কথা হবে।. আজকাল 
ছেলেদের নিজের চোখে দেখে নেওয়া রেওয়াজ হয়েছে।' 

ইচ্ছে করে ছেলেকে এই বেহায়াপনা শিক্ষা দেবার ব্যাপারে বাঁড়র কারূরই 
অনুমোদন নেই। যে দম্পতিষুগলের না দেখে বিয়ে হয়েছে, তারা সরবে বলে, 
“কেন' বাবা, আমরা কি ঘর করাছ না?' 

তবু সুবর্ণ বলে, 'তা হোক। যে কালে যা ধর্ম! 
রা লা ক রা রর ছি 





৩৬২ সুবণজতা 
এই, যে ছেলেটা ঘরবাঁড় ছেড়ে 'দল্লীতে পড়ে আছে, তাতে কি খুব সুখ হচ্ছে 
তোমার ? প্রবোধ কি আপাঁন্ত করে নি? বলে নি কি, এ বংশের কেউ কখনো 
“ভাত ভাত" করে দেশছাড়া হয় নি? 

সুবর্ণ বলেছে, “কখনো হয় নি বলে কখনো হবে না? তোমার ঠাকুদ্দা 
প্রঠাকুদ্দারা তো কখনো গায়ে কাটা কাপড় তোলেন নি, পায়ে চামড়ার জুতো 
ঠৈকান নি, তুমি মানছো' সেই সব নিয়ম 2 নিয়ম জানসটা কি হিমালয় পাহাড় 
যে, সে নড়বে নাট 

অতএব মানু দিল্লীতে চলে গিয়েছিল। 

ছুটিছাটায় যখন আসে, মানুকে আর এক বাঁড়র ছেলের মত লাগে। 
বেআন্দাজন বেপরোয়া আর শৌখিন তো ছিলই চিরকাল। এদের এই সনাতনশ 
বাঁড়র প্রলেপ যেন আর রাঞ্জত রাখতে পারছে না তাকে। 

সুবর্ণর এটায় যেন আলাদা স:খ। 

বললে লোকে শছ ছি' করবে, তবু মাতৃস্নেহের মুখ রাখে না সুবর্ণলতা। 
॥ মানু বরাবর বাইরেই থাকুক, ওখানেই সংসার পাতুক, এই তার একান্ত 
চ্ছে। 

তা সম্প্রতি মানুর চিঠ পড়ে গন হয় ষেন ওই “সংসার পাতা'র ইচ্ছেটা 
উপক মারছে। রাঁধুনে ঠাকুরের হা.« যে খাওয়া-দাওয়া ভাল হচ্ছে না এটা 
প্রায়শই জানাচ্ছে 

তবু সুবর্ণলতা ওঁদাসশন্যের খোলস ত্যাগ করে বিয়ের তোড়জোড় করছিল 
না, হঠাৎ এই সময় গার একাট মেয়ের সন্ধান নিয়ে এসে ধরে বসলো । 

একেবারে নেহাং গরীবের ঘর, অসহায় বিধবার মেয়ে, তবে মেয়ে পরমা- 
সুন্দরী । মেজবোৌমার দয়ার শরীর বলেই গার এখানে এসে পড়েছে। 

গরীবের ঘর! 

অসহায়া বিধবার মেয়ে! 

পরমাসূন্দরী ! 

এই তিনটে শব্দ যেন স্ববর্ণকে ফিণ্9ৎ বিচাঁলত করে এনোছল। 

তারপরই গার শাঁড়র ভাঁজ থেকে কনের একখানা ফটো বার করলে! 
বললো, “এ ছাঁব তোমার ব্যাটাকে যাঁদ পাঠিয়ে দাও দিও, মোট কথা গরীবের 
কন্যাদায়টা উদ্ধার করতেই হবে তোমায়। 

সুবর্ণ ফটোখানা চোখের সামনে তুলে ধরলো, আর তল্মুহূর্তেই যেন 
আত্মসমর্পণ করে বসলো । 

আহা কণ নম্র ভঙ্গ, ক নমনীয় মুখ, কাঁ কোমল চাউনি! অথচ কেমন 
একটি দশপ্ত লাবণ্য! দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে! 

গার এদিকে কথা চাঁলয়ে যায়, “মেয়ের পিসের বুঝি ফটক তোলার শখ, 
তাই কবে একখানা ফটক তুলোছিল সেইটুকুই সম্বল, নইলে গরীব বিধবার 
মেয়ে, কে কী করছে! বংশ খুব উশ্চু গো. তোমার মামার বাঁড়র সঙ্গে কি যেন 
সুবাদ আছে! 

“আমার মামার বাঁড় 2 

সুবর্ণ ষেন চমকে ওঠে! 

সূবর্ণর আনার মামার বাঁড় কোথায়? এদের এই বাঁড়টা ছাড়া সহবর্ণর 
আর কোথাও কোনো 'বাঁড়' আছে নাকি? মাসীর বাঁড়, 'পাঁসির বাঁড়, 'দাদর 


সুবর্পলতা ৩৬৩ 


বাঁড়, জেঠি-খুড়ীঁর বাঁড়, বা সব থাকে লোকের? তাই মামার বাঁড় থাকবে ? 

স্বর্ণ ম্লান হাঁসির সঙ্গে বলে, “আমার আবার মামার বাঁড়! ভূতের 
আবার জল্মাদন!” 

গারও হাসে, 'আহা, তা ডীদ্দশ তারা না করলেও, ছিল তো একটা মামার 
বাঁড়? ভূ'ইফোঁড় তো নও! 

“আমার তো নজেকে তাই মনে হয়।” 

সুবর্ণ ছাবখানা আবার হাতে তুলে নেয়, দেখে নিরীক্ষণ করে। 

গার আঁচল থেকে 'গুলের' কৌটো বার করে একটিপ দাঁতের খাঁজে রেখে 
বলে, “তা তুমি খবরাখবর না রাখলেও তেনারা রাখে । এই মেয়ের যে দিদিম। 
তার সঙ্গে দেখা হলো। তিনিই বললো, তুম পাত্তরের মাকে বোলো, 
হচ্ছি তাঁর মায়ের জ্ঞাত পাসি। পাস ভাইীঝ আমরা একই বয়সী ছিলাম, 
১৮ কি যেন ছাই নাম ছিলো তোমার মায়ের? বললো 

নাম-_' 

1কন্তু কাকে বলছে গার ? 

সুবর্ণ যে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে হঠাৎ । 

তার মায়ের সমবয়সশ ধীপসী ? 

গলায় গলায় ভাব ছিল ? 

কে সে? কী নাম তার? 

সুবর্ণ যেন নিথর সমুদ্রে ড্বুরি নামাতে চেষ্টা করে! মা'র কাছে মা'র 
ছেলেবেলার গ্প শুনেছিল না 

'নাম জানো তাঁর_+ 

আস্তে বলে। 

গার দেখে ওষুধ ধরেছে! 

গার অতএব পান বার করে এবং পানটি খেয়ে একট; কালক্ষেপ করে বলে, 
'জাঁন-নাম তো বললে কাঁড়। তোমার মায়ের পাঁস হয় বললো, “পাপ; 
পাসি” না কি। বললো. “ওই বললেই বোধ হয় বুঝতে পারবেন” । 

পাঁণ্য পাস! পণ্য পাস! 

বিস্মীতর কোন্‌ অতল থেকে ভেসে উঠল এ নাম? একখানি উজ্জ্বল 
হাঁস হাঁস মুখ থেকে ঝরে পড়তো না এই নামাঁট 2 

'আমি আর পণ্য পাস, এই দুটিতে ছিলাম একেবারে দম্টামর রাজা! 
একাদন আম আর পুণ্য পাস, হ হি হি, দুজনে পাল্লা দিয়ে এমন সাঁতার 
কাটজাম যে ফিরে এসেই সঙ্গে সঙ্গে কাঁথামাঁড় দিয়ে তেড়ে জবর! .. প্যাণ্য 
পাস ছিল এঁদকে ভারি ভীতু 

সুবর্ণ চোখ তুলে বলে, ডিনি মেয়ের কে হন বললে 2 

পদদিমা গো! খোদ মায়ের মা! অবস্থা একদা উচু ছিল, ভগবানের 
মারে পড়ে গেছে সে অবস্থা 

সুবর্ণ স্থির গলায় বলে, তুমি এখানেই কথা কও গার ঠাকুরাঝ, এই 
মেয়েই আমি নেব। 

এই মেয়েই আঁম নেব। 

এই মেয়েই আম নেব। 

যেন যপের মল্ম! 


৩৬৪ সংবর্পলতা 


এই ছবির মুখে যেন কাঁ এক শাম্তির আশ্বাস পেয়েছে স্মবর্ণ! 

এই ছবির মুখে কি সুবর্ণর মা'র মুখের আদল আছে? 

িল্তু কেন তা থাকতে যাবে ? 

কোন্‌ রন্ত কোন দিকে গাঁড়য়েছে হিসেব আছে তার 2 

কোনো যুক্তি নেই, তবু সুবর্ণর মনে হতে থাকে, এই মেয়ের মধ্যে তার 
মা'র মাধুরণ মাখানো আছে। আছে সুরে সুরে সাদশ্য। এই যোগসূত্র কে 
এনে ধরে দিল ? নিশ্চয়ই ভগবান! স্বর্ণ নিজে তো যায় নি খুজতে ? 

তবে? 

এ ভগবানের খেলা ! 
এন চগিন উদার হগারারাগ রা মাস 
এ 

ছবিখানা মানুর কাছে পাঠিয়ে দিতে হলে- হয় স্বামীকে, নয় পুত্ুরদের 
জানাতে হবে। সুবর্ণ তো আর পার্শেল করতে যাবে নাঃ আগের মত দিন 
থাকলে সুনির্মলকেই বলতো কিন্তু ওই পড়া আর পড়ানো 'নয়ে এমন বিশ্রী 
একটা আবহাওয়া হয়ে গিয়েছে যে. তেমন স্ব্ছল্দে আর ডেকে কাজ বলা 
যায় না। 

অথচ এখুনি এই ছাবর খবর ধনতে ইচ্ছে হচ্ছে না কাউকে । এ যেন 
সবর্ণর নিজস্ব গোপন ভার দামী একটি সম্পাত্ত। 

একথানি মিষ্টি মুখ, এত প্রভাঁবত করতে পারে মানুষকে 2 

“আমিই এই--” মনে মনে একটু হাসে সুবর্ণ তবে আর ভবিষ্যতে আমার 
ছেলেকে দোষ দেওয়া চলবে না। সেতো আত্মহরা হয়েই বসবে। ফটো আর 
পাঠিয়ে কাজ নেই, মূর্ঘা ষাবে। 

ফটোটা পাঠাল না সুবর্ণ, এমন একটা 'চিঠি লিখলো ছেলেকে। 

তাতে জানালো? "সে মেয়ে অপছন্দ হবার নয়, দেখলেই বুঝবে মা'র 
নজরাঁট কেমন। এক দেখায় বলা যায় পরমা সুন্দরী মেয়ে, 'তাই আর কাল- 
বিলম্ব নন করে কথা দিয়ে দয়োছ। তুমি পন্নপা৯ ছহাটির দরখাস্ত করবে। 
গরীব বিধবার মেয়ে, বয়েসও হয়েছে, তারা একান্তই বাস্ত হয়েছে ।' 


আবার সেই বাঁড়র কর্তাকে বাদ দিয়ে, বড় বড় ছেলেদের উপেক্ষা করে 
কথা দেওয়া! 

শক্ষা আর সবর্ণর হবে না! 

তা মাস্টার রাখা এবং কলেরা কাণ্ডের পর থেকে সুবর্ণকে যেন সবাই ভয় 
করতে শুরু করেছে। 

ভন্ত নয়, ভয়! 

টৈতন্য হয়ে সমঝে যাওয়া নয়, বাগে গন্ম হয়ে থাকা। অতএব এই 'কথা 
দেওয়া' ণীনয়ে আড়ালে যতই সমালোচনা চলুক, সামনে কেউ কিছু বলে না। 

তবে সুবর্ণ যাঁদ বলে বসে-গারর সঙ্গে একবার ওদের বাঁড় যাই না?' 
তাতেও চুপ করে থাকবে মানুষ ? 

বিরন্ত প্রবোধ না বলে পারে না, 'ওদের বাঁড় যাবে তুমি? ছেলের মা 
ছুটবে মেয়ের মা'র পায়ে তেল দিতে ?” 

“পায়ে তেল দিতে আবার কি? সুবর্ণ বলে, 'শুনলে তো বাড়তে পূরুষ 


সুবশলতা 6৬৫ 


অভিভাবক তেমন নেই, মা আর 'দিদিমা। তা দাদমা তো আমার থেকে 
সম্পকে বড়, গ্রজন, যেতে দোষের কি আছে?" 

বলে এ কথা সুবর্ণ । 

দোষের কিছু দেখে না 

১৭:১০ জন 7 দারুল রঃ 
করে, সেটা তো সংসারসুদ্ধু লোক মানতে পারে না? 

সুবর্ণ যাঁদ ছেলের মা হয়েও হ্যাংলার মত মেয়ের বাঁড়তে যায়, তারা 
তো এ কথাও ভাবতে পারে, নির্ঘাত ছেলের কিছ গলদ আছে, নচেৎ এত গরজ 
কিসের 2 


কথাটা উীড়য়ে দেবার নয়। ঝুনো সংসারী লোকেরা তো এই ভাবেই 
ভাবতে অভ্যস্ত। যেখানেই দেখবে চুলচেরা হিসেবের বাইরে কিছু ঘটছে, 
সেখানেই ধরে নেবে নিশ্চয় কোথাও কোনো গলদ আছে, নচেং এমন বৌহসেব? 
কেন? 

পান্রপক্ষ সিংহাসনে আসীন থাকবে, পান্রীপক্ষ জুতোর শুকতলা ক্ষয়াবে, 
এই নিয়ম! এর বাইরে যেতে চেয়ো না তুমি সৃবর্ণ। 

অতএব যাওয়া হয় না। 

শুধু সুবর্ণ ভাঁবষ্যং বাংলার ছবিতে মেয়েদের জন্যে ড়ক' প্রার্থনা করে, 
"বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর এমন কোনো মড়ক আসে না গো, যাতে দেশ মেয়ে- 
শুন্যি হয়ে যায়ঃ তখন দোখ তোমরা মহানুভব পুরুষসমাজ কোন্‌ সিংহাসনে 
বসে ব্রীতদাসী সংগ্রহ কর? এ অহঙ্কার ফুরোবে তোমাদের। তোমাদেরই 
জুতোর শুকতলা ক্ষয়াতে হবে, এই আঁম আঁভশাপ দিচ্ছি নিজ মনে এই 
ভয়ানক কথা উচ্চারণ করে সুবর্ণ বলে. হে মোর দূভাগগা দেশ যাদের করেছ 
অপমান-- 

তব এই বয়ে উপলক্ষে আবার যেন বেড়ে উঠছে স্মবর্ণ। আশ্চর্য, 
কোথায় লূকনো. আছে তার এই অদম্য প্রাণশান্ত যে শতবার ভেঙে লুটিয়ে পড়ে 
পড়েও আবার ওঠে খাড়া হয়ে ? 

কতবারই তো মনে হয় এইবার বুঝি ফারয়ে গেল সুবর্ণলতা, আবার 
দেখা যায়, আরে এ যে আবার জীবন্ত মানুষের ভূমিকা নিয়েছে! 

বকুলের বুড়ো মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে তো দাব্বি কথাবার্তা শুরু করে 
য়ে মেয়ের পড়ার তত্ব-বার্তা ধনাচ্ছল, আবার তাঁকে ধরেই আলাদা এক অঙ্কর 
মাস্টার রাঁখয়েছে, বছরের মধ্যেই মেয়েকে এন্ট্রেল্দস একজাঁমন দেওয়াবে 
বলে। 
ভানু আর ভানুর বৌ হাসে আড়ালে। 
বলে, 'মা' তাঁর ছোট কন্যাকে গাগণ মৈত্রেয়ণ লশলাবতণ না করে ছাড়বেন 
না! 

কানদ আর কানুর বৌ হাসে আর বলে, 'এ হচ্ছে সেই দাদার বন্ধুর বোনের 
ওপর আক্রোশ!" 

আর কানুর বৌ আর ভানুর বো বলে, 'মা'র দেখছ মন্তের সাধন শরীর 
পাতন। মেয়েকে জলপানি না নিইয়ে ছাড়বেন না। তবে কিনা কথায় আছে, 
“পহংসেয় সব করতে পারে--বাঁজা পৃত 'বিয়োতে নারে।” মগজে 'ঘি থাকজে 
তবে তো জলপানি! 


৩৬৬ সংবর্ণসতা্‌ 


, ধরে নেয় নেই ঘি। 

ধিল্তু ওরাই কি পরম পাপে পাপধঃ সংসার তো এই নিয়মেই চলে। 

বাহদর্শশ্য নিয়েই তো তার কারবার। কে কি করছে সেটাই দেখে লোকে । 
কেন করছে তা কি অত দেখতে যায়? দেখতে যায় না, তাই নিজেদের হিসেব 
অন্যায়ণ একটা কারণ নির্ণয় করে 'নয়ে সমালোচনার ভ্রোত বহায়! 

রা ডানার 

আবার মানুর বিয়েতে বোশ উৎসাহ দেখলেও নির্ঘাত লোকে বলবে, যোঁশ 
রোজগেরে আর দূরে-থাকা' ছেলে কিনা! জগতের রীতিই তো 'বাইরের জামাই 
মধুসূদন ঘরের জামাই মোধো?। 

এ ছেলে বাইরে আছে, নগদ টাকা পাঠাচ্ছে, অতএব মানু দামশ ছেলে। 

তবে দাম বৌ হচ্ছে না এই যা। 

এ কথা জনে জনে বলছে। 

চাঁপা তো গাঁড়ভাড়া করে এসে বলে গেল, 'রুপ নিয়ে কি ধুয়ে জল খাবে 
মাঃ মেয়ে তো শুনছি ডোমের চুপাঁড়-ধোয়া ! মানুর মতন দামণ ছেলেকে 
তুমি কানাকাঁড়তে বাকয়ে দেবে? অথচ আমার পিসম্বশুর অত সাধ্যসাধনা 
করলেন, তখন গা করলে স্ঝ তাঁম। উনি মেয়েকে মেয়ের ওজনে সোনা দিতেন, 
তার ওপর খাট-বছানা, আরশ, আলনা, ছেলের সোনার ঘাঁড়, ঘাঁড়র চেন, হীরের 
আংটি, সোনার বোতাম-_ 

সুবর্ণ হঠাৎ খুব জোরে হেসে উঠোছল। 

বলোছল, “তা হলে তো স্যাকরার দোকানের সঙ্গে বিয়ে দলে আরো তাল 
হয় রে চাঁপা! 

চাঁপার ওই জামদার পিসম্বশুর সম্পর্কে সমীহর শেষ নেই, তাই চাঁপা 
রাগ করে উঠে যায়। 

সুবর্ণ ভাবে, জঞ্জালের বোঝাকে এত বোঁশ মূল্য দেয় কেন ? 
ভাবে, চাঁপাটা চিরকেলে মুখ্য! চির সানি 

তা হয়তো সাঁত্য। মুখ্দ্য চাঁপা মৃখ্যার মত কথা বলেছে। 


কিন্তু মানু ? 

মানু তো মুখ্য নয় ? 

মান তো বদ্যের জোরেই 'তিন-তিনশো টাকা মাইনের চাকার করছে। 

সে তবে এমন চিঠি লেখে কেন? 

মানূর চিঠর ভাষা কৌতুকের। তবে বন্তব্টা আভন্ন। সেও বলেছে, 
এুগে রূপের চেয়ে রুপোর আদর বেশি। তা ছাড়া হাড়দুঃখণী বিধবার মেয়ে 
বিয়ে করে চিরকাল যে তাদের টানতে হবে তাতে সন্দেহ নাঁস্তি। কাজ ক বাবা 
অত ঝামেলায় । বরং নিজেরই এখন নগদ কিছু টাকা হাতে পেলে ভাল হয় 
তার। একটা ভাল চাকরির সন্ধান পেয়েছে, দিল্লশ-সিমলের কাজ-_ভবিষ্যতের 
আশা আছে, তবে নগদ পাঁচাট হাজার জমা 'দতে হবে। 

অতএব এই' বিয়েটাকেই তাক করে আছে মানু ওই টাকার সুরাহার 
ব্যাপারে। তা সে সুরাহার মুখও একট; দেখা যাচ্ছে। বর্তমান আঁফসের 
বড়কর্তার নাক তাকে জামাই করে ফেলবার দারুণ ইচ্ছে এবং সেই ইচ্ছের খাতে 
ওই টাকাটি দিতে পারেন। অবশ্য বিয়ের আনরাঙ্গক দান-সামগ্রী, বরাতরগ, 


সুবর্ণলতা ৩৬৭ 
মেয়ের গহনা ইত্যাদিতে কিছ? ঘাটাতি হতে পারে, কিন্তু কি লাভ কতগুলো 
জঞ্জালের স্তৃপে? 
জঞ্জালের স্তূপ! 
সুবর্ণলতার কথাটাই তো বলেছে তার ছেলে, তবে আর অমন সাপে- 
খাওয়ার মত স্তব্ধ হবার দক আছে সবর্ণলতার ? 
ছুটি নিয়ে এল মানু বিয়ে করতে। বড়কর্তার স্পন্র পারবার সবই 
কলকাতায়। সাঁত্যই তাঁরা জঞ্জালটা বোশ দিলেন না। তবে ঘটা-পটার শুট 
হলো না। এ পক্ষেও হলো না। বড়লোকের বাঁড় বিয়ে হচ্ছে বলে মানরক্ষার 
ব্যাপারে তৎপর হলো মানুর বাপ-ভাই। 
সানাই বাজলো তন দন ধরে, আলো জবললো অনেক, আঁসাঁটালন 
গ্যাসের লাইন চললো বরের সঙ্গে সঙ্গে, এঁদকে ছাদ জুড়ে হোগলা ছাওয়া 
হলো, এ'টো গেলাস কলাপাতায় ফুটপাথ ভার্ত হয়ে গেল, কাকেরা আর 
কুকুরেরা সমারোহের ভোজ খেয়ে নিশ্চয় শতমুখে আশীর্বাদ করলো । 
চাঁপা-চম্নন তো কাছের মেয়ে এলোই, দূরের মেয়ে পারুলও এলো। 
আর মযয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হতেই চমকে উঠলো সে, “এ কাঁ চেহারা 
হয়েছে মা তোমার 2 ঠা 
তারপর গল্পপ্রসঙ্গে বললো, 'বেশ করছো ওকে লেখাপড়ায় এগোচ্ছো। 
বিদ্যোটা করে ফেলতে পারলে তবে তো এ প্রশ্ন তোলা যাবে- মেয়েমানুষই বা 
চাকার করবে না কেন 2 মেয়েমানুষেরই বা চিরকুমারী থাকতে ইচ্ছে করলে সে 
ইচ্ছে পূরণ হবে না কেন? বলা যাবে- মেয়েদেরই বিয়ে না হলে জাত যায়, 
'্গুরূষের যায় না, এ শাস্মটা গড়লো কে? 
তারপর বকুলের সঙ্গে একান্তে দেখা হনে হেসে বললে, প্রেমের ব্যাপারে 
কতদূর এগোলি 2? 
বকুল বললো, “আঃ সেজদি! 
“আঃ কেন বাবু! তবু একজনেরও যাঁদ জীবনে কোন নতুন ঘটনা ঘটে, 
দেখে বাঁচ। 
কব কাঁবতা লিখাছস ব্যাক আজকাল বকুল অনেক দিন পরে 
পেয়ে মনের দরজা খুলে যায় যেন তার। কতাঁদন একটু সরস কথার 
মুখ দেখে দন। তাই হেসে হেসে বলে, প্রেমের কাঁবতা? তাই এত ইয়ে 
পারুল একটু চুপ করে থাকে, তারপরে বলে, “নাঃ, কাঁবতা আর লাখ 
না।' 
শলাখিস না? মার্তমান কাব্যতেই একেবারে নিমগ্ন হয়ে আছিস ?” 
'তাই আছি।' 
পারুলের মুখে কৃফপক্ষের জ্যোৎস্নার মত একটা ম্লান হাঁসির আভা । 
'এই শোন- সেজদি, বেশি চালাকি করিস না, ইতিমধ্যে কটা খাতা ভরালি 
দেখবো। এনেছিস তো ?? 
পারুল উীড়য়ে দেয় সে কথা। চুল কল পৃ 
০০০০ ভয়ানক বস্তু রে! ও লোকবিশেষকে জলাবছুটি দেয়। 
প্রেম ব্যতত প্রেমের কবিতা এ তার বিশ্বাসের বাইরে । 
বুশ বকুল আস্তে বলে, তার মানে উচ্চশিক্ষদ জিনিসটা শুধু একটা 
মত! গায়ের ওপর চাঁড়য়ে বাহার দেবার!' 


৩৬৮ সবর্ণজতা 


' পারুল একটা নিঃ*বাস ফেলে বলে, “ক জানি, সর্বপই তাই, না কোথাও 
কোথাও সেটা আঁস্থমজ্জায় গিয়ে মিশে চিত্তকে উচ্চে তোলে! 

'এই' সাত্য, সেজ জামাইবাব্‌ প্রেমের কবিতা দেখলে 'চটে 2 

'চটে! উহ না তো”__ পারুল হেসেই বলে, “চটে না! শুধু বলে গপ্ত 
প্রেম না থাকলে এত গভনীর প্রেমের কবিতা আসতেই' পারে না। পাতায় 
পাতায় এই যে “তুমি” আর “তোমার” জন্যে হাহাকার, তার লক্ষ্যস্থল যে হত- 
ভাগা আমি নয়, সে তো বুঝতেই পারা যাচ্ছে। তা এই প্রেম যখন আইবুড়ো 
বেলা থেকেই আছে, তখন আর এ হতভাগার গলায় মালা দেওয়া কেন ?, 

চমৎকার! কাঁবরা সব প্রেমে পড়ে পড়ে তবে 

“থাক্‌ বকুল, ও কথা রাখ । তোর কথা বল, এতাঁদন এখানে কি হলো- 
টলো বল।' 

“সে তো মহাভারত! 

পারুল হাসে। পারুল তার ভেতরের সমস্ত বক্ষোভকে নিজের মধ্যে 
সংঘত রেখে স্থির থাকবে, এই বুঝ পারুলের পণ! অভিমানের কাছে সব 
'পরম'কে বাল দেবে এই বুঝি ওর জাবন-দর্শন! 

তাই পারুল সব 'কিছ-কে চাপা দিয়ে বলে, তবে তো হাতে সার 
হ্তৃকি নিয়ে বসতে হয় রে। মহাভারতের কথা অমৃত সমান. কাশীরাম দাস 
ভনে শুনে পুণ্যবান।' 


তা যে যেভাবেই হোক, এ বিরেটার উপলক্ষে 'আমোদ-আহনাদটা করলো 
খুব. নবাববাহিত মানু একদিন নিজের পয়সা খরচ করে সবাইকে নতুন একটা 
জিনিস দেখালো, বাংলা বায়োস্কোপ ! 

চন্নন একাঁদন নতুন বৌয়ের ছুতোয় গুষ্টিবর্গ সবাইকে নেমন্তন্ন করলো। 
শুধু সব কিছু আহমাদ থেকে বাঁঞ্ছত থাকলো সুবর্ণ। সুবর্ণকে আবার 
ঘ,যঘুষে জরে ধরেছে। 

আর বকুল কোনো আমোদেতে যোগ দেয় না তার স্বভাবগত কুনোমতে। 

তবু সুবর্ণর যেন মনে হয়, অসুস্থ মা একা বাঁড়তে পড়ে থাকবে এটা 
অনুমোদন করছে না বলেই' বকুলের এতটা কুনোমি। নইলে সেজাঁদ পারুলের 
সঙ্গে তো আছে হদ্যতা। 

বায়োস্কোপ দেখতে, নেমন্তন্ন খেতে দুদিনই মায় প্রবোধ সবাই বোরয়ে 
যায়। সবর্ণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকে, যেন 
দেওয়ালে কত 'কি লেখা আছে, পড়ছে সেই সব। 

সুবর্ণর ছোট ছেলে সুবল কোথায় থাকে বোঝা যায় না, শুধু হঠাং এক 
এক বার এসে ঘরের মাঝখানে স্ট্যাচুর মত দাঁড়য়ে পড়ে আস্তে বলে, 'ওষুধ- 
টষুধ কিছু খাবার ছিল নাক? নয়তো বলে, 'বলছিলে নাক কিছ? 
অথবা বলে, খাবার রেখে গেছেন ও*রা ?...জল' আছে 2 

“তোমার খাবার-_এত স্পম্ট করে বলে না। শুধু “খাবার । 

তবু মায়ের জন্যে যে উৎকাঁণ্ঠত সে, এটা বোঝা যায়। 

কিল্তু সুবর্ণর এই ছোট ছেলে যাঁদ এসে বিছানার ধারে বসে.পড়ে বলতো, 
“মা, তোমার কি বেশী জবর এল নাকি 2...কিংবা নীরবে কপালে হাতটা রেখে 
অন্ভব করতে চেষ্টা করতো উত্তাপের মান্রাটা কতখানি? 


সুবর্পণলতা 


হয়তো সুবর্ণ বেচে যেত। 

তাসে করেনা। 

শুধু মা'র ধারে-কাছে কোথায় যেন তটস্থ হয়ে দাঁড়য়ে থাকে, একটু 
কাশির শব্দ পেলেই দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। হয়তে ওর ইচ্ছে হয়, মা'র 
বিছানার ধারে বসে মা'র গায়ে হাত রাখে, অনভ্যাসের বশে পারে না। তাই 
শুধু তার চোখে-মুখে একটা বিপন্ন উৎকণ্ঠার ভাব ফুটে ওঠে। 

দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকলেও সুবর্ণ অনুভব করতে পারে 
সেই মুখচ্ছাব। তবু সুবর্ণও তো বলে না, “আয় না সৃবল, আমার কাছে এসে 
একটু বোস না।' 

বলে না নয়, বলতে পারে না। 

সুবর্ণর সমস্ত অলন্তরাত্থ্ বলবার জন্য আকুল হয়ে ওঠে । তবু বোবা হয়ে 
থাকে বাকৃযল্ল। 

যেন ক্ষুধিত তৃষার্ত স্ববর্ণর হাতেই মজুত রয়েছে তার ক্ষুধার খাদ্য, 
তৃফার জল, 'কন্তু রয়েছে একটা সীল করা বাক্সে, আর সেই সীল ভেঙে ক্ষুধা- 
তৃষা মেটাবার ক্ষমতা সুবর্ণর নেই। 


৩৬৩৬ 


॥ ইঠ ॥ 


মেয়েরা একে একে বিদায় 'নিল। টী়ী 
পারুলের যাত্রাকালে বকুল আস্তে বলে, 'ভুল না সেজদি! চোরের 
ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাব তুই? | 
পারুল ঈষৎ কঠিন হাঁসি হেসে বলে, 'চোরের সঙ্গো 
কাড়াকাঁড় করে থালার দখলটা নেবার প্রবাণ্তও নেই? 
“তা বলে তুই কাঁবতা লেখা ছেড়ে 'ীব? অত ভাল 





পঁকল্তু সেজাদ, অমলবাবু তো-, 

“আরে ক মুশকিল, তোদের অমলবাবুর 'নন্দে করাছ নাকি আম? 
মহদাশয় ব্যান্ত, স্তর একটু আরাম-আয়েসের জন্য ভাঁড়ার ভেঙে খরচা করতে 
পারেন, শুধু প্রেমের কাঁবতা চলবে না।, 


পারুল ওর মাথাটায় একটু আদরের নাড়া 'দয়ে বলে, “ভারী তো লেখা, 
তার জন্যে ভেবে ভেবে মুন্ডুটা তোর গেল দেখাঁছ! “বদ্ধান-মুখ্য”দের নিয়ে 
আবার অনেক জবালা রে! ঈশ্বরই যে মানুষের আঁদি-অনন্তকালের প্রেমাস্পদ, 
এ ওদের মগজে ঢোকে না। আবেগ আর ব্যাকুলতা, এ দেখলেই তার মধ্যে 
২৪ 


৩৭০ সুবর্ণলতা 


অশিটে গন্ধ পায় ওরা । যাক গে মরূক গে, মাও তো জীবনভোর কত কি 
লিখলেন, তর পাঁরণাম তো নিজেই বললি! 

যাঁদও মা'র ওই লেখা সম্পর্কে খুব একটা উচ্চ ধারণা ছিজ না পারুলের, 
বরং মা'র তারতা, মা'র আবেগ: মা'র সব বিষয়ে তাল ঠুকে প্রাতিবাদ আর 
বন্রোহ করা, এসবকে পারুল খুব অবজ্ঞার চোখেই দেখতো, জানতো মা'র 
লেখাও ওই পর্যায়ের, কাজেই মূল্যবোধ কিছ ছিল না তার সম্বন্ধে, তব এখন 
একট উল্লেখ করলো। 

ব্যর্থতার তুলনা করতে করলো উল্লেখ । 

বকুল চুপ করে থাকলো । 

বকুলের হঠাৎ সেই এক লহমার জনা দেখা আগুনের আভায় স্পন্ট হয়ে 
ওঠা মুখটা মনে পড়লো। 

সে মুখ পরাঁজত সৌনকের না অপরাজেয় কাঠিনোর, আজ পর্যন্ত ঠিক 
করতে পারে নি বকুল। 


তা হয়তো পরাজিতেরই। 

হয়তো সুবর্ণ ওই দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেওয়ালের লেখা পড়ে না, 
দেখে সেখানে । অদৃশ্য কাঁলতে লিখে রাখে বণ্না-জরজর পশীড়ত আত্মাদের 
ইতহাস। না. শুধু তার নিজের কথা নয়, লক্ষ লক্ষ আত্মার কথা । পরবর্তাঁ 
কাল পড়বে ওই লেখা। 

কে জানে তখন আবার তার প্রাতক্রিয়ায় জল্ম নেবে কনা আর এক নতুন 
জাত- উদ্ধত, অবিনয়ী, অসাঁহফ:, অসন্তুষ্ট, আত্মকোন্দ্রিক। 

দেওয়ালের লেখাও তো শেলেটের লেখার মত একবার লেখা হয়, একবার 
মোছা হয়। 

আজ হয়তো এক হতসর্বস্ব সৈনিক পরাজয়ের কথা লিখে রেখে যাচ্ছে 
আগামী কাল-_ 

কিন্তু সাঁত্যই কি তবে এবার যাচ্ছে স্‌বর্ণলতা.ঃ তা নইলে এত ভেঙে 
পড়েছে কেন? উঠতে যাঁদ পারেও, উঠতে চায় না। 

বছানাতেই রাতাঁদন। 

মেজেয় মাদুরের 'ওপর পাতা বিছানা, ঘরমোছা-ীৰঝ জ্ঞানদা এসে বলে, 
“একটু ষে উঠতে হবে মা- 

আগে আগে উঠাঁছল সুবর্ণ আজকাল বলে, 'আর উঠতে পারি না বাপ, 
পাশ থেকে মুছে নিয়ে যাও ।' 

আর মাঝে মাঝে বলে, “দক্ষিণের ওই বারান্দাটায় একটা চিক্‌ টাঁওয়ে দিলে 
ওইখানেই শৃতাম-_ 

প্রবোধ শুনতে পেয়ে রা করে বলে, “ওই খোলা বারান্দায় শোবে ১ এই 
1নাত্য জর 

'ঘুষঘুষে জরে খোলা হাওয়া ভাল” স্বর্ণ একটু হেসে বলে, “তাছাড়া 
দাঁক্ষণের বারান্দায় মরবার যে বড় সাধ আমার !' 

ওসব অলক্ষুণে কথা বোলো না মেজবৌ--” প্রবোধ গুম হয়ে যায়। 

সুবর্ণ বলে, 'অলুক্ষরণে কি গো? এখন মরলে জয়জয়কার! যাক্‌ গে, 
মরাছি না তো-_মরবোও না। তবে রাঁত্তরে কেসে মার, তোমার ঘ্‌ম হয় না- 


সূবর্ণলতা ৩৭১ 


তা কথাটা মিথ্যে নয়। 

ও দেওয়ালের একেবারে ওপ্রান্তে উপ্চ্‌ খাটে বালর দেওয়া বাঁলশ- 
তাফিয়ায় ঘেরা ষে বিছানা বড় আরামের শষ্যা ছিল, প্রবোষের সেখানে আত্ম 
নিশ্চিন্তে ঘুমোনো যাচ্ছে না। 

ওই কাঁস। 

কাসির শব্দ হলেই কেমন যেন ঘরে টিকতে পারে না প্রবোধ, দরজা খুলে 
বেরিয়ে দালানের চৌকিতে এসে বসে। 

তব; প্রতিবাদ করে প্রবোধ, “বাঃ শুধ্‌ আমার ঘুমটাই বড় হলো? তুমিও 
তো কেসে কেস» কিন্তু প্রতিবাদের সূরটা যেন দুর্বল শোনায়। 

সুবর্ণ দেওয়ালের দিক থেকে মুখ ধরিয়ে নিয়ে বলে, 'তা নিজেকে তো 
নিজের কাছ থেকে সাঁরয়ে নেবার উপায় নেই?, 


আজও আবার সেই কথাই ওঠে। 

কারণ গতরান্ে প্রবোধ প্রায় সারারাতই িতরদালানে কাটিয়েছে। তব্দ 
আজ যেই সুবর্ণ দাক্ষণের বারান্দায় “চিক' ফেলার কথা বলে, প্রবোধ পাড়া 
জানিয়ে চেশচয়ে চেশচয়ে বলে, “এই বকুল, দাদাদের বল মুটে ডেকে আমার 
খাটথানা ওই ছোট ঘরে নিয়ে যাক! ওখানেই শোবো' আম আজ থেকে। 
কাঁসর জন্যে নাকি ঘুমের ব্যাঘাত হয় আমার, তাই একটা রুগণ যাবে খোলা 
বারান্দায় শুতে !' 

ঘরে দাঁড়য়ে নয়, ঘর থেকে বোরিয়ে চেশ্চায়। 

সুবর্ণ যেন সেই চেশ্চানিটার দিকেই একটা রহসাময় বাাহাসির দৃষ্টিতে 
তাকিয়ে থাকে। 

ব্যবস্থাটা করে দিল স্মবল। 

বাবার নয়, মা'র। 

কোথা থেকে যেন খানাঁতনেক চিক আর রিপল এনে বারান্দায় বাঁলয়ে 
দিয়ে মা'র বিছানাটা তুলে নিয়ে গেল সেখানে । নিঃশব্দে, সকলের অগোচরে । 

ও সুবণ সকলের অগোচরে। 

সুবর্ণ কি ভেবেছিল, হাতে মজৃত এই বাক্সটার সীল আম ভাঙবই ? 
তাই বলোঁছল সুবর্ণ, 'সমবল, কখনো তো গকছ্‌ অনুরোধ কারি নি বাবা, একটা 
অনুরোধ রাখা ? দাঁক্ষণের বারান্দায় মরবার বড় শখ হয়েছে। করে 
ব্যবস্থা? 

সুবল উত্তর দেয় নি, বোঝা যায় 'িন করবে কিনা, কিন্তু খানিক পরেই 
দেখা যায় বারান্দায় পর্দা । 


॥ই৭॥ 
কেদার-বদার ফেরত মাসখানেক বারাণসাঁতে কাটয়ে, দশঘণদন পরে কলকাতায় 
__ ফিরলেন জয়াবতী। আর এসেই দুদিন পরে দেখতে 
&1 এলেন সূবর্ণকে। 
দেখলেন নতুন ব্যবস্থা । 
দেখলেন জীর্ণ অবস্থা । 
কাছে বসে পড়ে বললেন, “মানুষের ওপর আঁভমান 
এ সাজে সুবর্ণ, ইন্ট-পাথরের ওপর আভিমান করে নিজেকে 
& শেষ করার বাড়া বোকামি আর কি আছে ? 
সুবর্ণ হেসে বলে, 'জানোই তো চিরকেলে বোকা! কিন্ত আভমানটা 
ইন্ট-পাথরের ওপর এ কথা কে বললো? যাঁদ বাল সৃম্টিকর্তার ওপর?" 
'তা সে লোকটাও তো ইস্ট-পাথর!? 
“তবে নাচার।' 
একো শরশরের ওপর অবহেলা করে-করেই নাক রোগটি 
ওরা দা বলে কান্ত হর তাই ওম বলে, নরণকালে তো একটা কি 


“রি পানিরিলার ত্বরান্বিত করছিস! শুনলাম ওষুধ খাস 
না, পাঁখ্য খাস না, বৌরা সেবা-ন়্ করতে এলে নিস না-এটা তো ঠিক নয় 





সুবর্ণর ব্যাধি-ম্লান চোখ দুটো একবার জলে উঠলো, অরপর ছায়া হয়ে 
গেল। বললো, “ওই তো বলঙ্গাম, চিরকেলে বোকা! 

্লাবতশী বললেন, তা তো জান। সংসারে যে পুরো খাঁটতে কাজ চলে 
না, ন্যায়ে আর অন্যায়ে, সাঁত্যতে আর মিথ্যেতে আপস করে নেওয়া ভিন্ন যে 
সংসার অচল, এ কথা তো কখনো বুঝিয়ে পারি নি তোকে। কিন্তু আম বেচে 
থাকতে নাই বা সরে পড়লি ? একজন তো কোন্কালে ফেলে চলে গেছে, তুই 
গেলে যে একেবারে নির্বাম্থব! 

স্বর্ণর সেই দীর্ঘ কালো চোখ দুটো কোটরে বসে গেছে, তবু বাঁঝ সে 
চোখ আজও কথা বলতে ভূলে যায় নি। সেই চোখের কথার সঙ্গে মুখের 
কথাও মেশায় সুবর্ণ 'যে ফেলে চলে গেছে, সে তোমাকে আজও ভরে রেখেছে 
জয়াদি, তোমার নির্বাম্ধব হবার ভয় নেই।' 

'বুঝলাম, খুব জ্ঞান দাল। তব দুটো মনের কথা বলারও তো সঙ্গা 
দরকার ? আর তুই কি শেষটা হার মেনে চলে যাবি?” 

পণ ছিল হার মানব না। কিন্তু সৃন্টিকর্তার যে সুবর্ণর ওপর বড় 
আক্রোশ আর পারাছ না। সেবা-যক্ধের কথা বলছো জয়াঁদ, ষে যা করতে আসে, 


হয় সুবর্ণ, অন্তরটা দেখতে যাওয়া বিধাতার বিধানের ব্াঁতিরম। 
স্বর্ণ কয়েক সেকেন্ড চপ করে থেকে বলে, 'থাক জয়াদ, ও নিয়ে তর্ক 
করা বৃথা। এ কাঠামোয় নতুন করে আর কিছু হবে না। তার চাইতে তুমি 


স্বেগ'লতা ৩৭৩ 


যা সব দেখে এলে তার কথা বলো । 
ক্ষুব্ধ গলায় বলেন, সে আর বিশদ করে বলতে ইচ্ছে নেই 

সুবর্ণ। তোর কাছে চিরকালের লঙ্জা রয়ে গেল আমার। তীর্থ করোছ না 
রাতাঁদন অপরাধের ভারে মরমে মরে থেকোঁছি__; 

ওমা শোনো কথা_» সুবর্ণ ওকথা চাপা দিতে চেষ্টা করে; কিন্তু 
জয়াবতাঁ কথাটা শেষ করেন, শুধু আমি একা হলে তোকে ফেলে চলে যাওয়ার 
কথা ভাবতেও পারতাম না। কিন্তু “দল” বড় ভয়ানক জিনিস! ও 'জানসের 
মায়া থাকে না, মমতা থাকে না? চক্ষুলজ্জা থাকে না। “যাব না” বললে খেয়ে 
ফেলতো আমায়। আঁমই তো উয্যাগশী।” 

সুবর্ণ বলে, যাবে না কি বল? তীর্থ বলে কথা ! মহাতীর্৫থ! জীবনে 
দুবার সুযোগ আসে না, আমার ভাগ্য আমায়- 

হ্যাঁ, এই একটা জায়গা যেখানে সুবর্ণ সাধারণ মানুষের মত কথা কয়। 
ভাগ্য নিয়ে আক্ষেপ করে। 

ঠাকুরপোর অসুখ যে শন্ত নয় সে আঁম বুঝোঁছলাম।” জয়াবতশ একউু 
চুপ করে থেকে বলেন, তবু যাওয়া আটকাতো না যাঁদ ছেলেরা প্রাতকৃল না 
হতো।' 

সুবর্ণ হঠাং হেসে ওঠে। 

খাপছাড়া ভগ্া-ভাঙ্তা। 

“শোনো কথা? জল্মলগ্নই যার প্রাতিক্‌ল, তার আবার কে অনুকূল হবে £ 
তা এইটাই হয়তো ঠিক কথা। 

জল্মলগ্ন নাক তার রাঁশ-নক্ষত্রের সৈনাসামন্ত নিয়ে আজীবন তাড়া করে 
বেড়ায় মানুষকে, এটা একটা অজ্কশাস্মের কথা। 

কথায় ছেদ পড়লো । 

এক হাতে গেলাস, এক হাতে রেকাবি নিয়ে এসে ঢুকলো ভানূর বোঁ। 
সহাস্যে বললো, 'জেঠিমা তঁর্থ থেকে ফিরেছেন, আজ কিন্তু আপনাকে জল 
না খাইয়ে ছাড়বো না। দেখুন আমি তসর কাপড় পরে, পাথরের বাসনে করে 
নিয়ে এসৌছ।' 

জয়াবতা 1স্মতমুখে বলেন, 'না জিজ্ঞেস করে এসব করতে গেলে কেন গো 
পাগাল মেয়ে! আজ যে আমার “সম্কটা”, ছু খাব না তো! 

একছু খাবেন না ? 

“না গো মা-জননী, কিছু না। দেখো দিকি, শুধু শুধু কষ্ট পেলে। 
দুঃখের আর অবাঁধ থাকে না বড়বৌমার, ম্লানমৃখে চলে যায়। 
এডি রিাজিজ কা রা তো বেশ আঁভনয় করতে পারো 

1? 

জয়াবতী হেসে বলেন, উপায় কিঃ জগংটা তো িয়েটারই। তুমি 
আঁভনয় করতে পারলে না বলেই হেরে মরলে! 

সুবর্ণলতা আস্তে গুর হাতটা মুঠোয় চেপে ঈষৎ চপ 'দয়ে বলে, 'হেরেছি, 
কিন্তু হার মানি নি।' 

জয়াবতশ উঠাঁছলেন, প্রবোধ এসে দাঁড়াল, হৈ-চৈ করে বলে উঠল, 
“এই যে নতুন বৌঠান, তীর্থটীর৫থ হলো? ভালো ভালো। তা দেখছেন তো 
আপনার সইয়ের অবস্থা ঃ অথচ এক পিয়া ওষুধ খাবে না, সেবা-বত্ত নেবে 


০ 


না। আবার এই খোলা জায়গায় এসে শোওয়া। নিজের দোষেই প্রাণটা 
খোওয়াবে মানুষটা ।' 

সুবর্ণলতা হঠাৎ দারুণ কাসতে থাকে। 

থামতেই চায় না। 

প্রবোধ ভয়ার্ত মুখে চেপচয়ে ওঠে, “এই বকুল, কোথায় থাঁকস সব? রোগা 
মানুষ, একট জলও- আচ্ছা আম দেখাছ-_' বলে বোধ করি নিজেই 'জলের 
চেষ্টায় বোরিয়ে যায়। 


॥ ২৬ ॥ 


গঙ্গার জল কত বাড়লো, পাঁথবীর গাঁত কত বদজালো, তবু সমাজ- 
সামাজকতা'র লৌহনিগড় থেকে ছুট 'নেয় না বুড়ো- 
বূড়ীরা। শ্যামাসূন্দরীকে এখন কেউ “সামাজিকতা, 
করলো ন। বলে নিন্দে করবে না, তবু তান কানুর খোকা 
[| হয়েছে শুনে রুপোর ঝিনুকবাটি 'নয়ে মুখ দেখতে 
এলেন। অর্থাৎ চিরকাল যা করে এসেছেন তা করবেন। 
গ্লু সবাই বকতে লাগলো । 
উাঁন বললেন, 'তা হোক তা হোক। প্রবোধের এই 
প্রথম পোৌত্যর। বড় নাতবো তে। প্রথম “মেয়ে” দেখিয়েছে । 





অথচ সুবর্ণলতা বেহ*ুশ হয়ে বসোছল। সোনার হার দিয়ে মুখ দেখার 

কথা যার। নিজের ঘুটি দেখে না সুবর্ণ কেবল পরের বুটই টের পায়। 
সে ফাক; শ্যামাসূল্দরীর ছানি পড়ে আসা চোখেও অবস্থাটা ধরা পড়লো। 

্বোধকে ডেকে বললেন কথাটা “বোমার কি হাল প্রবোধ 2 ডান্তার-বাদ্য কিছু 


স্প্পািন্রিননী লিল মানে পাড়ার একজন খুব ভালো 
ছো?মওপ্যাথ_তাঁর কাছ থেকেই ওষুধ এনে দিয়োছলাম। কিন্তু খেলেই না 
ওষুধ। পড়ে থাকলো। চিরকালের জোদ তো। ওই মনের গ্‌ণেই কখনো 
শান্তি পেল না। তুমি তো দেখেছো মামী, চিরটাকাল সাধ্যের আঁতারন্ত 
করলাম। তবু কখনো মন উঠলো না। 

ব্যস্ত গলায় বলেন, “আহা “মন মন” করেই বা দোষ দিচ্ছ কেন 

বাবা? মানুষের দেহেই কি ব্যাঁধ হয় না?' 

শ্যামাসুন্দরী চলে যেতেই প্রবোধ পাড়ার ব্রজেন কবরেজকে ডেকে 
আনলো। 

জযালিতাকে উদ্দেশ করে য়াজ গলার, বললে, «এই যে কবরেজ মশাই 
এসেছেন। নাও এখন বলো, তোমার 

কর পু টেনে দিয়োছল সংবর্ণ। 


স্দবর্ণলতা ৩৭ 


কাঁবরাজ মশাই 'কই দোখ তো মা হাতটা--+ বলে নিজের হস্ত প্রসারণ করতেই 

দৃঢ়কণ্ঠে বলে উঠলো, “আপনাকে অকারণ কষ্ট দেওয়া হলো কবিরাজ মশাই, 

কোথাও কোনো অসুখ আমার নেই । 

ৰ কবরেজ পাড়ার লোক, সমীহ কম, প্রবোধ তারাক্ষ গলায় বলে ওঠে, 

অসুখ নেই? অথচ সমানে শুনছি ঘৃষঘুষে জবর, কেসে কেসে আস্থর-_ 
সুবর্ণলতা মাথা নেড়ে বলে, “ও কিছু না।' 

' “কছ. না” বলে জো জেদাট দেখাচ্ছো, এঁদকে আত্মীয়স্বজন এসে আমায় 
গালমন্দ করে যায়। কবরেজ মশাই ষখন এসেইছেন, একবার না হয় দেখেই 
ধান নাঃ খামোকা দন দন শ্বাকয়েই বা যাচ্ছো কেন, সেটাও তো দেখা 
দরকার ? 

সুবর্ণলতা আরো দড় গলায় বলে, 'না, দরকার নেই। আপনাকে বা 
কষ্ট দেওয়া হলো কবরেজ মশাই। আপাঁন আসুন শিয়ে। 

অর্থাৎ 'আপান বিদায় হন'। 

এমাঁন করে একদিন কুলপুরোহতকে তাঁড়য়োছিল। 

বজেন কবরেজ ফর্সা মানুষ, আরন্ত মুখটা আরো আরন্ত করে বলেন, 
'বাঁড়তে পরামর্শ করে তবে ডান্তার-বাঁদ্যকে ' “কল” দিতে হয় প্রবোধবাব্‌ ! 

প্রবোধবাব ঘাড় হেট করে সঙ্গো সঙ্গে নেমে যান। 


'কবরেজ এসৌছলেন, দেখানো হয় নি কেন? বহ্কাল আগে যে-বাড় 
ছেড়ে এসেছে ভান”, আজও আঁবকল সে বাঁড়র একজনের মত মখভাঁঞগামায় 
বলে উঠলো, “এটার মানে 2 

স্বর্ণলতা সে মুখের দিক থেকে মুখ ফারয়ে বললো, “দরকার নেই 
বলে) 

'দরকার আছে ক নেই, সেটা চাকৎসকের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দলেই 
ভালো হতো না? 

সুবর্ণ উঠে বসলো, স্থির গলায় বললো, 'সেই “ভালো”টা অবশ্যই 
তোমাদের ১ কিন্ত বলতে পারো, আজশবন কেবলমান্র তোমাদের 
ঘটবে কেন পৃথিবীতে 2 

কবরেজের মত মূখ করে ভানুও উঠে গেলো। বলে গেলো- সংসারে 
অশান্তির আগুন জবালাটাই এখন প্রধান কাজ হয়েছে তোমার!. আর এখনই 
বাকেন? চিরকালই! 

খাতার নাচে চিরাদিনের মত চেরা টেনে ?দয়ে চলে গেল বলেই মনে হলো। 

আশ্চর্য, একটা মানৃষ শুধু মনের দোষেই খাক্‌ করলো ] 

রোগ হয় দন" বলে কবরেজ তাড়ালে। অথচ িরশয্যা পেতে শুয়ে আছে। 
মানেটা কি? 

তা মানেটা আবচ্কার করে বোরা। 

চুপিচুপ বলাবাল করে সেটা তারা । 

'দেখতেই তো পাওয়া যাচ্ছে রোগটা ভালো নয়, কাঁস রোগ ছোঁয়াচে রোগ, 
তবু ডান্তার কবরেজ দেখালেই তো হাতেনাতে ধরা পড়া, মেয়ের বিয়ে দিতে 
বেগ পেতে হবে, তাই-” 

তব মানে একটা আঁবচ্কার করেছে তারা, ষোঁটর মধে) সবর্ণসতার 


৭ 


সংবগজতা 


সং্ব্যক্ঘ আর সংসারের প্রাত শুভেচ্ছা দেখতে পেয়েছে তারা।, পরের মেয়ে 
হয়েও পেয়েছে। বরং কান্দুর বৌ এটাও বলেছে, 'আঁতরিন্ত আভিমানী মান্ষ! 
অথচ বাবা একেবারে অন্য ধরনের--+ 

িল্ছু এসব তো তারা স্বর্ণলতার সামনে বলে না যে সংবর্ণলতা টের পাবে, 
তাকে কেবলমার 'মজ্গবুদ্ধি' ছাড়াও অন্য কিছু ভাবে কেউ কেউ। 


০৩ (৮১৯৭০ তব্‌ চম্বন 
আজকাজ মাঝে মাঝেই আসে। *বশুরবাঁড়তে মনোমালিন্য চলছে, তাই ছুতো 
করে পাজিয়ে আসে। 

এসে মা'র কাছে বসে খানিকটা কুশল প্র“ন আর খানিকটা হা-হুতাশ করে 
উঠে যায়। থিয়েটার দেখার ঝোঁকটা প্রবল তার, সেই ব্যবস্থা করতেই ভাজেদের 
কাছে আসা। ওখান থেকে যেতে গেলেই তো একপাল জা ননদের 'টিকিটের 
দাম গুনতে হবে, ভেতরে তই মনোমালিন্য থাক, বাইরে সৌগ্ঠব না রাখলে 
চলে না। 

এখানে ও বালাই নেই, বৌ দুটোকে নাচালেই হয়ে যায় ব্যবস্থা । গিশ- 
যাক একটা ননদ সঙ্গে যাচ্ছে দেখলে আপাত্ত করে না বরেরা। ছাব্বিশ-সাতাশ 
বছর বয়েস তো হলো চল্বনের, (ঝয়ের সঙ্গে চলে যায়, টিকিট কেনার ঝামেলা 
ঝিকে দিয়েই মেটে। 

থিয়েটার দেখে রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে তবে বিদায়গ্রহণ। কদাচ চাঁপাও 
এসে জোটে। তবে তার ফুরসং কম। *বশৃরবাঁড়িতে ভারণ শাসন। 

চল্রন এসৌছল-_ 

যাবার সময় আবার মা'র কাছে একট; বসে গায়ে পায়ে হাত বুলিয়ে বিদায় 
নেয় চ্ষন। একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “আবার সময় পেলেই আসবো মা! 

সববর্ণলতা মেয়ের কথার উত্তর দেয় না। কাছে দাঁড়য়ে থাকা কানূর দিকে 
তাকিয়ে বলে, "ওদের সব বলে দিও কান, আমার মরার আগে আর কারুর 
আসার দরুকার নেই। মরলে পরে যেন আসে।' 

বললো এই কথা! 

মরতে বসেও স্বভাব যায় নি! 

পেটের মেয়েকে এই অপমান করলো । মানুষকে অপমান করে' করে ওটাই 
যেন পেশা হয়ে গেছে ওর। 

কিন্তু মেয়ে বলে তো এই অপমানটা নীরবে হজম করতে পারে না চল্বন! 
জবতে পারে না রোগা মানুষের কথা ধর্তব্য নয় ! 

সেও “আচ্ছা মনে থাকবে; বলে গটগটিয়ে গিয়ে গাঁড়তে ওঠে। কান 
পিছু পিছু যায় পেশছতে। 

পরদিনই খবরটা চাঁপার কাছে পেশছে যায়। এবং বহুবার বলা কথাটাই 
আবার বলে দুজনে, 'আমরা সতীন-বি! আসল মেয়ে পারুলবালা আর 
বকুলবালা । 


তদবাঁধ মায়ের আদেশ পালন করেই চলছিলো তারা, আসাঁছল না, কিন্তু 
৪০৮৮৯০৬৬৭১০: 
কানূর ছেলের অন্বপ্রাশন ঠোকয়ে ঠোঁকয়ে আট মাসে তুলেও বখন বিছানা 


সুবর্ণলতা ৩৭৭ 
থেকে তোলা গেল না সুবর্ণকে, তখন প্রবোধ নিজেই হাল ধরে ঘটার আয়োজন 
করলো। নইলে লোকসমাজে যে মুখ থাকে না। 

সেই সময় অনেক সাধ্য-সাধনা করে মেয়েদের নিয়ে এল প্রবোধ। তা তারা 
আমোদ-আহমাদে যোগ দিলেও মা'র কাছে ভার-ভার হয়েই থাকলো । শুধু যা 
একট প্রণাম, তাও তো শোওয়া মানুষকে প্রণাম নিষেধ। 

বকুল বেচারা একবার 'দাঁদদের দিকে, আর একবার মা'র ঈদকে ছুটোছাাঁট 
করতে লাগলো। পাছে কোনো এক পক্ষ চিরাঁদনের মত বে'কে বসে। 

কিন্তু বকুলের পরাঁক্ষা 2 

বকুলের জলপানি পাওয়া ঃ তার কি হলো ? 

কিন্তু সে দুঃখের কথা থাক্‌ । 

পড়া আর এগোলো কই তার ঃ সুবর্ণই কারণ। 

সবর্ণলতা পাথবণীর দক থেকে ?পঠ ফিরিয়েছে, তবু যা বকুলকেই এখনো 
খুব ঠেলে সরায় নি। বকুল যাঁদ দুধটা-সাবৃটা এনে দাঁড়ায়, হাত বাঁড়য়ে নেয়। 
আর কেউ আনলেই তো বলে, 'রেখে যাও, খাবো ।, 

তবু মাঝে মাঝে সুবর্ণ খোঁজ নেয়, “তোর লেখাপড়ার কি হলো ? মাস্টারকে 
বিদেয় করে দিয়েছে বুঝি ?, 

বকুল মনে মনে বলে, "ভগবান মিথ্যে কথায় দোষ নিও না--” মুখে বলে, 
“অসৃখ করেছে মাস্টার মশাইয়ের ।' 

সুবর্ণ আর কথা বলে না, চোখটা বোজে। 

বূঝতে পারা যাচ্ছে এবার শেষ হয়ে আসছে। যে মানুষ 'চিরটাদন শুধু 
কথাই বলেছে, 'আর বলবো না' প্রতিজ্ঞা করেও না বলে পারে নি-_শুধু সংসারটি 
নিয়েই নয়, দেশ নিয়ে, দশ নিয়ে, সমাজ নিয়ে, সভ্যতা নিয়ে_রাজনশীতি ধর্ম- 
নীতি পুরাণ-উপপুরাণ সব কিছু নিয়ে কথা বলেছে, আর অপর কেউ তার 
ধিপরীত কথা বললে তাল ঠুকে তর্ক করেছে, সে মানুষের যখন কথায় বিতৃফা 
এসেছে, তখন আর আশা করার ছু নেই। 

নেশাখোরের 'কাল সাল্বকট' ধরা যায় তখন, যখন তার নেশার বস্তুটায় 
অনাসান্ত আসে। 

সুবর্ণলতার কথা নেই, এই অস্বাঁস্তকর অবস্থাটা নিয়ে ছটফাঁটিয়ে বেড়ায় 
তার চিরাঁদনের সব দর্বাকোর শ্রোতা, সব আভযোগের আসামী । কালশঘাটে 
গো মানত করে আসে সে, উনি কাবার খাঁ়নেরা জা চে 


সার ভাঁড়টা বিছানাটার অদূরে নামিরে রেখে তাঙ্তা-তান্া কাঁদো-কাঁদো 
গলায় বলে, 'এটকু মাথায় বলয়ে খেয়ে ফেলো 'দাঁক, কম্টের উপশম হবে।' 

“উপশম হবে 2 সুবর্ণ বলে, রাখো, রেখে দাও।, 

বেশীক্ষণ ওই রুগ্ধর সামনে বসে থাকতে পারে না প্রবোধ, আসে যায়। 

আবার ঘুরে এসে বলে, 'অভান্তি কোরো না মেজবৌ, একেবারে সদ্য খাঁড়া 
ধোওয়া।' 


২৯ ॥ 


সুবর্ণ একদিন উঠে বসে হাত বাড়িয়ে নিল জলটা, অনেকাঁদন পরে একট; হেসে 
বললো, 'তুঁমি আমায় খুব ভালোবাসো, তাই নাঃ, 

তা প্রবোধ চমকে গেল বৌক। 

ভালবাসার কথা তুলছে স_বর্ণ! 

চমকে গিয়ে এঁদক-ওাঁদক তাকালো, ধারে-কাছে 
কেউ আছে কিনা দেখলো। তারপর কাছে সরে এসে 
কাঁদো কাঁদো ব্যাকুল গলায় উত্তর দিল, 'এতাঁদন পরে এই 
প্রশ্ন তুমি করছো আমায়? মুখ ফুটে বলতে হবে সে 
কথা ? 

নাঃ, সাত্যই সুবর্ণ বদলে গেছে। 

হয়তো সুবর্ণ পৃথিবীকে ক্ষমা করে যাবে সংকঞ্প করেছে, তাই বলে 
উঠলো ন।--না, মুখ ফুটে বলতে হবে না বটে, সারাজীবন কাঁটা ফুটিয়ে 
ফুটিয়েই তো সেটা জানান দিয়ে এসেছ!” 

সুবর্ণ শুধু আর একটু হাসঙ্গো। তারপর বললো, “না, বলতে হবে ন৷ 
আ'বশ্যি। তবে ভালোই খন বাসো, আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূরণ করো না? 

শেষ ইচ্ছে? প্রবোধ গেঞ্জিটা তুলে চোখ মোছে, তারপর বলে ওঠে, 
'একশোটা ইচ্ছের কথা বল না তুম মেজবৌ-' 

“একশোটা মনে আসছে না। আপাততঃ একটাই ললাছ-মেজ ঠাকুরাঝকে 
একবার দেখতে ইচ্ছে করে।' 

মেজ ঠাকুরাঁঝ! 

তার মানে সবালা ? 

প্ররোধ যেন শূন্য থেকে আছাড় খায়। 

মেয়ে নয়, জামাই নয়, নাতি-নাতনী নয়, ভাই-ভাইপো নয়, দেখতে ইচ্ছে 
হল কিনা মেজ ঠাকুরাঁঝকে ? 

তাচ্জব! 

তা তাজ্জব করাই পেশা ওর বটে। 

বেশ, সেটাই হবে। 

তড়বড় করে বলে উঠল প্রবোধ, “এমন একটা আজগুবী ইচ্ছেই যখন 
হয়েছে তোমার, তা সেই ব্যবস্থাই করছি ।' 


প্রবোধের কথাটা অযৌ্তক নয়, ষে শুনল্লো সুবর্ণর শেষ ইচ্ছে, অবাকই 
হলো। আজগবা ছাড়া আর কি? এত দেশ থাকতে-চারটে ননদের মধ্যে- 
কার একটা ননদকে দেখবো, এই হলো একটা মানুষের জীবনের শেষ ইচ্ছে 2 
এই আবদারটুকু করেছে মুখ ফুটে? 

তাও যাঁদ সমবয়সশ ননদ হতো! 

তাও যাঁদ জবলজহলাট অবস্থার হতো! 

হাস্যকর ! 

ণকল্তু অভাগার ভাগ্যে বৃঝি তুচ্ছও দুর্জভ! 





এব 111৩7 ৩৭৯ 
সেখানেও তো মস্ত বাধা! 

সুবালা যে তার শেষাঁদকের মেয়েগুলোকে ঝপাঝপ যা-তা বিয়ে দিচ্ছে! 
একটাকে চক্রবতাঁর ঘরে, একটাকে ঘোষালের ঘরে, একটাকে নাকি বারেন্দ্ুর 
ঘরে, আবার শোনা যাচ্ছে ছোটটাকেও নাক ওইরকম কি একটা ঘরে দেবে বলে 
তোড়জোড় করছে। 

শহুরে নয়, ফ্যাশান নয়, পয়সাওলা নয় । তবু এত সাহস! দেশে গ্রামে 
বসে এত স্বেচ্ছাচার ! 

মর্ূক গে যা খুশি করুক গে। ছেলেমেয়ের বিয়েতে "পোস্টে একটা পত্তর 
দেওয়া ছাড়া যোগাযোগ তো ছিলই না, কে ওই রাবণের গাঁন্টকে এসো 
বোসো' বলে ডাকবে 2 আসতে বেতে ভাড়া গনতেই তো ফতুর হতে হবে। 
সবাই ভেবে রেখোছস. অতএব এই পত্তরখানাও এবার বন্ধ করতে হবে। 

কিন্তু এখন আবার এই সমস্যা ! 

অথচ ঝপ করে কথা 'দিয়ে ফেলা হয়েছে মৃত্যুপথযান্ণীর কাছে। তার 
উপায়? এ সমস্যার সমাধান করলো কান । বললো, এ তো আর আর্পান 
কোনো সামাজিক কাজে আনছেন না বাবা এতে আর কি হচ্ছে? মা যখন 
মুখ ফুটে বলেছেন-” 

ছেলের সমর্থন পেয়ে ভরসা পেলো কানুূর বাবা। 

অতএব সুবালা এল। 

আনতে গেল ও-বাঁড়র বৃদো। 

যে নাক আশপাশের সকলেরই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো! 'কারে' পড়ে 
প্রবোধ নিজে খরচাপত্তর ধরে দয়ে অনুরোধ করে এল তাকে। 

'মেজ জেঠির শেষ অবস্থা! তোমায় দেখতে চেয়েছে ” 

এ খবর শুনে পরন্তি সেই ষে কান্না শুরু করেছিল সবালা, সে আর থামে 
না। চোখ মুছে মুছে আঁচলটা তার ভিজে শপ্‌শপে হয়ে উঠেছে, চোখ দুটো 
ফুলে লাল। 

আরো দুটো দাঁত পড়ে সার মুখটাই যেন তার আজকাল হাস্যকর 
বিকৃতির একটা প্রতীক! কে'দে আরো কিম্ভূত! 

বাড়ি ঢুকেই প্রবোধের পায়ে একটা প্রণাম ঠুকে উলে উঠে বলে, 'আছে 2" 

প্রবোধও উলে বলে, “আছে এখনও, তবে বেশীদন থাকবে না।' 

'বেশপক্ষণ নয়, বেশী দিন! তবু ভালো। 

জ্ঞানে আছে ?' 

“তা টনটনে।' 

ঠাকুর রক্ষে কোরো কথা-টথা বলছে ? 

'বলছে অল্পস্বজ্প।: 

অতএব একট ঠান্ডা হয় সুবালা, চোখেমুখে জল দিয়ে রুগীর কাছে 
যাবার জন্য প্রস্তৃত হয়। প্রবোধ চড়া গলায় বলে. 'মেয়েগুলোর অঘরে-কুঘরে 
বিয়ে দাচ্ছস শুনলাম 

সুবালা ওর স্বভাবে কান্নায় ফোলা চোখেও হেসে ফেলে। 

“অঘর-কুঘর নয় মেজদা, তবে স্বঘর নয়।' 

“তার মানেই তাই। তা এ মাতিচ্ছল্নের কারণ 2 

“কারণ আর 'কি?' সংবাঙ্গা 'দিব্বি সপ্রীতিভ গলায় বলে, 'অভাবেই' স্বভাব 


৩৮০ সৃবলজত্‌ 
নম্ট! হাতে নেই কানাকাঁড়, ঘরে একগণ্ডা বিয়ের যুগ্যি মেয়ে! নীচ ঘরেরা 
স০৮--প পর 

গলায় দাঁড় তোর! এর চেয়ে মেয়েগুলোকে গলায় পাথর বেধে 
ফেলে দলেই হতো! বি 

সুবালা শিউরে উঠে বলে, 'দুগ্গা দুগ্‌্গা! কি ষে বল মেজদা! আমার 
কুলনাগারটা ওদের প্রাণের থেকে 'বড় হলো ? ভাল ঘরে পড়েছে, খেয়ে .পরে 
সুখে আছে, এই সুখ। তাতে লোকে আমায় “একঘরে” করে করৃক।” 

বোনের সম্পর্কে কোনোকালেও কোনো দাঁয়ত্ববোধ না থাকর্সেও তার এই 
দুঃসাহসী কথায় 1থশচয়ে ওঠে দাদা, 'একঘরে করে করুক? ভারা পুরযার্থ 
হলো! অমূল্যটাও বুঝ এমান গাড়োল হয়ে গেছে আজকাল? 

সুবালা' এ অপমান গায়ে মাখে না। শালা-ভগ্নীপতি সম্পর্ক, বলেই থাকে 
অমন। সুবালা তাই হেসে বলে, “তা যা বলো! মোট কথা নিজের কুলের 
বড়াইটি নিয়ে বসে থাকবো, ওদের মুখ চাইবো না, এতো স্বার্থপর হতে 
পারলাম না মেজদা! স্বঘরের কেউ কি আমার মুখ চাইলো ? আর আমার 
এসব কুটুমরা! একেবারে পায়ের কাদা। যাক্‌গে বাবা ওসব কথা, এখন 
যাকে দেখতে এসোঁছি...বাঁড় তো খাসা করেছ-_মেজবৌয়েরই ভোগে নেই-_”» 
আর একবর উলে ওঠে সুবালা, আর একবার সে জল ঘষে ঘষে মুছে ফেনে 
দোলায় উঠে যায় মেজদার গিপছ; পছ। 


“কে'দেই মলো! 

সুবর্ণ ব্হাঁদন পরে ভারী মাম্ট হাঁসি হাসে। মুখের লাবণ্যের কিছুই 
অবশিষ্ট নেই। তবু কাঠামোটা আছে। সেই কাঠামোখানাই যেন উজ্জবল 
দেখায়। 


্ সুবালা এসেই ওর বিছানার ধার চেপে বসৌছল, সুবর্ণ নিষেধ করে 
1 


সুবর্ণ তার একখানা হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ৌোছল। সুবালার কানা 
দেখে সেই হাতে একটি নিবিড় গভীর চাপ দিয়ে ন্ট হেসে বলে. কে'দেই 
মলো! 

ভাল থাকতে আম মরতে একবারও এলাম না! 

বুজে আসা গলায় আক্ষেপ করে সুবালা। 

অন্যকে আঁভযোগ করে না। বলে না, এত ছেলে-মেয়ের বিয়ে গেলো, 
একবার আনলে না আমায়! ও আঁভযুস্ত করলো নিজেকে, “ভাল থাকতে এক- 
বার এলাম না আঁম!' 

সবর্ণ হাতে ধরা হাতটায় আর একটু চাপ 'দয়ে বলে, “তোমার মতন মনটা 
যাঁদ সবাইয়ের হতো মেজ ঠাকুরাঝ! কাউকে দোষ দেওয়া নেই, কোথাও কোনো 
আঁভিযোগ নেই, সুন্দর! 

তারপর 'জিজ্ঞেস করে ওর ছেলে-মেয়েদের কথা। 

কে কত বড় হলো, কার কার বয়ে হলো? কিন্তু উত্তরের দিকে ক মন 
ছিল সৃবর্ণর ? প্রশ্ন করছিল শুধু উপয্দ্ত প্রশ্নের অভাবে । একথা- 
সেকথার পর হঠাৎ বলে ওঠে, 'আচ্ছা, তোমার সেই বাউন্ডুলে দ্যাওরটির খবর 
শক? সেই যাকে আম বাঁড়তে ঢুকতে 'দিই 'নি, দরজা থেকে দর-দূর করে 


সুবর্ণলতা ৩৮১ 


তাঁড়য়ে 'দিয়োছলাম ?, 

'দুগগা দুগ্গা! তাড়িয়ে আবার কি!...আম্বিকা ঠাকুরপোর কথা বলছো 
তো?" সুবালা ব্যস্ত গলায় বলে, তুমি বলে তাকে কতো ভালোবাসো! সেও 
বলে-_।' থেমে যায় সৃবালা নেহাতই গলাটা বুজে আসায়। 

'জানি! স্বর্ণ একটু থামে, তারপর যেন কৌতুকের গলায় বলে, 'তা সে 
ঘর-সংসারী হয়েছে? না আবার জেলে ঢুকে বসে আছে ? 

“ঘর-সংসারী 2 সুবালা 'বিষম গলায় বলে, 'পোড়া কপাল আমার। সে 
আবার ঘর-সংসারশ হবে? সে তো 'বিবাগণ হয়ে গেছে! 

পৃববাগ্ী! 

হাত-ধরা মুঠোখানা শীথিল হয়ে এীঁলয়ে পড়ে। প্রশ্ন-হারানো বিস্ময়ের 
চোখে তাকিয়ে থাকে সুবর্ণ যেন ওই অদ্ভুত কথাটার 'দিকেই। 

সৃবালা আঁচলের ভিজে কোণটা 'দিয়েই আবার চোখটা মুছে নিয়ে ধরা 
পালায় বলে, 'তা বিবাগী ছাড়া আর ফি! কোথায় কোথায় ঘোরে, ন-মাসে 
ছ-মাসে একথানা চিঠি দেয়। পায়ে হেটে নাক ভারত ঘূরছে। তোমাদের 
ননদাই বলে, আবার হয়তো লাগবে 'ব্রাটশের পেছনে, তাই দর যোগাড় করছে। 
আমার তা বিশ্বাস হয় না জই। গেরুয়াই নেয় নি, নচেৎ ও তো সাঁত্যই' একটা 
বৌরগী উদাসীন! এ জগৎ ছাড়া, অন্য এক জগতের মানুষ! নিজের জন্য 
কানাকড়ার চিন্তা নেই, অথচ কোথাও কিছু অন্যায় আবচার দেখলে তো 
আগ্ন। সেই যেবার এখানে এসেছিলো হঠাৎ একটু সামলে নেয় সুবালা। 
অবোধ হলেও যেন বুঝতে পারে, সৌদনের কথা আর না তোলাই ভালো । তাই 
বলে, 'সেই তার কাঁদন পরেই বাঁড়-ঘর বেচে দিয়ে চলে গেল। বলে গেল, 
“এই ভারতবর্ষে বাংলা দেশের মতন অভাগা দেশ আরও কটা আছে দেখবো 1”... 
মনে মনে তাই ভাব মেজবৌ? মেয়েমানুষ হয়ে জন্মোছস, গরাদে ভরা সাঁছস, 
ফী আর করাব? তুই যাঁদ বেটাছেলে হাতিসঃ 'নর্ঘথাত ওই আম্বকা ঠাকুরপোর 
মতন হাতিস! সংসারবন্ধনে বেধে রাখা যেত না তোকে! সেরেফ কোন 'দিন 
“জগৎ দেখবো” বলে পথে বৌরয়ে পড়াতিস! 

“মেজ ঠাকুরাঝ ! 

সুবর্ণ যেন আর্তনাদ করে ওঠে। 

সুবর্ণ আবার ওর হাতটা চেপে ধরে। 

আর সুবর্ণর সেই আর্তস্বরটা যেন দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আস্তে 
ঝরে পড়ে, 'এই কথা ভাবো তুম? অথচ কাঁদনই বা দেখলে তুমি আমাকে! 
আর যারা জীবনভোর দেখলো-. 

সুবালা ব্যাম্ধহীন, কিন্তু অনুভূতিহীন নয়। তাই সেই বরা-স্বরের 
মৃদু মূর্ঘনার উপর আর কথা চাপায় না। শুধু চুপ করে বসে থাকে। অনেক- 
ক্ষণ বসে থাকে। 

তারপর অনেকক্ষণ পর সেই নীরবতা ভেঙে উদ্বিগ্ন গলায় বলে, 'হাতটা 
যে তোমার বন্ড ঘামছে মেজবৌ!! 


8৩০৪ 


ওই ঘামটাই হলো শেষ উপসর্গ | 

দু'দিন দু রাত্তির শুধু ঘামছে। 

| হাত থেকে কপাল, কপাল থেকে সর্বালা। মূছে 

মী শেষ করা যাচ্ছে না। 

ৃ তা হয়, সকলেরই' শুধু মরণকালে এরকম হয়। . 
ওই ঘ্বামটাই যেন জানান দিয়ে বলে, 'পাথবীর জবর 

ছাড়ছে তোমার এবার! 

ূ জেদী রুগী ?নয়ে ভুগেছে এতাঁদন সবাই, 'চাঁকংসা 

করতে পারে নি সমারোহ করে, আর এখন তার জেদ মানা চলে না। এখন 

আঁভভাবকদের হাতে এসে গেছে রোগী। অতএব দুদিনেই দৃশো কান্ড! 

যেখানে যত বড় ডান্তার আছে, সবাইকে এক-একবার এনে হাজির করাবার পণ 

নিয়েছে যেন সংবর্ণলতার ছেলেরা। 

কাঁদন আগেই মানুকে চিঠি লেখা হয়েছিল 'শেষ অবস্থা, দেখতে চাও 
তো এসো।' মানুও এসে পড়লো ইতিমধ্যে। আর চিকিংসার 
সে-ই বেশী করলো। 

'বিয়ের ব্যাপারে মাকে মনঃক্ষু্ করোছিল, সে বোধটা ছিল একটু। এসে 
একেবারে এমন দেখে বড় বেশী 'বিচাঁলত হয়ে গেছে। তাই বাঝ ভ্ুটি পূরণ 
করতে চায়। 

প্রথমটা অবশ্য প্রবোধ অনুমাত নিয়েছে। সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে 
বলেছে, "আর জেদ করে ি হবে মেজবৌ, চিকিচ্ছে করতে দাও! তম বান 

কচ্ছেয় চলে যাবে, এ আপসোস রাখবো কোথায় ?, 

মেজবৌ ওই ঘামের অবসন্নতার মধ্যেও যেন হাসে একটু, “আপসোস 
সিরা তবে তো জেদ ছাড়তেই হয়! কিন্তু আর 
লাভ কি? 

'লাভের কথা কি বলা যায়?" মেজবৌকে এতগুলো কথা বলতে দেখে 
যেন ভয়টা কমে ভরসা আসে প্রবোধের। তাহলে হয়তো সাঁত্য নিদানকাল নয়, 
সাময়িক উপসর্গ । নাড়ি ছেড়ে গিয়েও বে'চে যায় কত লোক! 

তাই ব্যস্ত হয়ে বলে, 'লাভের কথা কি বলা যায়? চামড়া ফুড়ে ওষুধ 
দেবার যে ব্যবস্থা হয়েছে আজকাল, তাতে নাঁক মন্তরের কাজ হয়।' 

চামড়া ফু'ড়ে ?' স্মবর্ণ এবার একট; স্পত্ট হাসিই হাসে। নাল, হয়ে 
আসা ঠোঁটের সেই হাসিটা কৌতুকে ঝলসে ওঠে, 'তা দাও ।' 

পাওয়া গেল অনুমতি। 

অতএব চললো রাজকীয় চাকংসা। 


পরে আবার আপসোস রাখবার জন্যে জায়গা খু'জতে হবে না স্মবর্ণলতার 
'স্বামী-পূত্রকে। 





শুধু চাকংসাতেই নয়, শেষ দেখা দেখতে আসার সমারোহও কম হল 
' না। প্রবোধের তিনকুলে যে যেখানে ছিল, প্রবোধের এই দ2ঃসময়ের খবরে ছুটে 
এল সবাই। খবরদাতা বৃদো। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এল। 


এব ন ল৩। ৩৮৩ 


মেজ জেঠিকে সত্যই বড় ভালবাসতো ছেলেটা ছেলেবেলায়। সময়ের ধুলোয় 
চাপা পড়ে গিয়েছিল সেই অনুভূতি । হঠাৎ এই 'শেষ হয়ে যাচ্ছে'র খবরটা যেন 
উাঁড়য়ে দিয়ে গেলো সেই ধূলো। 

তা বৃদো বলেছে বলেই যে সবাই আসবে, তার মানে ছিল না। বুদো যাঁদ 
নিজের মা'র শেষ খবরটা দিয়ে বেড়াতো, কজন আসতো ? 

সুবর্ণলতা বলেই এসেছে ! 

এটা সংবর্ণলতার ভাগ্য বোঁক। 

এত কার হয় ঃ 

তা সবর্ণলতার দিকে যে এরা সারাজীবন তাকিয়ে দেখেছে। 

ভাগ্য সুবর্ণকে মগডালে তুলেছে, অথচ নিজে সে সেখান থেকে আছড়ে 
আছড়ে মাটিতে নেমে নেমে এসে ঘার্ণ-ঝড় তুলেছে। এ দৃশ্য একটা 
আকর্ষণীয় বৈকি। 

তাই তাঁকিয়েছে সবাই। 

আর যার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থেকেছে, তার তাকানোটা জীবনের 
মত বন্ধ হয়ে যাবার সময় দেখবার সাধ কার না হয়? 

আসে নি শুধু তাদের কেউ, যেখান থেকে সুবর্ণ নামের একটা ঝকঝকে 
মেয়ে ছিটকে এসে এদের এখানে পড়োছল। তাদের কে খবর 'দিতে যাবে ? 
তাদের কথা কার মনে পড়েছে? কে বলতে পারে খবর পেলেও আসতো 
কিনা? সেখানে তো অনেকদিন আগেই মততযু হয়েছে সৃবর্ণর। 

কিন্তু প্রবোধের গুষ্টিও তো কম নয়। 

তাতেই বিরাম নেই' এই দৃদিন। 

এসে দাঁড়াচ্ছে, প্রয়োজনের আতিরিন্ত চণংকারে রোগিণীকে সম্বোধন করে 
আপন আঁবভাব সম্পর্কে অবাহত করে দিতে চাইছে, তাদের জানার গগতে 
মৃত্যুকালে কার কার এমন ঘাম হয়েছিল সেই আলোচনা করছে সেই ঘর বসে, 
৮৮০০৮০০২৭০৪ 

তবে সকলেই কি 

ক জী 

পুরুষরা সবাই এরকম নয়। 

এদিক থেকে খবর নিয়েও বিদায় নিচ্ছে অনেকে। 

ীজজ্ঞেস করছে, 'কথা 'কি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে 2..চোখ কি একেবারে 
খুলছেন নাঃ গঞ্গাজল আছে তো হাতের কাছে? তুলসীগাছ নেই 
বাড়তে 2 

শুভানৃধ্যায়ীরই কথা! 


1কল্তু স্বভাব যায় না মলে, এ কথাটা সাঁত্য বোক। 

নইলে মৃত্যুর হার্তে' হাত রাখা মানূষটাও কারুর শত ডাকেও চোখ খুলছে 
না, আবার কারুর এক ডাকেই টেনে টেনে খুলছে চোখ। 

ময়লা কাপড় ছেণ্ড়া গোঁঞ্জ পরা আধবুড়ো দুলো ধখন কাছে এসে 
ফণ্ীপয়ে বলে উঠলো 'মেজমামী 1, তখন তো আবার কথাও বেক্সোলে গলা 
থেকে! অস্পম্ট, তবু শোনা গেল-_'পালাওঃ মারবে! 

তা এ আরবাশ্য প্রলাপের কথা। 


৩৮৪ সবর্ণলতা 


'এক-আধটা অমন ভুল কথা বেরোচ্ছে মুখ থেকে। 

তবে ঠিক কথাও বেরোচ্ছে। 

বিরাজের বর যখন এসে বসৌছল মাথার কাছে, বিরাজ চেপচয়ে বলোছল, 
'মেজবৌ' দেখ কে এসেছে! তখন আস্তে হাত দুটো জড়ো করবার বৃথা 
চেষ্টায় একবার কে'পে উঠে বলেছিল, 'ন-মোস-কার। 

ভুলটা বাড়লো রান্রের দিকে । ৃ 

| র ধরে কত কথা যেন কইল। কত যেন শপথ করলো । আবার 
একবার প্রবোধের দিকে তাঁকয়ে স্পম্টই বললো- ক্ষমা! 

ক্ষমা চাইলো ? 

না ক্ষমা করে গেল? 

কে বলে দেবে সে রহস্য? 

যারা কাছে ছিল তারা অবশ্য ধরেই নিলো ক্ষমা চাইলো । অনেক দৌরাত্ধ। 
তো করেছে স্বামীর ওপর! 

উজ 

আর চাই' না। যাবার সময় বলে যাচ্ছ, চাই। এই দেশেই, 

মেয়েমানুষ হয়েই !...শোধ নিতে হবে না? 

কে জানে 'কি চাইছিল সে, কিসের শোধ নেবার শপথ নাচ্ছল! 

প্রলাপ! প্রলাপের আর মানে কি? 

সারারাত যমে-মানৃষে যুদ্ধ চললো । রা্িশেষে যখন পূব আকাশে 
দিনের আলোর আভাস দেখা দিয়েছে, তখন শেষ হলো যুদ্ধ 

পরাজত মানুষ হাতের ওষুধের বাঁড আছড়ে ফেলে দিয়ে চকার করে 
উঠলো । বিজয় যম নিঃশব্দে অদশ্যপথে অন্তাহ্ত হলো, জয়লব্খ এীশ্বর্য 
বহন করে। 

ছড়িয়ে পড়লো ভোরের আলো । 

ভুলে দেওয়া হলো বারালযা মেরা গল জার চিক দাক্ষণের বারান্দার 
পৃৰ কোণ থেকে আলোর রেখা এসে পড়লো বিছানার ধারে। মৃত্যুর কাঁলমার 
উপর যেন সৌন্দর্যের তুলি বুলিয়ে দিল। 


সুবর্ণলতার শেষ দশ্যাটি সাঁত্যই বড় সুন্দর আর সমারোহের। 

এ মৃত্যুতে দুঃখ আসে না, আনন্দই হয়। 

কেন হবে নাঃ যাঁদ কেউ জীবনের সমস্ত ভোগের ডালা ফেলে রেখে 
দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তার মত্যুটা শোচনীয়, সে মৃত্যু 

দৃখের। আবার বয়সের 'বিষকাঁটে জীর্ণ হয়ে যারা শেষ পর্যন্ত অপরের 
নর পা হয়ে উঠে গ্রাতানয়ত জাঁবনকে ধিকার দিতে দিতে অবশেষে মরে, 
তাদের মৃত্যুটা নিশ্চিন্ততার, হাঁফ ছেড়ে বাঁচার! যেমন মরোছলেন মুস্তকেশী। 

মান্তকেশর উনআশী বছরের পরানো খাঁচাখানা থেকে যখন বন্দশীবহঙ্গ 

চিট পে আর আধ-পাগলা ভাইপোটা লোক 
হাঁসিয়ে পপাঁসমা গো পাঁসমা গো" করে গড়াগাঁড় দিয়ে কাঁদলেও, বাকী 
সকলেই তো স্বাঁস্তর নিঃস্বাস ফেলে বে'চোঁছল। মুক্তকেশীর পরম মাতৃভন্ত 
ছেলেরা পর্যন্ত : 

সেতো শুধ মৃত্তকেশণর প্রাণপাখীর মুক্তি নয়, ছেলেদের আর বৌদেরও 


সুবর্ণলতা ৩৮৫ 


ফলে, ফুলে, ব্যা্ততে, বিশালতায় বনস্পাঁতর সমতুল্য। 

এমন বয়সে আর এমন অবস্থার মৃত্যু হলো স্বর্ণলতার যে, সে মৃতু 
অবহেলা করে ভুলে যাবারও নয়, শোকে হাহাকার করবারও নয়। 

জবলজহলাট জাঁবন, জবলজবলাট মততযু ! 

আজীবন কে না হিংসে করেছে সুবর্ণলতাকে £ তার জায়েরা, ননদেরা, 
পড়াঁশনীরা, এরা-ওরা। সেই ছোট্ট থেকে দাপটের ওপর চর্লছে সংবর্ণলতা! 
কাউকে ভয় করে চলে নি, রেয়াত করে চলে নি। অমন যে দুর্ধর্ষ মেয়ে 
মুন্তকেশী, তান পর্যন্ত হার মেনেছেন সবর্ণলতার কাছে। সেই দাপটই 
চাঁলয়ে এসেছে সে বরাবর । ভাগ্যও সহায় হয়েছে। আশেপাশের অনেকের 
চাইতে মাথা উপ্চু হয়ে উঠেছিল সংবর্ণলতার। 

টাকাকাঁড়, গাঁড়বাঁড়, সুখ-সম্পাঁভ, কণ না হয়োছিল? সংসার-জীবনে 
গেরস্তঘরের মেয়েবৌয়ের যা কিছ: প্রার্থনায়, সবই জুটোছল সুবর্ণলতার 
ভাশ্যে। 

তাই সুবর্ণলতার মৃত্যুতে 'ধান্য-ধান্য' পড়ে গেল চারাদকে। সবাই 
বললো, হ্যাঁ, মরণ বটে! রা 

কেউ কেউ বা বোশ কায়দা করে বললো, 'মরা দেখে হিংসে হচ্ছে! সাধ 
যাচ্ছে মরি !' 

আর হয়তো বা শুধু কায়দাই নয়, একান্তই মনের কথা । বাঙালীর মেয়ে 
জল্মাবাধই জানে জশবনে প্রার্থনীয় ফাঁদ কিছ থাকে তো 'ভাল করে মরা" 

শাঁখা নিয়ে সিশ্দুর নিয়ে স্বামীপুত্রের কোলে মাথা রেখে মরতে পারাই 
বাহাদুরি ! বাল্যকাল থেকেই তাই ব্রত করে বর প্রার্থনা করে রাখে-_দ্বামী 
অগ্রে, পূত্ন কোলে, মরণ হয় যেন গঙ্গার জলে । 

মৃতবংসা বিরাজ নিঃ*বাস ফেলে বলে, “সেই যে বলে না- পুড়বে মেয়ে 
উড়বে ছাই, তবে মেয়ের গুণ গাই-_ভাগ্যের কথাতেও সেই' কথাই বলতে হয়। 
মরে না গেলে তো বলবার জো নেই “ভাগ্যবতঈ” 2 মেজবৌ গেল, এখন বলতে 
পার কপালখানা করোছিল বটে! এতখাঁন বয়েস হয়েছিল, ভাগ্যের গায়ে 
কখনো যমের আঁচড়াঁট পড়ে নি। সব দিকে সব বজায় রেখে” ভোগজাত করে 
কেমন নিজের পর্থাট কেটে পাঁলয়ে গেল! 

তা রাজের কাছে এটা ঈর্ষার বোঁক। বিরাজ চরাঁদনই তা মেজবৌকে 
ভালবেসেছে যেমন, ঈর্ষাও করেছে তেমন। 

িরাজের *বশুরবাঁড় অবস্থাপন্ন, 'বিরাজের বর দেখতে সুপুরুষ, তবু 
রাজের মনে শান্তি কোথায়? সর্বদাই তো হাহাকার । 

কাছাকাছি বয়সে, একই সময়েই প্রায় সম্তান-সম্ভাবনা হয়েছে দুজনের, 
1কল্তু ফলাফল প্রত্যেবারই দুজনের 'ভিন্। বড়লোকের বৌ' বিরাজ, যেই 
একবার করে সেই সম্ভাবনায় এশ্বর্যবতণ হয়ে উঠেছে, তার জন্যে দুধের বরাদ্দ 
বেড়েছে, মাছের বরাদ্দ বেড়েছে, তার জন্যে ঝ রাখা হয়েছে। তবু পু 
পরম গৌরবে পেশছবার আগেই আবার শূন্য কোল আর ফ্যাকাসে মুখ 
কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে এসে পড়তে হয়েছে তাকে, সেবা খেতে, সান্কনা 


ছে 


৩৮৬ সুবর্পজতা 


পেতে। 

অথচ সুবর্ণলতা ? 

সুবর্ণলতা আঁতুড়ে দেকবার ঘণ্টা পর্যন্ত দৌড়-ঝাঁপ করে বোঁড়য়েছে, 
দু-চার ঘণ্টার মেয়াদে হম্টপুম্ট একটা শিশুর আমদাঁন করেছে, আঁতুড়ঘরের 
ববি বহন আবহ অভির করে নাট নে ঘর কোলে 
একুশ চুপাঁড় সাঁজয়ে দিয়ে নেয়ে-ধুয়ে ঘরে উঠেছে। 

সবটাই তো বিরাজের চোখের উপর। 

বিরাজ গহনা-কাপড় ঝলমালয়ে এসে বসতো, শবশূরবাঁড়র বা 
গল্পে পণ্তমুখ "হতো, বাপের বাঁড়র সমালোচনায় তৎপর হতো, আর তারপর 
ভাইপো-ভাই'ঝদের কোলে-কাঁখে টেনে তাদের হাতে টাকা গ*জে দিয়ে, নিঃ্বাস 
ফেলে গাঁড়তে উঠতো শিয়ে। 

অন্য আর তিন বৌয়ের ছেলেমেয়ে তবু সরু-মোটায় 'মশানো. মেজ 
বৌয়ের সব কটি পাথরকুচি ! 

কত বা দূধ খেয়েছে সুবর্ণ” কত বা মাছ খেয়েছে? গেরস্থঘরের চারটে 
বৌয়ের একটা বৌ, আর সব বৌ কটাই তো একযোগে বংশবৃদ্ধির দায়িত্ব পালন 
করে চলেছে। উমাশশশ সব আগে শুরু করেছিল, সব শেষে ছোট বৌ বিন্দুর 
সঙ্গে সারা করেছে। 

তব ওদের তিনজনের কোনো না কোনো সময়ে কিছ না িছ ঘটেছে, 
শুধু অটুট স্বাস্থ্যবতশ মেজবৌয়ের 'জে'ওজ' ঘরে কখনো চিড় খায় নি। সে 
কথা নতুন করে মনে পড়লো বিরাজের। 

এসোঁছিল উমাশশশী, 'গিরিবালা, বিন্দ্‌। 

সুবর্ণলতার মরণ দেখে 'হিংসে করল তারাও । 

বলল, 'ভাশ্যি বটে! ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা! তার সাক্ষণ 
দেখ. চার ভাইয়ের মধ্যে মেজবাবুই বংশছাড়া, গোল্রছাড়া। চিরটাকাল শ্লেজ- 
গিল্নীর কথায় উঠেছেন বসেছেন।.. আর শুধুই কি স্বামীভাগ্য ১ সন্তানভাগ্য 
নয়? ছেলেগ্ীল হীরের টুকরো, মেয়েগলি গুণবতণ! ভাগ্যবতী ভাগ্য 
জানিয়ে মরলোও তেমন টুপ করে?" 

'টুপ করে' কথাটা অবশ্য অত্যুন্তি। স্নেহের অভিবান্তিও বলা চলে। তবু 
বললো। 

বড় মেয়ে চাঁপাও কে*দে কেদে আক্ষেপ করতে লাগলো, 'কর্ণরের মত 
উপে গেলে মা, প্রাণভরে দুদিন নাড়তে-চাড়তে অবসর দিলে না! 

ছেলেরা বোঁরা আঁবাঁশ্য বড় ননদের আক্ষেপে মনে মনে মূচাক হাসলো। 
কারণ ঝাড়া-হাত-পা গিন্ীবাল্লশ হয়ে যাওয়া চাঁপাকে অনেকবার তারা খোসা- 
মোদ করে ডেকেছে মাকে একটু দেখতে । শাশুড়শ বৌদের দূরে রাখতেন, যাঁদ 
মেয়ে এলে ভাল লাগে! 

চাঁপা তখন আসতে পারে 'ন। 

চাঁপা তখন ফৃরসৎ পায় নি। 

চাঁপার সংসার-জবালা বড় প্রবল। 

তখন চাঁপার শাশুড়ীর চোখে ছানি, 'পিসশাশুড়ীর বাত, খৃড়*বশুয়ের 
উদর", দ্যাওরপোদের হাম-পানবসন্ত, নিজের ছেলেদের রন্ত-আমাশা, হিং 
কাঁস। তা ছাড়া চাঁপার ভাস্মরখির বিয়ে, ভাসৃরপোর শৈতে, তাগ্সণর সাধ, 


সবর্মলজ ৩৮৭ 


মাষ্বশুরের শ্রাম্থ, আর সর্বোপরি চাঁপার বয়ের মেজাজ। পান থেকে চূন 
খসবার জে নেই। গামছাখানা এঁদক-ওদিক থাকলে রাক্ষসের মত চে্চায় 
তামাকটা পেতে একটু দেরি হলে ছাত ফাটায়। 

চাঁপা অতএব মাতৃসেবার পূণ্যঅর্জন করতে পেরে ওঠে-নি। ভাইয়েরা 
যখনই ডেকেছে, চাঁপা তার সংসারের জবালার ফিরিস্তি আউড়ে অক্ষমতা 
জানিয়েছে। 

তাছাড়া চাঁপা কোনোকালেই এটাকে বাপের বাঁড় ভাবে ন। 

চাঁপার সাঁত্যকার টান তো দাঁ্জঁপাড়ার গাঁলর সেই বাঁড়টার ওপর। যে 
বাঁড়টার ছাতের 'সশড় আর গাঁথা হলো না কোনোঁদন। তা চাঁপা সে অভাব 
অনুভব করে 'নি কখনো, সুবর্ণলতার মেয়ে হয়েও না। চাঁপার প্রিয় জায়গা 
রান্নাঘর, ভাড়ার ঘর, ঠাকুমার ঘর, জেঠির ঘর! 

চাঁপা ওইটেকেই বাপের বাঁড় বলে জানতো, চাঁপা সংসার-জবালা থেকে 
ফুরসং পেলে ওইখানে এসে বোঁড়য়ে যেত। 

হয়তো সেটাই স্বাভাঁবক। 

চাঁপার পক্ষে এ বাড়কে আপন বলে অনুভবে আনার আশাটাই অসঞ্গাত। 

এ বাঁড়র কোথাও কোনোথানে চাঁপা নামের একটা শিশুর হামাগুড়ি 
দেওয়ার ছাপ আছে কি? চাঁপা নামের একটা বাঁলকার পদাঁচহ্ ? 

এ বাঁড়তে চাঁপার আঁস্তত্ব কোথায় ? 

দার্জপাড়ার বাঁড়টা চাঁপার আঁস্তত্বে ভরা । তার প্রত্যেকাঁট ইস্ট চাঁপাকে 
চেনে, চাঁপাও চেনে প্রাতিটি ইস্ট-কাঠকে। 

চাঁপা তাই বাপের বাঁড় আসবার পিপাসা জাগলেই চেষ্টা-যত় করে চলে 
আসতো ওই দাঁজপাড়ার বাঁড়তেই। ফেরার দিন হয়তো একবার মা-বাপের 
সঙ্গে দেখা করে যেত। কোফিয়ত কেউ চাইত না. তবু শানয়ে শ্বানয়ে বলতো, 
ঠাকুমা বুড়ার জন্যেই ও-বাড়ি যাওয়া! বুড়শ যে কটা দিন আছে, সে কটা 

দিনই ও-বাঁড়তে আসা যাওয়া! কবে আছে কবে নেই বুড়া, “চাঁপা চাঁপা” 
এপ ঠাকুমা মরলে বলেছে, “মল্লিকাটার জন্যে যাই! 

সূবর্ণলতা কোনোদন বলে নি, 'তা অত কৈফিয়ংই বা 'দাঁচ্ছস কেন? 
আমি তো বলতে যাই নি. তুই ও-বাঁড়তে পাঁচ দিন কাটিয়ে এ বাড়তে দু ঘণ্টার 
জন্যে দেখা করতে এল কী বলে?, 

সুবর্ণলতা শুধু চুপ করে বসে থাকতো । 

সুবর্ণলতা হয়তো কথার মাঝখানে বলতো, 'জামাই কেমন আছেন ? 
বলতো 'তোর বড় ছেলের এবার কোন ক্লাস হল 2? 

চাঁপা সহজ হতো. সহজ হয়ে বাঁচতো। তারপর *বশুরবাঁড়র নানান 
জহালার কাহিনী গেয়ে চলে যেত। 

আবার কোন্নোদন ও-বাঁড়র খাবারদালানে গড়াগাঁড় দিতে 'দতে চাঁপা 
এবাঁড়র সমালোচনায় মুখর হতো। তখন সমালোচনার প্রধান পান্নী হলো 
চাঁপারই মা! 

মায়ের নবাবী, মায়ের বিবিয়ানা, মায়ের গোব্রাহ্মণে ভান্তহশনতা, মায়ের 
ছেলের বৌদের আঁদখ্যেতা দেওয়া, রে রানি বারন 
বহর এই সবই হলো চাঁপার গল্প করবার 

চাঁপা সবর্ণলতার প্রথম সন্তান, চা লিউ 'বৌ' হন্নে থাকতে 


6৮৮ সুবদজত্য 
বিরুপ মনোভগ্গণ। 


চাঁপার তবে কোন্‌ মনোভাব গড়ে উঠবে ? 

তাছাড়া মায়ের নিন্দাবাদে দা্জপাড়ার সল্তোষ, মায়ের সমালোচনায় 
৬০০ মায়ের ব্যাখ্যানায় ওখানে 'সুয়ো' হওয়া, এটাও তো' অজানা 
নয় 

চাঁপা তাই ও-বাড়ির সন্তোষাঁবধান করেছে এ-বাঁড়কে কৌতুক করে। 

হয়তো আরও একটা কারণ আছে। 

হয়তো চাঁপাও ভিতরে ভিতরে মায়ের প্রীতি একটা আক্রোশ অনুভব করে 
এসেছে বরাবর। চাঁপার *বশুরবাঁড়ির শাসন একেবারে পালিসী শাসন, লোহার 
জাঁতার নীচে থাকতে হয় চাঁপাকে, চাঁপা তাই মায়ের সেই চিরদিনের বেপরোয়া 
অনমনীয়তাকে ঈর্ধা করে, মায়ের এই এখনকার স্বাধীনতাকে ঈর্ষা করে। 

চাঁপার মনে হয়, চাঁপার বেলায় মা চাঁপাকে যেমন-তেমন করে মানুষ 
করেছে, কখনো একখানা ভাল কাপড়জজামা দেয় নি, অথচ এখন ছোট মেয়ের 
আদরের বহর কত! কাপড়ের ওপর কাপড়, জ্যাকেটের ওপর জ্যাকেট। 

চাঁপা বুদ্ধ হয়েছে: আঁভমানাহত হয়েছে। 

এখন চাঁপা কেদে কেদে আক্ষেপ করছে, 'কর্পরের মত উপে গেলে 

মা, একট নাড়বার-চাড়বার অবকাশ দিলে না! 

হয়তো এই মুহূর্তের ওই আক্ষেপটাও সত্য। ওই কান্নাটুকু নিরেজাল, 
তবু ভাইবৌরা মনে মনে হাসলো । 

আঁবাশ্য বাইরে তারাও কার্দীছল। 

না কাঁদলে ভালো দেখাবে না বলেও বটে, আর চাঁপার কান্নাতেও বটে। 
কান্না দেখলেও কান্না আসে। 

শুধু সৃবর্ণর মস্ত আইবুড়ো মেয়ে বকুল কাঁদলো না একবিন্দু। কাঠ 
হয়ে বসে রইলো চুপ করে। বোধ হয় অবাক হয়ে ভাবলো জ্ঞানাবধি কোনো- 
দিনই যে মানুষটাকে অপ্পাঁরহার্য মনে হয় নি, সেই মানুষটা চোখ বোজার সঙ্গো 
সঙ্গে এমন করে পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে কেন? সুবর্ণর বয়স্ক ছেলেরা 
প্রথমটা কেদে ফেলোছল, অনেক অনুভূতির আলোড়নে বিচাঁলত হয়োছিল, 
সামলে নিয়েছে সেটা। তাদের দায়িত্ব অনেকখাঁন। এখন তারা 'বিষাদ-গম্ভশর 
মুখে ষথাকর্তব্য করে বেড়াচ্ছে। 

তাদের তো আর কাঠ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাদের ভুমিকা গম্ভীর 
টির শাক্ষত সভ্য ভদ্র পুরুষের পক্ষে ও ছাড়া আর শোকের বাহঃপ্রকাশ 

? 

তবে হ্যাঁ, প্রবোধচন্দ্রের কথা আলাদা । 

তার মত লোকসান আর কার 2 

প্রবোধ শোকের মত শোক করলো । বুক চাপড়ালো, মাথার চুল ছেণ্ড়ার 
প্রয়াস পেলো, মেঝেয় গড়াগাঁড়ি খেলো, আর স্মবর্ণলতা যে তার সংসারের 
সাঁত্য লক্ষত্রী ছিলো, আড়ম্বরে সে কথা ঘোষণা করতে লাগলো । 

বড় ভাই সুবোধচল্দ্র ইদানীং হটিঃর বাতে প্রায় শম্যাগতই ছিলেন, তব্ 
সুবর্ণলতার মৃত্যুর খবরে আস্তে আস্তে লাঠি ধরে এসেছিলেন। ধীরে ধরে 
বলোছলেন, 'লক্ষরীছাড়া হলি এবার প্রবোধ। 


সুবর্ণলতা ৩৮১ 


সেই শোকবাক্যে প্রবোধ এমন হাডিমাউ করে কেদে দাদার পা জাঁড়য়ে ধরে- 
ছিল যে, পা ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে পথ পান ন সুবোধচন্দ্র! 

প্রবোধ হকি পেড়েছিলো, ও দাদা, ওকে আশীর্বাদ করে যাও ! 

সুবোধ বলেছিলেন, 'গুঁকে আশশর্বাদ কার আমার কী সাধ; ভগবান 
গুকে আশীর্বাদ করছেন।' 

প্রবোধ এ-কথায় আরো উদ্দাম হলো, আরো বুক চাপড়াতে লাগলো । সেই 
শোকের দৃশ্যটা যখন দৃঘ্টকটু থেকে প্রায় দম্টিশূল হয়ে উঠলো, তখন বড় 
জামাই আর ছোট দুই ভাইয়েতে মিলে ধরাধার করে নিয়ে গেল এ-ঘর থেকে 
ও-ঘরে। জোর করে শুইয়ে দিয়ে মাথায় বাতাস করলো খাঁনকক্ষণ, তারপর 
হাতের কাছে দেশলাই আর সিগারেট কেসটা এগয়ে 'দয়ে চলে এলো । 

মৃত্যুকে নিয়ে দীর্ঘকাল শোক করা যায়, মূতকে নিয়ে দূ ঘণ্টাও 'নাশ্চন্ত 
হয়ে শোক করা চলে না। আচার-অনূষ্ঠানের দড়াদাঁড় দিয়ে শোকের কন্ঠরোধ 
করে ফেলতে হয়! 

সমারোহ করে শেষকৃত্য করতে হলে তো আরোই হয়। 

সুবর্ণলতার শেষকৃত্য নমারোহের হবে বোক! ভাল লালপাড় তাঁতের 
শাঁড় আনতে 'দিয়ৌছল ছেলেরা, আনতে দিয়োছল গোড়েমালা, গোলাপের 
তোড়া । ধৃপ, অগুরু, চন্দন এসবের ব্যবস্থাও হচ্ছিল বোৌক। এ ছাড়া নতুন 
চাদর এসোৌছল শমশানযান্রার বিছানায় পাততে। 

উমাশশী 'গিরবালা বিরাজ বিন্দুর দল দালানের ওধারে বসে জটলা 
করছিলো। িরবালা বললো, 'সব দেখেশুনে মুখস্থ করে যাচ্ছ, বাঁড় গিয়ে 
ফর্দ করে রাখবো । মরণকালে বার করে দেব ছেলেদের । গোড়ে গলায় না 
নিয়ে যমের বাঁড় যাচ্ছি না বাবা!" 

এই কৌতুক-কথায় মদ হাস্য-গুঞ্জন উঠল। জানলার ধারে দাঁড়য়ে থাকা 
বকুল তাকিয়ে দেখল. 'স্থর হয়ে তাকিয়ে রইল। 

তা ওরা বোধ হয় একটু অগপ্রাতিভ হলো, বিরাজ তাড়াতাঁড় বললো, "হ্যাঁ 
রে' পারুল তা হলে আসতে পারল না 2" 

বকুল মাথা নাড়ল। 

গগরিবালা বললো, “মায়ের মৃত্যু দেখা ভাগ্যে থাকা চাই। এমন কত হয়, 
বাড়িতে থেকেও দেখা যায় না। . দু'দণ্ডের জন্যে উঠে গিয়ে শেষ দেখায় বণ্ঠিত 
হয়৷ 

বকুল ছেলেমানুষ নয়, তবু বকুল যেন কথাগুলোর মানে বুঝতে পারে 
না। 

মায়ের মৃতু দেখা ভাগ থাকা চাই 2 

জৃশ্যটা কি খুব সুখের 2 

বণ্চিত হলে ভয়ঙ্কর একটা লোকসান 2 যে চোখ এই পাঁথবীর সমস্ত 
রূপ আহরণ করে করে সেই পৃথিবীকে জেনেছে বুঝেছে, সেই চোখ চিরদিনের 
জন্যে বুজে গেল, এ দূশ্য মস্ত একটা দ্রষ্টব্য ? 

যে রসনা কোঁট কোটি শব্দ উচ্চারণ করেছে, সেই রসনা একেবারে নিঃশব্দ 
হয়ে গেল, এ ক' ভাঁর একটা উত্তেজনার ? 

হয়তো তাই। 

গুরা বড়, গুরা বোঝেন। 


টি সবর্ণঙতা 


. উমাশশশ বললো, 'তা খবরটা তো দির্তে হবে তাড়াতাড়ি। চতুথা করভে 
হবে তো তাকে? 

উমাশশীর এই বাহুল্য কথাটায় কেউ কান দল না। এই সময় আস্তে 
ডাক দিলেন জয়াবতন, “চাঁপা ! 

'সুবর্ণলতার শেষ অবস্থা' এ খবর সকলের আগে তাঁর কাছে পেশছেছে 
আর সঙ্গে সঙ্গেই এসেছেন 'তাঁনি। যতক্ষণ সুবর্ণলতার *বাসযল্ল কাজ করে 
চলেছিল, ততক্ষণ মৃদু গলায় গাঁতার শ্লোক উচ্চারণ করোছলেন জয়াবত, 
একসময় দুটোই থেমেছে। তারপর অনেকক্ষণ কাঁ যেন করছিলেন, একসময় 
চাঁপাকে বললেন, 'ভাইদের একবার ডেকে দাও তো মা!' 

চাঁপা তাড়াতাঁড় উঠে গেল । 

ও-বাড়ির জোঠমাকে সমীহ সেও করে বৈকি। বিলক্ষণই করে.! জয়াবতাঁর 
*বশুরবাড়ির গুষ্টির সবাই করে। 

একে তো সুন্দর, তার ওপর আজীবন কৃচ্ছঃসাধনের শৃচিতায় এমন 
একি মাঁহমময়ী ভাব আছে যে দেখলেই সম্ভ্রম আসে। বড়লোকের মেয়ে 
সেই আভিজাত্যট:কুও চেহারায় আছে। ও-বাঁড়র জেঠি ডাকছেন শুনে ছেলেরা 
ব্স্ত হয়ে কাছে এল। 

জয়াবতনী শান্ত গলায় বললেন, 'একটি অনুরোধ তোমাদের করবো বাবা, 
রাখতে হবে।' 

সুবর্ণলতার ছেলেরা আরো ব্যস্ত হয়ে বললো, 'সে কী! সে কী! অনুরোধ 
কী বলছেন১ আদেশ বলুন ?' 

জয়াবতঁ একটু হাসলেন। 

বললেন, 'আচ্ছা আদেশই। বলাঁহছলাম তোমাদের মায়ের জন্যে কালো 
ভোমরাপাড়ের গরদ একখান, আর একখানি ভাল পালিশের খাট নিয়ে আসতে । 
এটা ওর বড় সাধ ছিল! পারবে 2” 

শুনে ছেলেরা অবশ্য ভিতরে ভিতরে চমকে উঠল, কারণ এমন অভাঁবিত 
আদেশের জন্যে প্রস্তৃত ছিল না তারা। এ একেবারে বাজেটের বাইরে । তা 
ছাড়া-সবই তো আনতে গেছে। শাঁড়, মালা, খাটিয়া। 

[কল্তু ঠিক এই মুহূর্তে ওই শান্ত প্রশ্নের সামনে “পারবো না' বলাও তে 
সোজা নয়! 

এ উমাশশী জেঠি নয় যে, কোনো একটা কথায় ব্যঙ্গ হাঁসি দিয়ে দাঁময়ে 
দেওয়া যাবে! হ্যাঁ উমাশশশ হলে বলতে পারতো তারা শান্ত ব্যঞ্গের গলায়- 
'খাটটা কি শুধুই পাঁলশের, না চণ্দন কাণের 2" 

উমাশশী হলে বলতই। 

কিন্তু ইনি উমাশশন নন, জয়াবতী। এর ব্যন্তিত্বই আলাদা। এ'র সামনে 
ছোট হতে পারা যাবে না, দৈন্য প্রকাশ করতে বাধবে। 

তবু বাজেটের িপদটাও কম নয়? মায়ের 'চাঁকৎসা উপলক্ষেও তো কম 
খরচ হয়ে গেল না? 

সব টাকা বাঁড়তে ঢেলে, আর বহ্হাঁদন বাঁড় বসে বসে, প্রবোধের হাত তো 
স্রেফ ফতুর। টাকা দিয়ে সাহাধা করতে পারবেন না 'তাঁন, যা করতে হবে 
ছেলেদেরই হবে। হয়তো বা বড় ছেলেকেই বেশি করতে হবে। 

তাই বড় ছেলে শুকনো গলায় প্রশ্ন করলো, 'আপাঁন যাঁদ বলেন অবশ্যই 


সৃবর্ণলতা ৩৯১ 


আনা হবে জেঠিমা, তবে ইয়ে বলাছলাম কি, ওটা কি করতেই হয় 2 

জেঠি আরো স্নিগ্ধ আরো ঠাণ্ডা স্বরে বললেন, “ “করতেই হয়” এমন অসঙ্গত 
কথা বলতে যাবো কেন বাবা 2 এতো খরচার ব্যাপার আর কজন পারে? তবে 
তোমরা তিনটি ভাই কৃতী হয়েছো, তাই বলতে পারাছি। সবর্ণর অনেক দিনের 
' ইচ্ছা ছিল একখানি কালো ভোমরাপাড়ের গরদ শাঁড় পরে, আর একথাঁন ভাল 
খাট-গাঁদতে শোয়। মন খুলে কথা তো আমার কাছেই কইতো বোঁশটা। 
কতাঁদন কথাচ্ছলে হাসতে হাসতে বলতো" “জন্মে কখনো খাটে শুলাম না 
জয়াঁদ, মরে যখন ছেলেদের কাঁধে চড়ে যাবো. একখানা পালিশ করা খাটে 
শুইয়ে যেন নিয়ে যায় আমায় 1” 

জল্মে কখনো খাটে শুলাম না' 

খাটে! 

জল্মে কখনো! 

এ আবার কি অচ্ভুভ ভাষা । 

ছেলেরা অবাক হয়ে তাকালো । 


মনশ্চক্ষে সমস্ত বাঁড়খানার দিকেই তাকালো। তাঁকয়ে অবাক হলো, 
হতভম্ব হলো। এত বড় বাঁড়, ঘরে ঘরে জোড়া খাট, অথচ সুবর্ণলতার এই 
গা! 


মরার পর আর কেউ গাল 'দতে পারবে না বলেই বুঝি ছেলেদের সঙ্গে 
এই অদ্ভুত উগ্র কট তামাশাটুকু করে গেছে সুবর্ণলতা ! 

বড় ছেলের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল সেই বিস্ময়-প্রশ্ন, 'জন্মে কখনো খাটে 
শোন নি! 

জয়াবতী হাসলেন। 

জয়াবতী থেমে থেমে কোমল গলায় উদ্চারণ করলেন, 'কবে আর তে 
পেল বল বাবা! সাবেকী বাঁড়তে যখন থেকেছে, তখনকার কথা ছেড়ে দাও। 
ইট ?্দিয়ে উচু করা পায়াভাঙা চৌকিতে ফুলশষে। হয়োছল, কতদিন পর্য্ত 
তাতেই কাটিয়োছল। দার্জপাড়ার নতুন বাঁড়টা হবার পর ঘরে ঘরে একখানা 
করে নতুন চৌকি হয়োছল।...খাট নয়, চৌঁক। তা কোলের ছেলে গড়িয়ে পড়ে 
যাবার ভয়ে ততেই বা কই শোয়া হয়েছে, বরাবর মাটিতেই শুয়েছে। তোমাদের 
অধ াশ্য এসব ভূলে যাবার কথা নয়।..তারপর যাঁদ বা জেদাজোঁদ করে চলে 
এসোঁছল সেই গূহা থেকে, ঘরবাঁড়ও পেয়েছিল, কিন্তু ভোগ আর করলো কবে 
বল? তোমরা ষেটের সবাই পর পর মানুষ হয়েছো, বোমার্য এলেন একে একে, 
নিজের বলতে তেমন একখানা ঘরই বা কই রইল বেচারার ১ ওই ছোট একটু 
শোবার ঘর! রাতে আলো জেলে বই পড়ার বাতিক 'ছল ওর, অথচ তোমাদের 
বাবার তাতে ঘুমের ব্যাঘাত-, একট হাসলেন জয়াবত+, বললেন, 'প্রবোধ 
ঠাকুরপোর তবু বসতে দাঁড়াতে বৈঠকখানা ঘরটা আছে; ও বেচারার 'নিজস্ব 
বলতে কোথায় কি? শেষটা তো বারান্দায় শয়েই কাটিয়ে গেল!" 

খুব শান্ত হয়ে বললেন বটে, তবু যেন শ্রোতাদের বুকের মধ্যেটা হিম 
হয়ে গেল। আর তাদের পশ্চাদবার্তিনী বৌমাদের মুখ লাল হয়ে উঠল। তবে 
কথা তারা বলল না তাড়াতাড়ি । শুধ্‌ মেজ ছেলে আরাস্তিম মূখে বলল, 'কাশির 
জন্যে মা নিজেই তো আর কারুর সঙ্গে ঘরে শূতে চাইতেন না! 

জোঁঠি আরো নরম হলেন। 


৩৯২ সুবর্শলতা 


' মধূর স্বরে বললেন, সে কি আর আমিই জানি না বাবা! তোমরা 
তোমাদের মাকে কোনাঁদন অবহেলা করেছ, এ কথা পরম শন্লুতেও বলতে পারবে 
না। বহু ভাগ্যে তোমাদের মত ছেলে হয়। তবে কনা মনের সাধ ইচ্ছের কথা 
তোমাদের কাছে আর ক বলবে ; আমার কাছেই মনটা খুলতো একটু-আধট:, 
তাই ভাবলাম, এটুকু তোমাদের জানাই। 

জেঠি বললেন, “এটুকু তোমাদের জানাই"! 

জানার পর অতএব অজ্ঞতা চলে না! 

অগত্যাই বাজেট বাড়াতে হলো । 

মায়ের সাধের কথা ভেবে ষতটা না হোক, ধনশদহতা জ্্ণীত জেঠির কাছে 
ানীজেদের মানা রাখতেও বটে। 

তবু বড় ছেলে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে গলা নামিয়ে ভুরু কুণ্চকে প্রশ্ন 
করলো, 'নতুন জেঠিমার কথাটা শুনেছ ? 

রিনার লালা 'শুনোছ। 

'মানেটা ঠিক বুঝলাম না' তো। মা'র গরদ শাঁড় ছিল না?" 

বৌ গম্ভীর গলায় বললো, মানে আমিও বুঝতে অক্ষম। তিন ছেলের 
বিয়েতে তিন-তিনখানা গরদ পেয়েছেন কুটুমবাঁড় থেকে! 

“আশ্চর্য! যাক কিনতেই হবে একখানা ।, 

মেজ ছেলে বৌয়ের কাছে এল না, মেজবৌই বরের কাছে এল। মড়া 
ছ*য়েছে বলে আর নিজ নিজ শোবার ঘরে ঢোকে নি, ছাদের [িশড়র ওধারে 
ডেকে 'নয়ে গিয়ে ব্যষ্গের গলায় বললো, 'এই বেলা বলে রাখি, আমার একখানা 
পুজ্পহার পরবার সাধ আছে! দিও সময়মত, নইলে আবার মরার পর ছেলেদের 
মুখে কালি দেব! 

মেজ ছেলে শুকনো মুখে বললো, “এটা যেন জেঠিমার ইচ্ছাকৃত ইয়ে বলে 
মনে হলো। অথচ ঠিক এরকম তো নন ডীন!, 

মেজবৌ মু হাসির মত মূখ করে বলে” কে যে কি রকম, সে আর তোমরা 
বেটাছেলে 1ক বুঝবে? জেঠিমার সঙ্গে কত রকম কথাই হতে শুনোছ-_তা 
ছাড়া এয়োস্মী মানূষকে কালোপাড় শাড়ী পরে *মশানে পাঠানো ? শুনি নি 
কখনো! 

“যাক যেতে দাও। ও-রকম একখানা গরদের কাপড়ে কি রকম আন্দাজ 
লাগবে বলতে পারো? 

মেজবৌ ভুরু কুচকে বললো, “তোমার ঘাড়েই পড়ল বুঝি ॥ 

মেজ ছেলে বোধ কার একটু লাঁঞ্জত হলো। তাড়াতাঁড় বললো, "ঘাড়ে 
পড়াপাঁড় আর কি! একজন কাউকে তো যেতে হবে দোকানে। আঁবাশ্য খুব 
ভাজ খাঁপ জাঁম-টমির দরকারই বা কিঃ নেবে তো এক্ষুনি ডোমে! 

হু তা নেহাৎ ফ্যারফেরে ঝ্যারঝেরে জাম হলেও, বারো-তেরো টাকার 
কমে হবে বলে মনে হয় না। 

“বারো-তেরো ! 
, মেজ ছেলে বিচাঁলত ভাবে চলে গেল। একবার নিজে একা টাকাটা বার 
করলে ক আর পরে ভাইদের কাছে চাওয়া যাবে 2 

তা হোক, কি আর করা যাবে? নটি না থাকে। কেউ না ভাবে তাদের 
“নজর নেই! দাদা খাটটার ভার 'নক। 


লুবর্ণলতা ৩৯৩ 


তা সেই ভাগাভাগি করেই খরচটা বহন করলো ছেলেরা । বড় ছেলে আনলো 
পাঁলশ করা খাট, মেজ ছেলে কালো ভোমরাপাড় গরদ। যে মানুষটাকে যখন 

তখন যন্ঠামনসায় লালপাড় গরদ পরে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে, তার একখানা 
৮৫ ধু আঙক্ষেপে মরে যাবে এমন ভাব-প্রবণতা অবশ্য 
কারো নেই, তবু দেখেশুনে কালো ভোমরাপাড়ই কিনে আনলো। বারো-তেরো 
কেন, চোচ্দ টাকা পড়ে গেল'। ঢালাপাড়ের চেয়ে নকশাপাড়ের দাম বেশি কিনা । 

সেজ ছেলে নিজ মনেই আনলো, ফুলের গাদা, আনলো ধৃপের প্যাকেট, 
আনলো গোলাপজল এক বোতল। 

এসব কথা কবে নাক বলে রেখোঁছল সবর্ণলতা। হয়ত ঠাট্রাচ্ছলেই 
বলোছল। তবু সেই হেসে হেসে বলা কথাটাই মনে পড়ে মনটা 'কেমন' করে 
ওঠা অসম্ভব নয়। সুবর্ণলতার সেজ ছেলে কথা বোশ বললো না। শু 
ধৃপের গোছাটা জেবলে দিল,.শুধু ফুলগুলো সাজিয়ে দিল, আর গোলাপ- 
জলের সবটা ঢেলে 

মড়ার গায়ে গোলাপজল ঢালা মুস্তকেশশর গোম্ঠশতে যে এই প্রথম তাতে 


সন্দেহ কি? 
দি জুটেছিলঃ জূ্টোছল শুধু একটা ফুলের তোড়া! 
মৃত্যুর দিন স্‌বর্ছ' বলেছিল, 'একটা ফুলের তোড়া কিনে আন্‌ 
িনি০৬১০১১০১০ পৃথিবী থেকে শেষ নেবার সময় সঙ্গে 
দেবার তো আর কিছুই থাকে না? 
বলোছল এই সেজ ছেজেটাকেই। 
হয়তো সোদনেয় স্মাতি মনে জেগেছিল তার, তাই অত ফুল এসোছল। 
বিরাজ বলোছিল, মনে হচ্ছে তোদের মা'র বিয়ে হচ্ছে! বাসরের সাজ সাজালি 
মাকে। আমার *বশুরবাঁড়তেও মরণে এত ঘটা দোঁখ 'নি। 
নিজের *বশরবাঁড়িটাকেই সর্বীবধ আদর্শস্থ মনে করে বিরাজ! 
ারবালা বললো, 'যা বলেছ ছোট ঠাকুরাঁঝ। এত দৌখ নি বাবা! 
গগারবালার বাপের বাঁড়র সাবেক সংসারে এত ফ্যাশান এখনো ঢোকে 
০৯৭৬০৯প 
আজল্মের সাধ 'মিউলো 
কালো ভোমরাপাড়ের পদ রা পর বিছানা পাতা নতুন 
বোম্বাই খাটে শুলো, ৮৬৯ পা পালায় গোড়েমালা। 
পায়ে পরানো আজলতার 'নুঁট' নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল, মাথায় 
সন্দুরের কাঁণকা প্রসাদ পাবার জন্যে হুড়োহুড়ি বাধলো। কেবলমান্ন নিজের 
বৌ-মেয়েরাই তো নয়, এসেছে ভাস[রপো-বৌ, তার দ্যাওরপো-বৌদের দজ, 
এসেছে জা-ননদ, পাড়াপড়শণ বেয়ান-কুটুম। 
শেষষান্রা দেখতে তো লোক ভেঙে পড়েছে। 
এসেছে ধোবা গয়লা নাপাতিনন ঘুটেওয়ালশী সবাই। সকলেই অসঙ্কোচে 
ধৃলোকাদা পায়ে উঠে এসেছে দোতলায়, উপীকঝ'ুিক মারছে শবদেহের আশে- 
পাশে। এটা বাঁড়র লোকের পক্ষে বিরান্তকর হলেও, এ সময় নিষেধ করাটা 
শোভন নয়। এরাও যে তাদের ময়লা কাপড়ের খশুটে চোখ মুছে বলছে, 'এমন 
মানুষ হয় না! 
চিরকাল বলেছে, এখনও বললো, এমন মানুষ হয় না! 
হ্ঙ 


৩৯৪ সবর্ণলতা 


« এখন ভার কোনোখানে কেউ বলে উঠলো .না, তা জানি। ঘর-জবালানে 
পর-ভোলানে যে! 

মৃত্যু সকলকে উদার করে 'দিয়েছে, সভ্য করে 'দিয়েছে। 

আসম্ সন্ধ্যার মূখে সুবর্ণলতার শেষ চিহ্টুকুও পৃথিবী থেকে লস্ত 
হয়ে গেল। চিতার আগুনের লাল আভা আকাশের লাল আভায মিশলো, ধোঁয়া 
আর আগুনের লুকোচঃরির মাঝখান থেকে সুবর্ণলতা যে কোন ফাঁকে পর- 
লোকে পেশছে গেল, কেউ টেব পেল না। 


মানু বললো, “এটা হোক। যা খরচ লাগে, আমি “বেয়ার” কববো!, 

মানুব দাদারা বললো, “তা যাঁদ করতে পারো, আমাদের বলবার কি আছে? 
ভালই তো।' 

প্রবোধ হডিমাউ করে কে'দে বললো, 'কর বাবা, কব তোরা তাই। আত্মাটা 
শান্তি পাবে তার। এই সবই তো ভালবাসতো সে।' 

কে জানে মানুর এই সাঁদচ্ছা তার অপরাধবৌধকে হালকা করে ফেলতে 
চাওয়া কিনা, অথবা অনেকটা দূরে সরে শিয়ে 'মা' সম্পর্কে তার মনের রেখা- 
গুলো নমনীয় হয়ে গিয়েছিল কিনা! 

নিত্য সংঘর্ষের গ্লানিতে যে জীবনকে খণ্ড ছিন্ন অসমান বলে মনে হয়, 
দূর পারপ্রোক্ষতে সেই জীবনই একাঁট অখণ্ড সম্পূর্ণতা নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে 
ওঠে 'বিস্তৃতিব মাহমায়, ব্যাপ্তির মাহমাষ। নিতান্ত নিকট থেকে যে আগুন 
শুধু দাহ আর উত্তাপের অনুভূতি দেয়, দূরে গেলে সেই আগুনই আলো 
যোগায়। 

দূরত্বেই সম্ভ্রম, দূরত্ধেই প্রত্যয়। 

শ্রাম্ধের শেষে ওই যে এনলার্জ করা ফটোখানা দেয়ালে ঝবূললো আবিন্বর 
একটি প্রসন্ন হাঁস মুখে ফুটিয়ে, ওই ছবির বংশধরেরা কি কোনোঁদন সন্দেহ 
করবে, এ হাঁসিটুকু কেবল ফটৌগ্রাফাবের ব্যগ্র নির্দেশের ফসল! 

মানু হয়তো দূরে চলে গিয়ে তার মায়ের রুক্ষ অসমান কোণগুলো ভূলে 
গিয়ে শুধু স্থির মসৃণ মৃর্তটাই দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু পেল বড় দেরিতে। 
আর তখন কিছ করার ছিল না মানুর। 

তাই মানু ভেবোঁচন্তে ওই কথাটাই বললো, 'কাঙালন খাওযানো হোক এই 
উপলক্ষে । 

খরচাটা সে একাই বহন করবে। 

তবে আর বলাঘ কি আছে * তা খরচ আর ঝঞ্জাট পুটোরই ভার নিক। 

তা নিল মান্দ। 

অতএব সুবর্ণলতার শ্রাম্ধে কাঙডালীভোজন হলো। অনেক কাঙালণ এল 
-আহৃত, বরাহ্‌ত, অনাহ্‌ত। কাউকেই বণ্চিত করলো না এরা । আশা করলো, 
স্বর্ণলতার বিগত আত্মা পাঁরতৃপ্ত হলো এতে। বিশ্বাস রাখলো, ছেলেদের 
আশীর্বাদ করছে স্বর্ণলতা আকাশ থেকে। 

পরদিন মানু চলে গেল বৌকে বাপের বাঁড় রেখে 'দিয়ে। ছুটি ফ্যারয়েছে 
তার। 

তার পরের দিন তার বোনেরা, 'পাঁসরা, জেঠি-খুড়ীরা। নিয়মভঙ্গা' 
পর্য্ত ছিল সবাই, মিটলো তো সবই। 


সুবর্শলিতা ৩৯৫ 


শুধু; পারুল আসে নি এই 'ধিয়াট উৎসবে । পারুলের আসবার উপায় 
ছিল না। 


৩১৯ ॥ 


নিস্তব্ধ হয়ে গেল বাঁড়' স্তিমিত হয়ে গেল 'দনের প্রবাহ । রোগের বৃদ্ধি থেকে 
এই পর্যন্ত চলছিল তো উত্তাল ঝড়! ব্লান্ত মানুষগুলো 
এবার অনেক দিনের ক্লান্তি পৃষিয়ে নিতে ঘুমিয়ে নেবে 
ণিছুদিন দুপুর-সন্য্যেয়। 

বকুলও ঘুমিয়ে পড়েছিল ভরদুপুর়ে, জেগে উঠলো 
বেঙ্গায়। তাড়াতাঁড় বুঝি দীর্ঘাদনের অভ্যাসে ছুটে 
চলে এল বারান্দার দিকে। ভুল বুঝতে পারলো, আস্তে 
ফিরে এল, ছাতে চলে গেল। 

দেখলো পাঁশ্চমের আকাশে বিশাল এক চিতা জবনছে। তার আগ্মআভা 
ছাড়িয়ে পড়েছে আকাশের মাঁটিতে। 

বকুল শ্মশানে যায় নি, মায়ের চিতা জালা দেখে নি, তাই বুঝি নার্নমেষে 
তাকিয়ে রইল সোঁদকে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল ।...যখন আস্তে আস্তে নিভে 
গেল সে আগুন, মনে পড়লো আর একাঁদনের কথা । এই ছাতেরই ওই কোণটায় 
আর এক চিতা জলতে দেখোছল সে। কোনোদিন জানলো না কী ভস্মীভূত 
হয়োছল সৌঁদন। 

আজ ঘুমের আগে মা'র ফেলে যাওয়া সমস্ত কিছ তল্লতম্ন করে দেখাঁছল 
সে, কোথাও পায় নি একাঁট লাইন ও হস্তাক্ষর। স.বর্ণলতা যে নিরস্*? ছিল 
না, সে পাঁরচয়টা যেন একেবারে 'নাশ্চহ করে দিয়ে গেছে সুবর্ণলতা। 

বকুল ছাতের সেই চিতার কোণটায় বসে রইল অন্ধকারে । 


কড়া নাড়ার শব্দে এীগয়ে এসে দরজাটা খুলে দিলেন জগুই। 

অবাক হয়ে বললেন, “তুই এই রোদ্দুরে? কার সঙ্গে এসৌঁছস?, 

ণঝয়ের সঙ্গো ।' 

ণঝয়ের সঙ্গে একা এল তুইঃ বাঁলস কি? খুব সাহস আছে তো? 
কিন্তু কেন বল্‌: তো হঠাৎ? 

বকুর্ল আস্তে বলে, 'জ্যাঠামশাই, আপনার প্রেস্টা দেখতে এলাম।' 

প্রেস্টাঃ আমার প্রেস্টাঃ এখন দেখতে এল তুই? হা-হা করে 
হেসে ওঠেন জগ, অথচ বকুলের মনে হয়, বুড়োমানূষটা যেন কেদে উঠলেন 
“হাহা” করে। 

হাসিই। হাঁসি থামিয়ে জগ কথাটা শেষ করেন, 'প্রেস্‌ আর নেই, প্রেস্‌ 
তুলে দিয়োছ। 
| “তুলে দিয়েছেন? 

হ্যাঁ হ্যাঁ, ও তুলে দেওয়াই ভালো" জগ হঠাৎ অন্যাদকে মুখ ঘাঁরয়ে 

, জোরে জোরে বলেন, 'কে অত ঝামেলা পোহায়? ওই যে শূন্য ঘরখানা 
পড়ে আছে দাঁত খিশচয়ে? 





৩৯৬ বুবর্ণজত 


(১ 
বকুল মদ্রহূ্ত কয়েক স্বব্থ থেকে বলে, 'আচ্ছা, জ্যাঠামশাই, যে সব বা 
ছাপা হয়, তার পাশ্ডুলাপগুলো কি সব ফেলে দেওয়া হয়? 

জগু সাঁন্দগ্ধ গলায় বলেন, 'কেন বল্‌ দিকি? 

'এমান, জানতে ইচ্ছে করছে? 

জগ তেমনি গলাতেই বলেন, 'এমনি? না তোর- ইয়ে, মা'র সেই খাতাটা 
খুজতে এসৌঁছস ?' 

'না এমনি। বলুন না আর্পাঁন, থাকে না? 

“থাকে, ছিল--, জগ হঠাৎ চেশচয়ে ওঠেন, গৃদোমঘরে সব ভহি করা 
পড়োছল। আঁদ অন্তকালের সব। ওই ব্যাটা নিতাই, দুধকলা দিয়ে কালসাপ 
পুষোছলাম আমি, প্রেস উঠিয়ে দিলাম দেখেই যেখানে যা ছিল বেপটয়ে শিশি- 
বোতলওয়ালাকে বেচে দিয়েছে! শুনোছস কখনো এমন কান্ড? দেখোছস 
এমন চামার? আমিও তেমনি। 'দিয়োছ দূর করে! আর হোক দিকিনি 
এমুখো।...আয়, বসবি আম্ন।' 

'না থাক্‌, আজ যাই।' 

'সেকিরে” এই এল রোদ ভেঙে, বসা নাঃ, 

“আর একাদন আসবো জ্যাঠামশাই-_ 

হেস্ট হয়ে প্রণাম করে বকুল জ্যাঠাকে। 

জগ ব্যস্ত হয়ে সরে দাঁড়ান, “থ্বক্‌ থাক্‌। বুড়ী ঘুমোচ্ছে, দেখা হলো 
না।' 

বকুল বোধ হয় ভূলে আরও একবার প্রণাম করে জ্যাঠাকে, তারপর বলে, 

তবে। 

'যাচ্ছিস! চল্‌ না হয় আমি একট এগিয়ে দিই 

'না না, দরকার নেই। গ্লাপনি বুড়োমানুষ এই রোঙ্দুরে-_, 

'৩বে যা, সাবধানে যাস। 

'আপ্পান বুড়োমান্ষ এই অপমান গ্রায়ে মেখেও দাঁড়য়েই থাকেন জগ 
দরজায়। শেকলটা টেনে দিয়ে বৌরয়ে পড়েন না সঙ্গে সঙ্গে গটগগট করে। 

তার মানে বকুলের কথাই ঠিক। বুড়ো হয়ে গেছেন জগগ। 

বকুল রাস্তায় নামে। 

হঠাৎ ঘুরে দাঁড়য়ে বুথি সেই দাঁত-খ*চোনো 'ঘবরটার উদ্দেশেই মনে মনে 
একটা প্রণাম জানিয়ে মনে মনেই বলে, “মা, মাগো! তোমার পড়ে যাওয়া, 
হাঁরয়ে যাওয়া লেখা, না-লেখা সব আমি খুজে বার করবো, সৰ কথা 
নতুন করে লিখবো । - দিনের আলোর পাথিবীকে জানিয়ে যাব অল্ধকারের বোধ 


ইতিহাস । .. 
'যাঁদ সে পাঁথবী সেই ইীতিহাস শুনতে না চায়, বদি অবজ্ঞার চোখে তাকার, 
বুঝবো আলোটা তার আলো নয়, মিথ্যা জৌলুসের ছলনা! খণ-শোধের শিক্ষা 
হয় নি তার এখনো! 


সামনের রাস্তা ধরে সোজা এগিয়ে যায় বকুল, পিছু পিছু আসা 
দেহরাক্ষণটার কথা ভুলে গিয়ে ! 
সপে